অবেলায়_তুমি Part:-03

0
2015

অবেলায়_তুমি Part:-03
#Writer_Aysha_Siddika(Tip)

টিপ আর সাহিল পাশাপাশি দাঁড়িয়ে নামাজ পড়ছে, হ্যাঁ সাহিলকে নামাজে এনে দাড় করাতে পেরেছে টিপ।
অপরদিকে হিমান্ত এখনও জলন্ত সিগারেট হাতে বারান্দায়, আর অনু হতাশ হয়ে রুমে চলে আসে।
,
হিমান্ত ভাবে সেই বৃষ্টি ভেজা কোন এক সন্ধায়, টিপকে সে দেখেছিলো বৃষ্টির সাথে খেলা করতে, সেখানে বড় একটা মাঠের মধ্যে একা নুপুর পায়ে আনমনে মেতে ছিলো টিপ।
দূর থেকে গাড়ীর গ্লাস নামিয়ে চেয়েছিলো তার পানে।
,
কাজের তাড়া থাকায় চলে আসতে হয়েছিলো হিমান্তকে। সেদিনের পর থেকে আর একদিনও ঘুমুতে পারেনি হিমান্ত, প্রতিনিয়ত ছুটে যেতো এক নজর টিপকে দেখতে।
,
ঠিক দেখতে দেখতে কথন যে তার প্রেমে পরে যায় ও নিজেও বুঝে উঠেনি।
কিন্তু একদিন হঠাৎ করেই টিপকে আর সেখানে দেখেনি, পাগলের মত খুঁজেছিলো টিপকে, কিন্তু কোথাও পায়নি শেষে।
,
বেশ কিছুদিন রোজ করে খুঁজতে যেতো টিপকে, শহরের প্রতিটা গলি, স্কুল কলেজে কোথায় না খুঁজেছে হিমান্ত।
,
কেন যে দূর থেকেই দেখে চলে আসতো, তা সে নিজেও জানে না।
,
চোখ বেয়ে পানি পরছে অঝোর ধারায়, চাঁপা কষ্টে বুকটা ফেঁটে যাচ্ছে, কেন এমন হয়, আমরা যাকে চাই তাকে কখনওই পাই না।
ভালোবাসা বুঝি এতই কঠোর, শুধু কষ্টই পেতে হয়।
,
ভোরের আলো চোখে পরতেই টিপের ঘুম ভেঙ্গে যায়,
সাহিল মিস্টি হেসে টিপকে শুভ সকালে জানায়।
,
—-আপনি কোথায় যাচ্ছেন এত সকালে?(টিপ)
—-আমি নয় আমরা, টিপ আমি আর তুমি হানিমুনে সিঙ্গাপুর যাবো, আর আজ তার জন্য অফিসের সবাই একটা পার্টি থ্রো করেছে, তোমাকে আর আমাকে যেতে হবে।
তুমি যেন আবার ওই চিপ ড্রেসাপে গিয়ে আমার রাগ উঠিও না, এখানে কিছু ড্রেস রাখা আছে, পরে তৈরী থেকো আমি নিতে আসবো কেমন।
,
টিপের মুখটা শুকিয়ে যায় পার্টির কথা শুনে, ছোট থেকেই এসব অনেক ভয় পেতো সে, তারউপরে ছোট ছোট ড্রেস পরা তার জন্য মৃত্যুর সমান কষ্টকর।
,
কেন যে বাবা এই টাকাওয়ালা ছেলের কাছে বিক্রি করে দিলো আমাকে, হ্যাঁ এখনতো এটাই মনে হচ্ছে।
আমার বর চায় আমি আধুনিক হয়ে চলি, নাইট ক্লাব পার্টি, এসব আমার ভালোলাগে না।
,
কি করে আজ বাচাঁবো নিজেকে।
,
—-আচ্ছা হানিমুনে সিঙ্গাপুর কেন?(টিপ)
—-তো কোথায় যেতে চাও তুমি?
—-কক্সবাজার, সিলেট, পাহাড় দেখতে আমার অনেক ভালো লাগে, দূর দেশে না গিয়ে আমাদের দেশের এসব জায়গায় অনেক মনোরম সুন্দর, আমরা সেখানে কেন যাচ্ছিনা?
,
—-ওকে যা চাও তুমি, তবে সন্ধায় রেডি থাকবে যেন এদিক উদিক না হয় মনে রেখো।
তাহলে খুব খারাপ হবে বলে দিলাম টিপ।
,
টিপ ভয় পেয়ে চুপ করে থাকে, কি করবে সে।
,
তারাতারি ফ্রেশ হয়ে নাস্তা বানিয়ে শশুড় আর শাশুড়িকে ডাকে, একমাত্র আদরের ছেলে তো বাদর হয়েছে এজন্য একটা রাক্ষসরাজ রাবণ।
মনে মনে বলছে টিপ ..
,
—কিরে মা মনে মনে কি ভাবছিস?(টিপের শশুড়)
,
বাবা কিছুনা আসো নাস্তা করবে তো, দিন দিন প্রেশার বেড়েই চলছে তোমার কি এমন চিন্তা করো বলোতো, এখন তো তোমার ছেলেই আছে, সব সামলে নিবে বাবা।(টিপ)
,
—হ্যাঁ রে মা তা তো বুঝেছি কিন্তু আমার যা বদমেজাজি ছেলে, কি করতে কি করে বসে সেটা নিয়েই তো ভয়।
,
,
টিপ সারাদিন ভালোই কাটায় সন্ধায় সাহিল বাসায় আসে, টিপকে নিতে।
,
কিন্তু টিপ রুমে নেই, মায়ের রুমে উকি দিতেই মা বললো টিপ নাকি বান্ধবীর বাসায় গেছে।
রাগে সাহিলের চোখ থেকে আগুন বের হয়, ঠিক ওকে ফাঁকি দিয়েছে টিপ, ওর এত বড় সাহস।
,
এখন বন্ধুদের সামনে কি বলবে যে তার বউ আসতে পারবেনা, মুখ থাকবে না তার।
,
সাহিল ভালো করেই জানে টিপ কোথাও যায়নি কাছে কোথাও আছে।
গাড়ী নিয়ে খুঁজতে বের হয় সাহিল।
,
,
,
,
হিমান্ত জানে টিপ আজ আসবেনা, সেদিনের অপমানের পর কোন মেয়েই আসবেনা এটাই স্বাভাবিক।
,
হিমান্ত কিছু একটা ভেবে মুচকি হাসে।
,
—-দাদাভাই আজ এত খুশি খুশি কেন গো?(অনু)
—-তোর কলেজ শেষ হলো এই সন্ধায়?
—-না আসলে ওই আরকি বন্ধুদের সাথে আড্ডায় ছিলাম। একটু সবাই মিলে ফুচকা খেতে গিয়েছিলাম।
,
—আচ্ছা, আমি যাচ্ছি, আজ মনে হচ্ছে তার দেখা পাবো বলে মুচকি হেসে গাড়ী নিয়ে বেড়িয়ে পরলো হিমান্ত।
হ্যাঁ তার ভাবনাই ঠিক, টিপ আজও সেই জায়গায়, আগে যেখানে রোজ আসতো।
,
হিমান্ত দূর থেকে গাড়ীর গ্লাস নামিয়ে তাকিয়ে আছে, কেন অবেলায় পেলাম তোমায় বলোনা টিপ কাছে পাওয়ার আগেই হারিয়ে গেলে।
,
টিপ কতগুলো বাচ্চাকে আইসক্রিম কিনে দিচ্ছে আর সেলফি তুলছে তাদের সাথে,
টিপের খুশি দেখে মনটা ভালো হয়ে যায় হিমান্তর।
,
দেখতে দেখতে সন্ধা হয়ে যায়, হিমান্ত আর টিপ পাশাপাশি বসে আছে, টিপ ইতস্তত করছে, অচেনা অজানা লোকের সাথে কথা বলতে তার ভয় লাগে।
,
হিমান্ত দেখছে টিপ আজকে বোরকা আর হিজাব পরে এসেছে, আগেও আসতো, তবে আগে থ্রীপিস পরে সাথে হিজাব পরে ভালোভাবে আসতো।
,
টিপকে নিয়ন আলোয় অনেক সুন্দর লাগছে, হিমান্ত তাকিয়ে আছে দেখে টিপ প্রশ্ন করলো,
,,
আপনি আমায় কিছু বলবেন কি?
—-উহু শুধু দেখবো আমার মায়াপরিকে(আস্তে করে)
—-কিছু বললেন?
—-ওহ না, আচ্ছা চলো তোমায় পৌছে দেই (হিমান্ত)
—-না আমি একাই যেতে পারবো।
,
যদি সঙ্গ দিই তাহলে খুব কি ক্ষতি হবে?
,
—-না তা না, আসলে আমার বর দেখলে আমাকে মেরেই ফেলবে।
,
টিপের মুখে বরের কথা শুনে হিমান্তের বুকটা মোচড় দিয়ে ওঠে।
,
কিছুটা পথ তো পায়ে পা মিলিয়ে চলা যায় নাকি?
,
—হুম তা যায়, টিপ হাটছে একটু দূরত্ব নিয়ে, আর হিমান্ত চুপচাপ টিপের অস্তিত্ব অনুভব করছে, আজ খুব করে বলতে ইচ্ছে হয় তোমায় বড্ড ভালোবাসি টিপ।
কিন্তু তুমি যে অন্যের হয়ে গেছো আমার অধিকারটুকু কেড়ে নিয়েছো টিপ।
কিন্তু আমার তোমাকে চাই ই চাই, যদি শুনি তুমি ভালো নেই তাহলে আমি তোমায় আমার কাছে নিয়ে আসবো টিপ।
,
,
টিপ বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে ভয়ে ভয়ে, জানেনা আজ তার কঁপালে কি লেখা আছে।
,
পা টিপে রুমে গিয়ে চুপটি করে ওয়াশরুমে চলে যায় টিপ।
,
বের হতেই চোখ পরে সোফায় বসা সাহিলের উপর।
,
টিপ ভয় পেয়ে যায়, আজ না আবার কি করে বসে।
,
—-প্রেমিকের সাথে ঘোরা হলো অবশেষে(সাহিল গম্ভীর হয়ে বললো)।
—-না মা ন ে শো নে ন আ
—-কি বলেছিলাম আমি তোমায়(চিল্লিয়ে)
কথা কানে যায়নি?(ধমক দিয়ে)
,
টিপ ভয়ে পেছনে সরে যায়, সাহিল টিপকে জোরে দেয়ালের সাথে চেঁপে ধরে।
,
এতই যখন নাগরকে ভালোলাগে তবে বিয়ে করেছিলি কেন(রেগে আগুন হয়ে)
,
টিপের চোখ থেকে পানি পরে যায়, সে তো বিয়ে করতে চায়নি, বাবা জোর করে দিয়েছে।
ঘরে সৎ মা ঘাড় থেকে নামানলর জন্য ব্যস্ত হয়ে গেছিলো।
,
বাবা খুবকি বোঝা হয়ে গেছিলাম আমি তোমার কাছে(টিপের কষ্টে বুকটা ফেঁটে যায়)
চোখ থেকে পানি পরতেই থাকে।
,
মায়ের মুখটা ভেসে ওঠে টিপ যেন ছোট শিশু তখনই তার মা তাকে ছেড়ে চলে যায়।
,
কিন্তু তারপর মায়ের আদর বাবার আদর সবটাই হারিয়েছে সে।
,
তার সৎ বোন বাবা তাকে কত ভালোবাসে, কিন্তু টিপ যেন পর হয়ে গেছে, মা মা বলে কত কাঁদতো, একটু মায়া হয় নি তার।
কি করবে সে, স্বামীর সংসারেও সুখ লেখা নেই হয়তো তার ভাগ্যে।
,
সাহিল টিপের চুলের মুঠি ধরে টেনে লাগেজ সহ দরজার এপাশে রেখে আসে।
যেখানে ছিলি সেখানে চলে যা, আমার ঘরে তোর জায়গা নেই বলেই ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় দরজার ওপাশে।
,
টিপ মাটিতে বসে পরে, কাঁদতে থাকে দেয়ালের সাথে মাথা ঠুকে।
,
এটাই কি তার কঁপালে ছিলো, তাহলে ভাগ্য বলে মেনে নিবে সে।
,
,
সাহিল রেগে গেলে মাথা থেকে আগুন বের হয়, ওয়াশরুমে গিয়ে মাথায় পানি ঢালতে থাকে, কি করবে বুঝতে পারছেনা।
টিপের কান্নার শব্দ শোনা যাচ্ছে, সাহিল ক্ষণিক বাদেই ছুটে যায় দরজা খুলে, টিপ ফ্লোরে পরে আছে, আর কপাল কেটে রক্ত পরছে।
,
বুকের মধ্যে ব্যথা অনুভব হয় সাহিলের, ছুটে গিয়ে কোলে করে রুমে নিয়ে আসে টিপকে।
,
বিছানায় শুইয়ে দেয় সাহিল, গায়ে হাত দিয়ে দেখে ধুম জ্বর।
,
সাহিল ভয় পেয়ে যায়, বন্ধুকে ফোন দেয়,
,
—-হিমান্ত বল না আমি কি মেডিসিন দিবো, প্রচুর জ্বর মেয়েটার(সাহিল)
—-টিপের জ্বর কেন, ও তো সন্ধায় ভালোই ছিলো। (মনেমনে)
—-কি ভাবছিস।
—-কিছুনা ভাবি জ্বর বাঁধালো কিভাবে রে।
—-মেরেছিলাম, কথা শোনেনা তার জন্য, রাত করে বাড়ি ফিরেছে, কার সাথে ছিলো তা শুধু ও ই জানে, পেছন থেকে দেখেছি।
তবে যে ই হোক বয়ফ্রেন্ড তো নিশ্চয়, বাদ দে, বল কি মেডিসিন দিবো।
,
হিমান্ত সাহিলকে বলে দেয়, আর মনে মনে অনেক কষ্ট পায়।
মেয়েটাকে ওর জন্য মার খেতে হলো।
,
অনুশোচনায় ভুগছে হিমান্ত, টিপ যে ভালো নেই।
,
কি করবে সে এখন।
নাহ টিপকে নিজের কাছে নিয়ে আসতেই হবে।
,
সাহিল সারারাত বসে টিপের মাথায় জ্বলপট্টি দিচ্ছে।
ভয়ে মেয়েটার জ্বর এসে গেছে।
ভোর রাতের দিকে একটু কমেছে, কিন্তু জামাটা ভিজে গেছে ঘেমে।
সাহিল চেন্জ করে দেয় কোনরকমের চোখে ওরনা বেঁধে, কারন টিপের অচেতন অবস্হায় ওকে টাস করলে ও খারাপ মনে করতে পারে, এতটাও নিচু মনের মানুষ না সে।
,
টিপকে নিজের বুকের সাথে লাগিয়ে স্যুপ খাইয়ে দেয় সাহিল।
টিপ ঘুমের ঘোরে সাহিলের গায়ের উপর সব ভর ছেড়ে দেয়।
আর কি যেন বিরবির করে…
,
টিপের মুখের দিকে তাকালে বড্ড মায়া হয় সাহিলের।
,
মনে মনে ভাবে এই মেয়েটা আমায় কি করে ঠকাতে পারে।
,
টিপকে শুইয়ে দিয়ে বারান্দায় গিয়ে বসে সাহিল।
,
সিগারেট খেতে থাকে সে,
রেগে গেলে অনেকটা হিংস্র হয়ে যায় ঠিকই পরে তার জন্য অনুতপ্ত ও হতে হয় তাকে।
,
ছোটবেলা থেকেই এই স্বভাবের জন্য সবার সাথে লাগতো।
,
কিন্তু হিমান্তের সাথে খুব সখ্যতা গড়ে ওঠে তার।
দুজন কলিজার বন্ধু হয়ে যায়।
কিন্তু আজ হিমান্ত তারই বিয়ে করা বউএর সাথে দেখে কি রিয়্যাক্ট করা উচিৎ তার, বুঝতে পারছেনা সাহিল।
,
….
,
চলবে…
,
(সংসারে কোন সন্দেহ নয়, তাহলে সেই সংসারে অশান্তি থেকে যায়।
উচিৎ একজন আরএকজনকে বোঝা, তাহলে যে কোন সমস্যার সমাধান মিলে।
না জেনে কখনওই ভূল করা উচিৎ না, সংসারের সবকিছুই ভাগাভাগি করে নেয়া উচিৎ।
একটা মেয়ের জীবনে স্বামীর সংসারই সব বিয়ের পর।
তাকে আগলে রাখা প্রত্যেকের কর্তব্য।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here