অবাধ্য_প্রেম #পর্ব_৫০ (অন্তিম অংশ) প্রথম পরিচ্ছেদ

0
1634

#অবাধ্য_প্রেম
#পর্ব_৫০ (অন্তিম অংশ) প্রথম পরিচ্ছেদ
#নন্দিনী_নীলা

নিজ থেকে হারিয়ে গেলে তাকে কি খুঁজে পাওয়া যায় এতই কি সোজা? যে নিজে থেকে আড়ালে চলে যায় তাকে খুঁজে পাওয়া অসাধ্য হয়ে পড়ে। সারা শহর তন্ন তন্ন করে খুঁজেছে পুলিশ। বাসায় সবাই চায় ছোঁয়া ফিরে আসুক। নিবিড়ের অবস্থা দেখে সবাই মনে প্রাণে চায় ছোঁয়া ফিরে আসুক‌। শুধু দুজন মানুষ চায় না, নিলাশা বেগম ও নিবিড়ের ছোট চাচী।
দুই মাস হয়ে গেছে নিবিড় এখন খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটতে পারে ও নিজেও কম চেষ্টা করেনি কিন্তু কোথাও পায়নি পুলিশ ও খুজছে । মাঝখানে আরেকটা জিনিস বের হয়েছে ছোঁয়ার সাথে জসিম ও নিখোঁজ। নিবিড় সন্দেহ করছে জসিমকে এর পেছনে নেয় ত।
ছোঁয়ার মামিকে তো সেই দিনে বাসায় তুলে আনা হয়েছিল তাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছে। ছোঁয়া কোথায়?

ছোঁয়ার মামি ভয়ে ঢোক গিলে শুধু বলেছে, ‘আমি কিছু জানি না! ওর লগে তো আমার যোগাযোগ নাই সেই কবে থিকা। তুমি আমারে টাকা দাও পরে থেকে ছোঁয়াকে আর ডিস্টার্ব করিনি।’
ভয়ে মিথ্যা কথা বলল একদিন তো এসেছিল ছোঁয়া যেদিন বিয়ের কথা বলে দিয়েছে এখন ছোঁয়া কেন পালিয়ে গেল। ওরে ফাঁসাতে।

ওই দিনে কথা বলা যাবে না। জসিমের সাথে বিয়ে দেওয়ার জন্য আবার এসেছিল। ছোঁয়ার কথা শুনে চলে গিয়েছিল ঠিক‌ই কিন্তু জসিমকে ছোঁয়ার ঠিকানা দিয়ে দিয়েছিল। হারামজাদা আবার কিছু করেছে নাকি। ওই হারামজাদা ও ত পালিয়েছে। দুই মাস ধরে খবর নাই। এখন এসব বললে আমি ফেসে যাব।

ছোঁয়ার মামিকে চুপ করে থাকতে দেখে নিবিড় এবার আরো চিৎকার করে ওঠে, ‘আপনি নিশ্চয়ই কিছু করেছেন আর কিছু না করলেও আপনি এর পেছনে ঠিকই আছেন সত্যি করে বলুন জসিম কোথায়?’

তিনি ভয়ে লাফিয়ে উঠে। এত জোরে ধমক খেয়ে তিনি গড়গড় করে সব সত্যি বলে দেয়। সব শুনে এবার নিবিড় সিওর হয় ছোঁয়া নিজে চলে যেতে চাইলেও জসিম যেহেতু নিখোঁজ। আর জসিম ওর পিছু নিয়েছিল শেষবার। তার মানে জসিম ছোঁয়ার সাথে আছে ছোঁয়া কোন বিপদে পড়েনি তো আবার।

‘ ছোঁয়া তো আপনার আপন ভাগ্নি ছিল পছন্দ না করতেন তাই বলে একজন বিপদজনক মানুষের হাতে তুলে দিলেন। আজ যদি ছোঁয়ার কিছু হয় আপনাকে আমি জেলের ভাত খাইয়ে ছাড়বো। আপনি বাসার বাইরে যেতে পারবেন না ছোঁয়া কে যতক্ষণ না ফিরে পাবো আপনি এক পা ও নড়বেন না এই বাসা ছেড়ে মাইন্ড ইট।’

কেঁদে কেঁদে নিবিড়ের পা জড়িয়ে ও ধরতে যায় ছোঁয়ার মামি কিন্তু লাভ হয় না তাকে নজর বন্দি করে রাখে।

জসিমের ফ্যামিলিও উধাও। অনেক খোঁজখবর নিয়ে জসিমের গ্রামের বাড়ির ঠিকানা পাওয়া যায়। নিবিড়, রাফসান কাকা, আবির হাজির হয় পরদিন।

পুরাতন টিনের ছোট ছোট দুইটা ঘর। এক ঘরে জসিমের বড় ভাই বউ আর তার দুই মেয়ে আর থাকে আরেক ঘরে জসিমের বাবা-মা থাকে। জসিম কোথায় জিজ্ঞেস করলে তারা হুহু করে কেঁদে ওঠে তাদের ছেলে নাকি মারা গেছে। দেড় মাস আগে নাকি জসিম শহরে তাদের যতটুকু আয় করা টাকা পয়সা ছিল সব টাকা নিয়ে ভেগে যায়। তারা বাসা ভাড়া দিতে না পারায় তাদের দুজনকে বাসা থেকে বের করে দেয়‌। তারপর তারা উপায় না পেয়ে গ্রামে বাড়ি ফিরে আসে। এদিকে ছেলের সন্ধান নাই।
ছেলেকে খোঁজাখুঁজি করে পায় না। তার পাঁচ দিন পর নাকি গ্রামে ছেলের লাশ নিয়ে আসে দুজন লোক। সাথে আসে কয়েকজন পুলিশ। তাদের ধারণা হয় এক্সিডেন্ট হয়েছে। না হলে কেউ মেরেছে। তাদেরকে নাকি জিজ্ঞেস করেছিল ছেলের কোন শত্রু আছে কিনা কিন্তু তারা তেমন কিছু বলতে পারেনি। শুধু বলেছিল ছোঁয়া নামটা মেয়েটাকে তার ছেলে ভালবাসত বিয়ে করতে চাইছিল। মেয়েটা রাজি না তাদের কাছে এসব বলেছে এজন্য ছেলেকে শাসন করায় ছেলে হয়তো রাগ করে টাকা নিয়ে ভেগে গেছে। কিন্তু ছেলের লাশ আসবে এমনটা তারা আশা করেনি। ভেবেছিলাম মেয়ে নিয়ে হয়তো ভেগে গেছে কিন্তু ছেলের লাশ কিভাবে আসলো এজন্য পুলিশরা মেয়েটাকে সন্দেহ করেছে। কিন্তু পরে নাকি আরেকটা মেয়ের লাশ পায় তারা ভাবে হয়ত ওই মেয়েটাই মারা গিয়েছে। এটা তাহলে মার্ডার কেস না। এটাই এক্সিডেন্ট কেস।

ছোঁয়ার
লাশ পাওয়া গেছে জসিম আর ছোঁয়া একসাথে এক্সিডেন্ট করে মারা গেছে এটা শোনার পরে নিবিড় আর শান্ত থাকতে পারে না চিৎকার করে সেখানে জ্ঞান হারায়। রাফসানা আর আবির নিবিড় কে জাপ্টে ধরে‌‌। ভাইয়া বলে চিৎকার করে ওঠে আবির। ধরাধরি করে জসিমের বাবা-মার রুমে নিয়ে শোয়ানো হয় মাথায় পানি দেওয়া হয় কিন্তু নিবিড়ের জ্ঞান ফিরে না। এত বড় এক্সিডেন্ট এর পর কেবল সুস্থ হয়েছে নিবিড়, নিজের পায়ে হাঁটতে পারে খুড়িয়ে হলেও তার মধ্যে আবার এত বড় একটা আঘাত সহ্য করতে পারেনি। ইমিডিয়েটলি ঢাকা ফিরে যেতে হবে ওইভাবেই ধরাধরি করে গাড়ি বসিয়ে ওরা ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হয়।

তারপরের সময় গুলো কেটেছে খুবই দুর্বি সহ ভালবাসার মানুষই হারিয়ে নিবিড় উন্মাদ হয়ে যায় পাগলামি সীমা থাকে না। নিজের রুমে দরজা বন্ধ করে থাকে খাওয়া দাওয়া করে না কয়েকদিনের মাঝে শুকিয়ে কাঠ হয়ে যায়। চোখের নিচে কালো হয়ে যায়।
ছোঁয়া কে নিয়ে লিখতে থাকে হাজারো অনুভূতি, ভালোবাসা অভিযোগ, অভিমান ভরা কথা যা সব ডায়েরির পাতায় স্থান পায়। সবাই চিল্লা মিল্লায় করে দরজা ভেঙে ফেলে একবার ওর রুমে ঢুকে জোর করে। কিছু খাওয়াতে পারে চেষ্টা করে জোর করে। ও ড্রিংকস খেয়ে মাতাল হয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ে থাকে। আর ছোঁয়া বলে চিৎকার করে এর মাঝে ওর ফ্রেন্ডস রা ওকে দেখতে স্বাভাবিক করার জন্য কিন্তু পারে না। একমাস নিবিড়ের মা ছেলের ধারের কাছে যেতে পারেনি। কাছে গেলেই ছেলে কিছু না কিছু তার দিকে ছুড়ে মারে। আর খুনি বলে চিৎকার করে ওঠে। তবু নিজের ছেলের এমন দূর অবস্থা দেখে তিনি না গিয়ে থাকতে পারেননি। প্রথম দিন মাকে নিজের রুমে আর নিজে চোখে সামনে দেখে চিৎকার করে ওঠে নিবিড়, ‘তুমি খুনি তুমি আমার ছোঁয়া কে খুন করেছ। তোমার জন্য আমার ছোঁয়া হারিয়ে গেছে। তোমাকে আর আমি কোনদিন মম বলে ডাকবো না। তুমি মম নামের কলঙ্ক তোমার মত মম থাকার চেয়ে না থাকা ভালো। বেরিয়ে যাও আমার রুম থেকে আর কখনো আমার ধারের কাছে আসবে না তাহলে তোমাকে আমি কিন্তু খুন করে ফেলব‌।’

নিলাশা বেগম আহ্লাদ স্বরে ছেলেকে বলে, ‘নিবি আমি তোমার মম তোমার ভালোই তো চেয়েছিলাম। তুমি কেন এমন করছ ওই মেয়েটার জন্য কেন নিজে ক্ষতি করছো রুমে বন্দি হয়ে আছো। না খাচ্ছ, দেখো চেহারাটা কেমন হয়েছে। নিজে স্বাভাবিক হ ও ভুলে যাও ঐ মেয়েকে ওই মেয়ে তোমার যোগ্য ছিল না।’

নিলাশা বেগমের মুখে নিবিড় আবার সেই এরকম খারাপ কথাগুলো শুনে নিতে পারেন রক্ত লাল চোখে মায়ের দিকে তাকায়‌।

নিলাশা বেগম ছেলের চাহনি দেখে ভয় পেয়ে যায় ছেলে তার মদ খেয়ে মাতাল হয়ে চোখ মুখ লাল করে রেখেছে কি ভয়ংকর দেখা যাচ্ছে। তিনি ঢোক গিলে সাথে সাথে নিবিড় নিজের পাশে থাকা সেলফোনটা তার দিকে ছুড়ে মারে আর সেটা নিলাশা বেগমের মাথায় গিয়ে লাগে তিনি আর্তনাদ করে উঠে। নিলাশা বেগম তারপরে ওই ঘরে আর যাওয়ার সাহস পায় নি‌।
আর নিবিড় রুমের দরজা বন্ধ করতে পারেনা কারণ তার দরজা ভেঙে ফেলেছে আর দরজা লাগানো হয়নি সে যেহেতু রুমের বা বাসার বাইরে যায় না অনলাইনে শুধু বাসায় বসে বসে ড্রিংকস অর্ডার করে শুধু গিলে তাই সেও আর এসব করেনি। এখন দরজা ছাড়াই সে রুমের ভেতরে হাবিজাবি খেয়ে মাতাল হয়ে পড়ে থাকে। আর ছোঁয়া কে নিয়ে আবেগ ভালোবাসার কথা লিখতে থাকে।
নিবিড়ের বাকি জীবন কি এভাবে কাটবে নাকি সে আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবে?
নাকি ভালোবাসা হারিয়ে তার জীবনটা এইভাবে শেষ হয়ে যাবে।

উন্মাদ নিবিড়ের ডায়েরি পাতায় একটা লেখা ছোঁয়ার জন্য,,
‘ তোমার প্রতি আমার ভালবাসার তো কোন কমতি ছিল না। হারিয়ে যাবে বলেই কি লাস্ট দিন গুলো এতোটা ভালোবাসাময় করে তুলেছিলে; কেন এই ভালোবাসা দেখালে? কেন এতো নিঃশেষ করে দিলে আমাকে। এখন যে তোমার দহনে আমি পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছি। তোমার মনে যে আমার জন্য ভালোবাসা সিক্ত হয়ে ছিল। সেটা তো আমি সেই কবেই বুঝেছি কিন্তু প্রকাশ না করে তবু আমাকে তো তুমি শান্ত রাখতে পেরেছ। কিন্তু তোমার এই ভালোবাসা এখন তো আমাকে উন্মাদ করে তুলেছ। এখন তোমার বিরহ আমি কিভাবে সহ্য করিব? যেখানে লুকিয়ে থাকো না কেন ধরা তোমায় দিতেই হবে। তুমি নিজেও যে বিরহের যন্ত্রণা সহ্য করছো। সেই দিনের সেই অশ্র,সেই কান্না, সেই দুজনের গভীর ছোঁয়া তো প্রমাণ করে নিবিড় ছাড়া তুমি থাকতে পারবে না‌। প্রেমের দহন বড়ই যন্ত্রণার। এই দহনের কেউ যেন না পড়ে। তাহলে যে সে আমার মতোই ক্ষতবিক্ষত হবে। তোমাকে তো ফিরে আসতেই হবে ছোঁয়া, তোমাকে এখনো ব‌উ করা বাকি, আমার বাবুর আম্মু করা বাকি।’

এদিকে একটা বাচ্চা মেয়ে বসে আছে গল্প শুনবে বলে। তার সামনে বসে থাকা মেয়েটি দীর্ঘশ্বাস ফেলে একটা গল্প বলতে লাগল,

এক ছিল যে দুঃখী রাজকুমারী। বাবা মাকে হারিয়ে রাজকুমারী রাজপ্রাসাদ ত্যাগ করে। আশ্রয় নেয় মামার মহলে। মামা ব্যতীত মহলের কেও রাজকুমারী কে সহ্য করতে পারেনা অনেক কষ্ট দিতে থাকে একদিন দেখা হয় রাজকুমারের সাথে ঝগড়া দিয়ে তাদের প্রথম সাক্ষাৎ শুরু হয়। ঝগড়া করতে করতে একসময় রাজকুমারী রাজকুমারের প্রেমে পড়ে যায়। কিন্তু রাজকুমারী যে অনাথ তার ত এখন রাজপ্রাসাদ নাই এজন্য সে রাজকুমারকে ভালোবাসি বলতে পারেনা। লুকিয়ে যায় মনের অনুভূতি, আবেগ, ভালোবাসা। এদিকে রাজকুমার ও রাজকন্যার প্রেমে পড়ে যায় আর রাজকুমার রাজকুমারী কে ভালবাসি বলে দেয়। রাজকুমারী তো খুব খুশি হয় কিন্তু তখন রাজকুমারী রাজকুমারের ভালোবাসা গ্রহণ করতে পারেনা। কারণ রাজকুমারের মা দুষ্টু রানী রাজকুমারীকে রাজকুমারের সাথে মিলতে দেয় না। বাধা হয়ে দাড়ায়। রাজকুমারীর এক আপন মানুষের ধারা তাকে সেই রাজ্য ছাড়া করে। তারপর রাজকুমারী দুঃখে কষ্টে অভিমানে রাজকুমারকে ফেলে লুকিয়ে পড়ে অন্য রাজ্যে এসে। কিন্তু রাজকুমারী অন্য রাজ্যে বসে আশায় থাকে সময় গুনতে থাকে রাজকুমার তাকে খুঁজতে আসবে। পঙ্খিরাজ ঘোড়ায় চড়ে রাজকুমারীকে আবার নিয়ে যাবে তার প্রাসাদে তার রানী করে।’

মেয়েটি বলে, ‘রাজকুমারী তো অনেক দুঃখ রাজকুমার কবে আসবে রাজকুমারী কে নিয়ে যেতে?’

‘সেটা ত রাজকুমার জানে। রাজকুমারী তো জানিনা কবে আসবে সে তো প্রহর গুনছে।’ বলেই মেয়েটি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল।

( কাহিনী অনেক বড় শেষ করতে গেলে ১০০ পর্ব না ছাড়িয়ে যায়। এজন্য প্রথম পরিচ্ছেদ এর সমাপ্তি ঘটালাম। খুব শীঘ্রই দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ নিয়ে হাজির হব। নিবিড়ের পরের গন্তব্য!! ছোঁয়া কে ফিরে পায় নাকি।সব কিছু জানানো হবে।)

সমাপ্ত ♥️♥️♥️♥️♥️♥️♥️
খুব শীঘ্রই ফিরে আসছি আবার নিবিড় ছোঁয়া কে নিয়ে আল্লাহ হাফেজ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here