অবাধ্য_মন,পর্ব_৫

0
770

#অবাধ্য_মন,পর্ব_৫
#শোভা_আক্তার(লাভলী)

স্নিগ্ধর বাবা মাথায় হাত দিয়ে বসে আছেন। মা অবাক হয়ে স্নিগ্ধর দিকে তাকিয়ে আছেন। স্নিগ্ধ সোফা ছেড়ে দাঁড়িয়ে বলল-
“এটা শুধুমাত্র রিকুয়েস্ট ভেবে ভুল করো না।”
বাবা মাথা ছেড়ে স্নিগ্ধর দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল-
“তোমার এখনো পড়াশোনা শেষ হয়নি আর তুমি বলছো বিয়ে করবে?”
“তো? আর মাত্র ১ বছর পর আমার ভার্সিটির পড়াশোনা শেষ হয়ে যাবে। তারপর আমি তোমার সাথে কাজে যাব।”
“তোমার ইচ্ছে ছিল অস্ট্রেলিয়া গিয়ে হায়ার এডুকেশন করার। এখন হঠাৎ কি হলো জানতে পারি?”
“তুমি ভালো মতো জানো বাবা আমার কি হয়েছে।”
মা ধমকের স্বরে বললেন-
“ফাজলামো বন্ধ করো স্নিগ্ধ। তুমি একটা সাধারণ মেয়ের জন্য নিজের জীবনকে তুচ্ছ ভাবতে পারো না।”
“আমি ভাবছি না। তাকে ছাড়া আমার জীবন জীবন না।”
“ছি স্নিগ্ধ, আমি স্বপ্নেও ভাবি নি তুমি এমন হয়ে যাবে।”
“মা, দুনিয়া এত নিষ্ঠুর কেন? নিজে দোষ করলে সেটা দোষ না অন্যেরা সেই দোষ করলে সেটা দোষ।”
“কি বলতে চাও তুমি?”
“তোমরাও তো পালিয়ে বিয়ে করেছিলে। আমি তো পালাচ্ছি না। নিজের ইচ্ছার কথা বললাম বলে এসব শোনাচ্ছো?”
“বেয়াদবি করো না স্নিগ্ধ। তোমার আর আমাদের কেস এক না। দেবজানির বাবা এখন খুব রেগে আছে তোমার উপর। উনি কখনো এই প্রস্তাবে রাজি হবেন না।”
বাবা বললেন-
“তোমার মা ঠিক বললেন। আমি পারবো না কারো সামনে নিচা হতে।”
“আমি তোমার সম্মানে কোনো দাগ আসতে দেবো না। উনি তোমার সাথে বাজে ব্যবহার করলে আমি নিজে জানভিকে আমার জীবন থেকে ছুঁড়ে ফেলে দিবো।”
“বলা যতটা সহজ করা কতটা কঠিন।”
স্নিগ্ধ আর কিছু বলল না। মা বাবাকে কিভাবে রাজি করাবে বুঝতে পারছে না। আর বসে থাকলো না। দ্রুত চলে আসলো নিজের ঘরে৷ রাগে শরীর গজগজ করছে। রঞ্জন নিশ্চয়ই কিছু ভেবে রেখেছে। স্নিগ্ধর যেভাবেই হোক জানভিকে বিয়ে করতে হবে৷ সে রাগের মাথায় যা নয় তা বলেছিলো সেদিন। কিন্তু আসল কথা স্নিগ্ধ পারবে না কারো উপর রাগ তুলতে। স্নিগ্ধ বিছানায় বসে হেলান দিলো। প্রেশার বার বার লো হয়ে যাচ্ছে তার চিন্তায়। জানভিকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে তার। কিন্তু মেয়েটা তো তাকে দেখলে রেগে যায়। স্নিগ্ধর যেভাবেই হোক জানভির সাথে দেখা করতেই হবে।

জানভি প্রতিদিন ভার্সিটি আসে। স্নিগ্ধর সাথে দেখা হলেও কথা বলে না। স্নিগ্ধ নিজ থেকে কথা বলার চেষ্টা করলে জানভি তার অপমান করে দেয় সবার সামনে। এই বিষয়টা স্নিগ্ধর মোটেও পছন্দ না৷ স্নিগ্ধ ওকে মাত্র একবার কষ্ট দিয়েছে কিন্তু জানভি বার বার তাকে কষ্ট দেয়। স্নিগ্ধ মাঠে বসে আছে বন্ধুদের সাথে। বন্ধুরা তার কথা শুনে একে অপরের চেহারা দেখছে। তাদের মধ্যে একজন বলল-
“তুই কি সত্যি বিয়ে করতে চাস?”
স্নিগ্ধ তার দিকে বিরক্ত ভাব নিয়ে বলল-
“আমাকে দেখে কি তোর মনে হচ্ছে আমি তোদের সাথে মজা করছি?”
“না, কিন্তু নিজের লাইফ সেটেল্ড না করে কিভাবে বল?”
“সেটা আমি করে নিবো। আমার জীবনে জানু না থাকলে আমি কি করবো তুই-ই বল।”
“আমরা কোনোদিম কল্পনাও করি নি একটা মেয়ের জন্য তুই তোর জীবন এভাবে নষ্ট করবি।”
স্নিগ্ধ জবাব দিলো না। সবাই কেন এই একটা কথা বলছে সে বুঝতে পারছে না। তখনই তার এক আর বন্ধু বলল-
“এই এই বৌদি এখানে আসছে।”
স্নিগ্ধ তার কথা শুনে দ্রুত পেছনে তাকাল। জানভি ধীরপায়ে এগিয়ে আসছে। স্নিগ্ধ ও তার বন্ধুরা দাঁড়িয়ে পরলো। জানভি তার বরাবর দাঁড়িয়ে চোখ ঘুরিয়ে তার বন্ধুদের দেখলো। স্নিগ্ধ তার বন্ধুদের ইশারায় বলল চলে যেতে। সবাই যেতেই স্নিগ্ধ হাসিমুখে জানভির দিকে তাকাল। জানভি বাঁকা হাসি দিয়ে বলল-
“আকাশে বাতাসে ভেসে আমার কানে একটা কথা আসলো। শিওর হতে আসলাম কথাটা কতটুকু সত্যি।”
“কোন কথা জানু?”
“আমাকে বিয়ে করার প্ল্যান করছো শুনলাম।”
স্নিগ্ধ ভ্রু কুঁচকালো। তার বাবা মা ছাড়া তো আর কেও জানতো না। আর এখন তার বন্ধুদের বলল সে। স্নিগ্ধ জিজ্ঞেস করলো-
“তুমি এই কথা কোথা থেকে জানলে?”
“যেখান থেকেই জানলাম সেটা আসল কথা না। স্নিগ্ধ রায়, আমার পক্ষে তোমাকে বিয়ে করা সম্ভব না। তোমার আর আমার স্ট্যাটাস মিলে না। তুমি কোথায় আমি কোথায়। কোটিপতি বাবার ছেলে তুমি। দেখতেও খুব সুন্দর। আরে তোমার জন্য তো মেয়েদের লাইন লেগে আছে। কি দরকার আমার মতো মেয়ের পেছনে পড়ে থাকা? আমি তোমাকে রিকুয়েষ্ট করছি আমার পিছু ছেড়ে দাও। তোমার কারণে আমি যাতে আর আমার বাবার অপমান না হয়। আমার মনে কতটুকু রাগ ঘৃণা জমে আছে সেটা এখন বের করলে তোমার সব মান সম্মান মাটিতে মিশে যেত। তুমি এসব বিষয়ে জানো না বলে সবার আড়ালে বললাম। আবার বলছি, ছেড়ে দাও আমার পিছু।”
বলেই জানভি পেছনে ফিরে হাঁটা ধরলো। স্নিগ্ধ এখনো থতমত খেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। জানভির বাবার অপমানের বিষয়টা সে বুঝতে পারে নি। বেশ কিছুক্ষণ পর জানভির প্রত্যেক কথা ভালো মতো ভেবে রাগে নিজের চুল চেপে ধরলো। দ্রুত পার্কিং প্লেসে গিয়ে বাইক বের করে বাসায় চলে আসলো। মেইন দরজা খোলা ছিলো। স্নিগ্ধ ভেতরে প্রবেশ করতেই দেখে তার বাবার বন্ধুরা এসেছে। বাবা স্নিগ্ধকে দেখে দাঁড়িয়ে হাসিমুখে বলল-
“গাইস, এইযে আমার ছেলে স্নিগ্ধ। ভার্সিটি থেকে ফিরেছে। স্নিগ্ধ, সবাইকে প্রণাম করো।”
“তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে।”
বাবা ভ্রু কুঁচকে স্নিগ্ধর দিকে তাকিয়ে বলল-
“বেয়াদবি করো না। যা বলেছি তা করো।”
স্নিগ্ধ সবার উদ্দেশ্যে বলল-
“সবাইকে আমার নমস্কার, আপনারা একটু অপেক্ষা করুন আমার আর বাবার কিছু জরুরি কথা আছে।”
স্নিগ্ধর বাবা রাগে কটমট করছে। কিন্তু সবার সামনে কিছু বলতে পারলো না। স্নিগ্ধ এগিয়ে গেল নিজের ঘরে। সে জানে বাবা নিশ্চয়ই আসবে। স্নিগ্ধ ঘরে পায়চারি করছে। তখনই তার বাবা আর না আসলেন। বাবা এসে স্নিগ্ধর হাত ধরে ঝাঁঝিয়ে বললেন-
“তোমার সাহস কি করে হলো এভাবে কথা বলার? কতবার শিখিয়েছি মেহমানদের সামনে সুন্দর মতো ব্যবহার করতে?”
“আমি বাজে ব্যবহার করি নি। আমি শুধু বলেছি তোমার সাথে আমার জরুরি কথা আছে।”
“কি এমন জরুরি কথা যার কারণে তুমি এভাবে চলে আসলে?”
“তুমি জানভির বাবাকে কল দিয়েছিলে?”
“হ্যাঁ”
“কী বলেছো কল দিয়ে?”
“আমি সেই মেয়ের পুরো ডিটেইলস বের করেছি। মেয়ে ভালো, কিন্তু তার বাবা একজন অহংকারী মানুষ৷ আমি প্রথম তার সাথে ভালো ব্যবহার করেছিলাম। কিন্তু সে তোমার সম্পর্কে উল্টা পাল্টা বলেছিল তাই আমি সহ্য করতে পারি নি৷ তাদের যোগ্যতা কতটুকু দেখিয়ে দিয়েছি।”
“কী দরকার ছিলো? তার বাবা এমনিতেই আমাকে সহ্য করতে পারে না তুমি আরো প্যাঁচ বাঁধিয়ে দিলে।”
“ওই মেয়ে ছাড়া পৃথিবীতে আরো অনেক মেয়ে আছে স্নিগ্ধ।”
“আর এই পৃথিবীতে ওই মেয়ে ছাড়া আমি আর কাওকে চাই না বাবা।”
“স্নিগ্ধ লাস্ট ওয়ার্নিং, যা হয়েছে সব ভুলে যাও। আমি আর এসব সহ্য করতে পারবো না। আর তুমি যদি সেই মেয়েটাকে পালিয়ে দিয়ে করার চেষ্টাও করো আমার থেকে খারাপ আর কেও হবে না।”
বলেই বাবা হনহন করে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। স্নিগ্ধ রাগে ঘনঘন নিশ্বাস ফেলছে৷ দাঁতে দাঁত চেপে বিছানার চাদর ধরে টেনে ফেলে দিলো। কি করলে তার মাথা ঠান্ডা হবে বুঝতে পারছে না। মা শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে স্নিগ্ধর দিকে। উনার ছেলে এমন ছিলো না। এক সময় উনিও ভালোবাসার কারণে নিজের বাবা মাকে কষ্ট দিয়েছিলেন আর আজ ছেলের কারণে উনারাও কষ্ট পাচ্ছেন৷ এখন বুঝতে পারছেন যেমন কর্ম তেমন ফল। স্নিগ্ধ মায়ের দিকে তাকিয়ে কান্নাজড়িত কন্ঠে বলল-
“বাবা না বুঝতেও তুমি আমার মনের খবর রেখেছো মা। প্লিজ আমাকে মানাও প্লিজ।”
“আমি জানি না আমি বুঝতে পারছি কিনা৷ একদিকে আমার স্বামী আর একদিকে আমার ছেলে। দুজনই আমাকে না জিজ্ঞেস করে দুই পথ বেছে নিয়েছে৷ আর আমিই রয়ে গেলাম একা। এখন আমি কার পথে হাঁটা ধরবো বুঝতে পারছি না।”
বলেই মা মাথা নিচু করে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন। স্নিগ্ধ ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছে। কলিজা ছিঁড়ে কান্না আসছে তার৷ বিছানায় বসে মাথা নিচু করে রাখলো।

রাতেরবেলা…..
জানভি জানালার পাশে দাঁড়িয়ে আছে। মনে নানা ধরণের কথা ঘুরপাক খাচ্ছে। আজ সে প্রথমবারের মতো বাবাকে কাঁদতে দেখেছে। এত কষ্ট কখনো হয় নি। তখনই দরজায় ঠকঠক করার শব্দ আসলো। জানভি ভাবলো দরজা তো খোলাই রেখেছে সে৷ পেছনে ফিরে দেখে বাবা মা দাঁড়িয়ে আছে।
“দরজা তো খোলা ভেতরে আসো।”
মা বললেন-
“মেয়ে বড়ো হয়েছে পারমিশন না নিয়ে তো হুটহাট করে আসতে পারি না।”
জানভি মুচকি হেসে কিছু কদম এগিয়ে আসলো। বাবা মা ভেতরে প্রবেশ করে খাটে বসলেন। বাবা জানভিকে ইশারায় পাশে এসে বসতে বলল। জানভি বাবার পাশে বসতেই বাবা জানভির হাত নিজের দুহাতের মুঠোয় নিয়ে বললেন-
“মা, শুনেছিলে তোমার আর একটা ছোট্ট বোন হয়েছিল। যে জন্মের কিছুক্ষণ পরই আমাদের ছেড়ে আবার ফিরে গিয়েছিল।”
জানভি হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়াল।
“সে চলে যাওয়ার পর তোমার প্রতি ভালোবাসা আর যত্ন আমাদের আরো বেড়ে যায়। কারণ হলো ভয়। আমরা তোমাকে হারাতে পারবো না। তুমি এখন আমাদের প্রথম আর শেষ সন্তান। তোমার কিছু হয়ে গেলে আমাদের কি হবে।”
“বাবা, আমি সবসময় তোমাদের সাথে আছি। আমার বাবা মায়ের থেকে বেশী জরুরি আর কেও না।”
“হ্যাঁ মা জানি, জানি তুমি আমাকে অনেক ভালোবাসো। কিন্তু মা, তুমি তো মেয়ে মানুষ। মেয়ে মানুষ তো সবসময় বাবা মায়ের সাথে থাকতে পারে না।”
“বাবা, যা বলতে চাও নিশ্চিন্তে বলো।”
বাব জানভির মায়ের দিকে তাকাল। মা চোখের ইশারায় বলল বলে দিতে। বাবা জানভির দিকে তাকিয়ে বললেন-
“তোমার বিয়ের কথা ভাবছি আমরা।”
“রঞ্জনের সাথে?”
“তুমি কি করে জানলে?”
জানভি হেসে বাবার দুগাল ধরে টেনে বলল-
“কারণ আমি তোমার মেয়ে।”
বাবা জানভির দুহাত ধরে বললেন-
“সম্পূর্ণ ইচ্ছা তোমার। তুমি যা বলবে তাই হবে।”
“বাবা আমি ২ দিন সময় চাই।”
“নিশ্চয়ই”
জানভি হাসিমুখে বাবার বুকে মাথা রেখে জড়িয়ে ধরলো। বাবা জানভির মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন। জানভি বুঝতে পারছে না তার মন কী চাচ্ছে। কষ্টের ক্ষত সৃষ্টি হচ্ছে মনে কিন্তু বাবার হাসি সেই ক্ষতের মলম হয়ে যাচ্ছে৷

পরেরদিন…..
স্নিগ্ধ রাগে কটমট করছে। সে কল্পনাও করেনি সে তার ভালোবাসার কারণে বাবাকে এত কষ্ট দিবে। গতকাল বাবার সাথে কথা বলতে গিয়েছিল। দরজার আড়াল থেকে বাবার কান্নার শব্দ পেয়েছে। স্নিগ্ধ সারারাত ঘুমাতে পারে নি। কষ্টে বুক ছিঁড়ে যাচ্ছিল। স্নিগ্ধ ঘড়ির দিকে তাকাল। ভার্সিটির ছুটি হয়ে যাবে কিছুক্ষণের মধ্যে। আজ ভার্সিটি যায় নি সে। কারণ জানভির সাথে তার বাসায় বোঝাপড়া আছে। কিছুক্ষণ পর স্নিগ্ধ বাসা থেকে বের হলো। বাইক ফুল স্পিডে চালিয়ে জানভির বাসায় গেল। জানভির বাড়ির দরজার সামনে জানভি ও রঞ্জনকে রিকশা থেকে নামতে দেখে স্নিগ্ধ বাইক থামালো। জানভি আর রঞ্জন স্নিগ্ধকে দেখে একে অপরের দিকে তাকাল। স্নিগ্ধ বাইক সাইডে রেখে দ্রুত হেটে জানভির বাসায় ঢুকলো। রঞ্জন ভ্রু কুঁচকে জানভির দিকে তাকিয়ে বলল-
“ও হঠাৎ আসলো কেন?”
“জানি না, চলো ভেতরে গিয়ে দেখি।”
রঞ্জন আর জানভি ভেতরে গেল দ্রুত। স্নিগ্ধ হাত আড়াআড়ি ভাবে ভাজ করে দাঁড়িয়ে আছে। জানভি আর রঞ্জন তার সামনে এসে দাঁড়াল। স্নিগ্ধর এদিক সেদিক দেখছে কিন্তু জানভির দিকে তাকাচ্ছে না। রঞ্জন বলল-
“তুমি হঠাৎ এখানে এলে যে?”
স্নিগ্ধ জবাব দিলো না। তখনই জানভির বাবা ঘর থেকে বেরিয়ে আসলেন। সাথে জানভি মা-ও আসলেন। বাবা এসে স্নিগ্ধর বরাবর দাঁড়াল। স্নিগ্ধ হাসিমুখে বলল-
“নমস্কার স্যার, কেমন আছেন?”
“তুমি এখানে কেন আসলে?”
“আপনার সাথে দেখা করতে।”
“আমি তোমার চেহারা দেখতে চাই না তুমি যেতে পারো।”
“স্যার রাগছেন কেন? আমি মাথা ঠান্ডা রেখে কথা বলতপ এসেছি। শুনলাম আপনার মেয়ের সাথে আমার বিয়ের কথা বলার জন্য বাবা কল দিয়েছিলেন।”
“না, তোমার বাবা আমার অপমান করার জন্য কল দিয়েছিলেন।”
“স্যার ভালো মতো ভাবুন বাবা বিয়ের কথা নিশ্চয়ই বলেছিলেন।”
“হ্যাঁ বলেছিল, এরপর যা নয় তা বলে অপমান করেছে আমাকে।”
“আপনি আমার বাবাকে কি বলেছিলেন?”
“যা সত্য তাই, তুমি আমার জীবনে দেখা সবচেয়ে বাজে ছেলে। তোমার সাথে আমার মেয়ের বিয়ে দেয়া মানে তার জীবন ধ্বংস করে দেয়া।”
“যাক, এখন আমার মন শান্তি পেলো। নিজের চোখে দেখে নিয়েছি আমার প্রতি আপনার ঘৃণা।”
জানভি বলল-
“তুমি কেন এসেছো সেটা বলো। তোমার তামাশা দেখতে চাই না।”
“তোমাকে কে বলেছে আমার তামাশা দেখতে। আমি তোমার বাবার সাথে কথা বলতে এসেছি। যাও তোমার প্রেমিককে নিয়ে ঘরে যাও। সেখানে গিয়ে তোমরা যা খুশী করো।”
জানভি থমকে গেল স্নিগ্ধর কথা শুনে। বাবা আর রঞ্জন একসাথে এগিয়ে আসলেন। বাবা কিছু বলার আগেই রঞ্জন স্নিগ্ধর কলার চেপে ধরে বলল-
“অমানুষ, তোকে আমি ঠিক নাম দিয়েছি তুই একটা অমানুষ। লজ্জা করে না এত বাজে চিন্তা মাথায় রাখতে?”
“কলার ছাড় রঞ্জন।”
“ছাড়বো না, তোর সাহস কি করে হলো এত বাজে কথা চিন্তা করার?”
“শেষ বার বলছি কলার ছাড়।”
“ছাড়বো না, কি করবি?”
স্নিগ্ধ রাগী দৃষ্টিতে রঞ্জনকে দেখে এক ঝটকায় নিজের কলার ছাড়িয়ে রঞ্জনের গালে ঘুষি মেরে দিলো। রঞ্জন মাটিতে পড়ে গেল। ঠোঁট কেটে রক্ত বেরিয়ে গিয়েছে তার। স্নিগ্ধ এগিয়ে গিয়ে রঞ্জনের কলার ধরতেই জানভি দৌড়ে এসে রঞ্জনকে ছাড়িয়ে স্নিগ্ধর গালে চড় মেরে দিলো। পরিবেশ হঠাৎ করে নিশ্চুপ হয়ে গেল। স্নিগ্ধ জানভির দিকে তাকিয়ে বলল-
“চড় মারা ছাড়া তুমি আর তোমার বাবা আর কিছু পারো না?”
“চড়? আমার তো ইচ্ছে করছে তোমাকে মেরে ফেলতে।”
“হ্যাঁ তো না কে করেছে? মেরেই ফেলো আমাকে। কষ্ট তো কম দাও নি এখন মেরেই ফেলো।”
“কষ্ট? যে আমাকে কষ্টের সাথে পরিচয় করিয়েছে সে এই কথা বলছে?”
“দেবজানি সরকার এবার নাটক বন্ধ করুন। আমি আপনার সাথে একবার প্রতারণা করেছিলাম। এর বদলে আপনি আমাকে বার বার অপমান করেছেন কষ্ট দিয়েছেন। আমি মুখ ফুটে কিছু বলি নি৷ আমার কোটিপতি বাবা নিজে তোমার বাবাকে কল দিয়েছিলো। কিন্তু তোমার বাবা কী করেছে? উনার ছেলের সম্পর্কে যা নয় তা বলে দিয়েছে। কোন বাবা সহ্য করবে এসব?”
জানভি অবাক হয়ে স্নিগ্ধর দিকে তাকিয়ে আছে। স্নিগ্ধ আবার বলল-
“এখন জবাব দিচ্ছো না যে? আমার জীবনের সবচেয়ে বড়ো ভুল হলো তোমাকে ভালোবাসা। আমি শেষ হয়ে গেলাম তোমার কারণে। আমি তোমার সাথে যা করেছি এর জন্য মাফ করে দিও। আর আসছি তোমার পেছনে। তোমার নতুন জীবনের জন্য শুভকামনা।”
বলেই স্নিগ্ধ দ্রুত জানভির বাসা থেকে বেরিয়ে গেল। জানভির পা কাঁপছে। এলোমেলো পা ফেলে নিজের ঘরের দিকে গেল। রঞ্জন কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে চলে গেল।

রাতেরবেলা……
জানভি বাবার ঘরের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। ভেতরে যাবে কিনা ভাবতে ভাবতে ১০ মিনিটের কাছাকাছি হয়ে গেল। জানভি যা ভেবেছে তা ঠিক কিনা বুঝতে পারছে না। একটা লম্বা নিশ্বাস ফেলে দরজায় ঠকঠক করলো। মা এসে দরজা খুলে ভেতরে আসতে বলল। জানভি ভেতরে প্রবেশ করে দেখে বাবা খাটের সাথে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে রেখেছে। জানভি গিয়ে বাবার পায়ের সামনে বসলো। বাবা ধীরে ধীরে চোখ খুলে জানভিকে দেখে বলল-
“বাবার উপর রাগ করেছিস?”
“না বাবা, তুমি যা করেছো আমার জন্য ঠিক। তার ছেলেকে উল্টা পাল্টা বলায় সে রেগেছে। আর তার ছেলে তোমার মেয়ের সাথে যা করেছে এর জন্য তোমার রাগা কী স্বাভাবিক না?”
“আমি জানতাম আমার মেয়ে নিশ্চয়ই আমাকে বুঝবে। মা, তুই বললে আমি স্নিগ্ধর বাবাকে কল দিয়ে তোদের বিয়ের কথা বলতে রাজি।”
“বিয়ের ব্যাপারেই কথা বলতে এসেছি।”
বাবা লম্বা নিশ্বাস ফেলল। জানভি বলল-
“কিন্তু কল স্নিগ্ধর বাবাকে না রঞ্জনের বাবাকে দাও।”
বাবা প্রথম অবাক হলেও করে বেশ খুশী হলেন। সোজা হয়ে বসে জানভির মাথায় হাত রেখে বললেন-
“আমার মেয়ে কখনো আমার কথা ফেলতে পারে না আমি জানতাম।”
“তুমি শুধু মাত্র আমার বাবা বলে রাজি হই নি। তুমি জানো আমার সুখ কোথায় তাই রাজি হয়েছি। মা বাবা কখনো সন্তানের খারাপ চায় না তাই না?”
বাবা হাসিমুখে জানভিকে জড়িয়ে ধরলো। জানভি চোখ বন্ধ করে রেখেছে। মাঝে মধ্যে বুকের ভেতরে থাকা তুফানকে আড়ালে রেখে কাছের মানুষদের খুশী করতে হয়।

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here