অবেলায়_তুমি Part-09(Last part)

0
3689

অবেলায়_তুমি Part-09(Last part)
#Writer_Aysha_Siddika(Tip)

পেছনে তাকিয়ে প্রতিবারের মত এবারও দেখতে পায়না স্মৃতিকে।
,
হিমান্ত বুঝতেই পারে না কেন আর কিভাবে স্মৃতি হাওয়া হয়ে যাচ্ছে।
,
—কিরে কি ভাবছিস?(অনু)
—উহু কিছুনা চল।
,
সারারাত হিমান্ত স্মৃতির কথা ভাবতেছিলো, ঠিক পরেদিন নিয়ম করে আবার স্মৃতি আসছে, তবে এবার আর আগের জায়গায় না,
,
—-হিমান্ত ঘুম থেকে উঠে চোখ মেলেই দেখে সামনে স্মৃতি বসা.. ভয়ে একলাফে উঠে বসে হিমান্ত। হাত দিয়ে চোখ মুছে আবার তাকায়, স্মৃতি মৃদু হাসি দিয়ে তাকিয়ে থাকে।
,
—দিলাম তো চমকে..?
—স্মৃতি তুমি(অবাক হয়ে) এই সাঝ সকালে আর আমার দরজা তো লক করা ছিলো তুমি কিভাবে ভেতরে এলে.?
আর অনু, অনু তোমাকে দেখেনি..?
,
—হেসে বললো, হিমান্ত তুমি ছাড়া কেউই আমায় দেখতে পাবে না।
—হিমান্ত চোখ বড় বড় করে তাকায়।
,
,
,
—-জীবনের সাথে রিলেশনের চারবছর পূরণ হলে আমরা ঘুরতে আসি এই কক্সবাজারে।
সারাদিন মজা করেছি, হৈ চৈ করেই কেটে গেছে দিনটা, আমার জীবনের সব থেকে সুখের মুহুর্তটা কাটিয়েছিলাম আমি।
কিন্তু আমার না ভাগ্যটাই খারাপ ছিলো,
,
অনেক রাত তখন আমি বায়না ধরেছিলাম যে বোর্ডে উঠবো।
,
জীবন যেতে চেয়েছিলো না, কিন্তু আমি শুনিনি, একা একাই উঠেছিলাম।
,
বাধ্য হয়ে জীবনও আমার সাথে এলো।
রাত তখন আড়াইটা বাজে, এমন সময় সমূদ্রে ঝর উঠলো, আমি ভয় পেয়ে জীবনকে আস্টেপিস্টে জরিয়ে ধরলাম।
,
বোর্ড দুলছিলো প্রচুর, হঠাৎ দুজন একসাথে পরে যাই, জীবনের হাত ধরে ছিলাম তবুও, মনে হচ্ছিলো দুজন একসাথে বাঁচবো না হলে একসাথে মরবো।
,
জীবন আর আমি দুজন অনেক চেষ্টা করলাম, কিন্তু আমি স্রোতের মুখে পরে গেলাম, আর বেশিক্ষণ জীবনের হাত ধরে রাখলে ও আমার সাথে স্রোতে হারিয়ে যেত, তাই আমিই জোর করে ছাড়িয়ে নিই।
আর আর(বলতে গিয়ে গলায় আটকে যাচ্ছে স্মৃতির, চোখে পানি টলমল করছে তার).
,
—তারপর..?
,
তারপর আর কি, আমি স্রোতের মাঝে হারিয়ে গেলাম, শ্বাস বন্ধ হয়ে যাচ্ছিলো।
জীবন আমায় পাগলের মত খুঁজেছে, কিন্তু পায় নি।
,
আজও জানিনা বেঁচে আছে কি না (কাঁদতে শুরু করলো স্মৃতি)
,
আমি আজও সেই জায়গায় রোজ আসি,
কিন্তু আমার জীবনটাকে একটিবারের জন্যও দেখতে পাই না।
,
,
—আচ্ছা তুমি আমাকে দেখা দিলে কেন?
,
—কারন আমি তোমাকে কষ্ট পেতে দেখেছি, তাই তোমাকে সঙ্গ দিলাম।
,
যদি কোনদিন আমার জীবনের দেখা পাও তাহলে এই রিংটা ওকে দিয়ে দিও।
,
আর শোন একদম লক্ষী ছেলে হয়ে থাকবে, একজীবনে সবার মনের আশা পূরণ হয় না।
,
কেউ পায় আর কেউ হারায়,
যেমন আমি,
,
আজকের পর থেকে আর আমাকে দেখতে পাবে না।
তবে আমি তোমার ডাকে তখনই আসবো যখন তুমি বিপদে পরবে।
,
,
হিমান্ত স্মৃতির কথা শুনে চমকে ওঠে, তাহলে কি ও আর আমার সাথে কোনদিন কথা বলবে না।
,
—প্লিজ স্মৃতি এমনটা করো না, সব হারিয়ে তোমার মত একজন বন্ধু পেয়েছি আমি, আমি তোমাকে হারাতে চাই না, আমাকে একা করে যেওনা স্মৃতি।
,
—-না হিমান্ত, নিজের উপর ভরসা করতে হবে তোমার, নিজের জন্য বাঁচতে হবে।
আমি তোমাদের মত না, আমার জীবনকাল অনেক আগেই ঘড়ির কাটায় বাঁধা পরে আছে।
,
এবার আমার যাবার পালা, তুমি সবসময় ভালো থাকবে, আর ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে ভেবে নিবে তুমিকি ঠিক করছো..?
,
,
স্মৃতির কথা শুনে হিমান্তের চোখে পানি চলে আসে,
না স্মৃতি আমাকে সপ্তাহে একদিন হলেও দেখা দাও, মাসে একবার, আমি মিস করবো তোমায় স্মৃতি।
,
স্মৃতি চোখে জ্বল আর মুখে মৃদু হাসি নিয়ে বললো,
আমার বেলা যে শেষ হিমান্ত,
তুমি যে অবেলায় এলে ,
এখন আমায় যেতে হবে, কিন্তু আমি তোমার চারপাশে ঠিকই থাকবো, তুমি না দেখলেও আমি তোমায় দেখবো।
,
সবসময় সবাইকে হাসিখুশি রেখো, আর ভালোবেসো, এটাই তো মানুষের ধর্ম।
,
হঠাৎই স্মৃতি চোখের সামনে থেকে ধোয়া হয়ে উরে গেলো।
,
হিমান্তের খুব কষ্ট হচ্ছে, কেন সবাই চলে যায় এভাবেই।
,
,
পৃথিবীতে কেউই চিরস্হায়ী নয়, প্রত্যেককে একদিন যেতে হবে, মৃত্যুর স্বাদ তাকে নিতেই হবে।
,
শুধু পরে থাকবে জীবনের স্মৃতিগুলো, আর নিজের করা ভুলগুলো।
,
এটাই মানুষের জীবন, কঠিন বাস্তবতা।

,
মেনে নিতেই হবে, প্রত্যেককে, হিমান্ত চলে আসে ঢাকায়, আর কোনদিন স্মৃতির দেখা পায়নি সে, খুব করে চাইতো স্মৃতি একবার হলেও আসুক।
,
হিমান্ত আগের মত নিজের বিজনেসে মন দেয় আর দিন শেষে রাত নামলেই স্মৃতির কথা মনে পরে তার।
,
টিপ তার জীবনে সে সুখেই আছে, সাহিল এখন টিপের কথা মত সব করে। মসজিদে যায়, নামাজ পড়ে ঠিকমত। আগের মত পার্টিতে যায় না, মিটিং থাকলে কোন এক রেস্টুরেন্ট এ বসেই কাটিয়ে দেয়।
,
হয়তো যখন একটা মেয়ের বিয়ে হয় তখন ঠিকই দুটি মানুষ আলাদা থাকে কিন্তু যখন তারা এক হয়ে যায়, তাদের ভাগ্যও এক সুতোয় বাঁধা পরে।
,
আর একটা মেয়ে চাইলে নিজের সংসারটা গুছিয়ে রাখতে পারে, তার জন্য প্রয়োজন ধৈর্য, আর চেষ্টা।
বিচ্ছেদ কোন সমাধান নয়, তাকে বুঝিয়ে নিতে পারলেই সফলতা আর সমস্যার সমাধান।
,
হিমান্তের জীবন এভাবেই কাটে, হয়তো কোন এক অবেলায় আবার কারো দেখা পেয়ে যাবে, সেও হয়তো হারিয়ে যাবে।
,
,
বেশ কিছুদিন পর……..
,
,
হিমান্ত তার ক্লায়েন্ট জয় এর বিয়ের অনুষ্ঠানে আসে নিমন্ত্রিত হয়ে।
,
সবার সাথে হাসি আনন্দে সময় কাটায়, কিন্তু দূরে কোথাও কিছু একটা চিকচিক করতে দেখে হিমান্ত তুলে দেখে একটা গলার লকেট।
,
হিমান্ত লকেটটা খুলেই অবাক হয়ে যায়,
,
স্মৃতির ছবি, আর পাশে জয়ের ছবি সুন্দর করে বাঁধানো।
,
অনুষ্ঠানে বিশেষ করে কিছু পথশিশুদের আলাদা ভাবে নিমন্ত্রণ করা হয়েছে।
,
হিমান্ত জয়কে খুঁজতে থাকে, কিন্তু জয় তখন পথশিশুদের সাথে কথা বলতেছিলো।
,
,
—-জীবন…?
—ডাক শুনে বুকের ভেতর কেঁপে ওঠে জয়ের, অনেকদিন পর কেউ এই নামে ডাকলো।
কিন্তু কে সে, জয় হিমান্তকে দেখতে পায়,
হিমান্ত মুচকি হেসে লকেটটা এগিয়ে দেয় জয়ের হাতে।
জয় লকেটটা পেয়ে চুমু খায়, আর গলায় খোঁজে, কখন যে পরে গেলো।
,
বুকের সাথে চেঁপে ধরে লকেটটা, জয়ের চোখ ছলছল করছে পানিতে।
,
হিমান্ত পকেট থেকে রিং টা বের করে দেয় জয়কে।
,
—কে তুমি?
এই রিং তুমি কোথায় পেলে..?
,
—স্মৃতি দিয়েছিলো।
—কোথায় আছে স্মৃতি, হিমান্ত প্লিজ বলো আমার স্মৃতি বেঁচে আছে? ওকে আমি কত খুঁজেছি, আমাকে এখনই নিয়ে চলো স্মৃতির কাছে, প্লিজ হিমান্ত, আমি একবার স্মৃতিকে দেখতে চাই।
আমি আমার ভালোবাসা আবার ফিরে পেয়েছি হা হা, বাবুরা তোরা দেখছিস আমার স্মৃতি বেঁচে আছে, স্মৃতি আমি আসছি, আমাকে নিয়ে চলো হিমান্ত প্লিজ প্লিজ বলে হিমান্তের পায়ের কাছে বসে পরে, সবার চোখে পানি, বাচ্চাগুলো জয়ের কাছে এসে চোখ মুছিয়ে দেয়।
,
হিমান্ত মনে মনে বারবার স্মৃতিকে ডাকে, স্মৃতি তুমি কোথায় স্মৃতি, আমি জানি স্মৃতি তুমি আমার চারিপাশে আছে, প্লিজ দেখা দাও, আমি আর কোনদিন তোমার কাছে কিচ্ছু চাইবো না স্মৃতি প্লিজ স্মৃতি।
,
জীবন বার বার হিমান্তকে জিগ্যেস করতেছে আর পাগলের মত করতেছে, সে যে কত খুশি হয়েছে তা চেহারা দেখলেই বোঝা যায়, সব লোক জরো হয়ে গেছে।
,
হিমান্ত কিভাবে বলবে যে স্মৃতি আর বেঁচে নেই, তবে সে আজও সেই জায়গায় বন্দী, আজও তোমার আশায় রোজ বসে থাকে।
,
,
এমন সময় লেকের পারে খানিকটা আলোকিত হয়ে যায়, সবাই অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে থাকে বুঝতে পারেনা কি হতে চলছে।
,
হিমান্ত খুশি হয়ে যায়, স্মৃতি প্লিজ সামনে আসো স্মৃতি, আমি জানি তুমি শুনতে পাচ্ছো, তোমার জীবনকে আমি পেয়েছি স্মৃতি।
,
জয় চুপ হয়ে যায়, বুকের মধ্যে ভাঙচুর শুরু হয়ে যায়।
, হিমান্ত আলোর দিকে হাতটি বাড়ায়,
,
স্মৃতি তার হাত ধরে সামনে আসে, আলো নিভে যায়, সাদা একটা শাড়ী পরে দাঁড়িয়ে আছে স্মৃতি, জয় ছুটে আসে স্মৃতির কাছে।
,
স্মৃতি তুমি…(কান্নাভরা চোখে)
,
—কন্গ্রাচুলেশন জীবন,
আর কিছুই বলে না দুজন দুজনার দিকে তাকিয়ে থাকে,
একটা সময় দেখতে দেখতে চোখের সামনে নিঃশ্বেষ হয়ে যায় স্মৃতি নামটা, জয় তবুও চেয়ে থাকে, এ বেলায় চোখে চোখেই হোক তবে কথা।
,
বলা হয়নি তাকে অনেক কিছুই, ভালো নেই আমি, তুমি হীনা।
,
অনেক কথা হৃদয়ের কোঠরে বন্দী, অনেক কথা হারিয়ে যায় চোখের সিমানায়
,
কিছু কথা প্রজাপতি
কিছু আবার তারা
কিছু কথা বোঝেনা কেউ
শুধু তুমি ছাড়া।
কিছু কথা বলতে চেয়েও তবু
হয় নি বলা
কিছু কথা শুকিয়ে গেঁথেছি মালা।
,
এভাবেই হারিয়ে যায় কালের প্রবর্তনে বেলা অবেলার গল্পগুলো।
,
ভালো থাকুক ভালোবাসা, ভালোথাকুক ভালোবাসার মানুষগুলো।
,
সবাই ভালো থাকো সুস্হ থাকো, আল্লাহ হাফীজ।

,

,
,

(The END)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here