অবাধ্য_প্রেম #পর্ব_১৪,১৫

0
1021

#অবাধ্য_প্রেম
#পর্ব_১৪,১৫
#নন্দিনী_নীলা
১৪

‘আমার জিনিস আমি বললে দেবেন না তো কে বললে দেবেন? আর আপনি যে কতোটা অকৃতজ্ঞ আর অহংকারী সেটা তো আমি একটু আগেই বুঝতে পেরেছি। আমার জিনিস আমাকে দেন আমি আর জীবন আপনার মুখ্য দর্শন করতে চাই না।’

আমার কথা শোনে নিবিড় কপালে ভাঁজ ফেলে বলল, ‘কি বললে তুমি আমাকে আমি অহংকারী অকৃতজ্ঞ।’

‘ হ্যাঁ।’

‘আচ্ছা মানলাম আমি তোমার সাথে কি করেছি যে আমি অকৃতজ্ঞ হয়ে গেছি?’

আমি ফুঁসে উঠে বললাম, ‘একটু আগে একজন অসহায় মানুষকে আপনি ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছেন সে খুব বেশি ব্যথা না পেলেও পেয়েছে। আপনি তাকে টাকা দিয়ে পার পেতে চাই ছিলেন। একটু ভালো করে কথা বললে কি হত? তা না টাকার গরম দেখাচ্ছি লেন। ধনী হয়েছেন তাই বলে সব জায়গায় কি সবাইকে শুধু টাকা দেখাবেন? ‘

নিবিড় রক্ত চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে গাড়ির হেন্ডেলে একটা ঘুসি মেরে বলল, ‘ আমি অহংকারী অকৃতজ্ঞ ঠিক আছে। নামো আমার গাড়ি থেকে।’

আমি চোখ বড় বড় করে নিবিড়ের দিকে তাকালাম। এখন গাড়ি থেকে আমার কিছুতেই নামা যাবে না। আমি বাইরে জসিমকে দেখতে পেয়েছ দৌড়ে আসছে এদিকে। এখন আমাকে নিবিড়ের সাথে পালাতে হবে আমি যদি গাড়ি থেকে নেমে যায় তাহলে আমি ধরা পড়ে যাব। আর আমি কিছুতেই ওই শয়তানটার হাতে ধরা পড়তে চাই না।

নিবিড় আমার হাত শক্ত করে ধরে ধাক্কা মেরে বলল, ‘ গেট আউট অফ মাই কার।’

আমি অসহায় মুখ করে নিবিড় দিকে তাকিয়ে বললাম, ‘প্লিজ এমনটা করবেন না। আমার এত বড় সর্বনাশ করবেন না। জীবনে তো কোনদিন ভালো কিছু করেন নাই। আজকে একটা অন্তত ভালো কাজ। সাহায্য করেন আমাকে। আমাকে গাড়ি থেকে বের করে দিলে আমি খুব বড় বিপদে পড়ে যাব আমার জীবনটা শেষ হয়ে যাবে।’

নিবিড় আমার দিকে কঠোর চোখে তাকিয়ে বলল, ‘নো আমি ভালো কাজ করি না আমি তো খারাপ। আর আমি না কাউকে সাহায্য করে আমিতো অকৃতজ্ঞ। বের হও আমার গাড়ি থেকে তোমার যা খুশি তাই হোক আই ডোন্ট কেয়ার।’

আমি করুন কন্ঠে বললাম, ‘ এতটা নির্দয় হবেন না প্লিজ। ওই দেখুন জসিম ছুটে আসছে ও যদি আমাকে একবার দেখতে পায় আমাকে তুলে নিয়ে যাবে। আর ওর সাথে আমার বিয়ে হবে। জানেন ও একটা খুব খারাপ ছেলে। মদ খেয়ে মাতলামি করে। আমাকে আগে অনেক ডিস্টার্ব করতৌ। মামি ওর সাথে হাত মিলিয়েছে। আপনার কাকার সাথে আমার বিয়ে ভেঙে গেছে বলে এখন ওর কাছে আমাকে বিয়ে দিতে চাচ্ছে প্লিজ আমাকে বাঁচান।’

নিবিড় এবার গাড়ি খুলে ধাক্কা দিয়ে আমাকে গাড়ি থেকে বের করে বললো, ‘ আমার মতন নির্দয় মানুষ কাউকে সাহায্য করে না। তোমাকে আমি সাহায্য করতে চেয়েছিলাম আর শোনো তখন আমি তোমাকে টাকা দেখেছিলাম তোমাকে রাগানোর জন্য কারণ তুমি মুখটা যে ভাবে বেঁধে রাখো না কেন? নিবিড়ের থেকে পালাতে পারবে না। তোমাকে প্রথমে এক নজর দেখে আমি চিনে ফেলে ছিলাম যে তুমি ছোঁয়া। এর জন্য আমি তোমার প্রতি এতটা উদাস হয়েছিলাম আর তোমাক ইচ্ছে করে টাকা দেখিয়েছি।’

আমি নিজের ভুল ভাবনার জন্য লজ্জিত কন্ঠে বললাম, ‘আচ্ছা আমাকে ক্ষমা করে দিন আমি আর কখনো আপনার কে কিছু বলবো না। কখনো আপনাকে খারাপ কিছু বলবো না। আপনার সাথে তো আর তর্ক করতেও যাব না আজকে আমি তোমাকে বাঁচিয়ে নিন প্লিজ।’

আমি হাতজোড় করে নিবিড় কে এসব বলছি তখনই দেখতে পেলাম জসিম শয়তানটা আমাকে দেখে ফেলেছে আর শয়তান টা আমাকে দেখিয়ে চিৎকার করে বলে উঠলো, ‘ ছোঁয়া ডার্লিং তুমি ওইখানে কেন? আমাকে বিয়ে না করে তুমি কোথায় পালিয়ে যাচ্ছো ডার্লিং?’

জসিমের বাচ্চা রাস্তার ওপাশে আছে আমি এপাশে জসিম এবার আমার দিকে ছুট লাগাবে রোড ক্রস করলেই ও আমার কাছে চলে আসবে। আমি ওর দিকে ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে আছি আর এদিকে তখনই নিবিড় আমার হাত ধরে একটানে গাড়ির ভেতরে ঢুকিয়ে গাড়ি লক করে দিল। সাথে সাথেই এপাশে চলে এলো জসিম এসে গাড়ির দরজা ধাক্কাতে লাগলো চিৎকার করতে লাগলো। কিন্তু আমি গাড়ির ভেতর থেকে ঠিক কিছুই শুনতে পেলাম না।

গাড়ির লক করা বাইরের কোনো কথা আমি শুনতে পাচ্ছি না। কিন্তু জসিম এমন জোরে দরজা ধাকাচ্ছে যেন গাড়ি ভেঙে ফেলবে এ দিকে নিবিড় আমাকে সিট ব্রেল বাঁধতে বলে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে শয়তান জসিমকে ফেলে আমাকে নিয়ে চলে এলো। জসিমকে ছেড়ে আসতে আমার জানে প্রাণ ফিরে এলো। আমি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে লাগলাম।

নিবিড় আমাকে পেছন থেকে একটা পানির বোতল এনে দিল আমি পানির বোতল পেয়ে গপগপ করে পানি খেতে লাগলাম। একদম বোতলের মুখ লাগিয়ে খেয়েছি। সেটা দেখে নিবিড় আমার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘একটা ছেলের পানির বোতলের মুখ লাগিয়ে খেতে লজ্জা করে না তোমার!’

নিবিড়ের কথা শোনে আমি বোকা চোখের নিবিড়ের দিকে তাকালাম। আমি মাথা নিচু করে বললাম, ‘সরি আসলে খুব পানি পিপাসা পেয়েছিল মনে ছিল না এটা অন্য কারো বোতল। বিশেষ করে এটা কোন ছেলের বোতল তাই বুঝিনি। বুঝলে কি আর আমি আপনার মুখ লাগানো এঁটো বোতলের মুখ লাগাতাম?’

নিবিড় বলল, ‘ কি বললে তুমি আমার এঁটো? আমার বোতলে আমি মুখ লাগাব না তো কে লাগাবে।’

‘ আমি….

নিবিড় আমাকে থামিয়ে দিয়ে বলল, ‘তুমি আবার আমার সাথে ঝগরা করছো। তর্ক করছো একটু আগে কি বলছিলে নামিয়ে দেব নাকি গাড়ি থেকে?’

আমি আঁতকে উঠে বললাম, ‘ নানানা সরি প্লিজ। আর কোন কথাই বলব না। এই যে মুখে হাত দিলাম।’

বলেই নিজের আঙ্গুল নিজের মুখে দিয়ে মুখ অফ রাখলাম। মনে মনে তো আমি ফুঁসছে বিপদে পড়েছি বলে এভাবে আমাকে ব্ল্যাকমেইল করা হচ্ছে আমারও দিন আসবে তখন আমিও এর সুদে আসলে উসুল করব।

নিবিড় ড্রাইভ করতে করতে উঁচু গলায় বলে উঠলো
, ‘মনে মনে আমাকে কিভাবে শায়েস্তা করবে তা ভাবা বন্ধ না করলে ধাক্কা দিয়ে গাড়ি থেকে বের করে দেব।’

আমি চোখ কপালে তুলে বললাম,’আপনি আমার মনের কথা কিভাবে জানলেন?’

নিবিড় বলল, ‘আমার পাশে বসে আমাকে নিয়ে শয়তানি প্ল্যান করবে আর আমি তা ধরতে পারবো না ভাবলে কি করে? ‘

আমি কাঁদো কাঁদো মুখ করে বললাম, ‘ আমি কিছু বলিনি বিশ্বাস করুন।’

‘আর কিছু না ভাবলে বিশ্বাস করব।’

‘আচ্ছা আর কোন প্ল্যান করব না সত্যি করে বলছি।’

নিবিড় আমার কথার প্রেক্ষিতে কিছু বলল না।
মনে মনে একটা কিছু ভাববো তা ভেবে ও শান্তি নাই। কি লোক রে বাবা এ দেখি মনের খবরও
জেনে যায়।

নিবিড় আমাকে জিজ্ঞেস করল, ‘কোথায় যাবে এখন ঠিকানা দাও!’

আমি বললাম, ‘আমি যে বাসায় থাকি সেখানে তখন ঢুকতে পারবো না। আপনি আমাকে লিলি দের বাসায় নিয়ে যান। আর আপনার ফোনটা একটু দেন ওকে আমি ফোন দিয়ে জানিয়ে দেই আমি আসতেছি।’

‘কেন তোমার ফোন তো আমি দিয়ে দিয়েছি। আমার ফোন দেওয়া লাগবে কেন?’

‘ খালি ফোন থাকলে হয় নাকি ফোনে তো টাকা লাগবে। ফোনেতে ব্যালেন্স নাই ফোন দেবো কিভাবে।’

‘ এত সুন্দর একটা সু পাত্রের সাথে তোমার মামি তোমার বিয়ে ঠিক করেছিলো। তুমি কেন পালিয়ে এলে?’

‘ সুপাত্র না গাজা খোর একটা।’

নিবিড় শয়তানি হাসি দিয়ে আমার দিকে ফোন টা বাড়িয়ে দিলো। আমি লিলি কে কল দিলাম কিন্তু ফোন দিয়ে যা শুনলাম তা শুনে সেখানে যাওয়ার রাস্তা টা আমার বন্ধ হয়ে গেল। লিলি নাকি ওর চৌদ্দগোষ্ঠী নিয়ে নানীর বাড়ি গেছে। রাগ আমার মাথা ফেটে যাচ্ছে এখন আমি যাব কোথায়?’

সেখানে যেতে পারবেনা শুনে তো নিবিড় হাসতে হাসতে শেষ। আমার দিকে তাকিয়ে টিটকারি মারা গলায় বলল, ‘আচ্ছা এখন তাহলে কোথায় যাবে? তাহলে তোমাকে তোমার মামার বাড়ি রেখে আসি ওই সুন্দর ছেলেটাকে বিয়ে করে সংসারী হও।’

‘ওই মাতাল গাঁজাখোর টাকে বিয়ে করলে আজীবনের মাতলামি দেখতে দেখতে আমি মরে যাব। না বাবা ওকে বিয়ে করার থেকে আমার পুকুরে ঝাঁপ দিয়ে মরা ভালো।’

‘তাহলে কি কোন পুকুরের সামনে নিয়ে যাব?’

আমি কান্না করে দিয়ে বললাম,’আপনি সত্যিই এত নির্দয় আর পাষাণ। মরার জন্য আমাকে পুকুরে নিয়ে যেতে চাচ্ছেন কোথায় আমাকে সান্তনা দেবেন। একটা পথ দেখাবেন তা না মরে যেতে বলছেন।’

#চলবে…..

#অবাধ্য_প্রেম
#পর্ব_১৫
#নন্দিনী_নীলা

নিবিড় আমাকে ওর একটা বান্ধবীর বাসার সামনে নিয়ে এলো। আমি কোথায় যাব এসব নিয়ে যখন পাগলপ্রায় অবস্থা তখন নিবিড় বলল, ‘ শোন তুমি চাইলে আমি তোমাকে আমার এক ফ্রেন্ডের বাসায় থাকতে দিতে পারি।’

আমি চমকে উঠে বললাম, ‘ফ্রেন্ডের বাসায় মানে। আপনি আমাকে ‌ আপনার ছেলে বন্ধুদের বাসায় রেখে আসতে চাইছেন?’

নিবিড় বিরক্ত মাখা গলায় বলল, ‘ ইডিয়েট, আমাকে কি শুধু ছেলে ফ্রেন্ড! আমার কি মেয়ে ফ্রেন্ড নাই?’

আমি নিজের বোকামি কথা বলে ফেলেছি বুঝতে পেরে বললাম, ‘আচ্ছা চলুন।’

আচ্ছা চলুন বলে দিয়েও তো এবার আমার টেনশন হচ্ছে নিবিড়ের বন্ধু যে দুইটা মেয়ে দুজনের একজনও তো আমাকে সহ্য করতে পারে না। আফিয়া মেয়েটা তো আমাকে তার চিরশত্রু মনে করে। আর তার সাথে থাকা মেয়েটা কি যেন নাম মনে নাই সে আমাকে পছন্দ করে কিনা জানিনা কার বাসায় নিয়ে যাবে কে জানে।

ডাইভিং এর মাঝে হঠাৎ নিবিড় বলে উঠলো, ‘হোয়াটস প্রবলেম?’

আমি চকিতে মাথা উঁচু করে বললাম, ‘কিসের সমস্যা?’

‘কি ভাবছো?’

আমি বললাম, ‘ আপনি আপনার কোন বান্ধবী বাড়ি আমায় নিয়ে যাচ্ছেন?’

নিবিড় বলল, ‘যেখানে তুমি থাকতে পারবে সেখানেই নিয়ে যাচ্ছি।’

‘আমাকে বলুন আগে। আপনার ঐ শাকচুন্নি আফিয়া বান্ধবীর বাড়ি নিয়ে যাচ্ছে না তো আমাকে?’

নিবিড় বলল, ‘ আমার ফ্রেন্ডের ইন্সাইট করলে কিন্তু গাড়ি থেকে ধাক্কা দিয়ে বের করে দেব। তুমি আমার সাথে আর ঝগড়া তর্ক করবে না বলেছিলে।’

‘ হ্যাঁ আপনার সাথে ঝগড়া করছি কোথায়? আপনার সাথে তো সুন্দর করে কথা বলছি। আমি তো ওই শাকচুন্নি টা কে ….

নিবিড় রাগী গলায় বলল, ‘ আবার বের হ‌ও আমার গাড়ি….

আমি মুখে হাত দিয়ে বললাম, ‘সরি সরি আমি আর একটা কথা বলব নাই যে মুখ বন্ধ করলাম। আপনি যেখানে খুশি আমাকে আজকে রাত থাকার ব্যবস্থা করে দেন। শুধু ওই শাক.. সরি ওই আফিয়ার বাসায় আমাকে নিয়ে যাইয়েন না।’

নিবিড় শান্ত হলো আর আমাকে গরম চোখে শাসিয়ে দিল ইশারায় নেক্সট টাইম যদি আমি তার কথার অবাধ্য হয়েছি তো আমার আর কোন অনুরোধ‌ই তিনি গ্রহণ করবে না।
হঠাৎ একটা ছোটখাটো রেস্টুরেন্টের সামনে এসে নিবিড় গাড়ি থামিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল,’ বাসায় থেকে কিছু খেয়ে পালিয়ে ছিলে?’

খাবার কথা জিজ্ঞেস করতেই পেটে আমার খিদের যন্ত্রণার টের পেলাম। সেই সকালে খেয়েছিলাম দুপুরে খাওয়ার আগে নিবিড়রা এসেছিল। তারপর যা হয়েছে তারপর তো রুমে বন্দি অবস্থায় ছিলাম। পালিয়ে এসেছি তো খাওয়ার বাহানা দিয়ে। খেতে আর পারি নি।

আমি ক্ষুধার্ত মুখে নিজের দিকে তাকিয়ে বললাম, ‘সকালের পরে আর খেতে পারেনি খুব খিদে পেয়েছে। পেট ব্যথা করছে খিদের যন্ত্রণায়।’

‘পালিয়ে আসার আগে কি পেট ভরে খেয়ে আসতে পারলে না। এখন আমার টাকা খরচ করে তোমাকে খাওয়াতে হবে।’অনিচ্ছা গলায় বলল নিবিড়।

উনি আমাকে খাওয়াতে চায় না সেটা তারই পানসে মুখটা দেখে আমি বুঝে গেছি।

আমি অনুরোধ গলায় বললাম, ‘কয় টাকা লাগে খেতে আমি পরে দিয়ে দেবো আপনাকে এবার তো চলুন।’

টাকার কথা বলতেই নিবিড় আমার দিকে একটু এগিয়ে এসে দাঁতে দাঁত চেপে বললো, ‘আচ্ছা। শুধু খাওয়ার টাকায় দিবা এই যে তোমাকে হেল্প করছি আমার ফ্রেন্ডের বাসায় নিয়ে যাচ্ছি এই এত রাস্তা পাস করার জন্য আমার কতখানি তেল খরচ হচ্ছে জানো? শুধু খাবারের টাকা না। থাকার জন্য বাসা ভাড়া দিতে হবে। আর গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়ার জন্য গাড়ি ভাড়া দিতে হবে।’

আমি চোখ বড় বড় করে বললাম, ‘সব দিতে হবে আচ্ছা সব মিলিয়ে কয় টাকা হবে?’

নিবিড় নির্বিকার গলায় বলল, ‘ ধরা 10/ 20 হাজার তো হবেই।’

আমি অবাক এর চরম সীমায় পৌঁছে গেলাম এত টাকার অংক শুনে।
আমি গালে হাত দিয়ে বিশমিত গলায় বললাম,’ কি বললেন এত টাকা এই টাকা দিয়ে তো আমি আমার বাড়ি ওয়ালার পাঁচ মাসে ভাড়া দিয়ে দিতে পারব।’

‘তুমিতো ওই ভাঙাচোরা ফ্লাইটে থাকো আমি যেখানে নিয়ে যাচ্ছি সেটা তো ভিআইপি বাসা।’

‘আমার এত টাকার বাসায় যেতে পারবো না আমি না হয় আপনার এই গাড়িটিতে থাকবো। আর ওই দোকান থেকে আমি ভাত আর ডাল খাব আর আপনাকে ভাড়া হিসেবে 50 টাকা দিব।’

‘টাকার জন্য তুমি আমার গাড়িতে থাকতে চাও। আমি তোমাকে টাকা ছাড়া ফ্রি তে গাড়িতে থাকতে দেবো কেন? এটা কি তোমার শ্বশুরের ছেলের গাড়ি পাইছো?’

আমি নিবিড়ের কথাটা ঠিক মত বুঝতে পারলাম না না বুঝতে পেরেই বলে উঠলাম, ‘হুম তাই পাইছি।’

নিবিড় হতবিহ্বল কন্ঠে বলল, ‘ হোয়াট?’

আমি ঢোক গিলে বললাম,’ খিদের যন্ত্রণায় মরে গেলাম এবার আপনি এতো কথা অফ করেন প্লিজ।’

নিবিড় গাড়িতে বেরিয়ে গেল। আমিও বেরিয়ে এলাম। ছোটখাটো রেষ্টুরেন্ট হলেও ভেতর টা খুব সুন্দর বাইরে থেকে মনে হয়নি এমনটা হবে।

আমরা একটা টেবিলে বসলাম। আর বসার পর থেকে আমি নিবিড় কে শুধু একটা কথা বলে যাচ্ছি আমি শুধু ডাল ভাত খাব। আমি বেশি টাকা খরচ করতে পারবোনা। কিন্তু নিবিড় আমার কথা কানে নিল না সে একগাদা খাবার অর্ডার দিলো।

আমি হাঁ করে নিবিড়ের দিকে তাকিয়ে আছি।
নিবিড় আমার দিকে তাকিয়ে চোখের ইশারায় বলল, কি হয়েছে ?

আমি রাগী গলায় বললাম, ‘এটা কি হলো আপনি এত টাকার খাবার অর্ডার দিলেন কেন? আমি যা বললাম তার উল্টা। আমি এত খাবার খাব না আর এসব তো খাব‌ই না। আমার এত টাকা নাই বলছি না।’

নিবিড় নির্বিকার ভঙ্গিতে বলল, ‘তোমার জন্য এসব অর্ডার করতে চাইছিলাম না। আমার জন্য শুধু করতে চাইছিলাম কিন্তু এখানে শুনলাম ডালভাত এখানে পাওয়া যায় না। কম দামি কোন খাবার এখানে নাই তাই তোমার জন্য ও করলাম। এখন তোমার যদি খেতে মন চায় খাও না হলে আমি খাই।’

আমি কাঁদো কাঁদো গলায় বললাম, ‘আপনি জিজ্ঞেস করলেন কখন? আমার সাথে ছিটারি করেন?’

নিবিড় বলল, ‘ জিজ্ঞেস করতে হবে কেন মেনু দেখতে পাচ্ছ না। মেনু কার্ডে যা আছে এখানে সেই সব‌ই পাওয়া যায়। বিলিভ না হলে ধরো মেনু কার্ড পড়ে দেখো তোমার ডালভাত থাকলে তুমি আবার অর্ডার দিয়ে নাও।’

আমি মেনু কার্ডটা হাতে নিলাম আর উলটপালট করে কোথাও ডাল-ভাত পেলাম না। একটা রেসিপি তাও আমি ডাল ভাত পেলাম সেখানে ভাতের সাথে ডাল ইলিশ মাছ ভর্তা আর গরুর গোস্ত আল্লাহ। আমি ওয়েটারকে ডেকে জিজ্ঞেস করতে চাইলাম এখান থেকে শুধু ডাল আর ভাতটা আমাকে দেওয়া যাবে কিনা।

ওয়েটারকে ডাকতে যাব তখন নিবিড় আমাকে একটা ধমক দিল, ‘আমি যা অর্ডার করছি তাই খাবে চুপচাপ। বেশি কথা যেন না শুনি তাহলে কিন্তু আমার চেয়ে খারাপ কেউ হবে না। মাইন্ড ইট।’

‘আমার কিন্তু সত্যি..

বলতে গিয়ে ও আমি বলতে পারলাম না নিবিড় আমার দিকে যেমন লাল চোখে তাকিয়ে আছে। আমি ঢোক গিলে চুপ করে রইলাম। খাবার নিয়ে আসতে আমার খিদে চাপ আর ও বেড়ে গেল আমি গপাগপ খেয়ে ফেললাম। টাকার চিন্তা বেমালুম ভুলে গেলাম।

নিবিড় আমাকে সেই আফিয়ার বেস্ট ফ্রেন্ড মেয়েটার বাসায় নিয়ে এসেছে মেয়েটা আমাদের দিকে তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে আছে। সে হয় তো কল্পনাও করতে পারেননি নিবিড় এই রাতে আমাকে নিয়ে তার বাড়ি আসবে‌।

তার চোখে মুখে চরম বিষ্ময়। বিস্ময়ের জন্য তিনি পাক্কা পাঁচ মিনিট কথা বলতে পারলোনা। হা করে আমাদের দিকে তাঁকিয়ে রইলো। তারপর হঠাৎ করে নিবিড়কে টেনে একটু আমার থেকে দূরে নিয়ে কি যেন জিজ্ঞেস করতে লাগলো।

দুজনে কি যেন ঘুজুরফুজুর করে তারপর আমার কাছে আসলো। আমার কাছে দুজনে এসে দাঁড়াল আমি দু’জনের মুখের দিকে তাকিয়ে আছি। নিবিড় ওই মেয়েটা কে উদ্দেশ্য করে বলল, ‘ ইভা তাহলে ওকে নিয়ে যা কালকে সকালে এসে আমি ওকে নিয়ে যাব।’

ইভা মেয়েটা আমার হাত ধরে বলল, ‘ চলো ছোঁয়া আমার সাথে‌। নিবি তাহলে তুই চলে যা।’

#চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here