অবশেষে তুমি –পর্ব এক

0
7018

আমার স্বামী যখন আমার দিকে কামনার দৃষ্টিতে হাত বাড়িয়ে ছিল তখন ওর শরীর থেকে তীব্র মদের গন্ধে আমার সমস্ত শরীর গুলিয়ে উঠলো । মনে হচ্ছিল ওর শরীর থেকে পর – নারীর অস্তিত্ব জ্বল জ্বল করছে। আমি ওর দিকে তাকিয়ে ছলছল চোখে বললাম,,
,
– এভাবে আর কতোদিন নিজেকে শেষ করবে অনিক?
ও চোখ দুটো রক্তের মতো লাল করে বললো,,
— যতোদিন না আমি ভুলতে পারবো।
–প্লিজ অনিক, ওর সাথে আমার রিলেশন ছিল ঠিক কিন্তু সেটা খুব পবিত্র ছিল। ও আমাকে কখনো ছুঁয়ে ও দেখেনি।
— আমি বিশ্বাস করি না। বল কতোবার ওর সাথে ফিজিক্যাল রিলেশন করেছিস?
,
,
অনিকের এমন জঘন্য কথা শুনে আমার শরীর ঘৃণায় রি রি করে ওঠে। কি করে ওকে বলি,, অনিক, আমি ওকে একদিন ভালোবেসে ছিলাম কিন্তু এখন আমার সব কিছু তুমি।
,
আয়ান,, আমার জীবনের আরেকটা অধ্যায়। ওর সাথে আমার দেখা একটা হাসপাতালে।
মায়ের হঠাৎ করে সেদিন প্রেসার টা খুব বেড়ে গিয়েছিল। আমি অনেক ভয় পেয়ে গেলাম। বাবা আর ভাইয়া একটা জরুরি কাজে দু দিনের জন্য বাইরে ছিল। তাঁর মধ্যে হঠাৎ করে মায়ের এমন অবস্থা ।
,
মাকে আমি হাসপাতালে নিয়ে পাগলের মতো ডাক্তার খুজতে লাগলাম।
এমন সময় আমার সামনে এলো আয়ান। সাদা ইউনিফর্ম দেখে বুঝতে সমস্যা হলো না ও এই হাসপাতালের ডাক্তার। আমাকে এমন কান্না কাটি করতে দেখে তাড়াতাড়ি করে এগিয়ে এসে বললো,,
,
— আমরা দেখছি, আপনার মায়ের কি হয়েছে। আপনি একটু শান্তহন। প্লিজ ভেঙে পরবেন না।
,
এই বলেই মা কে নিয়ে ভিতরে চলে গেলো।
আমি বাবা আর ভাই কে ফোন করে জানালাম। বাবা বললো,,
— চিন্তা করিস না মা। আমরা এখনি আসছি।
,
আধা ঘণ্টা পর আয়ান আমার সামনে এসে বললো,,
— আপনার মা এখন অনেক সুস্থ। প্রেসার এখন নরমাল। এই ঔষধ টা এখনি খাওয়াতে হবে।
,
এই বলেই একটা কাগজ আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে চলে গেলো।
আমি ভিষণ চিন্তায় পরে গেলাম। এখন রাত একটা। কোথায় যাবো ঔষধ আনতে। বাবা ভাইয়াও এখনো এলো না।
,
এমন সময় পিছন থেকে আয়ান আমাকে বললো,,
,
— কিছু মনে না করলে একটা কথা বলি?
— জ্বী বলুন।
— আপনার সাথে আর কেউ আসেনি।
— আসলে বাবা আর আমার ভাই দুজনেই একটা জরুরি কাজে বাইরে,,,,,, ,।
— আচ্ছা ঠিক আছে আপনি আপনার মায়ের আছে গিয়ে বসুন আমি দেখছি।
,
এই বলে কাগজটা আমার হাত থেকে নিয়ে বাইরে যেতে লাগলো,,
আমি তাড়াতাড়ি করে বললাম,,
,
— আপনার যদি কোনো সমস্যা হয়,,,
,
আয়ান তখন হেসে দিয়ে বললো,,

— ডাক্তার হলেও আমরা মানুষ।
,
এই প্রথম আয়ানের মুখটা ভালো করে দেখলাম। একটা পবিত্র চেহারার মানুষ। মুখ ভর্তি কালো চাপ দাড়ি। চোখে কালো ফ্রেম এ বাধা চশমা। একটা মায়াবী চেহারা ছেলেটার।
,
আমি আর কিছু না ভেবে মায়ের কাছে গিয়ে বসলাম।
মা আমাকে দেখে পাশে বসিয়ে হাতটা ধরে বললো,,
— তোর বাবা আসে নি?
— বাবা আর ভাই রওনা দিয়েছে মা। চলে আসবে। তোমার এখন কেমন লাগছে মা?
— আগের থেকে ভালো মা। ওই ছেলেটা অনেক ভালো।
— কোন ছেলেটা মা?
— ওই যে চশমা পরা। মুখ ভর্তি কালো দাড়ি।
,
এমন সময় আয়ান ঔষধ নিয়ে এলো। আমাদের কাছে রেখে চলে যেতে যেতে বললো,,
,
— আমার আজ রাতের ডিউটি। সকাল সাতটায় ডিউটি শেষ। এর মধ্যে কোনো সমস্যা হলে আমাকে জানাবেন।
,
এই বলেই চলে গেলো। আমি মাকে ঔষধ খাওয়ালাম। মা এখন ঘুম। আমি মায়ের পাশে বসে আছি।
এর মধ্যে কখন চোখ বুজে এসেছে বুঝতে পারি নি। হঠাৎ করে জেগে উঠতে বুঝতে পারলাম আয়ান হয়তো চলে গেছে। কারণ ও সাতটায় চলে যাবে। এখন সাতটার বেশি বাজে। আমার মনটা কেন জেনো খারাপ হয়ে গেলো। একবার বলে যেতে পারতো।কিন্তু নিজের মনেই হেসে দিলাম ও হচ্ছে আমার অপরিচিত। কেন বলে যাবে?

,
একটু পর একজন নার্স এলেন। এসে বললেন,,
— এখন কি অবস্থা ম্যাম?
— আগের থেকে ভালো।
— আয়ান স্যার এসেছিলেন আপনারা ঘুম ছিলেন তাই আর ডাকেনি। আমাকে বলে গেলেন আপনারা বাসায় চলে যেতে পারেন কোনো সমস্যা নেই।
,
এই বলেই নার্স চলে গেলো। তার মানে আয়ান এসেছিল এখানে যাওয়ার আগে। ইসসস কেন যে ঘুমোতে গেলাম। ধ্যাত কি সব যে ভাবছি। এমন ও হতে পারে আয়ান ম্যারিড ওর বাচ্চা আছে।
,
সকাল দশটার দিকে মা কে নিয়ে বাসায় চলে এলাম।
কিন্তু কেমন যেন সারা দিন একটা অস্থিরতা কাটতে লাগলো। মন কে যতোই এটা ওটা বলে বোঝাতে লাগলাম ততোই অবুঝ হতে লাগলো।
,
,
এর এক বছর পর আমার বিয়ে ঠিক হলো অনিকের সাথে। কিন্তু এই এক বছরে আমার জীবনে অনেক কিছু ঘটে গেছে। আমি বাসর রাতেই অনিককে আমার অতিত বলেছিলাম,।
অনিক ঘরে ঢোকার পর টুকটাক কথা হলো। তখন আমি ওকে বললাম,,
,
— তোমাকে আমি কিছু বলতে চাই অনিক?
— তোমার সব কথা আমি পরে শুনবো ইরা। আগে চলো বাইরের চাঁদ দেখি। আমার কি ইচ্ছে ছিল জানো? আমার বাসর খোলা আকাশের নিচে হবে। আমার মিষ্টি বউয়ের শরীরে প্রথম ছোঁয়া এসে পরবে মিষ্টি চাঁদের।
— অনিক প্লিজ তুমি একবার আমার কথা শোন?
— কথাটা কি খুব জরুরি ইরা?
— আমার কাছে জরুরি অনিক।
— আচ্ছা ঠিক আছে বলো।
— অনিক আমি জানি বিয়ের প্রথম রাতেই এটা বলা কোনো মেয়ের উচিত নয়। কিন্তু আমি আমার বিবেকের কাছে প্রতি নিয়তো শেষ হয়ে যাচ্ছি।
— তোমার কথা আমি কিছু বুঝতে পারছি না ইরা।
–আমি তোমার আমার জীবন সত্যি দিয়ে শুরু করতে চাই।
— কি হয়েছে বলবে তো?
— অনিক, আমি বিয়ের আগে একটা ছেলেকে ভালোবাসতাম । কিন্তু ওটা ছিল অতিত। এখন আমার সব কিছু তুমি।,
,
অনিক আমার কথা শুনে কিছু সময় চুপ করে বসে রইলো। হঠাৎ করে ওর চেহারা ভয়ংকর হয়ে উঠলো। আমার দিকে রাগের সাথে তাকিয়ে বললো,,
— কতোদিন ধরে চলছিল এ সব?
,
আমি অনিকের এমন কথায় ধাক্কা খেলাম। আচ্ছা ও খারাপ কিছু ভাবছে না তো?
অনিক আমাকে ও ভাবে চুপ করে থাকতে দেখে চিতকার করে করে বলে উঠলো,,
— সত্যি করে বলো এই সম্পর্ক বিছানায় গড়িয়ে ছিল কিনা?
— ছি অনিক তুমি কি বলছো এ সব?
— আমি ঠিক ই বলছি।
— আমাদের ভালোবাসা অনেক পবিত্র ছিল অনিক।
,
আমার কথা শুনে অনিক অট্ট হাসি দিয়ে বললো,,
,
— ভালোবাসা তাও আবার পবিত্র? হা হা হা। সব কিছু বয়ফ্রেন্ড কে দিয়ে আমার কাছে কি নিয়ে এসেছো ইরা?
— প্লিজ চুপ করো। আমি চাইলে তোমার কাছে লুকাতে পারতাম। কিন্তু চাইনি মিথ্যে দিয়ে আমাদের জীবন শুরু হোক।
তোমার মুখে যা আসে বলতে পারো না অনিক।
,
আমার কথা শুনে অনিক আচমকা গলা চেপে ধরে বললো,,,
,
— চুপ একদম চুপ। তোকে যেদিন প্রথম দেখি পাগলের মতো ভালোবেসে ফেলি। বিয়ের কথা বলি বাসায় এসে। তোকে আমার বউ করতে কতোটা কষ্ট করতে হয়েছে সেই খবর তোর জানার ও কথা না।
আমি অনিকের এমন বিহেভ দেখে ভয় পেয়ে গেলাম। ওকে বললাম,,,
— অনিক আমি ব্যথা পাচ্ছি ছাড়ো আমায়।
অনিক দাঁত কটমট করে বললো,,
— তোকে আমি তিলে তিলে মারবো। কেন করেছিলি এমন?
,
,
অনিক একটা সাইকো আমার বুঝতে বাকি নেই। আমার গলা ছেড়ে দিয়ে বাইরে চলে গেলো।
আমি হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলাম।
আমি আমার অতিত ভুলতে চাই অনিক তোমার ভালোবাসা পেয়ে। কিন্তু তুমি আমায় ভুল বুঝে চলে গেলে।

,

,

,

অবশেষে তুমি
–পর্ব এক
–লেখা অধরা জেরিন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here