অবশেষে_পরিণয় পর্ব_১৫

0
6601

অবশেষে_পরিণয় পর্ব_১৫
#জান্নাতুল_নাঈমা

ছেলে-মেয়েদের প্রত্যেকটা বাবা-মা ই গলা উঁচু করে বলে- বাবা,মায়ের পছন্দে বিয়ে করবি, বাবা মায়ের সিদ্ধান্ত মেনে নিলে কখনো খারাপ হতে পারেনা।
আর যদি নিজেই নিজের সিদ্ধান্ত নিস তাহলে কোন দিন ভালো হবে না। আর বিয়ের পর কোন সমস্যা হলেও আমাদের কাছে আসতে পারবি না।

বাহ আজব নিয়ম যেখানে আগেই সন্তানের অমঙ্গল কামনা করছে যে তাদের সিদ্ধান্ত না মেনে নিলে কোনদিন ভালো হবে না সেখানে মঙ্গলটা কি করে হবে??

অথচ বাবা,মায়ের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে বিয়ে করেও আজকাল হাজার হাজার ডিভোর্স হয়ে যায় ।
বিয়ের আগে মেয়েকে বিয়ে করতে বাঁধ্য করে বিয়ের পর যখন দেখে নিজেরা ভুল করেছে তখন আবার জোর করে ডিভোর্স করায়। একবারো ভাবে না এসবে মেয়েটার উপর কি প্রভাব ফেলছে, মেয়েটা মানসিক ভাবে কতোটা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। প্রত্যেকটা বাবা,মা যদি মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার আগে দশবার ভেবে মেয়েটার সিদ্ধান্ত কে সামান্য গুরুত্ব দিয়ে বিয়ে দিতো তাহলে আজ ঘরে ঘরে এতো এতো ডিভোর্স হতো না।

ছেলে মেয়ের সিদ্ধান্ত সবসময় ভুল হয় আর বাবা-মা, পরিবারের সিদ্ধান্ত সব সময় ঠিক হয়। তাহলে কেনো পারিবারিক বিয়েতে এতো এতো বিচ্ছেদ হচ্ছে।
তাঁরা ভুল করলে সেটাকে ভাগ্য বলে কেনো মেনে নিতে হবে??আর সন্তান রা ভুল করলে শুনতে হবে নানারকম কুরুচিপূর্ন কথাবার্তা।

আমি বলছিনা ছেলে,মেয়ে পছন্দ করে বিয়ে দিলেই সে সম্পর্ক টিকে যায় বা তাঁরা বাবা,মায়ের বিরুদ্ধে চলে গেলে কাজ টা সঠিক হয়। কিন্তু মনস্তাত্ত্বিক ব্যাপারে সকলের সচেতন থাকা উচিত। আজ আমি নিজেকে শেষ করে দিলে কারো কিছু আসতো যেতো না শুধু আমার মায়ের বুকটা খালি হয়ে যেতো। জীবনের কোন এক পর্যায়ে গিয়ে আমার পরিবার ঠিক আফসোস করতো ইশ যদি এমনটা না করে এমনটা করতাম মেয়ে টা কে হারাতাম না। ঐ ইশ,ঐ আফসোস টা শেষ পর্যায়ে না গিয়ে শুরুতে করলে তো ক্ষতি নেই এতে একটা প্রান বেঁচে যাবে দুটো জীবন,তাঁর সাথে জরিত সকলের জীবনই স্বস্তিতে বাঁচতে পারবে।
.
বিয়ের মতো একটা গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে বাবা,মা সন্তান সকলের সিদ্ধান্তকেই গুরুত্ব দেওয়া উচিত। এক্ষেএে ছেলে,মেয়ের সিদ্ধান্ত বাবা,মায়ের থেকেও বেশী গুরুত্বপূর্ণ। কারন সংসার ছেলে,মেয়েরা করে মানিয়ে চলে ছেলে, মেয়েরা।
কোন মেয়ের সংসারে তাঁর বাবা,মা গিয়ে মানিয়ে চলে না বা বাবা,মা গিয়ে সংসার করে না।
.
তোমরা বাবা, মা,পরিবারের লোকরা সব সময় এটা দেখো ছেলের বাবা কতো টাকার মালিক,ছেলের মাসে কলাখ টাকা আয়। দামি গাড়ি,দামি বাড়ি ব্যাস। একবারো এটা দেখো না ছেলেটা মানুষ হিসেবে কেমন। সারাজীবন তো সংসার তোমাদের মেয়ে করবে তোমরা না। টাকাই যদি দুনিয়াতে সব হতো আজ আমার মায়ের এই অবস্থা কেনো??
সে কেনো কোনদিন এই সংসারে নিজের সিদ্ধান্ত জানাতে পারেনি, সিদ্ধান্ত না হয় বাদই দিলাম নিজের ইচ্ছে টা জানাতেও তাঁর হাঁটু কেনো কাঁপে??
কেনো মা লুকিয়ে লুকিয়ে কাঁদে। যেখানে দিনশেষে বাবার বুকে কান্না করে নিজেকে হালকা করার কথা সেখানে কেনো সে সকলের আড়ালে চোখের পানি ফেলে। কেনো তাঁর শরীরে আজ এতো আঘাতের চিন্হ। বড়লোক ঘরের বউয়ের এই পরিণতি কেনো হবে??
বউকে শাড়ি গয়না,টাকা,ভাত দিতে পারলেই স্বামী হওয়া যায় না। আজ যখন আমি মৃত্যুর মুখে তখন আমার মা নিজের সব বাঁধন আলগা করে বাঁধ্য হয়ে এই নরক থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এতেও সকলের চোখে সে খারাপ হয়ে গেছে সমাজের লোকেরা এখন তাঁকে বলবে বুড়ো বয়সে ভীমরতী কিন্তু তাঁরা কি একবারো খুটিয়ে দেখতে আসবে এ বয়সে এসে একজন মহিলা কেনো স্বামী সংসার ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এতো বড় ঘরে এমন কি সমস্যা যে এক মা তাঁর মেয়ের প্রান বাঁচাতে নিজের স্বামী, সংসার ত্যাগ করতে চাইছে??
.
আজ এই পরিস্থিতিতে এসেও আমার দাদি বলছে পাড়া-পড়শীরা ছিঃ ছিঃ করবে তাঁর নাতনি বিয়ের আসরে বিষ খেয়েছে বিয়ে করবে না বলে। অন্য জায়গায় মন বসিয়েছে বুঝে যাবে।
পাড়াপড়শি গত পাঁচ বছরে কি বুঝতে বাকি রাখছে।
রোজ রোজ এ বাড়ির অশান্তি কি কারো কানে যায় নি? যতোটুকু জানতো না ততোটুকুও এই মহিলা গলা ফাটিয়ে জানান দিয়েছে।
এই মহিলাটার জন্যই আমার মায়ের পুরো জীবন আর আমার অর্ধেক জীবনটা শেষ। মরার পথেও এই মহিলার কূটনীতি দূর হয়নি। তোকে বলি তুই তোর ছেলে-মেয়েরা আমার আর আমার মায়ের পথে আজকের পর বাঁধা হয়ে আসলে খুন করে ফেলবো।
যে মূহুর্তে আমার মা সিদ্ধান্ত নিয়েছে সে তাঁর স্বামী কে তালাক দিবে সে মূহুর্ত থেকে এ বাড়ির সঙ্গে আমার সব সম্পর্ক শেষ।
.
হাঁপিয়ে ওঠেছে খুশি, আরুশ তাকে থামাতে চেয়েও পারছেনা খুশি এবার আরুশের দিকে চোখ তুলে তাকালো কাঁপা আওয়াজে বললো –

— তুমি কি এখান থেকে আমাদের নিয়ে যাবে নাকি আমি আর মা একাই বেরিয়ে যাবো। নিজেকে এবং নিজের মা কে খাওয়ানো,পড়ানোর যোগ্যতা আমার হয়েছে।
.
আরুশের দুচোখ বেয়ে অঝড়ে পানি পড়ছে খুশিকে আরো শক্ত করে বুকে জরিয়ে নিয়ে মাথায় চুমু খেলো।
তাঁর সেই পিচ্চি খুশিটা কতো বড় হয়ে গেছে।
তাঁর সেই পিচ্চি খুশি আজ কতো বড় বড় কথা অনায়াসে বলে দিচ্ছে। সব লড়াইয়ের অবসান যেনো আজ ঘটলো। তাঁর খুশি মৃত্যুর মতো কঠিন লড়াইয়েও আজ জিতে গেছে চোখে নোনাজলে ভরপুর অথচ ঠোঁটে ভেসে এলো এক চিলতে হাসি।
.
আর কিছু না বলে, না ভেবে খুশিকে সকলের সামনেই পাঁজাকোল করে নিয়ে ওঠে দাঁড়ালো।
কোনদিকে না তাকিয়ে সোজা দরজার দিকে পা বাড়ালো। খাদিজা বেগমও এক কাপড়ে পা বাড়ালেন।
.
মিলন কাঁদতে কাঁদতে মা বলে ডাকতেই মোশতাক তালুকদার মিলনের হাত চেপে ধরলেন।
সব দিকে যখন অন্ধকার ধেয়ে আসছে তখন একটু আলোর খোঁজে যেনো মরিয়া হয়ে ওঠলেন তিনি।
কিন্তু যে আলো নিজ হাতে নিভিয়েছে সেই আলো কি আর তাঁর কাছে ধরা দেবে??
.
মিলন চোখ, মুখ শক্ত করে মোশতাক তালুকদারের দিকে তাকালো।হাত ছাড়াতে গিয়ে হিংস্র রূপ ধারন করলো। যে ছেলে কোনদিন চোখ তুলে কথা অবদি বলার সাহস রাখেনি সেই ছেলের অমন চাহনী দেখে মোশতাক তালুকদার হাত নরম করে দিলেন। মিলনও ছুটে গেলো তাঁর মায়ের পিছু পিছু।
সাকিব কিছু বলতে যেতেই সাকিবের বাবা তাঁর হাত আটকে ধরলো। মোশতাক তালুকদার স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।
রোকসানা তালুকদার গলা ফাঁটিয়ে কাঁদতে শুরু করে দিলো।
.
আশে পাশের যে কজন মানুষ ছিলো সকলেই কানাঘুষা করতে করতে বেরিয়ে গেলো।
কেউ মোশতাক তালুকদার কে সাপোর্ট করছে তো কেউ খুশিকে সাপোর্ট করছে।
এদিকে সন্তান সহ নিজের স্ত্রী বাড়ি ছেড়ে এক কাপড়ে বেরিয়ে যাওয়ায় মোশতাক তালুকদার বিশাল এক ধাক্কা খেলেন।
সপরিবার তাঁর বিরুদ্ধে আজ। তাঁর এতোদিনের দম্ভকে আজ তাঁর স্ত্রী, কন্যা ভেঙে গুড়িয়ে দিয়েছেন।
.
নিজের ফ্ল্যাটে নিয়ে এলো আরুশ খুশিসহ খুশির মা,ভাইকে।
খুশিকে বুকে জরিয়েই মেঝেতে বসলো। খুশি বেঘোরে ঘুমাচ্ছে আরুশের বুকে। খাদিজা বেগম সমানে চোখের পানি ফেলছেন। মিলন চুপ করে মাথা নিচু করে আরুশের পাশে বসে রইলো।
আরুশ প্যান্টের পকেট থেকে মিলন কে ফোন বের করতে বললো।
মিলন তাই করলো।
আরুশ এবার তাঁর বাড়ির নাম্বারে ফোন করে তাঁর কানে ফোনটা ধরিয়ে দিতে বললো।

চলবে……

ছোট হওয়াতে কেউ কিছু বলোনা কিন্তু ?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here