অবশেষে_পরিণয় পর্ব_১১

0
4155

অবশেষে_পরিণয় পর্ব_১১
#জান্নাতুল_নাঈমা

“আচ্ছা এভাবে ওকে দেখে নিশ্চয়ই অনেক মেয়ে ক্রাশ খায়। ইশ কতো মেয়ে যে চোখ দিয়ে গিলে খায় কে জানে। কে বলেছিলো এতো স্মার্ট হতে কই আগে তো এমন নজর কাড়া লুক ছিলো না। ওও বুঝেছি এই খুশির জন্য আগে তো এসবের প্রয়োজন পড়েনি। এখন নিশ্চয়ই অনেক মেয়েদের জন্য নিজেকে এমন পরিপাটি রাখতে হয়। ওও না না অনেক মেয়ে কেনো তৃষা আছে না তাঁর জন্যই হয়তো এসব। এখন তো পোলার দাম হইছে,ভাব বাড়ছে এস.আই আরুশ সরকার। যে সে লোক না সে এখন। ভাবনার মাঝেই মুখ বাঁকা করলো খুশি।
আরুশ ওর দিকেই তাকিয়ে ছিলো। মুখ বাঁকার ভনিতা দেখে হকচকিয়ে গেলো। ভ্রু কুঁচকে গলা খাকারি দিয়ে বললো-“কিরে মুখ ভেঙচি দেস ক্যান?? বাতাস লাগলো নাকি লাগতেও পারে আমার দাদী বলে মানুষ যে মুখ দিয়ে এতো মিথ্যা বলে ঐ মুখে জানি বাতাস লাগে।তোর জীবনের পদে পদে তো মিথ্যায় ভরপুর। ইশ কেমন হবে তোর ক্যাচক্যাচ গ্যাজ গ্যাজ স্টুডেন্টস রা মুখ বাঁকা ম্যাডামের পড়ানো পছন্দ করবে তো?? দেখিস আবার এর জন্য জবটা না হারাস আবার”
হোহো করে হাসতে লাগলো আরুশ। খুশি তীক্ষ্ণ দৃষ্টি ছুঁড়ে দিয়ে পাশ কাটিয়ে চলে গেলো।
আরুশ হাসি থামিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে খুশির সামনে চলে গেলো। খুশি চোখ বন্ধ করে এক দীর্ঘশ্বাস ফেললো।
আরুশ আবারো মাথা বের করে বললো-“তোকে ওঠতে বলেছি ভাবিস না আমার নিজের জন্য বা তোর জন্য জলদি ওঠ কথা আছে বেশী না এক ঘন্টা সময় নিবো ব্যাস”
খুশি ভ্রু কুঁচকে আরুশের দিকে চেয়ে রইলো।
নিজেই নিজের মনকে শাশালো,,,
“না খুশি না তুই যাবিনা যতো কাছাকাছি থাকবি ততো দূর্বল হয়ে পড়বি”
আরুশ গাড়ির হর্ন বাজাতেই চমকে ওঠলো খুশি।
কিভাবে ইগনোর করবে সে এই মানুষ টা কে??
খুব বেশী কিছু চায় নি তো শুধু একটু সময়ই না হয় চেয়েছে এইটুকু কি দেওয়া যায় না??
“কেনো এলে আরুশ দূরে ছিলে তাই তো বেশ ছিলে কেনো আবার চোখের সামনে এলে নিজেকে কিভাবে মানাবো আমি”?? এক দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আশে পাশে চোখ বুলিয়ে গাড়িতে ওঠে পড়লো খুশি।
.
আরুশও গাড়ি স্টার্ট দিলো সময় খুবই স্বল্প তাই স্বল্প সময়েই যতোটুকু পারে জ্বালিয়ে দেবে মেয়েটাকে।
মন তো জ্বলছে দুজনেরই শুধু একটু জ্বলন্ত আগুনে ঘি ঢেলে দিতে চায় আরুশ যদি একটু আশার আলো খুঁজে পাওয়া যায়,,, যদি একটা বার এই মেয়েটা সব বাঁধন আলগা করে তাঁর কাছে ফিরে আসে খুব কি ক্ষতি হয়ে যাবে??আরুশ খুব ভালো করেই জানে খুশির দূর্বলতার জায়গা গুলো। পাঁচটা বছর সে দূরে ছিলো বাবা,মা ভাই প্রিয় মানুষ সবার থেকে দূরে ছিলো, আলাদা শহড়ে ছিলো। কিন্তু যখন একি শহড়ে আবারো দুজন রয়েছে তখন কি মন বাঁধা মানে??কোনভাবেই মানে না মনটা বড্ড অবাধ্য হয়ে ওঠে।
গাড়ি চলছে সমান গতিতে আরুশ কোথায় নিয়ে যাচ্ছে তাঁকে বুঝতে পারছে না। আরুশ কোন কথাও বলছে না। খুশিও চুপচাপ প্রায় দশ মিনিট পর খুশিই বললো,,,

— আমরা কোথায় যাচ্ছি??

আরুশ কিছু বললো না খুশিও আর প্রশ্ন করলো না।
আরো পাঁচ মিনিট পর গাড়ি এসে থামলো শপিংমলের সামনে। খুশি ভ্রু কুঁচকে জিগ্যেস করলো,,,

— এখানে কোনো??

আরুশ বাঁকা হেসে বললো,,,

— ভাবিস না তোকে শপিং করে দেওয়ার জন্য এনেছি। আমার এতো টাকা বেশী হয়নি তৃষা একটা শাড়ি কিনবে আমিই কিনে দেবো তুই চয়েস করে দিবি দ্যাটস ইট।

খুশির মেজাজ টা চরম পর্যায়ে গরম হয়ে গেলো।
দাঁতে দাঁত চেপে বললো,,,

— কেনো আপনার বউ এর চোখ নেই, নাকি আপনার চোখ নেই কোনটা??

হঠাৎই আরুশ খুশির গাল দুটো চেপে ধরে রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বললো-

— যা বলেছি তাই করবি এর বাইরে একটা কথাও বলবি না। আমি তোর স্টুডেন্টস না তুই আমার টিচার না যে তোর ধমক আমাকে শুনতে হবে যা নাম।

আরুশ ছেড়ে দিতেই খুশি চট করে গাড়ি থেকে নেমে পড়লো। হঠাৎ এমন রাগের অর্থ খুঁজে পেলো না খুশি।
.
আরুশ রাগে ক্ষোপে পকেট থেকে সিগারেট বের করে সিগারেট ধরালো। রাগ হচ্ছে তাঁর ভীষন রাগ হচ্ছে এই মেয়েটা কে ক্ষুন করে ফেলতে ইচ্ছে করছে।
“এতো সহজে কি করে পারলি তুই অন্যকাউকে আমার বউ উপাধি দেওয়ার?? একটুও দ্বিধা হলো না তোর?? আমার বউ হওয়ার অধিকার কারো নেই কারো না এক তুই ছাড়া। আমি গলা ফাটিয়ে হাজার বার বলবো তৃষা কে আমি বিয়ে করবো কিন্তু তুই এটা মেনে নিতে পারবিনা আর যদি মেনে নিস তাহলে আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না”
.
গাড়ি থেকে নামতেই দেখলো তৃষার সাথে বেশ হাসি হাসি মুখ করে কথা বলছে খুশি দুজনে কয়েকটা শাড়িও দেখছে। খুশির হাতে মেরুন কালারের বেনারসী দেখতেই চোখ দুটো বন্ধ করে ফেললো আরুশ কল্পনায় তাঁর দিলের রানী কে সাজাতে লাগলো। কতো স্বপ্ন ছিলো তাঁর জব হওয়ার পর প্রথম বেতন পেয়েই খুশি আর তাঁর মায়ের জন্য দুটা লাল টকটকে বেনারসী কিনবে। সেই স্বপ্ন টা স্বপ্নই রয়ে গেছে তা আর বাস্তবে রূপান্তর করতে পারলো না। না খুশিকে দিয়ে আর না নিজের মা কে দিয়ে। গতো পাঁচ বছরে মায়ের সাথেও যে তাঁর মাএ তিনবার দেখা হয়েছে। তবুও শান্ত হয়ে দশটা মিনিট মায়ের পাশে বসে নি। ভালো-মন্দ দুটো কথা অবদি বলেনি। আর না এখনো বলে দেখা হলে শুধু মৃদু হাসে ফলস্বরূপ মায়ের অশ্রুসিগ্ধ নয়ন দেখতে পায়। খুশির চলে যাওয়ার পর থেকে তাঁর জীবনটাও কেমন থমকে গেছে।
এই মেয়েটা স্বার্থপরের মতো সবাইকে আঘাত করে গেছে সবার মনে বিশাল ক্ষতের সৃষ্টি করে গেছে।
এতো বড় বুকের পাটা হয় কি করে এই মেয়েটার ভেবে পায় না আরুশ। যে মেয়েটা অল্প আঘাতও সহ্য করতে পারতোনা, অল্প কথায় যার চোখের পানি বাঁধ মানতো না সেই মেয়েটা এতোটা স্ট্রং কি করে হতে পারে জানা নেই আরুশের। রহস্যটা ঠিক কোথায় লুকায়িত আছে ভেবে পায় না আরুশ।
.
চোখ খুলতেই দেখতে পেলো খুশি শাড়িটা তৃষার মাথায় ঘোমটার মতো করে দিয়ে দু আঙুলে ইশারা করে বলছে সেই,,,
আরুশ তাচ্ছিল্যের হাসি আঁকলো ঠোঁটের কোনে।
বুক ভরা দীর্ঘশ্বাস গুলো ছেড়ে পকেট থেকে ফোন বের করে তৃষা কে মেসেজ করলো।
.
তৃষা মেরুন কালারের দুটো শাড়ি নিয়ে আরুশকে ফোন করে বললো,,,

— তুমি এসো কেনা হয়ে গেছে।
.
কেনাকাটা শেষে বেরিয়ে এলো তিনজনই।
হঠাৎ খুশি বলে ওঠলো,,,

— তো তৃষা ভাবী আমি কি এবার আসতে পারি??

তৃষা ভ্রু কুঁচকে বললো,,,

— ভাবি,,,

আরুশ নিজের দুহাত মুঠ করে দাঁতে দাঁত চেপে অন্যদিক ঘুরে দ্রুত পা ফেললো।
খুশি বেশ জোরেই বললো,,,

— কেনো?? আরুশ ভাইয়ার বউ আমার ভাবিই তো হবে তাইনা। আর আমি আপনার কিউট ননদ।
.
এক ঢোক গিললো খুশি নিজের রাগটা এভাবে প্রকাশ করা ছাড়া আর কোন উপায় সে পেলো না।
.
তৃষা জোর পূর্বক হাসলো মনে মনে বেশ ঘাবড়েও গেলো। আরুশকে সে খুব ভালো করে জানে সেই সাথে খুশি আরুশের মধ্যকার সব ঘটনা তাঁর জানা।
আরুশ ঠিক কতো পর্যায়ে ক্ষেপতে পারে তাও বেশ জানা আছে তাঁর।
.
গাড়িতে ওঠে পড়লো তৃষা খুশি ওঠলো না।
আরুশ এক ধ্যানে সামনের দিকে চেয়ে আছে।
তৃষা বেশ বুঝতে পারছে খুশি গাড়িতে ওঠছে না বলেই আরুশ গাড়ি স্টার্ট দিচ্ছে না।
তৃষা বললো –

— খুশি ওঠে এসো।

— না ভাবি আমি রিকশা নিয়ে নিবো আপনারা চলে যান।
.
আরুশ রেগে গাড়ি থেকে নেমে পড়লো।
খুশির সামনে গিয়ে হাতটা চেপে ধরে টেনে গাড়ির পিছন সিটে ওঠিয়ে আঙুল তুলে বললো –

— নিয়ে এসেছি আমি দিয়েও আসবো আমি।
সো বাড়াবাড়ি করবিনা।

খুশি চুপ থাকলো টু শব্দও করলো না সে। বুকের ভীতর চীনচীনে ব্যাথা অনুভব হলো শুধু।
.
সামনে গিয়ে গাড়ি বেশ স্পিডে স্টার্ট দিলো আরুশ বেশ কিছু পথ যাওয়ার পর তৃষা নেমে গেলো।
সাথে সাথে আরুশ আরো দ্বিগুন স্পিডে গাড়ি ড্রাইভ করতে লাগলো।
যার ফলে খুশি মাথায় অল্প আঘাত পেলো।
নিজেকে শক্ত করে বসিয়ে রাখলো সে।
“রাগ কাকে দেখাচ্ছো আরুশ?? নাকি বউ নেমে পড়ায় রাগ হলো?? নামতে দিলে কেনো বুকের ভিতর আঠা লাগিয়ে আটকে রাখতা”
.
গাড়ি থামতেই ভাবনা কাটলো খুশির।
“এটা কোথায় নিয়ে এলো” ভ্রু কুঁচকে এদিক ওদিক তাকাতেই আরুশ একটানে গাড়ি থেকে নামালো খুশি কে।

— আহ লাগছে এসব কি আচরন।

— স্যাট আপ একটা কথাও বলবি না ।
নিজের টাকায় ফ্ল্যাট কিনেছি সেটা তোকে না দেখিয়েই রাখবো নাকি বউ দেখালাম এখন ফ্ল্যাট দেখাবো চল।

— ওও আচ্ছা এরপর বউ এর সাথে বাসর ঘরে কি করবা সেটাও কি লাইভ করে দেখাবা নাকি??

আরুশ চোখ গরম করে চেয়ে বললো-

— না প্র্যাকটিকেলি দেখাবো আর বুঝাবো চল।
হাতে ধরে হিরহির করে টানতে টানতে নিয়ে গেলো ভিতরে।
.
রুমে গিয়েই দরজাটা ঠাশ করে বন্ধ করে দিলো আরুশ। খুশি এক ঢোক গিলে বললো-

— দরজা লাগাচ্ছো কেনো আমি দেখেছি। বেশ ভালো খুব সুন্দর এবার আমায় যেতো দাও।

আরুশ এগুতেই খুশি পিছুতে লাগলো।
এক ঢোক গিলে নিয়ে আমতা আমতা করে বললো-

— এসব কি এগুচ্ছো কেনো দেখো আরুশ আমি অন্যকারো বাগদত্তা সো প্লিজ।

আরুশ দু কাধে ধরে এতো দ্রুত তাঁকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরলো যে বিষয়টা বুঝতে কয়েক সেকেন্ড লেগে গেলো।

— তৃষা তোর ভাবি হয়। তুই অন্যকারো বাগদত্তা এতো বড় বড় কথা বলতে লজ্জা করে না তোর??

চিৎকার করে ওঠলো আরুশ। খুশি ভয়ে কেঁপে ওঠলো আরুশের এমন রূপ বহুদিন পর দেখলো সে। এক ঢোক গিলে নিয়ে বললো-

— যা সত্যি তাই বলেছি।

আরুশের চোখ দুটো রক্ত লাল হয়ে আছে।
রাগে ঘনঘন শ্বাস নিচ্ছে সে একহাতে গালদুটো চেপে ধরলো। দাঁতে দাঁত চেপে বললো –

— আমি কোন হিসেবে তোর ভাই।
লজ্জা করে না তোর প্রত্যেকটা লোম কূপে যে পুরুষের স্পর্শ লুকিয়ে আছে তাঁকে ভাই বলিস।
.
খুশি হালকা হাসলো কতোবছর পর তাঁর আরুশ তাঁকে শাসন করছে,, ভাই বলায় তাঁর আরুশ কতোটা রেগে গেছে কে বললো এই ছেলেটা তাঁকে ঘৃনা করে এই তো আজো ভালোবাসা স্পষ্ট এই চোখে। পরোক্ষনেই মনে পড়ে গেলো তাঁর বাবা আর দাদীর বলা কথা গুলো সাথে সাথে চমকে ওঠলো খুশি।
আরুশকে ছাড়াতে চেষ্টা করতে শুরু করলো।

— প্লিজ আরুশ ছাড়ো আমায় লাগছে আমার প্লিজ।

— ছাড়বো না কি করবি তোর সাকিব কে ডাকবি ডাক তোর সাকিব কে।

সাথে সাথেই ফোন বেজে ওঠলো খুশির।
কেঁপে ওঠলো খুশি ভয়ার্ত চোখে তাকালো আরুশের দিকে। আরুশ গাল ছেড়ে একহাতে খুশিকে ঘুরিয়ে পিছন থেকে শক্ত করে জরিয়ে নিলো। আরেক হাতে খুশির ব্যাগ থেকে ফোন বের করতেই রাগে ফোন টা সাজোরে এক ঢিল দিলো। সাথে সাথেই দেয়ালে আঘাত খেয়ে নিচে পড়ে দু খন্ড হয়ে গেলো ফোনটা।
খুশি ভয়ে আঁতকে ওঠলো আরুশ রাগে ক্ষোপে চিৎকার করে ওঠলো।

— এই সাকিব তোকে ফোন দেয় কেনো??
বিয়ে তো হয়ে যায়নি এখনি এতো ফোন কিসের বল।
বল আমায় কি কথা বলিস তুই ওর সাথে বল কি কথা বলিস??

— আরুশ প্লিজ পাগলামো করোনা। এতো দিন পর এমন পাগলামোর মানে হয় না। আমাকে আমার মতো থাকতে দাও ভালো থাকতে দাও আমায়।
আর তুমিও তৃষার সাথে ভালো থাকো ছাড়ো আমায় বলেই এক ঝটকা দিলো খুশি।

আরুশ রাগে আবারো খুশিকে আঁকড়ে ধরলো।
দুহাতে গাল চেপে ধরে কপালে কপাল ঠেকিয়ে বললো-

— তুই পারবি তৃষা কে আমার পাশে মেনে নিতে??

খুশির অন্তর টা কেঁপে ওঠলো। শরীরের প্রত্যেকটা লোমকূপ দাঁড়িয়ে গেলো কোন রকমে চাপা আওয়াজে বললো-

— হ্যাঁ পারবো।

আরুশ আরেকটু কাছে গিয়ে মুখোমুখি মুখ করে বললো –

— প্রতিটা রাত আমার বুকে তৃষা মাথা রাখবে পারবি তুই মেনে নিতে।

খুশি চোখ দুটো বুজে ফেললো এক ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়লো গাল বেয়ে। আরুশের গরম শ্বাস অনুভব করতে লাগলো খুব কাছ থেকে,,,
আরুশ বললো-

— কি রে পারবি??

খুশি মাথা নাড়ালো।
আরুশ এবার খুশির ঠোঁট জোরা আঁকড়ে ধরলো।
কিছুক্ষণ পর ছেড়ে ভারী আওয়াজে বলল-

— এই ঠোঁট তৃষার ঠোঁটে বিচরন করবে পারবি তুই সহ্য করতে??

খুশির দুচোখ বেয়ে পানি ঝড়তে লাগলো। মনের বিরুদ্ধে গিয়ে মাথা নাড়ালো সে।

এবার আরুশ খুশিকে গভীরভাবে জরিয়ে নিলো।
ঘাড় থেকে গলা অবদি ঠোঁট ছুঁয়াতে লাগলো সমানে।
খুশি খামচে ধরলো আরুশের পিঠ। ঘন শ্বাস ছাড়তে ছাড়তে বললো-

— আরুশ প্লিজ এমন করো না প্লিজ আরুশ।
ডুকরে কেঁদে ওঠলো খুশি।
.
আরুশ চমকে ওঠলো চোখ তুলে খুশির মুখপানে চেয়ে ছেড়ে দিলো। পিছন ঘুড়ে হাঁটু গেড়ে বসে চিৎকার করে ওঠলো।

খুশি মুখ চিপে কাঁদতে থাকলো। ইচ্ছে হলো খুব একটা বার জরিয়ে ধরতে কিন্তু সব ইচ্ছে যে পূরন করতে নেই। ওড়নাটা ঠিক করে নিয়ে ছুটে দরজা খুলে বেরিয়ে গেলো খুশি।

আরুশ এক হাতে শার্টের বোতাম খুলে হাত,পা ছেড়ে মেঝেতে দুহাত মেলে চোখ দুটো বন্ধ করে শুয়ে রইলো। শাড়ীটাও দেওয়া হলো না মেয়েটাকে ভাবতেই চোখ দিয়ে দুফোটা পানি গড়িয়ে পড়লো মেঝেতে।
.
বাড়ি ঢুকতে না ঢুকতেই দাদীর চেচামেচি শুরু হয়ে গেলো।

— দুই দিন পর বিয়া এখন এতো বাইর যান লাগবো ক্যান। ইস্কুল ছুটি হইছে একটায় মেয়া বাড়ি ফিরে চারটায় বলি এসব কি কারো চোখে বাজে না।

খাদিজা বেগম চোখ কটমট করে খুশিকে টেনে আড়ালে নিয়ে বললো- — কি রে কোথায় ছিলি আর ফোন বন্ধ কেনো তোর?? তোরা কি চাস বল তো আমাকে কি শান্তি দিবি না। রোজ রোজ এই অশান্তি আর ভালো লাগে না।

খুশির বুকটা হুহু করে ওঠলো। মলিন স্বরে বললো-

— আমারো আর ভালো লাগছে না মা আমি খুব ক্লান্ত। আমি এসব থেকে একটু মুক্তি চাই মা একটু শান্তির শ্বাস নিতে চাই।

খাদিজা বেগম মেয়ের মাথায় হাত রেখে বললেন-

— কি হয়েছে খুশি তোকে এমন লাগছে কেনো??

খুশি মুখ চিপে কাঁদে দিলো মায়ের বুকে একটু মাথা রাখতে নিতেই রোকসানা তালুকদার খ্যাক খ্যাক করতে করতে বলে ওঠলো –

— তা মা মেয়ে এইখানে কিসের দরবার করে শুনি।
এই যে বউ মা মেয়ের মাথাটা তো অনেক চিবাইসো।দুইদিন পর বিয়া এইবার তো রেহাই দেও।

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here