অবেলায়_তুমি Part:-07
#Writer_Aysha_Siddika(Tip)
এভাবেই চলছে সময়, টিপ সাহিলের সংসারটা বেশ যাচ্ছে। সাহিল এখন টিপের সব ইচ্ছা পুরন করে, ওকে বুঝতে চেষ্টা করে।
,
কিন্তু হিমান্ত? পৃথিবীর এক প্রান্তে একজন সুখি হলে অপরজন কষ্ট পাবেই এটাই স্বাভাবিক।
,
সেদিনের জ্বর হবার তিনদিন পরে ঠিক আবারও সেই মেয়েটাকে দেখতে পায় হিমান্ত, সমূদ্রের পাশে হাটছে আর ছোট ছোট নৌকা ভাসাচ্ছে।
ঢেউ এলে পানি এসে ওর পায়ে আছরে পরছে, কিন্তু এটা ঠিক সন্ধে বেলায়।
আচ্ছা মেয়েটা কেনই বা এই অবেলায় আসে সবসময়, সকাল বিকাল কত সময় আছে। প্রশ্নরা ঘুরপাক খায় হিমান্তের মনে, আচ্ছা মানুষ কত বৈচিত্রময় হয়।
,
আমাকে দেখেই মেয়েটা হেসে এগিয়ে আসে।
মনে হয় যেন অন্ধকারের পরী, জ্বলজ্বল করছে ওর পুরো শরীর।
,
চোখে হাজারও নেশা তার..
,
—তোমার জ্বর কমেছে?
,
চমকে ওঠে মেয়েটার কথা শুনে, ও কিভাবে জানে আমার জ্বর ছিলো?
,
হিমান্তের চোখে হাজারও প্রশ্ন।
,
—হুমম কমেছে..
—তোমার চোখ বলছে আমাকে কিছু বলতে চাচ্ছ।
—তুমি এই ভর সন্ধায় ই শুধু এখানে আসো, অন্য সময় কেন নয়?
—কারন আমি যাকে ভালোবাসি সেও ঠিক এই সময়ই আমার থেকে হারিয়ে গেছিলো, তাই তো রোজ এখানে এসে তার জন্য বসে থাকি, কখনও নৌকা বানিয়ে ভাসিয়ে দিই, আবার কখনও প্রদীপ ভাসিয়ে দিই, যদি সে অন্ধকার দেখে আমায় চিনতে না পারে, তাই তো প্রদীপ জ্বালাই আমি বলোই মেয়েটা পানির দিকে নামছিলো।
,
হাটু পানিতে নেমে সে পেছন ফিরে তাকালো, হাতে এককোষ পানি,
,
—কি হবে এই পানি দিয়ে..?(হিমান্ত)
—এই পানি কেড়ে নিয়েছিলো আমার ভালোবাসাকে বলেই মেয়েটা ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে।
হিমান্তের অনেক মায়া হয়, ভালোবাসা না পাওয়ার যে কি যন্ত্রণা তা সে বোঝে।
,
তার কষ্টগুলো সে ফিল করে।
,
তারপর থেকে এক সপ্তাহের প্রতিটাদিন সন্ধায় হিমান্ত ওর সাথে বসে গল্প করতো।
কেন জানিনা ওর সাথে সব শেয়ার করে মনটা হালকা হয়ে যেতো।
,
মেয়েটা একটা ছেলেকে ভালোবাসতো, কোন কারনে হয়তো ছেলেটা মারা গেছে, কিন্তু মেয়েটা আজো তাকে খোঁজে।
,
হিমান্ত প্রতিদিনের মত আজও সেখানে গিয়ে বসে আছে, আজকে তার জন্য একটি গোলাপ নিয়ে এসেছে হিমান্ত।
প্রপোজ করার জন্য নয়, উপহার দেয়ার জন্য।
উপহার দেয়ার জন্য ফুল হলো পবিত্র আর উত্তম।
আমাদের প্রিয় নবী ফুল অনেক পছন্দ করতেন।
,
কিন্তু আজ রাত হয়ে গেলো মেয়েটা এখনও এলো না, কিন্তু হিমান্ত তবুও বসে ছিলো।
,
শেষে না পেয়ে মন খারাপ করে চলে এলো।
,
মেয়েটার মায়ায় জরিয়ে পরেছে হিমান্ত, সর্বক্ষণ ওর হাসিমাখা মুখ, আর অবুঝপনা কাজ হিমান্তের মনে বাসা বেঁধে গেছে,
,
ভালোবাসা না হলেও ভালোলাগা হয়ে গেছে।
হয়তো তার আর মেয়েটার কষ্টের রং একই বলে এত মিল।
,
কেটে গেলো আরো একটা দিন, হিমান্ত সবখানে শুধু মেয়েটার কথা শুনতে পায়।
,
মেয়েটার নামও জানেনা কিভাবে খুঁজবে সে…
,
পরেরদিনও সমূূ্দ্রের পাশে সেই জায়গায় এসে বসে আছে হিমান্ত।
,
আজকেই শেষ দেখা, কাল সকালেই ঢাকা ব্যাক করবে হিমান্ত।
,
এখানে এসেছিলো টিপের জন্য, কিন্তু টিপ তার সংসার নিয়ে সুখেই আছে।
,
তাই চাইনা তার পথের বাঁধা হতে, কতোটা কষ্ট লাগছে হিমান্তের, মন চায় এখনই পানিয়ে নিজেকে বিসর্জন দিই।
,
চোখের সামনে দুইটা মুখ ভেসে উঠছে, নিজের প্রতি খুব বিরক্ত হচ্ছে হিমান্ত।
,
আমি কাউকে পাওয়ার যোগ্যতা রাখিনা।
টিপ তো আমায় ছেড়ে চলে গেলো, তারপর একটা মনে খুলে কথা বলার বন্ধু হলো, সে ও আমাকে ধোকা দিলো।
,
নিজের প্রতি খুব রাগ লাগছে হিমান্তে, কিছুই ভালো লাগছে না তার।
,
আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে হিমান্ত, আজকে তার আকাশটাকে বড্ড আপন মনে হচ্ছে।
কেউ চায় না আমি ভালো থাকি, মায়ায় জরিয়ে সবাই হারিয়ে যায় আমার থেকে।
দূরে দূরে, বহুূূদূরে…
,
কষ্টগুলো আজ চোখের জ্বল হয়ে পরে।
,
,
…
,
টিপের ফেস টা চোখের সামনে ভেসে ওঠে হিমান্তর, হাটু পানিতে নামে ও,
আজ কি এমন নেশায় মেতে উঠলো হিমান্ত নিজেও জানে না।
এ যে মরন নেশা…
,
একটু একটু করে আরো গভীরে নামে হিমান্ত,,, আজ যে সে নিজের মাঝে নেই।
বুঝতেই পারছে না সে কি করছে…
,
গলা পানিতে নেমে গেছে হিমান্ত..
,
কাল সকালে খবরের কাগজের প্রথম হেডলাইন হবে, হিমান্ত নামের কেউ একজন সমূদ্র সৈকতে ঘুরতে এসে নিখোঁজ। তাকে দেখা মাত্রই এই ঠিকানায় যোগাযোগ করার জন্য অনুরোধ করা হলো।
,
,
হিমান্ত চোখ বন্ধ করে আছে, আজকে ওর সব কষ্টগুলো পানির সাথে মিশে যাচ্ছে।
,
মনে মনে হাসছে হিমান্ত, আমার মৃত্যুর খবর শুনে টিপ কি কষ্ট পাবে?
,
নাকি সে জানবেই না… তোমাকে ছেড়ে যেতে খুব কষ্ট হচ্ছে টিপ।
,
শেষবারের মত বলবো আই লাভভভ ইউউউউ টিপ(জোরে চিল্লিয়ে বললো হিমান্ত)
আকাশ বাতাশে কথাগুলো দ্বীগুন হয়ে ওর কানেই ফিরে এলো।
,
ভালোবাসার এক নিষ্ঠুর পরিহাস।
বোকা মানুষ আর বোকা মনটাও বোঝে না, ভুলে যায় নিজের পৃথিবীকে।
,
এটা যে ভালোবাসা না….
,
,
চলবে….
,
,
(গল্পটা কাল্পনিক, অবেলায় তুমি নামটার সাথেই মিল রাখতে চাচ্ছি, গল্পের নায়ক নিয়ে অনেকেই সন্দেহ করছেন।
গল্পের মেইন নায়ক হলো হিমান্ত, এই গল্পের কোন নায়িকা নেই।
কারন এটা কোন ভালোবাসার পূর্ণতা পাওয়ার গল্প না।
না পাওয়ার গল্প, কোন এক অবেলায় হারিয়ে যাওয়া মানুষটার গল্প।
নাইড ডিউটি ছিলো আমার, রাতে ডিউটি দিনে ঘুম করেই কাটালাম তাই গল্প আর মাথায় ঢুকছিলো না।
,
সবাইকে অপেক্ষা করানোর জন্য দুঃখিত।
সবার মনের মত করে সাজিয়ে লিখতেও পারছি না।
সবাই কি এই আয়শা নামের পিচ্চি মেয়েটার উপর রেগে আছো?
?সবার প্রতি এতএত ভালোবাসা আর শুভ কামনা রইলো। ভালো থাকো সুস্হ থাকো)