অবন্তর_আসক্তি #সূচনা_পর্ব

0
3749

#অবন্তর_আসক্তি
#সূচনা_পর্ব
#শারমিন_আক্তার_বর্ষা (লেখিকা)

‘লাজ লজ্জা নেই তো নাকি ভেজা শরীরে একটা মেয়ে হয়ে মাঝ রাস্তায় ভূতের মতো দাঁড়িয়ে আছো কেন? ‘ (রাগী গলায়)

কথাটি শুনে প্রচন্ড মেজাজ গরম হয়ে যায় বর্ষার। ভ্রুকুটি কুঞ্চন করে ঠোঁটে আলতো কামড় দিয়ে তাকিয়ে রয়েছে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটার দিকে, বর্ষাকে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সে আবারও একই প্রশ্ন ছুড়ল,

‘ কি হলো চুপ করে আছো কেনো? এই বৃষ্টি ভেজা সন্ধ্যায় মাঝ রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছো কেনো? ‘

মাথার উপর বৃষ্টি তার উপর ঘুটঘুটে অন্ধকার সে সাথে এই লোকটার জেরা। বর্ষা লোকটার দিকে তাকিয়ে আছে, অন্ধকারের জন্য তেমন কিছুই নজরে পরছে না। শুধু সে যে তালগাছের মতো লম্বা এটাই ডের বুঝতে পারছে। বর্ষার ইচ্ছে করছে লোকটার গলা টিপে ধরতে সাহস হয় কি করে হুহহ তার সাথে এমন ভাবে কথা বলার? আজ পর্যন্ত এইভাবে তার সাথে কেউই কথা বলেনি। আর এই বেটা চেনা নাই জানা নাই হুট করে এসে ধমকাচ্ছে।

পেছন থেকে ছুটে আসে মাহিরা, আহিতা আর রিয়া, লোকটার সামনে এসে তিনজনে অস্ফুটস্বরে বলে উঠে, ‘ দেখে গাড়ি চালাতে পারেন না অন্ধের মতো গাড়ি চালান আর একটু হলেই তো আমাদের ফ্রেন্ড কে মেরে ফেলতেন। ‘

লোকটা তাদের সামনে হাতে তুড়ি বাজাতে বাজাতে বলল, ‘ ও হ্যালো আমি তোমাদের ফ্রেন্ডের সামনে গাড়ি নিয়ে আসিনি। তোমার ফ্রেন্ড আমার গাড়ির সামনে এসেছে নিজে মরতে, আর এতই যখন মরার শখ অন্য কারো গাড়ির নিচে গিয়ে মরুক না আমার গাড়ির নিচে কেন আসবে? ‘

কথাগুলো খুবই অপমানজনক, এইবার একটু বেশি বেশি বলে ফেলল। আকাশে হুট করে বাজ পরল সাথে বিদ্যুৎ চমকালো। সেই আলোতে সামনে থাকা লোকটার মুখ বর্ষা স্পষ্ট দেখতে পেলো। আর বর্ষার মুখ তো গাড়ির হেডলাইটের আলোয় শুরু থেকেই দেখছে সে।

রিমা বলল, ‘ আপনার সাহস হয় কি করে আমাদের তুমি করে বলতে? ‘

লোকটা ঠোঁট বাকা করে বলল, ‘ তাহলে কি তোমাদের আন্টি আপনে আগ্গা করবো? ‘

বর্ষা লোকটার ঠিক সামনে দাঁড়িয়ে বলল, ‘ আপনার কি আমাদের আন্টি মনে হচ্ছে? ‘

লোকটা ডোন্ট কেয়ার এটিটিউট নিয়ে বলল, ‘ তা আর বলতে? ‘

বর্ষা আঁড়চোখে বাকিদের দিকে তাকালো চোখ দিয়ে ইশারা করে। তারাও ইশারা বুঝে মাথা উপর নিচ নাড়ালো। বর্ষা ভ্রু উঁচু করে লোকটার উদ্দেশ্য প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলো, ‘ আপনি আমাদের চিনেন? জানেন আমরা কারা? ‘

লোকটা শাণিতকন্ঠে জানতে চাইল, ‘ না কারা তোমরা? ‘

রিয়া চুপিসারে মাটি থেকে দুই হাত ভরে কাঁদা নিয়ে বর্ষার হাতে দেয়। বর্ষা সুযোগ বুঝে লোকটার চিবুকে কাঁদা ছুঁড়ে মারল, বর্ষার সাথে মাহিরা, আহিতা, রিয়া ওরাও মুঠি ভর্তি কাঁদা লোকটার গায়ে ছুঁড়ে ফেলল,
সাথে বলল, ‘ আমরা তোর জম ‘ বলেই চারজনে একসাথে দৌঁড় দেয়।

দাঁড়িয়ে থাকা লোকটা ভেবাচেকা খেয়ে গেলো। কাঁদা ছুড়ে ফেলা মাত্রই মুখ দিয়ে অস্ফুটস্বরে বলে, ‘ What the ‘
ততক্ষণে সামনে তাকিয়ে তাদের আর দেখতে পারে না অন্ধকারে তারা বিলীন হয়ে যায়। তবে চারটার চেহারা খুব ভালো করে মনে আর্ট করে নিয়েছে। এখন থেকে কয়েকদিন গ্রামেই আছে তখন খুঁজে বের করে এর শাস্তি দিবে। গাড়ি তে বসে বসে ঝগড়া দেখছিল আর হাসছিল তবে শেষ পর্যায়ে এখন সে বেরিয়ে এসে কাঁধে হাত রেখে বলল, ‘ কি ব্যাপার? যে কখনো কোনো কিছুতে হারেনি। সে আজ একটা মেয়ের কাছে হেরে গেলো। ও সরি সরি একটা নয় দুইটা নয় চারটা মেয়ের কাছে। ‘

ধমকের স্বরে বলল, ‘ তুই চুপ করবি শুভ্র, চল এখান থেকে মুড টাই নষ্ট করে দিলো। ‘

শুভ্র পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলো, ‘ কোণ্থায় যাবো? ‘

লোকটা রুমাল দিয়ে শার্টে লেপ্টে থাকা কাঁদা ক্লিন করতে করতে জবাব দিল, ‘ তোর ফ্লাটের দিকে চল। এই অবস্থায় আজ আর বাড়ি যাবো না। কাল ঘুম থেকে উঠে তারপর বাড়ি যাবো। ‘

_______
সন্ধ্যা হয়ে গেছে বাড়ি ফিরার তাড়া কিন্তু এদিকে গাড়িটাও খারাপ হয়ে গেছে আমরা চারবান্ধবী রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছি। বেশ মজাই লাগছে আজ কোচিং সেন্টার থেকে একটু লেইট করে ছুটি দিয়েছে স্যার আজ আসতে লেইট করেছিলো ৩০ মিনিট তাই আমাদের ছুটির সময়ের পরেও আরও ৩০মিনিট পড়ালো। আকাশ টা বেশ মেঘলা হিমেল ঠান্ডা বাতাস বইছে শীতল করে দিয়ে যাচ্ছে পুরো অঙ্গ। পরিবেশ টা অসাধারণ লাগছে এই বাতাসে রাস্তায় থাকা ধুলো বালি উড়ছে গাছের ডালপালা দোল খাচ্ছে খোলা চুলগুলো উড়ছে মনের মধ্যে এক অন্য রকম শান্তি লাগছে। ইচ্ছে করছে এখন এই শীতল হাওয়ায় নিজেকে বিলিয়ে দিতে ইচ্ছা করছে দুই হাত মেলে হাওয়ার সাথে উড়ে যেতে। সবসময় গাড়িতেই চলাচল করা হয় মাঝেমধ্যে এই বন্ধুদের সাথে রাস্তায় ঘুরতে বের হলে হাঁটা হয়। অনেক তো বললাম এখন নিশ্চয়ই আপনারা আমার পরিচয় নিয়ে ভাবছেন। আর ভাবতে হবে না চলুন পরিচয় হয়ে নেই..
আমি , এইবার ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে অধ্যয়নরত অবস্থায় আছি। আর এরা হচ্ছে আমার সাঙ্গু পাঙ্গু আমার সব সময়ের সঙ্গী মাহিরা, আহিতা আর ও হচ্ছে আমার ছোটো বোন রিয়া বেশি ছোট না এই তিন মাসের ছোটো আমার ছোট চাচ্চুর মেয়ে। আমরা সবাই ২৪ঘন্টার মধ্যে ১৮ ঘন্টা এক সাথেই থাকি আমাদের বাড়ি পাশাপাশি হওয়ায় সুবিধা অনেক বেশি। যখন তখন দেখা করতে চলে যাই আবার চলে আসি। এই রাস্তায় সবসময়ই মানুষ থাকে আজকের আবহাওয়ার জন্য হয়তো কোনো মানুষ নেই সবাই বাড়ি ফিরে গেছে। সামনে দোকান পাট ও বন্ধ।
এদিকে আমরা পাঁচ জন মেয়ে একা হেঁটে যাচ্ছি মনের মধ্যে একটু হলেও ভয় করছে৷ ভয়ের যথাযথ কারণও আছে গত সপ্তাহে এই রাস্তায় দুজন প্রতিবেশি আঙ্কেলকে ডাকাত দলেরা ধরে ছিলো। সঙ্গে যা ছিলো সব নিয়ে গেছে একজন দিতে চায়নি বলে তার গায়ে ছুড়ি চালাতে তারা দু’বার ভাবেনি। এইটা ভেবেই আমার আত্মা শুকিয়ে যাচ্ছে, আমাদের সাথে যদি এমন হয় তখন ভাবতে ভাবতেই আমার ভাবনার উপর বাজ পরল। আমি ‘আল্লাহ গো’ বলে চিৎকার দিয়ে মাঝ রাস্তায় কানে হাত দিয়ে বসে পরলাম। আকাশে বারবার বিকট শব্দ হচ্ছে এদিকে ঝুম ধারায় বৃষ্টি ও নেমেছে। ভয়ের চটে উঠে দাঁড়াতেও পারছি না। বৃষ্টি নামার সঙ্গে সঙ্গে আমার পরহেজগারী বান্ধবী ও বোনটা আমাকে একা রেখেই ছুটে চলে গেলো। রাস্তার পাশে অনন্য বন্ধ দোকানের সামনে। চাল থেকে পানি পরছে। সেখানে দাঁড়িয়েই তিনজনে জানপ্রাণ দিয়ে বর্ষাকে ডাকছে তবে সে শুনতে পাচ্ছে না। প্রথমত বৃষ্টি পরার শব্দ দ্বিতীয়ত কানে হাত দিয়ে রেখেছে। কাঁচা রাস্তা তাই বৃষ্টির পানিতে জাগায় জাগায় গর্তে পানি জমেছে আর রাস্তা কাঁদা মাটিতে পরিণত হয়েছে।
আকাশের বিকট শব্দ এখন আর হচ্ছে না।
কিন্তু বৃষ্টি পরা কমেনি। কানে হাত রেখেই মাথা তুলে আকাশের দিকে তাকালো ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পরছে। কান থেকে হাত সরিয়ে লাফিয়ে উঠে দাড়িয়ে পরল বর্ষা। পেছন রাস্তা দিয়ে আসছে একটা সাদা মাইক্রো গাড়ি। বর্ষা রাস্তায় বসা ছিল সেটা গাড়ির ড্রাইভার লক্ষ্য করেনি হুট করে দাড়িয়ে পরে বলে। গাড়ি ব্রেক করতে হিমশিম খেয়ে যায় ড্রাইভার। আর একটু হলে এক্সিডেন্ট হয়ে যেতো। গাড়ি আসতে দেখে আহিতা,মাহিরা রিয়া ওরা তিনজন বর্ষা বলে চিৎকার করে দুইহাত দিয়ে চোখ ঢেকে নেয়। তাদের মতে চোখ খুললে বর্ষাকে এখন তারা মৃত পাবে।

পেছন থেকে গাড়ির হেডলাইটের সোনালী আলো দেখে ভয় পেয়ে পেছনে ঘুরে তাকায়। হুট করে গাড়ি ব্রেক করার ফলে পেছনের তিনজন সামনের দিকে ঝুঁকে পরে আর সামনের জন কিছুটা ঝুকে পরলেও তার সিট বেল্ট এর জন্য বেঁচে যায়। ড্রাইভারের দিকে তাকিয়ে তেজি কন্ঠে বলল, ‘ এইভাবে কেউ ব্রেক কষে? ‘

ড্রাইভার হতভম্ব হয়ে বলল, ‘ স্যার সামনে একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে তাই ‘

ড্রাইভারের কথা শেষ না করতেই আগন্তুক সামনে মেয়েটার দিকে তাকালো, সত্যি একটা মেয়ে পুরো ভিজে দাঁড়িয়ে আছে, ছাতা খুলে গাড়ি থেকে নেমে আসল। বর্ষার সামনে দাঁড়িয়ে উপরের কথা গুলো বলল।
_________

সবাই বাড়ির সামনে এসে হাঁটু তে হাত রেখে জোরে জোরে নিশ্বাস ফেলছে, কিছুক্ষণ আগের ঘটনা মনে করে হাসতে হাসতে মাটিতে গড়াগড়ি খাওয়ার মতো অবস্থা হয়, বেলকনি থেকে চারটা পেত্নীর হাসির শব্দ শুনে নিচে উঁকি দিয়ে তাকালো তিন্নি। দেখতে পেলো চারজনেই বৃষ্টিতে ভিজে চিপচিপে হয়ে আছে। বেলকনির উপর থেকে ডাক দিয়ে বর্ষা ও রিয়া কে বাড়ির ভেতরে আসতে বলল তিন্নি, তারাও প্রত্যত্তরে বলল, ‘ আসছি আপু ‘

আহিতা ও মাহিরার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাড়ির মধ্যে চলে গেলো। রুমে এসে দু’জনে ভেজা কাপড় চেঞ্জ করে নেয়। রাতে পরিবারের সকলে এক সাথে ডিনার করতে বসে। এরই মধ্যে বর্ষা আর রিয়া দু’জনে তিন থেকে চারবার হাচ্চি দিয়ে ফেলেছে। বাড়ির বড়রা ওদের দিকে আঁড়চোখে তাকিয়ে আছে।
‘ বৃষ্টি তে ভিজে কেনো আসতে হবে? বৃষ্টি কমলে আসবে আর নয়তো কল দিবে বাড়ি থেকে গাড়ি পাঠিয়ে দিতাম। এখন ঠান্ডা বাঁধিয়ে বসলে তো দুজনে ‘

নূর ইসলাম বর্ষার দাদা কথাগুলো বললেন। বর্ষা তার দাদার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘ কোচিংয়ে ফোন নিয়ে থুড়ি না গিয়েছিলাম মাঝরাস্তায় বৃষ্টি নেমে গিয়েছিল। আর তুমি চিন্তা করো না ঘুমানোর আগে কড়া করে এককাপ চা খেলে সব ঠিক হয়ে যাবে দাদু। ‘

কেউ আর কোনো কথা বলল না। এ বাড়িতে নূর ইসলাম এর কথাই শেষ কথা। খাবার সম্পূর্ণ করে রুমে চলে যায় রিয়া আর বর্ষা যাওয়ার আগে কড়া করে রং চা বানিয়ে নিয়ে আসে। দু’জনে বসে বসে গল্প করছিল। রিয়া ফোনের মধ্যে মুখ গুঁজে উপুড় হয়ে শুয়ে ফোন স্ক্রল করছে। হাতে চায়ের কাপ নাড়াতে নাড়াতে বর্ষা রিয়ার উদ্দেশ্য প্রশ্ন ছুড়ল, ‘ কি দেখছিস ফোনে এত মন দিয়ে? ‘

রিয়া প্রত্যত্তরে বলল, ‘ আমার ফ্রেন্ড লিস্টে একটা কিউটের ডিব্বা এ্যড হইছে। ‘

‘ ডিব্বা টা ফেসবুকে গেলো কেমনে। রাস্তা পেলো কিভাবে? ‘

রিয়া রেগে উঠে বসে বলল, ‘ আরে ধুর বুঝিস না কেন? কিউটের ডিব্বা বলতে একটা ছেলে অনেক কিউট আমি রিকুয়েষ্ট দিয়েছিলাম ভাবছিলাম এক্সেপ্ট হয়তো করবে না কিন্তু এক্সেপ্ট করছে। দেখ তার কত ফ্যান ফলোয়ার আর দেখ সে কত কিউট, ‘

ফোনটা বর্ষার মুখের সামনে নিয়ে বলল। বর্ষা বিরক্তি নিয়ে রিয়ার হাত সরিয়ে দিয়ে বলল, ‘ এইসব ফাউ জিনিসে তোর আগ্রহ থাকতে পারে কিন্তু আমার নেই, ‘

বলে খিচে বন্ধ নাক টান দিলো৷ পরক্ষণেই চায়ের কাপে চুমুক দিলো, চা অতিরিক্ত গরম হওয়ায় জিব জ্বলে যায় বর্ষার সে ‘ আল্লাহ গো জিব টা পুড়ে গেলো রে। ‘ অস্ফুটস্বরে বলে উঠল।

রিয়া বর্ষার দিকে তাকিয়ে হাসতে হাসতে বলল, ‘ রাক্ষসী, ফু দিয়ে ঠান্ডা করে খাবি না। ‘

বর্ষা ‘ যা আর চা’ই খাবো না। প্রতিবারই চা খেতে নিলে আমার সাথে এমন টাই হয়। ধুর ধুর ধুর, ‘

বলে চায়ের কাপ টেবিলের উপর রেখে দিলো।
ভ্রুকুটি কুঞ্চন করে রাগে ফুসফুস করছে। এমন সময় আবারও হতভম্ব হয়ে বলে উঠে, ‘ ওই বজ্জাত ছেলেটা নিশ্চয়ই আমাকে বকতাছে তাই এমন হইছে। ‘

রিয়া লাফ দিয়ে বিছানার উপর উঠে বসল বর্ষার সাথে তালেতাল মিলিয়ে বলল, ‘ একদম কারেক্ট বলছিস বোনু ‘

বর্ষা দুই হাত কচলাতে কচলাতে বিছানার উপর ধপ করে শুয়ে পরে। রিয়া বর্ষার মাথার সাথে মাথা ঠেকিয়ে শুয়ে প্রশ্ন ছুড়ল, ‘ লোকটা তো আমাদের চারজনকে দেখেছে যদি আমাদের খুঁজতে বাড়ি পর্যন্ত চলে আসে তখন কি করবি? ‘

‘ আরে ধুর সে শুধু ফেস টাই দেখছে আর এত বড় এলাকায় সে আমাদের কোথায় কোথায় খুঁজবে বাদ দে ওইসব কথা। জাস্ট চিল বোনু ‘ বর্ষা বলল।

তারপর দুজনে কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে পরল।

ওইদিকে, রুমের বড় আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে হেয়ার ড্রায়ার দিয়ে চুল শুকাচ্ছে অর্ধ উলঙ্গ হয়ে।
পরনে নিচে শুধু সাদা টাওয়াল পেঁচানো। এই নিয়ে পাঁচ বার গোসল করেছে তবুও গা থেকে মাটির গন্ধ দূর করতে পারেনি৷ বিছানার উপর আরাম করে শুয়ে ফোন স্ক্রল করছে সাহিল, শুভ্র, তুহিন আর সুজন পাশের রুমে ঘুমাচ্ছে। সাহিল ফোন স্ক্রল করছে বলতে কারো সাথে চ্যাট করছে আর ঠোঁট বাকা করে মিটমিট করে হাসছে। আয়নার দিকে তাকিয়ে পেছনে সাহিলের উদ্দেশ্য বলল, ‘ ওই মেয়ে কে শুধু একবার হাতের কাছে পাই ওর চৌদ্দ গোষ্ঠী উদ্ধার করবো আর নয়তো আমার নাম ও.. ‘

কথা শেষ করতে না দিয়ে পেছন থেকে সাহিল হাত তুলে বলল, ‘ থাম ভাই তোর নামের প্রতিধ্বনি আর বলতে হবে না এতদিন ধরে সেটাই শুনে আসছি আজ আর না। যখন পাবি তখন দেখেনিস এখন অন্তত চুপ থাক। বাই দ্য ওয়ে, মেয়েটা কি কিউট ছিল নাকি রে? ‘

সাহিলের এমন বেহুদা প্রশ্ন শুনে মেজাজ গরম হয়ে যায়। আয়নার সামনে থেকে একটা পারফিউমের বোতল নিয়ে পেছনে সাহিলের দিকে ছুঁড়ে ফেলল৷ তা গিয়ে পরল সাহিলের কপালের মাঝ বরাবর। মুখ দিয়ে ‘ আহ ‘ শব্দ উচ্চারণ করল সাহিল।
পরক্ষণেই বলল, ‘ বুকে ছুড়ি মেরে গেলো এক সুন্দরী রমণী আর তার শোকে পারফিউমের বোতল ছুড়ে ফেলছিস তুই এই অধমের কপালে। ‘

পেছনে ঘুরে টেডি স্টাইল দাঁড়িয়ে ভ্রুকুটি কুঞ্চন করে প্রশ্ন ছুঁড়ল, ‘ কি বললি? ‘

সাহিল বিছানার উপর উঠে বসতে বসতে বলল, ‘ ও সরি সরি! মাই মিস্টেক, ওটা হবে গিয়ে। বুকে কাঁদা মেরে গেলো এক সুন্দরী রমণী আর তার শোকে পারফিউমের. ‘

‘ থাক আর বলতে হবে না৷ আবারও যদি ওই বজ্জাত মেয়েটার নাম আমার সামনে নিস তো, ‘

সাহিল হাসার চেষ্টা করে বলল, ‘ থাক ভাই তোর আর কষ্ট করে বলতে হবে না আমি বুঝে গেছি। ‘
_____
সকালে ঘুম ভাঙে বাড়ির মানুষের চেঁচামেচিতে এক হাত দিয়ে চোখ মুখ কচলাতে কচলাতে রুম থেকে বেরিয়ে আসল রিয়া সাথে বর্ষা।
বাড়ির সব মহিলারা একসাথে এত সকালে এত আয়োজন কিসের জন্য করছে? পিঠেপুলি থেকে শুরু করে সবকিছু বানাচ্ছে। কিচেন থেকে পোলাও এর ঘ্রাণ আসছে৷ রিয়ার জিবে জল চলে আসছে, বর্ষা ঘুম ঘুম চোখে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে প্রশ্ন ছুড়ল, ‘ সকাল সকাল এত আয়োজন কেনো করছো সবাই মিলে? কোনো সেলেব্রিটি আসছে নাকি বাড়িতে? ‘

বর্ষা মা প্রতিত্তোরে বলল, ‘ সেলিব্রিটি কি বলছিস বল আমাদের সকলের নয়নের মনি আমাদের বাড়ির রাজপুত্র বাড়িতে আসছে। ‘

এমন তারা কথা শুনে চোখ জোড়া টমেটোর মতো বড়বড় ও গোলগোল হয়ে গেছে নিমিষেই ঘুম বাবাজি গায়েব হয়ে গেলো।

দু’জনের এমন অবস্থা দেখে প্রশ্ন ছুড়ল বর্ষার বড় ফুপি, ‘ কি হয়েছে তোদের দু’জনের মুখ বাংলার পাঁচ এর মতো কেনো হয়ে গেছে? ‘

বর্ষা কপাল ভাজ করে বলল, ‘ কিচ্ছু হয়নি আমাদের, তোমাদের তো আজ ঈদ লাগছে তোমাদের কলিজার টুকরা রাজপুত্র আসতাছে। তাই এত আয়োজন করতাছে আর আমরা তো কিছুই না। তাই আমাদের জন্য এত কিছু করো ও না। ‘

ছোট চাচি রিমার মা বলল, ‘আমাদের ছেলেকে নিয়ে কিছু বলবি না। কতবছর পর বাড়িতে আসছে আর ওর জন্যই সব আয়োজন ওর খাওয়ার পর যদি কিছু টা মানে কিছু টা বেঁচে যায় তখন তোরা খেয়ে নিস। ‘

বর্ষা ক্ষিপ্ত হয়ে বলল, ‘ What the ফাউ কথা। আমরা কেন ওর খাওয়ার পর বেঁচে থাকলে ওটা খাবো? ‘

ছোটো ফুপি বলল, ‘ খেলে খাবি না খেলে না খাবি। তোদের দু’জনকে আমরা তো আর জোর করছি না যে খেতেই হবে। ‘

বর্ষা রিয়াকে উদ্দেশ্য করে বলল, ‘ এখানে দাঁড়িয়ে থেকে নিজেদের অপমান করিয়ে লাভ নেই চল নিজেদের রুমে চলে যাই। ‘

‘ হুহ চল। বাহিরে আমাদের যতটা সম্মান আছে বাড়ির মধ্যে তার এক ইঞ্চি ও নেই। ‘ রিয়া বলল।

দু’জনে রেগেমেগে এলোপাথাড়ি পা ফেলে হেঁটে চলে গেলো৷
রুমে এসেই বর্ষা আনিতা, মাহিরাকে কল দিয়ে বললো ওদের বাড়িতে চলে আসতে৷ কিছুক্ষণ পর,

#চলবে….?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here