অবাধ্য_মন,পর্ব_২

0
1099

#অবাধ্য_মন,পর্ব_২
#শোভা_আক্তার(লাভলী)

স্নিগ্ধ যেন আকাশ থেকে পরলো জানভির কথা শুনে। অচেনা মেয়ে? স্নিগ্ধ জানভির দিকে একটু এগিয়ে যেতেই জানভি আঙুল তুলে বলল-
“খবরদার কাছে আসবে না।,
“তোমার কি হয়েছে বলবে? আমি স্নিগ্ধ তুমি চিনতে পারছো না আমাকে?”
“কে স্নিগ্ধ? আমি কোনো স্নিগ্ধকে চিনি না।”
স্নিগ্ধ রাগে দাঁতে দাঁত চেপে ধরলো। জানভির দিকে হনহন করে এগিয়ে এসে চোখে চোখ রাখলো। জানভি ভয়ে ঢোক গিলে এদিক সেদিক দেখছে।
“সহ্য করছি বলে যা খুশী তাই বলছো। মাফ চাচ্ছি তবুও পাবলিক প্লেসে তামাশা করছো।”
জানভি ভয়ে ভয়ে বলল-
“আমি সত্যি আপনাকে চিনি না।”
“জানভি প্লিজ, আমি তো মাফ চাচ্ছি। যত খুশী রাগ অভিমান করো। দরকার হলে মারো আমাকে তবুও প্লিজ মজা করো না। আমি হারে হারে টের পাচ্ছি সেদিন তোমার কতটুকু কষ্ট হয়েছিল।”
“কোনদিন?”
“আবার? আমি বললাম না মজা না করতে?”
জানভি ভয়ে ফুপাতে শুরু করলো। তার সামনে থাকা ছেলেটার কান্ড দেখে তার ভয় করছে খুব। স্নিগ্ধ দাঁতে দাঁত চেপে বলল-
“হয়েছে ড্রামা? চলো এখন।”
“আমি আপনার সাথে কোথাও যাব না।”
স্নিগ্ধ নিজের চুল টেনে ধরে দাঁড়িয়ে রইলো। তার এত রাগ কার উপর হচ্ছে? দেবজানি না-কি নিজের উপর। কারণ সেদিন সে জানভির সাথে মজা না করতো আজ এই দিন আসতো না। স্নিগ্ধ চুল ছেড়ে নিজেকে শান্ত করলো। ঘনঘন নিশ্বাস ফেলছে সে। হঠাৎ পাশ থেকে কেজ একজন বলে উঠলো-
“দেবজানি?”
জানভি পাশে ফিরতেই কেঁদে উঠলো। দৌড়ে গেল সেখানে। স্নিগ্ধ দাঁড়িয়ে আছে। জানভির দিকে তাকাতেই রাগে চোখ বন্ধ করে মুখ ঘুরিয়ে ফেলল। জানভি ফুপাতে ফুপাতে বলল-
“রঞ্জন, দেখো ওই ছেলেটা কি বলছে। আমি তো ওকে চিনি না।”
“আচ্ছা আমি দেখছি।”
রঞ্জন এগিয়ে আসলো স্নিগ্ধর দিকে। স্নিগ্ধ রঞ্জনের দিকে তাকিয়ে বলল-
“কি হয়েছে ওর? এমন করছে কেন?”
“তোমাকে এড্রেস সেন্ড করার পর আর একটা মেসেজ দিয়েছিলাম পড়েছিলে?” “এড্রেস দেখার পর আমি আর অন্য মেসেজ চেক করি নি।”
“আমি লিখেছিলাম আমি না আসার পর্যন্ত তুমি দেবজানির সাথে দেখা করবে না। নিজের পায়ে নিজেই কুড়াল মেরে দিলে।”
“মিস্টার রঞ্জন দাস রাহুল। আমি আপনার কথা শুনতে বাধ্য নই।”
“ভেবে নাও স্নিগ্ধ, তুমি আমার কথা না শুনলে দেবজানিকে হারাবে।”
“মানে? কি হয়েছে ওর?”
“ডক্টর শামসুর নাহার ভেতরে আছেন গিয়ে দেখা করে সব জেনে নাও।”
স্নিগ্ধ এক নজর জানভিকে দেখে দৌড়ে চলে গেল। স্নিগ্ধ যেতেই জানভি নিশ্চিন্তের নিশ্বাস ফেলল। রঞ্জন এগিয়ে গেল জানভির দিকে৷
“ছেলেটা কে?”
“কেও না, চলো আইসক্রিম খেয়ে আসি।”
জানভি চোখের পানি মুছে মাথা নাড়াল।

স্নিগ্ধ রিসেপশনিস্টে গিয়ে ডক্টর শামসুর নাহারের কথা জিজ্ঞেস করে উনার চেম্বারে গেল। শামসুর নাহার পেশেন্ট দেখছেন। স্নিগ্ধ বাহিরে দাড়িয়ে অপেক্ষা করছে। কিছুক্ষণ পর পেশেন্ট বের হতেই স্নিগ্ধ ভেতরে গেল। ডক্টর শামসুর নাহার হাত ধুয়ে এসে দেখে একটা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে।
“জি, আমি আপনার কিভাবে সাহায্য করতে পারি?”
“আমার কিছু জানার ছিল ডক্টর।”
“বসুন”
স্নিগ্ধ চেয়ার টেনে বসলো। শামসুর নাহার টেলিফোনে কল দিয়ে কফি নিয়ে আসতে বলল। স্নিগ্ধর দিকে তাকিয়ে বলল-
“আপনি কি দেবজানি সরকার জানভির সম্পর্কে জানতে চান?”
“জি, আপনি কিভাবে জানলেন?”
“উনি আমার পেশেন্ট। আর আজ প্রথমবারের মতো কেও আসলেন উনার সম্পর্কে জানতে। রঞ্জন দাস আমাকে আগেই বলেছিলেন যে একটা ছেলে নিশ্চয়ই কোনো একদিন আসবে দেবজানির সম্পর্কে জানার জন্য। তো আপনি দেবজানির সাথে দেখা করেছেন?”
স্নিগ্ধ হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়াল।
“তো উনি আপনাকে চিনে নি তাই তো?”
“ডক্টর এমনটা কেন হলো? ওর কি এক্সিডেন্ট হয়েছিলো যার কারণে আমাকে চিনছে না?”
“না, দেবজানি একদম সুস্থ আছে।”
“তো আমাকে চিনলো না কেন?”
“আপনার নাম জানতে পারি?”
“স্নিগ্ধ রায়”
“স্নিগ্ধ, দেবজানির এমন একটা রোগ ধরা পড়েছে যার ফলে সে ধীরে ধীরে তার চেনা পরিচিত মানুষদের ভুলে যাচ্ছে।”
“মানে? ডক্টর প্লিজ বুঝিয়ে বলুন আমি কিছু বুঝতে পারছি না।”
“স্লোলি মেমোরি লস অর্থাৎ ধীরে ধীরে স্মৃতি হারিয়ে ফেলা। এটা এমন এক রোগ যে আপন থেকে আপন মানুষদের মুহূর্তে পর করে দেয়। দেবজানির এই রোগ গত ২ মাস আগে ধরা পড়েছে। তার আশে পাশে যে যে মানুষ আছে সে তাদের ভুলবে না। কিন্তু যারা তার আপন হয়েও তার সাথে থাকে না সে তাদের না দেখতে দেখতে ভুলে যাবে। হঠাৎ করে তাকে দেখলে চিনতে পারবে না।”
“আমি তো মাত্র ৩ মাসের জন্য ওর থেকে দূর ছিলাম ডক্টর। এত তারাতাড়ি কিভাবে?”
“মিস্টার রায়, এই রোগ খুব দ্রুত ব্রেইনে ইফেক্ট করে। দেবজানি গত দুইদিন আগে তার বাবাকে পর্যন্ত চিনতে পারছিলো না। কিন্তু কিছুক্ষণ পর তার স্মৃতি ফিরে এসেছে। কারণ তার বাবা মাত্র ২ দিনের জন্য তার থেকে দূর ছিল। আর আপনি ৩ মাস। এত তারাতাড়ি তার স্মৃতি ফিরবে না।”
“এই রোগ কি কারণে হলো তার?”
“এই রোগ হওয়ার একটাই কারণ। গভীর ডিপ্রেশনে চলে যাওয়া। ডিপ্রেশন মানুষকে মানসিক ভাবে ভেঙে ফেলে। আর স্লোলি মেমোরি লস একটি ভয়ংকর মানসিক রোগ।”
স্নিগ্ধ অবাক হয়ে বসে আছে। তার মাথার ভেতর ভনভন শব্দ হচ্ছে৷ সে রাগ হবে না-কি চিৎকার করে কাঁদবে বুঝতে পারছে না। একজন ওয়ার্ডবয় এসে কফি দিয়ে গেল।
“আপনি দেবজানির কি হোন?”
“আমি তার ডিপ্রেশনে যাওয়ার কারণ।”
“আমার মন বলেছিল আপনার সাথে নিশ্চয়ই দেবজানির এমন কোনো সম্পর্ক আছে যার ফলে তার এই রোগ হলো।”
“এখন আমি কি করবো ডক্টর? দূর চলে যাব তার থেকে।”
“দূর চলে গেলে সে আপনাকে পুরোপুরি ভাবে ভুলে যাবে। আমি তার চিকিৎসা করছি নিশ্চয়ই তার স্মৃতি আমি ফিরিয়ে আনবো। কিন্তু আপনাকে আমার সাহায্য করতে হবে।”
“কিভাবে?”

জানভি আর রঞ্জন পাশাপাশি হাঁটছে আর আইসক্রিম খাচ্ছে। জানভি ভ্রু কুঁচকে কি যেন ভেবে চলেছে। রঞ্জন জানভিকে দেখে বলল-
“কি হলো ম্যাম? কি ভাবছেন?”
“আমার মনে হলো আমি ওকে চিনি।”
জানভি রঞ্জনের দিকে তাকিয়ে আবার বলল-
“সে কে? আমি শিওর তুমি তাকে চিনো।”
“স্নিগ্ধ রায়, তুমি তাকে চিনো।”
“কিন্তু, আমি তো তাকে কেন চিনলাম না? রঞ্জন আমি কি ওকেও ভুলে গেলাম?”
“চিন্তা করো না দেবজানি। ধীরে ধীরে তোমার সব মনে এসে পরবে।”
তখনই পেছন থেকে স্নিগ্ধর কন্ঠ ভেসে আসলো।
“দাঁড়াও তোমরা।”
রঞ্জন আর দেবজানি দাঁড়িয়ে পেছনে ফিরলো। স্নিগ্ধ পকেটে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। জানভির ভয় করছে স্নিগ্ধর চাহনি দেখে। ছেলেটা খুব ভয়ংকর দৃষ্টিতে তাকায়। স্নিগ্ধ ধীরে ধীরে এগিয়ে এসে জানভির বরাবর দাঁড়াল। জানভি কাঁপছে হঠাৎ। রঞ্জনের দিকে তাকাতেই রঞ্জন চোখের ইশারায় বলল শান্ত থাকতে। জানভি আবার স্নিগ্ধর দিকে তাকাল। স্নিগ্ধ জানভির দিকে হাত এগিয়ে দিয়ে বলল-
“নিগ্ধ রায়, নাইস টু মিট ইউ।”
জানভি স্নিগ্ধর হাতের দিকে তাকাল। ছেলেটার কন্ঠ চেহারা সবই যেন তার চেনা তবুও মনে করতে পারছে না। জানভি কাঁপা কাঁপা হাত তুলে স্নিগ্ধর হাত ধরলো। স্নিগ্ধ ঠোঁটে বড়ো হাসি টেনে হ্যান্ড শেক করে বলল-
“দেবজানি সরকার জানভি, এক সময় আপনার ভ্যানিলা ফ্লেভারের আইসক্রিম অপছন্দ ছিল।”
জানভি আইসক্রিমের দিকে তাকাল। দুবার চোখের পলক ফেলে আবার স্নিগ্ধর দিকে তাকাল। রঞ্জন পাশ থেকে বলল-
“সময়ের সাথে সাথে মানুষও পরিবর্তন হয়।”
স্নিগ্ধ রঞ্জনের দিকে তাকিয়ে বলল-
“মাঝে মধ্যে পরিবর্তন হওয়া ভালো। যাই হোক, আজ আসি। আবার আগামীকাল আসবো।”
রঞ্জন মাথা নাড়াল। সামনে থেকে জানভির কন্ঠ ভেসে আসলো-
“আমার হাত না ছাড়লে আপনি যাবেন কিভাবে?”
স্নিগ্ধ জানভির দিকে তাকাল। আবার াহাতের দিকে তাকিয়ে হেসে দিলো। স্নিগ্ধর হাসি দেখে জানভিও হাসলো। স্নিগ্ধ হাসতে হাসতেই জানভির দিকে তাকিয়ে বলল-
“সত্য মন থেকে হাত ধরলাম। এত সহজে ছাড়ছি না।”
স্নিগ্ধর কথা শুনে জানভির বুকের বা পাশে ধুকপুক ধুকপুক শুরু হয়ে গেল। তারাতাড়ি স্নিগ্ধর হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে মুখ ঘুরিয়ে ফেলল। স্নিগ্ধ রঞ্জনের দিকে তাকিয়ে বলল-
“আসি, খেয়াল রেখো তার।”
বলেই স্নিগ্ধ ঘুরে হাঁটা ধরলো। জানভি তাকিয়ে আছে স্নিগ্ধর যাওয়ার পথে।

রাতেরবেলা…..
স্নিগ্ধ লাগেজে তার জামা কাপড় রাখছে। মা আর বাবা দাঁড়িয়ে আছে খাটের পাশে। স্নিগ্ধ মা আর বাবার দিকে এক নজর দিয়ে আবার লাগেজের দিকে তাকাল। বাবা বলল-
“তুমি যাচ্ছো কোথায় সেটা এখনো বললে না।”
“বললাম তো পাশের এলাকায়। ফিরে আসবো আবার। আর আমি বাইক নিয়ে যাচ্ছি। যদি তোমাদের দেখতে ইচ্ছে করে ১০ মিনিটে এসে পরবো বাসায়।”
মা বলল-
“কেন যাচ্ছো?”
“তোমার ছেলে অনেক বড়ো ভুল করেছে। সেই ভুলের শাস্তি তো তার পেতেই হবে। কিন্তু তুমি চিন্তা করো না। শাস্তি শেষ হতেই আমি আমার জীবনের সবচেয়ে বড়ো পাবো।”
মা লম্বা নিশ্বাস ফেললেন। ছেলের কথার সাথে উনু পারবেন না ধরে নিয়েছে। আর ছেলেকে হাজারবার জিজ্ঞেস করলেও ছেলে বলবে না কোথায় যাচ্ছে আর কেন যাচ্ছে। স্নিগ্ধ লাগেজ বন্ধ করে লম্বা নিশ্বাস ফেলে বলল-
“কাজ সম্পূর্ণ হলো। চলো এখন ডিনার করা যাক। সকালে আমার তারাতাড়ি বের হতে হবে।”
ডিনার করে এসে স্নিগ্ধ বিছানায় গা এলিয়ে দিলো। প্রচন্ড মন খারাপ তার। মনে পড়ছে আগের দিনগুলো যখন রাত ৩/৪ টার পর্যন্ত জেগে জানভির সাথে কথা বলতো। আর এখন? স্নিগ্ধ লম্বা নিশ্বাস ফেলে চোখ বন্ধ করলো।

ভোর বেলায় স্নিগ্ধর ঘুম ভাঙলো। উঠে জগিং-এ চলে গেল। বাড়ি থেকে কিছুটা দূর জগিং পার্ক। পার্কে গিয়ে স্নিগ্ধ একটা বেঞ্চে বসে ঘনঘন নিশ্বাস ফেলছে। অনেকদিন পর জগিং করছে তাই ক্লান্ত হয়ে পরেছে তারাতাড়ি। জায়গাটা তার অনেক পছন্দের। ভার্সিটির ছুটির পর জানভি আর সে এখানেই আসতো ঘুরতে। পুরো পার্ক ঘুরে ফিরে তারপর বাসায় ফিরতো। আগের স্মৃতি তাড়া করলে খুব কষ্ট হয়। জানভির কবে সব মনে আসবে? আচ্ছা স্মৃতি ফিরে আসার পর কি জানভি তাকে ঘৃণা করবে। স্নিগ্ধ দাঁড়িয়ে পরলো। সে তো এমনটা ভাবে নি আগে। এখন তার ভয় করছে। মনে হচ্ছে স্মৃতি ফেরালেও সে জানভিকে হারিয়ে ফেলবে। স্নিগ্ধ পকেট থেকে মোবাইল বের করে ডক্টরকে কল করলো। সে গতকাল নাম্বার নিয়ে এসেছে। ডক্টর কল রিসিভ করতেই স্নিগ্ধ বলল-
“ডক্টর একটা বিষয় নিয়ে আমি আবার কনফিউজ হয়ে পড়েছি।”
“আবার কি হলো?”
“আপনাকে তো সব বললাম। এখন আমি ভাবছি স্মৃতি ফেরার পর যদি জানভি আমাকে ঘৃণা করে? আমি তার সাথে যা করেছি তা মাফ করার মতো না।”
“স্নিগ্ধ, তুমি অকারণে ভয় পাচ্ছো।”
“না ডক্টর, আপনি বুঝতে পারছেন না কত বড়ো সমস্যার সম্মুখীন হতে চলেছি আমি।”
“কিছু হবে না। আমি আছি তো। তুমি আজ তারাতাড়ি এসে পরো।”
“হ্যাঁ আমি ২ টার মধ্যে আসছি।”
স্নিগ্ধ কল কেটে আকাশের দিকে তাকাল। ভয় করছে তার খুব। কিন্তু হার মানলে চলবে না। শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করবে জানভিকে পাওয়ার।

ডক্টর শামসুর নাহার চেম্বার থেকে বেরিয়ে বাহিরে আসলেন। ওয়ার্ডবয়কে বললেন বেশী করে ভেজা মাটি নিয়ে আসতে। বলে বাহিরে গেলেন। উনার সব পেশেন্টরা বাহিরে যার যার মতো সময় কাটাচ্ছে। দেবজানি বেশীরভাগ পেইন্টিং করে সময় কাটায়। স্লোলি মেমোরি লস এর পেশেন্টের পেইন্টিং করাও এক ধরণের রিকোভারি। কারণ ড্রইং করার মাধ্যমে পেশেন্ট নানা ধরনের জিনিস তৈরী করে। এতে তার মানসিক বিকাশ হয়ে স্মৃতি ফেরার চান্স বেড়ে যায়। ডক্টর এগিয়ে এসে তালি বাজিয়ে সবাইকে ডাকলেন।
“এটেনশন এভরিওয়ান, সবাই প্লিজ এখানে আসুন।”
উনার সব পেশেন্ট উনার দিকে এগিয়ে গেলেন। জানভি পেইন্টিং রেখে হাত মুছতে মুছতে এগিয়ে আসলো। ডক্টর সবার দিকে চোখ বুলিয়ে হাত উল্টে ঘড়ি দেখলো। স্নিগ্ধ এখনো আসে নি। ডক্টর লম্বা নিশ্বাস ফেলল।
“আজ আমরা নতুন কোনো কাজ করবো। এখানে কে কে মাটির পুতুল বানাতে পারেন?”
সবাই হাত তুললো।
“ভেরি গুড, আজ আমরা সবাই মাটি দিয়ে পুতুল বানাবো। আপনি চাইলে পুতুল ছাড়া অন্য কিছু বানাতে পারেন। মাথায় যা আসবে বানিয়েন। যারটা সবচেয়ে বেশী সুন্দর হবে তার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে।”
সবাই আনন্দে লাফিয়ে উঠলো। ডক্টর মুচকি হাসলেন সবাইকে দেখে। উনার প্রত্যেক পেশেন্টের মধ্যে বাচ্চামি স্বভাব আছে। খুব সহজে সবাইকে খুশী করা যায়। ডক্টর আবার বললেন-
“আসুন এই খেলায় একটা পরিবর্তন নিয়ে আসা যাক। আপনারা সবাই নিজেদের পছন্দের মতো পার্টনার খুঁজে নিন। দুজম মিলে একটা টিমের মতো কাজ করলে আরো সুন্দর হবে।”
সবাই ডক্টরের কথা শুনে মাথা নাড়াল। যে যে যার মতো পার্টনার খুঁজছে। জানভি কনফিউজ হয়ে এখানে সেখানে দেখছে৷ কি করবে সে বুঝতে পারছে না। হঠাৎ তার হাত ধরে কেও উঁচু করে বলল-
“ডক্টর আমি আমার পার্টনার পেয়ে গিয়েছি।”
জানভি পাশে তাকিয়ে দেখে স্নিগ্ধ নামের ছেলেটি হাসিমুখে ডক্টরের দিকে তাকিয়ে আছে। জানভির চোখ বড়ো বড়ো হয়ে গেল স্নিগ্ধকে দেখে। তারাতাড়ি নিজের হাত ছাড়িয়ে বলল-
“হোয়াট ডু ইউ মিন? আমি আপনার পার্টনার হতে চাই না।”
স্নিগ্ধ চোখ ছোটো ছোটো করে জানভির দিকে তাকিয়ে বলল-
“বাট হোয়াই? আমি অনেক ভালো পার্টনার হবো। আর দুজন মিলে সবচেয়ে সুন্দর মাটির পুতুল বানাবো।”
“আমি একাই সবার চেয়ে সুন্দর পুতুল বানাতে পারবো। কারণ আমি পুতুল বানাতে এক্সপার্ট।”
“সেম জানু সেম, আমিও এক্সপার্ট। ইউ এক্সপার্ট মি এক্সপার্ট ইকুয়াল টু একস্ট্রা এক্সপার্ট।”
“আপনার মাথায় নিশ্চয়ই সমস্যা আছে। ডক্টর শামসুর নাহারের কাছ থেকে চিকিৎসা করে নিন।”
বলেই জানভি ডক্টরের দিকে তাকিয়ে বলল-
“ডক্টর আমি পার্টনার চাই না। আর এনাকে তো আরো না।”
“কেন? স্নিগ্ধ খুব ভালো পুতুল বানাতে পারে। আই থিংক হি ইজ বেস্ট ফর ইউ।”
“বাট ডক্টর…”
“দেবজানি, ইট জাস্ট এ গেইম।”
জানভি রাগে গজগজ করতে করতে স্নিগ্ধর দিকে তাকাল। স্নিগ্ধ ভ্রু নাচিয়ে বলল-
“শুনলে ডক্টর কি বলল? আই এম বেস্ট ফর ইউ। দ্যাটস মিন উই আর মেইড ফর ইচ আদার।”
“জাস্ট শাট আপ, আপনি এখানে কি করছেন? এই হসপিটালে একমাত্র মানসিক রোগে আক্রান্ত হওয়া মানুষ থাকে।”
“আমিও তো রোগী।”
“রোগী?”
জানভি কনফিউজ হয়ে গেল। স্নিগ্ধ দাঁত বের করে হেসে বলল-
“আমিও আপনার মতো ডক্টর শামসুর নাহারের পেশেন্ট।”
“তো কি রোগ আছে আপনার জানতে পারি?”
“মগজ, আমি আমার মগজ খুঁজে পাচ্ছি না।”
জানভি মুখে বড়ো হাসি ফুটিয়ে বলল-
“মগজ? আমি জানি তো কোথায়।”
“কোথায়?”
“আপনার মগজ আপনার হাঁটুতে। তাই তো এমন উল্টা পাল্টা কথা বলছেন।”
জানভির রাগ বেড়েই চলেছে। স্নিগ্ধ সিরিয়াস মুডে বলল-
“তুমি হঠাৎ আমাকে দেখে রাগছো কেন?”
“জানি না, কিন্তু আপনাকে দেখলে মন চায় আপনাকে কেটে দু টুকরো করে নদীতে ভাসিয়ে দেই।”
স্নিগ্ধর অবাক হয়ে গেল জানভির কথা শুনে। দৌড়ে ডক্টরের কাছে গেল। ডক্টর স্নিগ্ধকে দেখে বুঝে গিয়েছে নিশ্চয়ই কিছু হয়েছে। স্নিগ্ধ কিছু বলার আগেই ডক্টর বলল-
“বলো আবার কি হলো?”
“জানভি বলছে আমাকে দেখলে না-কি তার রাগ হয়। ডক্টর এর মানে বুঝেছেন?”
“হ্যাঁ, তুমি ওর সাথে যা করেছো দেবজানির স্মৃতি থাকুক বা না থাকুক ও তোমাকে দেখলে রাগবেই।”
“আমার ভবিষ্যত অন্ধকার। এই মেয়ের স্মৃতি ফিরলে আমাকে সত্যি দু টুকরো করে নদীতে ভাসিয়ে দিবে।”
ডক্টর শব্দ করে হেসে স্নিগ্ধর দিকে একটা ছোটো সাইজের বোল এগিয়ে দিয়ে বলল-
“এখন গিয়ে ওর সাথে পুতুল বানাও। আর ও যা যা বলতে তাই করো নাহলে স্মৃতি ফেরার আগেই তোমাকে কেটে নদীতে ভাসিয়ে দিবে।”
ডক্টরের কথা শুনে স্নিগ্ধ যেন আহত হয়ে গেল। মাটির বোল নিয়ে জানভির দিকে এগিয়ে আসলো। জানভি হাত আড়াআড়িভাবে ভাজ করে দাঁড়িয়ে আছে। স্নিগ্ধকে দেখে বলল-
“আমি পুতুল বানাবো না।”
“তো কি বানাবে?”
“আমার ইচ্ছা ছিল একদিন মাটি দিয়ে একটা মানুষের মাথা বানাবো।”
“পারবে তুমি?”
“অফকোর্স”
“তো কার মাথা বানাবে?”
জানভি স্নিগ্ধর চেহারায় চোখ বুলালো। স্নিগ্ধ ভ্রু কুঁচকে নিজেকে ইশারা করলো। জানভি হেসে মাথা নাড়াল। স্নিগ্ধর কাছে বিষয়টা মজাদার মনে হলো। সে সম্মতি দিলো। জানভির মনে হলো সে আকাশের চাঁদ পেয়ে গিয়েছে। কারণ তার মাথায় পৈশাচিক বুদ্ধি ঘুরছে।

২ ঘন্টা সময় লাগলো জানভির মাটির তৈরী স্নিগ্ধর মাথা বানাতে। আশে পাশের সবাই প্রশংসা করছে জানভির স্ট্যাচু দেখে। স্নিগ্ধ হা হয়ে তাকিয়ে আছে। হুবহু তার মতো দেখতে মাটির স্ট্যাচুটা। ডক্টর শামসুর নাহার বললেন-
“আজকের গেইমের উইনার জানভি এবং স্নিগ্ধ।”
সবাই তালি বাজালো। জানভি স্নিগ্ধর দিকে তাকিয়ে বলল-
“আমি কষ্ট করে বানালাম আর ফ্রিতে আপনিও ক্রেডিট পেয়ে গেলেন।”
স্নিগ্ধ ভ্রু কুঁচকে বলল-
“এক্সকিউজ মি, আমি তিনবার পানি এনে দিয়েছি। কষ্ট আমিও করেছি।”
“খুব কষ্ট করেছেন।”
জানভি ভেংচি কেটে ডক্টরের দিকে তাকিয়ে বলল-
“ডক্টর এই স্ট্যাচুটা কি করবো এখন?”
ডক্টরের মুখের হাসি উড়ে গেল। উনি তো এটা ভাবেই নি যে পেশেন্টরা মাটি দিয়ে যা যা বানাবে সেগুলো কি করবে। হসপিটালে তো রাখা সম্ভব বা। বাগানেও রাখতে পারবে না। ডক্টরকে চুপ থাকতে দেখে জানভি বলল-
“আপনি পারমিশন দিলে আমি ব্যবস্থা করতে পারি।”
“কি করবে?”
“মনে আছে যখন আমি প্রথমবার এসেছিলাম খুব রাগী মেজাজে ছিলাম। আপনি আমাকে বলেছিলেন যার উপর রাগ হবে তার নাম কাগজে লিখে ছিঁড়ে ফেলতে।”
“হ্যাঁ, আর তুমি সর্বপ্রথম আমার নাম লিখেছিলে।”
সবাই হাসলো ডক্টরের কথা শুনে। জানভি বাঁকা হাসি দিয়ে বলল-
“এখনো কি এই টেকনিকটা ব্যবহার করতে পারবো?”
ডক্টরের মন বলছে মেয়েটা কোনো কান্ড ঘটাবে। তবুও সম্মতি জানালো। জানভি স্নিগ্ধর দিকে তাকাল। স্নিগ্ধ গুনগুন করে তার ফাটা গলা দিয়ে শব্দ বের করছে। জানভি বিরক্ত হলো। স্ট্যাচুর দিকে এগিয়ে গেল। স্নিগ্ধ জানভির দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকাল। জানভির হাতে ছুরি কিন্তু ওর কাছে ছুরি কিভাবে আসলো? স্নিগ্ধ এক কদম এগিয়ে যেতেই জানভি ছুরি দিয়ে স্ট্যাচুর কপালে ঢুকিয়ে দিলো।

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here