অবশেষে_পরিণয় পর্ব_৫

0
5325

অবশেষে_পরিণয় পর্ব_৫
#জান্নাতুল_নাঈমা

বিয়ে শেষে খুব দ্রুতই গাড়িতে ওঠে পড়লো সবাই।
আরুশের চোখ দিয়ে যেনো রক্ত ঝড়ছে।
আঁধারে চোখ স্থির রেখেছে সে গাড়িতে বাকিরা হৈচৈ করছে। বর কোনের বের হতে দেরী হবে তাই বাকিরা বাসে ওঠে পড়লো।
খুশি পেছনের দিকে সকলের সাথে হৈচৈ করছে সাথে যোগ হয়েছে তাঁর নতুন ভাবীর ভাই বোনেরা।
আরুশ শুধু সঠিক একটা সময়ের অপেক্ষায় রয়েছে তারপর খুশির চৌদ্দ গুষ্টির ঠ্যাং ভেঙে রেখে দেবে নিজের কাছে দাঁতে দাঁত চেপে বিরবির করে বলছে আরুশ।
,
বাসর ঘর সাজানো কমপ্লিট এমন সময় খুশি এমন এক কথা বলে ওঠবে কেউ ভাবতে পারেনি।

— মামনি মামনি তাহলে আমার কোলবালিশটা এখানে নিয়ে আসি আজ সারারাত তো আমরা বাসর জাগবো,,,

আয়েশা বেগম হকচকিয়ে গেলেন। আরুশের চাচী বড় বড় চোখ করে বলে ওঠলো,,,

— এই মেয়ে বলো কি মাথায় কি কিছু নাই এখানে কেনো নিজের বালিশ নিয়ে আসবা??

— ওমা আন্টি বাসর জাগবো তো,,,
তুমি স্টার জলসার সিরিয়ালে দেখো না বাসর জাগতে হয়। আরাফ ভাইয়ার বিয়েতে তো আমি আগেই ঘুমিয়ে গেছিলাম তাই এবার নো মিস,,,
কোল বালিশে পা ঠেকিয়ে হাতের ওপর মাথা ভর করে আরামসে গল্প করবো হিহিহি।

আরুশ অগ্নি চক্ষুতে চেয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বললো,,,
— তোর বাসর জাগা আজ আমি বের করবো ওয়েট এন্ড ওয়াচ।

আরাফের বউ খুশির হাতে চিমটি কেটে শাশুড়ি আর কাকি শাশুড়ির সামনে থেকে মুখে বোকা হাসি টেনে নিয়ে গেলো খুশিকে।

— এই মেয়ে কার সামনে কি বলো? মাথায় বুদ্ধি শুদ্ধি নাই নাকি??

বড় ভাবীর কথায় খুশি ন্যাকা স্বরে বললো,,,

— ভাবি বকছো কেনো আমি কি অন্যায় কিছু বলেছি??

এমন সময় ঝড়ের বেগে এসে আরুশ খুশির হাতটা চেপে ধরে ভাবির সামনে থেকে সরে গেলো।
ব্যাপারটা এতো দ্রুত ঘটে গেলো যে বড় ভাবীর বুঝতে প্রায় একমিনিট লাগলো।
,
— আহ,,লাগছে ছাড়ো আরুশ ভাইয়া।ছাদে নিয়ে এলে কেনো রাত করে??আমি বাসর জাগবো।
তুমি সবসময় আমার সাথে এমন করবে না বিরক্ত লাগে আমার। আমায় এখন আর বিরক্ত করোনা তো। আই এম সো টায়ার্ড বলেই খুশি হাই তুললো।
আরুশের রাগে যেনো মাথা ফেটে যাওয়ার উপক্রম।
চিলেকোঠার ঘরের দেয়ালে ঠেকিয়ে গাল দুটো শক্ত করে চেপে দাঁতে দাঁত চেপে বললো,,,

— সারাদিন এতো নাচানাচি করলে টায়ার্ড তো লাগবেই। কে বলেছিলো ভাবির কাজিনদের সাথে অমন ঢলাঢলি করতে কে বলেছিলো তোকে। টেল মি,,,

আরুশের চিৎকারে কেঁপে ওঠলো খুশি।
গাল দুটো এমন ভাবে চেপে ধরেছে যেনো এক গাল আরেক গালের সাথে মিশে যাবে।
চোখ বেয়ে পানি গড়াতে শুরু করলো।
আরুশের সেদিকে কোন ভ্রুক্ষেপ নেই।
সে রাগে তাঁর মহামূল্যবান বুলি গুলো ছাড়ছে।
যেগুলোর মূল্য শুধু সেই বুঝে যাকে বলছে তাঁর কাছে এর বিন্দু মূল্যও বোধহয় নেই।

— কি মনে করিস তুই নিজেকে এখন তুই ছোট নেই।
বিয়ে বাড়ির প্রত্যকটা লোক তোকে চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছিলো। ভাবীর ভাইয়েরা কেমন বিশ্রি চোখে তোর দিকে চেয়ে ছিলো। একবার খেয়াল করেছিস আর এইসব কি ড্রেস যে অর্ধেক পিঠ দেখা যায়।
বাড়ি থেকে যখন বের হলি চুল খোলা ছিলো ওখানে গিয়ে রূপ বদলে ফেললি কেনো কেনো চুল বাঁধলি বল বলেই গাল ছেড়ে চুলের কাঁটা খুলে ফেললো আরুশ।
খুশি ব্যাথায় কুঁকড়িয়ে গেলো।
ভয় লাগছে তাঁর ভীষণ ভয় আরুশের রাগ সম্পর্কে শাসন সম্পর্কে সে খুব ভালো করেই জানতো।
তাই বলে এতোটা ভয়ানক হতে পারে এটা তাঁর ধারনার বাইরে ছিলো।
কাঁদতে কাঁদতে হেচকি ওঠে গেলো খুশির।
সেদিকে আরুশের কোন খেয়াল নেই।
সে আবারো গাল চেপে ধরলো।
খুশি চাপা আর্তনাদ করে ওঠতেই আরো দ্বিগুন জোরে চেপে বললো,,,

— বল কেনো অতগুলা ছেলের সাথে ঢলাঢলি করছিলি৷ ওদের সাথে গায়ে গা ঘেঁষিয়ে কেনো ছিলি সারাটাদিন বল??

এবার যেনো খুশি ক্ষেপে গেলো।
হিংস্র বাঘিনীর মতো গর্জন দিলো সে।
এক ঝটকায় আরুশের হাত ছাড়িয়ে চিৎকার করে বললো,,,

— কেনো এমন করছো আরুশ ভাইয়া।
কি এমন করেছি আমি শুধু তো ওদের সাথে হাসি মুখে কথাই বলেছি গল্প করেছি। এতে তুমি ঢলাঢলির কি দেখলে?? কি মনে করো কি তুমি নিজেকে??
আমার গার্ডিয়ান?? তোমার জন্য আমি স্বাধীন ভাবে চলতে পারবো না সবেতেই তোমার নিষেধ মানতে হবে?? আমি কি তোমার প্রোপার্টি??
বেশ করেছি মিশেছি আরো বেশি করে মিশবো।
কই তুমি যখন তোমার বন্ধু -বান্ধবী দের সাথে একসাথে ছিলে তখন তো এ নিয়ে আমি মাথা ঘামাইনি।

আরুশের চোখ দুটো অতিরিক্ত মাএায় লাল হতে লাগলো। খুশির মুখটা এক হাতে চেপে দেয়ালে মিশিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বললো,,,

— আমার সাথে নিজেকে তুলনা করবি না খুশি।
আর তুই এখন এতোটাও বড় হয়ে যাসনি যে তোকে স্বাধীনতা দিয়ে দিবো। কে তোকে কোন নজরে রেখে কথা বলছে তা বোঝার বয়স তোর না হলেও আমার যথেষ্ট হয়েছে।
তুই ওদের সাথে মিশবি না ব্যাস আর একটা কথাও আমি শুনতে চাই না।
,
খুশি এক ঝটকায় আরুশকে ছাড়িয়ে অগ্নি দৃষ্টি ছুঁড়ে ঘৃনায় মুখ ফিরিয়ে চলে যেতে নিতেই আরুশ খুশি একটানে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে ফেললো।
এছাড়া তাঁর কাছে আর কোন অপশন নেই,,
খুশির বয়স কম সবে ষোলতে পা দিয়েছে এই বয়সটা এমন এক বয়স এ বয়সে ছেলে মেয়েদের রাত কে রাত দিনকে দিন বোঝানো খুবই দুষ্কর হয়ে পড়ে। খুশিকে আরুশ যতোই বোঝাতে চাক সে এখন তাঁর বিশ্বাসেই অটুট থাকবে আর ভুল বুঝে যাবে আরুশকে।

খুশি বুক থেকে ওঠার জন্য নিজের সর্বস্ব শক্তি প্রয়োগ করেও ওঠতে পারলো না।
আরুশ তাকে প্রচন্ড শক্ত করে চেপে আছে।
বেশ কিছু সময় পর আরুশ শান্ত গলায় বলে ওঠলো,,,

— খুশি কেনো বুঝতে পারছিস না তোর পাশে আমি অন্যকাউকে সহ্য করতে পারিনা। আর ওরা ওরা তোকে বাজে দৃষ্টি তে দেখছিলো।
এটা আমি কোনভাবেই সহ্য করতে পারবো না।
প্লিজ বোঝার চেষ্টা কর।

খুশি ঝট করে ওঠতেই আরুশ আবারো বুকের সাথে তাঁর মাথাটা চেপে ধরলো আর বললো,,,

— প্লিজ কিছুক্ষন চুপচাপ থাক এখানে দেখ কিছু ফিল করতে পারিস কিনা,,,

খুশির চোখের পানিতে আরুশের শার্ট ভিজে যাচ্ছে।
তাঁর বড্ড লেগেছে গালে গালটা টনটন করছে তাই নিয়ে হুহু করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে তাঁর।
আরুশ বললো,,,

— কিরে বল কিছু বুঝতে পারছিস,,,

খুশি এবার একটু নড়েচড়ে মাথার সাথে কান খাড়া করে বোঝার চেষ্টা করলো কি হচ্ছে,,,
বুকের হার্ট বিট এতো দ্রুত ওঠানামা করছে আরুশের যেনো সে প্রচন্ড পরিমানে ভয় পেয়েছে
বা ৪০০মিটার পথ দৌড়ে এসেছে এমন মনে হচ্ছে খুশির।

খুশি আবারো মাথা তুলতে নিতেই আরুশ আরো শক্ত করে চেপে নিলো নিজের সাথে,,, ধীর গলায় বলে ওঠলো খুশি,,,
……..
— তুই কেনো বুঝিস না আমি তোকে নিয়ে খুব ইনসিকিউর ফিল করি। তোর বিষয়ে আমি সত্যি ভীষণ সিরিয়াস। তোর সব অন্যায় মেনে নিলেও এই একটা জিনিস আমি মানতে পারিনা।
কেনো বুঝিস না তুই,,, তুই যে আমার “দিলের রানী” খুশি কেনো বুঝিস না।

আরুশের আদুরে গলা শুনে এবার খুশিকে পায় কে ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠলো সে।
আরুশ চমকে গেলো মাথা ওঠিয়ে আলতো করে গাল দুটো ছুঁতেই ব্যাথায় কেঁপে ওঠলো।
আরুশ ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললো,,,

— কাঁদছিস কেনো??

এবার খুশি ভ্যা ভ্যা করে কাঁদতে লাগলো।
আরুশ হকচকিয়ে গিয়ে খুশির মুখ টা চেপে বললো,,,
— আস্তে আস্তে বাড়িতে মেহমান ভর্তি নতুন বউও এসে গেছে বোধহয় এভাবে কাঁদিস না সবাই কি ভাববে।
এবার খুশি স্লো ভাবে কাঁদতে লাগলো।
আর ন্যাকামো গলায় বললো,,,

— আমার হাতে আর গালে খুব লেগেছে।
তুমি খুব বাজে খুব বাজে সবসময় আমাকে বকো আর ব্যাথা দাও।

আরুশ হেসে ফেললো নিজের সাথে আবারো জরিয়ে নিয়ে মাথায় হাত রেখে বললো,,,

— তুই যদি ভদ্র ভাবে থাকতিস আমি কি তোকে এমন বকতাম। তুই তো একটা কথাও শুনিস না সবসময় অবাধ্যতা করিস।

— কেনো আমি তোমার বাধ্য থাকবো তুমি যে ছোট থেকে সাতটা, আটটা করে গার্ল ফ্রেন্ড নিয়ে ঘুরো এখন না জানি কয়টা আছে আমি কি কিছু বলি??

আরুশ কথাটা শুনা মাএই খুশিকে একদম উঁচিয়ে খুশির মুখোমুখি মুখ করে ভারী গলায় বলে ওঠলো,,,

সাতটা গার্লফ্রেন্ড এর সাথে তো তখনি ব্রেক আপ করে দিছি যখন থেকে তোর মতো বুদ্ধিহীন প্রানীর খপ্পড়ে পড়েছি।

খুশি চোখ বড় বড় করে বললো,,,

— কি,,,আমি বুদ্ধি হীন???

আরুশ খুশির কোমড় ভালো ভাবে জরিয়ে নিয়ে ছাদের বর্ডারে বসালো দুহাতে পিঠ আঁকড়ে ধরে বললো,,,

— দেখ খুশি আমি তোর সাথে ন্যাকামো করতে পারবো না “তোকে আমি ভালোবাসি ”
তোকে আমি একদম নিজের করে পেতে চাই।
তোকে আমি বোঝাতে পারিনা তুই বুঝিসও না কবে বড় হবি খুশি কবে তোকে আমার অনুভূতি গুলো আমি যেভাবে অনুভব করি সেভাবে তোকে অনুভব করাতে পারবো??প্লিজ খুশি এমন অবাধ্যতা করিস না আমার কথা প্লিজ শুনে চল তুই প্লিজ।

খুশি বরফের মতো ঠান্ডা হতে শুরু করলো।
“কি সর্বনাশে কারবার এইসব কি বলছে আরুশ ভাইয়া” আমি কি স্বপ্নে দেখছি নাকি আরুশ ভাইয়া নেশা টেশা করেছে।
খুশি যেনো ঘোরে চলে গেলো।
আর আরুশ তাঁর মনের সমস্ত কথা উগ্রে দিলো।
সারা রাত আরুশ ওটা সেটা বোঝাতে লাগলো খুশিকে। আর খুশি নিশ্চুপ হয়ে আরুশের বলা প্রত্যেকটা বানী মাথায় গেঁথে নিলো।
শেষ রাতের দিকে আরুশের বুকেই গুটিশুটি মেরে ঘুমিয়ে পড়লো খুশি।
আরুশও পরম আবেশে বুকে জরিয়ে নিচে বসে বর্ডারে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো।

“কথায় আছে না বেশী সুখ কারো কপালে সয় না।
আরুশ খুশিরও তাই হলো ভোর হতে না হতেই এমন বাজে পরিস্থিতির মুখোমুখি হলো দুজন যা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়”

ছিঃ ছিঃ আমার সাধাসিধা নাতনীটারে একা পাইয়া এই সর্বনাশটা তুই করলি।

চলবে…….

ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here