অবশেষে_পরিণয় পর্ব_৪

0
5246

অবশেষে_পরিণয় পর্ব_৪
#জান্নাতুল_নাঈমা

দীর্ঘ দিনের প্রেমের সম্পর্কের অবশেষে_পরিণয় ঘটতে চলেছে।
আয়ান আর মুনিয়ার বিয়ে ঠিক হয়ে গেলো।
মধ্যবিত্ত পরিবারের চাহিদাটা খুবই সীমিত।
কোন প্রকার ঝামেলা বিহীন জীবন কাটাতে চায় তাঁরা। তাঁদের কাছে অর্থের থেকেও সম্মান টা জরুরি। আজাদ সরকার ছেলের সম্পর্কের কথা শুনেই দ্রুত বিয়ের ব্যবস্থা করেছেন, মেয়ের বাড়ি থেকেও আপত্তি ছিলো না ছেলে গভর্নমেন্ট জব করায় তাঁদের একদমই আপত্তি নেই।
মধ্যবিত্ত পরিবারের হওয়াতে দুই ফ্যামিলিই দুই ফ্যামিলিকে খুব ভালো বুঝতে পারলো এবং মতের মিলও হয়ে গেলো।
মেজো ভাই এর বিয়ের তোরজোর শুরু হয়ে গেলো।
কিন্তু আরুশের মন মেজাজ বিগরে আছে।
কারনটা অবশ্যই খুশি, খুশির চালচলনে বিরক্ত আরুশ। কিছু বলার সুযোগ পাচ্ছে না আর না এসব সহ্য করতে পারছে।
,
গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান কমপ্লিট হয়ে গেলো।
তবুও “তালুকদারের মেয়ের আসার সময় হলো না”
ভেবেই রাগে বির বির করতে করতে ড্রয়িং রুমে আসতেই মেজাজটা ১০০ধাপ বিগরে গেলো।

আয়েশা বেগমের গলায় জরিয়ে খুশি ন্যাকা কান্না কেঁদে বলছে,,,

— মামনি রেগে আছো,,, সরি মামনি আসলে একটু শপিংয়ে গিয়েছিলাম তাই লেট হয়ে গেলো।
আর চিন্তা করোনা তোমার বান্দরনী কাল সকালেই এসে পড়বে।

আয়েশা বেগম মুখ গোমড়া করেই রইলো।
খুশি এবার আরেকটু কাঁদো কাঁদো হয়ে বললো,,,

— সরি মামনি এই কান ধরেছি দেখো।
আচ্ছা এই আমি তোমাকে পাপ্পি দিচ্ছি প্লিজ রেগে থেকো না।

এবার আর পায় কে আয়েশা বেগম গলে গেলেন।
খুশিকে জরিয়ে ধরে চুমু খেয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করতে লাগলেন।

আরুশ এসব ন্যাকামো দেখে বিরক্তি মুখ করে বাইরে চলে গেলো।
,
সকাল হতে না হতেই খুশির বায়না সে মামনির হাতে ভাত খাবে। বাড়ি ভর্তি মেহমান ছেলের বিয়েতে কাজের চোটে কিছুই যেনো চোখে দেখছেন না আয়েশা বেগম। প্রত্যেকটা লোকই বড় ব্যাস্ত।
সবাই ছুটাছুটি করছে আর এদিকে খুশির বায়না সে মামনির হাতে ভাত খাবে।
আয়েশা বেগম বললেন,,,

— আহারে মা আমার কতোদিন খাওয়িয়ে দেই না একটু অপেক্ষা কর সবজিটা কেটেই তোকে খাওয়িয়ে দিবো।

এমন সময় আরুশ এসে বললো,,,

— আরে আম্মু এতো চাপ নিচ্ছো কেনো?
খুশিকে আমি খাওয়িয়ে দিচ্ছি তুমি আরামসে কাজ করো।

খুশি চমকে গেলো চোখ যেনো কোটর থেকে বেরিয়ে আসার উপক্রম। এ সে কি শুনছে এই বাস্তবমুখী ভিলেন টা তাঁকে নিজ থেকে খাওয়িয়ে দিতে চাইছে।
নিশ্চয়ই ভেজাল আছে ভেবেই খুশি গাল ফুলিয়ে বললো,,,

— না আমি মামনির হাতেই খাবো।
আমার জন্য তোমায় এতো কষ্ট করতে হবে না গো থ্যাংকস। বলছো তাতেই আমি ধন্য,,,

আরুশ খুশির কথায় পাত্তা না দিয়ে প্লেটে খাবাড় বেড়ে এক গ্লাস পানি নিয়ে রুমে যেতে যেতে বললো,,,

— আম্মু ওকে পাঠিয়ে দাও নিজ থেকে অফার করেছি। ভালোই ভালোই যেনো চলে আসে।

আয়েশা বেগম মুখ চিপে হেসে বললো,,,

— যা মা যা, আমার ক্ষেপা ছেলেটার উন্নতি হয়েছে অবনতি হওয়ার আগেই চলে যা।

খুশি মুখ ফুলিয়ে ঠোঁট উচিয়ে বললো,,,

— তোমার ছেলের এতো ভালো মানুষি আমি হজম করতে পারছিনা মামনি। যদি খাবাড়ে বিষ মিশিয়ে দেয়।

আয়েশা বেগম আঁতকে ওঠে বললো,,,

— খুশি,,,কি বলছিস এগুলো।

খুশি চুপসে গেলো মুখটা কাচুমাচু করে বললো,,,

— না কিছুনা মজা করছিলাম। তোমার ছেলের মতো ইনোসেন্ট ছেলে আর দুটো হয় নাকি যাচ্ছি আমি।
জোর পূর্বক হেসে খুশি আল্লাহ আল্লাহ করতে করতে রুমে ঢুকলো।

রুমে ঢুকার সাথে সাথে আরুশ দরজার সিটকেরী লাগিয়ে খুশির গায়ের ওড়নার এক কোনাতে নিজের দুই হাত ভালো করে মুছে বললো,,,

— চুপচাপ ওখানে বসে খেয়ে নে। সাহস দেখে বাঁচি না। আমাকে জ্বালিয়ে তোর শখ মেটে না আম্মু কে জ্বালাতে যাস। বাড়িতে সব কয়টা লোকই প্রচুর কাজ নিয়ে ব্যাস্ত তোর মতো আজাইরা টাইম কারো নাই। মামনি খাওয়িয়ে দাও না (মুখ ভেঙচিয়ে)
আসছে আমার অবলা শিশু যখন বিচ্ছু বাহিনী নিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে হ্যাংলার মতো গপাগপ ফুসকা খাস তখন এই অবলা ভাব কই থাকে।
দাঁতে দাঁত চেপে নিচু স্বরে ধমকে ওঠলো আরুশ।

খুশি আরুশের মতলব বুঝে কেবলই চিৎকার করে কেঁদে তাঁর মামনিকে বোঝাতে যাবে যে আরুশ তাঁকে আদরের নাম করে টর্চার করছে অমনি আরুশ মুখ চেপে বললো,,,

— শয়তান মেয়ে যা বলছি তাই কর বাড়ি ভর্তি মানুষ। সিনক্রিয়েট করলে ওলটা ঝুলিয়ে ফ্যানের সাথে বেঁধে রাখবো আমায় তুই চিনিস না।

খুশি এক ঢোক গিললো আর মনে মনে বললো,,,

— মি. আরুশ সরকার,,, আমি এখন আর বাচ্চা টি নই।
এখন আমি বড় হয়েছি কলেজে পা দিয়েছি।
তোমায় টাইট দেওয়ার মন্ত্রও আমি বুঝে গেছি।
সো ওয়েট এন্ড সি,,,এখন আপাতত চুপচাপ খেয়ে
নে খুশি তারপর এই সরকারের পোলারে দেইখা নিবি হুহ,,,

খুশি খাচ্ছে আর আরুশ এক পকেটে হাত দিয়ে রুমজুরে পায়চারি করছে।
খেতে খেতে খুশি আড় চোখে আরুশ কে আগাগোড়া বেশ খেয়াল করলো।
খাওয়ার ফাঁকে মুখটা বাঁকা করলো,,,

— উমহ,,,কি ঢং ধামড়া পুরুষ হইছে তবুও আমার মতো বাচ্চা মেয়ের পিছু ছাড়ে নাই।
বুইড়া শয়তান একটা। চেহেরা দেইখা কতো অবুঝ মেয়ে ফাঁইসা যায় কে জানে, বেচারিগুলার জন্য আমার বড় দুঃখ লাগে বেচারিরা তো আর জানে না।
“উপরে ফিটফাট ভিতরে সদরঘাট” ইশ কতো মেয়ের ঠোঁটে যে এই বুইড়ার ছাপ্পা লাগছে কে জানে ছিঃ।
যা ইচ্ছা কর গা বুইড়া, ধামড়া তাতে আমার কি।
আমি তো ঐ ফালতু ছাপ্পা থিকা বাঁইচা গেছি।

খুশির ধ্যান ভাঙলো আরুশের ধমকে,,,

— রাক্ষসীর মতো খেয়েও পেট ভরে নাই প্লেট সহ খাবি। প্লেট কি তোর বাপের টাকায় কেনা। দে প্লেট দে।
বলেই হাত থেকে টেনে প্লেট নিয়ে বেরিয়ে গেলো আরুশ।

খুশি ঠোঁট ফুলিয়ে চেয়ে রইলো আরুশের যাওয়ার পানে। খাওয়া নিয়ে খোঁটা দিলো তাঁকে প্লেট নিয়েও।
মকরম শয়তান,,, দিন আমারো আসবো ভেবেই গ্লাসে টা বাম হাতে নিয়ে পানি খেয়ে নিলো।

মেয়ের বাড়ি যাওয়ার সময় হয়ে এসেছে সকলেই প্রচন্ড ব্যাস্ত। আয়ানকে বরের বেশে সাজাচ্ছে আরাফ,আরাফের বউ, চাচাতো ভাই,ভাবীরা হাসি তামাসায় মেতে ওঠেছে। খুশির মা খাদিজা বেগম আয়েশা বেগম এর সাথে হাতে হাতে সব সামলাচ্ছে।
সবাই যখন ব্যাস্ততায় ডুবে রয়েছে আরুশের চোখ তখন শুধু খুশি খুশি করছে। সবাইকে দেখতে পাচ্ছে অথচ খুশিরই হদিস নাই।
মিলন তাঁর বয়সি পোলাপানের সাথে ছোটাছুটি করছে,,,আরুশ গিয়ে জিগ্যাস করলো,,,

— কিরে রসগোল্লার লাড্ডুস ভাই,,, রসগোল্লা কোথায়??

মিলন খিলখিল করে হেসে বললো,,,

— রসগোল্লা তো দোকানে ফ্রিজেও আছে খাবা??

আরুশ মাথায় এক চাপড় দিয়ে বললো,,,

— এই শালা তোর বইনা কই সেইটা বল আগে।

— আপু তো রেডি হচ্ছে আরাফ ভাইয়ার রুমে।
ওখানে যেও না সবার যাওয়া নিষেধ আছে,,,
আপু কড়া গলায় বলে দিছে যতোক্ষন না সে নিজে বের হচ্ছে ততোক্ষন যেনো কেউ তাঁর নাম না নেয়।
সাজে ডিস্টার্ব হলে আপু খুব রেগে যায়।

আরুশ ভ্রু কুঁচকে মনে মনে ভাবলো,,,

— বিয়েটা কি ওর নাকি ওর এতো সাজতে হবে কেনো??
,
সাজের কোন ত্রুটি রাখেনি খুশি মেকআপ করা থেকে শুরু করে আইশেট,কাজল,মাশকাড়া,ঠোঁটে কড়া করে লাল লিপস্টিক, কপালে টিকলি,গলায় মুক্তোর মালা হাত ভর্তি চুড়ি সব পারফেক্ট।
লাল ল্যাহেঙ্গায় তাকেই বউ বউ লাগছে।
নিজেকে আয়নায় হা করে চেয়ে দেখছে ঠোঁট দুটো অটোমেটিক নড়ে বলে ওঠলো,,,

— ওররে খুশি আয়ান ভাইয়ার শালা থাকলে সে তো তোকে দেখে আজ ফিদাই হয়ে যাবে,,,
তুই সিওর থাক প্রথম দেখেই ক্রাশ খেয়ে যাবে। তারপর তোর সাথে কথা বলার সাহস করে সামনে এসে যেই তোর কিউটনেস ভরা মুখটা দেখবে অমনি হার্ট এট্যাক করে ফেলবে। যেই সেই হার্ট এট্যাক না এই এট্যাকে তোর প্রেমে আজীবন হাবুডুবু খেতেই থাকবে খেতেই থাকবে। আর তুই ডোন্ট কেয়ার ভাব নিবি,,,
কলেজে ভর্তি হয়েছিস তাঁর ওপর কলেজ ওঠার পর এটাই প্রথম বিয়ের অনুষ্ঠান পোলাপানের দিলে একটু ঝটকা না দিলে চলে মামু না না মাম্মি,,,হিহিহি।

কথা গুলো বলতেই আঁতকে ওঠলো নিজেই নিজেকে শাশাতে লাগলো,,,

— আরে খুশি চুপ চুপ কি করছিস।
তুই জানিস না তুই জমের বাড়িতে আছিস,,,
সে যদি শুনে নেয় তাহলে তোর সব স্বপ্নে গোবর ছুঁড়ে মারবে। যে মুখ দিয়ে কথাগুলো বলোছিস সে মুখ শিল দিয়ে গুঁতিয়ে ঝাঝড়া করে দিবে।
চুপ থাক চুপ থাক। যতোক্ষন এ বাড়িতে আছিস ততোক্ষন নিজের ঠোঁট জোরায় স্টেপলার মেরে দে।
,
আরুশ রুমে আসতেই হতবাক ষোল বছরে পা দেওয়া এক কিশোরী তাঁর উন্মুক্ত পিঠ মেলে দাঁড়িয়ে আছে আয়নার সামনে। দরজাটাও একদম উন্মুক্ত ছিলো ভেবেই মেজাজ টাই বিগরে গেলো।
— “ইশ,,, ভাগ্যিস আমি এসেছিলাম নয়তো অন্যকেউ এভাবে দেখে নিতো ”
বিরবির করে কথা বলতে বলতে দরজাটা লাগিয়ে দিলো।
ল্যাহেঙ্গার উপরের পার্টের পিছনের গলার ফিতা লাগানোর আপ্রান চেষ্টা করতে করতে ব্যার্থ খুশি।
তারওপর হুট করে দরজা লাগানোর শব্দে প্রচন্ড চটে গেলো।

— আমি বলেছিনা কেউ যেনো এ রুমে না আসে।
আমি রেডি হচ্ছি কেনো,,,
বাকিটুকু বলার আগেই আরুশ কে দেখে চুপসে গেলো।

আমতা আমতা করে বললো,,,

— ততুমি এখানে কি করছো,,,এই দেখো একদম অসভ্যতামি করবে না। আমি এখন বড় হয়েছি যাও বাইরে যাও, যাও বলছি।

আরুশ কতোটা দূর্বল হয়ে গেছে তা শুধু আরুশই জানে। আর এটাও জানে এই বাচ্চা টা সেটা বুঝবে না। তাই তারও ঠ্যাকা পড়েনি এই বিচ্ছু কে কিছু বোঝাতে।
অপলক চোখে চেয়ে এক পা এক পা করে এগুতো লাগলো আরুশ,,,
খুশি এক ঢোক গিলে ভয়ে ভয়ে পিছাতে লাগলো আর বললো,,,
— একি,,,তুমি এগুচ্ছো কেনো? আমি কিন্তু চেঁচাবো।
মামনিকে ডাকবো,,, আম্মুকে ডাকবো।
বলতে বলতে ড্রেসিং টেবিলের সাথে ঠেকে গেলো।
আরুশ দুপাশে হাত রেখে খুশির মুখোমুখি হয়ে বললো,,,
— এই বাড়িটা আমার,ঘরটা আমারি ভাইয়ের তাই আমি আমার যখন ইচ্ছে তখন এই রুমে আসবো।
তুই নিষেধ করার কে,,,
বলেই খুশিকে পিছন ঘুরিয়ে নিলো।
খুশি হতবাক হয়ে আয়নায় চোখ স্থির রাখলো।
আরুশের দিকে মুখ চুপসে চেয়ে রইলো।
আরুশ ঘোর লাগা চোখে খুশির ফর্সা তুলতুলে নরম পিঠটায় আঙুল ছুঁয়াতেই খুশি কেমন কেঁপে ওঠলো।
চোখ দুটো বন্ধ করে ফেললো ভয়ে একদম শেষ সে।
আরুশ সাথে সাথে নিজেকে সংযত করে ফেলে দুই হাতে ফিতাটা বাঁধতে বাঁধতে বলতে লাগলো,,,

— কিরে তালুকদারের মাইয়া বাপের টাকা কি বেশি হইছে নাকি,,,

খুশি হঠাৎ এমন উচ্চস্বরে কথা শুনে চমকে গেলো।
নির্বাক হয়েই আয়নায় তাকালো।
আরুশ একপলক আয়নায় চেয়ে আবারো পিঠে দৃষ্টি রেখে ভাবুক মুখে বললো,,,

— মেয়েরা মুখে মেক-আপ লাগায় জানতাম।
তুই তো পিঠেও লাগাস।

খুশি ভ্রু কুঁচকে চেয়ে বললো,,,

— মমমানে,,,,

— হ্যাঁ তাই তো নয়তো এতো ফর্সা পিঠ কি ন্যাচারাল নাকি। আমি ১০০% সিওর তুই পুরো শরীরে মেক-আপ লাগায়ছোস। আর পিঠে একটু বেশীই লাগায়ছোস।

খুশি তীক্ষ্ণ দৃষ্টি ছুঁড়ে বললো,,,

— মোটেই আমি মেক-আপ লাগাইনি।
আমার পুরো শরীরই অমন ফর্সা,,,এই দেখো পেট টা বলেই জামা উঁচু করতে গিয়ে থমকে গেলো।
“ইশ,,, খুশি লুইচ্চাটারে আশকারা দিস না” মরবি মরবি একবারে মরে যাবি তুই। ভেবেই এক ঢোক গিললো।

আরুশ প্রথমে ভড়কে গেলেও পরোক্ষনে খুশিকে থামতে দেখে বাঁকা হেসে চোখ টিপ মেরে বললো,,,

— কিররে দেখা,,,

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here