অবুঝ_বউ
(পর্ব-৭)
না এখনই আসেন, শূধু একটা চুমু খাব তার পর চলে যাবেন, আমার ফ্রেন্ড টা না আজ এটা শিখায়ে দিছে, বলছে কারও সামনে যাতে না খাই, চুমু খেলে নাকি আপনি আমাকে অনেক ভালবাসবেন,
বাবা আজ তাহলে ওঠি বলেই কাকা চলে গেল, বাবা মাও ওঠে গেল তখন তিথি আমার দিকে আস্তে আস্তে এগিয়ে আসতেছে, আমি দৌড়িয়ে বাইরে বের হয়ে গেলাম, পিছে পিছে তিথিও দৌড়ানো শুরু করল,
দাড়ান দাড়ান শুধু একটা খামু (তিথি)
ও যখন দৌড় দিছে আমি তখন দাড়িয়ে গেলাম রাস্তায় গেলে আবার আরেক ঝামেলা, আমি স্ট্যাচু হয়ে দাড়িয়ে আছি সে তার কাজ সেরে চলেগেল।
ছুটি শেষে আবার চলে গেলাম ব্যাস্ততম সম্মান যুক্ত পরিবেশে, বেশ কিছুদিন পর রাত দুইটার দিকে তিথির ফোন, রিসিভ করতেই,
হ্যালো নানী…
সাথে সাথেই ফোনটা কেটে দিয়ে বন্ধ করে দিলাম, বিয়ের প্রায় এক বছর হচ্ছে এখনও তার নানী কি বলল তা নিয়ে আমার সাথে কথা বলতে হবে, মনটা খারাপ করে ঘুমিয়ে পরলাম,
পরদিন সকালে ফোন খূলতেই তিথির ফোন থেকে মেসেজ,
নানী আর নেই, যত দ্রুত পারেন আপনি বাড়ি আসেন, আমি প্রায় পাগল হয়ে গেলাম, তাহলে তিথি রাতে? নিজেকে ক্ষমা করতে পারতেছিনা, আমার হাত থেকে মোবাইল টা পরে গেল, কিভাবে বাড়ি পৌছিলাম আমার ঠিক খেয়াল নেই, পরে জানতে পারলাম আমার ফ্লাটের সাফেদ ভাই আমাকে নিয়ে এসেছে, আমি যাওয়ার পর দাদীর দাফন সমপন্ন করা হয়, এর মাঝে তিথি আমার সাথে কোন কথায় বলেনি, মাটি দেওয়া শেষে সবাই বাড়ি আসলাম, কিন্তু তিথিকে কোথাও দেখতে পেলাম না, পরে দাদীর কবরে গিয়ে দেখি দাদীর পায়ের দিকে বসে তিথি কাদতেছে,
তিথি চল বাড়ি যাবে, তিথি আমাকে জড়িয়ে ধরে চিৎকার দিয়ে কেদে উঠল, কোন ভাবেই তাকে সেখান থেকে সরাতে পারলাম না, পরে বাবা মা এসে অনেক বুঝিয়ে তাকে বাড়ি নিয়ে গেল, দাদীর জন্য আমারও অনেক খারাপ লাগতেছে কিন্তু তিথির জন্য তা প্রকাশ করতে পারতেছিনা তাহলে হয়ত ও আরও পাগলামী করবে, রাতে খাওয়া দাওয়া করে সবাই ঘুমিয়ে পরলাম, তিথি আমার বুকে শুয়েই আবার কান্না শুরু করে দিল, আমি ওকে অনেক বুঝিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিলাম, মাঝ রাতে হঠাৎ কান্নার শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেল, উঠে দেখি তিথি পাশে নেই, দৌড়িয়ে দাদীর কবরের পাশে গেলাম, গিয়ে দেখি তিথি একটা লাইট নিয়ে দাদীর কবরের পাশে বসে আছে আর কাদতেছে,
তিথি তুমি এত রাতে এখানে আসছ কেন?
নানী ত অন্ধকারে ভয় পায়, নানী ত বাড়ী ছাড়া কখনও কোথাও থাকেনি, নানী এখানে কিভাবে থাকবে?
(আমি আর কান্না ধরে রাখতে পার লাম না) তিথি তুমি আর পাগলামি করনা, তুমি এমন করলে দাদী কষ্ট পাবে, বাবা মাও কান্নার আওয়াজ পেয়ে চলে আসছে, পরে তাকে আবার বাড়িতে নিয়ে গেলাম।
তিথির এমন অবস্থা দেখে ওকে বাবা মা, আর ফুফু মানে আমার শাশুড়ীও তাকে বাড়ীতে রাখতে চাচ্ছেনা, তাই আর আমারও মনে হল বাড়ী থাকলে ও আরও ভেঙ্গে পরবে, তাই তার স্কুল থেকে টিসি নিয়ে তাকে চট্টগ্রাম নিয়ে আসলাম, অফিস থেকে কিছুদিন ছুটি নিয়ে তাকে নিয়ে চট্টগ্রামে ঘুরাঘুরি করলাম, পাহাড় সুমুদ্র ঘুরে সে কিছুটা পরিবর্ত হল, তার পর বাংলাদেশ মহিলা সমিতি বালিকা স্কুল এন্ড কলেজ এ আমাদের এমডি স্যার এর মেয়ের সাথে ভর্তি করে দিলাম, সাফেদ ভাইদের সাথে একই ফ্লাটে থাকতে লাগলাম, সাফেদ ভাই এর বউ একজন গৃহিনি, তাদের ৬ বছরের একটা মেয়ে আছে, কিছুদিনের মধ্যেই তিথির সাথে ভাল ভাব জমে গেল, আমি সকালে অফিসে যাওয়ার সময় তিথিকে স্কুলে দিয়ে যাই আবার আসার সময় নিয়ে আসি, এভাবে দিন গুলি ভালই যাচ্ছিল, একদিন তিথির স্কুল আগেই ছুটি হয়ে যায়, তাই আমায় বলে বাসায় চলে আসছে, অফিস শেষে বাসাই ফিরতেই দাড়োয়ান বাড়িওয়ালার সাথে দেখা করতে বলল,
রুমে এসে দেখি তিথি পড়তেছে, আমায় দেখে ওঠে এসেই জড়িয়ে ধরল, প্রতিদিনই এমন করে, যতক্ষন বাসায় থাকি ততক্ষন আমার হাত ছাড়তে চায়না, দাদী নাকি এটা বলে গেছে, অবশ্য দাদী মারা যাওয়ার পর তিথির মাঝে অনেকটাই পরিবর্তন আসছে, আগের মত তেমন বেফাস কথা বলেনা,
কপালে একটা চুমু দিয়ে টেবিলে বসিয়ে বল্লাম যে একটু বাড়িওয়ালার সাথে দেখা করতে হবে আমি দেখা করে আসি
না আপনি যাবেন না, (তিথি)
কেন?
এমনি, না এমনি না আমায় না কয়টা অঙ্ক করে দিতে হবে,(তিথি)
আচ্ছা এসে করে দিচ্ছি,
না আমায় এখনই করে দিতে হবে,
(অঙ্ক করা শেষ হলে) আচ্ছা তুমি বাকি গুলা কর আমি আসতেছি,
ফিজিক্স টাও একটু বুঝিয়ে দেন, এভাবে করতে করতে রাত ৮টা বাজিয়ে ফেলছে প্রায় সব সাব্জেক্ট পড়ানো শেষ তার পরেও যেতে দিচ্ছে না, তার পর ধমক দিয়ে বসিয়ে দেখা করতে গেলাম,
সালাম দিতেই গম্ভির মুখে আমার দিকে তাকাল, আমার হাত টা ধরে টেনে ছাদে নিয়ে গেল
দেখ নিলয় তোমার বউ আমার ছাদের কি অবস্থা করছে, সবগুলা ফুল ছিড়ে ফেলছে, আর এদিকে আস দেখ গাছটার কি অবস্থা করছে, এটা কি কারও ওঠার মত গাছ? তোমার বউ গাছে ওঠে গাছটা ভেঙ্গে ফেলছে(বাড়িওয়ালা)
তার মানে এই জন্যই বাড়িওয়ালার কাছে আসতে দিচ্ছিল না?আমি তারা তারি নিচে নামলাম দেখি তিথি রুমে নাই, বাথরুমে ধাক্কা দিয়ে দেখি সারা বাথরুম ফুলের পাপড়ি দিয়ে ভরা, ভাবীদের রুমে গিয়েও দেখি নাই, রুমে এসে তিথির ফোনে ফোন দিলাম, খাটের নিচ থেকে ফোন বেজে ওঠল, ফোন টা কেটে নিচে তাকালাম দেখি তিথি খাটের নিচে শুয়ে আছে, তিথি ওখানে কি কর বাইরে এস (ধমক দিয়ে)
আমি কিন্তু বাবাকে কল দিব, (তিথি)
বাবাকে কেন কল দিবে?(আমি)
আপনি আমায় মারবেন বলেই চিৎকার করে কান্না শুরু করে দিল,
কান্না শুনে পাশের রুমের ভাবি চলে আসল,
কিরে নিলয় কি হয়েছে?(ভাবি)
আরে ভাবি কিছুই হয়নাই, আমি ওকে খাটের নিচ থেকে বাইর হইতে কইছি আর ও ওমনি কান্না শুরু করছে, তুমি যাও আমি দেখতেছি,(আমি)
আমার ভুল হয়ে গেছে, আমি আর কখনই করবনা(তিথি)
আচ্ছা ঠিক আছে এবার বাইরে আস,
আগে বলেন মারবেননা,(তিথি)
আচ্ছা মারবনা বাইরে আস,
কান্না থামিয়ে বাইরে আসল, চোখের পানি মুছে দিয়ে জিগ্গেস করলাম
গাছ ভাংছ কেন?(আমি)
আমি ভাঙ্গিনাই, দিয়া ভাঙ্গছে(ভাবির মেয়ে)
মিথ্যা কথা বলবানা তিথি সত্য বল (ধমক দিয়ে)
অনেক দিন থেকে গাছে উঠিনা তাই ছাদে গাছ দেখে পা কেমন জানি করতেছিল তাই ওঠছিলাম বলেই আবার কান্না শুরু করে দিল,
আচ্ছা কাদতে হবেনা, কান্না করার কি আছে পাগলি আমি কি তোমাকে কিছু বলেছি, নাকি মেরেছি? কিছু বলবওনা, কান্না থামাও বলে আবার চোখের পানি মুছে দিলাম
আচ্ছা তিথি
হুমমম
আরেকটা কথা জিগ্গেস করি কান্না করবানা কিন্তু,
আচ্ছা (তিথি)
আচ্ছা ফুল কেন ছিড়েছ?
ওওও আমি না টিভিতে দেখছি সাবান দিয়ে গোসল করারর সময় পানিতে ফুল দিতে হয়, তাহলে সুন্দর হওয়া যায় তাই ফুল ছিড়ছি,
তাই বলে সব ফুল কেন?
বারে আপনি দেখেন নাই ওদের গোছলখানা ভর্তি থাকে তাই ত সব ফুল ছিড়ছি, এবার আর না হেসে পারলাম না, আমার হাসি দেখে ও হাসতেছে,
ধুর পাগলি ওরা এমনিতেই ওইভাবে টিভিতে বিজ্ঞাপন দেয়, আর তুমি এমনিতেই সুন্দর তোমাকে ফুল দিয়ে গোছল করতে হবেনা, যাদের চেহারা খারাপ তাদের করতে হয়, আর কখনই ছিড়বেনা মনে থাকবে?(আমি)
(খুশি হয়ে) আচ্ছা আর ছিড়বনা,।
তার কিছুদিন পর তিথির টেষ্ট পরিক্ষা শুরু হওয়াই ওকে সারা দিন বাসাতেই থাকতে হত সারাদিন, ভাবি আর দিয়ার সাথেই সময় কাটাত, একদিন বাসায় এসে দেখি ভাবিরা কেউ বাসায় নাই, দিয়া একা একা পড়তেছে, আমি যাওয়ার পর কেমন করে আমার দিকে তাকাচ্ছে, কিন্তু কাছে আসতেছেনা,
তিথি কিছূ হয়েছে?(আমি)
সে কান্না শুরু করে দিছে,
আমি ভয় পেয়ে গেলাম, তিথি তুমি কি একা একা ভয় পেয়েছ?
নাআআআ(কান্না কন্ঠে)
আবার ফুল ছিড়েছ?
নাআআআ
ভাবি কিছু বলেছে? বকেছে?
নাআআআ
তাহলে কাদতেছ কেন?
আমি ইচ্ছে করে করি নাই?
কি করেছ বল,
আপনি আমায় মারবেন, বলেই আরও জোড়ে কাদতে লাগল, আমি বাবাকে বলে দিব আপনি আমায় মারছেন,(তিথি)
আমি কি তোমাকে কখনও মেরেছি?
হুম দুইবার থাপ্পর মারছেন।(তিথি)
কবে?
মনে নাই একদিন সকালবেলা আর ঈদের পর একদিন আপনার বন্ধুদের সাথে কথা না বলার জণ্য মারছিলেন,
আচ্ছা তখন বুঝতে পারিনাই, তার পর ত আর মারিনাই, আর মারবও না বল কি করছ?(আমি)
দিয়া না চকলেট খাইতেছিল আমি চাইছিলাম আমাকে দেয়নাই, পরে আমি ওর কাছ থেকে জোড় করে সেটা কেড়ে নিছি, তার পর সে আমার চুল টেনে ধরছিল তাই আমি ওকে কামড় দিছি, ( তিথি)
কামড় দিছ মানে? দিয়া এখন কোথায়?
ওকে নিয়ে হাসপাতালে গেছে ওর মা।
(গল্পে লবন কম হলে আমি দায়ি না)
চলবে