#অব্যক্ত প্রেমাসুখ❤️🔥
#আদ্রিতা নিশি
।১৭।
[কপি করা নিষিদ্ধ ❌]
এরমাঝেই কেটে গেছে তিনদিন।আহিয়াদ আর মীরাত দুইদিনের জ্বরে কাহিল হয়ে গিয়েছে। আহিয়াদের জ্বর কম থাকলেও মীরাতের জ্বরের মাত্রা বেশী ছিলো। বৃষ্টিতে ভেজার কারণে এই অবস্থা হয়েছিলো। গতকাল হতে মীরাত আর আহিয়াদ দুজনেই কিছুটা সুস্থ। সুরমা বেগম দুজনের যত্ন নিজ হাতে করেছেন এই তিনদিন। হঠাৎ জ্বর কেনো হয়েছে তা নিয়ে দুজনকে নানা প্রশ্ন করে গেছেন। অথচ দুজনেই চুপচাপ হযবরল বুঝিয়ে এড়িয়ে গেছে। কিন্তু ফাবিহা এই ঘটনায় একটু সন্দিহান বটে। মীরাত বা আহিয়াদের কথা সে বিশ্বাস করেনি। তার সন্দেহের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছিলো বৃষ্টিস্নাত রাতে ফাবিহার রুমে মীরাতের অনুপস্থিতি। সেদিন রাতে বাজ পরার পর ফাবিহার ঘুম ভেঙে যায়। সে পাশে তাকিয়ে দেখে মীরাত নেই বিছানায়। সে উঠে ওয়াশরুম, বেলকনিতে খোঁজে তবে পায় না। সে রুমের দরজা খুলতে গিয়ে দেখে দরজা আগে থেকেই খোলা। ফাবিহা বুঝতে পারে মীরাত ডাইনিং রুমে আছে। সে ডাইনিং রুমে যাওয়ার সময়ই ভেজা শরীরে মীরাতকে তার ঘরের দিকে ছুটে আসতে দেখে। সে কথা বলতে যাবে তার আগেই মীরাত তার রুমে ঢুকে যায়। ফাবিহা কিছুটা অবাক হয়। এতো রাতে মীরাতকে বৃষ্টিতে ভেজা অবস্থায় দেখে। তার মাথায় ঘুরপাক খেতে থাকে ছাদের চাবি মীরাত কিভাবে পেলো। সে সন্দিহান হয়ে মেইন দরজার দিকে যাবে ওমনি দরজা খুলে আহিয়াদকে আসতে দেখলো। তাও ভেজা অবস্থায় তার সন্দেহ কিছুটা গাঢ় হলো। তারমানে দুজনে কি বৃষ্টি বিলাস করেছে? নানা ভাবনায় সেখান থেকে নিজের রুমে যায় আহিয়াদ দেখার আগেই। সে রুমে যেতেই দেখতে পায় মীরাত শুয়ে পরেছে। সে কিছু না জিজ্ঞেস করে চুপচাপ শুয়ে পরে বিছানায়। সে বুঝতে পারে কাহিনী কিছু একটা আছে। সন্দেহ তো সেদিনই হয়েছিলো যেদিন জেনি আর আহিয়াদের বিয়ের কথা জেনে মীরাত মলিন মুখে উঠে এসেছিলো।
আহিয়াদ তাদের ফ্ল্যাটের সামনে গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে। পরনে সাদা শার্ট, কালো প্যান্ট,হাতে ঘড়ি, চোখে কালো চশমা আর চুল জেল দিয়ে সেট করা। আজকে দেখতে অধিক সুদর্শন লাগছে। আহিয়াদের অপেক্ষা করার কারণ সবাই মিলে শপিং করতে যাবে আজ। গতকাল রাতে পরিবারের সকলকে পার্টির কথা বলেছে। সকলে কী উপলক্ষে পার্টি দিচ্ছে কারণটা জানতে চাইলেও সে কাউকে বলেনি। শুধু বলেছে কারণটা সারপ্রাইজ হিসেবে থাক। আগামীকাল আহিয়াদ মাঝারি পরিসরে পার্টির আয়োজন করেছে। পার্টির সকল খরচ সে বহন করবে। সেই উপলক্ষে আজ শপিং করতে যাওয়া।
অপেক্ষার প্রহর শেষ করে মীরাত, ফাবিহা,সুরমা বেগম একসাথে আহিয়াদের সামনে উপস্থিত হলো। আহিয়াদ সকলের দিকে দৃষ্টিপাত করে গাড়ির দরজা খুলে ড্রাইভিং সিটে বসে পরলো। সুরমা বেগম ড্রাইভিং সিটের পাশের সিটে বসে পড়লেন। মীরাত আর ফাবিহা পেছনের সিটে বসে পরে।
আহিয়াদ সিট বেল্ট লাগিয়ে যখন লুকিং গ্লাসের দিকে নজর দিলে, তখন সেখানে তার চোখে পড়লো মীরাতের মুখাবয়ব। অস্বস্তিতে ভরা সেই মুখটি যেনো জ্বরের থাবায় জর্জরিত। নীল সাদা থ্রি পিস পরিহিত মীরাতের মুখে কোন প্রসাধনের ছোঁয়া নেই, আর মাথায় সাদা ও নীলের সংমিশ্রণে হিজাব। আহিয়াদের মনে হলো, মীরাত কিছুটা শুকিয়ে গেছে। মীরাতের আগের মুখের রং হারিয়ে গেছে।মীরাত এদিক-ওদিক তাকাতে থাকলেও হঠাৎ করে লুকিং গ্লাসের দিকে চোখ পড়তেই দেখলো আহিয়াদ তাকিয়ে আছে। চমকে ওঠে সে। তার সরু দৃষ্টিতে খেয়াল হয় আজ আহিয়াদ সাদা শার্ট পরেছে, চোখে কালো চশমা—আজকের আহিয়াদ অন্য রকম সুদর্শন। ভাবতে ভাবতেই তার হার্টবিট দ্রুত হয়ে ওঠে।সে ভ্রু নাচিয়ে ইশারায় জানতে চাইল, কেনো এমনভাবে তাকিয়ে আছে। আহিয়াদ মাথা নাড়িয়ে মৃদু হাসলো চোখের ইশারায় বললো , “এমনিই।” এরপর সে চোখ ফিরিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিতে লাগলো।
মীরাত দৃষ্টি সরিয়ে বাহিরের দিকে তাকায়, তার মুখে মুচকি হাসি ফুটে ওঠে। সুরমা বেগমের নজরে পড়ে না সেই দৃশ্য, কিন্তু ফাবিহার দৃষ্টিগোচর হয়।
★★
শপিংমলের বাইরে দাঁড়িয়ে মীরাত চারপাশে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেছে। এত বড় শপিংমল তার চোখে আগে কখনো পড়েনি।চারপাশে নানা ধরনের মানুষের ভিড়, তাদের পোশাক-আশাক আর চলাফেরা দেখেই বোঝা যায়, এখানে ধনীরাই শপিং করতে আসে। মীরাত ধীরে ধীরে আশেপাশের দোকানগুলোতে চোখ বুলাতে লাগলো। প্রতিটি দোকানে সাজানো বিভিন্ন পণ্য, রঙিন পোশাক, গহনাগাটি সবকিছু অসম্ভব সুন্দর লাগছে তার কাছে।
ফাবিহা ও সুরমা বেগম ড্রেস দেখতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। দোকানের ভেতরে তারা বেশ অনেকক্ষণ ধরে একটির পর একটি ড্রেস পরীক্ষা করে চলেছে, কিন্তু তাদের পছন্দমতো কিছুই পাচ্ছে না। ভিন্ন ভিন্ন রঙ, নকশা আর ডিজাইন দেখে যাচ্ছে কিন্তু প্রত্যেকবারই যেনো তাদের মুখে হতাশার ভাজ।
অন্যদিকে, আহিয়াদ তাদের এই কান্ড দেখে অবাক হয়ে ভাবতে থাকে। মা ও বোনের অবিরাম চর্চা ড্রেস চয়েজের মাঝে সে একাকী দাঁড়িয়ে আছে। পাশে থাকা সেলসম্যানের দিকে তাকিয়ে তার মনে বেচারা ওই যুবকের জন্য সত্যিই দুঃখ হচ্ছে।একের পর এক পোশাক নিয়ে আসছে কিন্তু কাউকেই সন্তুষ্ট করতে পারছে না। সেলসম্যানের উপর দৃষ্টি রেখে সে একটু হতাশ হয়ে আশেপাশে তাকাতে লাগলো।মীরাতকে এদিক ওদিক তাকিয়ে খুঁজতে লাগলো। দোকানের কাঁচের দেয়াল ভেদ করে যখন মীরাতের পরিচিত মুখ চোখে পড়ে।
আহিয়াদ সুরমা বেগমকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো ;
“ মা তুমি ফাবিহার ড্রেস চয়েজ করো আমি আমার আর বাবার ড্রেস কিনে নিয়ে আসি।”
সুরমা বেগম পিছু ফিরে উত্তর দিলো ;
“ ঠিক আছে যাও। তার আগে মীরাতকে খুঁজে নিয়ে এসো। এতো দ্রুত কোথায় গেলো। মীরাতের ড্রেসও তো কিনতে হবে।”
আহিয়াদ মাথা দুলিয়ে বললো;
“ঠিক আছে আমি মীরাতকে খুঁজে নিয়ে আসছি।”
কথাটি সমাপ্ত করে আহিয়াদ সেখান থেকে বেরিয়ে মীরাতের কাছে গেলো।
মীরাত শাড়ির দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে আছে, তার চোখে রঙ-বেরঙের শাড়ির বাহার। প্রতিটি শাড়ির আলাদা আলাদা ডিজাইন কিন্তু তার মন হারিয়ে গেছে বিশেষ একটিতে। কাঁচের আস্তরণ ভেদ করে হালকা গোলাপী রঙের শাড়ির দিকে তাকালো। হালকা গোলাপীর মাঝখানে গোল্ডেন সুতোর ছোট ছোট কারুকাজ করা শাড়িটি দূর থেকে দেখতেই অসাধারণ সুন্দর লাগছে।
“ মীরাত!”
মীরাত ভাবনার অবসান ঘটে। সে চমকে পেছনে তাকায়। পেছনে তাকাতেই দেখতে পায় আহিয়াদকে।
মীরাত কৌতুহল নিয়ে বললো;
“ আপনি এখানে?”
আহিয়াদ সরাসরি উত্তর দেয় ;
“ তোমায় খুঁজতে এসেছিলাম।চলো আমার সাথে।”
“কোথায়? ”
আহিয়াদ কথা না বাড়িয়ে মীরাতের এক হাত ধরলো। মীরাত কিছু বলবে তার আগেই আহিয়াদ তাকে টেনে নিয়ে যেতে লাগলো।
★★
মীরাত আর আহিয়াদ জুয়েলার্সের দোকানে বসে আছে। মীরাতের মুখে বিস্ময়ের ছাপ স্পষ্ট—দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছে সামনে থাকা সেলসম্যানের দিকে যে গহনা প্যাকিং করে দিচ্ছে। আহিয়াদ তখন নীরবে তার কার্ড বের করে টাকা পরিশোধ করে দিলো। ভাবতেই অবাক লাগছে আহিয়াদ তার জন্য গহনা কিনছে।
দোকানে প্রবেশের পর, মীরাত কিছু বুঝতে পারেনি কেনো তাকে এখানে আনা হয়েছে। কিন্তু যখন হঠাৎই আহিয়াদ তার হাতে স্বর্ণের চুড়ি পরিয়ে দেখতে লাগলো, তখন মীরাত বিস্ময়ে জিজ্ঞেস করেছিল, “চুড়ি কার জন্য নিচ্ছে?”
আহিয়াদের সরল উত্তর, “বউয়ের জন্য নিচ্ছে।”—এ কথা শুনেই মীরাতের মনে অদ্ভুত অনুভূতি জেগে উঠেছিলো। তার চোখে-মুখে বিস্ময়ের রেষ লেগে রয়েছে এখনো।
গহনার ব্যাগটা হাতে নিয়ে মীরাতকে চুপচাপ অন্যমনষ্ক দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে শুধালো;
“ চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছো কেনো? গহনা পছন্দ হয়নি?”
মীরাত থতমত খেয়ে বললো ;
“ আমি কখন বললাম পছন্দ হয়নি। আপনি যে এতো গহনা কিনলেন আমার জন্য এগুলো না কিনলেও পারতেন।”
আহিয়াদ সামনের দিকে যেতে যেতে গাম্ভীর্য ভাব নিয়ে বললো;
“আমার ইচ্ছে হয়েছে তাই তোমার জন্য কিনেছি।”
মীরাত মুখ গোমড়া করে পিছে পিছে গেলো।
:
মীরাত কিছুটা অস্বস্তিতে বললো,
“আপনি এই শাড়ির দোকানে আবার কেনো আসলেন? তাড়াতাড়ি চলুন, আন্টি আমাদের খুঁজবে।”
কিন্তু আহিয়াদ তার কথায় পাত্তা না দিয়ে, হালকা গোলাপী শাড়িটি হাতে নিলো। মীরাতের গায়ে শাড়িটি ধরতেই তার চোখে পড়ে সেই অপরূপ সৌন্দর্য। শাড়ির রঙ মীরাতের গায়ে বিশেষ দ্যুতির সঞ্চার করছে। মীরাত ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে আহিয়াদের কান্ড-কারখানা দেখছে, মনে হচ্ছে যেনো পুরো দোকানটাই তুলে নিয়ে যাবে। তার খেয়াল হলো এই শাড়িটাই তো সে তখন বাহির হতে দেখছিলো। তাহলে কি আহিয়াদ কোনোভাবে বুঝতে পেরেছে তার এই শাড়ি পছন্দ। মনে মনে উৎকন্ঠিত হয়ে ভাবতে লাগলো।
আহিয়াদ তখন আরো সাতটা শাড়ি পছন্দ করে, সেলসম্যানকে প্যাকিং করতে নির্দেশ দিলো।
মীরাত আবারও বিস্ময় নিয়ে বললো;
“ এতো শাড়ি কার জন্য কিনছেন?”
আহিয়াদ ঘড়িতে সময় দেখতে দেখতে গম্ভীর কণ্ঠে উত্তর দিলো;
“দুটো মায়ের আর বাকিগুলো তোমার।”
সে একবার শাড়ির দিকে তাকাচ্ছে তো আরেকবার আহিয়াদের দিকে তাকাচ্ছে।
মীরাত মিনমিনে কণ্ঠে বললো,
“হঠাৎ কেনো আমার জন্য শপিং করছেন, বলুন তো? আপনার বাড়ির লোক জিজ্ঞেস করলে কী বলবেন?”
আহিয়াদ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে মীরাতের দিকে তাকিয়ে বললো,
“যেটা সত্যি, সেটাই বলবো। তুমি হয়তো ভাবছো, আমি বিয়ের বিষয়টা লুকিয়ে রাখতে চাইছি। কিন্তু তেমন নয়। নতুন বউ যেমন সেজেগুজে প্রথম শশুরবাড়িতে আসে, ঠিক তেমন ভাবেই তোমায় বধূ বেশে দেখতে চাই।আগামীকাল আমাদের জীবনের একটা স্পেশাল দিন। তাই সবকিছুই পারফেক্ট হওয়া চাই।”
মীরাত চুপচাপ শুনলো। আহিয়াদের কথায় তার মুখে একটু লজ্জার ছাপ পড়লো। হৃদয়ে অদ্ভুত উষ্ণতা অনুভব করলো। সে তা আড়াল করার প্রয়াস চালালো যেনো আহিয়াদ বুঝতে না পারে তার অন্তরালের সেই আবেগ।
কথোপকথনের মাঝেই আহিয়াদের হঠাৎ ফোন বেজে উঠেছে। সে কথা বলা বন্ধ করে পকেট হতে ফোন বের করে মীরাতকে ইশারায় দাড়াতে বলে কল রিসিভ করে কিছুটা দুরে গিয়ে কথা বলতে লাগলো।
মীরাত শাড়ির সেকশন ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলো। বেশিরভাগ শাড়ির দাম তার কাছে অনেক বেশি মনে হচ্ছিলো। বিভিন্ন রঙের, ডিজাইনের শাড়ি দেখার পর হঠাৎ তার চোখ পড়লো খয়েরী জামদানী শাড়ির দিকে।
সে হাত দিয়ে শাড়িটা স্পর্শ করতে উদ্যত হলো কিন্তু ঠিক সেই সময় একজন ব্যক্তি সেই স্থান থেকে শাড়িটা হাতে তুলে নিলো। মীরাত চমকে দুই ধাপ পিছিয়ে গেলো।
“হোয়াট এ্যা সারপ্রাইজ মীরাত। আবারও তোমার সাথে দেখা হয়ে গেলো।”
মীরাত সামনে তাকাতেই পরিচিত সেই মুখটি দেখতে পেলো। ইফতি! একসময়ের সঙ্গী, এখন তার কাছে ইফতি নামক মানুষটা অস্পষ্ট স্মৃতি শুধু।ইফতির উপস্থিতি তাকে চোরাবালির মতো আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরতে চাইছে। ভয়ার্ত চোখে সে লক্ষ্য করলো ইফতির মুখের গভীরে লুকানো সেই পিশাচ ভাব। নিমেষেই তার মন বিষিয়ে উঠল। পরিচিত মুখের কাছে এসে মীরাতের মনে উঁকি দিচ্ছে স্মৃতির তাড়া। কেনো আবার দেখা হলো তাদের? কি খুঁজছে ইফতি এখানে? এই প্রশ্নগুলোই ক্রমশ তার বুকের ভিতর আলোড়ন সৃষ্টি করছে। সে নিজেকে শান্ত করার প্রয়াস চালালো।
মীরাতকে হঠাৎ এই জায়গায় দেখে ইফতি ভীষণ উচ্ছস্বিত। ইফতির মুখে ফুটে উঠেছে বিদঘুটে হাসি। সে বললো;
“কি হলো? আমায় দেখে শকড হয়ে গেছো?নাকি আমাকে খুঁজতে খুঁজতে এই শহরে চলে এসেছো?”
মীরাতের মুখ কঠিন হয়ে উঠলো। রাগ উঠে গেলো। রাগে থরথর করে কাঁপছে সে। তর্জনী আঙুল উঁচিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বললো;
“ আপনার মতো জঘ;ন্য মানুষকে খোঁজার কোনো প্রশ্নই আসে না।আমি আপনাকে ঘৃ’ণা করি শুনেছেন!”
ইফতির হাসি চওড়া হয়ে এলো। দৃঢ় বিশ্বাস নিয়ে বলে উঠলো ;
“ উহু তুমি আমায় এখনো ভালোবাসো। ”
মীরাতের রাগ তড়তড় করে বাড়তে লাগলো। রাগান্বিত কন্ঠে ধীরে বলে উঠলো ;
“ আপনার মতো ক্যারেক্টারলেসকে আমি ঘৃ’ণা করি। অমানুষ একটা।”
মীরাত কথাটি বলেই চলে আসতে উদ্যত হলো কিন্তু হঠাৎ পেছন থেকে ইফতির হাত তার হাত ধরে ফেললো। এই স্পর্শে রাগে জ্বলে উঠলো মীরাত। অগ্নিমুখে সে ইফতির দিকে তাকালো। মুহূর্তের মধ্যে অন্য হাতে ইফতির গালে ঠাটিয়ে চড় বসিয়ে দিলো।
ইফতি স্তব্ধ হয়ে গেলো মীরাতের এহেন কান্ড।তার চোয়াল রক্তিম হয়ে উঠলো। মীরাতের সাহসিকতায় অবাক হয়ে সে কিছুক্ষণ কথা বলার ক্ষমতা হারিয়েছে। তার আরেক হাতে থাকা শাড়িটি মেঝেতে স্ল্যাপ করে পড়লো। আশেপাশের সকলের দৃষ্টি তাদের দিকে। মনে হচ্ছে নাটকের মঞ্চে তারা দুজন নাটক করছে আর বাকীরা দর্শক। ইফতির মুখ ছোট হয়ে গেছে অপমানে। লজ্জায় তার মাথা নিচু হয়ে গেছে দোকান ভর্তি মানুষের সামনে। চড় মা রবে এই কল্পনা তার জন্য অভূতপূর্ব। মীরাতের এই প্রতিক্রিয়া ভাবতে পারেনি কখনো।
মীরাত ক্ষুব্ধ হয়ে বললো;
“ হাত ছাড়ুন আমার।”
ইফতি রক্তাভ চোখে তাকিয়ে রুঢ় গলায় বললো;
“ আমায় তুই মা’রলি?”
“ আরো চড় না খাওয়ার ইচ্ছে থাকলে হাত ছাড়ুন।”
“ ছাড়বোনা। দেখি তুই কি করতে পারিস।”
মীরাত হাত ছাড়ানোর জন্য চেষ্টায় করতে লাগল। কিন্তু ইফতির আঙুলের থাবা আরও শক্তিশালী হয়ে উঠলো। চারপাশের লোকজনের দৃষ্টি দানবের মতো তাকে তাড়া করছে। অদ্ভুত, উন্মুখ চোখগুলো তার প্রতি আক্রমণাত্মক হয়ে উঠেছে। মীরাতের মনে হচ্ছে মানুষের দৃষ্টি তার আত্মসম্মানকে টেনে নামানোর জন্য তৈরি।ভাবতেই অস্বস্তি তার গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠল। ইফতি মীরাতের দিকে তাকিয়ে বিশ্বজয়ের হাসি হাসছে। মনে হচ্ছে এ মুহূর্তে পৃথিবী জয় করে ফেলেছে। কিন্তু হাসিটি স্থায়ী হলো না তার আগেই কারো শক্তিশালী ঘুষি এসে পড়লো তার মুখে। আঘাতে ইফতি স্তম্ভিত হয়ে গেছে।তার পিশাচ রুপী মুখাবয়ব মুহূর্তের মধ্যে বিবর্ণ হয়ে গেছে।
মীরাতের হাত ছেড়ে দিয়ে ইফতি দ্রুত পিছিয়ে গেলো। চারপাশে নীরবতা নেমে এল, আর তখনই ভেসে এলো পুরুষালী বজ্রকন্ঠের হুংকার।
“ ইউ চিপ বাস্টার্ড। তোর সাহস কি করে হলো ওই নোংরা হাতে আমার বউকে স্পর্শ করার?”
ইফতির ঠোঁট কেটে রক্ত ঝরছে। রক্তবর্ণের দাগ তার আত্মবিশ্বাসকে মুহূর্তের মধ্যে হ্রাস করেছে। সে সেই বজ্রকণ্ঠের শব্দ শুনে বিস্মিত হয়ে সামনে তাকালো।
ইফতি সামনে তাকিয়ে দেখলো সুদর্শন যুবক। সেই অপরিচিত যুবক চোয়াল শক্ত, চোখে হিংস্রতা নিয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে।
ইফতি দমে যাওয়ার পাত্র নয়।সে সন্দিহান কন্ঠে বলে উঠলো;
“হু আর ইউ? আপনি মীরাতকে বউ বললেন কেনো?”
আহিয়াদ কাঠিন্যে গলায় বলে উঠলো ;
“আমি মীরাতের হাসবেন্ড মিস্টার ইফতি।”
আহিয়াদ ইফতিকে মারতে যাবে এমন সময় মীরাত আহিয়াদের বাহু চেপে ধরলো। আহিয়াদ তাকায় আতংকিত দৃষ্টি তাকিয়ে থাকা মীরাতের দিকে।
মীরাত ঢোক গিলে বললো;
“ আপনি এসবে জড়াবেন না। এখান থেকে চলুন।”
আহিয়াদ বজ্র কন্ঠে বলে উঠলো ;
“ যে আমার অর্ধাঙ্গিনীর শরীর ছোঁয়ার স্পর্ধা দেখায় তাকে আমি কিভাবে ছেড়ে দিবো?”
মীরাতের গলা শুকিয়ে গেলো।আহিয়াদের চোখে যে ভয়ঙ্কর রাগের আগুন জ্বলছে, তা স্পষ্ট।সে নিশ্চিত যে ইফতিকে আহিয়াদ ছাড়বে না।
ইফতি মীরাত ও আহিয়াদকে লক্ষ্য করে স্থির দাঁড়িয়ে আছে। তার মনে আশ্চর্য অনুভূতি—বিশ্বাস হচ্ছিলো না যে মীরাত এত দ্রুত বিয়েও করে ফেলেছে। এই অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতিতে তার মনে নানা ভাবনার উদয় হলো। সে তো ভেবেছিলো এত বড় ধোঁকা খাওয়ার পরে সে আর কখনোই বিয়ের পথে পা রাখবে না।
“ভাইয়া তুমি মীরাত আপুকে বিয়ে করেছো?”
ফাবিহার কন্ঠস্বর শুনে আহিয়াদ আর মীরাত পেছনে তাকায়। দেখতে ফাবিহার বিস্ময়ে আবৃত মুখশ্রী।অবিশ্বাস্য চাহনিতে তাদের দিকে তাকিয়ে আছে।
[আজ ঠাস ঠাস থাপ্পড়ের পর্ব দিয়েছি। কেমন হয়েছে সকলে জানাবেন।]
চলবে……