অবশেষে_পরিণয় পর্ব_২
#জান্নাতুল_নাঈমা
খুশি গুটিগুটি পায়ে ক্লাশরুমে ঢুকতেই হা হয়ে গেল
আরুশ আর টিয়াকে দেখে মুখে হাত দিয়ে পিছন ঘুরেই এক দৌড় দিতে দিতে বললো,,,
— মামনি গো মামনি আরুশ ভাইয়া টিয়াকে চুমু খাচ্ছে। ও মামনি আমি আসতাছি সব বলবো তোমাকে।
আরুশ খুশির কথাগুলো শুনেই চমকে ওঠে টিয়াকে ছেড়ে দিলো। খুশির পিছন সেও দৌড় লাগালো।
হাত সামনে এগিয়ে দৌড়াতে দৌড়াতে বললো,,,
— এই খুশি থাম থাম,, আম্মুকে কিছু বলিস না।
আম্মু আমাকে খুব মারবে,, প্লিজ থাম আমি তো প্র্যাকটিস করছিলাম হিরো হওয়ার জন্য।
তুই কেনো ভিলেন হতে আসলি।
আরে থাম,,,
আরুশ খুশিকে ধরার আগেই খুশি বাসার গেট টপকিয়ে বাসার ভিতর ঢুকে গেলো।
আরুশ গেট অবদি এসে ভয়ার্ত মুখ করেই ফিরে গেলো।
,
খুশি বাচ্চা একটা মেয়ে এই বয়সে সে মিথ্যা বলছে না এটা বেশ বুঝলো আয়েশা বেগম।
তাঁর ছেলেটা যে কি রকমের ফাজিল আর পাকা এতোদিনে তাঁর আর বুঝতে বাকি নেই।
ফাইভে পড়া বাচ্চা ছেলেটা চুমু খেয়েছে আরেকটা বাচ্চা মেয়েকে সেই টা আবার আরেক বাচ্চা মেয়ে দেখে নালিশ দিতে এসেছে।
ভাবা যায় এগুলা,,, আয়েশা বেগমের কান্না পাচ্ছে।
বড় দুই ছেলেকে সামলাতে এতো কাঠখড় পোহাতে হয়নি। তাঁর এই ছোট ছেলেটা তাঁর অবস্থা নাজেহাল করে ছাড়ছে।
— আজ যদি হিরো হওয়ার ভূত তোর মাথা থেকে না নামিয়েছি আমিও তোর মা না। এই অভ্যাস গুলো বড় হলেও থাকবে যেভাবেই হোক এসব থেকে দূরে সরাতে হবে তোকে। আজ থেকে বাসায় টিভি অফ।
বলেই কাঠের লাঠিটা নিয়ে খুশির হাতটা চেপে ধরে বেরিয়ে গেলো আয়েশা বেগম।
,
খুশি বিছানায় বসে হোমওয়ার্ক করছিলো এমন সময় আরুশ রুমে ঢুকেই ছোট মোড়া নিয়ে মোড়ার ওপর দাঁড়িয়ে দরজার সিটকেরী লাগিয়ে দিলো।
খুশি আরুশ কে দেখে মুখ চিপে হাসলো।
তাঁর সামনেই যা পিটনী দিয়েছে আয়েশা বেগম তা মনে করেই প্রচন্ড হাসি পাচ্ছে খুশির।
আরুশ রাগি চোখে খুশির দিকে তাকালো।
এক হাত পিছনে দেওয়া,,,
— তোর জন্য আজ আম্মু আমাকে অমন মারলো।
এতোগুলা মেয়ের সামনে আমার সম্মান হানি হলো।
কোন দিন যদি অনেক বড় হিরো হয়ে যাই পাবলিক তো এগুলা মনে করে হাসবে আমাকে দেখে।
আর টিয়া,,,সে কি ভাবলো আমার ১নাম্বার গার্লফ্রেন্ড এর সামনে এইভাবে আমার প্রেস্টিজ নষ্ট করলি।
খুশি বিছানায় দাঁড়িয়ে কোমড়ে হাত দিয়ে খিলখিল করে হাসতে লাগলো।
মাথা নাচিয়ে বললো,,,
— হিরো না ছাই,,, হিরো রা তো ইয়া লম্বা হয় আর তুমি,,, তুমি তো বাচ্চা ছেলে তুমি হিরো হবে হিহিহি,,,
আরুশ রেগে গেলো। তাঁকে বাচ্চা বলা তাঁর হাইট না হয় একটু কম আছে তাই বাচ্চা নাকি,,,
সে সব জানে,সব বুঝে এমনকি সাতটা গার্লফ্রেন্ডও আছে তাঁর, তাঁর বড় ভাইদেরও নেই গার্লফ্রেন্ড অথচ তাঁর সাতটা আছে এরপরও সে বাচ্চা।
কয়েক পা এগিয়ে বিছানা থেকে একটানে নামিয়ে বেত দিয়ে পরপর তিনটা বাড়ি দিলো হাতে।
খুশি ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কাঁদতে শুরু করতেই আরুশ বেতটা ফেলে একহাতে মুখ চেপে ধরে বললো,,,
— এই ছেড়ি এখন কান্দোস কে,,,তোরে তিনটা দিলাম আর আম্মু আমাকে দেখ কয়টা দিছে বলেই নিজের পরিহিত গেঞ্জি টা খুলে দেখালো।
খুশি কাঁদতে কাঁদতে হেচকি তুলে আরুশের দাগ হওয়া জায়গা গুলো দেখলো।
নাক টেনে টেনে বললো,,,
— তুমি তো দুষ্ট ছেলে,,,মেয়েদের চুমু খাচ্ছিলে তাই তো তোমাকে মামনি মেরেছে। আমিতো গুড গার্ল তাহলে আমাকে কেনো মারলে অ্যাঁ,,,,,
আরুশ আবারো খুশির মুখ চেপে বললো,,,
— আমি দুষ্ট হলাম কি করে??
আমি আমার গার্লফ্রেন্ডকে চুমু খাচ্ছি এটা কি দুষ্টুমি?
আমি টিয়াকে লাভ করি লাভ,,,সিনেমাতে দেখিস না হিরো হিরোইনকে চুমু খায় তখন কি কেউ হিরোকে মারে আর কেউ যদি মারে তাহলে সে হয় ভিলেন।
খুশি হাত ছাড়িয়ে বললো তাঁর মানে মামনি ভিলেন??
— না ভিলেন তুই কারন তুই আম্মুকে নালিশ করেছিস। তুই পাপ করেছিস পাপ।
— কি বলছো ভাইয়া আমি পাপ করেছি?
আম্মু বলেছে যারা পাপ কাজ করে তাঁদের অনেক কষ্ট করতে হবে শাস্তি ভোগ করতে হবে।
বলেই ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কাঁদতে লাগলো।
— চুপ চুপ কাঁদিস না। আমার কথা শুনে চললে তোকে শাস্তি ভোগ করতে হবে না।
বল শুনবি কি না,,,
— কি শুনবো??
আরুশ বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লো।
তাঁরপর বললো,,,
— আমার পা টা খুব ব্যাথা করছে।
তুই আমার সাথে অন্যায় করেছিস তাই এখন আমার সেবা কর তাই তোর পাপ আর পাপ থাকবে না পূন্য হবে।
খুশি তাই করলো অনেক সময় আরুশের পা টিপে দিতে লাগলো।
— দেখ কেমন লাগে আমার সাথে লাগতে আসলে তোর এই হালই হবে।
কতো বড় সাহস আমার হিরো হওয়ার পথে বাঁধা হয়ে আসিস। দেখ এখন আমি হলাম রাজা আর তুই
হলি চাকরানি আমার পায়েই তোর স্থান।
চোখ বুজে নিজেকে রাজার আসনে বসা অবস্থায় ভাবতে লাগলো আরুশ।
,
কিছুদিন পর আবারো একি কান্ড করলো আরুশ।
খুশি বলে দিতে চায়নি তাঁর মামনি কে কিন্তু মুখ ফঁসকে বেরিয়ে গেছে। আরুশের ফাইভের রেজাল্ট ও বেশ খারাপ এসেছে তাই আয়েশা বেগম তাঁর বড় ছেলের সাথে কথা বলে আরুশের স্কুল পাল্টে ফেললো।
সবেতেই ছেলে এতো পাঁকা আর পড়াশোনার বেলায় এতো কাঁচা এটা যেনো মানতেই পারছে না আয়েশা বেগম।
খুশি এবার নার্সারি থেকে ওয়ানে,, তাঁর রেজাল্ট খুব ভালো রোল এক এর থেকে ২নাম্বার পিছিয়ে আছে।
খুশির বাবা মা এতেই ভীষণ খুশি।
,
খুশি সন্ধ্যা বেলা ছাদে খেলছিলো।
এমন সময় আরুশ ছাদে গিয়ে বললো,,,
— এই খুশি আম্মু ডাকছে তারাতরি ঘরে আয়।
খুশি ঘরে যেতেই আরুশ দম করে দেয়ালে চেপে খুশির ঠোঁটে চুমু খেলো।
খুশি ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কাঁদতে শুরু করলো,,,
— মামনি গো তোমার ছেলে আমাকেও চুমু খেলো।
মামনি গো আমার এখন কি হবে,,,
বলেই বেরিয়ে যেতে নিতেই আরুশ খুশির মুখ চেপে ধরে রুমে টেনে নিয়ে বিছানায় ফেলে তাঁর ওপর বসে পড়লো।
— ও মা গো মরলাম বাঁচাও আমাকে কেউ বাঁচাও।
আরুশ পেটের ওপর বসে মুখ চেপে বললো,,,
— এই ছেড়ি,,,আমি হিরো,,, হিরো ভিলেন না।
কান্দোস কে,,, আগেই বলছি যে ভাবেই হোক আমাকে হিরো হওয়ার জন্য সব কিছু প্রেক্টিস করতে হবে। আর তুই সব বন্ধ করলি আমার টিয়াও আমার কাছে নাই আর সবগুলা গার্লফ্রেন্ড কে হাতের কাছেই পাইনা যাও পাই অগোর বাপ -মা সব সময় নজরে রাখে সব কয়টা ভিলেন।
এখন তুই ছাড়া আর কেউ নাই।
দেখ তুই আমার গার্লফ্রেন্ড না তোর মতো গোল মরিচ কে আমার গার্লফ্রেন্ড হিসেবে মানায়ও না।
কিন্তু আমি যাতে কিস করা ভুলে না যাই, কিভাবে রোমান্স করতে হবে এসব ভুলে না যাই তাঁর জন্য আমার একটা নায়িকা দরকার তুই তো এ বাড়িতে থাকোস তাই তুই ই আমার নায়িকা।
আমি তোরে কিস করমু আর তুই চুপ থাকবি বেশী চেঁচামেচি করলে রাতে যখন ঘুমাবি তোরে কোলে নিয়া ছাদ থেকে ঢেল মারমু হুমহ।
— আহ,,,
হাতে দাঁত ডাবিয়ে খুশি ছুটে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।
আরুশ হাতের ডেবে যাওয়া অংশে তাকিয়ে রাগান্বিত হয়ে রুম থেকে বের হলো।
আয়েশা বেগম আজ যেনো ছেলেকে মেরেই ফেলবে।
খুশির কান্না থামছেই না,,,
— আমার বিয়ে হবে না গো মামনি,তোমার ছেলে আমার সব কেড়ে নিলো গো। আমার ইজ্জত নষ্ট করলো তোমার ছেলে।
আয়েশা বেগম কাঁদো কাঁদো মুখ করে খুশির হাত চেপে ধরে লাঠি নিয়ে ঘরে গিয়ে দেখলো আরুশ নেই।
তা দেখে খুশি হাত পা ছুঁড়াছুড়ি করতে করতে মেঝেতে বসে পড়ে এক হাত মাথায় দিয়ে কাঁদতে লাগলো,,,
— আমার সব কেড়ে নিয়ে তোমার ছেলে পালিয়েছে গো মামনি এখন আমি কোথায় যাবো কার কাছে যাবো। আমার আর বিয়ে হবে না গো মামনি।
আয়েশা বেগমের মাথাটা ঘুরে এলো।
মনে হচ্ছে তাঁর যুবক ছেলে কোন যুবতির ইজ্জত নিয়ে পালিয়েছে।
কে বলবে তাঁর এগারো বছরের ছেলের চুমু খেয়ে
ছয় বছরের বাচ্চা মেয়েটা এমন মরা কান্না জুরেছে,,,
এখন তাঁর বেশ সন্দেহ হচ্ছে এই দুই বাচ্চা কে নিয়ে।
এরা আদেও বাচ্চা তো নাকি এদের ভিতরে কোন যুবক,যুবতীর আত্মা ভর করেছে,,,
ছিঃ ছিঃ শেষ মেষ নিজের গর্ভের সন্তান কে সন্দেহ করছিস আয়েশা ছিঃ।
মেঝেতে তাকাতেই আয়েশা বেগম যেনো আরো দ্বিগুন ভয় পেয়ে গেলো।
খুশি মেঝেতে এক কাত হয়ে শুয়ে কি সব বলছে আর হাউমাউ করে কাঁদছে,,,
চোখের পানি গড়িয়ে মেঝেতে পড়ছে।
আয়েশা বেগম এক ঢোক গিললেন।
খুশিকে কোন রকমে কোলে তুলে নিয়ে ছুটে গেলেন বড় ছেলের রুমে।
বড় ছেলের রুমে যেতেই খুশি ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কাঁদতে শুরু করলো আবারো।
আয়েশা বেগমের সব রাগ যেনো পানি হয়ে মাটিতে মিশে গেলো,,,
আরাফ হাতে ব্যান্ডেজ করে দিচ্ছে,,,
চলবে……
ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।
পিচ্চি বেলার কিছু স্মৃতি চলছে আর কি।
আশা করি সবাই বুঝতে পারছেন।
কারো কোন অভিযোগ থাকলে বলতে পারেন। আমি কাল্পনিক ভাবেই চরিএ গুলো সাজাচ্ছি।
ধীরে ধীরে গল্পের অনেক বিষয় ক্লিয়ার হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।
ভালোই লাগছিল…. বাট বাচ্চা বেলার ঘটনাটা বেশির ওভার হয়ে গেছে। ৬ বছরে খুশির জানার কথা না “ এভবে সব কেড়ে নিবে দেন বিয়ে হবে না”
কিন্তু হ্যাঁ বার্তমান টিভি সিরিজ মুভি গুলা আরুশের মত বাচ্চাদের নেগেটিভ করে তুলছে সেটা তুলে ধরাটা ভালো লাগলো।