#অবাধ্য_প্রেম
#পর্ব_৩৮,৩৯
#নন্দিনী_নীলা
৩৮
দরজা লাগিয়ে নিবিড় আমার সামনে এসে দাঁড়াতেই আমি দ্বিতীয়বারের মতো নিবিড়ের গালে থাপ্পর মারলাম। নিবিড় আমার হাতে থাপ্পড় খাওয়ার সাথে সাথে দুহাত আমাকে আবদ্ধ করল নিজের বুকের মাঝে শক্ত করে।
আমি আচমকা নিবিড়ের এমন আক্রমণে থত মত খেয়ে গেলাম। এমন ভাবে জরিয়ে ধরেছে যে আমি নড়াচড়া করতে পারছি না আমার হাঁসফাস লাগছে।
আমি দাঁতে দাঁত চেপে নিবিড়কে বললাম, ‘ ছাড়ুন আমাকে। আপনার মত বেহায়া লোক তো আমি দুটো দেখিনি। এত কিছুর পরও আপনি আমাকে রুম এনে দরজা আটকে আবার জড়িয়ে ধরেছেন। আপনার সাহস তো কম না। এত নির্লজ্জ বেহায়া লোক আমি আর একটাও দেখিনি।’
কথাগুলো আমার বেজে বেজে আসছে। এমন ভাবে জড়িয়ে ধরেছে যে আমি কথাগুলো বলতেও পারছি না। তবু আমি অনেক কষ্ট করে কথাগুলো বললাম। কিন্তু নিবিড়ের তাতে কোন হেলদোল আছে কিনা আমি জানিনা। আমার কথাগুলো সে আদো শুনেছে কিনা কে জানে। তিনি তো আমার কাঁধে এমনভাবে মুখ ঠেকিয়ে রেখেছে মনে হচ্ছে সে আমার শরীরের উপরে ঘুমিয়ে পড়েছে।
তার শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় অতিরিক্ত বেশি লাগছে। তার শরীর থেকে গরম তাপ যেন আমার শরীর পুড়িয়ে দিচ্ছে। উনার শরীর এত গরম কেন? আমি তো এইভাবে আর কিছুক্ষন থাকলে মনে হয় এখানে ছারখার হয়ে যাব গরমে আমার হাঁসফাস লাগছে। দম বন্ধ হয়ে আসছে। অনেক কষ্টে নিবিড় কে ঠেলে ঠুলে আমি তাকে সরাতে অবশেষে সক্ষম হলাম। তিনি নিজেই আমাকে ছেড়ে দিয়েছে। আমার ধাক্কা আর লাফালাফি সে হয়তো কুলাতে পারেনি। আমি তার থেকে অনেকটা দূরত্ব নিয়ে দাঁড়িয়ে কিছু বলতে যাব সে বিছানায় গিয়ে ধপ করে শুয়ে পড়ল।
আমি রেগে কয়টা কথা বলে দরজা খুলে বেরিয়ে আসতে গেলাম। একি দরজা খুলছে না কেন? খোলার সর্বোচ্চ চেষ্টা করে দুইটা লাথি পর্যন্ত মারলাম। কিন্তু দরজা কোনভাবেই খুলল না। নিবিড় শিওর কিছু করেছে। আমি রেগে বিছানার কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম। নিবিড় চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে।
‘ দরজা খুলছে না?’
নিবিড় লাল বর্ণ চোখে আমার দিকে তাকালো। তার এই দৃষ্টি বলে দিচ্ছে সে কতটা অসুস্থ। কাল রাতে যখন আমার সাথে নাচানাচি করলো তখন তো সুস্থ ছিল না। রাতের ভেতরে এত অসুস্থ হয়ে গেল কিভাবে? তার অসুস্থ বিষন্ন মুখ দেখে আমার মায়া হলো কিন্তু তবুও আমি সেই মায়া, দুর্বলতা কে প্রকাশ করতে দিলাম না। কঠিন স্বরে বললাম, ‘ দরজা খুলে দেন। আমি বের হবো।’
নিবিড় অসুস্থ গলায় বলল, ‘ আমি অসুস্থ ছোঁয়া। তুমি আমাকে এই অবস্থায় একা ফেলে চলে যাবে?’
আমি রাগে ফেটে যাচ্ছিলাম নিবিড়ের কথা শুনে বিস্মিত গলায় বললাম, ‘ আমি থাকলেই মনে হয় আপনি সুস্থ হয়ে যাবেন ম্যাজিকের মত। আর বাসার কাউকে রুমে ঢুকতে দিচ্ছেন না কেন? কাউকে সাড়া দিচ্ছেন না কেন? অসুস্থ হয়ে গুমড়ে মরছেন দরজা আটকে। এখন আমাকে অসুস্থতা দেখাচ্ছে।’
‘ সবাই বিয়ে নিয়ে ব্যস্ত আমার দিকে খেয়াল রাখার কারো সময় নাই।’
‘তো আমি কি আপনার খেয়াল রাখার জন্য বসে আছি নাকি। আমিও বিয়ে নিয়ে ব্যস্ত, বের হতে দিন আমাকে। দরজা খুলেন।’
নিবিড় বলল, ‘ সরি এখন তোমাকে বের হতে দেওয়া যাবে না। ওইখানে খাবার আছে আমাকে খাইয়ে দাও আগে তারপর আমাকে ওষুধ খাওয়াবে। তারপর তুমি যেতে পারবে।
আমি চোখ দুটো বড়ো বড়ো করে ফেললাম কথা শুনে।
আমি অবাক গলায় বললাম, ‘ আমি আপনাকে খাইয়ে দেব?’
‘ হুম। ‘ বলে নিবিড় উঠে পরল বিছানায় থেকে। তারপর বাথরুমে ঢুকে চোখে মুখে পানি দিয়ে এলো। এদিকে যে আমি চিৎকার চেঁচামেচি করছি সেদিকে পাত্তাই দিচ্ছে না। আমি নিজেই আবার থেমে গেলাম কারণ বাইরে আবার চলে যাবে খুব জোরে চিল্লাচ্ছি। আমাকে চুপ করে যেতে দেখে নিবিড় শুকনো মুখেও হেসে বলল, ‘ আমার চিন্তায় কি তুমিও রাতে ঘুমাওনি?’
আমি কটমট চোখে উনার দিকে তাকিয়ে বললাম, ‘ আমি আপনার জন্য চিন্তা করব। এমন আজাইরা ভাবনা ভাবার টাইম নাই আমার। আপনাকে এখন আমার কি করতে মন চাচ্ছে জানেন?’
নিবিড় আমার সামনে এসে দাড়িয়ে আমার দিকে ঝুঁকে বলল, ‘ জানি। অসুস্থ মানুষের সেবা করতে ইচ্ছা করছে। আসো আমাকে খাইয়ে দিয়ে সেবা করবে।’
বলে নিবিড় আমার হাত ধরে টেনে বিছানায় নিয়ে বসিয়ে দিল। আর আমার হাতে দিল খাবারে প্লেট। নিজেও বসে পরল খাওয়ার জন্য। আমি খাবারে প্লেটের দিকে তাকিয়ে বললাম, ‘ এই রুমে খাবার আসলো কীভাবে?’
‘খাবার যেভাবে আসে সেভাবে আসছে।’
আমি সন্দেহ চোখে তাকিয়ে বললাম, ‘আপনি তো দরজায় খুলেন নি কালকে থেকে তাহলে আপনার রুম গরম খাবার কিভাবে আসলো? আবার দুই ভাই মিলে আমাকে বোকা বানিয়ে বানালেন! আপনার মা তাহলে ডাকল কেন?’
নিবিড় প্রশ্নের উত্তর দিল, ‘সত্যি কথা তো। তুমি জানো কাল রাত থেকে জ্বরে আমি কতটা কষ্ট করেছি। ছটফট করেছি। জ্বরের ঘোরে ও তুমি আমাকে থাপ্পর মারছিলে রাগি রাগি চোখে আমার দিকে তাকাচ্ছিলে। রাতটা আমার ছটফট করে কাটলো, সকালে আবির এসে আমাকে ডাকাডাকি করে বাড়ির সবাই ডাকাডাকি করে আমি দরজা খুলি নাই। আমি তো তোমার অপেক্ষায় ছিলাম। ও যখন তোমার কথা বলে তখনই দরজা খুলে দেয়। আবির কায়দা করে আমাকে দেখে নেই যে আমার শরীরে জ্বর তারপর ওষুধ খাবার দিয়ে যায়। দ্বিতীয়বার দরজা খোলার সময় বলে তোমাকে সাথে করে নিয়ে এসেছে। আর আগেরবার বলে যায় তোমাকে নিয়ে এসেই দরজা ধাক্কা দিবে। তো আমি বোকার মতো বিশ্বাস করি দরজার খোলার পরে ওসব দিয়ে রেখে চলে যায়। তোমাকে পায় না তাই ওর উপর খুব রাগারাগি করি। এবার ও বলেছে এবার তুমি নাকি দরজা ধাক্কা দেবে আসলেই তাই হলো।’
‘আপনি কি পাগল? এই অবস্থায় আপনি একা রুমের ভেতর দরজা আটকে বসেছিলেন। আপনার আম্মুকে দেখলাম কত দুশ্চিন্তা করছে বিয়ে বাড়ি হয়তো এজন্য কেউ এতটা খেয়াল করছে না। কিন্তু আপনার উচিত ছিল তাদেরকে জানানো। আর খাবার, ওষুধ খাওয়া। এরকম পাগলামি কেউ করে?’
‘ তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও। আগের মত আবার আমাকে বিশ্বাস করো। তাহলে আমি আর এরকম পাগলামি করবো না।’
‘ ইম্পসিবল আপনি মরে গেলেও আপনাকে আমি বিশ্বাস করব না।’
‘আমি মরে গেলে তুমি খুশি হবে?’
‘ শুনুন আপনার সাথে আমি ফালতু প্যাচাল পারতে পারবো না। আপনি দরজা খুলুন আমি চলে যাব। আপনার সাথে আমি কোন কথাই বলতে চাই না।’
‘তুমি যদি এখন আমাকে ক্ষমা না করে ছেড়ে চলে যাও আই প্রমিজ আমি কিন্তু নিজের ক্ষতি করে দেব।’
‘ আপনার যা খুশি তাই করেন।’বলে আমি বিরক্তকর একটা নিঃশ্বাস ফেলে দরজার দিকে যেতে লাগলাম। নিবিড় নিজের হাতের রিমোট দিয়ে দরজা ওপেন করে দিল। তারপরে চিৎকার করে বলল, ‘ দরজা খুলে দিছি এবার তুমি যেতে পারবে। কিন্তু যাওয়ার আগে তোমাকে একটা সারপ্রাইজ দিতে চাই। সারপ্রাইজটা না হয় দেখে যাও।’
দরজার কাছে গিয়েও আমি কেন জানিনা নিবিড়ের কথা শুনে পেছন ফিরে তাকালাম। আর পেছনে ফিরে আমি আঁতকে উঠলাম। নিবিড় এর হাতের ছুরি। ছুরি হাতে নিজের শিরা কাটার জন্য প্রস্তুত হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। জ্বরে কি এই লোকটার মাথা খারাপ হয়ে গেল নাকি।
আমি দরজা খোলা বাদ দিয়ে আবার ভেতরের দিকে এগোতে এগোতে বললাম, ‘আরে আরে কি করছেন? মাথা ঠিক আছে তো আপনার! ছুরি ফেলুন! একদম আমাকে ভয় দেখিয়ে কিছু করানোর চেষ্টা করবেন না। ভালোবেসে মন থেকে তো কিছু করাতে পারেন না। শুধু পারেন থ্রেট দিতে আর ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করতে তাই না।’
নিবিড় আমার কথার প্রেক্ষিতে বলল, ‘আমি কিন্তু তোমাকে এখন রাজি করানোর জন্য হাত কাটছি না। আমি হাতটা এখন কেন কাটবো জানো?’
আমি বললাম কেন?
‘আমি সত্যি তোমার ইগনোর আর অবহেলা ঘৃণা টা মেনে নিতে পারছি না। এভাবে থাকলে আমি এমনিতেই দুমড়ে মরে যাব। আর এই জ্বরটা কিন্তু তোমার জন্য এসেছে তোমার কাছ থেকে কালকে আঘাতটা পেয়ে আমি সহ্য করতে পারিনি। এজন্য আমি এমন বিছানায় পড়ে আছি। আর এইভাবে তুমি যদি আমাকে ঘৃণা করতেই থাকো তাহলে আমি জানি আমি বেঁচে থেকেও মরে যাব। এইভাবে বেঁচে থাকার থেকে তো মরে যাওয়াই ভালো তাই না। এই কি বললে আমি সবসময় তোমাকে থ্রেট আর ইমোশনাল ব্ল্যাকমেল করি। তুমি কি আমাকে ভালোবাসা সুযোগটা দিয়েছো? আমার অনুভূতি গুলো বোঝানোর আমাকে কি সুযোগ দিয়েছো? একটু প্রকাশ করতে গিয়েছি কি আর তুমি আমি আমাকে নাকানি-চুবানি খাওয়াচ্ছ। একটা সুযোগ দিয়ে দেখাও। নিবিড় বলতে তুমি অজ্ঞান থাকবে। নিবিড় ছাড়া তুমি কিছুই বুঝবে না। সেটা করতে জাস্ট আমার এক মাস লাগবে। আমাকে আমার মত ভালবাসাটা বোঝানোর সুযোগ দিয়ে দেখাও একবার। তারপরও যদি তুমি আমার প্রতি কোন ফিলিংস না পাও তারপরে যাও তোমাকে আমি ছেড়ে দেব। আমি তার সাথেই সারাটা জীবন কাটাতে চাই যে আমাকে আমার থেকেও বেশি ভালবাসবে।’
#চলবে….
#অবাধ্য_প্রেম
#পর্ব_৩৯
#নন্দিনী_নীলা
‘ আচ্ছা, আচ্ছা। আমি আপনাকে খাইয়ে দিচ্ছি। ছুরিটা রাখুন। এমন বাচ্চাদের মতো জেদ, আর অহেতুক রাগ কেন করছেন সেটা আমার মাথায় ঢুকছেনা। এইসব কি সত্যি নাকি আপনার একটা নাটক সেটা আমি বুঝতে পারছি না। কি যন্ত্রণায় ফেঁসে গেলাম আমি।’ দাঁতে দাঁত চেপে কথাটা বললাম নিবিড়কে উদ্দেশ্য করে।
নিবিড় আমাকে প্লেট হাতে নিতে দেখে ছুরি রেখে আমার সামনে বসে বিশ্বজয়ের হাসি হাসলো। নিজের কাজে সফল হয়েছে হাসবেই তো। আমি চোখ কটমট করে তাকিয়ে আছি। দাঁতে দাঁত চেপে রাগ সংবরণ করে বিরিয়ানি লোকমা তুলে দিলাম নিবিড়ের মুখে। নিবিড় অপলক চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
‘ আপনি অন্যদিকে তাকান না হলে কিন্তু আমি চলে যাব। আর একটু ও খাইয়ে দিব না।’
‘ সেটা তুমি পারবেনা তাই ঢং না করে একটু তাড়াতাড়ি খাইয়ে দাও। আমার পেটে তো ইঁদুর দৌড়াচ্ছে।’পেটে হাত দিয়ে বলল নিবিড়।
আমি প্লেট নিবিড়ের কোলের উপর দিয়ে বললাম, ‘পারবো না আমি। আমি আপনার চাকর হই নাই। আর না আমি আপনার ঘরের বউ যে আপনি যা বলবেন, যা অর্ডার করবেন আমি তাই তাই করবো। সুইসাইড করার ভয় দেখিয়ে আমাকে দিয়ে খাইয়ে নিচ্ছেন তো। ভালো হবে না আপনার কক্ষনো ভালো হবে না আপনার। এখন আপনার পেটে ইঁদুর দৌড়াচ্ছে আপনি নিজে খেয়ে ইঁদুর থামান। আমি গেলাম।’
বলেই আর এক সেকেন্ড ওয়েট করলাম না গটগট করে দ্রুত পায়ে বেরিয়ে এলাম। নিবিড় কে কিছু বলার সুযোগ দিলাম না। তাহলে আরেকটা নাটক শুরু করে দেবে। এই ছেলেটা এতো নাটক বাজ হয়ে গেছে উফফ।
প্লেটের যেখান থেকে ছোঁয়া নিবিড় কে খাইয়ে দিচ্ছিল। সেই স্থানটার থেকে বিরিয়ানি নিয়ে খেতে লাগলো নিবিড়। ওর মনে হচ্ছে এখানে ছোঁয়ার হাতের স্পর্শ লেগে আছে। মনে হচ্ছে ছোঁয়া এখনো ওকে খাইয়ে দিচ্ছে। ছোঁয়া চলে যেতেই আবির রুমে এসে ঢুকলো। নিবিড়কে চোখ বন্ধ করে বিরিয়ানি খেতে দেখে আর মিটিমিটি করে হাসতে দেখে অবাক হয়ে বলল, ‘হোয়াটস হ্যাপেন ব্রো?’
নিবিড় চোখ বন্ধ অবস্থায় বলল, ‘ ছোঁয়া আমাকে খাইয়ে দিছে আবির।’
আবির চমকানো গলায় বলল, ‘ সত্যি! ভাবিকে তো দেখলাম রাগে গজগজ করতে করতে যাচ্ছে। আমার দিকে এমন ভাবে তাকাচ্ছিল চোখ দিয়ে আমাকে ভস্স করে দেবে।’
নিবিড় চোখ মেলে আবিরের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘ও তোর ভাইয়ের একমাত্র বউ। আর তোর একমাত্র ভাবি। এই বাড়ির বড় বউ। তার এতটুকু রাগ না থাকলে কিছু হয়?’
আবির ভাইয়ের কথা শুনে বলে, ‘ভাই তুমি ভাবির প্রেমে কবে পড়ছিলে বলো তো। তোমরা খালি ঝগড়া করতে আমাকে কিন্তু কাহিনী এখনো বলোনি। এবার বল তুমি ভাবির জন্য এমন দেওয়ানা হলে কিভাবে!’
‘তোর ভাবীকে প্রথম দেখেই আমি প্রেমে পড়ে গেছিলাম। যেখানে আমার সাথে টক্কর নেওয়ার কেউ সাহস পায় না সেখানে ও কিনা আমাকে ভয় না পেয়ে আমার সাথেই ঝগড়া লাগিয়ে দেয়। এতটুকু ভয় আমি ওর চোখে দেখিনি জানিস। ও আমার হাত থেকে আমার প্রিয় ফোনটা ঠাস করে ভেঙ্গে ফেলল। প্রথমে ওর ওপর আমার যতটাই রাগ উঠেছিল কিন্তু ওর একের পর এক সাহসিকতা দেখে তা আমি হতভম্ব হয়ে যাচ্ছিলাম। তুই জানিস আমি ওকে চড় মেরেছিলাম ও তবু ও একটু ভয় না পেয়ে আমার চোখে চোখ রেখে প্রতিবাদ করেছিল। তখন অবশ্য এটা ভালোবাসা ছিল না তখন জাস্ট ওর এই সাহসিকতা আমার কাছে বিস্ময় ছিল। ওর এই সাহসিকতার জেদ নষ্ট করার জন্য আমি ওকে একের পর এক ফাঁদে ফেলেছি কিন্তু কখনোই আমার সামনে মাথা নত করেনি সব সময় আমার সাথে পাল্লা দিয়ে গেছে। ঐই সময় তো আমি বিরক্ত হয়ে গেছিলাম কোনোভাবেই ওকে আমি হার মানাতে পারছিলাম না। কিন্তু সেই রাতে সেই রাতে যখন ওকে আমি একা রাস্তায় পাই ও বাসা থেকে পালিয়ে গেছিল বিপদে পড়েছিল সেই রাতে শুধু ওর উপর আমার কোন রাগ ছিল না। আমার সমস্ত রাগ কোথায় চলে গিয়েছিলাম জানিনা। সেই রাতে আমি অনুভব করি ছোঁয়ার উপর আমি দুর্বল হয়ে পড়েছি। ওকে পছন্দ করতে শুরু করেছি। তারপর সেটা আস্তে আস্তে ভালোবাসার রুপ নেয়। কিন্তু আমি তো বুঝতে পারি না আমি তো ওকে চিরশত্রু মনে করতাম সেখান থেকে অজান্তেই কখন যে আমার মনের রানী হয়ে গেল।’
.
সকালের নাস্তা আমার বারোটায় করা হলো। এদিকে বিয়ে বাড়ি বলে কথা। দূর দূরান্ত থেকে কথা আত্মীয়-স্বজন আসছে। কত নতুন মুখ। বাসার সাজ যেন সকালের মধ্যেই চেঞ্জ করে ফেলেছে। তাজা ফুল দিয়ে সজ্জিত হয়েছে চারপাশ। দারুন লাগছে। ফুলের গন্ধে মম করছে বাসাটা বাগানের দিকে তাকালে মুগ্ধতা এসে যায় একরাশ। তাজা ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে বর বউ এর জন্য করা স্টেজ।। তিনটা সোফা রাখা আছে। মাঝখানেরটায় হয়তো বর বউ বসবে ওইটা একটু বড় আর দুই পাশে দুইটা সিঙ্গেল সোফা। সাড়ে বারোটার সময় অনেকে সাজ পোশাক শেষ করে ফেলেছে। আর বাচ্চারা অনেকেই সোফা বিভিন্ন অ্যাঙ্গেল করে বসে বসে ছবি তুলছে। ক্যামেরাম্যান তো ভিডিও ছবি তোলা এখন থেকে স্টার্ট করে দিয়েছি। এ বাসার আত্মীয়-স্বজন কাউকে আমি দেখতে পাচ্ছি না সবাই হয়তো যার যার রুম সাজগোজ নিয়ে ব্যস্ত। বাইরে আর ভেতরে যারা আছে বসে আছে গল্প করছে সবাই আজকে এসেছে বিয়ের নিমন্ত্রণে।
একটা ঝুড়ি ভর্তি ফুল দেখতে পেলাম। একজনকে বলতে শুনলাম বাসর ঘর সাজানো হবে সেই জন্য ফুল এনে রাখা হচ্ছে এগুলো যেনো কেউ না ধরে।
আজকে তাহমিন আপু আমাকে জোর করে বলেছে আমি যেন তার সাথে সাজগোজ করি আর তাদের দেওয়া শাড়িটা যেন পরে আমি তাকিয়ে কাট করে না করে দিয়েছি আজকে আমি কোন শাড়ি পরবো না। আজকে আমি আমার একটা ড্রেস আছে নতুন অনেক গতবার আমি নতুন কিনেছিলাম ঈদের আগে। সেটাই পড়বো। আপু বলছিলাম আমি যেন তার সাথে এসে সাজগোজ করি। আমি বললাম আমাকে খুব বাজে লাগবে আপু। ওই ড্রেসের সাথে গর্জিয়াস সাজ খুবই খারাপ দেখা যাবে।। আর তুমি তো জানো আমি বেশি মেকআপ করি না। আর করলেও আমাকে ভালো দেখা যায় না আমাকে অত মেকাপে মানায় না। তার থেকে আমি যেভাবে থাকি থাকতে দাও। আপু আর কিছু বলার পেল না। কিবা বলবে বলার মত কিছু খুজেই পাইনি হয়তো।
কিন্তু একটা জিনিস আমাকে অবাক করলো নিবিড়ের মা আজকে কেমন যেন আগুন চোখে আমার দিকে তাকাচ্ছিল। যখনই দেখছিল যেন আমাকে খেয়ে ফেলবে না। আমি কি করেছি ওনার উনি আমার দিকে এমন কড়া চাহনি দিচ্ছে কেন? গোসল করেই আমি নিচে এসে লাঞ্চ করে গেছি। তারপরে উপরে গিয়ে আমি নিজের মত সাজগোজ করলাম। কিন্তু আজকের সাজটা ভালো হয়েছে কারণ আপুর সাথে সাজবো না বলে আপুর বিয়ের মেকাপ বক্স আমাকে দিয়ে দিয়েছে সাজার জন্য। আমি একেবারেই জন্য নেই আমি শুধু বলেছি আজকেই সাজবো তারপর তোমার জিনিস তোমাকে ফেরত দিয়ে দেব। আপু বলেছে আমার তো এসব ব্যবহার করাই হবে না আমি কি আর এমন সাজবো নাকি আর এখন সাজতে হলো কিন্তু পার্লারের লোক তো তাদের নিজেদের জিনিস দিয়ে আমাকে সাজিয়ে দেয়।
কালকের তুলনায় আজকে আমি একটু গর্জিয়াস সাজলাম কিন্তু অতটাও না আমি যতটুকু পারি বুঝি ততটুকুই সাজলাম তারপরে নিচে আসলাম।
বাসা একদম ফাঁকা সবাই বাগানে চলে গেছে। আর একটু পরেই বিয়ে পড়ানো হবে সন্ধার আগেই বিয়ে পড়াবে কারণ দূর দূরান্তের অনেক আত্মীয়স্বজন এসেছে তারা বিয়ে পড়ানো হলে চলে যাবে। আমি মেইন দরজা খুলে বাইরে বের হতে যাব তখনই একজোড়া হাত আমার হাত ধরে আমাকে আটকে দেয়। আমি পেছনে তাকাই ভয় পেয়ে আতকে। কিন্তু নিবিড় কে দেখে আমার ভয় কেটে একরাশ বিরক্তি এসে যায়। আমি নিবিড়ের দিকে বিরক্তিকর গলায় তাকিয়ে বলি, ‘ আবার শুরু করে দিয়েছেন হাত ছাড়ুন! সবাই বাগানে হইহুল্ল করছে। আপনি এখানে কি করছেন? আপনার প্রিয় কাকার না বিয়ে। তার বিয়েতে তার পাশে না থেকে…
‘ আমি তো তোমার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। তুমি আবার একা একা যদি না যাও। আগে জানতাম মেয়েরা সাজগোজ করতে দিন পার করে দেয়। আজকে সেটা নিজে চোখে দেখলাম। সবাই সাজগোজ করে চলে গেছে আর তুমি দেখো বিয়ে পড়ানো হয়তো শেষ হয়ে যাবে এই মুহূর্তে তোমার সাজগোজ শেষ হলো।’
‘ একদম ফালতু কথা বলবেন না। মোটেই আমার সাজগোজ করতে এত সময় লাগে নাই। আমার সাঁজতে পাক্কা পাঁচ মিনিট লাগে। আর সবার মত অত সাজিনি সবার মত সাজতে গেলে আজকে হয়তো আমি রুম থেকে বের হতে পারতাম না। আর আমি সাজতে গিয়েছি পরে সবাই তো সেই সকাল থেকে দরজা আটকে বসেছিল। আমি এইমাত্র গিয়ে এইমাত্র বেরিয়ে আসলাম।’
‘ আচ্ছা বুঝলাম তা তুমি কেন সকাল থেকে দরজা আটকে ওদের মতো সাজলে না?’
‘সেটা আমার ইচ্ছা আপনাকে আমি কৈফিয়ত দিতে যাব না অবশ্যই। এবার আমার হাত ছাড়েন। না হলে এবার আপনার জন্য সত্যিই হয়তো আমি গিয়ে দেখব কবুল বলার শেষ।’
‘শেষ হয়ে গেলে শেষ হয়ে যাবে। তুমি আর আমি কবুল বলে না হয় আমাদের বিয়েটা দেখে নেব।’ দাঁত কেলিয়ে বলল নিবিড়।
আমি কঠিন একটা ওয়ার্ড ব্যবহার করতে যাব তখনই নিবিড় একটা ফুল আমার সামনে ধরে। আমি ফুল দেখে বকাটা আর দিতে পারি না। ফুলের দিকে তাকিয়ে আছি অবাক হয়ে। প্রপোজ করবে নাকি এবার কপাল কুঁচকে ভাবছি। নিবিড় আমাকে অবাক করে দিয়ে ফুলটা আমার কানের পিছনে গুছিয়ে দিয়ে বলে, ‘ বাহ দারুন লাগছে তো। ‘
বলেই নিবিড় নিজের পকেটে থেকে ফোনটা বের করে আমার দুইটা ছবি তুলে। আর আমি কানে হাত দিয়ে হা করে নিবিড়ের দিকে তাকিয়ে আছি। নিবিড় আমার ছবি তুলছে আমি না করব সেটাও করতে পারলাম না। ও ছবি তুলে গান গাইতে গাইতে চলে গেল আমাকে ফেলে।
#চলবে….