অবশেষে_পরিণয় পর্ব_১৬

2
9535

অবশেষে_পরিণয় পর্ব_১৬
#জান্নাতুল_নাঈমা

সরকার বাড়ির সবাই বাকরুদ্ধ। কি থেকে কি হয়ে যাচ্ছে কারো মাথায় ঢুকছে না। তবে এতোগুলো বছর পর আরুশ এভাবে পরিবারের সবাইকে নিজের কাছে ডাকাতে কারো আর কিছু বলার নেই।
আরুশ যে তাঁদের পরিবার কে গুরুত্ব দিয়ে ফোন করে নিয়ে এসেছে এই অনেক।
খুশি চলে যাওয়ার পর আরুশ জব নিয়ে নেয়। পরিবার শহড় ছেড়ে দূরে থাকে মা,বাবা,ভাই,ভাবি, দাদি কারো কথায়ই সে বাড়িতে আসতো না।
দাদির অসুস্থতার খবড় পেয়ে দুদিন এসেছিলো আর মায়ের কান্নাকাটি তে বাঁধ্য হয়ে একবার এসেছিলো।
ঢাকা শহড় এসেও সে তাঁর নিজ বাড়িতে থাকেনি নিজের ফ্ল্যাটে একাই কাটিয়েছে। খুশিহীন সরকার বাড়িটা শশ্মানের মতো মনে হয় তাঁর। ও বাড়ি থাকলে নিজেকে ঠিক রাখতে পারতো না প্রতিটা সেকেন্ড খুশির স্মৃতি তীলে তীলে শেষ করে দিতো তাঁকে। ও বাড়ির আনাচে,কানাচে যে শুধুই আরুশ, আর খুশির স্মৃতি ভরপুর।
.
আয়েশা বেগম কে জরিয়ে ধরে হাউমাউ কাঁদছে খাদিজা বেগম। দুজনেই যে প্রাণের বান্ধবী আয়েশা বেগমও ইতিমধ্যে ঘটে যাওয়া ঘটনা গুলো জানতে পারলো। সকলেই লজ্জিত যে তাঁরা এই বাচ্চা মেয়েটাকে এভাবে ভুল বুঝলো।
শেষে বাড়ির চৌকাঠ থেকে বের করে দেওয়ার মতো জঘন্য কাজটাও তাঁরা করে ফেললো।যেখানে মেয়েটার বিন্দু মাএ দোষ ও ছিলো না।
খাদিজা বেগম আয়েশা বেগমের কাছে ক্ষমা চাচ্ছে তো আয়েশা বেগম খাদিজা বেগমের কাছে ক্ষমা চাচ্ছে।
.
আরুশের এক ফ্রেন্ড কাজি নিয়ে হাজির হলো।
সব ঠিক ঠাক কিন্তু সমস্যা হলো খুশিকে নিয়ে।
ডক্টর তাঁকে ঘুমের ইনজেকশন দেওয়াতে বেঘোরে ঘুমাচ্ছে সে। আরুশ গালে আলতো করে থাপ্পড় দিতে দিতে বললো-

— খুশি ওঠ,,বিয়েটা সেড়ে যতো ঘুম আছে ঘুমাস।
আপাতত এই মহান যুদ্ধের অবসান ঘটতে দে।
কোন বাহানায় লেট করতে চাই না। অনেক হয়েছে এবার প্লিজ এই ঘুমের বাহানায় আমাদের পরিণয় টা তুই পিছিয়ে দিস না।
“প্রণয় ঘটতে সময় লাগে না পরিণয়ে কেনো এতো সময় লাগবে”??প্রণয়ের ক্ষেত্রে তো কোন ঝামেলা পোহাতে হয় নি যখনি প্রণয়ের সম্পর্ককে পরিণয়ে রূপান্তর করতে চেয়েছি তখনি দুজনের আলাদা হয়ে যেতে হলো। কিন্তু আর নয় আজ আর শুধু প্রণয় নয় আজ হবে পরিণয় আমাদের ভালোবাসার অবশেষে পরিণয় ঘটবে আজ,,,
.
সব কাগজপএ ঠিক ঠাক আরুশ, আরুশের বাবা সাইন করে দিয়েছে,খুশির মা ও সাইন করেছে এবার খুশির পালা। খুশিকে ঝাঁকিয়ে কানের কাছে মুখ নিয়ে জাগিয়ে তুললো। কিন্তু তাঁর শরীর এতোটাই দূর্বল যে ওঠার শক্তি অবদি পেলো না। আরুশ বুঝতে পেরে খুশিকে আরেকটু জড়িয়ে নিলো।
না কোন লজ্জা না কোন অস্বস্তি কোনটাই হচ্ছে না আরুশের। খুশি যদি অসুস্থ না হয়ে এ মূহুর্তে এ অবস্থায় জেগে থাকতো অবশ্যই লজ্জায় মিইয়ে যেতো।শুধু পরিবারের লোক নয় আরুশের বন্ধুরা সহ কাজিও সামনে আছে।
তাঁদের জীবনে এতো ঝড় না আসলে এতো বছরের সিরিয়াস কিছু সমস্যা না হলে এই অবস্থায় আরুশের বন্ধুরা বেশ মজা নিতো। কিন্তু আজ এমন পরিস্থিতি তে সবাই ভীষণ সিরিয়াস। কারো মনেই মজাটা আসছে না। বরং সবাই অধীর আগ্রহে চেয়ে আছে যে কতক্ষণে খুশি সাইন করবে। কতোক্ষনে সেই পরিণয় টা ঘটবে যা ঘটার কথা ছিলো পাঁচ বছর পূর্বে।
চোখ টেনে ওঠিয়ে চেয়ে আরুশকে দেখলো খুশি।
দূর্বল হাসি আঁকলো ঠোঁটের কোনে। এই হাসি দেখে আরুশের মেজাজ গরম হয়ে গেলো। মনে মনে বকা দিলো খুশিকে “শয়তানি মেয়ে সবাই বসে আছে তোর সাইনের জন্য আর তুই আরামসে ঘুমাচ্ছিস। আবার ডেকে তুলায় মিষ্টি হাসছিস শুধু পন করেছি বিয়ের আগে তোকে কিচ্ছু বলবো না। বিয়েটা হোক তারপর তোর সব আরাম যদি আমি বেরামে পরিণত না করেছি আমিও তোর বর না হুমহ”

— সাইনটা কর খুশি।

আরুশের কথা শুনে পাশে তাকালো খুশি এতো মানুষ জন দেখে হকচকিয়ে গেলো। সরকার বাড়ির প্রায় অনেকেই আছে আরুশের কজন বন্ধু আবার টুপি পড়া মৌলভিও। খুশি লজ্জা পেলো সাথে অবাক হয়ে আরুশের দিকে তাকালো ওঠার চেষ্টা করতেও পারলো না। তাঁর গায়ের সমস্ত জোর যেনো কেউ শুষে নিয়েছে।
আরুশ খুশির দিকে গভীর দৃষ্টি তে চেয়ে মৃদু স্বরে বললো ওঠতে হবে না কোনরকমে সাইনটা কর।
খুশির হাতে কলম দিতেই খুশি মাথা কাত করেই সাইনটা করলো। সাথে সাথে সকলেই আলহামদুলিল্লাহ বললো। সকলেই ভীর কমাতে লাগলো। আয়েশা বেগম আরুশকে বললো-

— তুই চোখে, মুখে পানি দে খুশিকে আমরা দেখছি।

আরুশ মায়ের দিকে চেয়ে বললো-

— আম্মু তুমি কাকি আর মিলনকে নিয়ে বাড়ি যাও।
আমি কাল সকালে খুশিকে নিয়ে ফিরবো। আজ আমরা একটু একা সময় কাটাতে চাই ওর সাথে আমার অনেক হিসেব নিকেশ বাকি।

আয়েশা বেগম তীক্ষ্ণ চোখে চেয়ে বললো –

— আবার তোর কিসের হিসাব,নিকাশ আর কোন ঝামেলা করলে সত্যি তোদের আমি মাইর দিবো বলে রাখলাম।

খাদিজা বেগম বললেন-

— আশু আমার আরুশের ওপর সম্পূর্ণ ভরসা আছে।
তাছাড়া ওদের এবার নিজেদের সাথে আলাদা সময় কাটানো উচিত মনের সব ভুল সঠিক করার জন্য।

আরুশের বাবা,ভাইও সমর্থন করলেন। সবাইকে নিয়ে বেরিয়েও গেলেন এদিকে খুশি আবারও ঘুম দিয়েছে। এতো গুলো মানুষ আসলো গেলো অথচ তাঁর কোন হুঁশ নেই। আরুশের বন্ধু রাও বিদায় নিলো।
খুশি বেঘোরে ঘুমাচ্ছে গায়ে তাঁর লাল টকটকে বেনারসী, শরীর ভর্তি গহনা মুখের সাজ,সজ্জা নষ্ট হলেও মারাত্মক লাগছে তাঁকে। একটু ফ্যাকাশে ভাব এলেও অন্যরকম সুন্দর লাগছে। লাগতেই হবে খুশি অসম্ভব সুন্দরী একটা মেয়ে। একদম গোলাপি ফর্সা,যদিও আজ সেই গোলাপি আভা হলদে রং ধারন করেছে। আরুশ খুশিকে শুইয়িয়ে দিয়ে পাশে শুয়ে অপলকভাবে চেয়ে দেখছে।
“কতো বছর এই মানুষ টার থেকে দূরে থেকেছি। বছরগুলোকে বছর মনে হয়নি মনে হয়েছে কতো যুগ” মনে মনে কথাগুলো ভাবছে আর তৃপ্তির হাসি দিচ্ছে। একহাতে খুশির মুখে আসা ছোট চুলগুলো সরিয়ে দিচ্ছে। এক আঙুলে ঠোঁট ছুঁয়ে দেখছে,,,
বুকের ভিতর প্রশান্তির হাওয়া বইছে তাঁর কিন্তু এই প্রশান্তি একা একা আর কতক্ষন অনুভব করা যায়।
মেয়েটা ঘুমিয়েই চলেছে ওঠার নাম নেই।
.
প্রায় তিনঘন্টা কেটে গেছে রাত আটটা বাজে।
মিলন এসে রাতের খাবার দিয়ে গেছে।
সারাদিন কারো কিছু খাওয়া হয়নি এবার তো খুশিকে ওঠাতেই হবে। তাছাড়া ওর সাথে বেশ বোঝা পড়াও আছে আমার ভেবেই খুশির কাছে চলে গেলো।আলতো হাতে গাল ছুঁয়ে ডাকতে লাগলো।
খুশি নড়েচড়ে মোচরামোচরি করে পাশ ফিরে ঘুমাতে লাগলো।আরুশ রাগে বিরবির করতে লাগলো।
“আর কতো ঘুমাবি ছেড়ি এইবার তো ওঠ মনে হয় পাঁচবছর তোরই নির্ঘুম রাত কাটছে আর আমিতো এলিয়েন।আমার ঘুম হইলেই কি না হইলেই কি”
বিরক্ত হয়ে আবার ডাকতে যাবে তখনি এক ঝটকা খেলো।
শরীরে লোমগুলো দাঁড়িয়ে গেলো কেমন।
সেই পুরোনো অনুভূতিরা শিউরে ওঠলো। শুকনো গলা টা এক ঢোক গিলে ভিজিয়ে নিলো। ঘনশ্বাস ফেলে নরম গলায় ডাকলো খুশি ওঠ কিন্তু খুশি ওঠলো না আরো গুটিশুটি মেরে শুয়ে রইলো।
কিন্তু সে কি জানে তাঁর আরুশ নামক লুচুটা বেশ লোভ দিয়েছে তাঁর খোলা পিঠে, শাড়ির ফাঁকে ওকি দেওয়া ফর্সা মসৃন পেটটায়।
আরুশ ঘামতে শুরু করলো ডাকতেও পারছে না আর খুশিকে। তাঁর গলাটা দূর্বল হয়ে আসছে।
মেয়েটা তাঁকে চুম্বকের মতো আকর্ষণ করছে কি করবে সে। নিরুপায় হয়ে পড়লো আরুশ কপাল ঘামতে শুরু করে দিয়েছে।
একটু রাগ নিয়েই কড়া গলায় ডাকলো-

— এই তুই ওঠবি নাকি তুলে এক আছাড় দিবো।
খুশি হালকা জেগে বিরবির করে বললো-

— এতো গরম কেনো ধূর কি পড়ছি আমি বলে শাড়ির আঁচল একটানে খুলে শাড়িটা গা থেকে কোনরকমে সরিয়ে আরাম করে শুয়ে রইলো।

আরুশের চোখ যেনো কোটর থেকে বেরিয়ে আসার উপক্রম। অটোমেটিক হাসি এসে গেলো মুখে।
খুশির দিকে একবার চেয়ে শয়তানি হাসি দিয়ে খুশির আঁচল টা নিয়ে বুক ঢেকে দিয়ে বললো-

— লজ্জা করে না নাকি।

খুশি গালে হালকা চুলকিয়ে আবারও আঁচল সরালো। আরুশ আবার আঁচল দিয়ে দিলো।
খুশি আবারো সরালো। এবার আরুশ আর চুপ করে থাকলো না। একহাতে খুশিকে টেনে তুলে কোলের ওপর বসিয়ে কোমড় জরিয়ে গলায় মুখ দিলো।
নাক টেনে খুশির শরীরের ঘ্রান নিয়ে শক্ত একটা কিস করলো গলায়। খুশি শিউরে ওঠলো চোখ খুলতেই নিজেকে এমন বন্দি দেখে দূর্বল গলায় বললো –

— আরুশ কি করছো,,,

আরুশ খুশিকে আরো গভীর করে জরিয়ে নিয়ে সমানে কিস করতে থাকলো।
দূর্বলতায় খুশির মাথা কাঁপছে শরীরও কাঁপছে। কাঁপা গলায় বললো-

— এমন করছো কেনো আমি কোথায় এখন। আমার এমন লাগছে কেনো আম্মু কোথায়, মিলন মিলন কোথায়।

আরুশ ওভাবে জরিয়ে নিয়েই বললো-

— উমমহ চুপ কর না ওরা ঠিক আছে আমাদের ওখানে গেছে। আর তুই কোথায় মনে কর ঘুমানোর পর স্মৃতি নষ্ট হয় মনে করে ফেরানোর চেষ্টা কর।

খুশির এবার সব ধীরে ধীরে মনে পড়তে লাগলো মায়ের কথা মনে পড়তেই কাঁদো কাঁদো হয়ে বললো-

— আমি আম্মুর কাছে যাবো আম্মুরতো খুব কষ্ট হচ্ছে আমাকে তাঁর পাশে থাকতে হবে। আমাকে নিয়ে চলো প্লিজ। আমি আম্মুর কাছে যাবো।

আরুশের মেজাজ গরম হলো তাঁর রোমান্সে ডিসটার্ব এতো বছর পর কাছে পেয়েছে,,, রেগে খুশিকে ছেড়ে দিয়ে বললো-

— ধূর বাল প্যাক প্যাক করস কেনো এতো?? ধূর।
রেগে বিছানা ছেড়ে ওঠে চলে গেলো আরুশ।
খুশি ব্যাকুব বনে গেলো শাড়িটা গায়ে জরিয়ে গয়না গুলো খুলতে লাগলো আর ভাবলো “এমন রাগার কি হলো কি করলাম আমি”
.
খানিকবাদে আরুশ রুমে এলো খাবাড় নিয়ে। মেঝেতে খাবার রেখে বললো-
— নিচে আয় খাবো।

খুশি মুখ ফুলিয়ে আরুশের দিকে চেয়ে নিচে নেমে বসলো। — রাগ করো কেনো বিয়েতো হয়েই গেছে।
আমরা এখন জামাই বউ নতুন বউয়ের সাথে রাগ করতে নেই।

আরুশ দাঁতে দাঁত চেপে বললো –

— এতো বুঝস এটা বুঝসনা নতুন বিয়ে হলে জামাই বউকে কাছে চায় আদর দিতে চায়। সবে একটু ছুঁয়েছি আর তুই প্যাক প্যাক লাগাইছোস।
হা করে চেয়ে না থেকে কয়টা গিলে উদ্ধার কর আমায়।

খুশির হাসি পেলো আরুশের এই রাগ গুলো বেশ ইনজয় করে সে।
.
খাবাড় শেষে খুশিই সব গুছিয়ে রাখলো।
আরুশের ফোন আসাতে সে ফোনে কথা বলছে।
খুশি বাথরুম থেকে বেরিয়ে আরুশকে ফোনে কথা বলতে দেখলো। এতো ভারী শাড়ি পড়ে থাকা যায় না। কোন কাপড় আনা হয়নি কি করবে তাই ভাবছে সে। চুপচাপ বিছানায় বসে নানারকম চিন্তা করছে।
এ মূহুর্তে তাঁর সব থেকে বড় চিন্তার বিষয় হলো তৃষা। এ বিষয়ে আরুশকে জিগ্যেস করবে কি করবে না তাই ভেবে যাচ্ছে। আবার ভাবছে থাক আর কোন ঝামেলা চাইনা এতো কিছুর পর আমরা এক হয়েছি এটাই অনেক। আর কোন দিকে মন দিতে চাই না আমার শুধু ওকে চাই ওর ভালোবাসা চাই। ভেবেই লজ্জায় লাল হয়ে গেলো একদম।
.
আরুশ খুশিকে চিন্তা যুক্ত মুখে বসে থাকতে দেখে বললো-

— কিরে কি ভাবছিস এতো,,,

— কি আর ভাববো বিয়ে হয়ে গেলো অথচ বর এখনো তুই তুকারি করে এই দুঃখ রাখার জায়গা পাচ্ছি না। কোথায় রাখা যায় বলতো??

আরুশ ভ্রু কুঁচকে তাকালো। কুচকানো কপালে চিন্তাশীল মুখে বললো-“ঠিকি তো এখনো তুই বলা কি ঠিক কিন্তু এটায়তো খুব আপন আপন লাগে আমার। বউ তাতে কি তুমিটা মধুর হলেও তুইটা তুমির থেকেও কাছের।তাছাড়া আমাদের সম্পর্কে কোন ফর্মালিটি আগেও ছিলো না এখনো থাকবে না। তুই তুই ই,,, তুই আমারি,,, তুই আমার বউই। তোর কি আপত্তি আছে নাকি??

খুশি তীক্ষ্ণ দৃষ্টি ছুঁড়ে দিয়ে বললো-

— তুমি তুই বলবা মানুষ কি বলবো হে??

আরুশ খুশির পাশে এসে বসলো খুশির দিকে চেয়ে বললো —

–মানুষের কথায় কি আসে যায় তুই বল কি চাস??

— অফকোর্স তুমি চাই।

আরুশ খুশিকে একটানে নিজের বুকে নিয়ে নিলো।
কানের কাছে মুখ নিয়ে বললো-

— আমাকে তো পেয়েই গেছিসরে পাগলী।

খুশি লজ্জা পেলো আরুশ খুশির পেটে আলতো করে চেপে ধরলো। খুশিও আরুশের পিঠ চেপে ধরলো ঘনশ্বাস ফেলে বললো-

— বউ কে তুমি বলতে হয়।

— কিন্তু আমি তুই বলবো তবে নো টেনশন বাইরে না শুধু তুই আমি যখন একা থাকবো তখন। পুরোনো অভ্যাস যে আরুশ ছাড়তে পারেনা বলেই গালে ঠোঁট ছোঁয়ালো।

খুশি জোরে শ্বাস নিতে নিতে বললো-

— বড্ড গরম এখানে ফ্যান চলছে তবুও যেনো গরম বাতাস বের হচ্ছে।
আরুশ বাঁকা হেসে বললো “শাড়ি খুলে ফেল”

— ছিঃ কি বলো??

আরুশ শক্ত করে পিঠ চেপে কানের কাছে মুখ নিয়ে বললো-

— একটু আগে তো তাই করছিলি।

খুশি যেনে লজ্জায় এবার জ্ঞান হারাবে। ধরা গলায় বললো-

— ধ্যাত ঘুমের ঘোরে আমি কি করি নিজেও জানিনা।

— জানতে হবে না এবার জাগ্রত অবস্থায় খোল। আমি তো তোর বরই হই তাইনা???

খুশি এক ধাক্কায় আরুশকে ছাড়িয়ে সরে বসলো।
লজ্জায় দুহাটু ভাজ হাটুর ওপর দুহাত রেখে মাথা নিচু করে ঘনঘন শ্বাস নিতে লাগলো।

আরুশ বাঁকা হাসি দিয়ে বললো-

— লজ্জা পেয়ে কি লাভ আগেই ছাড় দেইনি এখন তো বউ এখন তো সবটা নিয়ে নিবো। কি করবি,, কোথায় যাবি,, আমার সীমানা ছাড়া আর কোথাও যাওয়ার জায়গা রাখবোনা তো আজ।
.
বেঘোরে ঘুমাচ্ছে আরুশ খুশিকে পুরোটাই নিজের মধ্যে আবদ্ধ

রেখে তাঁর বুকে মুখ গুজে প্রশান্তির ঘুম ঘুমাচ্ছে।
খুশি ড্যাবড্যাব করে ঘুমন্ত আরুশের দিকে চেয়ে আছে। সারারাতের পাগলামোর কথা মনে পড়তেই
আলতো করে কপালে ঠোঁট ছুয়িয়ে গভীর এক নিঃশ্বাস নিলো সে। তৃপ্তিময় এক হাসি দিয়ে বিরবির করে বললো-

— ইশ কি নিষ্পাপ লাগছে কে বলবে ছেলেটা সারারাত আমার মতো এক অবলা নারীর সাথে যা তা বিহেইভ করেছে। মুচকি হাসলো খুশি।

নিজের আঙুলের ফাঁকে আরুশের চুলগুলো নিয়ে ব্রাশ করতে করতে ডাকলো-

— এই যে এস-আই মশাই ওঠবেন নাকি এবার তো চ্যাপ্টা হয়ে বিছানার সাথে মিশে যাবো।

আরুশ চোখ বুজেই বললো-

— কেনো ম্যাডাব নিজের বরকে সমলানোর যোগ্যতা হয়নি নাকি।

— হয়েছে কি হইনি সেটা কি বুঝতে বাকি আছে এখনো বলেই ভেঙচি কাটলো।

আরুশ চোখ খুলে হালকা উঁচু হয়ে খুশির মুখোমুখি মুখ করে ঠোঁটে দুষ্টু হাসি একে বললো-

— তা তো বুঝলামি সোনা কান্নাকাটি জুরে দিয়ে বালিশ ভিজিয়ে ফেলেছিলেন।

খুশি চুপ হয়ে অন্যদিক তাকালো। লজ্জায় আর সে টু শব্দটিও করলো না।
আরুশ খুশির দুগালে আলতো করে ছুঁয়ে কপালে ভালোবাসার পরশ একে দিয়ে বললো-

— সরি সোনা। অনেক জ্বালিয়েছি,,,

খুশি আরুশকে দুহাতে জরিয়ে নিলো।
আরুশ ও চোখ বুজে খুশির শরীরের ঘ্রান নিতে লাগলো।
.
দুজন একসাথেই শাওয়ার নিয়ে নিলো। খুশি আরুশের শার্ট আর টাওজার পড়ে তয়ালে দিয়ে চুল মুছতে শুরু করলো।
আরুশ বাথরুম থেকে বেরিয়ে খুশির বাহুতে একটান দিয়ে দেয়ালে ঠেকিয়ে রাগি চোখে চেয়ে বললো –

— তুই কোন সাহসে কাল অমন একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছিস বল???

খুশি হকচকিয়ে গেলো ভ্রু কুঁচকে চেয়ে বুঝার চেষ্টা করলো কি হলো হঠাৎ। “বাথরুম থেকে আরুশের মতো অন্য কেউ বেরিয়ে এলো না তো??
খুশি এক ঢোক গিলে নিয়ে আশে পাশে তাকাতে লাগলো। আরুশ দাঁতে দাঁত চেপে বললো –

— কি হলো বল অতবড় একটা সিদ্ধান্ত কোন সাহসে নিলি তুই। তোর বুক একবারো কাঁপলো না।
এতো সাহস হয়ে গেছে তোর কি চেয়েছিলি আমাকে একা রেখেই চলে যাবি। কেনো করলি তুই এমন বল??

খুশি ন্যাকা কান্না দিয়ে বললো-

— তুমি এমন করছো কেনো?? বাসর হওয়ার পরই তোমার মন ঘুরে গেলো। হায় এখন আমার কি হবে গো।ছেলেটা আমার সর্বস্ব কেড়ে নিয়ে আমাকে মনে হয় ছুঁড়ে ফেলে দিবে গো।

— খুশি কথা ঘুরাবিনা রাগ তুলবি না। তুই এমন একটা সিদ্ধান্ত কেনো নিলি??

খুশি এবার সুযোগ পেলো তৃষার কথাটা তোলার।
তাই কোনরকম ভনিতা ছাড়াই বললো-

— কি করতাম আমি?? চিঠিতে তো বলে দিয়েছি যে তৃষাকে তোমার পাশে আমার জাষ্ট সহ্য হচ্ছিল না।

আরুশ খুশির কাঁধে শক্ত করে চেপে ধরে দাঁতে দাঁত চেপে বললো –

— তৃষা বিবাহিতা ওর একটা মেয়ে আছে।
আর ও আমার জাষ্ট একজন ভালো বন্ধু ওর হাজব্যান্ড আর আমি একসাথেই ট্রেনিং করেছিলাম তখন থেকেই পরিচয়।

খুশি অভিমানী চোখে চেয়ে বললো-

— তা কি আর আমি জানি নাকি??

— তুই জানবি কি করে?? তুই তো একটা ফাজিল মেয়ে আমি তৃষাকে নিয়ে তোর সামনে ঘুরাঘুরি করেছি যাতে তুই হিংসায় জ্বলিস। ওর সাথে আমাকে দেখে সহ্য করতে না পেরে আমার ওপর ক্ষেপে যাস। আর তৃষা বা আমাকে এট্যাক কর।
সহ্য করতে না পেরে তোর পেটের ভিতর জমে থাকা সব কথা উগ্রে দে। কারন আমি জানতাম তুই কোন না কোন ভাবে বাধ্য হয়েছিস এসব করার।
যা আমার অজানা তাই তা আমি জানতে চেয়েছিলাম। আমি কারো কথা শুনতে চাইনি বুঝতে চাইনি আমি শুধু তোর কথা শুনতে চেয়েছি। আমি শুধু তোকে বুঝতে চেয়েছি আর তুই সব বাদ দিয়ে নিজেকে শেষ করার সিদ্ধান্ত নিলি।

খুশি বললো-

— তাই যদি হয় তাহলে আমার বিয়ের দিন তুমি কেনো চুপ করে ছিলে?? আমি সুইসাইড না করতে গেলে তো বিয়ে হয়ে যেতো আর চিঠি না পেলে তুমিও যেতে না।

— হ্যাঁ যেতাম না। কারন আমি তোর চাওয়াকে মূল্যায়ন করেছি। যখন দেখলাম তৃষাকে দেখেও তুই চুপচাপ আছিস তৃষাকে আমার পাশে দেখে তুই সহ্য করছিস। সেই সাথে বিয়ের দিন ঘনিয়ে এলেও তুই তা মেনে নিচ্ছিস তখন আমি নিজেই নিজেকে বোঝালাম। খুশি যা চায় তাই হোক আমি আর বাঁধা হবো না। অনেক তো চেষ্টা করেছি কোন লাভ হয়নি। বরং খুশির সিদ্ধান্ত টাই মেনে নেই। কষ্ট আমার হয়েছে খুশি ভিতরটা দুমড়ে মুচড়ে গেছে। তবুও দাঁত দাঁতে কামড়ে সহ্য করে গেছি৷ কিন্তু যখন তোর চিঠি পেলাম সবটা জানলাম তোকে মৃত্যুর পথে দেখলাম আমি আর আমার ছিলামনা খুশি৷ পাগল হয়ে গেছিলাম আমি। “ভালোবাসার মানুষ কে অন্যকারো সাথে সুখি দেখাটাও মানা যায় কিন্তু ভালোবাসার মানুষ টা পৃথিবী থেকে বিলীন হয়ে যাওয়া মানা যায় না” ভালোবাসার মানুষের সুখে সুখ, দুঃখে দুঃখ অনুভব হয় তুই সাকিব লুইচ্চার সাথে সুখী হলেও মানতে পারতাম কিন্তু পৃথিবী থেকে চলে গেলে আমি শ্বাসরুদ্ধকর হয়ে মারা যেতাম। কারন আমার বেঁচে থাকার অক্সিজেন তুই।

খুশি আরুশকে জরিয়ে ধরলো আর বললো-

— ভাগ্যিস বিষটা খেয়েছিলাম তাই তো তোমায় পেলাম।

আরুশ খুশির পেটে খামচে ধরলো। খুশি আহ করতেই আরুশ বললো-

— চুপপ আর কখনো এমন কথা বলবি না আর না এমন ভাবনা মুখে আনবি একদম পুঁতে ফেলবো।

খুশি মৃদু হেসে বললো-

— ওকে স্যার মুখে আনবো না। আপনাকে পেয়েছি যে কারনে তাই বললাম।

আরুশ বললো- তুই আমাকে পেয়েছিস কারন আল্লাহ তায়ালা আমার আর তোর জুটি বেঁধেই দুনিয়াতে পাঠিয়েছে। তাই খুব দেরী হলেও আমরা এক হয়েছি আমাদের পরিণয় ঘটেছে।
কিন্তু প্রণয় ঘটতে সময় না নিলেও পরিণয়ে সময় নিয়েছে। বলেই খুশিকে গভীরভাবে বুকে জরিয়ে নিলো। খুশিও আবেশে চোখ বুঝে প্রশান্তির শ্বাস নিচ্ছে।

“পরিণয় দুটো হৃদয়কে মিলিয়ে দেয় কিন্তু এই মিলন আবিষ্কার করার জন্যই চলে সারাজীবনের এক দীর্ঘ সংগ্রাম”।

★সমাপ্ত ★

ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।
জানিনা কেমন হলো। যারা যারা গল্পটির সাথে ছিলেন সকলকেই অনেক অনেক ধন্যবাদ এবং ভালোবাসা রইলো। গল্পটি কারো খারাপ লাগলে আন্তরিক ভাবে দুঃখীত। গল্পটি বিষয়ে যেকোন মতামত কমেন্টে জানাতে পারেন। পজেটিভ,নেগেটিভ যাই হোক না কেনো পাঠকের একটি মন্তব্য আমাকে অনুপ্রাণিত করার জন্য যথেষ্ট।

2 COMMENTS

  1. হুম গল্পটার কিছু কিছু বিষয় ওভার লেগেছে। তবুও কিছু কিছু ডায়লগ পরিপাটি সুন্দর ছিল। অনেক গুলো সিনের সাজানোটা ভালো লেগেছে। দারুন হয়েছে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here