#অব্যক্ত প্রেমাসুখ❤️🔥
#আদ্রিতা নিশি
।১৯।
[ কপি করা নিষিদ্ধ ]
“ তুমি নাকি আজ শপিংমলে একজনকে বেধড়ক মা রধর করেছো?”
তওহীদ সাহেব অফিস থেকে একটু আগে বাড়িতে ফিরেছেন, আর বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করতেই সুরমা বেগমের মুখে শুনলেন শপিংমলের কাহিনী। তিনি দ্রুত ফ্রেশ হয়ে এসে সরাসরি ছেলের রুমের দিকে রওনা হলেন, কৌতূহল নিয়ে পুরো কাহিনী শুনতে।
ডিভানে বসে তিনি আহিয়াদের দিকে তাকালেন। আহিয়াদ বিছানায় হেলান দিয়ে বসে ল্যাপটপের স্ক্রীনে মনোযোগী। তওহীদ সাহেবের উপস্থিতি জানার পরও সে কোনো প্রত্যুত্তর করলো না।পিতা-সন্তানের মধ্যে যে এক অভ্যস্ত যোগাযোগের সূক্ষ্ম তন্তু আছে তা আজ কিছুটা ছিন্নবিচ্ছিন্ন মনে হলো। তওহীদ সাহেবের মনে হলো আহিয়াদ তার কথা শোনার জন্য প্রস্তুত নয়।
আহিয়াদ ল্যাপটপের পর্দায় দৃষ্টি ফেলে নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে উত্তর দেয়;
“ শুধু মারি নি, হসপিটালে এডমিট ও করিয়েছি।”
তওহীদ সাহেব গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠলেন ;
“হঠাৎ পাবলিক প্লেসে এমন উগ্র আচরণ করার কারণ কি? ঠান্ডা মাথায় তো ঝামেলা মেটানো যেতো।”
“ পরিস্থিতি ওই বাস্টার্ডটা উত্তপ্ত করেছে। ওর ডিজগাস্টিং কথায় মেজাজ গরম হয়ে গিয়েছিলো। রাগ কন্ট্রোল না করতে পেরে পিটিয়েছি। আরও পেটাতে চেয়েছিলাম কিন্তু কারো কন্দনরত কাতর কন্ঠস্বর আমাকে উক্ত কাজটি অসম্পূর্ণ করতে দেয়নি। ”
তওহীদ সাহেবের মনোভাবের মধ্যে উঁকি দিচ্ছে অস্থিরতা। ছেলের আচরণ তাকে স্তম্ভিত করে দিলো । সরু চোখে ছেলেকে অবলোকন করে তিনি অনুভব করলেন আজকের বিশৃঙ্খল আচরণ, পাগলাটে আবেগ—এগুলো কি মনোজগতের অশান্তির লক্ষণ? তওহীদ সাহেবের ভেতর থেকে উদ্বেগের স্রোত বয়ে গেলো। পাবলিক প্লেসে এমন দ্বন্দ্ব করার কারণ কী?
তওহীদ সাহেব উদ্বিগ্ন হয়ে বললেন;
“ ছেলেটাকে কেনো মে রেছো?”
“ মীরাতকে টিজ করেছে।”
তওহীদ সাহেব মৌন রইলেন কিছুক্ষণ। তারপর বলেন;
“ পুলিশে দিতে পারতে।”
আহিয়াদ জ্বলন্ত চোখে বাবার দিকে তাকায়। ক্রোধ মিশ্রিত কন্ঠে বলে উঠে;
“ ওই ব্লাডি বিচ মীরাতের হাত ধরেছে। সেই দৃশ্য দেখার পর আমি কিভাবে চুপচাপ থাকতে পারি?তখন ইচ্ছে করছিলো ওই ইফতিকে জ্যান্ত মাটিতে পুঁতে দিতে।”
তওহীদ সাহেব ছেলের এহেন আচরণে অবাক হয়ে গেলেন। বললেন;
“ এসব কি বলছো? তোমার মাথা ঠিক আছে?”
“ আমি এবং আমার মাথা দুটোই ঠিক আছে।”
“ তুমি ভাবতে পারছো ছেলেটা মা’রা গেলে কি হবে? হসপিটালে কল দিয়েছিলাম ছেলেটার অবস্থা খারাপ। আইসিইউতে ভর্তি আছে।”
“ তুমি কি আমায় পুলিশের ভয় দেখাচ্ছো? আমি ওই পুলিশকে ভয় পাই না। আর তুমি ব্লাডি বিচ টার কথা ভাবছো?”
“ আমি ওই ছেলের কথা ভাবছি না তোমার কথা ভাবছি। তোমার মা তোমাকে নিয়ে ভীষণ চিন্তা করছে। তোমাকে কখনো এতোটা হাইপার হতে দেখেনি। আজ তোমার আচরণে সে ভীষণ উদ্বিগ্ন। ”
আহিয়াদ চুপচাপ শুনলো শুধু। কোনো প্রতিত্তোর করলো না। তওহীদ সাহেব ছেলের এমন নির্লিপ্ততায় হতাশার শ্বাস টানলেন। বুঝলেন ছেলেকে বুঝিয়ে কোনো লাভ হবে না।
আহিয়াদ নিরবতা ভেঙ্গে গম্ভীর কণ্ঠে বললো ;
“ আমাদের কোম্পানিতে জব করেন মিস্টার ইশরাক হোসেন। তারই কুলাঙ্গার ছেলে ইফতি হোসেন। ”
“ ইফতি ইশরাকের ছেলে!”
তওহীদ সাহেব আশ্চর্যিত হয়ে বললেন।আহিয়াদ বাঁকা হেসে বলে উঠলো ;
“ আরেকটা পরিচয় ও আছে। ইফতি একটা ক্যারেক্টারলেস। শ্লা জানো**র । ”
“ মুখের ভাষা ঠিক করো। তোমার এমন উগ্র আচরণে আমি হতবাক হয়ে যাচ্ছি । এবার বলো ইফতির কি করবে?”
“একজন মেয়েকে চিট করা। সেই মেয়েকে সুই সাইড করতে বাধ্য করা, পাবলিক প্লেসে হ্যারাস করা। এসব চার্জ লাগিয়ে কেস করবো। ”
“ ফেইক চার্জ লাগাবে?”
আহিয়াদের চোয়াল শক্ত হয়ে উঠলো। বললো;
“ ফেইক নয় রিয়েল। ”
তওহীদ সাহেব চমকিত কন্ঠে বলে উঠলেন;
“ হোয়াট?”
আহিয়াদ নড়েচড়ে বসে। ল্যাপটপটা বিছানার ওপর অবহেলিত দ্রব্যের ন্যায় রাখে। তীক্ষ্ণতা বজায় রেখে বলে;
“ইফতি মীরাতকে আগে থেকে চিনতো। ওদের বিয়ে হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু হয়নি। ইফতি বিয়ের দিন এসে মীরাতকে বলে সে অন্য কাউকে ভালোবাসে তাই বিয়ে করতে পারবে না। আরও কিছু জঘ*ন্য কথা বলে। মেয়েটা এসব সহ্য না করতে পেরে সুই সাইড করতে যায়। অতঃপর ভাগ্যের জোরে বেঁচে যায়। ”
তওহীদ সাহেব কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে বসে রইলেন, আহিয়াদের চোখের দিকে তাকালেন তিনি এক ধরনের অবিশ্বাস্য চাহনি অনুভব করলেন।
তাঁর মনে ঘুরপাক খাচ্ছিল অসংখ্য প্রশ্ন। আহিয়াদ যা করেছে তা অবিশ্বাস্য। কিন্তু তার অন্তর্নিহিত অনুভূতিগুলো বুঝতে গিয়ে তওহীদ সাহেব নতুন দ্বন্দ্বে পড়লেন। মনে হলো, আহিয়াদ হয়তো মীরাতকে নিয়ে অনেক বেশী সতর্ক। এদিকে, তাঁর মন বলছে, ছেলে সঠিক কাজ করেছে ইফতিকে শিক্ষা দিয়ে। কিন্তু কেন মীরাতকে নিয়ে এত সজাগ?
হঠাৎ করে কি ছেলে মীরাতকে পছন্দ করতে শুরু করেছে? তওহীদ সাহেবের মনে অদ্ভুত আশঙ্কা জন্ম নিলো এটা ভাবতেই।
★★
রাতের দ্বিতীয় প্রহর। সময় কষ্টে পায়ের চিহ্ন রেখে ধীরে ধীরে এগোচ্ছে। রাতের উষ্ণতা আজ অতিরিক্ত রূপ নিয়েছে। বাতাসে ভেপসা গরমের উপস্থিতি শহরবাসীর স্বস্তিকে ম্লান করে দিচ্ছে। অন্ধকারের মাঝে, রাস্তাগুলো অচেনা ও নিস্তব্ধ, কারণ আজ হঠাৎ করে পুরো এলাকায় লোডশেডিংয়ের দাপট।
বিদ্যুতের অভাবে চারপাশের স্থবিরতা অস্বস্তিকর নীরবতা সৃষ্টি করেছে। কেনো লোডশেডিং হলো, এ নিয়ে কোনো নিশ্চিত তথ্য নেই; আলোহীন রাতের এ অন্ধকারে প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাওয়া সম্ভব নয়। আইপিএসও কাজ করছে না—হয়তো যান্ত্রিক কোনো বিপর্যয়, কিংবা সামান্য গাফিলতি।
সকলে উদ্বিগ্ন, মুখে অস্থিরতা। রাতের পরিবেশ বিদঘুটে, ভিন্ন অনুভূতি নিয়ে ভরে গেছে।চাঁদের আলোও ম্লান, বিশ্রী ও অস্বস্তিকর মনে হচ্ছে ।
মীরাত ফাবিহার ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে আছে, শান্ত দৃষ্টিতে অন্ধকারাচ্ছন্ন রাতে আলোহীন শহরটির দিকে তাকিয়ে। শহরটা আজ ভীষণ ভুতুড়ে মনে হচ্ছে, যেন পরিত্যক্ত ভূতের গাথা, যেখানে প্রতিটি কোণায় লুকিয়ে আছে অজানা কাহিনী। কিন্তু মীরাতের মনে কোনো দোলাচল নেই; তার চঞ্চল চোখগুলো কিছু একটা পর্যবেক্ষণ করছে। এ রাতের অন্ধকারে কোনো বিশেষ রহস্য লুকিয়ে আছে।
আজ মায়ের সাথে কথোপকথন হয়েছে। শুনেছে তার চাচা চাচী ঝগড়াঝাটি করছে—এটুকু শুনেই মীরাতের মনে বিরক্তির আভা ছড়িয়ে পড়ে। সে চুপচাপ মায়ের কথাগুলো শুনতে থাকে, আফিয়া এটাও বলে সুরমা বেগম দুই দিন আগে তার মায়ের সাথে কথা বলেছে। মীরাতের মধ্যে প্রশ্ন উঁকি দেয়—বিয়ে নিয়ে সুরমা বেগম কিছু জানালেন কি না? যখন শুনলো উত্তর ছিল “না”, তখন হাঁপ ছেড়ে বাঁচলো।
মীরাতের অন্তরে কিছুটা শান্তি এসেছে, তবে সেই শান্তির মধ্যে কোথাও এক শূন্যতা তাকে পোড়াচ্ছে। মায়ের সাথে কতা বলার পর আরিশা, দাদাজান, লিমা বেগমের সাথে কথাও হয়েছে।
রাতের উষ্ণ বাতাসে, মীরাতের হৃদয়ে আচ্ছন্ন ভাবনা; শহরটি যতই ভুতুড়ে লাগুক, তার নিজের জীবনের রহস্যগুলোই যেনো একটু বেশি ভয়াবহ।
ফাবিহার আজকাল কিছু ভালো লাগছে না। পড়াশোনা, বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়া-আসা, টিউশনের সব মিলিয়ে একরকমের বিরক্তি ও হতাশা তাকে গ্রাস করেছে। যেন জীবনটি একটানা একঘেয়েমিতে পরিণত হয়েছে। আবার নতুন টেনশনও মাথায় জেঁকে ধরেছে; আগামীকাল কি হবে, সে নিয়ে অশান্তি তার মনের গভীরে নানান প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে।কিছুক্ষণ আগে এসব ভাবতে ভাবতে তার মেজাজ বিগড়ে যায়। হতাশার অদৃশ্য চাদরে মুড়ে গিয়ে, সে অবশেষে কল করে আরিশাকে। ফোনের ওপার থেকে আরিশার পরিচিত কণ্ঠ শুনতেই ফাবিহা বেশ কয়েক কথায় ঝাঁপিয়ে পড়লো। তার ভাইয়ের বিয়ের খবর জানানো হয়নি কেন, সেই বিষয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলো।আরিশা ধৈর্য ধরে তাকে শুনলো, আর একটু একটু করে বুঝিয়ে শান্ত করতে লাগলো। কথা বলার প্রতিটি মুহূর্তে, ফাবিহার উদ্বেগ কিছুটা কমে আসে। তবে তবুও তার মনে গুঞ্জন চলতে থাকে।
ফাবিহা বিছানায় উপুর হয়ে শুয়ে ফোন টিপছে। সে ফোন টেপা বাদ দিয়ে উঠে বসলো। বিছানা থেকে ঝটপট নেমে চঞ্চল পায়ে ব্যালকনিতে প্রবেশ করলো। গলা খাঁকড়ি দিয়ে বললো;
“ ভাবি কফি খাবে?”
মীরাত দৃষ্টি ফিরিয়ে অন্ধকারেই অনুমান করে ফাবিহার দিকে তাকায়। সে বলে;
“ নিয়ে আসো। দুজন কফি খেতে খেতে আড্ডা দেওয়া যাবে। ”
“ ওকে ভাবি।”
কথাটি বলেই ফাবিহা অন্ধকারেই দৌড়ে গেলো কিচেনে। মীরাত হাসলো। ফাবিহা মেয়েটা ভীষণ মিষ্টি ধাঁচের। এইতো একটু আগেও তার ওপর রেগে ছিল। কিন্তু এখন নেই। আজ সকালেও মীরাত আপু, মীরাত আপু বলছিল অথচ এখন ভাবী বলা শুরু করে দিয়েছে। নতুন সম্বোধন মীরাতকে লজ্জায় ফেলে দিচ্ছে। সে নিজেকে অতি কষ্টে স্বাভাবিক রাখছে। মীরাত আবারও তাকায় অদূরে।
কারো পায়ের শব্দ পেয়ে মীরাত ভাবে ফাবিহা এসেছে। তবে অপরিচিত সুগন্ধির গন্ধ তার নাকে প্রবেশ করলো। তা পাত্তা না দিয়ে অদূরে বিভীষিকাময় শহরের দালানগুলোর দিকে তাকিয়ে বলল;
“ ননদীনি দেখছি খুব ফাস্ট। এতো দ্রুত কফি বানিয়ে আনলে কীভাবে বলো তো?”
“আমি তোমার ননদীনি নই। ”
মীরাত গুরু গম্ভীর পুরুষালী কন্ঠস্বরে ভড়কে যায়। সে পিটপিট করে তাকায় পাশে। অন্ধকারে আবছা পুরুষালী অবয়ব দেখতে পায়। বিস্মিত কন্ঠে বললো;
“ আপনি এখানে কি করছেন?”
আহিয়াদ কাঠখোট্টা কন্ঠে উত্তর দেয়;
“ আমার বাড়ি যেখানে ইচ্ছে সেখানে যাবো।”
মীরাত মুখ গোমড়া করে বলে;
“ তাও ঠিক। ”
“ তুমি নিশ্চয়ই জানো আগামীকাল জেনি আসবে। ”
“ হ্যা জানি।”
“ ওর থেকে সাবধানে থাকবে।”
“ কেনো?”
“ কারণ ও ভীষণ রাগী আর জেদি মেয়ে। সব কিছু ক্লিয়ার করার পর ও নিশ্চয়ই স্বাভাবিক থাকবে না। তোমার ক্ষতি করার চেষ্টা করতে পারে।”
“ আপনার মতো রাগী নয় অন্তত। যে রেগেমেগে সবার সামনে মার বে আমায়।”
মীরাতের ত্যাড়া কথায় আহিয়াদ বুকে হাত দিয়ে দাঁড়ায়। অতি স্বাভাবিক কন্ঠে বলে উঠলো ;
“ তুমি আমায় কথা শোনাচ্ছ? ”
মীরাত মেকি হেসে বলে;
“ অতো সাহস আছে নাকি আমার যে আপনাকে কথা শোনাবো?”
আহিয়াদ অন্ধকারের আড়ালে মীরাতের দিকে মোহাবিষ্ট চোখে তাকিয়ে রইল। ওই মূহুর্তেই তার সমস্ত অনুভূতি বন্দী হয়ে গেলো। মীরাত আহিয়াদের দৃষ্টি অনুভব করলো কিন্তু সে একবারও চোখ ঘোরালো না।
দুজনের মাঝে পিনপিনে নিরবতা বিরাজ করছে। যা মুহূর্তকে স্থবির করে রেখেছে। বাতাসে এক অদৃশ্য তীব্রতা,শব্দহীনতায় ভরা সেই রাতের প্রেক্ষাপটে, তাদের হৃদয়ের স্পন্দন অবশ্যম্ভাবীভাবে উচ্চারিত হচ্ছে।
মীরাত ক্ষণকাল ভেঙ্গে প্রশ্ন করে বসল ;
“ আপনি আগে থেকেই ইফতিকে চিনতেন তাই না!”
উক্ত কথায় আহিয়াদের ঘোর ভাঙ্গে। দীর্ঘ শ্বাস টেনে উত্তর দিলো ;
“ হুমম। আগে থেকেই চিনতাম।”
দুজনের কথোপকথনের মাঝে হঠাৎ বিদ্যুৎ ফিরে এলো এবং চারপাশ মুহূর্তেই আলোয় আলোকিত হয়ে উঠলো। অন্ধকারের গভীরতা সরে গেল, সমস্ত পরিবেশে নতুন প্রাণের সঞ্চার ঘটলো। ব্যালকনিতে ড্রিম লাইটের হালকা আলোয় মীরাত সরাসরি তাকালো সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানবটির দিকে।আহিয়াদ তখনও তার দিকে তাকিয়ে আছে। আলোর ছোঁয়ায় মীরাতের মুখাবয়ব অনেকটা উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে।
“ তোমরা দুজন ব্যালকনিতে কি করছো এতো রাতে?”
সুরমা বেগমের গমগমে আওয়াজ শুনে দুজনেই রুমের ভেতর দৃষ্টি ফেললো। সামনেই রণমূর্তি ধারণ করে দাঁড়িয়ে আছেন সুরমা বেগম। অগ্নিদৃষ্টিতে তাদের দিকে তাকিয়ে। মীরাত ভয়ে একপাশ ঘেষে দাঁড়ালো। অপরাধীর মতো মুখ নিচু করে মেঝের দিকে দৃষ্টিপাত করলো। সে মনে করলো, এই মুহূর্তে চোখে চোখ পড়লে আগুনের শিখা তার আত্মাকে ছিন্নভিন্ন করে দেবে।
অন্যদিকে, আহিয়াদ অদ্ভুত নির্বিকারতায় আচ্ছন্ন হয়ে রইল।সে মায়ের সামনে প্রতিক্রিয়াহীন। তার চেহারায় কোনো উদ্বেগ বা বিচলনের চিহ্ন নেই। এর মাঝেই ফাবিহা কফির ট্রে হাতে রুমে প্রবেশ করেছে। সামনে সুরমা বেগমকে দেখে কপাল কুঁচকে গেল। সে এগিয়ে এসে মায়ের চাহনি অনুসরণ করে সামনে তাকাল। আহিয়াদ আর মীরাতকে একসাথে দেখে চমকে গেল। ভয়ে গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেল। এখন নিশ্চয়ই বাড়িতে এসব নিয়ে তান্ডব চলবে। সে ভীত চোখে মায়ের দিকে তাকালো। পরিবেশে নিস্তব্ধতা বিরাজ করছে। মনে হচ্ছে এখনই ঝড় উঠবে।
[ আজকের পর্ব কেমন হয়েছে সকলে মতামত জানাবেন। ]
চলবে…….