অবশেষে_পরিণয় পর্ব_১৩

0
5100

অবশেষে_পরিণয় পর্ব_১৩
#জান্নাতুল_নাঈমা

চিঠি.

“পৃথিবীতে ভালোবাসার অনুভূতি অনেকেই ব্যাক্ত করে গেছে। কিন্তু সেই অনুভূতি গুলো কে কি সবাই অনুভব করেছে”??
একটা বিষয় আমরা যেভাবে ব্যাক্ত করি সেভাবে কখনোই সবাই অনুভব করতে পারিনা।
আমি জানি তোমার কাছে আমি দুনিয়া তে দেখা সব চেয়ে খারাপ, বাজে মেয়ে। আমি নিজেও সেটা মানি।
ভালোবাসার মানুষের হাত ধরে যে মেয়েটা অনেকটা পথ এগিয়ে গিয়েও সেই হাত ছেড়ে মাঝ পথে ভালোবাসার মানুষ কে ফেলে চলে আসে সে কি সত্যি বাজে মেয়ে নয়??খুব খুব বাজে সে,,,
সারারাত যে ছেলের বুকে মাথা রেখে প্রশান্তির ঘুম ঘুমিয়েছিলো। শরীরের প্রত্যেকটা লোমকূপে যার স্পর্শ গেঁথে ছিলো তাঁকে কি করে ছেড়ে আসতে পারে একটা মেয়ে??
তোমার জীবনের সব থেকে বড় ভুল ছিলো এমন একটা মেয়েকে এতোটা ভালোবাসা তাই না আরুশ??
সত্যি আমি খুব জঘন্য,নীচ,চরিত্রহীনা একটি মেয়ে।
তাই তো সেদিন বাবার কথায় তোমায় ছেড়ে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
আচ্ছা আরুশ,,,যেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর হাসি-খুশি প্রানোজ্জ্বল একটা মেয়ে হঠাৎ করে গুম মেরে যায় সেই সিদ্ধান্ত টা তাঁর জন্য কতোটা কঠিন ছিলো??
এমন সিদ্ধান্ত একটা মেয়ে কেনো নেয় যে সিদ্ধান্তের পর তাঁর প্রতিটা রাত নির্ঘুম কাটে??
এমন সিদ্ধান্ত একটা মেয়ে কেনো নেয় যার কারনে মেয়েটার শ্বাসকষ্ট জনিত রোগে ভুগতে হয়??
আচ্ছা আরুশ একটা মেয়ে একটা ছেলেকে ঠিক কতোটা ভালোবাসলে সেই ছেলেটার শূন্যতা ভোগ করতে করতে তাঁর শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে??
কেনো করছি আমি তোমায় এই প্রশ্ন গুলো??
তোমার উত্তর তো এটাই হবে -এসব নাটক, দায় মুক্ত হওয়ার জন্য আমি এসব নাটক করছি। যাতে মানুষ আমার দিকে আঙুল না তোলে। যাতে মানুষ টের না পায় আমি টাকার লোভে, বড় বাড়ি,গাড়ির লোভে নিজের বড় লোক,লুইচ্চা ফুপাতো ভাইকে বিয়ে করছি এটা কারো ধারনা না হয়। সত্যি আরুশ তুমি একদম সত্যি কথাই বলো সত্যিই আমি এমন টাই।
কিন্তু আরুশ শুধু এমনটাই জানবে আমার বিষয়ে সেটা আমি এই কয়েকবছর চেয়েছিলাম।
আসলে তখন অল্প বয়স ছিলো বড় বড় সিদ্ধান্ত নেওয়ার সাহস হয়ে ওঠেনি। কিন্তু এখন আমি যথেষ্ট ম্যাচিওর নিজের অনেক সিদ্ধান্তই এখন আমি নিতে পারি। তাই আমি আমার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত টা নিয়েই ফেললাম আর সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর আমার মনে পড়ে গেলো। আমার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন মানুষ আমায় প্রচন্ড ঘৃনা করে।
আসলে কি বলতো এমন একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছি যে এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর আর কারো ঘৃনা নেওয়ার ক্ষমতা হচ্ছে না। তাই তোমাদের সকলের ঘৃনা টা আমি কমিয়ে দিতে চাই। যদিও কমবে কিনা জানি না তবুও বলতে পারো আমার শেষ ইচ্ছে এটাই আমার প্রিয় মানুষ গুলোকে আমার জীবনে ঘটে যাওয়া সবচেয়ে নির্মম সত্যি গুলো জানিয়ে দিয়ে যেতে চাই।
আর হ্যাঁ এগুলো জানানোর বড় কারনটা হচ্ছে তোমার হবু বউ। বলতে পারো হিংসের বশেই সবটা জানাচ্ছি। যদিও তোমার হবু বউকে দেখে আমি তোমার কষ্ট টা, তোমার যন্ত্রণা টা খুব করে অনুভব করেছি। কিন্তু কি বলতো আর কোন উপায় তো নেই।
জানো তোমার পাশে ওকে দেখলেই মনে হতো ওর চুলগুলো টেনে ছিঁড়ে ফেলি। তুমি যখন ওর হাত ধরলে মনে হলো ঐ হাত আমি ব্লেট দিয়ে কেটে আলাদা করে দেই। বুকের ভিতর টা কেমন কামড়ে ধরলো। তখন আমার মনে পড়ে গেলো সাকিব যখন আমার পাশে থাকে সেদিন যখন আমি সাকিবের হাত ধরে ছিলাম তোমার কেমন লেগেছে??
সত্যি এগুলা কি মানা যায় বলো??
ভালোবাসার মানুষ কে অন্যকারো হতে দেখা মৃত্যুযন্ত্রনার থেকেও কঠিন নয় কি??
ইশ যে ছেলেটার ঠোঁটের স্পর্শ শুধু আমি পেয়েছি।
যে ছেলেটার বুকে শুধু আমি মাথা রেখেছি সেই ছেলেটার বুকে, ঠোঁটে, পুরোটাই জুরে অন্য একটা মেয়ের বিচরন থাকবে এগুলা কি মানা যায়??
ঠিক তেমনি আমার শরীরে আরুশ লুইচ্চা ছাড়া অন্য কোন লুইচ্চা,স্পর্শ করলে এগুলা কি প্রকৃতি মেনে নেবে??
নাইবা পেলাম তোমায় আমি, নাইবা হলাম আমি তোমার তাই বলে অন্যকারো হতে হবে এমন ধরা বাঁধা কোন নিয়ম নেই তো?? নাকি আছে??
আমার কাছে তো নেই,,,
আমি পারবো না মানতে আমার শরীরে অন্যকারো স্পর্শ পেতে। সাকিব দেশে ফেরার পর থেকে নানা ছলে, বলে কৌশলে আমায় ছোঁয়ার চেষ্টা করেছে।
নিজেকে কিভাবে রক্ষা করেছি তা শুধু আমিই জানি। আজ যখন হুট করে আমার রুমে এসে দরজা লক করে জোর করে বিছানায় চেপে ধরলো।
বিশ্বাস করো আরুশ আমার ভিতর থেকে আর্তনাদ বেরিয়ে এলো,,,আরুশ তোমার খুশির শরীরে তুমি ছাড়া অন্য কেউ স্পর্শ করতে পারেনা।
তোমার খুশির শরীরের প্রত্যেকটা লোমকূপ জানে এই শরীর, মন শুধুই আরুশের। আমার সতীত্ব আমি আরুশ ছাড়া কারো কাছে বিসর্জন দিতে পারিনা।
আমি যে মনে প্রানে আজো নিজেকে আরুশের বউ হিসেবেই মানি। তখনি উপরওয়ালার তরফ থেকেই যেনো আমার গায়ের জোর দ্বিগুন করে দেওয়া হলো। কোন রকমে নিজেকে রক্ষা করে বললাম।
“কাল তো বিয়ে আজ এতো তাঁড়া কিসের”
সাকিব বিরক্ত হয়ে আবারো আমাকে ছুঁতে এলো তখনি মিলন আমায় ডাকতে শুরু করে দিলো।
বেঁচে গেলাম আমি আজ কিন্তু কাল?? কাল কি করে বাঁচবো সেটা ভাবতেই আমার পুরো শরীরটা ঘিনঘিন করে ওঠলো। আর সিদ্ধান্তও নিয়ে নিলাম নিজের জীবনের জন্য এই একটা সিদ্ধান্ত বোধ হয় আমি সঠিক নিলাম আরুশ। মনের বিরুদ্ধে গিয়ে অনেক কিছু করেছি তাই বলে মনের বিরুদ্ধে গিয়ে অন্য তুমি ছাড়া অন্যকারো অর্ধাঙ্গিনী হওয়ার ক্ষমতা আমার নেই।
যাহোক বাদ দিই,,,
আসল কথায় আসি।
সেদিনের সেই চিঠি টায় আমি তোমায় বলেছিলাম।
আমায় ক্ষমা না করতে পারলেও ঘৃনা করো না।
কিন্তু তুমিহ তুমি আমার এই একটা কথা রাখলে না আরুশ তুমি আমায় সেই ঘৃনাই করলে??
মামনি,দাদি,আংকেল, আরাফ ভাইয়া, ভাবী সকলেই আমায় ঘৃনা করে আরুশ জানো??
আজ সকালে আমি মামনির সাথে শেষ বার দেখা করতে গিয়েছিলাম। তোমার দেওয়া শড়ীটা পড়ে জানো আরুশ যে বাড়িটা আমি সারাজীবন আমার বলে জানতাম,যে মানুষ গুলোকে আমি সারাজীবন নিজের বলে জানতাম আজো জানি তাঁরা আমায় বাড়ির চৌকাঠে পা অবদি রাখতে দেয় নি।আমি নালিশ করছিনা শুধু শেয়ার করছি আসলে ওরা ঠিকি করেছে। কেনো দেবে বলো আমি যে তাঁদের ছেলেকে তাঁদের থেকে কেঁড়ে নিয়েছি। আমি যে তাঁদের ছেলের জীবনটা ধ্বংস করে দিয়েছি। আমার জন্যই মামনি তাঁর ছোট ছেলেকে ছাড়া বছরের পর বছর পার করছে। আমার জন্যই পাঁচ বছর আগে মামনিকে চরম ভাবে অপমানিত হয়ে তালুকদার বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে হয়েছে।
তাই তো কেউ আমায় দু মিনিটের জন্যও মেনে নেয় নি। কিন্তু আরুশ আমি তোমায় ছেড়ে গেছি বলে তুমি তোমার পরিবার কে কেনো শাস্তি দিচ্ছো??
যে মা তোমাকে দশ মাস নিজের গর্ভে ধারন করেছে, তোমাকে পৃথিবীর আলো দেখিয়েছে, এতো আদর ভালোবাসা দিয়ে মানুষ করেছে সেই মা কে কেনো এতো কষ্ট দিচ্ছো। ফিরে যাওনা নিজের বাড়ি নিজের মানুষ গুলোর কাছে এভাবে নিজেকে নিজের পরিবার কে আর কষ্ট দিওনা। তৃষাকে বিয়ে করে পার্মানেন্টলি ও বাড়ি নিয়ে যাও মামনি খুব কষ্টে আছে গো চোখের নিচে কালি পড়ে গেছে। আমার শেষ চাওয়া গো আরুশ তুমি ফিরে যাও নিজের পরিবারের কাছে। আমার প্রতি তাঁদের এতো অভিযোগ, ঘৃনা যে মেনে নিতে পারছিনা,,, তুমি ফিরে গেলে ঘৃনার পরিমান একটু হলেও কমবে হয়তো। এটাই আমার অনেক বড় পাওয়া হবে গো।
এতোগুলা বছর পরও তাদের চোখে মুখে আমার প্রতি একরাশ ঘৃনা,অভিযোগ, আসামির কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে দিলো সবাই। দূর দূর করে তাড়িয়ে দিয়ে প্রতিশোধ নিলো পাঁচ বছর আগের সেই ঘটনাগুলোর জন্য।
জানো আরুশ না নিজের মা কে কাছে পেলাম আর না মামনিকে কাছে পেলাম আর না ভালোবাসার মানুষ কে কিন্তু আমার যে এ সময়টা খুব প্রয়োজন ছিলো এই মানুষ গুলোর।

একটা মেয়ে সব সময় কেনো অসহায় থাকবে বলতে পারো??মেয়েদের মন নরম বলে যে যেভাবে খুশি আঘাত করে যাবে। মেয়েরা সব সময় অসহায় হয়ে কেনো পড়ে আরুশ। মেয়েদের ঘাড়ে কেনো সব সময় বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হয় বলতে পারো??
মানুষ ভাবে একটা মেয়ে পড়াশোনা করে নিজের পায়ে দাঁড়ালেই স্বাধীন, মুক্ত,সুখি। নিজের জীবন নিজের মতো করে গড়তে পারবে। কিন্তু আসলেই কি তাই সত্যি মেয়েটা কি স্বাধীন হতে পেরেছে নাকি এই পরিবার,সমাজের লোকেরা কোন এক দূর্বলতার সুযোগ নিয়ে ঠিক তাকে পরাধীনতা স্বীকার করতে বাধ্য করেছে।
একটা মেয়ে যখন বড় হতে থাকে সবাই তাঁর ওপর নিজেদের সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিতে থাকে।
কেউ কখনো একটা বার মেয়েটাকে জিগ্যাস করার প্রয়োজন মনে করে না সে কি চায়? বাবা এসে তাঁর পছন্দের ছেলের সাথে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিলো।
অথচ সে জানতো আমার মন অন্য কোথাও বাঁধা আছে তবুও সে তাঁর সিদ্ধান্তকেই প্রাধান্য দিলেন।
যেনো আমি কাঠের তৈরী পুতুল। হ্যাঁ আমি কাঠের তৈরী পুতুল না। কিন্তু আমি কাঠের তৈরী পুতুল হয়ে গেছি। আমাকে বাধ্য করা হয়েছে পুতুল হয়ে থাকতে। যখন পরিবারের চাপে কাঠের তৈরী পুতুল হতে বাধ্য হলাম তখনি আমি ভালোবাসার মানুষটির কাছে হয়ে গেলাম খারাপ,স্বার্থপর, বেঈমান।
ভালোই যদি বাসো তাহলে কেনো আমার মন টাকে বুঝতে পারলে না??ভালোই যখন বাসো তাহলে কেনো আমার চোখের ভাষা বুঝতে পারলে না??
ভালোবাসার মানুষ দের কেনো এতো ব্যাখ্যা দিতে হবে??কেনো তাঁরা ব্যাখ্যার ওপর নির্ভরশীল থাকবে??নিজের ভালোবাসার মানুষের ওপর কেনো কনফিডেন্স থাকবে না বলতে পারো??
বুক ফুলিয়ে মাথা উঁচু করে এটুকুন কেনো স্বীকার করতে পারোনি যে তোমার খুশি তোমায় ঠকায়নি,বিশ্বাসঘাতকতা করেনি,তোমার খুশি পরিস্থিতির স্বীকার।
না তুমি সেসব বলবে কেনো খুশি তো তোমায় ঠকিয়েছে। হ্যাঁ মেনে নিয়েছি আমি তোমায় ঠকিয়েছি কিন্তু সেই ঠকানোর কারন টা আজ জানানোর সময় এসেছো। আমি আমাকে তোমার কাছে ব্যাখায়িত করার প্রয়োজন এতোদিন বোধ করিনি আরুশ কিন্তু আজ করছি কারন আমাদের ভালোবাসা টাই যে ঠুনকো।

সেদিন যখন মাকে আমি ফোন করি মা কাঁপা আওয়াজে শুধু বলেছিলো “খুশি কেমন আছিস,কোথায় আছিস”??
সাথে সাথেই মায়ের আর্তনাদ কানে ভেসে এলো।
তারপরই ভেসে এলো বাবার বলা সেই কথাটা-
” যদি নিজের মা কে বাঁচাতে চাস তো কোথায় আছিস বলে দে নয়তো তোর মায়ের মরা মুখ দেখা ছাড়া উপায় নেই”
তখনি পাশ থেকে ভেসে এলো মিলনের কান্না মা বলে কাঁদতে থাকলো মিলন। দাদি মিলনকে হয়তো আটকে রেখেছিলো। মায়ের কাছে যেতে দিচ্ছিলো না তাই মিলন ছটফট করছিলো।
আমি তখন হিতাহিত জ্ঞান শূন্য হয়ে পড়েছিলাম।
সবে কলেজে পা দিয়েছি বয়স টা নিতান্তই কম।
আমি কতোটা ভীতু ছিলাম তা তোমরা সবাই জানতে।আর আমার মা কতোটা অসহায় সে ব্যাপারেও সবার জানা। ছোট থেকেই বাবা মা কে খুব টর্চার করতো আজ এ বয়সে এসেও মা কম টর্চার সহ্য করছে না। নিজের ছেলে-মেয়েকে একটু আদর ভালোবাসা দিতেও পারে না মানুষটা।
সারাটাজীবন একটা ভয়াবহ আতঙ্ক নিয়ে সংসার করতে হলো মানুষ টার। যদি সেদিন আমি ফিরে না আসতাম তাহলে হয়তো সত্যি আমি, আর মিলন মাহারা হয়ে যেতাম।মা কে সেদিন বাবা প্রচুর মেরেছিলো প্রথম আঘাত করেছিলো মাথায় যার কারনে মা সেন্সলেস হয়ে গিয়েছিলো।
যদিও আমরা কেউ মাকে কাছে পাইনা, মায়ের ভালোবাসা দূর থেকেই অনুভব করি মিলন যতোটা পায় আমি তাঁর কানাকড়িও পাইনা।
বাবা,দাদির ধারনা মায়ের কাছে আমি থাকলেই মা আমাকে তোমার কাছে ফিরে যেতে সাহায্য করবে,আমার কানে বিষ ঢালবে। জন্মদাএী মা নাকি নিজের সন্তানের কানে বিষ ঢালবে বড্ড হাস্যকর আবার যন্ত্রণাদায়কও। আমার কাছে যতোটা যন্ত্রণার তাঁর থেকেও হাজারগুন বেশী মায়ের কাছে যন্ত্রণাদায়ক। মায়ের কাছে প্রয়োজন ছাড়া ঘেষতেও পারিনা তবুও শান্তি আমার মা তো আছে একি ছাদের নিচে তো আছে তাঁর দূয়া, ভালোবাসা সব সময় আমার সঙ্গে আছে তো এই অনেক।
যাইহোক সেদিন যখন আমি চলে এলাম।
বাড়ি আসার পর আমাকে এক রুমে ঢুকিয়ে সিটকেরী লাগিয়ে বাবা প্রচুর মার মেরেছিলো।
খুব লেগেছিলো জানো,,, তোমার মনে আছে ছোটবেলা আরাফ ভাইয়া যখন মুরগি জবাই করেছিলো ঘারে ছুঁড়ির আঘাত করার পর মুরগিটা যখন ছেড়ে দিলো মাটিতে তখন কেমন ছটফট করছিলো?? আমিও ঠিক তেমনটাই ছটফট করছিলাম।জানো আরুশ ঐদিনের খুশি যদি আজকের খুশি হতো তাহলে ঐ মারটা আমার এতোটা তীব্র লাগতো না।তখন তো ছোট বয়স ছিলো অনুভূতির জায়গাও তেমন প্রখর হয়ে ওঠেনি।
আমার কাছে ঐ দিন ভালোবাসা হারানোর চেয়ে মারটাই ভয়াবহ ছিলো। প্রত্যেকটা মারের দাগ আজো স্পষ্ট। তোমার খুশির নরম শরীর আর নরম নেই তোমার খুশির নরম তুলোর মতো পিঠটা ওরকম অনেক অনেক লাঠির আঘাতে শক্ত হয়ে গেছে। সেদিন মারের এক পর্যায়ে আর সহ্য করতে না পেরে আমি জ্ঞান হারাই। আর যখন জ্ঞান ফিরলো তখনি দাদির বড় বড় চোখ জোরা আমার দিকে নিক্ষেপ করা ছিলো ব্যাথায় কুঁকড়িয়ে ওঠলাম।
পুরো শরীরে কাঁপুনি ধরে গেলো একদিকে শরীরের অসহনীয় ব্যাথা অন্যদিকে বাবা,দাদির দেওয়া হুমকি। বাবা বললেন-“আজকের পর আরুশ বা আরুশের পরিবারের কারো নাম যদি মুখে আনিস তাহলে জ্যান্ত পুঁতে ফেলবো। আর হ্যাঁ আরুশের ব্যাবস্থাও নিবো এমন মামলায় ফাঁসাবো যে আজীবন কারাগারে থাকতে হবে। সরকার বাড়ির সবকটা লোকদেরই কোমড়ে দড়ি বেঁধে জেলখানায় পাঠাবো।
আমি ভয়ে কাঁদতে কাঁদতে আবারো নেতিয়ে পড়লাম। ধরা গলায় শুধু বললাম “বাবা তোমার পায়ে পড়ি আরুশের সাথে খারাপ কিছু করো না তুমি যা বলবে আমি তাই শুনবো।তবুও ওদের কারো কোন ক্ষতি করো না”
তখনি দাদি আমাকে চেপে ধরে বললো- “যদি কথা না শুনিস তাহলে তোর মা কে সারাজীবনের জন্য এ বাড়ি ছাড়া করবো”
একদিকে বাবার হুমকি আরেকদিকে দাদির হুমকি অন্যদিকে আমার ক্ষতবিক্ষত শরীরটা।
ঠিক সেসময়ই আগমন ঘটলো তোমার। আর আমাকেও পুতুল সাজিয়ে তোমার মুখোমুখি দাঁড় করানো হলো। পুতুলের মতো দাদি,বাবার বসানো বুলিগুলো ছেড়ে দিলাম তোমার সম্মুখে।
আরুশ,,,সেদিন তুমি আমার মুখের কথা শুনেছিলো কিন্তু আমার ক্ষতবিক্ষত হয়ে যাওয়া মন,আর শরীরের হাহাকার কি শুনতে পেরেছিলে??

ওও আরুশ তোমার পাশে তৃষা কে আমি মেনে নিতে পারিনি গো,খুব কষ্ট হয়েছে আমার। বুকের ভিতর টা ঝাঝড়া হয়ে গেছে গো। সবদিক দিয়ে আমি শূন্যতায় ভূগেছি।কিন্তু সব কিছুর তো একটা শেষ আছে বলো??তাই আমি শেষ টা বেছে নিলাম।
“জীবন কাকে বলে আমি বুঝে গেছি। ভালোবাসা কাকে বলে আমি বুঝে গেছি।জীবন মানেই যুদ্ধ আর সেই যুদ্ধে পরাজয়ের পরিমাণ টাই দীর্ঘ আর জয়ের পরিমাণ স্বল্প।ভালোবাসা মানেই না পাওয়া, ভালোবাসা মানেই দহন যে দহন সইতে সইতে একজন মানুষ হাজার বার মৃত্যুবরন করেন”
যেই মৃত্যুর খবড় কেউ জানতে পারে না। যেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করার ক্ষমতা সবার থাকে না।
“দেহের মৃত্যুর থেকে মনের মৃত্যুর যাতনা অনেক বেশী অথচ দেহের মৃত্যুতে সবাই সমবেদনা প্রকাশ করে মনের মৃত্যুর খবড় কেউ নেয় না জানেও না”
“মরদেহে মাটিতে না পুঁতলে তাঁর পঁচা গন্ধ সকলের নাকে পৌঁছে যায় অথচ জীবিতলাশের মনের পঁচনের গন্ধ কারো নাকে পৌঁছায় না শুধু যার মন সেই অনুভব করে” আর সেই গন্ধ নিজের ভিতর আবদ্ধ রেখে রেখে আমি আজ শ্বাসকষ্ট জনিত রোগের স্বীকার।
.
বড় ইচ্ছে ছিলো শেষ একটা বার তোমার বুকে জায়গা নিবো। নিবে আরুশ??
জানো এই চিঠিটা পড়ার পর যখন তুমি আমার কাছে আসবে তখন কেউ তোমায় বাঁধা দিবে না।
কেউ তোমার খুশির থেকে তোমাকে আলাদা করার চেষ্টা করবে না। খুব সহজেই তোমার বুকে আমায় আবদ্ধ করতে পারবে। আমিও পরম আবেশে শেষ বারের মতো তোমার বুকে জায়গা নিতে পারবো।
কি,,,আরুশ এই বেঈমান,বিশ্বাসঘাতকটার শেষ ইচ্ছেটা পূরণ করবে তো??

আমি কিন্তু অপেক্ষায় রইলাম। খুব ধৈর্য্য সহকারে অপেক্ষায় রইলাম তুমি কিন্তু একদম তাড়াহুড়ো করবে না। খুব সাবধানে আসবে আর হ্যাঁ বাইক নিয়ে নয় গাড়ি নিয়ে আসবে আবার পাগলের মতো ছুটাছুটি করে আসবে না কিন্তু। আর হ্যাঁ তৃষা কে একদম নিয়ে আসবে না আমি যখন তোমার বুকে থাকবো ও যদি হিংসে করে?? বা আমার আরুশকে চরিএহীন ভাবে??তাই ওকে আনবে না। খুশি চরিএহীনা হলেও আরুশ চরিএহীন নয় কারন আরুশ আমার ভালোবাসা। আমার হৃদস্পন্দন তাঁর নামে স্পন্দিত হয় তাই সে কখনো চরিএহীন হতে পারে না। আর হ্যাঁ চোখের পানিটা মুছে তারপর এসো ঝাপসা চোখে আবার ভুল রাস্তায় চলে যাবে।
আমি আর অপেক্ষা করতে পারছিনা তারাতারি আসো।

.

তোমার দিলের রানী ❤

চলবে……..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here