অবাধ্য_প্রেম #পর্ব_৪৮,৪৯

0
1004

#অবাধ্য_প্রেম
#পর্ব_৪৮,৪৯
#নন্দিনী_নীলা
৪৮

নিবিড় যখন সজাগ হয়েছে তখন চোখ মেলে ও আর ছোঁয়াকে দেখতে পায় নি। চোখ মেলেও উদ্বিগ্ন চোখে এদিক ওদিক তাকাতে থাকে। একটা মেয়ে নার্স নিবিড়ের সামনে দাঁড়ায় নিবিড় কে চোখ মেলে এদিক ওদিক তাকিয়ে কাউকে খুঁজতে দেখে জিজ্ঞেস করে, ‘আপনি কি আপনার বাড়ির লোককে খুঁজছেন?’

নিবিড় মাথা নেড়ে সম্মতি দিল। নার্স স্বীকারোক্তি পেয়ে বাইরে চলে গেল কাউকে ডাকতে। নিবিড় চিন্তায় মগ্ন কতদিন পর প্রিয় মানুষটাকে কাছে পেলাম, তার চোখে নিজের জন্য অজস্র ভালোবাসা দেখতে পাচ্ছিলাম। কি সুখ সে অনুভূতিতে ছিল। ভালোবাসা’রা ডানা ঝাপটে নিবিড়ের চারপাশে ঘুরে বেড়াচ্ছিল!
সময়টা কোথায় হারিয়ে গেল? নিবিড়ের চিন্তার মাঝে নিবিড়ের মা হন্তদন্ত হয়ে রুমে আসে। এসে ছেলের পাশে বসে জিজ্ঞেস করে, ‘ নিবি আব্বু আমার কি হয়েছে তোমার? কোন সমস্যা তুমি নাকি আমাদেরকে খুঁজতে ছিলে। তোমার বাবা বাইরে বসে আছে ভেতরে আসতে চাইছিল। আমি বলেছি আমার ছেলের সাথে আমি দেখা করবো আগে। তুমি বাইরে বসে থাকা। ডাক্তার তো সবাইকে একসাথে ভেতরে আসতে দেয় না। জঞ্জাল হবে তোমার মাথায় চাপ পরবে।’

‘মম আবির কোথায়?’ নিবিড় সব প্রশ্ন সব কথা অগ্রাহ্য করে পাল্টা প্রশ্ন করল।

নিলাশা বেগম বলল, ‘আবির তো একটু বাইরে গেছে আসলে পাঠাবো নি। কোন দরকার আমাকে বলো!’

‘আবির কেই বলবো।’গম্ভীর স্বরে বলল।

নিলাশা বেগম আর নিবিড় কে কিছু জিজ্ঞেস করল না। ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে কপালে একটা চুমু দিয়ে বেরিয়ে এলো। তিনি জানেন নিবিড় কি জিজ্ঞেস করবে। মনে মনে ফুঁসলেও সামনে প্রকাশ করল না। গতকাল নিবিড় রে কাকা কাকি আত্মীয়-স্বজন অনেকে নিবিড়কে দেখে গেছেন। রাফসান কাকা ভিডিও কলে কথা বলেছে তারা আসতে চেয়েছিল কিন্তু ভিসা পাননি‌।
নিবিড়ের বাবা দেখা করে চলে গেল কথা বলেনি ছেলের সাথে। যত কথা কম বলা যায় ততই ভালো। আবির এলো আধা ঘন্টা পর আসতেই নিবিড় খুজেছিল খবর দিল। আবির নিবিড়ের কেবিনে এসে দেখলো নিবিড় চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে। আবির ভেবেছে নিবিড় হয়তো ঘুমিয়ে আছে। তাই রুমে এসে আবার ফিরে চলে যাচ্ছিল। কিন্তু নিবিড় তখন পেছন থেকে আবির কে ডেকে ওঠে। ভাইয়ের ডাক শুনে আবির, ফিরে এসে নিবিড়ের পাশে দাঁড়ায় নিবিড় ওর দিকে চেয়ে আছে।

নিবিড় আবিরের দিকে উদ্দেশ্য করে খুব শান্ত গলায় বলল, ‘ ছোঁয়া কোথায়?’

আবির একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। আবির জানতো ভাইয়া এই কথাই জিজ্ঞেস করবে। সেই মুহূর্তে ছোঁয়াকে ওইভাবে বের হতে দেখে আবির চমকে ওঠে। ছোঁয়া বলেছিল মম না আসা পর্যন্ত সে থাকবে আর ও নিচে এজন্যই ছিলাম যেন মম আসার আগে আমি তাদের সাবধান করে দিতে পারি। ওখান থেকে সরিয়ে ফেলবো। কিন্তু ঘন্টা খানিকের মাঝে ছোঁয়া বেরিয়ে যায়। আমি তার পিছু যায় জিজ্ঞেস করি কি হয়েছে?

‘কিন্তু সে একটা কথা বলে, ‘ তুমি তোমার ভাইয়ের কাছে যাও। তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। নার্সরা ঠিকমত কেয়ার করে না। আমাকে গাফিলতি জন্য তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন আমার সেখানে থাকা ঠিক হবে না। তুমি তার পাশে থেকো। এক মিনিটের জন্য ও এ ছেরে সরোনা।’

তারপর আর একটা কথা না বলে রিক্সা নিয়ে চলে যায় আবির মাথামুণ্ডু কিছুই বুঝতে না পেরে হসপিটালে ফিরে আসে। উপরে এসে ডাক্তার থেকে জানতে পারে বেশি কথা বলার পরে নিবিড় অসুস্থ হয়ে পড়ছিল মাথায় টান লেগেছিল এজন্য ঘুমের ইনজেকশন দেওয়া হয়েছে ২-৩ ঘণ্টা এখন নিবিড় ঘুমিয়ে থাকবে। আবির তখন বুঝতে পারে নিবিড়ের অসুস্থ হওয়ার জন্য ছোঁয়া নিজেকে দোষী করে চলে গিয়েছে।

ভাইকে আর কি বলবে সংক্ষেপে সবটা খুলে বলল সব শুনে নিবিড় চোখ বন্ধ করে শুয়ে রইলো। ওর বুকের ভেতরটা জ্বলছে সুখের অনুভূতি গেল যেন নিমিষে ই দুঃখে ভেসে যাচ্ছে।
মনটা হুট করে বলে উঠলো যদি তখন কথা বলার জন্য অসুস্থ হয়ে না যেত। তাহলে ভয় পেত না। নিজেকে দোষারোপ করত না। আর এভাবে আমাকে ফেলেও যেত না। ও ভেবেছে ওর আসার জন্য আমি অসুস্থ হয়ে গেছি। তুমি এত বোকা কেন ছোঁয়া?

ও বুঝতে পারছে না ও থাকলে আমি অসুস্থ হলে ও আনন্দে থাকি। মনটা আমার সুখে ছেয়ে যায়। নিশ্চিন্তে থাকি এই যে চলে গেছে এখন আমার বুকের ভেতরটা ব্যথা করছে। মন বলছে এই কষ্ট আমি সহ্য করতে পারবো না। না এখান থেকে উঠে আমি ওর কাছে যেতে পারবো। আর না ওর হাত ধরে বলতে পারব তোমার জন্য আমি কষ্ট না শুধু
সুখ সুখ ফিল হয়। সময়টাই ছোঁয়ার মনের লুকানো ভালোবাসা প্রকাশিত হতে আমি খুব খুশি হয়েছিলাম ভেবেছিলাম এক্সিডেন্ট হয়ে ভালো হয়েছে। প্রিয় মানুষটার চোখে মুখে নিজের জন্য দুঃচিন্তা দেখতে সুখ সুখ ফিল হচ্ছিল। সুখের সাগরে ভাসছিলাম আমি এজন্যই এত এত ইমোশনাল কথা বলে ফেলেছি যে নিজেকে থামাতে পারিনি। বুঝতে পারিনি এটা আমার জন্য ক্ষতিকর। এখন ভুল বুঝে চলে এলো আর কি আসবে না আমাকে দেখতে। চোখ ভর্তি অশ্রু নিয়ে টেনশন ভীত নয়নে আমার পানে তাকিয়ে থাকবে কি?

আবির চলে যাচ্ছিল ভাই আর কথা বলছে না। হয়ত আর কথা বলতে চাচ্ছে না। তাই ও চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়িয়ে ছিল তখনই নিবিড় বলে ওঠে, ‘ ছোঁয়া কে একবার কল করবি। দুটো কথা বলব।’

আবির বলে উঠলো, ‘ভাইয়া তোমার এখন এত কথা বলা ঠিক না! তখন কি হয়েছিল মনে আছে তো।’

‘তোকে ফোন দিতে বলেছি।’

ভাইয়ের চাঁপা ধমক শোনে আবির ফোন দিল কিন্তু নিবিড় এর ফোনের কানে ধরার আগে বলল ,,’ দুটোর বেশি কথা বলবে না।’

এ দিকে আমি বিষন্নমুখে বেলকনিতে বসে আছি নিবিড়ের কথায় ভাবছি । দুপুরের পর থেকে আর খাওয়া হয় না সেই সকালে কয়টা খেয়েছিল পেটে খিদের চাপ বাড়ছে কিন্তু কিছু করতে মন চাচ্ছে না ওর। চোখ বন্ধ করে বসে আছি তখন হাতের ছোট ফোনটা বেজে উঠলো। আবিরের নাম্বার থেকে কল এসেছে ও চোখ মুছে গলা খাকিয়ে ফোন রিসিভ করে কানে ধরল।

ওপাশ থেকে শব্দ আসার আগেও জিজ্ঞেস করলাম, ‘হ্যালো আবির, নিবিড় এখন কেমন আছে? উনার কি মাথা যন্ত্রণা এখনো আছে? ঘুম কি ভেঙেছে? ‘

ওপাশ থেকে কোন শব্দ এলো না‌। শুধু শ্বাস প্রশ্বাসের শব্দ শোনা যাচ্ছে। আবির কথা বলছে না কেন? প্রতিটা নিঃশ্বাসের শব্দে আমার বুকটা কেঁপে উঠছে। আমি কাঁপা কাঁপা গলায় বলে ওঠি, ‘নিবিড়’

নিবিড় হয়তো হাসলো আমি না দেখেও বুঝতে পারলাম। নিবিড় খুব শান্ত ও নিচু স্বরে বলল, ‘কাল তুমি আসবে আমায় দেখতে। আমি অপেক্ষায় থাকব। আর কোন পাগলামি করবো না প্রমিস।’

আমি উত্তর দিতে পারলাম না তার আগেই ফোনটা কেটে গেল। ফোনটা কান থেকে নামিয়ে স্তব্ধ হয় গেলাম। কিন্তু নিবিড়ের কথা শুনে মনটা কিছুটা শান্ত হলো যে নিবিড় এখন ঠিক আছে । আমি আর যাব না এমনটাই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। এজন্য আমার মনটা আরো বেশি উদাস হয়েছিল। নিবিড়ের এই অবস্থা আর আমি ওকে দেখতে যেতে পারবো না। খুব খারাপ লাগছিল কিন্তু নিবিড়ের কথা শুনে আমি তো এখন নিজেই সিদ্ধান্ত অটল থাকতে পারছি না।

সন্ধ্যার পর এলো লিলি আমার কাছে ওদের বিয়ের আসতে ৫ দিন বাকি। লিলি এসেছে অনলাইনে বিয়ের পোশাক চয়েজ করতে ও নাকি অনলাইনে ড্রেস অর্ডার দিবে। রুমে এসে আগে আমাকে জিজ্ঞেস করল,’মুখটা এত শুকিয়ে আছে কেন? নিবিড় ভাইয়ের অবস্থা কি এখনো খুব খারাপ নাকি? ফোন দিয়ে একবার জিজ্ঞেস করেনে। আমি ভাবছিলাম তোর সাথে কাল দেখা করতে যাব‌।’

‘আছে কোনরকম আজকে কি হয়েছিল শুনলি ত। এজন্য আর যেতে চাইছিলাম না। কিন্তু এখন নিবিড় এমন ভাবে বলল আমি নাই গিয়ে থাকতে পারবো না রে।’

‘এতদিন পর ভাইয়া তোকে দেখে এক্সাইটেড হয়ে গেছিলাম এজন্য তিনি এত কথা বলছে। এখানে তোর কোন দোষ নাই। ভাইয়া যেতে বলছে এবার গিয়ে বলবি আপনি যদি এত কথা বলেন আমি আর কখনো আসবো না। তাহলে দেখবি ঠিক জব্দ হবে আর এমন পাগলামী করবে না। শান্ত থাকবে‌।’

আমি মনে মনে বললাম, আর কয়টা দিন তো আছি এই কয়দিন নিবিড়ের পাশেই থাকতে চাই।’

লিলি আমার কাঁধ ধাক্কা মেরে বলল, ‘ কিরে কি ভাবিস।’

‘ কিছু না তা এই সময়ে কি জন্য এলি।’

‘ কেন আসতে পারি না?’

‘ পারবি না কেন? কিন্তু তোর তো আজ কাল বিজি থাকি হবু জামাই নিয়ে তাই বললাম। দীপা কে বিয়ে খবর দিছিস?’

‘ হুম ও আসবে বলেছে।’

‘ সত্যি? অনেক দিন দেখা হয় না ওর সাথে ভালোই হবে। ‘

‘ হুম। এবার বল তোর মুখটা এমন শুকিয়ে আছে কেন খাসনি কিছু?’

আমি নির্বাক গলায় বললাম, ‘ রান্না করতে ইচ্ছে করছে না।’

লিলি বলল, ‘ আজকে তাহলে আর তা রান্না করতে হবে না। রান্না করতে ইচ্ছে করছে না আমাকে বললেই হতো আমাদের বাসায় খেয়ে নিতি এভাবে না খেয়ে বসে আছিস কেন? তুই ফোনে আমার জন্য বেনারসি চয়েস করতে থাক আমি তোর জন্য খাবার নিয়ে আসি।’

‘ লাগবে না।’

লিলি কপট রাগ দেখিয়ে বলল, ‘থাপ্পর খাবি এখন মানা করলে। চুপচাপ থাক আমি আসতেছি।’

লিলি সত্যি সত্যি নিয়ে আসলো খাবার। খাবার পেয়ে খিদে যন্ত্রণা ও বেড়ে গেল আমিও থাকতে পারলাম না। খাবারের উপর এক প্রকার হামলে পড়লাম।
লিলি ফোনে ৫০০ ছবি দেখালো আমি শুধু চেয়ে চেয়ে দেখলাম ভালো লাগছে না ঘুম থেকে চোখ বন্ধ আসছে। লিলি আমাকে ঝিমুতে দেখে বলল, ‘এই তুই দরজা আটকে ঘুমিয়ে পড় আমি চলে যাই। তোকে তো খুব ক্লান্ত লাগছে ইদানিং তো মনে হয় না ঘুমাতে পারিস। ঘুমিয়ে পড় দুশ্চিন্তা না করে।’

লিলি চলে গেলাম আমি দরজা আটকে ওইভাবে বিছানায় পেতে শুয়ে পড়লাম।

.
হসপিটালে গেলাম না যাওয়ার সুযোগ হয়নি যে কটা টিউশনি করায় সবার বাসায় গিয়েছি গিয়ে তাদের বলেছি দুই দিনের মাঝে টাকা দিতে। আর তিন দিন পর লিলির বিয়ে ওকে কিছু একটা গিফট দিতে হবে। সবাই বলছে দিয়ে দিবে আর আমি বলে দিয়েছি এই মাসটাই শেষ আমি আর পড়াতে পারবো না।

রাতে আবির ফোন থেকে আমার কল আসে। আমি জানি এটা নিবিড় এর কল আমি রিসিভ করি না। একটা মেসেজ পাঠাই, ‘ আগামীকাল আমি আসবো কিন্তু আপনি যদি পাগলামো করেন, উত্তেজিত হোন তাহলে আমি আর আসবো না।’

একটু পরেই মেসেজের টুং বেজে উঠল, ‘ শুধু তোমাকে দেখবে। কোন পাগলামি করবো না আসো প্লিজ।’

আমি আর রিপ্লাই করলাম না। মেসেজটা আবির লিখে পাঠিয়েছে। নিবিড় বলে দিয়েছে কি লিখতে হবে।

#চলবে….

#অবাধ্য_প্রেম
#পর্ব_৪৯
#নন্দিনী_নীলা

পরপর সময়গুলো কাটছেন নিবিড়ের ভালোবাসা ময়। ছোঁয়া এখন প্রতিদিনই আসে আর ওর সাথে সময় কাটায়, ওকে খাইয়ে দেয়। নিবিড় কথা বলে গুনে গুনে একটা দুটো। আর বাকি সময়টা কাটে ছোঁয়াকে দেখতে দেখতে। ছোঁয়া যখন পাশে বসে থাকে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় ওকে ঘুমাতে বলে তখন নিবিড় চোখ বন্ধ করে ছোঁয়া হাতের নরম পরশ অনুভব করে‌। তারপর ফট করেই সেদিন ও ছোঁয়ার গালে চুমু খেয়ে বসে মাথা উঁচু করে। ছোঁয়া হতবিহ্বল চোখে নিবিড়ের দিকে তাকায়। ওর হাত থেমে গেছে। আচমকা স্পর্শে ও স্তম্ভ হয়ে গেছে‌। তারপর আর এক সেকেন্ড সেখানে বসেনি। হনহনিয়ে কেবিনের বাইরে চলে এসেছে। নিবিড় কিছু বলার সুযোগ টাই পায়নি।

সেদিন নিবিড় একটা মেসেজ পাঠায়,
‘ তুমি আমার মদ ছাড়া মাদকতা নেশা। যারা আসে পাশে থাকলে আমি নিজের মধ্যে থাকি না ঘোরে চলে যায়। সীমার বাইরে চলে যায় আদর আদরে ভরিয়ে দিতে মন চায়। আমার এই স্পর্শকে খারাপ ভাবে নিও না। নিবিড় তুমি ছাড়া দ্বিতীয় নারীতে আসক্ত হয় না। তুমি ছাড়া অন্য কোন নারীকে স্পর্শ করতে ইচ্ছে হয় না। কিন্তু তুমি আমার মাদকতা যেন আমাকে টানো নিজের কাছে।’

মেসেজটা পড়ে একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেললাম। আজকে লিলির গায়ে হলুদ সেখানে যাচ্ছিলাম তখনই মেসেজ টুনটা বেজে ওঠে। মেসেজটা পড়ে আপনা আপনি ডান গালে আমার হাতটা চলে যায়। এখানে স্পর্শ করেও যেন আমি কেঁপে ওঠে মনে হয় এখনো যেন নিবিড়ের অধর স্পর্শ লেগে আছে জায়গাটায়। গাল থেকে হাত ছাড়িয়ে হাতটা নিজের বুকে চেপে ধরলাম। বুকের ভেতর ধরফর করছে চোখ বন্ধ করে একটা শ্বাস ফেলে নিচে আসলাম হলুদ জামদানি শাড়ি পড়ে মেয়েটা বসে আছে ও আমাকে শত বলেও শাড়ি পড়াতে পারিনি আমাকে। আমি একটা ভালো ড্রেস পরে নিচে আসি। ওর পাশে বসলাম দীপার এখন আসেনি। হঠাৎ আমি জসিমকে দেখি ফট করে দাঁড়িয়ে নিচে নেমে এলাম। জসিম আমার দিকে তাকিয়ে আছে ভয়ে আত্মা উড়ে যাবার উপক্রম।

আমি ভয়ার্ত মুখ করে জসিমের দিকে তাকিয়ে আছি। জসিম চোখ মুখ উজ্জ্বল করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। যেন কত দিনের শিকার ও খুঁজে পেয়েছে। তখনই কোথা থেকে দীপা দৌড় এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে। ওর গায়ে শাড়ি গায়ে গহনা হাতে চুড়ি ও আমাকে জড়িয়ে ধরেছে গায়ের গহনা ঝমঝম করে উঠছে। এসে চিৎকার করে উঠেছে ছোঁয়া বলে।

ও আমার দিক দিয়ে কোন রেসপন্স না পেয়ে আমাকে ছেড়ে মুখের দিকে তাকিয়ে বলে, ‘ কি হয়েছে? মুখটা এমন কালো করে রেখেছিস কেন? আর এমন ভয় পাচ্ছিস কেন?’

আমি দীপার কানে কানে জসিমের কথা বললাম। দীপার পেছনে ফিরে জসিমের দিকে একবার তাকাল। ছেলেটার লোভনীয় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ছোঁয়ার দিকে।

‘ওই ওই ক্যাবলা টা। আমার বান্ধবী রে ভয় দেখায় ডিস্টার্ব করে না। দাঁড়া ওর বিয়ে করার শখ আমি মিটিয়ে দেবো আজকে।’

‘আর কি করছিস একটা বিয়ে বাড়ি এখানে কিছু করিস না। আর সবার মাঝখানে ও ও কিছু করবে না কিন্তু পরে যে আমাকে জ্বালিয়ে খাবে সেটা আমি খুব ভালোই জানি।’দীপার হাত টেনে থামিয়ে বললাম।

দীপা আমাকে টেনে আবার স্টেজে নিয়ে বসালো বলল , দেখি তো ফেলেছি আর সরে কি করবি।’

লিলি আমার দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে বলল,’অমন করে ছুটে গেলি কেন?’

দীপা সবটা খুলে বলল। নিলি সব শুনে বলল, ‘ওই বেটা বেশি ঝামেলা করলে আমি আছি তো ওর চাকরির নট করে দিমু। আমার বান্ধবীরে কেমনে ডিস্টার্ব করে আমিও দেখমু।’

আমি আর দীপার কথা শুনে হেসে দিলাম। দীপাকে জিজ্ঞেস করলাম আমাদের ছোট সোনামনি কেমন আছে?

দীপা বলল, ‘ওরে জিজ্ঞেস কর আমি কেমনে জানব! বাইরে আসলে নিজেরা জিজ্ঞেস করে শুনে নিস!’

গায়ে হলুদটা আনন্দে কাটলো জসিমের ভয়ে থাকলেও তিন বান্ধবী আনন্দ করা থেকে কমতি দিলাম না। আবার কবে তিনজন এরকম একসাথে আনন্দ করার সুযোগ পাবো কে জানে।
দীপা রা চলে গেল তাড়াতাড়ি কারণ ওর এই অবস্থায় বেশি রাত বাইরে থাকা উচিত না‌। লিলি অবশ্য থাকতে বলেছিল কিন্তু সেটা সম্ভব না। শ্বশুর বাড়িটা এটা মানবে না ও মুসলমানদের মধ্যে ভেদাভেদ না করল তারা তো তেমন একটা মুসলিমদের পছন্দ করে না তাদের জিনিস খেতে চায় না‌।

.
আজ লিলির বিয়ে। লিলি আমাকে ওর কাছ থেকে সরতেই দিচ্ছে না আমি এবার অনুরোধ সরে বললাম, ‘আমাকে একটু হসপিটালে যেতে হবে! নিবিড়ের আজকে হসপিটালে শেষ দিন কাল থেকে ও বাসায় শিফট হবে ও এখন বসে থাকতে পারে। হাঁটতে কবে পারবে জানিনা। বাসায় চলে গেলে আর চাইলে দেখা করা যাবে না। কারণ ওর মা আমাকে দু চোখে সহ্য করতে পারেনা। তাই আজকে আমার শেষবারের মতো নিবিড়ের সাথে দেখা করতে হবে।’

লিলি আমার দিকে চোরা চাহনি দিয়ে বলল, ‘ এমন ভাবে বলছিস যেন আর কোনদিন দেখাই হবে না।’

আমি বিরবির করে বললাম, ‘ তাও তো হতে পারে।’

লিলি বলল , ‘ কি বিরবির করিস।’

আমি মাথা নেড়ে না করলাম। তারপর বেরিয়ে এলাম বাসা থেকে। লিলি আমাকে বারবার করে বলেছে আমি যেন তাড়াতাড়ি ফিরে আসি। আমি অটোর জন্য দাঁড়িয়ে আছি একটু দূরে গিয়ে মুখ ঢেকে যে কোন সময় জসিম চলে আসতে পারে।

আমি দাঁড়িয়ে আছি হঠাৎ অদূরে দেখতে পেলাম জসিম বাসার ভেতরে ঢুকছে হন্তদন্ত হয়ে ওকে দেখে আমি তাড়াতাড়ি পেছন ঘুরে গেলাম।
পেছন ঘরে আমি দাঁত কামড়ে মুখে হাত দিয়ে আছি
তখনই সামনে একটা পরিচিত কন্ঠে ভেসে আসল।
লিহান আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে এখানে আসার পর লিহানের সাথে অনেক বার‌ই দেখা হয়েছে আমার। কলেজ যাওয়ার সময় মাঝেমাঝে দেখা হয়েছে লিহানের সাথে। কিন্তু মাঝখানি এক সপ্তাহ ধরে দেখা হয়নি আজকে আবার এক সপ্তাহ পর দেখা হলো।

‘ হাই ছোঁয়া, কেমন আছো? তুমি তো আবার বিয়ে খাচ্ছ! তোমার বান্ধবীর বিয়ে শুনলাম!’

আমি মুখে মেকি হাসি টেনে বললাম, ‘ ভালো। তুমি ভাল আছো?’

‘ জি ভালো আছি। নিবিড় ভাইয়া এক্সিডেন্ট করেছে জানো?’

‘ হুম শুনছি।’

লিহান বলল, ‘ দেখতে যাবে না? আমি তো দেখতে গিয়েছিলাম।’

‘ ভালোই। আমি একটু দরকারি কাজে যাব তুমি থাক আমি যাই!’

আজকে আসার আগে আবিরকে আমি জানাতে পারিনি যে আমি আসছি। আমার সেসব খেয়ালই ছিল না আমি হসপিটালে গিয়ে দেখলাম ফাঁকা আছে চারপাশ। আমি পা টিপে টিপে ভেতরে চলে গেলাম। নিবিড় ভারী নিঃশ্বাস ছাড়ছে। আমি দৃষ্টি নিবিড়ের উপর নিবদ্ধ রেখে এগিয়ে গেলাম। বসেই ঘুমিয়েছে নাকি? আমি কাছে গিয়ে ডাকলাম, ‘ জেগে আছেন?’

নিবিড় নড়ল না তাকাল ও না। আমি আরেকবার ডেকে চুপ করে গেলাম। তৃষ্ণার্ত চোখে নিবিড়ের দিকে চেয়ে রইলাম। আমি নিবিড়ের পাশে বসলাম খুব কাছ ঘেঁষে আর ওর মুখে খুব নিকটে গিয়ে ঝুকে রইলাম। আমার চোখ ছল ছল করছে ভেতরটা হাহাকার করছে। বুকটা ফেটে আসছে। এই মানুষটাকে তো আমি মন প্রাণ দিয়ে ভালোবেসে ফেলেছি কিভাবে তাকে ছেড়ে দূর বহুদূর চলে যাব।
কেন এই পরীক্ষার মাঝে আমাকে ফেললে তুমি আল্লাহ। কেন এমন একজন মানুষের জন্য মনের ভেতর ভালোবাসা তৈরি করলে? যাকে পাওয়া দুঃসাধ্য আমার জন্য। যাকে কল্পনাতেও আমি নিজের ভাবতে পারি না। যে আমার ধার ছোঁয়ার বাইরে। কেন এত কষ্ট হচ্ছে আমার? মনকে এত বোঝালাম, এত কঠিন হলাম এত খারাপ আচরণ করলাম। তবুও সেই তো ভেঙ্গে গুড়িয়ে গেল। উনি আমাকে ভালোবাসতে বাধ্য করল। কেন করল আমি ত জানতাম তাকে আমার পাওয়া সম্ভব না। তবু তার প্রতি এই অনুভূতি এই প্রেম কেন জেগে উঠল। এই যন্ত্রনার থেকে মৃত্যু শেয়।

আমি চোখ বন্ধ করে চাপা দীর্ঘশ্বাস বের করলাম। হঠাৎ একটা পরিচিত স্পর্শ যেন আমার ললাটে ছুঁয়ে চুলে হাত ডুবিয়ে নিজের আরো কাছে টেনে নিল। আমি চোখ মেলে তাকালাম। নিবিড় আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি আঁতকে উঠলাম। সরে আসতে চাইলাম কিন্তু পারলাম না নিবিড় মাথার পেছনে হাত ডুবিয়ে শক্ত করে ধরে রেখেছে। আমি নড়তে পারছি না তাহলে মাথা আঘাত পাচ্ছি চুলে টান পড়ে। নিবিড় বাম হাত ওঠিয়ে আমার চোখের জল মুছে দিয়ে বলল, ‘ এই চোখে অশ্রু মানায় না। কাঁদছ কেন?’ আদুরে কন্ঠে বলল নিবিড়।

আমি ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলাম। নিবিড়ের এই আদুরে কন্ঠ স্বর শুনে আমার বুক চিরে কান্না আসছে‌। নিজেকে থামাতে পারলাম না। হু হু করে কেঁদে উঠলাম। নিবিড় ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আচমকা আমার কান্নার কোন কারণ খুঁজে পাচ্ছে না। নিবিড় ব্যস্ত হয়ে পড়ল আমার কান্না দেখে।

খুব কোমল গলায় বলল, ‘ কি হয়েছে জান? বলো আমায় কেউ কিছু বলেছে এমন করে কাঁদছ কেন? তোমার কান্না আমি সহ্য করতে পারি না।’

আমি ফুপিয়ে কাঁদতে লাগলাম তারপর নিজে ই থেমে গেলাম এভাবে নিবিড়ের সামনে কাঁদা উচিত না। ওর মনে সন্দেহ জাগবে। আমি কান্না থামিয়ে ফেললাম নিবিড় বিস্মিত গলায় বলল,’ কি হয়েছে তোমার?’

আমি ঢোক গিলে বললাম, ‌কি হবে? কিছু হয়নি ত‌।’

নিবিড় বলল, ‘ মিথ্যা বলছো। কিছু ত হয়েছে আমার থেকে লুকানোর চেষ্টা করছো তুমি? দেখ পা ভেঙে বিছানায় পরে আছি বলে আমাকে দূর্বল ভাবা বন্ধ কর। আমার কিন্তু তোমার তোমার সব খবরাখবর জানতে এক দিন ও লাগবে না।’

‘ আমার কিছু হয়নি।’

‘ তাহলে ওমন করে কাঁদলে কেন? এখন ও ফুঁপিয়ে যাচ্ছ ! কিছু না হলে অযথা কাঁদবে কেন?’

আমি ঠোঁট কামড়ে ধরে ফুপানো বন্ধ করার চেষ্টায় ব্যস্ত হয়ে পরছি থামছে না আমি চোখ বুজে বললাম, ‘ ছাড়ুন আমাকে এভাবে ধরে রাখবেন না। আমি সহ্য করতে পারি না। আপনার এত কাছে থাকলে আমার দম বন্ধ হয়ে আসে।’

নিবিড় মোহিত নয়নে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ছোয়ার মুখের দিকে। ছোঁয়া চোখ বন্ধ করে আছে ওর চোখের পাতা কাঁপছে, ঠোট কাঁপছে, ঠোঁট কামড়ে নিজের ফুপিয়ে কান্না থামাচ্ছে কাঁপাকাঁপি থামানোর ব্যর্থ চেষ্টা করে যাচ্ছে। বন্ধ চোখের পাতাও ভেজা চোখের জলে। নিবিড় আচমকায় ঘোরের মধ্যে চলে গেল আর দুঃসাহসিকতার একটা কাজ করে বসল। ছোঁয়া ফট করে বন্ধ চোখ মেলে তাকালো স্তব্ধ নয়নে চেয়ে। ওর বুকের ভেতর ধুকপুক করছে। বিস্ময় হতভম্ব হয়ে গেছে। নিবিড় নিজের অধর দুটির মাঝে ছোঁয়ার অধর চেপে ধরেছে। ছোঁয়ার বাম চোখে কুলটি বেয়ে আরেক ফোটা জল গড়িয়ে পড়ল। নিবিড় শরীর এখন দুর্বল ছোঁয়া চাইলেই নিবিড় কে ধাক্কা দিয়ে নিজে থেকে সরিয়ে দিতে পারে। কিন্তু ছোঁয়া সেই কাজটা করলো না ছেড়ে দিল নিবিড় কে। জীবন থেকে হারিয়ে যাওয়ার আগে না হয় একটু সুখময় স্মৃতি সাথে করে নিয়ে যাওয়াই যায়।
ছোঁয়া আবেশেই চোখ বন্ধ করে ফেলল। নিবিড় যেন ছোঁয়ার থেকে কোন বাধা না পাওয়ায় আরো সাহসী হয়ে উঠল। সুখের প্রহর কাটলো। ছোঁয়াকে ছেড়ে দিতেই ছোঁয়া নিবিড়ের বুকে মাথা রাখল খুব আস্তে করে। মাথাটা একদম নিবিড়ের বুকের সাথে লাগিয়ে চোখ বন্ধ করে রাখল।
এদিকে নিবিড় নিজের করা কাজে অপরাধী ন্যায় ছোঁয়ার দিকে তাকাবে ভেবেছিল। নিজের এই কন্ট্রোল লেস কাজের জন্য নিজেই নিজেকে মনে মনে ধমকাচ্ছে। ছোঁয়া নিশ্চিত এবার কঠিন রাগ করবে। ছোয়াকে কিভাবে মানাবে সেসব ভেবে মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছিল কিন্তু ছোঁয়া ওর সমস্ত দুশ্চিন্তা দূর করে ওর বুকে মাথা রাখে।
নিবিড় স্তম্ভিত। বিমূঢ়, এরূপ আশ্চর্যকর ঘটনা জীবনে ওর সাথে ঘটেছে কিনা ওর জানা নেই। ছোঁয়া স্বেচ্ছায় ওর বুকের মাথা রেখেছে আর এমন একটা কান্ড ঘটানোর পরও ওকে কিচ্ছু টি বলছে না। এর থেকে বিস্ময়কর ঘটনার কি হতে পারে? ছোঁয়া চোখ মেলে দরজা দিকে তাকাতেই মনে হলে একটা ছায়া সরে গেল। ও ধরফরিয়ে নিবিড়ের বুকে থেকে মাথা তুলে উঠে বসলো।

দ্রুত গতিতে পা ফেলে দরজার দিকে উঁকি মারল। বাইরে কেউ নেই ওর সাথে সাথে আবিরকে কল দিল আবির হসপিটালেই নাই। ও বল আমি এসেছি তুমি তাড়াতাড়ি আসো আবির বলল আচ্ছা।

নিবিড় জিজ্ঞেস করল কি হয়েছে?

আমি এগিয়ে এসে বললাম,’মনে হল কেউ দরজা আর এখানে ছিল। আমি এসেছি সেটা আপনার বাসায় কেউ দেখে নেয় যদি তাই আবীর আসতে বললাম।’

নিবিড় বলল, ‘দেখলে দেখবে। সমস্যা কোথায় একদিন আগে পরে তো জানতেই হবে তাদের সাথে তাদের পরিচয় হতেই হবে। আগে জানলে সমস্যা কি?’

আমি কিছু বললাম না এগিয়ে এসে বললাম আপনি কিছু খেয়েছেন?’

‘তুমি চাইলে কিছু খাওইয়ে দিতে পারো। আজকে তো আমি খুব খুশি। তুমি আমাকে এতো ভালোবাসো আগে কেন বুঝতে দিলে না। এখন দেখ তোমাকে একটু জড়িয়ে ধরতে পারছি না। তোমার কাছে গিয়ে দাঁড়াতে পারছি না‌। দেখো না পা ভেঙে বসে থাকতে হচ্ছে। তুমি কাছে এসে ধরা না দিলে আমি তোমার কাছে যেতেই পারছি না।’

নিবিড় নিজের মত কথা বলছে আমি পাশ থেকে কমলার খোসা ছাড়িয়ে নিচ্ছি। একটা ডালিম বাটিতে নিলাম তারপর নিবিড়ের সামনে আসলাম। আমি নিজেই নিবিড়ের মুখে তুলে দিচ্ছি। নিবিড় আমার দিকে চেয়ে আছে অপলক হঠাৎ বলে উঠলো, ‘ ছোঁয়া তুমি এখন আমাকে ভালবাসলেও কেমন যেন চুপচাপ হয়ে গেছো। যেন রোবট! রোবটের মত কাজ করে যাচ্ছে! জিজ্ঞেস করছো! ভালোবাসছো! কিন্তু আগের মতো সেই প্রাণবন্ত চেহারাটা নেই! এর থেকে তো সেই ঝগড়াটে ছোঁয়ায় ভালো ছিল। যে মুখ খুললে ই আমাকে বাজে কথা অপদস্ত করার কথাটাই বের করত। তুমি এমন নীরব শান্ত হয়ে গেলে কেন? আমার এক্সিডেন্ট কি তোমার মনে খুব বেশি আঘাত করেছে বলো না!’

‘এত যে কথা বলছেন মাথা ব্যথা করে না?আবার তো অসুস্থ হয়ে পড়বেন।’

‘কথা না বলে কি থাকা যায়! তুমি কথা বললে তো আমার এত কথা বলার দরকার পড়তো না। তুমি কথা বলতে আর আমি শুনতাম। কিন্তু তুমি তো কথা বলোনা। মনে হয় বোবা হয়ে গেছে এর জন্য আমাকে সব বলতে হচ্ছে।”

আমি খিলখিলিয়ে হেসে উঠলাম। আর বললাম, ‘ খান ত কথা বাদ দিয়ে।’

নিবিড় অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে বলল, ‘ আমাকে এলোমেলো করার জন্য এই হাসিই যথেষ্ট।’

#চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here