#অব্যক্ত প্রেমাসুখ❤️🔥
#আদ্রিতা নিশি
।৪।
[কপি করা নিষিদ্ধ ]
রাতের দীর্ঘ প্রহর পেরিয়ে সকাল হয়েছে। জানালা ভেদ করে ঘরে সূর্যের সোনালী আলো প্রবেশ করছে আহিয়াদের রুমে।বাহির থেকে ভেসে আসছে পাখির কলরব। মৃদু মন্দ বাতাসে জানালার পর্দাগুলো নড়ে চড়ে উঠছে। এর মাঝেই বেজে উঠলো এলার্ম-ঘড়ি। আহিয়াদ এলার্মের আওয়াজে একটু পরেই ঘুম থেকে জেগে উঠলো। হাত বাড়িয়ে বিছানার পাশে থাকা ছোট টেবিলে রাখা ঘড়িটি বন্ধ করলো সে। দ্রুত বিছানা ছেড়ে ওয়াশরুমে গেলো ফ্রেশ হওয়ার জন্য।কিছুক্ষণ পর ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে কাবার্ডের সামনে এসে দাঁড়িয়ে কাবার্ড খুলে চয়েস মতো টি শার্ট বের করে পরে নিলো।বিছানায় রাখা ফোনটা হাতে নিয়ে পা বাড়ালো ছাদের দিকে।
চিলেকোঠার ঘর পেরিয়ে ছাদে পা রাখলো আহিয়াদ। সকাল সকাল গ্রামের হালকা শীতল হাওয়া ছুয়ে যাচ্ছে তার শরীর। সে কিছুটা এগিয়ে সামনের রেলিঙ বরাবর দাঁড়ালো। আশে পাশে চোখ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখতে লাগলো। মনোমুগ্ধকর পরিবেশ, শুদ্ধ বাতাস, গ্রামীণ জীবনধারা আহিয়াদের পছন্দের তালিকায় শীর্ষে।তার মনে পরে সে যখন ক্লাস টেনে পড়তো তখন একবার এসেছিলো। সেই সময়ে আসার কারণটি ছিলো ভিন্ন। তার নানীজানের মৃ ত্যু।তারপর আর আসা হয়ে ওঠে নি। অনেকগুলো বছর পর আবারও গ্রামে এসেছে সে। অনেকটাই পরিবর্তন হয়েছে গ্রামটি। বাড়ির সামনেই পাকা রাস্তা তার ওপর পাশে বেশ কয়েকটা ইটের বাড়ি রয়েছে। আহিয়াদ চোখ বন্ধ করে মনোরম পরিবেশ উপভোগ করতে লাগলো। মৃত্তিকার ঘ্রাণ জানান দিচ্ছে নাসিক্যে।কিছুটা সময় পেরিয়ে যেতেই আহিয়াদ চোখ খুললো। তখনি তার চোখ পরলো আকাশী রঙা থ্রি পিস পরিহিত মীরাতের দিকে। মীরাতের পাশেই একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে।হয়তো দুজন কথা বলছে। আহিয়াদ হঠাৎ খেয়াল করলো মীরাতের কৃষ্ণ বর্ণীয় চুলগুলো। বেণী করেও কোমড় ছাড়িয়েছে। বিস্মিত হলো খানিকটা সে কখনো এতো বড় চুলের অধিকারীকে দেখেনি। সে খেয়াল করলো মেয়েটা কিছুটা শুকিয়ে গেছে। হয়তো টেনশনে। এটা ভেবেই দীর্ঘ শ্বাস ফেললো। গত দুইদিন চেয়ারম্যান বাড়িতে মীরাতকে দেখা যায় নি। কারনটা জেনির বিহেভ।
– বাহ এতো দ্রুত ঘুম থেকে উঠে গিয়েছিস?
আহিয়াদ নিহালের কন্ঠস্বর শুনে পাশে তাকালো। নিহাল চোখ কচলাতে কচলাতে এসে দাঁড়িয়েছে। দেখে বোঝাই যাচ্ছে ঘুম এখনো কাটেনি।
– অলরেডি সেভেন ও ক্লক।
– উফ বাড়িতে এসেও ছোট বাচ্চার মতো বাবার কাছে বকা খেলাম। তার ওপর রাতে ঠিকঠাক মতো ঘুম হয়নি। মেজাজ বিগড়ে আছে আমার।
নিহালের কন্ঠে বিরক্তভাব। সে গতকাল রাতে বাড়িতে ফিরেছে। ফিরতেই আবসার সাহেব ছেলেকে বকেছেন। আহিয়াদের সাথে নিহালকে আসতে বলেছিলেন তিনি কিন্তু নিহালি আসেনি। এতেই প্রচন্ড রে গে যান আবসার সাহেব। পড়াশোনার জন্য ঢাকায় থাকে সে। আহিয়াদ আর নিহাল সমবয়সী। দুজনের ছোটবেলা থেকে বেশ ভাব।
আহিয়াদ মৃদু হেসে বললো – আমার সাথে আসলে তো আর এই বুড়ো বয়সে বকা খেতে হতো না।
নিহাল খিঁচে যাওয়া মেজাজ নিয়ে বললো – একদম বুড়ো বলবি না। আমার বয়স টুয়েন্টি ফাইভ।
আহিয়াদ মাথা নাড়িয়ে ইশারায় বললো ঠিক আছে।
নিহাল বললো – ঢাকায় কবে ফিরবি?
আহিয়াদ কিছুটা ভেবে বললো – এইতো এক, দুই দিনের মধ্যে চলে যাবো।মা দ্রুত যেতে বলেছে।আর ফাবিহাকে তো চিনিস কিছুক্ষণ পর পর কল দিয়ে একটা কথাই বলে যাচ্ছে আমি কেনো তাকে নানাজানের বাড়িতে নিয়ে আসিনি। কেনো তাকে না বলে চলে এসেছি।
নিহাল বললো– তাহলে ফাবিহাকে কেনো নিয়ে আসলি না?ঘুরে যেতো এসে।
– ভার্সিটিতে ক্লাস শুরু হয়েছে তাই নিয়ে আসিনি।
– ওহহ।
– হুমম।
নিহাল সামনে তাকাতেই মীরাতকে দেখলো। সে আহিয়াদকে বলে উঠলো – নিচে দাঁড়িয়ে আছে দুজন। তার মধ্যে আকাশী রঙা ড্রেস পরা মেয়েটিকে দেখতে পাচ্ছিস?
আহিয়াদ নিহালের দৃষ্টি অনুসরণ করে তাকালো। সে সন্দিহান কন্ঠে বলে উঠলো – মীরাতের কথা বলছিস?
নিহাল মলিন কন্ঠে বললো – হ্যা। জানিস ছোট বেলা থেকে আমি মীরাতকে চিনি। আরিশা যেমন আমার বোন মীরাতও ঠিক তেমনটাই আমার কাছে। মীরাতের বাবা যখন মা রা যায় ওর বয়স দশ-বারো বছর হবে হয়তো। চাচা মা রা যাওয়ার পর মীরাত আর চাচী অসহায় হয়ে পরে। তাদের সংসারে দারিদ্র্য হা’না দেয়। জীর্ণ শীর্ণ জীবনে পতিত হয় দুজনে। দুর্দশা ঘিরে ধরে দুজনকে।চাচী তার জমানো কিছু টাকা দিয়ে সংসার চালাতে থাকে। দুজনের জীবন কোনো মতো চলছিলো। কিন্তু মীরাতের চাচা চাচী দুজনেই খুব খা রাপ। মীরাত আর চাচীকে নানাভাবে অত্যা চার করতে থাকে। এসব ঘটনা বাহিরে প্রকাশ হয়নি কখনো।চাচীও আমাদের বলেনি। অ ত্যাচার আর দুর্দশার কথা গ্রামে ছড়িয়ে পরতেই দাদাজান ছুটে যায় মীরাতদের বাড়িতে। দাদাজান ওয়ার্নিং দেয় মীরাতের চাচা চাচী কে যদি আর একবার অত্যা চার করে তাহলে পুলিশে দিবে।এতে তারা খানিকটা ভয় পেয়ে যায়।দাদাজান মীরাত আর চাচীর সকল দায়িত্ব নেন। প্রয়োজনীয় সকল কিছু কিনে দেন,মীরাতের পড়াশোনা ও করাচ্ছেন তিনি। কয়েকমাস আগে শুনলাম সরকারি চাকরীজীবির সাথে বিয়ে ঠিক হয় মীরাতের। শুনে ভালোলাগছিলো অবশেষে মেয়েটার দুঃখ খুচলো তবে এটাই ভেবেছিলাম । কিন্তু না অভাগীর কপাল থেকে সহজে দুঃখ বিদায় নেয় না।
আহিয়াদ স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইল।এগুলো তার কাছে অজানা। একটা মানুষের জীবনে কতোই না অজানা ঘটনা থাকে।
★★
গোধূলি লগ্ন পেরিয়ে সন্ধ্যা হয়েছে। মীরাত উদাসীন ভঙ্গিতে বিছানার ওপর বসে আছে দৃষ্টি তার জানালার বাহিরে অদুরে ঝোপঝাড়ের দিকে। জোনাকি পোকার মেলা লেগেছে সেখানে। জোনাকির হালকা সবুজ আলোয় চারিপাশ আলোকিত হয়ে আছে। মীরাতের মনে হচ্ছে যদি তারও জোনাকির ন্যায় কোনো নিজস্ব ক্ষমতা থাকতো তাহলে পৃথিবী থেকে বহুরুপী মানুষদের চিরতরে সরিয়ে দিতো। আফসোস তার কোনো ক্ষমতা নেই। পাষা ন্ড মানুষটা তার জীবন জাহা ন্নামের থেকে ভয়াবহ বানিয়ে দিয়েছে। ইফতির আসল রুপ যদি সে জানতো আগে কখনই ভালোবাসার মতো ভুল সে করতো না। এসব ভাবতে বক্ষে চিনচিনে ব্য থা অনুভূত হলো তার।
– কিরে মীরাত কই গেলি রে।বাড়ির মানুষের মুখ পু ড়িয়ে মুখ লুকিয়ে ঘরে বসে আছিস কেনো?
বাহির হতে ভেসে আসছে উচ্চস্বরের মেয়েলী হাঁক। হাঁকের সাথে আরো বেশ কয়েকজন মহিলার কন্ঠস্বরও শোনা যাচ্ছে। মনে হচ্ছে কোনো গোলযোগ বেঁধেছে। মীরাত ভাবনার অবসান ঘটিয়ে দ্রুত বাহিরে গেলো।বাহিরে গিয়ে দেখলো বাড়ির উঠোনে দশ বারোজন মহিলা দাঁড়িয়ে আছে। দেখে অবাক হলো। সে কৌতুহলী ভঙ্গিতে এগিয়ে গেলো সেদিকে।আফিয়া বেগম মেয়েকে উঠোনের দিকে যেতে দেখে দ্রুত এসে হাত চেপে টেনে নিয়ে যেতে লাগলো ঘরের দিকে।
মহিলা গুলোর মাঝ হতে একজন উচ্চস্বরে বলে উঠলো– আফিয়া মেয়েকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছো। আমরা তো তোমার গুনধর মেয়েকে দেখতে এসেছি। আর তুমি লুকাচ্ছো?
আফিয়া বেগম মহিলাটির কথা আমলে না নিয়ে আতঙ্কিত কন্ঠে বললো– মীরাত তাড়াতাড়ি ঘরে যা মা । দরজা আঁটকে বসে থাকবি ওরা যতক্ষণ না যায়।
মীরাত কিছু বুঝতে না পেরে বললো– কেনো মা?
– আমি যা বলছি তাই কর।
মীরাত মায়ের কথামতো নিজ ঘরে যেতে নিলেই তিনজন মহিলা এসে মীরাতকে আঁটকে দিলো।মীরাত আশ্চর্যিত হয়ে তাকালো। কিছু বুঝে উঠার আগেই তারা মীরাতকে টেনে উঠানে নিয়ে যায়।মীরাত সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে ছুটোছুটি করতে লাগলো। সে বুঝতে পেরেছে গ্রামের মহিলা গুলো উদ্দেশ্য ভালো নয়। হয়তো বড়সড় গন্ডগোল করবে।মনের মাঝে ভ য়ও কাজ করছে।আগে তো কখনো এমন পরিস্থিতিতে পরেনি সে।
তারা বেগম দুই মেয়েকে নিয়ে উঠানের একপাশে দাঁড়িয়ে আছে। চোখে মুখে ভ’য়ের ছাপ স্পষ্ট । সামনে থাকা মহিলা গুলো জল্লা’দের থেকে কম নয়। মীরাতের কপালে যে কি আছে কে জানে?
একজন মহিলা মুখ বেকিয়ে বললো– তো মেয়ে কার সাথে বিয়ের দিন পালিয়েছিলি?
মীরাতের ছটফটানি কমে এলো। সে তেজি গলায় বললো – আমি কারো সাথে পালায়নি।
উপস্থিত গ্রামের মহিলাগুলো হেসে উঠলো। যেনো মজার কাহিনী বলেছে মীরাত।
একজন হেসে বলে উঠলো – দেখেছো পারুল মেয়ের এখনো তেজ কমে নি।এতো তেজ দেখেই হয়তো ওর না গর পালিয়েছে।
পারুল নাক কুঁচকে বললো– এই মেয়ের সাহস মন্দ না। হবু বরকে রেখে পালালো আবার ফিরেও এলো।গ্রামের সম্মান মাটিতে মিশিয়ে দিয়েছে এই মেয়ে।লজ্জা শরমের বালাই নেই মুখ পু ড়িয়ে আবার ঘরে এসে উঠেছে।আমার মেয়ে এমন করলে লাথি দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দিতাম।
আফিয়া বেগম মহিলাদের সামনে আকুতি মিনতি করে বলতে লাগলো – আমার মেয়েটা ছোট ভুল করে ফেলেছে। আপনারা যা ভাবছেন তেমনটা নয়। আমার মেয়ের কোনো দোষ নেই। ওই ইফতি আমার মেয়েকে ঠকিয়েছে।
– মেয়ের দোষ ঢাকতে নাটক করোনা আফিয়া। আমরা সবাই শুনেছি তোমার মেয়ের কান্ড। তোমার এই মেয়ের জন্য আমাদের মেয়েদের সম্মন্ধ ভালো ঘর থেকে আসবে না। গ্রামের নাম ডুবিয়ে ছেড়েছে তোমার মেয়ে। আমরা কীভাবে চুপচাপ বসে থাকবো?
মীরাত স্তম্ভিত নয়নে তাকালো পারুলের দিকে। একজন মেয়ে হয়ে আরেকজন মেয়ের বাড়িতে দলবল নিয়ে হেনস্তা করতে এসেছে।ভাবতে ঘৃ ণা লাগছে। মেয়ে নাকি মায়ের জাত কিন্তু এখানে মায়ের মমতা দেখা যাচ্ছে না। মনে হচ্ছে কোনো জালিম এসেছে অত্যা চার করতে। মীরাত ছুটোছুটি করেও মহিলাগুলোর হাত থেকে নিজেকে ছাড়াতে পারলো না।
পারুল বিরক্তিভাব এঁটে বললো – আফিয়াকেও ধর কয়েকজন। বলা যায় না দৌড়ে গিয়ে বাহিরের মানুষ ডেকে আনলো। তখন তো আমাদের রক্ষে থাকবেনা।
পারুলের কথায় তিনজন মহিলা আফিয়া বেগমকে ধরলো। তারা বেগম এ দৃশ্য দেখে ভ য়ে দুই মেয়েকে নিয়ে ঘরে ঢুকে দরজা আঁটকে দিলো।
– এই ফুলি মীরাতের মুখে চুনকালি লাগিয়ে দে। গ্রামের মানুষদের মুখে চুনকালি লাগিয়েছিলো এখন আমরা ওর মুখে কালি লাগাবো। নিজে নিজের কলঙ্ক বয়ে নিয়ে এসেছে।
মীরাত রা গে ক্ষোভে চিৎকার করে বলে উঠলো – আপনারা কি মানুষ? একটা মেয়েকে এভাবে বাড়ি বয়ে হেনস্তা করতে এসেছেন। আমি পালায়নি বুঝেছেন! ইফতি আমায় ঠকিয়েছে তাই ক ষ্টে সুই সাইড করতে গিয়েছিলাম। এখন মনে হচ্ছে ম’রে গেলেই বেঁচে যেতাম। এতো লাঞ্চনা সহ্য করতো হতো না আমার আর আমার মাকে।
আফিয়া বেগম ডুকরে কেঁদে উঠলো। আজকের মতো অসহায় তার কোনোদিন লাগেনি। তার স্বামী বেঁচে থাকলে কেউ এই বাড়িতে ঢুকতে সাহস করতো না। আজ কেউ নেই। তিনি কেঁদে জোরে জোরে বলতে লাগলো – আমার মেয়েটাকে ছেড়ে দেন। আমার মেয়েটা ছোট। ওকে আর কিছু করবেনা।
মহিলা গুলো কেউ যেনো আফিয়ার কথা শুনলো না। মীরাতের নিজেকে কলঙ্কিত মনে হচ্ছে। অশ্রুতে গাল ভিজে আসছে।কান্না উগ্রে আসতে চাইছে। আজ কোথাও কেউ নেই তাদের আহা জারি শোনার জন্য। মহিলাগুলো মীরাতের দুইবাহু শক্ত করে চেপে ধরলো। মীরাত ব্য থায় চোখ মুখ কুঁচকে ফেললো।
ফুলি নামের মেয়েটি পারুলের আদেশে হাতে কালি মাখিয়ে মীরাতের সামনে এসে দাঁড়ালো। মীরাত অশ্রুসিক্ত নয়নে তাকিয়ে দেখলো। আজ নিজেকে বাচাতে ব্যর্থ সে। ফুলি বাঁকা হেসে মীরাতের পুরো মুখে দুহাতে থাকা কালি মাখিয়ে দিলো।এরপর পারুল সহ দুই তিনজন কালি মাখিয়ে দিতে লাগলো। মীরাত নিরবে অশ্রু বিসর্জন দিতে লাগলো।
– তোমার মেয়েকে যেনো কাল এই গ্রামের কোথাও না দেখি। ঘরের ভেতর বন্দি করে রাখবে।
পারুলের কথা শুনে আফিয়া বেগম চিল্লিয়ে বলে উঠলো – আল্লাহ সব দেখছে। আপনারা আমাদের সাথে আজ যা করলেন সব কিছুর শাস্তি পাবেন। আমার মেয়ে নির্দোষ হওয়ার স্বত্তেও এতো বড় শাস্তি দিলেন এর ফলে আপনাদের সকলকে ভোগ করতে হবে।
পারুল ধমকে বললো – এই চুপ। তোর মেয়ে ধোয়া তুলসীপাতা?রাত বিরেতে যে মেয়ে পালিয়ে যায় তার চরিত্র কেমন গ্রামের সবাই জানে। এই ওদের ছেড়ে দে। বাড়িতে চল সবাই।
মীরাত আর আফিয়া বেগমকে ছেড়ে দিলো। দুজনেই মাটিতে আছড়ে বসে পরলো। মহিলাগুলো বাড়ি থেকে বেরোতে যাবে এমন সময় ভেসে এলো পুরুষালী কঠোর কন্ঠস্বর। সকলে চমকে গেলো তৎক্ষনাৎ।
– এখানে কি হচ্ছে?
আফিয়া বেগম কন্দনরত চোখে তাকালো। আহিয়াদ, নিহাল আর আরিশাকে দেখলো।হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এসেছে দেখেই বোঝা যাচ্ছে। তিনি কাঁদতে কাঁদতে বলে উঠলো – বাবা ওরা আমার মেয়েটার মুখে চুনকালি দিতে এসেছিলো।আমার মেয়েটাকে কলঙ্কিত করেছে ওরা। সব শেষ করে দিয়েছে আমার।
আরিশা দৌড়ে মীরাতের কাছে গেলো। মীরাতকে স্তব্ধ হয়ে বসে থাকতে দেখে সে চমকে গেলো। উঠানের হলদে বাল্বের আলোয় মীরাতের মুখে কালির প্রলেপ দেখলো সে। বক্ষ কেঁপে উঠলো তার।সে এমন করুণ অবস্থায় মীরাতকে দেখে জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠলো।
আহিয়াদ অগ্নি দৃষ্টিতে মহিলাগুলোর তাকালো। মহিলা গুলো মুখ কাচুমাচু করে দাঁড়িয়ে আছে।
আহিয়াদ মীরাতের দিকে একপলক তাকালো। তার বুঝতে বাকী রইল না এখানে আসলে কি ঘটেছে। সে সাথে সাথে চোয়াল শক্ত হয়ে উঠলো। সে বজ্রকন্ঠে নিহালকে আদেশ করলো – নিহাল এখুনী পুলিশকে কল করবি। এইসব আবর্জনা গুলোকে যেনো এসে থানায় হির হির করে টানতে টানতে নিয়ে যায়।
মহিলা গুলো অপরিচিত মানুষটির বাজখাঁই আওয়াজে ভয়ে সিঁটিয়ে গেলো। নিহাল দ্রুত ফোন বের করে কল করলো পুলিশকে।
আহিয়াদ ধীর পায়ে এগিয়ে গেলো মীরাতের দিকে। তার কঠিন মুখ নরম হয়ে এলো। নিভে গেলো রা গ।শান্ত মন মুহুর্তেই অশান্ত হয়ে উঠেছে। মীরাত চুপ করে নির্জীব হয়ে বসে অশ্রুপাত করছে। আরিশা মীরাতকে ধরে কাঁদছে।
আহিয়াদ মীরাতের পাশে বসলো। হলদেটে আলোয় কালো রঙের আড়ালে বি ধ্বস্ত মেয়েলী অবয়ব দেখে নিমেষেই কেঁপে উঠলো আহিয়াদের বক্ষ স্থল। অশান্ত হয়ে উঠলো মনসত্তা।
মীরাত অশ্রুসিক্ত নয়নে আহিয়াদের মুখ পাণে দৃষ্টি ফেললো। সামনে দন্ডায়মান মানবটিকে দেখে ডুকরে কেঁদে উঠলো সে। আরিশা হঠাৎ কান্নায় মীরাতকে ছেড়ে দিলো।
মীরাত আহিয়াদের দিকে তাকিয়ে কান্নামিশ্রিত কাতর কন্ঠে মানবটিকে বললো– আপনি আমায় কেনো বাঁচালেন আহিয়াদ? সেদিন আপনি আমায় না বাঁচালে এসব আমার মাকে দেখতে হতো না। আমাকে ওরা কলঙ্কিনী বানিয়ে বানিয়ে দিলো। আমার মাকে কলঙ্কিনীর মা বানিয় দিলো। এই যে বেঁচে থেকেও এখন ভেতরে ভেতরে আমি ম রে যাচ্ছি। আমি আর বাঁচতে চাই না আহি…
মীরাত আর কিছু বলতে পারলোনা। তার চোখ অন্ধকারে ছেয়ে আসছে।কন্ঠ নালী রোধ হয়ে আসছে। হঠাৎই মীরাত ঢলে পরলো আহিয়াদের বক্ষে। আহিয়াদ হতভম্ব হয়ে মীরাতের মুখপানে তাকালো। আহিয়াদের শুভ্র রঙা শার্ট কালির আস্তরণে মাখামাখি।
[আজকের পর্বটা কেমন হয়েছে সকলে জানাবেন। শব্দসংখ্যা ১৮৮০+ ]
চলবে…..