অবুঝ_বউ,পর্ব__০৩
সকাল বেলা কি থাপ্পড় খাওয়ার সাধ জাগছে ?
মারবে কেনো ? নানীই তো কাল রাতে বলে গেল ওনার আর আমার কথা কেউ কিছু জিগ্গেস করলে কথা না বলতে।।।
তিথি তুই এমন কেন? তোর কি বুদ্ধি শুদ্ধি কিছু হবে না কখনও ?(মা)
কেন মা আমি আবার কি করলাম ? আর আমার বুদ্ধি নেই কে বললো ? বুদ্ধি না থাকলে কি আমি ক্লাসে সব সময় ১ম হতাম? আর scolarship ও পেয়েছি এইটে, তুমিই তো তখন বলেছিলে আমার ব্রেন অনেক ভাল। বলোনি ?(তিথি)
হুম বুঝতে পারছি। ভুল আমারই , তোকে যদি সবার সাথে মিশতে দিতাম তাহলে আর আজ এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হত না , চোখে চোখে রাখলেও দোষ আবার না রাখলেও দোষ , এখন থেকে তোর স্কুলে যাওয়া বন্ধ, পড়ালেখাও বাদ, তুই এখন শুধু পাড়ায় পাড়ায় গল্প করে বেড়াবি আর দুনিয়া সম্পর্কে জানবি।।।(মা)
ইয়াহুওওওও, আমি আর স্কুলে যাবো না, বলেই নাচতে শুরু করে দিলো , দৌড়িয়ে এসে আমায় বলছে ভাইয়া ভাইয়া ধ্যাৎ ওগো ওগো শুনছেন আমার আর স্কুলে যেতে হবে না, আমি এখন সারাদিন ঘুরাঘুরি করবো , আর খেলবো ।আমার যে কি খুশি লাগছে বলেই আমাকে জড়িয়ে ধরল।
এদিকে ওর চিৎকার শুনে বাবা – মা দৌড়িয়ে এলো। এসে দেখে তিথি আমাকে জড়িয়ে ধরে আছে । এটা দেখে বাবা মা আর রুমে ঢুকলো না। হাসতে হাসতে চলে গেল,পিসিও তাদের সাথে গেল।
এবার আমি আর সহ্য করতে পারলাম না, ঠাঁটিয়ে কানের নিচে একটা দিয়ে দিলাম। হঠাৎই তার মুখটা মলিন হয়ে গেল।সে বিছানার এক কোনে বসে পড়লো। আর গাল ধরে নিরবে কাঁদতে লাগল। আশ্চর্যের বিষয় কোন শব্দ করছে না। আর বাবার কাছেও কোন নালিশ করছে না।
তার পরেও আমার রাগ কমলো না। ওঠে ফ্রেস হয়ে বাবা মা কে বলে জোর করে চলে এলাম আমার কর্মক্ষেত্র কলকাতা চলে এলাম , আসার সময় দাদীকে বলে এলাম যে তোমার নাতনি কে পারলে কিছু শিখাও না হলে আমার দ্বারা ওকে নিয়ে চলা সম্ভব না।
পৌঁছাতে প্রায় ১৬ ঘন্টা লাগলো যানজটের কারনে। ফোনটাও বন্ধ রাত্রি তখন ৩টা। ফোনটা চার্জে বসিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। সকাল ৮টার দিকে ফোন switch on করার সাথে সাথেই বাবার ফোন-
” নিলয় তুই কই ?”
“বাবা আমি তো রুমে , অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছি,”
” যত দ্রুত সম্ভব তুই বাড়িতে আয়, তিথি হাসপাতালে বলেই বাবা ফোনটা রেখে দিল,”
এই কথা শুনে আমার ভয় ঢুকে গেল। যেভাবে ছিলাম সেভাবেই বেরিয়ে পড়লাম। কলকাতা এয়ারপোর্ট এ বন্ধুকে বলে টিকিট এর ব্যাবস্থা করলাম। তারপর ১২ টার দিকে বাগডোগরা পৌঁছালাম। আর সেখান থেকে প্রাইভেট কার ভাড়া করে বাড়ির দিকে রওনা দিলাম। পৌঁছাতে প্রায় ৫টা বেজে গেল। হাসপাতালে গিয়ে দেখি তিথি বেডে শুয়ে আছে আর সেলাইন চলছে।।
“বাবা কি হয়েছে?” (আমি)
ঠাসসসসসস!
” হারামজাদা। তোর মতো একটা স্টুপিড ছেলের বাবা কি করে হলাম সেটাই আমি চিন্তা করছি। কি করে তুই ওকে মারতে পারলি ? ও একটু চঞ্চল টাইপের সেটা জানিস না , আর ওর বয়সই বা কত হয়েছে ? মায়ের ইচ্ছাতেই বিয়েটা হলো । কই একটু শেখানোর চেষ্টা করবি তা না , তুই ওকে মারলি? তুই জানিস তুই না খেয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য সে ও এখনও কিছু খায়নি। মা নাকি বলেছে স্বামীকে রেখে কখনও খেতে নেই। ওদিকে তোর ফোনটাও switch off. যতক্ষন না জানতে পারছে তুই কিছুই খাসনি ততক্ষন ও কিছু খাবে না।। আর এভাবে থাকতে থাকতে রাত ৯টার দিকে অজ্ঞান হয়ে যায় , যে মেয়েটা দিনে ৬/৭ বার খেয়েও খাওয়ার জন্য চিতকার করত সেই মেয়েটা পরশু রাতের পর এখন পর্যন্ত কিছুই খায়নি , পরে সেলাইন এর মাধ্যমে খাবার দেওয়া হচ্ছে, এখন পর্যন্ত কিছু খাওয়াতে পারিনি , আর তুই ওকে?!!!!”
(একনাগাড়ে বলে গেলেন বাবা)
আমি আর কিছু বলতে পারলাম না। সত্যিই কাজটা অন্যায় করেছি।।গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছি আর আমায় দেখে তিথি মিট মিট করে হাসছে।।
” হাসছিস কেনো ? সরি হাসতেছো কেনো ?”(আমি)
আপনাকে বাবা মেরে গাল কেমন লাল করে দিয়েছে হিহিহি।।।(তিথি)
ওর নিশ্পাপ হাসি দেখে আমিও হাসলাম , পাশে গিয়ে বসতেই ওঠে আমার বুকে মাথা রেখে জড়িয়ে ধরলো।
মা, পিসি ওখান থেকে গায়েব হয়ে গেল , দাদী শুধু মিটমিট করে হাসছে ।
কি হল তিথি এখন আবার এমন করছো কেনো ? (আমি)
নানী না বলছে আপনার বুকে মাথা রেখে শুয়ে থাকতে? আপনি ত এতোক্ষণ ছিলেন না, তাই বালিশে শুয়ে থাকতে আমার একদম ভালো লাগছিলো না । কিন্ত এখন তো আপনি আছেন তাই শুয়ে আছি।। (তিথি)
(দুঃখ সুখের পাখি তুমি । তোমার খাঁচায় এই বুক । সারা জীবন , নয়ন যেন , দেখে তোমার ঐ মুখ।)
দাদী একটু এই দিকে এসো তো। (আমি)
বল !!! (দাদী)
তোমার পা টা একটু উপরে তুলবে ?(আমি)
কেনো ?(দাদী)
তোমার পা টা ধরে বলি ওকে আর কিছু শেখাতে যেও না। যা শেখানোর আমিই শেখাবো সময় হলে , আমার ইজ্জত নিয়ে আর সাপ লুডু খেলো না।।(দাদীর উদ্দেশ্যে)
আর তুই না না তুমি আমার জন্য না খেয়ে থাকবে কেনো ?(আমি)
স্বামীর আগে খেলে নাকি স্বামীর অমঙ্গল হয় তাই। (তিথি)
ধুর পাগলি ওগুলো এমনি ই বলে আর কোনো দিন এমন করবে না। আর আমিও তোর সাথে কখনও এমন করবো না। বলেই অতিরিক্ত ভালবাসায় কপালে এটা চুমু দিলাম ।
সেও বলল আচ্ছা ঠিক আছে ।
পরে বাবা দাদীকে ডেকে কিছু খাবার পাঠিয়ে দিলো। আমি ওকে খাইয়ে দিলাম ।
হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র নিয়ে বাড়ির দিকে রওনা দিলাম ।
মাঝ পথে বাবা আবার আমাকে বকতে শুরু করলো।
তিথি বললো , বাবা ওনাকে কিছু বলবেন না । উনি বলছে আর কখনও এমন করবে না। আজ আমাকে নিজ হাতে খাইয়ে দিছে । কিন্ত ভাল করে মাখাতে পারে না । আমার কপালে একটা চুমুও দিছে।
হে ভগবান তুমি অবুঝ মেয়েটাকে একটু বোঝার শক্তি দাও নাহলে আমার তুমি তুলে নাও আর ভালো লাগেনা।।
চলবে?
good