অবশেষে তুমি -পর্ব দুই

0
4957

অবশেষে তুমি
-পর্ব দুই
,
,
হাসপাতাল থেকে যেদিন বাসায় এলাম সারাদিন একটা অস্থিরতায় দিন কাটতে লাগলো। হয়তো মন -প্রান জুড়ে আয়ান বিরাজ করছিল। আমাদের ভালোবাসার মাপকাঠি অনেক অদ্ভুত। সময়, কারণ, কিছুই বুঝতে চায় না। এভাবে কেটে গেলো কয়েকটা দিন।
,
আস্তে আস্তে আয়ান আমার চিন্তা ভাবনা থেকে দুরে সরে যেতে লাগলো। নিজেকে মানিয়ে চললাম সময়ের সাথে সাথে।
সেদিন ছিল আমার জীবনের একটা বিশেষ দিন।
কয়েক বন্ধু মিলে হইচই করে ফুসকা খেতে গেলাম।
সবে একটা ফুসকা মুখে পুরেছি এর মধ্যে আমার সামনে আয়ান এসে হাজির। সেই মুখ সেই চশমা আর মায়াবী চোখ।
আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি।
,
আয়ান আমার পাশের বন্ধুকে বললো,,
— আরে মিলা যে? কেমন আছিস? খালাম্মা কেমন আছে?
,
আমি রীতিমতো অবাক। মিলার তাহলে কি পরিচিত? মিলা ও হেসে দিয়ে বললো,,
— সবাই ভালো। কিন্তু তোমার কি খবর আয়ান ভাইয়া আমাদের কি ভুলে গেছো?
— আরে না তোদের কেন ভুলবো। নতুন জব। অনেক দায়িত্ব সারা দিন।
— কোথায় থাকো এখন?
— হাসপাতালের কাছে বাসা নিয়েছি ছোট্ট একটা। একা মানুষ চলে যায় দিন।
–আম্মু তোমাকে কতো করে বললো আমাদের বাসায় থাকতে তুমি শুনলে না।
— এখনো তোর সেই ঘুমের মধ্যে নাক ডাকার,,,, ,,,, ।
–ভাইয়া ভালো হচ্ছে না কিন্তু।
, এই বলে দু জনে হাসতে লাগলো।
,
আমি পাশে দাড়িয়ে দুজনের খুনসুটি শুনছি। হিসাব মিলাতে পারছি না ওদের সম্পর্ক কি?
,
হঠাৎ করে মিলা বললো,,
— ভাইয়া এ হচ্ছে আমার সব থেকে কাছের বন্ধু ইরা।
তারপর আমাকে বললো,,
–ইরা এ হচ্ছে আমার একমাত্র কাজিন আয়ান। বিশাল বড়ো ডাক্তার।
,
আয়ান হেসে দিয়ে বললো,,
–আমি আগের থেকে চিনি ওনাকে কিন্তু নাম জানি না।
মিলা দুষ্টমি ভরা চোখ গোল গোল করে বললো,,
–চেনো মানে?
— আমাদের হাসপাতাল দেখা হয়েছিল।
,
তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বললো,,
,
— এখন কেমন আছেন আপনার মা?
–জ্বী ভালো। আপনাকে সেদিন ধন্যবাদ দিতে পারিনি আপনি চলে গিয়েছিলেন।
,
আয়ান কিছুটা অবাক হওয়ার ভান করে জিজ্ঞেস করলো,,
–কিন্তু ধন্যবাদ কেন?
–ওতো রাতে আমার মায়ের জন্য ঔষধ এনে দিয়েছিলেন।
,
আয়ান আমার কথা শুনে জোরে জোরে হেসে দিয়ে বললো,,
,
— এটা আমার দায়িত্ব। ধন্যবাদের কিছু নেই।
,
তারপর মিলা কে বললো,,
,
— যাই রে, একটা কলিগের বাসায় এসে ছিলাম। দুর থেকে তোকে দেখে এগিয়ে এলাম। একদিন আমার বাসায় আসিস।
— আচ্ছা যাবো। তুমি একদিন বাসায় এসো। মা তোমার কথা সে দিন বলছিল।
— ঠিক আছে যাবো। ভালো থাকিস।
,
আয়ান চলে যাবে। এমন সময় আমার দিকে তাকিয়ে বললো,,
— আপনি যেহেতু আমার বোনের বেস্ট বন্ধু তাই তুমি করে বললাম। একদিন আসো মিলার সাথে চুটিয়ে আড্ডা দেওয়া যাবে।
আমি কিছু টা লজ্জা পেয়ে মাথা নাড়ালাম।
,
আয়ান চলে যেতে মিলা আমাকে চেপে ধরলো বললো,,,
— কি রে আমার ভাই কে চিনিস আগে বলিস নাই তো?
ওর কথা শুনে হেসে দিয়ে বললাম,,,
— দ্যাখ, আমার মাথায় জট নেই যে আমি জানবো ওটা তোর ভাই।
,
এই কথায় দু জনে হেসে দিলাম।
বাসায় এসে আমি আবার নতুন করে ভাবতে লাগলাম।
এখন যেন আরো ভালো লাগছে ওকে নিয়ে চিন্তা করতে।
,
একদিন ছুটির দিনে জোর করে মিলা আমাকে নিয়ে আয়ানের বাসায় হাজির হলো। আয়ান ভিষণ খুশি হলো আমাদের দেখে।
বললো,,
— ভালোই হলো একা একা বোর হচ্ছিলাম।,
,।
তারপর আমাদের বললো,,
— আজ অনেক আড্ডা হবে। আমি বাজারে যাচ্ছি।
আমি ওর এই ছেলে মানুষী দেখে তাড়াতাড়ি বললাম,,
— না না প্লিজ আপনি বাজারে যাবেন না। আমরা এখনি চলে যাবো।
আয়ান চলে যেতে যেতে বললো,,
— চুপ করে বসোতো তোমরা। আমি যাবো আর আসবো।
,
আয়ান চলে যেতে মিলা খোঁচা দিয়ে বললো,,
— দ্যাখ দ্যাখ ভালো করে দ্যাখ। বিয়ের পর এখানে তোকে থাকতে হবে।
আমি ওর কথা শুনে অবাক হয়ে গেলাম। ওকে বললাম,,
— বেশি পাকামো হচ্ছে মিলা। এখানে থাকতে হবে মানে?
— আহারে আমার বাবু। কিছু বোঝে না। তোকে আমার ভাবি করবো।
,
আমি ওর কথা শুনে ভিষণ লজ্জা পেলাম। ওর পিঠে কিল দিয়ে বললাম,,
— তোকে আমি মেরে ভর্তা করবো। তোর ভাই কে বিয়ে করলে তো।
— জানি জানি তলে তলে অনেক দুর গড়িয়ে গেছে।
,
ওর কথা শুনে আমি হাসতে লাগলাম।
,
পুরো দিন টা অনেক মজা করলাম তিন জন।
আয়ান নিজে রান্না করে খাওয়ালে। আমি আর মিলা হেল্প করে ছিলাম শুধু।
,
এভাবে কেটে গেলো আরো কিছু দিন। আমার আর আয়ানের রিলেশন কিভাবে শুরু হলো নিজেরাই বুঝতে পারি নি। অবশ্য এতে মিলার হাত ছিল। না হলে এটা হতো কিনা জানি না।
,
দুজনের ফোন নম্বর মিলা এনে দিয়েছিল। প্রথম প্রথম টুকটাক কথা হতো। তারপর একদিন সেটা মনের গভীরে চলে গেলো।
,
এর মধ্যে একদিন মা বললো,,,
— ইরা আজ তুই বাইরে বের হবি না।
–কেনো মা?
— তোর ভাইয়ার একটা বন্ধু আসবে তোকে দেখতে।
,
মায়ের কথা টা শুনে একটা ধাক্কা খেলাম। আমার ভাই যে কিনা প্রচন্ড রাগী একটা মানুষ। আমি ভাইয়া কে ভিষণ ভয় পাই। আর তার বন্ধু আসবে দেখতে এটা মনে আসতেই ঘেমে গেলাম। এখন কি হবে। আমার আয়ান কে জানাতে হবে।
মা চুপ করে থাকতে দেখে বললো,,
–কি রে কি চিন্তা করিস?
,
আমি ঠিক করলাম মা কে সব জানাতে হবে। না হলে আমি এই বিয়ে আটকাতে পারবো না।
,
আমি কিছু সময় ভেবে মাকে বললাম,,,
— মা তোমার সাথে আমার একটু কথা আছে?
— কি কথা বল?
— মা আমি এই বিয়ে করতে পারবো না।
— সে কি কথা? কেন কি হয়েছে বলবি তো?
আমি একটা ঢোক গিলে বললাম,,
— মা তোমার মনে আছে সেই ছেলেটার কথা?
মা ভুরু কুঁচকে বললো,,
— কোন ছেলে?
— ওই যে, তোমাকে হাসপাতালে ভর্তি করলে একটা ডাক্তার ঔষধ এনে দিয়েছিল।
তুমি বলেছিলে ছেলে টা অনেক ভালো।
— হ্যা তো?
— মা আমরা দুজন দুজন কে অনেক ভালোবাসি।ওকে না পেলে আমি মরে যাবো।
,
মা আমার কথা শুনে চুপ করে রইলো।
কিছু সময় পর বললো,,
— আমি তোর কথা কিছু বুঝতে পারছি না। কিভাবে কি খুলে বলতো?
,
আমি মাকে সব বললাম।
মা শুনে বললো,,
— ছেলে টা ভালো আমি ও জানি। কিন্তু ওর বংশ মর্যাদা পরিচয় কি? তোর ভাই কে তো চিনিস।
— অনেক ভালো ছেলে মা। আমি সুখী হবো।
— আচ্ছা ঠিক আছে। আমি ইশান কে বললো। ও যদি হ্যা করে তাহলে কোনো সমস্যা নেই।
,
আমি মায়ের কথা শুনে নিশ্চিত হলাম।
রাতে আয়ান কে ফোনে সব জানালাম। আয়ান বললো,,
— আমি দু দিন ধরে ভাবছিলাম তোমার বাড়িতে বিয়ের কথা বলবো। তাহলে তো আরো সহজ হয়ে গেলো। আমার কোনো সমস্যা নেই। যখন তোমার ভাই আর বাবা আমাকে দেখা করতে বলে আমি চলে আসবো।
,
পরদিন সকালে নাস্তা করছি সবাই। আমার মন ধুকধুক করছে। ভাইয়া আমার সামনে বসা। আমি চুপ চাপ খেয়ে যাচ্ছি। ভাইয়া উঠে চলে যাওয়ার সময় বললো,,
— আমার বন্ধু কে আসতে নিষেধ করেছি। ছেলেটাকে কাল সকালে আসতে বলিস।

,
ভাইয়ার কথা শুনে খুশিতে চোখে পানি চলে এলো। আমি আয়ান কে সব জানালাম। ও বললো,,
— তুমি কোনো টেনশন করো না আমি সকালে চলে আসবো।
,
সারা রাত খুশিতে ঘুম হলো না। কখন সকাল হবে।
,
আয়ান বসে আছে আমাদের ড্রইং রুমে। আমি মায়ের সাথে রান্না ঘরে নাস্তা তৈরি করছি। কিন্তু কান খাড়া করে আছি কি কথা হয় শুনবার জন্য।
,
হঠাৎ করে আমি ভাইয়ার চিৎকার শুনতে পেলাম। ভাইয়া আয়ান কে বলছে,,,,
,
,
,
—চলবে
—লেখা অধরা জেরিন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here