অবুঝ_বউ,পর্ব ০৬

0
1000

অবুঝ_বউ,পর্ব ০৬

” বাবা ওর বকর বকর শুনে কি করবো বলো। সকালে একটা মিটিং আছে আর এত রাতে ফোন দিয়েছে তাই রাগে বলেছি।। “(আমি)

” তোর মিটিং – টিটিং বাদ দে , তিথি মা নে তুই আমার সামনে যা বলবি বোল। আর আমি সাউন্ড বাড়িয়ে দিলাম একটা গালা গালি যদি করেছিস তোকে আমি কলকাতা গিয়েই জুতা দিয়ে মারবো। বল মা বল ”

(হে আল্লাহ আমাকে বাঁচাও )

” আপনাকে ছাড়া আমি থাকতে পারবোনা। আমি আপনাকে অনেক ভালবাসি।এবার রাখি।। বাই “(তিথি)

” বাবা , বাবা , বাবা আপনি কি আছেন? “(আমি)

টুট টুট টুট(লাইনটা কেটে গেল)।।।

আমিও সুন্দর করে ঘুমিয়ে পড়লাম।।
পরদিন সারাদিন অফিস করে এসে খাওয়া দাওয়া করে ঘুমাতে যাব তখনই তিথির ফোন।।

” হ্যালো জান ????? “(তিথি)

” তিথি এই গুলা কি ? “(আমি)

” আমার এক বান্ধবি বলেছে এমন করলে
নাকি আপনি খুশি হবেন। “(তিথি)।।

” ?????? আপনি খুশি হন নি ? “(তিথি)

(হে আল্লাহ তুমি আমাকে একটু ধৈর্য্য দাও নয়তো এই মেয়েটাকে একটু আমাকে বোঝার মতো বুদ্ধি দাও)

” কি হল আপনার কি ভালো লাগছে না? “(তিথি)

” হ্যাঁ ভাল লাগছে , খুব ভাল লাগছে , এখন বাদ দাও আমাকে আর খুশি করতে হবেনা।।” (আমি)

” আমি এমনিতেই তোমার উপর অনেক খুশি “(আমি)
” আচ্ছা ঠিক আছে তাহলে রেখে দেই ” বলেই
ফোন টা রেখে দিল।

এভাবেই দিন কাটছিলো।
দেখতে দেখতে ঈদ এসে গেলো , আমার এক অফিস কলিগের মাধ্যমে সারা অফিস ছড়িয়ে গেল আমি বিয়ে করেছি , তাই আর কি করার সবাই কে নিয়ে পার্টির আয়োজন করলাম আর সিদ্ধান্ত হল ঈদের পরদিন সবাই আমার বউ দেখতে আমার বাড়ি শিলিগুড়ি তে যাবে।।

ইদের ছুটিও পরছে অনেক ১০ দিন । নতুন বিবাহিত দেখে অফিস থেকে আমাকে অফিস ছুটির দুদিন আগেই ছুটি দিল তাই বাড়িতে না জানিয়েই রওনা দিলাম , মাঝ
পথে বাড়িতে ফোন লাগালাম , মা বললো তিথি আজ তাদের বাড়িতে গেছে।।

তাই আল্লাহর এর কাছে কাছে হাজার টা ধন্যবাদ জানিয়ে মাকে বললাম আমি যাচ্ছি।। যেতে যেতে রাত আটটার মত বাজল। আমি বাবা মায়ের রুমে সালাম জানিয়ে একটু গল্প-টল্প করে আমার রুমে ঢুকতেই চিৎকার করে উঠলাম,
মা বাবা দুজনেই দৌড়ে এলো।।

“কি হয়েছে নিলয়?” (বাবা)

“এটা কে?” (আমি)
(ঠাটিয়ে একটা চর দিয়ে)” এবার দেখ চিনতে পারবি” (বাবা)।

” কিন্তু মা তো বললো !!!”(আমি)

” হ্যাঁ রে বাবা বলেছিলাম , তুই আসবি এটা তোর ফুফু জানিয়েছিলাম , তিথি কিভাবে জেনে শুনে চলে আসছে , একটা পাগলী বউ পেয়েছি আমি। “(মা)

(পেছন পেছন দাদীও চলে আসছে।এসেই)

” নাতনী আমার বর পাগল , বর আসছে শুনেই চলে আসছে কত দিন পর বাড়ি গেল কিন্তু একটা দিনও থাকলো না চলে আসলো বরের টানে , বলেই হাসছে । ” (দাদী)

” আপনি এমন কেন?”(তিথি)

” কেমন?” (আমি)

” আমাকে না জানিয়েই চলে এলেন। আমায় তো একবার বললেই পারতেন , আপনি জানেন কতদিন থেকে আপনার জন্য অপেক্ষা করছি ? মা কথা বলার সময় শুনছিলাম। না হলে তো জানতেই পারতাম না। আমি শুনেই এসে পড়েছি ”
(তিথি)

(বাবা মা চলে গেলো, দাদী হাসছে)

” এসেছো কেনো ?”(আমি)

” আসবো না ? আপনি বাড়িতে আসছেন এতদিন পরে , আমি যদি না থাকি তাহলে চকলেট গুলো কাকে দিবেন নষ্ট হয়ে যাবে না? আর মা বলেছিল আপনি আসার সময় আমার জন্য অনেক কিছু নিয়ে আসবেন তাই চলে আসছি” (তিথি)

” ওই সতীন স্বামী আসছে এতদিন পর সালাম কর। কেমন আছে জিগ্গেস কর আগে। তারপর তোর জন্য কি আনছে তা তো দিবেই। মাথায় কি বুদ্ধি হবে না তোর? (দাদী)

” ওওওও ভুল হয়ে গেছে, কেমন আছেন? চকলেট গুলা দিন তাড়াতাড়ি। “(তিথি)

(হে আল্লাহ তুমি আবার প্রমান করলে কুত্তার লেজ কখনও সোজা হয় না,) রাগে দুঃখে চকলেট গুলো বের করে দিলাম। ও নিয়ে বিছানায় চলে গেল।
রাতে খেয়ে ঘুমাতে গেলাম। সেও আগের জায়গায় ঘুমিয়ে পড়লো। কিছুক্ষণ পরপর একটা করে চকলেট নিচ্ছে আর খাচ্ছে। মাঝ রাত্রিতে তিথির ধাক্কা ধাক্কিতে ঘুম ভেঙ্গে গেলো —
” ওগো শুনছেন?”

” তিথি বিরক্ত করো না তো ঘুমাতে দাও ”

” শুনুন না একটু ” (তিথি)

” হ্যাঁ বলো ”

” বলছি কি আপনার ব্যাগে তো আরও চকলেট আছে একটু বের করে দিবেন ? এগুলো শেষ। ”

” শেষ মানে ? তুমি কি ঘুমাও নি ? এতক্ষন কি চকলেটই খেলে ?”

” হ্যাঁ। আর কেনো খাবো না ? দিনে তো খাওয়া যাবে না , আর রেখে দিলে যদি নষ্ট হয়ে যায় ? ”

” কে বলল তোমায় যে চকলেট নষ্ট হয়ে যায়?”

” কেউ বলেনি , একবার ছোট কাকা বিদেশ থেকে আমার জন্য অনেক চকলেট এনেছিলো , এক বছর পরসেগুলো নষ্ট হয়ে গেছিলো। ”

” তিথি একটা কাজ করতে পারো ?”

” কি?”

” আমার মাথাটা খেতে পারবে ?”

” যাহ ওখানে কি চকলেট ভরা আছে নাকি যে খাবো ?”

” তার মানে চকলেট পড়লে আমার মাথা খেতে?”
” না শুধু চকলেট টা খেতাম। আপনি জানেন না অপচয়
করা উচিত নয় ? তাই কোন জিনিস পড়ে গেলে আমি সেটা নষ্ট হতে দিই না। ”

” তুমি কি ঘুমাবে না কি থাপ্পড় খাবে?”

” চকলেট খাবো দিন না এনে ”

অবশেষে এনে দিতে হলো।।

(পরদিন সকালে পুকুর পাড়ে বসে আছি)

” আপনার কি মন খারাপ? “(তিথি)

” একটু ”

” ওওও আচ্ছা দাঁড়ান আপনার মন ভাল করে দেই , ???????? “(তিথি)

” বাহ সুন্দর , শব্দ হচ্ছে না আর একটু জোরে শব্দ করো”,(আমি)

” সে আর জোরে আমার মুখে ?????? করতে লাগলো , আমি আর ঠিক থাকতে পারলাম না, ওর পাগলামী দেখে হেসে দিলাম। হয়েছে থাক আর লাগবে না, এবার ????? করা বন্ধ করো।। ”

সেও বিশ্বজয় এক হাসি দিল।

খাওয়ার সময় আমি ওর পাশে বসলাম না খাইয়ে দেওয়ার ভয়ে। টেবিলের ঠিক উল্টো দিকে বসলাম, খাবার মাঝে ওর দিকে তাকাতেই মুচকি মুচকি হাসছে। তাই সুযোগ বুঝে একবার দিলাম চোখ মেরে।

” ওয়াও ওনেক সুন্দর হয়েছে কেমন করলেন আবার একটু করুন তো (তিথি)

” কি রে মা? “(বাবা)

” বাবা বাবা উনি না খুব সুন্দর করে চোখ কেমন জানি বন্ধ করছে , এই যে এরকম ভাবে( দুই চোখ বন্ধ করে বাবাকে
দেখাচ্ছে)। না না হয়নি। আমি পারি না। ওনি একটা দিয়ে করছে , একটু দেখান না বাবাও দেখুক।। ”

আমি আর কারোর দিকে না তাকিয়ে মাথা নিচু করে খেতে লাগলাম , তার পরদিন থেকে খাবার আমার ঘরেই পাঠিয়ে দেয় মা ।

দেখতে দেখতে ইদ এসে গেলো। ইদের পরের দিন আমার অফিস কলিগরা এলো। তিথি হলুদ রঙ্গের একটা শাড়ী পড়েছে। দেখতে অনেকটা পুতুলের মত লাগছে।

সবার সামনে ওকে নিয়ে গেলাম পরিচয় করিয়ে দিতে।
কিন্তু পুরোটা সময় শুধু মাত্র এক ভাবী
ছাড়া আর কারও সাথেই কোনো ধরনের কথা বললো না। রাগে আমার মাথা দিয়ে আগুন বের হচ্ছে।।

তাই ওরা চলে যাওয়ার পরেই ঠাস করে গালে একটা চড় মারলাম।।

” দিন দিন কি বেয়াদপ হয়ে যাচ্ছো ? ওরা এত কিছু জিগ্গেস করলো আর তুমি কিছুই বললেনা কেনো ? “(আমি)

” (কাঁদতে কাঁদতে) আপনি না বলেছেন কোনো ছেলের সাথে যেনো কথা না বলি। তাই বলিনি। “(তিথি)

নিজের মাঝে কিছুটা অনুতপ্ত বোধ কাজ করলো। এই মেয়েকে দিয়ে আমি কি করে সংসার করবো ? এর তো বুদ্ধি বলে কিছুই নেই।

মন খারাপ করে শুয়ে আছি বিছানায়। তিথি এসে আমার বুকে শুয়ে পড়লো। আমি তাকে তুলে দিয়ে বললাম আর যেন কখনোই এভাবে না ঘুমায়।

সে রাগ করে চলে গেলো। কিছুক্ষন পর বাবাকে ডেকে নিয়ে এসেবিচার দিচ্ছে—

“বাবা বাবা ওনি আমাকে ঘুমাতে দিচ্ছে না “(তিথি)

” কিরে নিলয় ঘুমাতে দিচ্ছিস না কেনো ?”(বাবা)
” বাবা আমি ওকে কখন ঘুমাতে দিলাম না? ঘুমাক না আমি কি নিষেধ করছি?”(আমি)

” না বাবা আমি ওনার বুকে ঘুমাবো। উনি আমাকে বার বার তুলে দিচ্ছে। “(তিথি)

বাবা একটু সংকোচে পড়ে গেলেন তার পরও বললেন
” ওকে ঘুমাতে দে আমরা গেলাম। “(বাবা)

” বাবা যাবেন না, আমি আগে শুয়ে পড়ি তারপর যাবেন। নাহলে আবার তুলে দিবে।” (তিথি)

তিথি এসে শুয়ে পড়ল তার পর বাবা দরজা আটকে চলে গেলো।

” আচ্ছা আপনি সব সময় মন খারাপ করে থাকেন কেনো ? আপনার কি কিছু হয়েছে? “(তিথি)

” নাহ কিছু হয়নি “(আমি)

” কিছু ত একটা হয়েছে না হলে সব সময় এমন থাকেন কেন?” (তিথি)

” কি করবো বলো ? আমার যৌবন শেষ হয়ে যাচ্ছে আর আর তুমি ত সেটা বুঝতেই পারছো না” (মুখ ফসকে কথাটা বলে দিলাম)

” ওওও ডাক্তার দেখান নি ?”(তিথি)

” হুম দেখিয়েছি। বলছে ভাল হয়ে যাবে তুমি।। এখন ঘুমাও , আর কথা বলো না। “(আমি)

পরদিন সকালে সবাই খেতে বসেছি। মন খারাপ দেখে বাবা জিগ্গেস করল ,” নিলয় কিছু হয়েছে তোর ? কদিন থেকে দেখছি মন খারাপ ”

” না বাবা কিছু হয়নি ”

” হয়েছিল। ডাক্তার ও দেখিয়েছিলো , এখন ভালো হয়ে গেছে “।(তিথি)

” এই ছেলেটাকে নিয়ে আর পারি না , ছোট থেকেই একটা সমস্যা অসুখ হলে কাউকে বলবে না। কি হয়েছিল রে নিলয়?(বাবা)

” বাবা ওনার না….”(তিথি)
তিথি একদম চুপ, কোন কথা বলবে না
(আমি)
” এই বলবে না কেনো ? তোর কি অসুখ সেটা জানতে হবে না ? পরে যদি বড় সমস্যার হয়ে যায়? বল মা কি হয়েছিল নিলয়ের আর তুই কি করে জানলি?”(বাবা)

” কাল রাতে যখন আপনারা এসে পড়লেন তখন বলেছে , ওনার নাকি যৌবন শেষ হয়ে যাচ্ছে , আর আমি সেটা বুঝতে পারিনি।। এজন্য বলে ওনার মন খারাপ , এখন নাকি ভাল হয়ে গেছে “(তিথি)

আমি এক দৌড়ে ঘরের ভিতর। পরের দুই দিন বাবা
মা কেউ আমার সামনে আসেনি। আমিও না, এ দিকে তিথির ও স্কুল খুলেছে পরীক্ষার জন্য। তাই দিনে একটু
শান্তিতেই থাকতে পারি।।

একদিন বিকেল বেলা এক কাকা এসেছে তার ছেলেকে নিয়ে চাকরির বিষয়ে কথা বলার জন্য।।
বাবা মা আর আমি বসে কথা বলছি। এরই মাঝে তিথির আগমন।।

” ওগো একটু এদিকে আসুন না “(তিথি)

” আসছি একটু পরে “(আমি)

” না এখনই আসেন। শূধু একটা চুমু খাব তারপর চলে যাবেন। আমার বান্ধবী রা না আজ এটা শিখিয়ে দিয়েছে।। বলছে কারও সামনে যাতে না খাই। চুমু খেলে নাকি আপনি
আমাকে অনেক ভালবাসবেন।”(তিথি)

পরের পার্ট লাগবে নি আপনাদের ?

(তিথি কে আপনাদের কেমন লাগছে অবশ্যই জানাবেন ??❤❤)

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here