#অবাধ্য_প্রেম
#পর্ব_২৫,২৬,২৭
#নন্দিনী_নীলা
২৫
কোথা থেকে কি হলো কিছুই বুঝতে পারলাম না। ভেতরে ঢুকে আমি টাকশি খেলাম। সোফায় বসে আছে তাহমিনা আপু তাকে ঘিরে আছে বাসার সবাই। আপু এখানে কি করছে কিভাবে এলো? সেটা আমার মাথায় ধরছে না। আমি ওদের দিকে যাচ্ছিলাম আমাকে তখন ইশারায় দূরে থেকে আশা চলে যেতে বলল। আমি বললাম কেন?
আশা হাত নাড়িয়ে বলল চলে যাও। তখন আমি দেখতে পেলাম আমার ওখানে যাওয়াটা সবাই পছন্দ করছেন না। আপু আমাকে দেখেন নি। আর দেখলাম নিবিড়ের মা আমার দিকে শাসানো দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। তার দৃষ্টি দেখে আর পা বাড়াতে পারলাম না চলে এলাম।
আমি উপরে এসে নিচের দিকে তাকিয়ে দেখলাম নিবিড় কাউকে ফোন করছে আমার মনে হয় রাফসান কাকা কেই কল করছে। কাকা কে তো দেখলাম না।তাহমিন আপু এখানে আছে তিনি নিশ্চয় জানেন না।
কাকা যদি না জানে তাহলে আপু কে বাসায় নিয়ে আসলো কে? আর সবাই কি আপুকে চিনে আগে থেকেই! নাকি ওই নিবিড় আপুকে জোর করে নিয়ে আসছে। আমার মনে হয় উনার ই কাজ হবে এসব। এসব কাজ নিবিড় করেছে ভাবতে আমার রাগে আমার শরীর জ্বলে উঠলো। উনি কোন সাহস এ কাকাকে কিছু না জানিয়ে এইভাবে আপুকে জোর জবরদস্তি করে বাসায় আনছে। এখন আবার বাসার সবার সামনে তাকে ফেলে বাইরে গিয়ে কাকাকে কল করছে সবাই মিলে যে আপুকে হেনস্থা করছে এইসবের পরে তো আপু কাকাকে আরো সহ্য করতে পারবে না।
নিবিড় অনেকক্ষণ ফোনে বকবক করে ফোনটা যখন হাতে নিলো তখন আমিও ওকে কল দিলাম।
রিসিভ করতে আমি রাগী গলায় বললাম,, ‘আপনি তাহমিনা আপুকে জোর করে এই বাসায় নিয়ে আসছেন তাই না। এভাবে জোর করে আনলে কি আপনার মনে হয় কাকার সাথে আপুর মিল করাতে পারবেন। কখনো পারবেন না। উল্টা আপুর মনে কাকার জন্য ঘৃণা তৈরি হবে। ভালোবাসার দিয়ে
তার অভিমান ভাঙাতে হবে। সেটাই করতে ছিল কাকা আর আপনি মাঝখানে এসে জোর করে সবকিছু উলটপালট করে দিলেন।’
নিবিড়ের দিকে থেকে আমি কোন আওয়াজ পেলাম না ফোনে। কিন্তু বাস্তবে এক বিরাট বড় ঝড় বয়ে গেল যেন এই কথাগুলো বলছিলাম ছাদে থেকে নিবিড়ের দিকে তাকিয়ে থেকে। হঠাৎ করে নিবিড় ফোনটা নিয়ে সামনের সুইমিংপুলে ছুড়ে মারে। দেখে আমি চমকে উঠি। আমি উপর থেকে চিৎকার করে বলি,, ‘আরে আরে কি করছেন ওটা ফেলছেন কেন?’
নিবিড় আমার দিকে আগুন চোখে তাকিয়েছে আমি দূরে থেকেই বুঝতে পারছি। তিনি যে রেগে আগুন হয়ে আছে। আমি শুকনো ঢোক গিলে বললাম, ‘সরি আপনার যা খুশি তাই করুন।’
আমি ওখান থেকে চলে আসতে নিয়েছিলাম নিবিড় চিৎকার করে আমাকে বলে,, ‘স্টপ ওইখানেই দাঁড়াও।’
আমি থমকে দাড়িয়ে পড়ি। নিবিড় আমার দিকে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,, ‘ তুমি উপরে কি করছো? নিচে যে একজন আছে তাকে কি তুমি চিনতে পারো নাই?’
আমি বললাম, ‘চিনতে পারব না কেন অবশ্যই চিনতে পেরেছি?’
‘চিনতে যেহেতু পেরেছো তার কাছে না গিয়ে উপরে এসে ফালতু গল্প বানাচ্ছ কেন? ‘
‘আমি গল্প কখন বানালাম?’
‘দেখো ছো য়া তোমার সাথে আমি এখন কথা বলতে চাচ্ছি না। তুমি নিচে যাও। তার কাছে যাও আমার দিকে সব সময় ফালতু অভিযোগ না। না হলে তোমাকে আমি ফোনটার মতোই ওই সুইমিংপুলে এখন ছুড়ে মারবো।’
‘ হায় আল্লাহ বলেন কি আপনার মাথাটা গেছে!’
‘একটা কথা বললে আমি কিন্তু সত্যি তোমাকে সুইমিংপুলে ছুড়ে মারবো।’
আমি ভয়ে পালিয়ে এলাম। নিচে এসে জানতে পারলাম উল্টা কাহিনী। তাহমিন আপুকে নাকি নিবিড়ের আম্মু বাঁচিয়ে নিয়ে এসেছে। রাস্তায় নাকি অজ্ঞান হয়ে পড়েছিল। সেখান থেকে নাকি নিবিড়ের মা বাসায় নিয়ে আসছে। এই বাসার কেউ তাহমিন আপুকে চিনে না কিন্তু তাহমিনা আপু এই বাসার সবাইকে চেনে তিনি আমাকে বলেছিল। জ্ঞান ফেরার পর থেকে নাকি বাসা থেকে চলে যেতে চাইছিল কিন্তু কেউ যেতে দিচ্ছিল না। সবাই একটু রেস্ট নিয়ে যেতে বলছে কারণ অজ্ঞান হয়েছিল কিন্তু শুনছেন না তাহমিনা আপু এজন্য সবাই থাকে তোষমোদ করছে আর আমি কত কিছুই না ভেবেছিলাম।
আমি কাছে যেতেই অবাক সুরে বলল,, ‘ ছোঁয়া তুই এখানে?’
আমি আমতা আমতা সুরে বললাম,, ‘ আপু আমি এই বাসায় ভাড়া থাকি।’
আপু বলল, ‘ ও আচ্ছা।’
বাসার সবাই তো অবাক আমি আপুকে চিনি এজন্য। নিবিড়ের ছোট চাচী আমার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘এই মেয়ে তুমি উনাকে চিনো কিভাবে? আপু বলছ এটা তোমার কেমন আপু?’
আমি কিছু বলতে যাব তখনি রাফসান কাকা আর নিবিড় বাসার ভেতরে এসে ঢুকলো। রাফসান কাকা তো নিজের বাসায় তাহমিন আপুকে দেখে ভূত দেখার মতো চমকে উঠেছে। আমার দিকে অবিশ্বাস্য চোখে তাকিয়ে আছে, ভেবেছে আমি হয়তো আপুকে নিয়ে এসেছি কায়দা করে। কাকার মুখের এক্সপ্রেশন দেখে আমার খুব হাসি পেল ।
কিন্তু আমি হাসলাম না নিজের হাসিটা নিজের মধ্যে চেপে রেখে তাহমিনা আপুর দেখে দিকে তাকিয়ে গড়গড় করে বলে লাগলাম,, ‘ আপু শুনলাম তুমি নাকি রাস্তায় অজ্ঞান হয়ে পড়ে ছিলে। আমাদের এই আন্টি (নিবিড়ের মাকে উদ্দেশ্য দেখিয়ে দিলাম) নাকি তোমাকে উদ্ধার করে এনেছে। আর তুমি এখন তাদের কথা না শুনে রেস্ট না নিয়ে এই শরীরে চলে যেতে চাইছ রাস্তায় তো গিয়া আবার অজ্ঞান হবে। ভালো হয়েছে তুমি তোমার এই ছোট বোনের কাছে চলে এসেছো। আজকে তুমি আমার কাছে থেকে যাও কাল না হয় চলে যেও।’
ইচ্ছে করেই সমস্ত কাহিনী টা বলে দিলাম যাতে কাকার মাথায় সবটা ভালোমতো সেট হয়। আর তিনি সব যেন বুঝতে পারে উল্টাপাল্টা কথা বলে আমাকে না কেস খাইয়ে দেয়।
রাফসান কাকা হয়তো সব বুঝতে পেরেছে তিনি বাসার অন্যদের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলে সবাই এবার এই কাহিনীটা বলতে লাগলো। আমি এক কোনায় দাঁড়িয়ে মিটি মিটিয়ে হাসছি। নিবিড় আমাকে সবার অগোচরে টেনে বাইরে নিয়ে আসলো আমি চিৎকার দিতে যাব যাব এমন অবস্থা। চিৎকার দেইনি সবাই যদি এটা দেখতে পায় তাহলে উল্টা আমাকেই সবার সামনে খারাপ বলবে। তাদের বাড়ির ছেলের দোষ তাদের চোখে আসবে না এমনিতেই বাসায় সবাই কেমন যেন একটা।
‘আপনার কি মাথা স্ক্রু ঢিলা হয়ে গেছে। আপনি আমাকে ওইভাবে সবার সামনে থেকে টেনে নিয়ে আসলেন কেন?মাথায় বুদ্ধিশুদ্ধি কিছু নাই।অসভ্য ছেলে নিজের চরিত্র যে ঢিলা সেটা সবসময় প্রমান না করলে হয় না তাই না।’
নিবিড় আমার হাত আরো জোরে মুচড়ে ধরে বলল, ‘ লিমিট ক্রস করবে না। না হলে কিন্তু আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না!’
‘আগে নিজে লিমিট ক্রস করা বন্ধ করুন। নিজের সীমার মধ্যে থাকুন। একদম আমার সাথে গলা উঁচু করে কথা বলতে আসবেন না। আমি আপনার কেনা না আর আমার উপর আপনার কোন অধিকার নাই। ‘
‘ ছোঁয়া স্টপ দিস।’
আমি চুপ করবো কেন সব সময় এক রকম তাই না। তখন আমাকে ধমকি নিচে পাঠিয়েছিল এখন আবার এসেছে ধমকানোর জন্য নিয়ে। আমার ধমক আমি শুনতে যাব কেন।
আমি বললে উঠলাম,’ করবো না আমি চুপ। বেশ করেছি কথা বলেছি আরো বেশি করে কথা বলব।’
আমার বলতে দেরি হলো কিন্তু আমার উপর ঘূর্ণিঝড় আসতে দেরি হলো না। শয়তানের বাচ্চা নিবিড় কখন আমাকে সুইমিং পুলে কাছে এনে ঠেকিয়েছিল জানিনা ওর আমার দু কাঁধে ধাক্কা মেরে সুইমিং পুল এ ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিল।
আচমকা পড়ে যাওয়াতে আমি ভয় আর রাত তার মধ্যে পানি ঠান্ডা সব মিলিয়ে ঠান্ডা পানিতে পরে আমি চিৎকার করে উঠলাম।
#চলবে….
#অবাধ্য_প্রেম
#পর্ব_২৬
#নন্দিনী_নীলা
গ্রামের মেয়ে আমি এজন্য সাঁতার আমি ভালই পারি কিন্তু এইখানে পড়ে যেন আমার জ্ঞান শূন্য হয়ে পড়েছে। সাঁতার কাটতে ভুলে গেছি। ঠান্ডা আমার শীতল হয়ে আসছে আমি পানিতে পড়ে অনেকক্ষণ যাবৎ ভাবতে লাগলাম সাঁতার কিভাবে কাটতে হয়। কিছুই মনে করতে পারছি না আমি শুধু পানির মধ্যে দাপাচ্ছি সুইমিংপুলে পানি তো খুব গভীর হওয়ার কথা না। আমি হয়তো এখানে দাঁড়াতে পারব। আমি দাঁড়ানোর ট্রাই করলাম। কিন্তু ডুবে যাচ্ছি।
এদিকে নিবিড় পানির কাছে এসে চিৎকার করে বলল,, ‘ উঠতে পারছো না? আই থ্রট ইউ নিউ হাউ টু সুইম।’
নিবিড়ের সমস্ত কথা আমি শুনতে পাচ্ছি কিন্তু প্রতি উত্তর করতে পারছিনা। নিবিড় আবার বলে উঠল, ‘ শোন তোমাকে আমি এখান থেকে ওঠানোর ব্যবস্থা করতে পারি। কিন্তু তোমাকে কথা দিতে হবে। তুমি আমাদের বাসা ছেড়ে চলে যাবে। এখানে আর থাকবে না।’
আমি নিজেই ডুবে মরছি মরছি অবস্থা। সেই সময় নিবিড় আমাকে এই কথা বলছে। আমার খুব রাগ হলো আর অজান্তে আমি সাঁতার কেটে পরে চলে এলাম তারা দেখে নিবিড় অবাক গলায় বলল, ‘ তুমি সাঁতার পারো?’
‘ হা না পারার কি আছে?’
‘ তাহলে এতোক্ষণ পার না এমন ভাব করলে কেন?’
‘ আজব আমি পারি না ভাব কখন করলাম?’
‘ না উঠে হাবুডুবু খাচ্ছিলে কেন তাহলে?’
আমি নিবিড় কে পানির দিকে ইশারা করে বললাম ,, ‘ ওইদিকে দেখুন কেন হাবুডুবু খাচ্ছিলাম!’
নিবিড় ও বোকার মত তাকাতেই আমি নিজে সর্বশক্তি দিয়ে ধাক্কা মেরে নিবিড়কে পানিতে ফেলে দিলাম। নিবিড়কে ফালানোটা আমার সাকসেস হলেও নিবিড় যে এত শয়তান জানতাম না কখন যে আমার হাতটা ধরে নিলো জানি না আমাকে সহ পানিতে পড়েছে। দ্বিতীয়বার পানিতে পরে হাবুডুবু খাচ্ছি।
‘ আমাকে সাথে নিয়ে পানিতে পরার এত ইচ্ছা বললেই হত এতো এতো নাটক করার কি ছিল। প্রথমেই যদি বলতা আমিতো নিজে থেকে নেমে যেতাম তোমাকে এতো কষ্ট করতে হতো না আমাকে ধাক্কা দিয়ে।’
আমি নাক পাটা ফুলিয়ে বললাম, ‘ আপনি আমাকে আবার পানিতে ফেললেন কেন?’
‘ আমি কোথায় ফেললাম তুমিই তো আমাকে নিয়ে পড়লে।’
‘ একদম মিথ্যা কথা বলবেন না। আমি কখনো আপনাকে নিয়ে পরলাম? আপনি আমাকে চিটারি করে টেনে নামিয়েছেন নিজের সাথে। আমি তো শুধু আপনাকে একা ফেলতে চাইছিলাম….
বলেই জিভে কামড় দিলাম। ঢোক গিলে বললাম, ‘ না মানে আসলে আমি….
নিবিড় বলল, ‘ নিজেই তাহলে স্বীকার করলে।’
‘ হ্যাঁ আমি আপনাকে ইচ্ছে করেই ফেলেছি। কিন্তু তার জন্য দায়ী আপনি আমাকে কেন এখানে নিয়ে আসলেন কি জন্য পানিতে ফেললেন বলেন?’
‘কোন কারনে অবশ্যই আনছিলাম। তুমি কি আমার কথা শোনার প্রয়োজন বোধ করেছ?’
‘ আমি তো অনেকবার বলেছি আপনার কথা আমি শুনবো না। আমি আপনার সাথে কথাই বলবো না। তাহলে কেন আপনি আমাকেই কথা শোনাতে চান?’
নিবিড় আমার থেকে শান্ত দৃষ্টি ফেলে বলল, ‘ কাল তোমার প্রশ্নের জবাব দেব? এখন উপরে উঠে ভেতরে গিয়ে চেঞ্জ করে নাও।’
বলে নিবিড় আমার আগে উঠে গেল। আমি তো ও
উপরে এসে নখ কামড়াচ্ছে আর পায়চারি করছি। ভেজা শরীর নিয়ে বাসার ভেতরে ঢুকবো কিভাবে? সবাই যদি জিজ্ঞেস করে আমি ভিজলাম কি করে? আর আমার আগে তো নিবিড় নিশ্চয়ই বাসার ভেতরে চলে গেছে দুজনকে ভেজা দেখলে তো আরো রঙ কিছু ভাবতে পারে।
আমি অনেকটা সময় ওইখানেই দাঁড়িয়ে আছি। এভাবে ভেজা শরীরে থাকার ফলে হাঁচি আসছে শীত শীত ও করছে।
অবশেষে বাসার ভেতরে ঢুকার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম যে যা বলায় বলুক এইভাবে আমি কতখানি থাকবো আমাকে তো ভেতরে যেতেই হবে।
কি উত্তর দেয়া যায় সেসব ভাবতে ভাবতে যাচ্ছি। তখন দেখতে পেলাম নিবিড় বাসার বাইরে থেকে শুকনো পোশাক পড়ে ফোন টিপতে টিপতে এগিয়ে আসছে। আমি তো হা করে তাকিয়ে আছি। উনি ওদিকে থেকে আসছে কেন?
আমি শীতে কাঁপতে কাঁপতে ওনাকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘ আপনি ভেতরে এখনো জাননি?’
নিবিড় আমার আওয়াজ পেয়ে ফোন থেকে মাথা তুলে আমাকে এখনো ভেজা পোশাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলে, ‘ এখন এইভাবে দাঁড়িয়ে আছো কেন? তোমাকে না বললাম ভেতরে গিয়ে চেঞ্জ করে নিতে?’
‘ আপনি বাইরে থেকে আসলেন কেন সেটা আগে বলেন?’
নিবিড় আমার দিকের আগে দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে দেখে আমি নিজে আবার বলে উঠলাম, ‘ আমি তো ভাবছি আপনি ভিতরে গেছেন দুজনকে ভেজা পোশাকে দেখলে সবাই কি না কি ভাববে এজন্য আমি টেনশনের ভেতরে যেতে পারছি না।’
নিবিড় মাথায় হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করে রাগ নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে। নিবিড়ের রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে। এমন বোকা বোকা কথা শুনলে মন চায় তাকে ধরে একটা আছাড় মারতে।
আমি শুকনো ঢোক গিলে আবার আমতা আমতা স্বরে বললাম, ‘ কি হয়েছে কি ভাবছেন?’
‘ তোমাকে এখন আমার কি করতে মন চাইছে জানো?’
‘ না তো।’
‘ আবার প্রশ্ন করছে তুমি যাতে বাসায় ঢুকতে পারো সমস্যা না হয়। এজন্য আমি বাইরে চলে গেলাম ফ্রেন্ডের বাসায় থেকে আমি পোশাক চেঞ্জ করে আসলাম। আর তুমি এখনো ভিতরে যাও নাই বাইরে দাঁড়িয়ে আছো। তুমি এবার বলো আমার তোমাকে কি করতে মন চাইতে পারে।’
আমার কথা চিন্তা করে নিবিড় বাসার বাইরে চলে গিয়েছিলে। কেমন যেন একটা শিহরণ বইয়ে গেল আমার মনে। আমি কাঁপা কাঁপা চোখে নিবিড় দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি।
নিবিড় কি যেন বলছে আমায় আমি সেসব শুনছি না আমি তো অবাক বৃষ্টিতে নিবিড় কে দেখছি। খুঁটিয়ে খুটিয়ে দেখছি। সব সময় এই মানুষটার সাথে ঝগড়া করি আজকে তাকে আমি গভীর দৃষ্টিতে লক্ষ্য করছি।
নিবিড়ের কোন কথার আমি উত্তর দিচ্ছি না বলে নিবিড় আমার বাহুতে ধরে ঝাঁকুনি দিয়ে বলল,, ‘ হোয়াটস হ্যাপেন্ড! হাবলার মতো তাকিয়ে আছো কেন যাও ভেতরে যাও!’
আমি মাথা নেড়ে পেছনে ঘুরে হাঁটতে শুরু করলাম। কিছু দূরে গিয়ে পেছনে তাকিয়ে দেখিয়ে নিবিড় আবার বাইরের দিকে চলে যাচ্ছে। বাসার ভেতরে এসে দেখি তাহমিনা আপু চলে যাবার জন্য বের হচ্ছে আমাকে ভেজা শরীরে ভেতরে প্রবেশ করতে দেখে জিজ্ঞেস করে ওঠে, ‘ছোয়া তুই এই সময় ভিজে আসলে কোথা থেকে?’
আমি ঢোক গিলে বলি, ‘ বাগানের দিকে গেছিলাম ভুল করে সুইমিং পুলে পড়ে গিয়েছিলাম।’
আমার কথা শুনে অধিকাংশ মানুষ এখানকার হেসে উঠল।
আপু বলল, ‘তুই ঠিক আছিস?’
‘ হুম শুধু রাতে পানিতে পড়ার জন্য শীত করছে।’ বলতেই আমি হাঁচি দিয়ে উঠলাম।
‘ঠান্ডাও তো লাগিয়ে ফেলছিস! সাবধানে যাবিনা।’
‘ তুমি কি চলে যাচ্ছ আপু?’
‘ হুম।’
পাশে রাফসান কাকা দাঁড়িয়ে বলছে, চলো তোমাকে আমি পৌঁছে দিয়ে আসি। আর ছোঁয়া তুমি রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নাও। এভাবে থাকলে ত অসুস্থ হয়ে যাবে।’
আমি সম্মতি জানিয়ে আপুর দিকে তাকিয়ে বললাম, ‘ আচ্ছা আপু তাহলে তুমি যাও পরে তোমার সাথে কথা বলবো নি।’
বাসার প্রত্যেকটা মেম্বার আমার দিকে সার্কাস দেখার মতো তাকিয়ে আছে আমি সবার থেকে এক নজর তাকিয়ে দ্রুত পায়ে উপরে চলে এলাম।
.
মাথা ঝিমঝিম করে রাত দুটো আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল। ফ্লাক্সে আমি চা ভরে রেখেছিলাম। হাঁচি দেওয়ার জন্য আমি আদা চা খেয়েছি যাতে ঠান্ডা না লাগে এখন তো মনে হচ্ছে জ্বর চলে আসবে। এক কাপ চা নিয়ে আমি রুমের থেকে বেরিয়ে ছাদের মাঝামাঝিতে গিয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছি। অন্ধকার পরিবেশ। পরিবেশটা সুন্দর রোমাঞ্চকর। যেহেতু আমি এত ভুতে ভয় পাই না তাই এখানে আমার মোটেই খারাপ লাগছে না। উল্টো দারুন লাগছে। মৃদু মিত বাতাস বইছে আমার জ্বরের শরীরে এই বাতাসটা শীতের দিনের মতো কাটা দিয়ে উঠছে। বাতাসে আমার প্রত্যেক টা লোক খাড়া হয়ে যাচ্ছে। আর আমার মনে হচ্ছে আমি শীতের দিনে যেমন কুয়াশাচ্ছন্ন শীতল রাতে ধোঁয়া ওঠা চা খাচ্ছি শরীরটা চাঙ্গা করার জন্য। কিন্তু ডিফারেন্স একটাই আমার কাছে এই চা টা বিষের মত লাগছে আর কিন্তু সেই সময়কার চাটা লাগে অমৃতার মত থাকে।
জ্বরের মুখে চা একদম তিতা বিষ লাগছে।
পেছন থেকে একটা ভরাট গলায় আওয়াজ আসলো, ‘ মাঝরাতে এখানে দাঁড়িয়ে ভূতদের সাথে চায়ের আড্ডা বসিয়েছো নাকি? ‘
এমন মধ্যরাতে কারো আচমকা কন্ঠ শুনে আমি চমকে পেছনে তাকিয়ে নিবিড় কে দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বললাম,, ‘ হ্যাঁ তাই। আপনিও আমার মতো ভূতের সাথে আড্ডা দিতে আসছেন?’
নিবিড় বলল, ‘ হ্যা। আমাকেও এক কাপ দাও তো। না হলে তো জমবে না আড্ডা।’
#চলবে…….
#অবাধ্য_প্রেম
#পর্ব_২৭
#নন্দিনী_নীলা
নিবিড়ের কথা শুনে আমি হাসি হাসি মুখ করে তাকিয়ে বললাম, ‘ আচ্ছা আপনার চা লাগবে? ‘
নিবিড় রেলিং এ ওঠে বসে পরল। আমি তা দেখে গালে হাত দিয়ে অবাক স্বরে বললাম, ‘ পরে যাবেন।’
নিবিড় আমার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে আমাকে অর্ডার করলো, ‘ চা দাও।’
আমি হাসিখুশি মুখে বললাম, ‘ ওয়েট আমি নিয়ে আসছি।’
নিবিড় ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল, ‘ কোথা থেকে নিয়ে আসবে তুমি তো ফ্লাক্স এখানেই রেখেছো।’
‘ রুমে আরেকটা জিনিস ফেলে এসেছি দাঁড়ান কাপটা নিয়ে আসি।’
বলে আমি ফ্লাক্সটা হাতে নিয়ে রুমের দিকে হাটা ধরলাম নিবিড় আমাকে বাধা দিয়ে বলল, ‘ফ্লাক্স নিয়ে যাচ্ছো কেন? কাপটা নিয়ে আসো শুধু।’
‘না না, তার দরকার না আমি রুম থেকে না হয় একবারে ঢেলে নিয়ে আসবো আপনার জন্য।’
কিছু বলতে গিয়ে বলতে পারল না নিবিড়। আমি হেলে দুলে রুমের ভেতরে চলে এলাম তারপর দূরে থেকেই নিবিড় কে ডেকে উঠলাম,, ‘ আপনি একাই চা খেয়ে ভূতের সাথে আড্ডা দিন আমি ঘুমাই। আপনার সাথে আড্ডা দিয়ে আমি টাইম ওয়েস্ট করতে পারব না। এমনিতেই জ্বরে কাবু হয়ে আছি আপনার জন্য। এখন আমি আবার আপনার সাথে আড্ডা দেবো ভাবলেন কি করে কখনো না।’
বলেই ঠাস করে দরজা লাগিয়ে দিলাম নিবিড় হতবাক চোখে আমার বন্ধ দরজা দিকে তাকিয়ে আছে।
নিবিড় বিস্ময়ে হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে এইভাবে অপমান করবে হাসিমুখে সেটাও কল্পনাও করেনি ও। বিকেলে পানিতে ফেলানোর জন্য যে ছোঁয়া রেগে আছে সেটা নিবিড় জানতো। কিন্তু তারপর ওকেও পানিতে ফেলেছিল ও ভেবেছিল তারপর হয়তো বা রাগ কমে গেছে। কারণ এখানে আসার পর ছোঁয়ার সাথে কথা বলে ওর একটু মনে হয় নাই ছোঁয়া যে ভেতরে ভেতরে এখনো আগুন হয়ে আছে। সামনাসামনি এত হাসি খুশি শান্তভাবে কথা বলছিল যে ও ভেবেছিল যে হয়তোবা এখন ঝগড়া করতে চায়না।
তাই ও নিজেও আর ঝগড়া করা মত কিছু করেনি নিজের সুন্দরভাবে কথা বলেছে। এমনিতেই ওর নিজেরও ঘুম আসছিল না মাথাটা ভার হয়ে আছে। রাতে ভেজার জন্য এমন হয়েছে। ছোঁয়াকে ফেলে ভুল করেছে ও এখন বুঝতে পারছে রাগের মাথায় থেকে কি করে ফেলে নিজেই বুঝতে পারেন। ভেবেছিল কালকে সরি বলে দেবে ছোঁয়া কে। কিন্তু উপরে এসে যখন দেখতে পেল ছোঁয়া না ঘুমিয়ে জেগে আছে। ও ভেবেছিল আজকের শত্রুর সাথে ঝগড়া না করে একটু মিত্র করা যাক। আড্ডা দেওয়া যাক এক ফাঁকে সরি বলে কেটে পড়বে।
কিন্তু ওকে ফাঁকি দিয়ে ছোঁয়া আগে পালিয়েছে।
ও কি বেশি অসুস্থ নাকি বেশি জ্বর নাকি একা একা থাকছে একবার জিজ্ঞেস করবো? নিবিড় লাভ দিয়ে নেমে চিলেকোঠার দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। দরজায় টোকা মেরে বলল, ‘ ছোঁয়া তুমি কি বেশি অসুস্থ ডাক্তার লাগবে?’
কয়েকবার ছোঁয়া কে ডেকে যখন কোন সারা পেল না বিরক্ত হয়ে চলে গেল কিন্তু মনের মধ্যে টেনশন থাকলো বেশি অসুস্থ নাকি আবার অজ্ঞান টোজ্ঞান হয়ে গেল না তো।
পরদিন সকালে ছোঁয়ার খোঁজ নেবে ভেবে নিচে গিয়ে শুতেই ঘুমিয়ে পরল।
ঘুম ভাঙলো আবিরের ধাক্কা খেয়ে। চোখ কচলাতে কচলাতে বিরক্ত হয়ে আবিরের দিকে তাকিয়ে বলল,, ‘সাত সকালে আমাকে জ্বালিয়ে মারছিস কেন? সর এখানে থেকে একদম বিরক্ত করতে আসবি না তাহলে কিন্তু মার খাবি।’
‘ ভাই এখনো তোর কাছে সাতসকালে মনে হচ্ছে। বারোটা বাজে এবার তো উঠ একটু পর তো সন্ধ্যা হয়ে যাবে। আবার ঘুমানোর টাইম হয়ে আসছে।’
নিবিড় বারোটা বাজে শুনেই লাফিয়ে উঠে বসে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে আসলেই তো বারোটা বাজে। ওর তো মনে হয়েছিল এখনো সকাল ছয়টা বাজে।
নিবিড় এতক্ষণ এত আগে উঠানোর জন্য আবিরকে ধমকাচ্ছিল এখন আবীরকে ধমক দিয়ে বলল,, ‘ তুই আমার আগে ডাকিস নি কেন কত বেলা হয়ে গেছে আজকে আমার একটা দরকারি কাজ ছিল সকালে।’
আবির বলল, ‘ এতক্ষণ বকতেছিলে আগে উঠিয়েছি বলে। আর এখন বকতেছো আগে উঠাইনি বলে তুমি কি সবকিছুতে আমাকে খালি বকার সুযোগ খোঁজ?’
‘ সর তো সামনে থেকে।’
আবিরকে সামনে থেকে সরিয়ে ওইভাবেই রুম থেকে বেরিয়ে আসতে ছিল নিবিড় পেছন থেকে আবির ডেকে উঠে বলল, ‘আরে ভাইয়া এমন ভাবে হাইফাই হয়ে কই যাচ্ছ? ফ্রেশ হবে না পোশাক পড়বে না?’
‘ তোর সেসব ভাবতে হবে না। নিজের কাজে যা তো!’
নিবিড় বের হতে গিয়ে আবার পাশের সোফা থেকে গেঞ্জি উঠিয়ে গেঞ্জি পরতে পরতে ছাদে চলে এলো। আবির শয়তান কম না পেছনে পেছনে এলো লুকিয়ে। নিবিড় কোন দিকে না থাকে একদম ছোঁয়ার রুমের সামনে এলো। কিন্তু রুমে তালা লাগানো দেখে চমকে উঠল।
‘জ্বর শরীরে রুমে তালা দিয়ে কোথায় গেল? শুক্রবার আজকে তো আর কলেজ নাই।’
বিরবির বলে করে বলছে আর তালা ধরে তাকিয়ে আছে তালার দিকে। আবির ভাইয়ার দিকে এগিয়ে এসে বলল, ‘ ভাবি আপু তো সেই সকালে কোথায় যেন চলে গেছে।’
নিবিড় হতবিহ্বল কন্ঠে বলল, ‘ হোয়াট? ভাবি আপু মানে কি পাগল কুকুরে কামড়েছে নাকি তোরে।’
‘ তার আগে বলো তুমি আপুকে খুজতেছো কেন? কি দরকার সাত সকালে তারে?’
‘ তুই আমাকে ফলো করা শুরু করছিস তুই আমার পেছনে পেছনে লুকিয়ে আসছিস কেন?
‘ লুকিয়ে আসবো কেন? আমি তো তোমার সাথে সাথে আসলাম।’
নিবিড় আবিরের কান মুচড়ে ধরে বলল, ‘ খুব পাজি হয়েছিস তাই না বড় ভাইয়ের পেছনে গোয়েন্দাগিরি করা।’
‘ ভাইয়া লাগছে ছাড়ো প্লিজ।আমি তো তোমাকে হেল্প করলাম খবরটা দিয়ে।’ ছেড়ে দেওয়ার কথা বলে লাফাতে লাফাতে আবির বলল।
নিবিড় বলল, ‘ আমার পিছনে গোয়েন্দাগিরি করতে আসলে কান কেটে দিব।’
আবির আর্তনাদ করে বলল, ‘ আচ্ছা আসবা না ছাড়ো আমার কান।’
নিবিড় আবিরের কান ছেড়ে দিল আবির দৌড়ে নিচে চলে এলো।
.
সকালের দিকে জ্বর কমে আসে আমার। কাকা আমার সাথে দেখা করতে আসে আমাকে জানায় গতকাল রাতে নাকি তাহমিনা আপুর কথা নাকি বাসার সবাইকে জানিয়ে দিয়েছে। সেদিন তাহমিনা আপুকে দেখেছে সবাই সবারই নাকি আপুকে পছন্দ হয়েছে। এই দিক থেকে কারোরই আপত্তি নাই তাদের বিয়েতে শুধু এখন তাহমিনা আপুকে রাজি করানোর পালা। আজকে নাকি বাড়ির কয়েকজন তাহমিন আপুর সাথে দেখা করতে যাবে। সেখানেকাকা আমাকেও নিয়ে যেতে চায়।
আমি যখন বলি,, ‘ তারা তো আমাকে পছন্দ করে না কাকা আমাকে কেন নিয়ে যেতে চান। আপনারাই যান আপু নিশ্চয়ই রাজি হয়ে যাবে দেইখেন।’
‘সেটা আমি দেখে নেব কেউ কিছু বলবে না তোমাকে। তুমি প্লিজ চলো তাহমিনার ওদের সাথে কথা বলতে আনইজি লাগবে তুমি থাকলে ভালো লাগবে। ‘
এত করে অনুরোধ করলে কি আর আমি রাজি না হয়ে পারি। তাদের সাথে চলে আসি। এদিকে তাহমিনা আপু তো সেই খুশি রাফসান কাকার পরিবার তাকে কনভেন্স করানোর জন্য এত চেষ্টা করছে এটা সে সত্যি কল্পনা করেনি। এসব দেখে আপু খুশিতে কেঁদে দিয়েছে। আর ও মনে মনে রাজিও হয়েছে কিন্তু মুখে বলেনি।
আমি সবার আড়ালে একবার আপুকে জিজ্ঞেস করি, ‘ আপু এবার প্লিজ রাজি হয়ে যাও। সবার কতো চেষ্টা করছে দেখো সবাই চাই তুমি কাকার কাছে ফিরে যাও। আর কাকাও কত কষ্ট পাচ্ছে তুমিও কষ্ট পাচ্ছ। এবার সবাই একটু সুখে থাকো আর কতদিন কষ্ট করবে একা একা।’
‘ আমি চাইলেও আর উনাকে ফিরিয়ে দিতে পারবো না রে ছোঁয়া। উনাকে ফিরিয়ে দেওয়ার সাধ্য আমার আর নাই।’
‘ তারমানে তুমি রাজি। ‘
আপু লজ্জা মিশ্রিত কন্ঠে বলল হ্যাঁ। আমিতো ইয়াহু বলা আপুকে জড়িয়ে ধরলাম। আপু বলল, ‘ চিৎকার করিস না সবাই আছে।’
‘কাকাকে খবরটা দিলে কাকা ত খুশি তে অজ্ঞান হয়ে যাবে।’
#চলবে….