অবন্তর_আসক্তি #পর্ব_১৭,১৮,১৯

0
1331

#অবন্তর_আসক্তি
#পর্ব_১৭,১৮,১৯
#Sharmin_Akter_Borsha
১৭

“যেদিন তুমি এসেছিলে তোমার সাথে এসেছিল শুভ্র রঙের শুভ্র ভালোবাসা!
ভালোবাসা ওয়ার্ড টা আমি বিশ্বাস করতাম না তবে বলে বিশ্বাস করতে শুরু করেছি যবে প্রথম তোমায় দেখেছি। প্রথম দেখায় কেউ কাউকে পাগলের মতো ভালোবাসতে পারে আমার জানা ছিল না। আমার বন্ধুগুলোর গার্লফ্রেন্ড গুলো যখন রাগ অভিমান করতো তখন ওরা তাদের রাগ ভাঙানোর জন্য যা যা করার দরকার সব করতো আমি শুধু নিরব পাবলিকের মতো দেখতাম। মনে মনে বলতাম, এইসব কি আজব অন্যের রাগ ভাঙানোর জন্য এত কিছু করার কিসের প্রয়োজন। তারা যখন বলতো ওরা তাদের ভালোবাসে। তখন আমি ওদের আড়ালে তাচ্ছিল্যের হাসি হাসতাম। আমার পৃথিবী উলট পালট হয়ে গেলো সেদিন যেদিন হুট করে তোমাকে রাস্তায় দেখি একটা মেয়েকে সেফ করার জন্য তুমি একা এগিয়ে গিয়ে একটা ছেলের গালে চড় মেরে ছিলে। তখন তুমি আমার কাছে ছিলে একদম অচেনা তারপরে হয়ে উঠলে চিরচেনা অবাক্ত্য প্রিয়তমা। আমার প্রতিটা শ্বাস নিঃশ্বাসে শুধু তোমারই আনাগোনা। যবে থেকে তোমাকে দেখেছি তবে থেকেই আমার রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছো তুমি। খুব করে চাইতাম তোমাকে আমি কিন্তু কি জানো তোমার সম্পর্কে আমার ধারণা ছিল শূন্য। তোমাকে আমি শুধু মুগ্ধ হয়ে দেখেই ছিলাম তবে তোমার সম্মন্ধে জানা ছিল না আমার কিছু কিন্তু আমার অবাদ্ধ মনকে শান্ত করার জন্য যে তোমাকে প্রয়োজন। হ্যাঁ তোমাকেই প্রয়োজন। এত বড় ঢাকা বনানী তে তোমাকে খুঁজে বের করা অনেক টাই অসম্ভব ছিল তবুও হাল ছাড়িনি আমি, খুঁজেছি তোমাকে অনেক খুঁজেছি কিন্তু কোথাও পাইনি। প্রতিবার যখন তোমাকে না পেয়ে শূন্য হাতে ফিরে আসতাম তখন মনে হতো, আমি তোমাকে হারিয়ে ফেলেছি৷ এই বুঝি আর কখনো পাবো না। বুকের বা পাশটায় বড্ড পুড়তো মনে হতো কেউ যত্নসহকারে আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে। আমার ভালোবাসা ছিল একতরফা তোমাকে দেখেছি আমি এক মিনিট পয়তাল্লিশ সেকেন্ড, এই এক মিনিট ও কয়েক সেকেন্ডে তুমি আমার মস্তিষ্ক নিজের দখলে নিয়ে নিয়েছিলে। পাগল উম্মাদ করে তুলেছো আমার হৃদয়কে। না পাওয়ার ভাসনা তিলে তিলে মৃত্যু যন্ত্রণার মতো বিষণ্ণ লাগতো৷ একটা সময় আমার খুবই খারাপ হয়ে পরে না খেয়ে দেয়ে সব কাজকর্ম ফেলে তোমাকে খুঁজতে ব্যস্ত হয়ে পরি কিন্তু কোথাও তুমি নেই, নেই তুমি, হ্যাঁ তুমি কোথাও নেই। ধীরে ধীরে অসুস্থ হতে লাগি। একটা সময় মারাত্মক ভাবে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হই, আমার তখন মস্তিষ্কে শূন্য, সবটাই জুড়ে শুধু তুমি ছিলে। তোমার মায়া মোহিনী চেহারা টা আমার হৃদয়ে তীরের মতো গেঁথে গিয়েছিল। কোনো ভাবেই ভুলতে পারছিলাম না। অনেক বৃথা চেষ্টা করি কিন্তু প্রতিবারই ব্যর্থ হই। তোমাকে ভুলার জন্য জানো আমি কি করে ছিলাম?
বন্ধুরা জোর করে ক্লাবে নিয়ে গিয়েছিল, যেতে চাইনি আমি আমার যে তখন তোমাকে খোঁজার ছিল, সকলে জোরপূর্বক নিয়ে যায়। হুইস্কি খেয়েছিলাম জীবনে প্রথম বার সেটাও শুধু তোমার জন্য তোমাকে ভুলার জন্য কিন্তু তবুও মন থেকে ভুলতে পারিনি। নেশাগ্রস্ত হয়ে যখন বিছানায় পরে ছিলাম তখন মনের কোণে সুখের নীড় দোলা দিয়ে যেতো। মিটমিট করে চোখ খুলে তাকালে তোমাকে আমার মাথার পাশে বসে থাকতে দেখতাম। তোমার উপস্থিত আমার বিষন্ন ভগ্নহৃদয়কে আরও উতলা করে দিতো। হাত দিয়ে স্পর্শ করতে চাইতাম। ধীরে ধীরে আমার ভালোবাসা পাগলামি তে পরিণত হলো। বন্ধুরা আমার ফ্যামিলি তে কিছুই জানায়নি৷ তারাই আমাকে নিয়ে গেলো একজন বড় মানের সাইকোলজি ডাক্তারের কাছে। তিনি আমার ব্রেইন ওয়াশ করলেন। এমন কোনো মেয়ের অস্তিত্ব পৃথিবীতে নেই। ধীরে ধীরে আমিও তাই বিশ্বাস করে নিয়েছিলাম। তবে মনের কোণে তোমার প্রতি ভালোবাসা টা ছিল আসমান ছোঁয়া যা তীব্র গতিতে শুধু বাড়তেই থাকতো। তোমার লম্বা ঘন কালো কেশ, টানা টানা চোখ, ঘন চোখের পাপড়ি। মসৃণ খাঁড়া নাক তার। টকটকে লাল ঠোঁট জোড়া। রাগে যখন হাত তুলে ছেলেটা কে শাসাচ্ছিলে তখন তোমার নাম দিয়েছিলাম আমি রাগরাগিণী।
সারাদিন আমার যেমন তেমন কেটে যেতো তবে রাতে, একরাশ অন্ধকার নেমে আসতো আমার ঘরে। সে অন্ধকার কাটিয়ে ঘর আলোয় আলোকিত করতে একমাত্র তুমিই পারতে। বিষন্নতায় ডুবে থাকতাম রোজ। উপরে উপরে দেখে সবাই ভাবতে লাগল আমি আগের মতো স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছি। হাসছি খাচ্ছি দিব্বি চলাফেরা করছি৷ কিন্তু ভেতর থেকে আমার হৃদয় আগুনে পুড়ে প্রতিদিন দগ্ধ হতো পুড়ে ছাই হয়ে যেতো। আমার কোয়াটারের পেছনে এক বড় বকুল ফুলের গাছ রয়েছে। আমি রোজ সকালে ঘুম থেকে উঠে সর্ব ক্ষণে গাছটার নিচে যাই। গাছের নিচে বিছিয়ে থাকতো ফুলগুলো৷ তাদের ঘ্রাণ আমি মন ভরে নিতাম। হাটু গেড়ে বসে মাটি থেকে ফুলগুলো কুড়িয়ে হাতের উপর আলতো চাপ দিয়ে ধরতাম। চোখ জোড়া বন্ধ করে নেই, ফুলগুলো নাকের ডগায় এনে ঘ্রাণ নিতে থাকি। তখন জেনো মনে হয়। কেউ একজন এশ কালারের শাড়ি পরে আলতা পায়ে আমার দিকে এগিয়ে আসছে। কিছুটা সামনে আসলে আমার মন আমাকে জানান দেয়৷ এটা আমার রাগরাগিণী। তোমাকে দেখার জন্য চোখ খুলে তাকালে তুমি হারিয়ে যাও, আশেপাশে হন্ন হয়ে প্রথম কয়েকদিন খুঁজে ছিলাম পরে বুঝতে পারি তুমি আমার কল্পনার সবটা জুড়ে। এটা আমার গল্প তবুও রোজ আমি ফুল কুড়াতে যেতাম তোমার উপস্থিতি আমার মনকে শান্ত করে দিতো। হোক না তুমি আমার কল্পনা তবুও তুমি তো। যখন আমার মন কেমন কেমন করতো তখনই আমি বকুল ফুলের গাছ তলায় গিয়ে বসে থাকতাম। গাছ থেকে ফুল ঝড়ে আমার উপর উপচে পরতো। তখনই চোখ জোড়া খিঁচে বন্ধ করে নিতাম। এক মূহুর্তের জন্য মনে আভাস হতো ফুলের স্থানে তোমার হাত আমাকে ছুঁয়ে দিচ্ছে। দু হাতে ফুলগুলো কুড়িয়ে নিয়ে সেখানে বসেই তোমার নামে মালা গাতিতাম।
সুঁইয়ে সুতা লাগানো জানতাম না। তবুও মনে বড় স্বাদ জাগতো তোমার জন্য বকুল ফুলের মালা গাথি। বহু কষ্টে সুঁইয়ে সুতা গাঁথা শিখি। রোজ তোমার নামে একটা মাথা আমি নিয়ম করে বানাই৷ ও সরি নাম তো জানা ছিল না, তবে তোমার স্মৃতি চারণ করে মাথা গাথি।

আমি তোমাকে খোঁজা ছেড়ে দিয়েছিলাম। সত্যি ভেবে নিয়েছিলাম তুমি বাস্তবে নেই সেদিন সবটাই ছিল আমার ইমাজিনেশন। তুমি শুধু আমার কল্পনাতেই সীমাবদ্ধ।
সকলকে ভুল প্রমাণিত করে দিয়ে সেদিন তুমি আবারও এসেছিলে আমার জীবনে, যেদিন তুমি হসপিটালে এসেছিে ওইদিন তুমি একটা ছোট বাচ্চা কে কোলে তুলে নিয়ে হাসপাতালে এসেছিলে। প্রথম নজর তোমার উপরে পরতে আমি ভেবেছিলাম তুমি আমার আরও এক কল্পনা কিন্তু যখন দেখলাম। তুমি মানুষের ভিড় ঢেলে একটা আহত বাচ্চা কে কোলে নিয়ে দৌঁড়ে আসছো তখন আমার মাথায় কেউ একজন কড়া নাড়িয়ে জানান দিলো। আমার রাগরাগিণী আমার কল্পনা নয় আমার বাস্তবতা যাকে আমি একটা সময় হন্ন হয়ে খুঁজেও পাইনি। আজ সে নিজে থেকে আমার সামনে এসেছে। কোনো ভাবেই তোমাকে আমি হারাতে রাজি নই। উঁহু’ আর কোনো কিছুর বিনিময়ে আমি তোমাকে হারাতে পারবো না। এবার আমি জেনে গেছি তুমি আমার বাস্তবতা আমার তোমাকে চাই-ই চাই। হ্যাঁ আমার তোমাকেই চাই আমার রাগরাগিণী। তোমার পিছু নেই কেবিনের সামনে দরজার আড়াল থেকে শুনতে পারি তোমার আর ডাক্তারের কথোপকথন।

‘ তুমি ঢাকা বনানী তে থাকো না এখানে মাঝেমধ্যে আসো তবে সেটা তোমার ফ্রেন্ডের ফুপির বাড়িতে বেড়াতে। আর এবারও তাই এসেছো রাস্তায় একটা গাড়ি এসে ছেলেটা কে ধাক্কা দিয়ে যায়। ছেলেটা আহত হয়ে মাটিতে পরে কৈ মাছের মতো লাফাতে থাকে। তুমি যেমন আমার রাগরাগিণী ঠিক তেমনই তুমি আমার করুণাময়ী। ছেলেটাকে সঙ্গে নিয়ে হাসপাতালে নিয়ে আসো। ছেলেটার ট্রিটমেন্ট এর সকলে খরচ তুমি নিজে দিয়েছিলে। তুমি তিন ঘন্টা হসপিটালে ছিলে। আমিও তোমার আড়ালে তোমাকে তিন ঘন্টা দেখেছি মুগ্ধ হয়েছি৷ প্রেমে পড়েছি নতুন করে। নিজের অজান্তেই তোমার কথা চিন্তা করে মৃদু হেসেছি। তোমাকে চিন্তিত দেখে আমি বিচলিত হয়েছি। ইচ্ছে করেছিল তখন তোমার সামনে হাঁটু গেঁড়ে বসে তোমার কপালের চুলগুলো সরিয়ে দিতে, প্যান্টের পকেট থেকে টিস্যু বের করে তোমার কপালে জমাট বাঁধা বিন্দু বিন্দু ঘাম আলতো হাতে মুছে দিতে। কিন্তু আমি পারিনি হাত পা লাগাতার কাঁপছিল। তোমাকে পাওয়ার আনন্দে তারাও আত্মহারা মরিয়া হয়ে উঠেছিল। আমার তখন আরও ইচ্ছে করছিল ছুটে গিয়ে তোমাকে শক্ত হাতে জড়িয়ে ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে নেই। কিন্তু আমি আমার ইচ্ছে টাকে প্রাধান্য দেইনি। কারণ তখনও আমি তোমার পরিচয় জানতাম না।
হাসপাতাল থেকে বের হওয়ার পর তোমার বান্ধবীর ফুপির ফ্ল্যাট পর্যন্ত আমি ফলো করি। পরেরদিন জানতে পারি তুমি ও তোমার বান্ধবী চলে গেছে। আমি আবারও আগের মতো হয়ে যাই। খুঁজতে হবে আমার তোমাকে একবার হারিয়েছি দ্বিতীয় বার হারাতে পারবো না ধম বন্ধ হয়ে মারা যাবো।
দুইদিন লেগেছিল আমার এটা জানতে তুমি গাজীপুরে থাকো। তিনদিনের দিন গাজীপুর চলে আসি শুধু তোমাকে খুঁজতে। কিন্তু আমি সঠিক জানতাম না তোমার ঠিকানা। তাই খুঁজেও পাইনি। তবে তোমার গ্রামের নাম জানতে পেরেছিলাম পাঁচ দিনের দিন রাতে। ছয় দিনের দিন রাতে সেখানে এসে উপস্থিত হই। গভীর রাতে এসে ছিলাম বলে, আর উদ্দেশ্য সফল করতে পারিনি। ভেবেছিলাম সকালে খুঁজবো। মাথা গুঁজবার জন্য একটা ঠাই প্রয়োজন ছিল তখন আমার।
পরদিন সকালে তোমাকে আমি এত সহজে পেয়ে যাবো আমি কল্পনা ও করিনি। আমার কল্পনার বাহিরে ছিল সবটা। তোমাকে পেয়ে যাই আমি খুঁজে পাই আমও আমার রাগরাগিণী বর্ষাকে। সকালেই তোমার সম্পর্কে সবটা জানতে পারি। তোমার সামনে যাওয়ার ইচ্ছা ছিল তীব্র কিন্তু সব ইচ্ছা পূরণ করতে নেই। বুকে হার্টবিট জোরে জোরে বিট করছিল আমি বাহির থেকে ধুকধুক শব্দ শুনতে পাচ্ছিলাম। ডান হাত বুকের বা পাশের উপর রেখে আলতো চাপ দিয়ে বললাম, ওরে এবার তো থাম পেয়েই তো গেছিস তোর প্রিয়শীকে এখন কেন এত জ্বালাচ্ছিস আমাকে? তখন মনে হচ্ছিল পৃথিবী জুড়ে সকল গাছপালা আলো বাতাস আমার খুশিতে তারাও খুশিত আনন্দিত। ঠোঁটের কোণে ফুটে উঠে এক চিলতে তৃপ্তিময় হাসি। সূর্যের তীব্র রোদের রশ্মি চোখে মুখে এসে পরছে। সূর্যের আলো টাকেও আমার আজ বিষণ মিষ্টি লাগছে। ইচ্ছে করছে গায়ে মাখি। আনন্দে উল্লাসিত আমি তোমাকে যে পেয়ে গেছি আমি তুমি আমার একান্তই আমার শুধুই আমার, তোমায় ভালোবেসে পুড়েছি আমি সে পুড়ে যাওয়া হৃদয়ে তোমার নরম কোমল হাত দিয়ে মলম তো তোমাকেই লাগাতে হবে আমার রাগরাগিণী বর্ষা।

চলে এলাম তোমাকে রেখে আমার গন্তব্যে। বিশ্বাস করো সেদিন তোমাকে রেখে আসতে আমার বিষণ কষ্ট হচ্ছিল কিন্তু আমার কিছুই করার ছিল না আমি আসবো তোমার সামনে তবে এখন নয় সঠিক সময় হলে। রোজ বিকেলে বকুল ফুলের মালা গাথতাম তোমাকে স্বরন করে। এখন তো আরও অধিক মালা গাথি। তোমাকে নিয়ে আমি অনেকগুলো ডায়েরি চিরকুট লিখে ফেলি রোজ লিখেছি। সময় হলে সব গুলো এক সাথে দিবো বলে। নিবে কি আমার ভালোবাসায় জমানো লিখা চিরকুট গুলো? যদি নাও তাহলে সবগুলো চিরকুট আমি উড়িয়ে দিবো খোলা আকাশে পায়রার ডানায় বেঁধে তুমি আলতো হাতে খুলে পরে নিও। কি নিবে গো আমার রাগরাগিণী? ‘

*

হাত আমার নিস্তেজ হয়ে আসছে। মনে হচ্ছে এখনই ধপ করে পরে যাবো। হা করে পাশ থেকে আমার চার বোন চিঠিটার দিকে তাকিয়ে আছে। বৃষ্টি ও রিমা কাল ফিরে এসেছে। হোস্টেলে দুই ঘন্টার কাজ ছিল তা মিটিয়ে আবার রাত দশটার দিকে বাড়িতে এসে পৌঁছিয়েছে। তারা জেনো এই অচেনা চিঠিবাজের প্রেমেই পরে গেছে। শেষের লাইন টুকু কি ভাবে বলল জেনো মনে হলো আমার সামনে দাঁড়িয়ে হাঁটু গেঁড়ে একহাত আমার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল। আমার পুরো শরীর থরথর করে কাঁপছে। ভাবতেও পারছি না কেউ আমাকে এত ভালোবাসে তাও আবার দুই বছর ধরে।

বিছানা থেকে নেমে উঠে দাঁড়ালাম চোয়াল শক্ত করে রিয়া, রিমা, বৃষ্টির উদ্দেশ্য বললাম,’ নাহ! এবার আর বসে থাকা যাবে না। এইবার এই চিঠিবাজ টাকে আমার খুঁজে বের করতেই হবে। ভাবা যায় আজকেও আমার বইয়ের মধ্যে চিরকুট গুঁজে দিয়েছে। তাও আবার এত্তো বড়, কয় দিনে লিখেছে কে জানে? ‘ গালে হাত দিয়ে মেঝেতে বসে পরলাম।

#চলবে

#অবন্তর_আসক্তি
#পর্ব_১৮
#শারমিন_আক্তার_বর্ষা
________
লাইফে এত প্যাড়া নেইনি যা আজ নিতে হচ্ছে আমার টিমেই পরেছে যত গাধার দল। এক একটা শুধু খেতে আর গিলতেই জানে। একটাও কোনো কাজের নয় সবগুলো এজ একটা অকর্মার ঠেকি।
সেই সকাল থেকে একা একাই সব করে যাচ্ছি। ওদের হেল্প চেয়ে কিছু করতে বললে, ওরা আরও আমার কাজ বাড়িয়ে দিচ্ছে প্রচন্ড রকমের মেজাজ খারাপ হচ্ছে এমন ভাবে চললে তো আর অডিটোরিয়াম সাজানোই হবে না। কলেজে সকলের সামনে অপদস্ত অপমানিত হতে হবে। আদ্রিক পাঁচ মিনিটের মতো ছিল। তারপর তার কোনো এক ইমপোর্টেন্ট কল আসে। আর সে বের হয়ে চলে যায়। আমার বন্ধু বান্ধবীদের মুখের দিকে তাকালে আমার এখন কান্না পাচ্ছে। ইচ্ছে করছে এখানে বসেই ব্যা ব্যা করে কান্না করি। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে আমি এখন আর ছোটোটি নই বড় হয়ে গেছি। ব্যা ব্যা করে কান্না আমাকে সোভা পায় না। কিন্তু আমার যে কান্না পাচ্ছে। খুব কান্না পাচ্ছে, কলেজের স্যাররা আমাকে বিশ্বাস করে একটা দায়িত্ব দিয়েছে আর আমি তা পালন করতে পারছি না। মাথা দুই হাঁটুর মাঝখানে রেখে বসে আছি। চোখের পানি আটকে রাখার জন্য দাঁত দিয়ে ঠোঁট কামড়ে ধরে আছি। ফুসফুস করে নিশ্বাস নিচ্ছিলাম তখন কানের কাছে কারো ফিসফিস আওয়াজ শুনলাম সে বলল,’ আমি থাকতে চিন্তা কিসের তোর? ‘

চেনা কন্ঠস্বর শুনে ঝটপট মাথা তুলে আমার ডান পাশে তাকালাম। তাকে এখানে দেখবো আমি ভাবিইনি। এক হাঁটু ফ্লোরে গেঁড়ে বসে আছে আমার দিকে চমৎকার হাসি দিয়ে আবারও বলল,’ আমরা এতগুলো ভাইবোন থাকতে তোর মান সম্মান নষ্ট হতে দেউ কি করে বল। এখন চোখের পানি মোছ। চোখের জলের অনেক মূল্য ছোট মোটো বিষয়ে কান্না একদমই করবি না। উল্টো মাথা ঠান্ডা রেখে ভাববি কি ভাবে পরিস্থিতি সামাল দিবি। ‘

কথাগুলো বলতে বলতে আমার গালে ল্যাপ্টে যাওয়া অশ্রুকণা গুলো সে নিজে হাতে মুছে দিলো। তার দিক থেকে চোখ সরিয়ে সামনে তাকাতে দেখলাম। অভ্র ভাইয়া সকলকে নিয়ে চলে আসছে। তিন্নি আপু, তনিমা তাপ্পি, মুন্নী আপু, বৃষ্টি, রিমা কাব্য ও নাঈম৷ পুতুল আপু আসেনি তার ছোট ছেলের জন্য হয়তো আসতে পারেনি। আর বাকি ভাইবোন গুলো ও হয়তো কোনো কারণ বসত আসতে পারেনি। তবুও যতগুলো এসেছে সকলে মিলে সাহায্য করলে আজকেই পুরো অডিটোরিয়াম সাজানো হয়ে যাবে। আজ শুধু বেলুন দিয়ে সাজানো হবে গতকাল সকালে সিকিউরিটি আঙ্কেলরা ফুল লাগিয়ে দিবে। আজ ফুল লাগালে তা আর কাল পর্যন্ত স্বচ্ছ থাকবে না।

অভ্র ভাইয়া আমাকে অনেক টা সাহায্য করছে তার কাজের ফাঁকে ফাঁকে আমাদের কাজ প্রায় শেষের দিকে এমন সময় আদ্রিক আসল। এসে আমাদের কাজ বিকেলের আগেই শেষ হয়েগেছে দেখে অবাক হলো। আদ্রিক এগিয়ে আসতে আসতে বলল,’ বাহহ ভালো তো সাজিয়েছো। ‘

আমরা সকলে মৃদু হেসে তাকে থ্যাংকস জানালাম। আদ্রিক সকলের সাথে পরিচয় হতে লাগল। একমাত্র অভ্র ভাইয়া তাকে দেখেই আমাদের পাশ থেকে সাইডে চলে গেলো। কারণটা আমরাও বুঝিনি হয়তো সে পরিচিত হতে ইন্টারেস্ট নয়। যাকগে তাতে আমার কি? কোই কিছু না তো আমার। আমরা সকলে একসাথে বাকি কাজগুলো করতে করতে গল্প জুড়ে দেই। হাসি ঠাট্টা তো চলছে। দূর থেকে একজন তা দেখছে।

সন্ধ্যা ছয়টার দিক দিয়ে আমাদের সকলের কাজ পুরো শেষ হয়। আমি অনেক আনন্দিত ইচ্ছে করছে খুশিতে এখন নাচতে। তখন ভেবেছিলাম পারবো না কিন্তু এখন সম্পূর্ণ অডিটোরিয়াম দেখে খুশিতে মাতোয়ারা হয়ে যাচ্ছি। আমাকে আর আদ্রিক কে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে অভ্র ভাইয়া কর্কশকন্ঠে বলল, ‘ আমাদের এখন বাড়ি ফিরতে হবে চলো সবাই আমি গাড়ি নিয়েই এসেছি। ‘

চলে যাওয়ার আগে আদ্রিকের কাছ থেকে বিদায় নেই। আদ্রিক পিছু ডাকল,’ বর্ষা দাঁড়াও। ‘

আমি দাঁড়িয়ে পরলাম ঘাড় ও শরীর পুরো ঘুরিয়ে তার দিকে তাকালাম। সে আমার দিকে একটা বই বাড়িয়ে দিলো। বইটা দেখে চেনা চেনা লাগল। আদ্রিকের হাত থেকে ‘ছ’ মেরে বইটা নিয়ে নিলাম অস্ফুটস্বরে বলে উঠলাম, ‘ এটা তো আমার বই কোথায় পেলেন? ‘

‘ ফ্লোরে পরে ছিল। বইয়ের উপরে ছোট্ট করে বর্ষা নাম দেখে বুঝলাম তোমার বই তাই ফিরিয়ে দিলাম। ‘

‘ আচ্ছা আবারও থ্যাংকস ‘

বলে বেরিয়ে পরলাম। সবগুলা যাতাযাতি করে পেছনে বসেছে আর বজ্জাত টার পাশে ফ্রন্ট সিট রেখেছে আমার জন্য, অসহ্য।
গাড়িতে উঠে বসার পর সিট বেল্ট টাও বাঁধার জন্য সময় দেয়নি। সে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে ফুল স্পিডে চালাতে লাগল। আমি ভয়ে সিটের সাথে চিপকে রইলাম মনে মনে দোয়া দুরুদ পাঠ করছি। রাস্তা ঘাট সন্ধ্যার দিকটায় মোটামুটি ফাঁকাই থাকে সে সুযোগেই সে এভাবে চালাচ্ছে। বাড়িতে এসে পৌঁছাতে দশ মিনিট লাগে। কিন্তু আজ পনেরো মিনিট লেগেছে কারণ ভাইয়া, আহিতা, মাহিরা ও নিঝুমকে ওদের বাড়িতে ড্রপ করে দিয়ে আসছে। গাড়ি বাড়ির গেইট দিয়ে ঢুকল। আস্তে করেই ব্রেক কষলো অভ্র ভাইয়া, আমি জোরে জোরে নিশ্বাস ফেলতে লাগলাম। তার দিকে তাকিয়ে বিমূঢ় কন্ঠে বললাম, ‘ স্টক করাবেন নাকি? ‘

সে আমার দিকে না তাকিয়েই সিট বেল্ট খুলতে খুলতে পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলো, ‘ কেন? হার্টের রোগী নাকি? ‘

‘ নাহহহহ! তবে খুব শীগ্রই হয়ে যাবো আপনার জন্য। ‘

বলে গাড়ির দরজা ধাক্কা দিয়ে খুলতে লাগলাম। মরার দরজা খুলছেও না। চোখ জোড়া খিঁচে বন্ধ করে নিলাম। ঘাড় ঘুরিয়ে পাশে তার দিকে তাকিয়ে দাঁত চেপে বললাম, ‘ দরজা লক করেছেন কেন? ‘

আমাকে অবাক করে দিয়ে সে আমার হাত ধরে নেয়। টান মেরে তার দিকে কিছু টা ঝুকিয়ে কঠোর গলায় বলল,’ ওই কি জেনো নাম আদ্রিক, ওই ছেলের সাথে তুই কথা বলবি না। ‘

‘ ইশ সে যা বলবে তাই জেনো হবে? ‘ (মনে মনে)

কন্ঠ স্বাভাবিক রেখেই জানতে চাইলাম, ‘ কেনো? ‘

‘ ছেলেটাকে আমার ভালো লাগেনি তাছাড়া মোটেও সুবিধার নয়। ‘

‘ সুবিধার নয় কেন অসুবিধার মতো কি করেছে? ‘

‘ বড্ড বেশে কথা বলিস। যা বলেছি তাই শুধু শুনবি ও করবি। ‘

আমি প্রত্যত্তরে কিছু বললাম না। সে দরজা আনলক করে বলল, ‘ যা নাম ‘

আমি গাড়ি থেকে নেমে পরলাম। দরজা ধরে দাঁড়িয়ে আছি তার দিকে ঘুরে ঝাঁঝালো কন্ঠে বললাম, ‘ আমার তাকে কোনো দিক দিয়েই খারাপ বা অসুবিধার মনে হয়নি৷ তাই আমি আপনার কথা রাখতে পারবো না সরি। ‘

বলে ধুরুম করে দরজা লাগিয়ে হাঁটতে লাগলাম। রুমে এসেই চারজন আগে ফ্রেশ হয়ে নেই। ঠান্ডা ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করার পর এখন নিজেদের আরাম লাগছে। সারাদিনের ক্লান্তি মূহুর্তেই বেনিশ হয়ে গেছে৷ পেটের মধ্যে ছুটোছুটি করছে ছোট একটা ইঁদুর প্রচুর খিদে পেয়েছে কিন্তু উঠে কিচেনে যেতে একদমই ইচ্ছে করছে না। বাংলার পাঁচের মতো করে বসে আছি আমি, রিয়া আর বৃষ্টি। সে তার বয়ফ্রেন্ড রিমন ভাইয়ার সাথে প্রেম আলাপ করছে তার আমাদের দিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। এত কি কথা বলে, ‘ আল্লাহ মালুম। ‘

নাকের মধ্যে নুডলসের ঘ্রাণ ভেসে আসছে। মনে হচ্ছে ঘ্রাণ টা আসতে আসতে অতি কাছে চলে আসছে। রিমা আমাদের চারজনের জন্য ট্রে তে চার বাটি নুডলস রান্না করে নিয়ে আসছে। তা দেখে লাফালাফি করে নিয়ে নিলাম আমি আর রিয়া। বৃষ্টি এখনো ফোন গুতাগুতি করছে।

সমস্যা তখন হলো যখন নুডলস ঠান্ডা করার জন্য রিয়া আমার বইটা নিলো। গরম গরম রান্না করে নিয়ে আসছে, বাটি থেকে ধোঁয়া উড়ছে তারাতাড়ি ঠান্ডা করার জন্য রিয়া আমার স্টাডি টেবিলের উপর আমার বই হাতে করে নিয়ে আসলো। বইটা ধরে বাটি চারটের উপর বাতাস করছে। আমাদের নুডলস খাওয়া ও বেস্তে গেছে। বইয়ের ভেতর থেকে গোলাপি রঙের একটা কাগজ বের হয়ে আসল। তা দেখে চারজনেই চারজনের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকায়ি আছি। চিরকুট টা হাতে নিয়ে খুলে ফেললাম। আজও কাগজের বুকে ছোটছোট অক্ষরে লিখা রয়েছে প্রেমকথোন।
হাতের লেখাটাও অসাধারণ, ছন্দ মিলিয়ে চিঠিবাজ খুব ভালোই লিখতে জানে সে আহ্লাদী স্বরে লিখেছে,

চলবে?

#অবন্তর_আসক্তি
#পর্ব_১৯
#শারমিন_আক্তার_বর্ষা
______
‘আমাকে ভালোবাসতে হবে না, ভালোবাসি বলতে হবে না

মাঝে মাঝে গভীর আবেগ নিয়ে আমার ঠোঁট দুটো ছুঁয়ে দিতে হবে না,

কিংবা আমার জন্য রাত জাগাপাখিও হতে হবে না।

অন্য সবার মত আমার সাথে রুটিন মেনে দেখা করতে হবে না

কিংবা বিকেল বেলায় ফুচকাও খেতে হবে না।

এত অসীম অসংখ্য “না”-এর ভিড়ে শুধুমাত্র একটা কাজ করতে হবে;

আমি যখন প্রতিদিন একবার “ভালোবাসি”

বলবো তুমি প্রতিবার একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে

একটু আদর মাখা গলায় বলবে “পাগলটা”

যদি আমার কাজল পড়িয়ে দিতে হয় তোমাকে, চুলে মুখে রঙ মাখিয়ে দিতে হয়, গায়ে সুগন্ধি ছিটিয়ে দিতে হয়, সবচেয়ে ভালো শাড়িটাও যদি পড়িয়ে দিতে হয়, শুধু আমি দেখবো বলে মালাটা চুড়িটা পরে সাজতে হয়, যদি তলপেটের মেদ, যদি গলার বা চোখের কিনারের ভাঁজকায়দা করে লুকোতে হয়, তবে তোমার সঙ্গে অন্য কিছু, প্রেম নয় আমার।

প্রেম হলে আমার যা কিছু এলোমেলো যা কিছু খুঁত, যা কিছুই ভুলভাল, অসুন্দর থাক, সামনে দাঁড়াবো, তুমি ভালোবাসবে। কে বলেছে প্রেম খুব সহজ, চাইলেই হয়! এতো যে নারী দেখি চারদিকে, কই, প্রেমিকা তো দেখিনা ! তুমি যেমনই হও আমার জন্য তুমিই হচ্ছো আমার বিশ্বাস সুন্দরী রাগরাগিণী।

‘এই শুনো না! শুনছো? এই তুমি কি শুনছো হুম উত্তর দিচ্ছো না কেন? বলো হুম! ‘

বর্ষা মলিন হেসে ঠিঠির উত্তরে মৃদুস্বরে বলল,’ হুম ‘

‘ আমার রাগরাগিণী তুমি কি জানো আমার হিংসে হয়। অনেক হিংসে হয় যখন তুমি অনন্য ছেলেদের সাথে হেসে হেসে কথা বলো। মনে হয় মনের মধ্যে কে জেনো ধারালো ছুড়ি দিয়ে গায়েল করে দিচ্ছে। অজস্র যন্ত্রণা হয়। মাটির সাথে মিলিয়ে যেতে ইচ্ছে করে। তুমি কি জানো আমার হিংসে হয় তোমার ওই অবাদ্য ঘন কালো রেশম চুলগুলোর সাথে। যখন দেখি বেহায়া চুলগুলো তোমার কপালে এসে পরে থাকে। হাল্কা বাতাসে তা নেচে উঠে। তোমাকে বারবার জ্বালাতন করে বাতাসে উপচে পরে তোমার চোখে মুখে, তখন জানো আমার কি করতে ইচ্ছে করে? উঁহু জানো না। তখন আমার ইচ্ছে করে তোমার কাছে যাই তোমার হাত ধরে টান মেরে আমার সামনে দাঁড় করিয়ে নিজের হাতের তর্জনী দিয়ে একটা একটা চুল সরিয়ে তোমার কানের পেছনে গুঁজে দেই। আরও একটা ইচ্ছে করে আমি তোমার মুখে ফু দেবো। তুমি চোখ জোড়া খিঁচে বন্ধ করে নিবে মুখেতে লেগে থাকবে অমায়িক হাসি। যে হাসি দেখে আমি বারন বার প্রেমে পরবো তোমার। হাত ধরে টেনে তুলবে তুমি আমায়। তুমি আমার এমনই এক জন রাগরাগিণী তোমাকে হাজারও ভালোবেসে ভরবে না এ মন।

★ আমি ভালো নেই আমার সুঘ্রাণী ফুল। ভালো নেই আমি আমার অবদ্ধ মন যে সারাক্ষণ তোমাকে চায়। সে জোরে জোরে বিট করে আমাকে জানান দেয়। আমার শুধু তোমাকে চাই। আমি কোনো কিছু তেই মন দিতে পারি না। কাজে কর্মে পড়াশোনায় মনোযোগী হওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করে আমি ব্যর্থ হয়েছি। মন বলে, আমি তোমাকে পেয়ে গেলে আমার সকল বিষন্নতা একাকীত্ব আপনা আপনি কেটে যাবে। এই আমার বকুল ফুল বলো না তুমি কি হবে আমার? একাকীত্বের সঙ্গী। কাছে আসবে আমার? ভালোবাসার অতল সাগরে ভাসবে আমার সাথে? কথা দিচ্ছি তুমি একটিবার আমার হয়ে গেলে আমি শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত তোমাকে আগলে রাখবো। ভালোবাসি! ভালোবাসার থেকেও অধিক ভালোবাসি। আমার মন পাড়ায় শুধু একটাই নাম ‘ বর্ষা রাগিনী ‘ আমার ভালোবাসার শুভ্র রঙে রাঙিয়ে রাখবো তোমায়। আমি ভালোবাসি শুধুই তোমাকে ‘
______

চিঠিবাজের চিঠি পড়ে প্রথম দিক দিয়ে ইমোশনাল হয়ে পরে চারবোন। মাঝখানটায় ফিক করে হেসে ফেলে। আবারও শেষের দিকে ইমোশনাল হয়ে পরে বর্ষা। আনমনে ভাবতে লাগে, ‘ কে এই চিঠিবাজ? যে সবার চোখের আড়ালে চিঠি রেখে যাচ্ছে। তাও এমন ভুবন ভুলানো শব্দে লেখা তার চিঠি পড়ে যে হৃদয়ে এক অজানা অনূভুতি দোলা দিয়ে যায়। কে এই প্রেমিক যে নিজের থেকেও অধিক ভালোবাসে বর্ষাকে?

রিমা কাটা চামচে নুডলস পেঁচাতে পেঁচাতে বলল,’ কে এই চিঠিবাজ? যে আমার অলস রাজ্যের রাণী বর্ষার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে। ‘

রিয়া ও বৃষ্টি সশব্দে হেসে উঠল। আমি তীক্ষ্ণ দৃষ্টি তে তাকাতে ওদের দৃষ্টি মলিন হয়ে গেলো।
আমি আকস্মিক বিপর্যয় ঘটিয়ে হুট করেই বলে ফেললাম, ‘ কিছুক্ষণ আগে গাড়ি থেকে নামার সময় অভ্র ভাইয়া আমাকে বলেছিল, আমি জেনো আদ্রিকের সাথে কথা না বলি। আদ্রিককে ভালো ছেলে বলে তার মনে হয় না। মানে সে চায় না আমি ওর সাথে কথা বলি। ‘

বৃষ্টি ও রিমা অবাক হয়ে বলে উঠল,’ কিহহহ?’

রিয়া আমাদের তিনজনের দিকে এক নজর তাকিয়ে এটিটিউট নিয়ে বলল,’ তাতে কি যায় আসে ভাইয়া আমাকেও বলছে আদ্রিকের থেকে দূরে থাকতে। আর আদারস ছেলেদের সাথেও জেনো তেমন কথা বার্তা না বলি। ‘

রিয়ার কথা শুনে চুপসে গেলাম। তখনই অভ্র ভাইয়া রুমে প্রবেশ করল। আমাদের গোল মিটিং করতে দেখে রুমে ঢুকে আসল৷ শব্দহীন ভাবে পা টিপে টিপে এসেছে। আমাদের চারজনের উপস্থিতি বাদেও আরও একজনের উপস্থিতি আমরা বুঝতেই পারিনি। হাতে চিরকুট টা নিয়ে তাতে চোখ বুলাচ্ছি। হঠাৎ করে কেউ একজন ‘ ছ’ মেরে হাত থেকে টান মেরে কাগজ টা নিয়ে নিলো। পেছনে না তাকিয়েই অস্ফুটস্বরে চেঁচিয়ে বললাম, ‘ আব্বে কে রে? কার এত বড় সাহস? ‘

বিছানা থেকে নেমে ঘাড় ঘুরিয়ে ‘থ’ হয়ে গেলাম।
অভ্র ভাইয়া কে আমার রুমে দেখে মনে হলো আমার ১০৪° জ্বর এসে গেছে গায়ে। পরক্ষণেই মনে হলো এটা তো তার দেওয়া চিঠি সে কিছুই বলবে না।

তৎপর সে আমাদের আকস্মিক চেহারা কে বিস্মিত করে দিয়ে বলল,’ কলেজে যাসনি লাভ লেটার আদান প্রদান করতে? কি এইসব? এইসব করতে যাস তুই কলেজে? আজকে আসুক চাচ্চু তোর বিয়ের ব্যবস্থা করাচ্ছি। প্রেম করা লাভ লেটার দেওয়া গুচাচ্ছি। ‘

বলে চিঠিটা হাতের মধ্যে দুমড়েমুচড়ে ফেলল। নিজের শোঁখে আহত কেন হচ্ছি আমি আজব? এখন চিঠি নয় নিজেকে বাঁচাবো কিভাবে সেটাই ভাবান্তর।
আমার মাথায় এমন অবস্থায় শয়তানি বুদ্ধি অটোমেটিক চলে আসে। জোরপূর্বক হাসার চেষ্টা করে বললাম,

‘ অভ্র ভাইয়া তুমি ভুল ভাবছো। এ চিঠি আমার নয়। চিঠি টা তো আমার ফ্রেন্ড নিঝুম হ্যাঁ নিঝুমের। ও একটা ছেলেকে ভালোবাসে আর আমাকে বলছে একটা চিঠি লিখে দিতে। আমি তো শুধু তাই করছিলাম লিখছিলাম। ‘

উনার চেহারা দেখেই বোঝা যাচ্ছে উনি আমার কথা মোটেও বিশ্বাস করেননি। তিনি গুরুগম্ভীর কন্ঠে বললেন, ‘ নিঝুমের চিঠি হলে, এখানে পাগলী হবে পাগল কেন লিখছিস? ফাজলামি করিস তুই আমার সাথে আর এটা কি তোর হাতের লেখা? ‘

ঠিচিটা আমার চোখের সামনে ধরে বলল। আমি দু’দিকে মাথা নাড়ালাম। মুখ দিয়ে বললাম, ” নাহহ, আমি ফাজলামি করছি না। ওটা পাগলীটা হবে ভুলে ই আকার দিতে ভুলে গেছি। দাও দাও চিঠি টা দাও, এখন আবার নতুন করে লিখতে হবে। ‘

অভ্র ব্রো আমার কথা মোটেও বিশ্বাস করলেন না। আঁড়চোখে আমার সৈন্য বাহিনীর দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন ছুড়ল, ‘ বর্ষা যা বলছে সব কি সত্যি? ‘

বৃষ্টি, রিয়া, রিমা তিনজনেই উপর নিচ মাথা দুলাতে লাগল। অভ্র ভাইয়া দুই পাশে দুবার মাথা দুলিয়ে চিঠিটা আমার হাতে গুঁজে দিলো। সাথে আরও একটা জিনিস গুঁজে দিয়ে ফিসফিস আওয়াজে বলল,’ নিজের জিনিস সব সময় নিজের কাছে ও যত্নে রাখাই ভালো। কখন কোথায় হারিয়ে যায় বলা মুশকিল৷ একবার হারিয়ে ফেলা জিনিস দ্বিতীয় বার আর পাওয়া যায় না। ‘

চলেই যাচ্ছিল ফিরে এসে আরও বলল,’ সময় পেলে ফ্রিজ খুলে দেখিস। ‘

চলে গেলো সে। আমি নির্বাক তাকিয়ে রইলাম তার যাওয়ার দিকে, অভ্র ভাইয়া যখন আমার সামনে আসে, আর এমন ভাবে ফিসফিস করে কথা বলে। তখন আমার হার্ট বিট তীব্র গতিতে ছুটতে লাগে। মনে হয় জেনো এখনই আত্মা টা বের হয়ে যায়। বুকের বা পাশে ধুকধুক শব্দ হয়। উনি চলে যেতে আমি হাতের মুঠি খুললাম, আমার এক জোড়া কানের দুল। হয়তো গাড়িতে খুলে পরে গিয়েছিল। আরও একটা হচ্ছে পায়েল। দু’টো একসাথেই হয়তো গাড়িতে পরে গিয়েছিল আর উনার চোখ পরে যায়। তাই তো হাতে করে নিয়ে আসি।

আমার ভাবনার ব্যতিক্রম ঘটিয়ে রিয়া প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলো, ‘ এই বর্ষা কি হয়েছে তোর এমন পাথরের মতো দাড়িয়ে আছিস কেন? ‘

রিমা বলল, ‘ অভ্র ভাইয়া তোকে ফিসফিস করে কি বলল রে?

আমি ওদের দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকালাম। চিঠিটা ছুড়ে বিছানার উপর ফেলে দিলাম। অলস ভঙ্গীতে বিছানার উপর বসে কষ্ঠমাখা কন্ঠে বললাম,’ কে জানি বলছিলো চিঠির মালিক অভ্র ভাইয়া। আয় বোইন সামনে আয়। দুইটা উস্টা দিয়া বিড়ালের ছাউয়ের মতোন জানালা দিয়ে ফালাই দেই। ‘

কথার পিঠে হাসির আওয়াজ ভেসে আসছে। পেত্নীদের মতো হ হ করে হাসছে। পেত্নী তিনটায়।

বৃষ্টি থমথমে গলায় বলল, ‘ তার মানে এই চিঠিবাজ আমাদের অভ্র ভাইয়া না। ‘

বর্ষা হাত দিয়ে দাঁতের নখ কামড়াচ্ছে, চোখ তুলে বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে বলল, ‘ উঁহু! ‘

রিয়া ও রিমা লাফিয়ে উঠে একসাথে প্রশ্ন ছুড়ল, ‘ তাহলে কে? ‘

ওদের দু’জনের কথার পিঠে এবার আজি ঠোঁট উল্টালাম। সন্ধ্যার দিকের ঘটনা বর্ষার মনে আসতেই উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে বলে উঠ, ‘ কোন বই থেকে বের হয়েছে চিঠি টা? ‘

রিয়া আমার বইটা আমার দিকে ছুঁড়ে দিলো আর বলল, ‘ এই বই থেকে, কেন কি হইছে? ‘

বইটা হাতে নিয়ে উল্টিয়ে পাল্টিয়ে দেখতে দেখতে মনে মনে বললাম, ‘ এ এটা ওই বইটাই ‘

আমারে চিন্তিত দেখে বৃষ্টি প্রশ্ন ছুড়ল, ‘ কি ব্যাপার একটা সামান্য বইয়ের জন্য এত চিন্তিত কেন দেখাচ্ছে তোকে? ‘

আমি বইয়ের উপরে দৃষ্টি সংযত রেখেই বললাম, ‘ এটা এখন মোটেও সাধারাণ বই না। ‘

রিমা ঠোঁট জোড়া বাঁকা করে বলল, ‘ অসাধারণ হওয়ার জন্য কি এমন কাজ করছে বইটা? ‘

রিমাকে আঁটকে দিয়ে রিয়া বলল, ‘ যার ফলে বইটাকে তুই অসাধারণ উপাধি দিচ্ছিস? ‘

আমি ওদের দিকে তাকিয়ে থেকেই নিচু কন্ঠে বলতে লাগলাম,
‘ সন্ধ্যার দিকে কাজ সব শেষ করে অডিটোরিয়াম থেকে চলে আসার সময় আমাকে পিছু ডেকেছিল আর্দিক। আদ্রিক-ই তখন আমার হাতে এই বইটাই দিয়েছিল। ‘

আমার মুখে আদ্রিক নাম শুনে উপস্থিত তিনজনের মুখ হা হয়ে যায় অস্ফুটস্বরে তিনজনেই বলে উঠে, ‘ কিহহহ ওই আদ্রিক নিদ্রিক ছেলেটা তোর চিঠিবাজ? ‘

রিয়া ঝাঁঝালো কন্ঠে বলে উঠল,’ নাহহ! আমি মানি না মানবো না। ওই আদ্রিক নিদ্রিক ডাবল রোল বেটাকে আমি দুলাভাই হিসেনে মানবো নাহহহ। নো, নাহহ, নুহহহহ ‘

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here