অবাধ্য_প্রেম( দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ) #পর্ব_২

0
1405

#অবাধ্য_প্রেম( দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ)
#পর্ব_২
#নন্দিনী_নীলা

বৃষ্টি থেমে গেছে অনেক আগেই। রাতের আঁধার পেরিয়ে সকালের মিষ্টি রোদ ফুটে উঠেছে শহরের বুকে। নিবিড় চোখের পাতা মেলতে চাইল মাথা ভার হয়ে আছে। সাথে শরীরে ও ব্যাথা অনুভব করছে। অনেক কষ্টে চোখ মেলল। তাকিয়ে নিজেকে নিজের রুমে শোয়া অবস্থায় দেখতে পেল। কপালে হাত দিয়ে উঠে বসল। ও আশেপাশে তাকিয়ে ভাবছে ও ত রাস্তায় ছিল বৃষ্টির মধ্যে। ও বাসায় নিজের রুমে আসল কি করে? কিছু মনে করতে পারছে না।
মনে করার চেষ্টা করছে লাগল। কিন্তু মনে পড়ছে না। তখনি দরজা খুলে কেউ ভেতরে প্রবেশ করল। মুখশ্রীতে বিরক্তিকর আভা এনে দরজার দিকে তাকিয়ে দেখল আফিয়া দাঁড়িয়ে আছে হাসি মুখ করে ওর হাতে কফির মগ। এগিয়ে এসে ওর সামনে দাঁড়াল ও হাতের মগটা নিবিড়ের দিকে বাড়িয়ে দিল। নিবিড় আফিয়া কে দেখেই একটা রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করল।

” তুই এতো সকালে আমার বাসায় কি করছিস?”

আফিয়া মগটা নিবিড়ের হাতে দিয়ে বলল,” কফি খা‌ মাথা ভার কম লাগবে।”

” আমার প্রশ্নের উত্তর দে।”

” তোকেই দেখতে এলাম। কি অবস্থা করছিস নিজের। ওই ফাউল মেয়েটার জন্য নিজেকে এতো কষ্ট কেন দিচ্ছিস তুই? কাল কি করেছিলি জানিস? রাস্তায় অজ্ঞান হয়ে পড়ে ছিলি। সবাই কতো ভয় পেয়েছে জানিস? আন্টি আঙ্কেল সবাই তো পুলিশে পর্যন্ত কল দিয়েছিল। কিন্তু রাফসান কাকু তোকে রাস্তায় পেয়ে নিয়ে আসছে। এই সব কেন করছিস ওই মেয়ে তোর যোগ্য না তাই হারিয়ে গেছে। তাকে ভেবে কেন এমন পাগলামি করছিস। যারা কাছে আছে তোকে ভালোবাসতে চায় তাদের আপন করে নে প্লীজ।”

নিবিড় মুখশ্রী গম্ভীর করে বলল,” তুই কি ইনডাইরেক্লি নিজের কথা বলছিস?”

আফিয়া থতমত খেয়ে গেল। আমতা আমতা করে বলল, ” আমি তোকে চার বছর ধরে ভালোবাসি নিবিড়। তোর এই অবস্থায় আমি মেনে নিতে পারছি না খুব খারাপ লাগে।”

নিবিড় গম্ভীর স্বরে বলল,” আমার তোর সাথে এই মুহূর্তে কথা বলতে ইচ্ছে করছে না। তুই এখন আসতে পারিস। আর যখন তখন আমার রুমে বা আমার বাসায় আসার চেষ্টা করবি না। গেট আউট।”

আফিয়ার চোখ ছলছল করে উঠল। অভিমানী চোখে নিবিড়ের দিকে তাকিয়ে আছে। নিবিড় অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে কফি খাচ্ছে। এতো অবহেলা!
ওই মেয়েটার জন্য। ওই মেয়েটা যেন কোনদিন ফিরে না আসে। শেষ পর্যন্ত তোকে আমার কাছেই আসতে হবে নিবিড়। আমি অপেক্ষায় থাকলাম সেই দিনটার জন্য।
বলেই গটগট করে বেরিয়ে গেল আফিয়া নিবিড়ের রুম থেকে।

_____________________________

রাতভর বৃষ্টি আট সকালে সূর্যমামার দেখা। সকাল থেকে রোদ আর রোদের আলোতে মাটির ভেজা উঠোন শুকিয়ে গেছে। সাদিয়া রান্নাঘরে বসে ছিল মা আসতেই ও ওঠে বাইরে চলে আসে। দেখা পায় ছোয়ার সাত সকালে কোথায় গেছিল জানতে এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করে,”তুমি এত সকাল সকাল উঠে কোথায় চলে গেছিলে?”

সাদিয়ার কথা শুনে হাতের মুঠোয় থাকা কাঁচামরিচ দেখালাম। সাদিয়া ভ্রু কুঁচকে কে বলল,”মা তোমায় কাঁচামরিচ আনতে পাঠাইছিল ক্ষেতে?”

আমি বললাম, “আরে না আন্টি তো আমায় বলল নিজে যাবে এজন্য আমি বললাম আমি যাই। একটু হাঁটাহাঁটি করে আসি। একটু পরে স্কুলে যেতে হবে।”

” আজ তুমি আমার সাথে যাবে।”

“তুমি আমার সাথে কি করে যাবে সাদিয়া! তোমার ক্লাস তো দশটায় আর আমার স্কুল তো আটটায়।”

“এমনি তোমার সাথে স্কুলে ঘুরতে যাব একটু আর ওখান থেকে আমি আমার বান্ধবীর বাসায় যাব!”

” আচ্ছা।”

সাদিয়াকে রেখে আমি রান্নাঘরে চলে এলাম। কাঁচা মরিচ পেঁয়াজ কেটে দিলাম। তারপর রুমে চলে এলাম। এখানে আসার পর থেকে সাদিয়ারদের সাথে আমি খাওয়া-দাওয়া করি। তারা আমাকে আলাদা করে রাখেনা। আমি তাদের ভাড়া টা ঠিক দেই আর বাজার সদাই করার জন্য বাড়তি দেয়। এখানে একটা কেজি স্কুলে জব করি চারমাস ধরে। প্লে থেকে ৫ পর্যন্ত। এখানে আসার পর দুই মাস কি করব কিছুই বুঝতে পারছিলাম না নতুন করে ভার্সিটিতে ভর্তি হতে পারিনি। সাদিয়াদের বাড়িটা গ্রাম অঞ্চলে পড়েছে আর ভার্সিটি শহরে। এতে যাতায়াতের পয়সা দরকার আর ভর্তি হতেও পয়সা দরকার তো সব মিলিয়ে আমার হাতে যে টাকা ছিল সব খরচ করে যদি ভর্তি হই তাহলে আমি যাওয়া আসা করব বা কি করে খাওয়া-দাওয়া কি করে করব। এর জন্য ভর্তি হয়নি। ভাবছি সামনে বছর ভর্তি হব।
এখন একটা কেজি স্কুল আর বিকেলে আশপাশের কয়েকজন ছোট ছেলেমেয়ে প্রাইভেট পরিয়ে আমার দিন কাটে। সময় গড়ায়। এখানে আসার সময় ফোনটা ছিনতাইকারি হাতে পড়েছিল যা সমেত আমার ফোনটাও মিসিং। বর্তমানে একটা ফোন কেনার জন্য টাকা হাতে আছে। ভাবছি একটা ফোন কিনে ফেলব। এজন্য আমাকে সাদিয়ার সাথে ওদের উপজেলায় যেতে হবে। ওকে নিয়ে ভাবছি সামনে সপ্তাহে যাব।

সাদিয়া আমার সাথে স্কুলে আসল ঠিক কিন্তু ভেতরে গেল না ওর বান্ধবীর বাসা আরেকটু সামনে ও চলে গেল। সাদিয়া এবার এসএসসি পরীক্ষা দেবে। আমি ওকে বিদায় দিয়ে অফিস রুম থেকে যাবতীয় জিনিস নিয়ে ক্লাসে চলে এলাম‌। রাস্তায় দেখা হলো রাজাব স্যারের সাথে আমাকে দেখেই দাঁত কেলিয়ে হাসল। আমি তাকে দেখে বিরক্ত হলেও সামনে প্রকাশ করলাম না। নিজেও হাসি মুখ করে তাকালাম।

রাজিব স্যার কাছাকাছি এসেই বললেন,” ম্যাডাম ছোঁয়া কেমন আছো?”

আমি জরোসরো গলায় বললাম,”জি আলহামদুলিল্লাহ, আপনি কেমন আছেন?”

রাজিব স্যার পা থেকে আমার মাথা পর্যন্ত দৃষ্টি বুলিয়ে নিল তা দেখে আমার অস্বস্তি বেড়ে গেল।

উনি বললেন,”তোমাকে আজ খুব সুন্দর লাগছে।”

লোকটার দৃষ্টি একটুও ভালো না এই দৃষ্টির সামনে আমার পরতেই অস্বস্তি লাগে। কিন্তু দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করতে হয়। আমি ধন্যবাদ দিয়েই পাশ কাটিয়ে চলে এলাম। আমি জানি উনি ঘুরে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। ওরনা টানতে টানতে ক্লাসে চলে এলাম। পরপর দুইটা ক্লাস শেষ করে অফিস রুমে এসে বসতেই দেখা পেলাম রাজিব স্যারের তিনি অফিস রুমে বসে ছিলেন আমাকে দেখে আমার পাশাপাশি এসে বসলেন।

“আজকে কি আর ক্লাস আছে?” রাজীব স্যার প্রশ্ন করলেন।

আমি বললাম,”আছে!”

“এখন তাহলে ফ্রি আছো?”

“জি আপনার ক্লাস নাই?”

“ছিল করিনি।”

আমি অবাক গলায় বললাম,”কেন আপনি কি অসুস্থ?”

রাজিব স্যার বলল,” আরে না আমি সুস্থ আছি। আজকে কি জানো?”

আমি কপাল কুঁচকে বললাম,” আজকে কি?”

” আজকে আমার জন্মদিন চলো তোমায় ট্রিট দেব।”

” সরি স্যার, এটা আমি নিতে পারব না। আমি আপনার জন্য কোন গিফট আনিনি।”

“গিফট তা না হয় তোমাদের বাসায় গিয়ে তোমার হাতের রান্না খেয়ে আসব।”

আমি চুপ করে আছি। কি একটা অবস্থা উনার আমার সাথে যেতে হবে কেন?

উনি আবার বললেন,”কি ব্যাপার তোমার হাতে রান্না খেলে তোমার হাজব্যান্ড রাগ করবে নাকি আবার ?”

আমি ঢোক গিলে বললাম,”না মানে আসলে আমি তো সাদিয়া দের সাথে খাওয়া দাওয়া করি সেখানে…

” আরেকটা কথা তোমার হাজব্যান্ড বিদেশ থেকে কবে আসবে?”

আমি আমতা আমতা করে বললাম,, ” খুব দ্রুত আসবে বলেছে।”

” উনার নামটা কি যেন।”

” জি,, নিবিড়”

” তোমাকে দেখে কিন্তু এখনো আমার বিশ্বাস হয়না তুমি বিবাহিত।”

আমি চমকে উঠে বললাম,” মানে। কি বলছেন! ”

” আমার পালাতে বাঁচতে আবার মিথ্যাচার করতেই পার। ”

আমি বিস্মিত নয়নে তাকিয়ে আছি শ্যামবর্ণের লোকটার দিকে। রাজিবের বয়স নিবিড়ের থেকে বেশি হবে। খুব বেশি না দুই তিন বছরের বেশি হতে পারে। রাজিব ইন্টার পাশ করে ডিগ্রিতে ভর্তি হয়েছিল এক বছরের মত পরে আর পরে নাই। এরপরে একটা ফার্মেসি দিয়েছে গ্রামে। নিজের চাচার এই কেজি স্কুলে এজন্য তিনি বাংলা মাস্টার হয়ে আছেন।

রাজিব মুখটায় আবার হাসি ফুটিয়ে বলল,”আর যদি ও তোমার হাজব্যান্ড থেকে থাকে তবুও আমি বলতে পারি তোমার হাজবেন্ড তোমাকে একটু ভালোবাসে না। তোমাকে তো কখনোই দেখি না কারো সাথে ফোনে কথা বলতে।যাদের স্বামী বিদেশ থাকে তারা ত সারাদিন ফোন হাতে নিয়ে বসে থাকে। আর এতদিন হয়ে গেল তোমাকে আমি একটা ফোন হাতে পেলাম না। ‌ মনে হয় তার সাথে তোমার দ্বন্দ্ব চলছে এজন্য এখানে পড়ে নিজে ইনকাম করছ। দিন দিন শুকিয়ে যাচ্ছো এখানে আসছিলে তখন মনে হয় আরেকটু স্বাস্থ্য ছিল এখন তো খড়ি হয়ে গেছো। আমাকে বলতে পারো সবকিছু বন্ধু মনে করে। আর ডিভোর্সের ব্যাপারে সবকিছু নিশ্চিত আমি না হয় করে দেব। আমি আছি তো আমি তোমার সাথে সারা জীবন থাকতে চাই। সত্যি যদি বিবাহিত হয়ে থাকো তাহলে আমার মনে হয় তুমি তোমার ওই হাজবেন্ড কে ডিবোর্স দিয়ে সুন্দর একটা লাইফ ইনজয় করো।”

রাগ মিশ্রিত গলায় বললাম,,, “পরামর্শ দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ। কিন্তু আমার আপনার কাছ থেকে কোন পরামর্শের দরকার নাই।”

রাজিব মুখশ্রী কালো করে উঠে দাঁড়ালো গটগট করে নিজের চেয়ারে গিয়ে বসে পড়ল। আমি জ্বলন্ত চোখে তাকিয়ে আছি বাইরে।

#চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here