#অবন্তর_আসক্তি
#পর্ব_৫৩,৫৪
#শারমিন_আক্তার_বর্ষা [লেখিকা]
৫৩
রাতের মধ্যভাগ চারদিকে অন্ধকার ও নিস্তব্ধতা বিরাজমান মাঝেমধ্যে শরীর কাঁপিয়ে বাতাস বয়ে যাচ্ছে। দুই’টা মোমবাতি নিভু নিভু করে জ্বলছে।
বাতাস আসলেই নিভে যাওয়ার অতিক্রম ঘটছে। মোমবাতি দু’টোর চারপাশ ঘিরে সকলে বসে রয়েছে।
ঘন্টা খানিক ধরে কারেন্ট চলে গেছে আসার কোনো খবরই নেই। অতিরিক্ত গরমের জন্য রুমে থাকা সম্ভব হচ্ছিলো না বৈকি এক এক করে সকলে ছাঁদে চলে আসে৷ অন্ধকারে কারো চেহারা দেখা যাচ্ছে না বলে দু’টো মোমবাতি জ্বালানো হয়েছে৷ মোমবাতির নিভু নিভু সোনালী আলোয় সকলের চেহারা কিছুটা হলেও বুঝা ও দেখা যাচ্ছে। মাঝেমধ্যে ঠাসস ঠুসস শব্দ হচ্ছে। মশার কামড়ে বৃতৃষ্ণা হয়ে উঠেছে। যখন যাকে মশা কামড় দিচ্ছে সে তখন তার গায়ে মশাকে মা’রার জন্য চড় মারছে। মশা তো মরছেই না উল্টো নিজের গায়ে নিজেই ব্যাথা পাচ্ছে। সকলে বিরক্ত হয়ে সিদ্ধান্ত নিলো ছাঁদে আর নয়। এখানে বসে বসে রক্ত দান করার থেকে গরম সহ্য করে রুমে বসে থাকাই শ্রেয়। বর্ষা অন্য মনস্ক হয়ে কিছু একটা চিন্তা করে বলল, ‘ কাউকে কোথাও যেতে হবে না। তোমরা বসো আমি একটা কোয়েল জ্বালিয়ে নিয়ে আসছি। ’
সামনে থেকে অপূর্ব বলল, ‘ একটায় কিচ্ছু হবে না দুই তিনটা জ্বালিয়ে নিয়ে আয়। ’
অপূর্বর মাথায় টোকা দিয়ে অভ্র বলল, ‘ দুই তিনটা কি তোর মাথায় দিবি? ’
পাশ থেকে পুতুল বলে উঠল, ‘ রাতে খায়নি তো তাই মনে হচ্ছে কোয়েলের ধোঁয়া খেয়ে পেট ভরাবে। ‘
নাহিদ শানিতকন্ঠে বলল, ‘ ওইটা খেয়ে নয় শুঁকে হবে। ‘
পুতুল রাগী গলায় বলল, ‘ হইছে তুই চুপ থাক! তোরে কি কইছি আমার কথার ভূল ধরতে আজব। কথার মধ্যে নাক না গলালে হয় না তোর? ‘
নাহিদ ওর এক আঙুল নাকের উপর রেখে বলে উঠল, ‘ দেখ আমার নাক একদম পারফেক্ট আছে একটুও গলে নাই৷ ‘
পুতুল রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে বলল, ‘ নাহিদের বা’চ্চা তুই চুপ করবি? ‘
ডোন্ট কেয়ার এটিটিউট দেখিয়ে নাহিদ বলল, ‘ আমি আবার কখন কি বললাম? ‘
পুতুল রাগে দাঁত কটমট করছে। বৃষ্টি ফোন হাতে নিয়ে হুট করে বলে উঠল, ‘ তোমরা প্রথম থেকে আবার শুরু করো আমি ভিডিও করি। ’
পুতুল রাগী চোখে বৃষ্টি’র দিকে তাকায়।
বৃষ্টি ফেলফেল করে পুতুলের দিকে তাকালো শুঁকনো ঢোক গিলে আমতা আমতা করে বলল, ‘ আমি তো জাস্ট মজা করছিলাম! এভাবে তাকানোর কি আছে? এমন ভাবে তাকিয়ো না। আমি হার্ট’র রুগী। ’
মুন্নী বৃষ্টির পিঠে চাপড় দিয়ে বলল, ‘ বোন তুই কবে থেকে হার্ট’র রোগে ভুগছিস? কোই আমরা তো কিছুই জানি না। ‘
বৃষ্টি মুন্নীর দিকে তাকিয়ে জোরপূর্বক হাসার চেষ্টা করে বলল, ‘ ওই মুখ স্লিপ করে বেরিয়ে গেছে। ‘
বর্ষা ধমক দিয়ে বলল, ‘ তোমরা চুপ করবা সবাই? আশ্চর্য এভাবে ঝগড়া করছো কেন তোমরা? তাও সামান্য একটা কোয়েল নিয়ে। চুপ করে বসে সবাই আমি কোয়েল নিয়ে আসছি৷ ‘
সকলে চুপচাপ বসে রইল বর্ষা উঠে যাবার জন্য পা বাড়ালেই অভ্র বর্ষার উদ্দেশ্য বলল, ‘ ওই শোন! ‘
বর্ষা ঘাড় কাত করে অভ্রর দিকে তাকালো অভ্র একটু নড়েচড়ে বসে ফের বলতে লাগল, ‘ তুই আজ বিকেলে ওই যে তখন বান্দরের মতো লাফাচ্ছিলি না তখন তোকে বেশ লাগছিল। এখন একটু লাফা তো আমরা সকলে দেখি। ‘
বর্ষা ঠোঁট জোড়া উল্টিয়ে অভ্রর দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো। মোমবাতির আলো কম থাকায় স্পষ্ট কিছু দেখতে পায়নি অভ্র। বর্ষা রাগী গলায় বলল, ‘ চুপ চুপ একদম চুপ! ‘
বর্ষার কথার পিঠে সকলে উচ্চ স্বরে হাসতে শুরু করলো। বর্ষা লাফাচ্ছিল কিন্তু কেনো সকলে প্রশ্ন জুড়ে দেয়। অভ্র মজার ছোলে হাসতে হাসতে বিকেলের সেই ঘটনা সকলকে বলে ফেলে। বর্ষা অশ্রু সিক্ত নয়নে অভ্র দিকে তাকিয়ে আছে। মোমবাতির আলোয় এখন স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। বাতাস বইছে না তাই মোমবাতি জ্বলছে সুন্দর করেই। অভ্র হাসতে হাসতে এক নজর বর্ষার দিকে তাকিয়ে সঙ্গে সঙ্গে চোখ নামিয়ে নিলো। কিছু একটা দেখেছে কিন্তু স্পষ্ট নয় তাই সেটা আবারও দেখার জন্য বর্ষার মুখপানে তাকালো। অভ্র স্তব্ধ তাকিয়ে রইল বর্ষার দিকে, অন্য দিকে বাকিরা শব্দ করে হেসে যাচ্ছে। অভ্র স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে বর্ষা বাচ্চাদের মতো ঠোঁট ভেঙ্গে নিঃশব্দে কাঁদছে। অভ্র বর্ষার দিকে একহাত তুলে কিছু বলতে যাবে তার আগেই এক দৌঁড়ে বর্ষা সকলের সামনে থেকে চলে গেলো।
অভ্র ব্যতীত সে কান্না কেউ দেখেনি। বর্ষার চোখে জল দেখে মনের মধ্যে উথাল পাথাল ঢেউ বয়ে যাচ্ছে অভ্রর। এক দৌঁড়ে রুমে চলে আসে সে রুমের মধ্যে ঢুকে ভেতর থেকে দরজা বন্ধ করে বিছানার উপর ঠাসস করে পরে যায়। উপুড় হয়ে শুয়ে চাপা কন্ঠে কেঁদে উঠছে।
দশ মিনিটের বেশি হয়ে গেছে বর্ষা এখনো কোয়েল নিয়ে আসেনি। সকলে ভেবেছে তখন কোয়েল আনতেই হয়তো গেয়েছে বর্ষা কিন্তু দশ মিনিট হয়েগেছে এখনও আসছে না দেখে সবাই টেনশনে পরে যায়। এবং শত-শত প্রশ্ন ছুঁড়ে ফেলছে। কারো কথার তোয়াক্কা না করে অভ্র শানিতকন্ঠে বলল, “ সবাই সবার রুমে গিয়ে ঘুমাও রাত অনেক হয়েছে। ”
অভ্র এখানে উপস্থিত সকলের বড় তাই ওর কথার উপর কেউ কোনো কথা না বলে রুমে চলে যায়।
অভ্র রুমে আসার পর একটু শান্তি পাচ্ছে না। আর শান্তি পাবেই বা কিভাবে তার রাগরাগিণী যে কান্না করেছে তারই চোখের সামনে তারই কথায় কষ্ট পেয়ে। মনকে কোনো ভাবেই শান্ত করতে পারছে না৷ এখন এই মূহুর্ত তার শুভ্র পরীকে তার যে এক নজর দেখতেই হবে। না দেখলে হয়তো স্বস্তি পাবে না। মাঝ রাতে পাইপ বেয়ে বর্ষার রুমে আসলো অভ্র। মাত্রারিতিক্ত গরম বলে বারান্দার দরজা খোলা রেখেছিল বর্ষা। ছাঁদ থেকে আসার পর বন্ধ করতে হয়তো ভুলে গিয়েছিল। অভ্র বর্ষার রুমে এসে দেখলো পাগলী মেয়েটা বিছানার উপর উল্টো হয়ে শুয়ে আছে। চুলগুলো এলোমেলো হয়ে পরে আছে। গরমে ঘেমে চিপচিপে হয়ে গেছে সে। অভ্র আলতো হাতে বর্ষাকে বালিশে শুইয়ে দেয়। চুলগুলো একপাশে ফেলে দেয়। গরমে ঘুমের ঘোরে উঁহু ওওও করে যাচ্ছে। ফোনের টর্চ লাইটের আলো বর্ষার মুখের উপর ধরলো অভ্র। সে যে কান্না করতে করতে ঘুমিয়েছে তা তার মুখ দেখেই বুঝতে পারছে অভ্র। ডান হাত বর্ষার গালের উপর রেখে নির্মূলকন্ঠে বলল, ‘ আমার ভুলের জন্য ক্ষমা করে দাও আমাকে প্রিয়। আমার জন্য আজ তোমার চোখ ভিজেছে৷ তোমাকে বলে বুঝাতে পারবো না তোমার চোখে জল দেখে আমার হৃদপিণ্ডে রক্ত ক্ষরণ হয়েছে ক্ষণে ক্ষণে৷ মনে হয়েছে তোমার চোখের জল সে জল নয় আমার হৃদপিণ্ড থেকে ঝড়ে পড়া রক্তের ফোঁটা টুপটুপ করে পরছে। খুব কষ্ট হয়েছে পরানপাখি। কথা দিচ্ছি তোমাকে ছুঁয়ে আর কখনো তোমার চোখ দিয়ে এক ফোঁটা জল গড়িয়ে পরতে দেবো না। তুমি আমার রাগরাগিণী। কাঁদতে দেবো না তোমায়, তোমার দিকে ধেয়ে আসা সকল কষ্ট আঘাত যন্ত্রণা সব আমি আমার উপর নিয়ে নেবো তবুও তুমি সুখে থাকো কেননো তোমার সুখেই যে আমার সুখ প্রিয় পরীতা! ’
বলে বর্ষার কপালে আলতো করে এক চুম্বন একে দিলে অভ্র। বর্ষা এখনো ঘামছে দেখে অভ্র রুমের মধ্যে লাইটের আলো দিয়ে একটা হাত পাখা খুঁজে বের করলো৷ বিছানায় ঠিক বর্ষার মাথার পাশে বসে খাটের সাথে হেলান দিয়ে হাত ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে বাতাস করতে লাগলো। ফজরের আজান অব্ধি অভ্র বর্ষার পাশে বসে রয়। হাত পাখা দিয়ে বাতাস করা খুবই কষ্টকর৷ এক হাত ব্যাথা করলে অন্য হাত দিয়ে বাতাস করছে। আবারও সে হাত ব্যাথা করলে অন্য হাত এমনভাবে পুরো রাত বর্ষাকে বাতাস করে অভ্র। যাতে তার রাগরাগিণীর ঘুম ভালো হয়। ফজরের আজান পরতেই কারেন্ট চলে আসে৷
বর্ষার হাত কাঁথার বাহিরে থাকায় অভ্র হাতটা ধরে কাঁথার নিচে ঢুকিয়ে দেয়। তখন শুনতে পায় বর্ষা ঘুমের ঘোরে বলছে, ‘ অভ্র প্লিজ ছেড়ে যেও না খুব ভয় করছে আমার! ‘
অভ্র বর্ষার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে ক্ষীণকন্ঠে বলল, ‘ ভয় পেয়ো না এইতো আছি আমি তোমার কাছে। ‘
অভ্র বর্ষাকে গভীর ভাবে লক্ষ্য করলো বর্ষা ঘুমিয়ে পরেছে পুরোপুরি। তাকে ঘুমন্ত অবস্থায় রেখে অভ্র তার রুমে চলে যায়৷ যেভাবে এসেছিলো ঠিক সেভাবে। রুমে গিয়ে অজু করে ফজরের সালাত আদায় করে ঘুমিয়ে পরে অভ্র।
বর্ষার রুম থেকে যাওয়ার পূর্বে বর্ষার বালিশের ঠিক পাশে একটা কাগজে কিছু কথা লিখে চিরকুট রেখে যায় অভ্র। হয়তো সে চিরকুটে অপ্রকাশিত অনূভুতি প্রকাশ করে গেছে সে। হয়তো এমন কিছু লিখে গেছে যা দেখার পর বর্ষার জীবনটা আর আগের মতো থাকবে না। চিরতরে পাল্টে যাবে বর্ষা কি পারবে সে সবটা সামলাতে?
চলবে?
#অবন্তর_আসক্তি
#পর্ব_৫৪
#শারমিন_আক্তার_বর্ষা [লেখিকা]
বর্ষাকালীন চলাকালে পরিস্থিতি ফেস করা খুবই দুষ্কর। এই আকাশ পরিস্কার তো এই চোখের পলকে বৃষ্টি শুরু হয়ে যায়৷ সকাল সকাল বালতি বালতি জামা কাপড় ধুয়ে ছাঁদের রশিতে শুকাতে দিয়ে আসে বর্ষা ও রিয়ার আম্মু।
অধিক জামা কাপড় ধোয়ায় উনারাও ভিজে যায়। সেজন্য একেবারে গোসল করে রান্নাঘরে যান।
রান্না ঘরে আগে থেকেই বর্ষার চাচি আম্মু ও ফুপুরা নাস্তা বানাচ্ছে উনাদেরও প্রায় নাস্তা বানানো শেষের দিকে। সকলে হাতে হাতে কাজ করতে লাগেন।
এরইমধ্যে হঠাৎ করে আকাশে গুড়ুম গুড়ুম শব্দে মেঘেরা গর্জন করতে লাগলো। জানালা দিয়ে বাহিরে একনজর তাকিয়ে দেখলো, কিছুক্ষণ আগের স্বচ্ছ নীলাভ আকাশ এখন কালো মেঘে ডেকে গেছে। রান্না ঘর থেকে ছুটে বের হলো সকলে কয়েকজন চলে গেলো ছাঁদে জামা কাপড় গুলো নিয়ে আসতে। আর কয়েকজন গেলো বাড়ির খোলা দরজা ও জানালা গুলো বন্ধ করতে নয়তো বৃষ্টির জলের ফোঁটার সাথে সাথে ধুলো বালি ও বাড়ির ভেতরে চলে আসবে। তারপর বালিগুলো পায়ের নিচে পরলেই কিচকিচ করবে।
পুরোপুরি শহরের মতো উন্নত হয়নি কিছুটা গ্রাম তো কিছুটা শহরের মতো উন্নত হয়েছে। রাস্তা ঘাটে অনেক গাছপালা রয়েছে। ভয়ংকর ঝড় তুফান হলে বাতাসে গাছের ডালপালা ভেঙে পরে যায়। সেজন্য বৃষ্টি আসলেই এদিকে কারেন্ট চলে যায়।
বাহিরে মুসুল দ্বারায় বৃষ্টি হচ্ছে তাই কারেন্ট যাওয়ায় কোনো সমস্যা হচ্ছে না। যারা এখনো ঘুম থেকে উঠেনি তারা আরামে ঘুমাতে পারছে।
বারান্দার দরজা খোলা আছে বৈকি বাতাসের সাথে নড়ছে। বৃষ্টির ছিটেফোঁটা রুমে এসে উপচে পরছে। অন্য দিকে বাহিরের ঠান্ডা শীতল বাতাস এসে গা কাঁপিয়ে তুলছে শীতে। বর্ষা দু-হাত দিয়ে কাঁথা টেনে মুড়ো দেয়। কাঁথার নিচে থেকেও শীতে হাত পা কাঁপছে। বিছানা ছেড়ে উঠতে ইচ্ছে করছে না বলে উঠে গিয়ে দরজা ও বন্ধ করছে না। চোখ জোড়া বন্ধ রেখেই বিড়বিড় করে বলল, ‘ আল্লাহ এই মূহূর্তে কাউকে রুমে পাঠিয়ে দাও সে জেনো এসে দরজা টা বন্ধ করে দিয়ে যায়। ‘
কাঁথার নিচ থেকে মাথা তুলে দরজার দিকে চোখ জোড়া ছোট ছোট করে তাকালো আর শানিতকন্ঠে বলে উঠল, ‘ এই দরজা তুই বন্ধ হয়ে যা৷ ‘
বলে চক্ষু জোড়া আবারও বন্ধ করে ফেললো। বর্ষার রুমের সামনে দিয়েই যাচ্ছিল তিন্নি। বর্ষা এখনো ঘুম থেকে উঠেনি দেখে বার কয়েক ডাক দেয়। দরজা ভেতর থেকে বন্ধ তাছাড়া বাহিরে বৃষ্টির শব্দে এই ডাক কিচ্ছু না। ঘুমন্ত পরী একটুও শুনতে পাবে না বুঝে তিন্নি চলে যায়। ঘুমের মধ্যে নড়াচড়া করার অভ্যেস রয়েছে বর্ষার। ঘুমের ঘোরে হাত বের করে এদিক সেদিক নাড়াচাড়ার কারণে হাতের সাথে লেগে চিরকুট টা কাঁথার নিচে চলে যায়।
আরও ঘন্টা খানেক বৃষ্টি হয় তারপর আকাশ আগেরও মতো পরিস্কার হয়ে যায়৷ বৃষ্টি পড়া বন্ধ হয়ে গেলোও ঠান্ডা ঠান্ডা আবেশ টা রয়েগেছে।
ঘুমের রেশ কাটিয়ে বিছানার উপর উঠে বসলো বর্ষা৷ শরীরের উপর থেকে কাঁথা সরিয়ে দিয়ে উঠে ওয়াশরুমে চলে গেলো। দীর্ঘ দিন ধরে বর্ষার আম্মু তাকে বলছিলো রুমের কাঁথা চাদর গুলো ভিজিয়ে ধুঁয়ে দিতে এতদিন শুনেছে কিন্তু আলসেমির জন্য করেনি৷ তবে আজ নিজে থেজেই করতে যাচ্ছে।
বাহিরে আকাশ পরিস্কার দেখে বর্ষা সবগুলো কাপড় একসাথে বালতিতে ভিজিয়ে ফেললো। পাউটার মেশানো পানির মধ্যে কাঁথা ভিজিয়ে নাড়াচাড়া করার ফলে চিরকুট টা ছিঁড়ে যায়৷ দেখা হল না, আর পড়াও হল না, চিরকুটটায় কি ছিলো জানাও হল না বর্ষার।
সকালের নাস্তা করতে নিচে আসলে বর্ষা ওর বড় চাচি আম্মুর কাছের জানতে পারে বাহিরে বৃষ্টি হয়েছে। বর্ষা ইচ্ছুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে উঠল, ‘ ঝড় বৃষ্টি হয়েছে তাহলে নিশ্চয়ই গাছ থেকে আম পরেছে আমি গিয়ে দেখে আসি। ‘
বলেই বাড়ি থেকে বের হয়ে সোজা আম গাছের নিচে চলে গেলো। চারপাশে চোখ বুলিয়ে আম তো দূরে থাক আমের একটা চিহ্ন ও দেখতে না পেয়ে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে গাছের দিকে তাকিয়ে গাছটার উদ্দেশ্য রাগী গলায় বলে উঠল, ” তোর উপরে কি কোনো পেত্নী বাস করে? এত ঝড় বাতাসে ও একটা আম পড়লো না। ”
নিরাশ হয়ে বাড়ির ভেতরে চলে গেলো। নাস্তা করে রুমে চলে যায়। ভিজিয়ে রাখা চাদর কাঁথা ধুয়ে ছাঁদে শুকাতে দিয়ে আসতে হবে। বাথরুমে এসে ওড়না বেঁধে নেয়। বালতি থেকে সব কিছু ফ্লোরে রেখে ইচ্ছা মতো পা দিয়ে চাপতে লাগলো। অবশেষে ধোঁয়ার জন্য কাঁথা উঠালে দেখলো কাগজ। ছেঁড়া ছেঁড়া কাগজের টুকরো দেখে তেমন একটা গুরুত্ব দেয়নি বর্ষা। কেননা তার খাতার ও পৃষ্ঠা হতে পারে যা ছিঁড়ে গিয়ে বিছানার উপর থেকে গিয়েছিল।
বালতি ভর্তি কাপড় দিয়ে ছাঁদে চলে আসে বর্ষা। রশিতে সব গুলো মেলে দিয়ে পেছনে ঘুরলে দেখতে পেলো অভ্র ঠিক তার বা পাশে দাঁড়িয়ে কারো সাথে ফোনে কথা বলছে।
বর্ষার তখন কাল রাতের কথা মনে হল আর সে অভ্রকে দেখেও না দেখার মতো করে চলে যেতে লাগে। অভ্র বর্ষাকে দেখে বলল, ‘ ওই দাঁড়া! ‘
বর্ষা দাঁড়ালো না সে শুনেও না শোনার মতো করে চলে যাচ্ছে। অভ্র ছুটে এসে বর্ষার হাত ধরে নিজের দিকে ঘুরিয়ে দাঁড় করায়। বর্ষার মুখের দিকে তাকিয়ে শমিত কন্ঠে বলল, ‘ ডাকছি কান দিয়ে যাচ্ছে না নাকি। বাই দ্য ওয়ে, চিঠির উত্তর দিসনি কেন? ‘
বর্ষা অবাক চোখে অভ্রর দিকে তাকালো, তা দেখে অভ্র বলে উঠল, ‘ এমন ভাবে তাকাচ্ছিস মনে হচ্ছে জেনো কিছু জানিসই না। ‘
বর্ষা উৎকন্ঠে বলে উঠল, ‘ কোন চিঠি? কিসের চিঠি? আমি কোনো চিঠি পাইনি। ‘
অভ্র ভ্রুযুগল কুঞ্চিত করে বর্ষার দিকে তাকিয়ে বলে উঠল, ‘ লাইক সিরিয়াসলি? রাতেই তো তোর বালিশের কাছে রেখে আসছি। ‘
বর্ষা অভ্রর কথা শুনে বালতি হাত থেকে নিচে রাখলো। দুইহাত কোমড়ে রেখে রাগী গলায় বলে উঠল, ‘ তুমি মাঝরাতে আমার রুমে গিয়েছিলে কি করতে? ‘
অভ্র বর্ষার দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বলল, ‘ প্রথম গিয়েছি মনে হচ্ছে? ‘
বর্ষা শুনতে পায়নি তাই জোরেই বলে, ‘ কি বললে? ‘
অভ্র শালিনকন্ঠে বলতে লাগে, ‘ রাতে গরম পড়েছিলো খুব আর তুই তখন কান্না করে চলে আসলি। তাই তোকে এক নজর না দেখা অব্ধি আমি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারছিলাম না। সেজন্য তোকে দেখতে গিয়েছিলাম। দেখতে গিয়ে দেখি ঘামে ভিজে গেছিস তারপর আমি ’
বর্ষা অভ্রকে আর কিছু বলতে না দিয়ে থামিয়ে, দুইহাত দিয়ে নিজের দু’গাল চেপে ধরে অবাক হওয়ার মত মুখ হা করে শানিতকন্ঠে বলে উঠল, ‘ তারপর তুমি কি? ‘
‘ তারপর আমি পুরো রাত তোর পাশে বসে থেকে তোকে বাতাস করেছি আর তুই ঘুমিয়েছিস৷ ‘
বর্ষা অস্ফুটস্বরে বলে উঠল, ‘ কিহহ তুমি আর বাতাস? ‘
‘ অবাক হওয়ার কিছু নেই! এবার বল চিঠিটা কোথায় পড়েছো কি না? আর না পড়লে পড়ে আমাকে জানাও। আর পড়ে থাকলে বলো তোমার মতামত কি? এখনো বিয়ে করবে আমায়? ’
“ বিয়ে করবে না মানে কি? আলবত করবো একশো বার করবো। কিন্তু সত্যি বলতে আমি কোনো চিঠি পাইনি। কাপড় ধুতে গিয়ে অনেকগুলো কাগজের টুকরো দেখেছিলাম। যেটা ভিজার কারণে খারাপ হয়ে গিয়েছিলো৷ হয়তো তোমার রাখা চিঠি কাঁথার সাথে বাথরুমে চলে গিয়েছিল। আর আমি না দেখে ধুয়ে ফেলেছি। ”
অভ্র রাগী গলায় বলল, ‘ তুই এত কেয়ারলেস কেন? ’
বর্ষা মিনমিন করে বলল, ‘ কি ছিলো চিরকুটে? ’
অভ্র গুরুগম্ভীর কন্ঠে বলল, ‘ বাদ দে! যখন পড়তে পারিসনি তাই আর প্রশ্ন করিস না। আমি বলতে পারবো না বলেই তো লিখে দিয়ে ছিলাম। যাইহোক, এরপর থেকে একটু কেয়ারিং হওয়ার চেষ্টা কর। ‘
বলে অভ্র বর্ষার সামনে থেকে চলে গেলো। বর্ষা বালতি হাতে নিয়ে অভ্রর পেছন পেছন ছুটে গেলো।
★
দশ মিনিটের মধ্যে রেডি হয়ে রিয়ার সাথে কলেজ চলে যায় বর্ষা।
ক্লাসের মধ্যে বসে বসে ভাবছে, “ কি ছিলো চিরকুটে যা অভ্র আমাকে বলতে পারছে না। এমন কি আছে ওর জীবনে যেটা কাগজে লিখে প্রকাশ করতে হবে? আঁধোও কি কখনো ওই চিরকুটের খোলাসা হবে? আমি কি আঁধোও কোনো দিন জানতে পারবো অভ্র কি লিখেছিলো কাগজে? সত্যি-ই আমি খুব কেয়ারলেস! ”
চলবে?