অবশেষে_পরিণয় পর্ব_৮

0
4311

অবশেষে_পরিণয় পর্ব_৮
#জান্নাতুল_নাঈমা

সারা রাস্তায় ভেজার ফলে সমানে হাঁচি দিচ্ছে খুশি।
আরুশ বেশ বুঝলো এবার এই মেয়ে জ্বর, ঠান্ডায় শেষ হয়ে যাবে। বৃষ্টির বেগ ধীরে ধীরে আরো বাড়তে থাকলো। আরুশের এক হিন্দু বন্ধু সতীশ মুখার্জির মামার বাড়িতে ওঠেছে তারা। বিশাল বড় বাড়িতে একটা পিঁপড়াকেও দেখতে পেলোনা আরুশ।
কারন সতীশের মামার ফুল ফ্যামিলি অস্ট্রেলিয়া তে থাকে।
বছরে একবার আসে কি না আসে বাড়িটা তালা মারাই থাকে চাবিটা সহ দাঁরোয়ান থাকে একজন বাইরের ঘরে। দারোয়ানের সাথে সতীশের সম্পর্ক বেশ ভালো হওয়াতে ম্যানেজ করতে সহজ হয়েছে।
মামা না এলে বছরের পর বছর এখানে একশজন নিয়ে এসে থাকলেও সমস্যা নেই।
সকলকেই আলাদা রুম দেওয়া হলো মেয়েরা মেয়েদের সাথে ছেলেরা ছেলেদের সাথে যদিও কয়েকজন চান্স নেওয়ার ট্রাই করছে। আরুশ সবাইকে সাবধান করে খুশি আর সে এক রুমে থাকবে এনাউন্সমেন্ট করলো।
তা শুনে সকলের চোখ যেনো কোটর থেকে বেরিয়ে আসার উপক্রম খুশিতো লজ্জায় মিইয়ে যাচ্ছে।
পারভেজ নামের ফ্রেন্ড বলে ওঠলো,,,

— এ ভাই তুই চিটিং করছিস,,, তুই নিজেরটা দেখছিস আমাদের টা দেখছিস না।

আরুশ বললো,,,

— আমার সাথে নিজেদের গুলাচ্ছিস কেনো??
খুশি আর আমি ছোট্ট থেকে একসাথে বড় হয়েছি ভুলভাল হওয়ার সম্ভাবনা নাই। আর হলেও বিয়ে করে নিচ্ছি কোন চাপ নেই। কিন্তু তোদের নিয়ে রিস্ক আছে ভুলভাল করে বসবি পরে যদি বিয়ে না করিস আমার বান্ধবীর জীবন নষ্ট হয়ে যাবে তা তো আমি হতে দিতে পারিনা।
খুশি এদের কথা-বার্তা শুনে লজ্জায় মাথা নিচু করে রইলো।
আরুশ বুঝতে পেরে আর কথা না বাড়িয়ে সকলকে ডিনার করতে বললো আর কাজিকে ফোন করতে বললো।

বিজয় এসে বললো,,,
— আরুশ কাজি তো আসতে পারছে না। রাস্তার অবস্থা নাকি খুব খারাপ এই রাতে গাড়ি আসতে চাইছে না ভ্যান বা বাইক দিয়েও আনা সম্ভব নয়।
তাহলে কাল আসতে বলি??

আরুশ বললো — ওকে নো প্রবলেম।
কাল আমি সকাল সকাল গিয়ে মা কে নিয়ে আসবো আর খুশির জন্য একটা বেনারসীও নিয়ে আসবো।
বিয়ে যখন করছি বাবা মা কে ছাড়া তাঁদের দূয়া-আশির্বাদ ছাড়া মন সায়,দিচ্ছে না।

পারভেজ বললো,,,

— আরুশ খুশির বাবা পাগলের মতো খোঁজাখোজি করছে। তুই যাবিনা কোথাও বিয়ে না করে।

আরুশ চোখ গরম করলো কারন খুশি পারভেজের কথা শোনামাএই ভয়ে কাঁদতে শুরু করেছে।
আরুশ এক ধমক দিয়ে সবকটাকে বের করে দিলো।
.
দরজা লাগিয়ে দিয়ে পিছন ঘুরে এগুতে এগুতে বললো,,,

— এতো ভয় পাচ্ছিস কেনো?? খোঁজাখোঁজি করবে এটা তো স্বাভাবিক ব্যাপার এতো কান্নার কি আছে??

খুশি নিশ্চুপ চোখ বেয়ে শুধু পানি গড়িয়ে পড়ছে।
আরুশ রেগে বললো,,,

— ওকে চল দিয়ে আসবো তোকে। করতে হবে না বিয়ে। এমন ভাবে কাঁদছিস যেনো আমি তোকে জোর করে তুলে এনে বিয়ে করছি,,, ওকে ফাইন চল।
বলে দরজার দিকে এগুতে নিতেই খুশি আরুশের হাত চেপে ধরলো আরুশ মুচকি হেসে হাসিটা চেপে রাগি লুক নিয়ে খুশির দিকে ফিরে তাকালো।
খুশি মাথা নিচু করে বললো,,,

— সরি ভাইয়া,,, আম্মুর কথা মনে পড়ছিলো। আম্মুও তো আমার জন্য কাঁদছে ভাইয়া।

আরুশ হকচকিয়ে গেলো চোখ বড় বড় করে বললো,,,

— এই এই কি বললি ভাইয়া মানে এখনো কিসের ভাইয়া?? এবার এসব ভাই টাই ক্রস নয়তো বাচ্চা গাচ্চা রা আমায় মামা বলে সম্বোধন করবে ওহ নো তুই প্লিজ আর একবারো আমায় ভাই বলবি না।

খুশি ভ্রু কুঁচকে চেয়ে রইলো।
আরুশ আবারো বললো,,,

— শোন কাল সকালে কাকির সাথে কথা বলিয়ে দিবো। আমি জানি কাকি সবটা শুনে নিশ্চিন্ত হবে আর আমাদের জন্য দূয়াও করবে বুঝেছিস।
কান্নার কোন প্রয়োজন নেই সব ঠিক করে নিবো আমি। শুধু একটু সময় লাগবে,,,
.
চোখের পানি গুলো মুছে খুশিকে টেনে বিছানায় বসালো। ব্যাগ থেকে তয়ালে বের করে পিছনে বসে চুল গুলো মুছতে লাগলো আর বললো,,,

— ঠান্ডা তো লাগিয়ে ফেলেছিস এতো রাতে ওষুধের ব্যবস্থা নাই চুলগুলো এমন ভেজা থাকলে তো সারারাতে নিউমোনিয়া হয়ে যাবে।
.
খুশি চুপ। তাঁর বেশ লজ্জা লাগছে আবার ভালোও লাগছে আবার কেমন অস্বস্তিও লাগছে।
যদিও এর আগে বহুবার তাঁরা একসাথে এক ঘরে অনেক কাছাকাছি এসেছে তবুও আজকের ব্যাপারটায় বেশ ভিন্নতা রয়েছে।
খুশি কে চুপচাপ দেখে আরুশ বললো,,,

— কিরে কিছু বলছিস না কেনো?? বোবা হয়ে গেলি নাকি??

খুশি এবারেও কিছু বললোনা।কি বলবে সে কিছু বলার নেই তাঁর সে শুধু অনুভব করতে চায়।
আরুশ কিছুটা আঁচ করে বাঁকা হাসলো তয়ালে টা পাশে রেখে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো দুহাত দুদিকে মেলে।

খুশি পিছন ঘুরে দেখে চোখ ফিরিয়ে নিলো।
আরুশ অপলকভাবে তাকিয়ে আছে। ভেজা চুলে খুশিকে বহুবার দেখেছে তবে আজ যেনো একটু বেশীই আকর্ষণ করছে তাঁকে,,,
খুশির শ্বাস ঘন হয়ে এলো তীব্র অস্বস্তি তে সে আর বসে থাকতে পারলো না দাঁড়িয়ে পড়লো।
আরুশ মিটিমিটি হাসতে লাগলো,,,
তা দেখে খুশি অভিমানী সুরে বললো,,,

— আমার খুব খিদে পেয়েছে,,,

খুশির কথাটা শোনা মাএই আরুশ হোহো করে হেসে ওঠলো। হাসতে হাসতে ওঠে বসে বললো,,,

— চল রাক্ষসী খেয়ে নেই ওরা খেতে বসেছে হয়তো।
.
খুশিকে রুমে রেখে আরুশ সেই যে বেরিয়েছে একঘন্টা কেটে গেছে তবুও আসার নাম নেই।
আলাদা জায়গায় একা এক রুমে খুব ভয় লাগছে খুশির। খুশি এটাও বুঝে পাচ্ছে না এতোগুলা বান্ধবী, বন্ধু তাঁরাই বা কোথায়। হয়তো ঘুমিয়ে গেছে রাত তো অনেক হয়েছে, কিন্তু আরুশ ভাইয়া কোথায় গেলো??
ভাবতে ভাবতে গুটিগুটি পায়ে রুম থেকে বেরিয়ে এলো । পাশের রুমে দরজা লাগানো থাকায় পরের রুম চেক করতে গিয়ে খুশির হাত পা অবশ,হয়ে এলো। মুখে হাত দিয়ে মনে মনে ছিঃ ছিঃ করতে করতে সরে দৌড় লাগালো। আরুশের সাথে বেজে ছিটকে পড়লো মেঝেতে,,, ব্যাথায় কেঁদে ওঠলো খুশি।
আরুশ ভ্রু কুঁচকে দ্রুত গিয়ে ধরে ওঠিয়ে বললো,,,

— কি রে ওদিকে গিয়েছিলি কেনো?? আর এভাবে দৌড়াচ্ছিস কেনো??

খুশি কিছু বললো না আরুশ ধরে রুমে নিয়ে গেলো।

— সরি ব্যাথা পেয়েছিস অনেক। কি হয়েছে বলতো আমি জেরিন দের রুমে ছিলাম এই তোদের মেয়েদের কি কি কসমেটিকস লাগে এসবই জেনে নিচ্ছিলাম লিষ্ট করলাম দেখ,,,
কাগজ বের করে দেখালো আরুশ।
খুশি আরুশের কথার পৃষ্ঠে বললো,,,

— ছিঃ ছিঃ পারভেজ ভাইয়া কি খারাপ।

আরুশ ভ্রু কুঁচকে জিগ্যাস করলো,,,

— মানে,,,
পরোক্ষনেই রাগি চোখে চেয়ে বললো তুই ওদিকে গিয়েছিলি কেনো? তোকে রুম থেকে কে বের হতে বলেছে? এতো বেশী বুঝিস কেনো সবসময় কানের নিচে দুইটা লাগাবো এখন?

খুশি আরুশের কথায় রেগে বললো,,,

— আমার কি দোষ আমি কি জানি নাকি। আর তুমি কিছু না বলে কেনো গেলে আমার ভয় লাগছিলো।
তাই তো খুজতে বেরিয়েছিলাম আর তখনি ওসব দেখেছি।

— কি সব,,,

— পারভেজ ভাইয়া হিমা আপুর সাথে কি সব করছে ছিঃ।

আরুশ রেগে ওঠে দাঁড়ালো,,,

— দরজা খোলায় রেখেছে ফাজিলগুলা কথা শুনলো না। আমারি ভুল হয়েছে এদের নিয়ে আসা কোন কন্ট্রোল নেই করছিস করছিস আবার দরজা খোলা রেখেই,,,

খুশি লজ্জা পেয়ে গেলো কথা ঘোরাতে বললো,,,

— আরুশ ভাইয়া আমি ঘুমাবো শরীর ভালো লাগছেনা। বলেই হাঁচি দিলো একটা।

আরুশ বললো,,,

— আবারো তুই ভাই বলছিস??

খুশি ঠোঁট ফুলিয়ে বললো” এটাই তো আমার অভ্যাস। তা নয়তো কি বলবো তুমি কতো বড় আমার,,,

আরুশ ধমকে বললো,,,

— কানের নিচে তিনটা লাগালেই অভ্যাস বেরিয়ে যাবে এরপর যদি আর একবার শুনেছি তোকে যে আমি কি করবো ভেবেও পাবিনা।
খুশি মুখ ফুলিয়ে চেয়ে রইলো।
আরুশ বললো,,,

— এভাবে তাকিয়ে লাভ নেই ম্যাম। এই আমি শুলাম আমার পা টা টিপে দেন এখন কতোদিন বউয়ের সেবা পাইনা কাল তো এসবের টাইম নেই তাই আজি সেবা করে নিন।

খুশি ভ্রু কুঁচকে চেয়ে বললো,,,

— কাল টাইম নেই মানে কি বলছো??
আরুশ দুষ্টু হাসি একে এক চোখ টিপ মেরে বললো,,,

— তা তো কাল রাতেই টের পাবি,,,
আজকে পারভেজ হিমা বাসর করছে কাল আমরা করবো। দেখ কি কান্ড বিয়ে আমার আর বাসর ওরা করছে এগুলা কি মানা যায়।

খুশি লজ্জায় চোখ সরিয়ে ফেললো,,,
আরুশ মৃদু হেসে ওঠে বসলো।
— আচ্ছা পা টিপতে হবে না আমার পাশে শুয়ে পড়।
কাল রাতে তো ঘুমাতে পারবিনা আজি ঘুমিয়ে নে।

খুশি লজ্জায় জোরে শ্বাস নিতে নিতে বললো,,,

— আরুশ ভাইয়া প্লিজ এসব বলো না আমি কিন্তু চলে যাবো।

আরুশ একটানে বিছানায় ফেলে দুহাতে চেপে ধরে বললো “আবারো ভাই বললি”??

খুশি হিহি করে হেসে ওঠলো।
— আমার খেয়াল থাকে না ভাইয়ু হিহিহি।

— ওও তাই ওকে তোর যেনো খেয়াল থাকে তাঁর জন্য একটু ওষুধ লাগাই কেমন। বলেই ঠোঁট জোরা চেপে ধরলো,,,

খানিক বাদে ঠোঁট জোরা ছেড়ে বললো কি,,,এবার খেয়াল থাকবে তো???

খুশি একটু চেয়ে মাথা দিয়ে না করলো। যার মানে হলো তাঁর খেয়াল থাকবে না আরুশ বললো,,,
ওহ রেইলি,,,
খুশি ঘন শ্বাস নিতে নিতে একটু করে বললো হুমহ,,,
আরুশ বেশ বুঝছে খুশি তাকে ক্ষেপাচ্ছে সেও বা কম কিসে তাঁকে কিভাবে ঘায়েল করতে হয় বেশ জানা আছে। খুশির মুখের দিকে চেয়ে বাঁকা হেসে ঠোঁটে আলতো করে কামড়ে দিলো। চোখ তুলে ভারী আওয়াজে বললো এবার থাকবে খেয়াল,,,
খুশি আবারো বললো উহুম,,,
আরুশ এবার তাঁর গলায় মুখ ডুবালো,,, খুশি একহাতে আরুশের চুল আরেক হাতে পিঠ খামচে ধরলো। আরুশ ঘোরে চলে গেছে খুশির গরম শ্বাস এর ভারী আওয়াজ তাঁকে পাগল করে দিচ্ছে,,,
খুশির চোখ বেয়ে এক ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়লো।
কাঁপা আওয়াজে ডাকলো,,,আরুশ ভাইয়া কি করছো,,,

আরুশ থেমে গেলো চোখ তুলে চেয়ে বললো,,,
তুই আবারো ভাই বলেছিস ছাড়বো না তোকে আমি আজ বলেই গলায় আলতো করে কামড়ে দিলো।
খুশি আর সহ্য করতে না পেরে ভারী আওয়াজে বললো,,,

— এই আরুশ এমন পাগলামো করো না প্লিজ,,,

আরুশ মুখ ওঠিয়ে খুশির দিকে তাকালো।
খুশি চোখ বুজে আছে ঘন শ্বাস নিচ্ছে সে ঠোঁট দুটো কাঁপছে তাঁর চোখের পাতাগুলো পিটপিট করছে।
আরুশ বললো,,,

— ইশ আরেকটু ভাই বললে কি এমন হতো,,,

খুশি চোখ মেলে তাকালো আরুশ দুষ্টু হাসি একে বললো আরেকটু ওষুধ লাগাতাম আর কি,,,
খুশি লজ্জায় লাল হয়ে গেছে ওঠতে নিতেই আরুশ চেপে ধরে বললো ওঠিস না দুজনই ঘুমাবো এখন। অনেক রোমান্স করেছি বাকিটা কাল এবার দুজন পরম শান্তিতে একটা লম্বা ঘুম দিবো।

খুশি নাক বুচা করে বললো,,,
— ঘুমাবে ওঠো আমার উপর থেকে তুমি কি ভারী গো ইশ পেট টা ডেবে গেলো আমার ওঠো বলছি।

— এইটুকুতেই এমন তাহলে কালকে কি হবে জানু,,,হোহো করে হেসে সরে গেলো আরুশ পাশে শুয়ে খুশিকে টেনে বুকের সাথে মিশিয়ে নিয়ে বললো,,,

— এবার চুপ করে আমার হৃদস্পন্দন শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে যা তোর টা আমি কাল শুনবো।
.
খুশির শরীরের তীব্র উষ্ণতায় ঘুম ভেঙে গেলো আরুশের। তুলোর মতো নরম শরীরটা যেনো আরো বেশী নরম হয়ে গেছে। কপাল চেক করতেই বুঝলো বেশ,জ্বর এসে গেছে।
“ইশ বৃষ্টি আর আসার আর টাইম পেলি না দেখ আমার বউয়ের কি অবস্থা হলো”
এক দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে দ্রুত ওঠে গিয়ে তয়ালের এক কোনা ভিজিয়ে কপালে রেখে দিলো।
বেশ কয়েকবার এভাবে তয়ালে ভিজিয়ে জলপট্টি দিতে দিতেই আজান দিয়ে দিলো।
আরুশের কেমন ভয় লাগছে ভয় টা কিসের বুঝতে পারলো না হয়তো খুশির এমন জ্বর আসাতে তাঁর ভয় লাগছে,,, ভালোবাসিতো মেয়েটাকে খুব করে ভালোবাসি ওর একটু ব্যাথাও যে সহ্য হয় না।
কপালে ভালোবাসার পরশ একে দিয়ে বাথরুম গিয়ে ওযূ করে নিলো মেঝেতে একটাআনতুন কাপড় বিছিয়ে ফজরের নামাজ আদায় করলো। মোনাজাতে শুধুই খুশি ছিলো খুশির সুস্থতা কামনা করে নামাজ শেষ করে ওঠতেই দেখলো খুশি কাঁপছে শীতে,,,
ভোরের দিকের ঠান্ডায় কাঁপছে দ্রুত গিয়ে খুশিকে নিজের বুকে পুরে নিলো আবারো। মাথায় হাত বুলিয়ে বুলিয়ে মৃদু স্বরে বললো,,,
“কিছু হবে না সোনা আমি আছিতো”
.
বেনারসী কিনে সাথে আরো বেশ জিনিসপএ নিয়ে আয়েশা বেগম এবং আজাদ সরকার আরুশের মা এবং বাবা দুজনকে নিয়েই চলে এলো আরুশ।
বাড়ির ভিতর ঢুকতেই আরুশ ভ্রু কুঁচকালো।
ড্রয়িং রুমে তাঁর সকল বন্ধু-বান্ধব স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সকলের চোখে মুখে ভয় স্পষ্ট।
পাশের সোফায় কাজী বসে আছে কাজীকে দেখে আরুশ মৃদু হাসলো।

— কিরে এমন প্যাঁচার মতো মুখ করে আছিস কেনো?জেরিন,,,তুই এখানে কেনো? তোকে না বলেছি খুশির অনেক জ্বর ওর কাছে থাকতে জ্বর হলে মেয়েটা পাশে কাউকে না পেলে কান্নাকাটি করে।
তোরা এমন দায়িত্ব জ্ঞানহীন কেনো বলতো।
ইশ একা রুমে আছে আম্মু তুমি যাও তো ওর কাছে এগুলো নিয়ে যাও রেডি করাতে হবে তো।

আয়েশা বেগম মিষ্টি হেসে স্বামীর দিকে চেয়ে বললো,,,

— হে গো তুমি কাজীর সাথে কথা বলো আমি উপরে যাই আর আরুশ তুই ও রেডি হয়ে নে।

বন্ধু দের দিকে তাকিয়ে আরুশ দাঁতে দাঁত চেপে বললো,,,

— এখানে কি শুটিং দেখাতে নিয়ে আসছি।

এবার সতীশ রেগে বললো,,,

— আমিও সেটাই বলছি আরুশ । এখানে কি শুটিং দেখাতে নিয়ে এসেছিস??
আরুশ ভ্রু কুঁচকে বললো,,,
— মানে,,,

এবার জেরিন বললো,,,

— আরুশ খুশির বাবা এসেছিলো সাথে আরো অনেক মানুষ আর খুশি এই কাগজটা আমাকে ধরিয়ে দিয়ে চলে গেলো। সাথে পুলিশ থাকায় আমরা কেউ টু শব্দও করতে পারিনি।

আরুশের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো ।
— কি বলছিস তুই তাঁর মানে খুশিকে জোর করে নিয়ে গেছে ঐ তালুকদার সাহেব।

পারভেজ বললো,,,

— ভুল। জোর করে নয় বরং খুশিই ঠিকানা দিয়েছে এবং তাঁরা এসে নিয়ে গেছে।

— মানে??

— মানেটা খুব সহজ তোর ফোন থেকেই ও ওর বাবাকে ফোন দিয়েছে দেখ ডায়াল লিষ্ট।

আরুশ থমকে গেলো। মনে পড়ে গেলো সকালের কথা।
দুজনই পরস্পরের সাথে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ছিলো।
আরুশ ওঠতে নিতেই খুশি বুকে মুখ লুকিয়ে তাকে আরো জরিয়ে নিলো। আরুশ মুচকি হেসে কপালে চুমু খেয়ে কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বললো এই যে ম্যাডাম আমায় তো ওঠতে হবে।
অনেক কাজ বাকি আমায় ছাড়ুন প্রমিস করছি আজ সারারাত এক সেকেন্ডের জন্যও ছাড়বো না।
খুশি পিট পিট করে চোখ খুললো লজ্জা পেয়ে ছেড়ে পিছন ঘুরে শুয়ে রইলো৷ আরুশ তাঁর নরম পেটে হাত গুজে কাছে টেনে নিয়ে বললো,,,
ফোন রেখে যাচ্ছি কাকিকে ফোন করে কথা বলে ফ্রেশ হয়ে নিবি কেমন৷ আমি তারাতারি এসে পড়বো। খুশি ফিরে তাকালো ঠোঁট ফুলিয়ে বললো,,,
— তুমি যেওনা একা ভয় লাগে।
আরুশ টপ করে ফোলানো ঠোঁটে চুমু খেয়ে বললো,,,

— নো ভয় জেরিন, হিমা,টয়া ওরা আছে তো জাষ্ট এক ঘন্টার ব্যাপার প্লিজ এক ঘন্টার জন্য যেতে দে।

খুশি মুখটা ভাড় করে বললো”আচ্ছা তারাতারি আসবে কিন্তু ”
আরুশ খুশির জ্বরটা চেক করে ওঠে বললো,,,
— আচ্ছা জ্বরের ওষুধ আর খাবাড় পাঠিয়ে দিবো খেয়ে নিবি ওকে। আমি এসে যেনো দেখি জ্বর কমে গেছে।
বলতে বলতে শার্ট চেঞ্জ করে বেরিয়ে গেলো।
.
বিস্ময় চোখে তাকালো আরুশ জেরিন চিঠিটা এগিয়ে দিলো।
আরুশের বুকের ভিতর টা মুচড়ে ওঠলো।
কাঁপা হাতে চিঠি টা নিয়ে পড়তে শুরু করলো।

চিঠি.

আরুশ,,, এই আরুশ আমার ক্ষেপাটে আরুশ টা কি এখন অনেক ক্ষেপে গেছে?? রাগে কি চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে?? আমি তোমায় রাগতে নিষেধ করবোনা।
কারন আমি তোমার সাথে যেটা করলাম এরপর শুধু রাগ নয় এর থেকে অনেক বেশী কিছু হলেও আমার নিষেধ করার অধিকার থাকবে না।

শুনো আমার জ্বর কমে গেছে।
আমি একদম ঠিক আছি আর ভালো আছি। আমি এখন আমার নিজের লোকদের সাথেই আছি তুমি কোন চিন্তা করো না।
আর হ্যাঁ কাল রাতে যে শার্ট টা তোমার গায়ে ছিলো,,,
যেটা আঁকড়ে ধরে ছিলাম অনেকটা সময়,,
যে শার্ট গায়ে জরানো অবস্থায় তোমার বুকে প্রশান্তির শ্বাস নিচ্ছিলাম, প্রশান্তির ঘুম ঘুমিয়েছিলাম সেটা এখন আমার কাছেই আছে সারাটা জীবন একেই আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চাই আমি।
কি??রেগে যাচ্ছো তুমি,,, ভীষণ রাগ হচ্ছে কি তোমার?? জানি আমার আরুশ খুব রেগে যাচ্ছে। এই,,,তোমার কি বুকে ব্যাথা করছে আরুশ। পানি খাবে??প্লিজ টেবিলের উপর গ্লাসে পানি রাখা আছে আমি নিজ হাতে রেখেছি ওটা তোমার জন্য খেয়ে নাও প্লিজ।

এই আরুশ,,, তুমি কি আমার ওপর খুব রেগে গেছো?? আমায় কি তুমি ঘৃনা করবে??সিনেমার নায়কদের মতো আমায় বিশ্বাসঘাতকতার দায় দিবে??তোমার চোখে মুখে আমার প্রতি একরাশ মুগ্ধতার পরিবর্তে কি আজকের পর থেকে শুধুই ঘৃনা থাকবে??

আমি জানি থাকবে না। আমার আরুশ আমায় ঘৃনা করতেই পারবেনা। আমার আরুশের প্রতিটা নিঃশ্বাসের সাথে যে আমি মিশে আছি ঠিক যেমন আমার প্রতিটা শ্বাস তোমার নামে করা।
জানো তোমার বুকের প্রতিটা স্পন্দন কাল রাতে আমায় জানিয়ে দিয়েছে “খুশি তুই শুধু আরুশের এই বুকে শুধু তোরই স্থান থাকবে এই বুকের ভিতরের প্রতিটা স্পন্দন তোর নামেই স্পন্দিত হয়”
কিন্তু দেখো রাত আর সকালের মাঝে কতোটা তফাৎ। রাতে তোমাতে বিভোর ছিলাম আর সকালে তোমার থেকে ছিন্ন হয়ে গেলাম।
আচ্ছা আরুশ ছলনা কে কার সাথে করলো আমি তোমার সাথে??নাকি ভাগ্য আমাদের সাথে??

এই শোনো,,,তুমি কিন্তু অনেক ফাজিল অবশ্য তা আমি আগে থেকেই জানি তবে কাল একটু বেশীই লুচুগিরি করে ফেলেছো আমার গলায় লাল দাগ টা কি তুমি দেখেছিলে??ঠোঁটের কোনের ফুলে যাওয়াটা কি খেয়াল করেছিলে??ইশ কত্তো ফাজিল তুমি না জানি আজ রাতে কি হতো ভাগ্যিস চলে এলাম নয়তো আমায় তো সুখ দিয়ে মেরেই ফেলতে। হাহাহা কি ভাবছো তোমার খুশি বেশ বড় বড় কথা বলছে?? বড় হয়ে গেছে তোমার খুশি??
একদম না আরুশ ভাইয়া,,,একদম বড় হয়নি ট্রাস্ট মি. হিহিহি আবার ভাইয়া বললাম শাস্তি দেবে আমায়?? তোমার শাস্তি পাওয়াটাও যে বড় ভাগ্যের ব্যাপার যা আমার কপালে আর লিখা নেই গো।

জানো আমি যখন চলে আসার সিদ্ধান্ত নিলাম আমার শ্বাসটা বন্ধ হয়ে আসছিলো। আমার কি শ্বাসকষ্ট জনিত রোগ হয়ে যাবে আরুশ?? এর আগে কখনো এমনটা হয়নি কিন্তু আজ যখন সারাজীবনের জন্য আমি তোমায় ছেড়ে যাচ্ছি,সারাটাজীবন আমায় তোমায় ছাড়া বাঁচতে হবে এটা ভাবছি তখনি আমার বুকের ভিতর অদ্ভুত ব্যাথা শুরু হয়ে যাচ্ছে।
তুমি যে আমার অক্সিজেন আরুশ তোমায় ছাড়া বাঁচার ক্ষমতা হয়তো বেশীদিন হবে না।
দম বন্ধ হয়েই মরে যাবো হয়তো।

“ভালোবাসার মানুষ কে স্বামী হিসেবে পাওয়াটা সত্যি অনেক বড় ভাগ্যের ব্যাপার। আমার জানা নেই কতোটা ভাগ্য নিয়ে জন্মালে একজন মেয়ে বা একজন ছেলে তাঁর ভালোবাসার মানুষ কে জীবন সঙ্গী হিসেবে পায়।
একটা মেয়ে যখন তাঁর ভালোবাসার মানুষের হাত ধরে তাঁর সব কাছের মানুষ দের ছেড়ে চলে আসে।
তখন থেকে ঐ মেয়েটার সবটা জুরেই শুধু তাঁর ভালোবাসার মানুষ থাকে। চোখ জুরে শুধু একজন মানুষ কে ঘিরেই থাকে হাজারো স্বপ্ন।
ভালোবাসার মানুষ টা যখন বিয়ের আগের দিন রাতে বুকে জরিয়ে আদুরে গলায় বলে” আমার স্পন্দন শুনতে শুনতে প্রশান্তির একটা ঘুম দাও, কাল রাতে আমি শুনবো তোমার হৃদস্পন্দন”তখন সেই মেয়েটার বুকের ভিতর কতোটা উথাল-পাতাল ঝড় বয়ে যায় শুধু মেয়েটাই জানে। একদিকে যেমন ভয়ের সৃষ্টি হয় অন্যদিকেও সেই মূহুর্তটার জন্যও তীব্র অপেক্ষা শুরু হয়ে যায়।
আমিও ছিলাম সেই মূহুর্তটা পাওয়ার অপেক্ষায়।
বুকের ভিতর টা দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে আরুশ।
পারছিনা আর কিছু লিখতে শুধু এটুকুই বলবো,,,
ভালোবাসি তোমায় বড্ড ভালোবাসি।
“সব ভালোবাসা তো পূর্ণতা পায় না
কিছু ভালোবাসা অপূর্ণই রয়ে যায় ”
“সব সম্পর্কের প্রনয় ঘটলেও পরিণয় সব সম্পর্কেই ঘটে না”
আমাদের পরিণয়টাও নিয়তির খেলায় থেমে গেলো।
ভালো থেকো তোমার খুশিকে ক্ষমা করতে না পারলেও ঘৃনা করো না।

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here