#অব্যক্ত প্রেমাসুখ❤️🔥
#আদ্রিতা নিশি
২১.
[কপি করা নিষিদ্ধ ❌]
রাতের তৃতীয় প্রহর। নিস্তব্ধতায় আচ্ছন্ন পুরো শহর, মনে হচ্ছে বাহিরে রাত তার মায়াবি চাদর দিয়ে সব কোলাহলকে ঢেকে দিয়েছে। সেই নিস্তব্ধতার মাঝেই, নির্জন ঘরে ছড়িয়ে আছে অপূর্ব দৃশ্য। মীরাত নিঃশব্দে আহিয়াদের কাঁধে মাথা রেখে গভীর ঘুমে মগ্ন। আহিয়াদ অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মীরাতের শান্ত মুখপানে। সে লক্ষ করেছে, মীরাতের চোখের কোণে লুকানো অশ্রুর চিহ্ন, যেগুলো কান্নার রেশ মুছে রেখে গেছে। তার লালচে চোখ ও নাক বেদনাবিধুর রাতের সাক্ষী।
মীরাতের দীর্ঘ কালো চুলগুলো মেঝেতে আলগোছে ছড়িয়ে পড়েছে। কিছু চুল তার মুখমণ্ডল আড়াল করে রেখেছে, লাজুক কোনো পর্দা টেনে দিয়েছে। আহিয়াদ ধীরে ধীরে হাত বাড়িয়ে চুলগুলো সরিয়ে কানের পেছনে গুঁজে দিল। মীরাত সামান্য নড়েচড়ে উঠল, কিন্তু ঘুমের ঘোর ভাঙল না। আহিয়াদ দৃষ্টি সরিয়ে দেয়ালে ঝুলানো ঘড়ির দিকে তাকালো। রাত চারটা বেজে পাঁচ মিনিট। অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই ফজরের আজান শোনা যাবে।
এক নিঃশ্বাসে গভীরভাবে ভাবল আহিয়াদ। তারপর মীরাতকে দু’হাতে তুলে নিলো কোলে। তার কোমল দেহটিকে সাবধানে নিয়ে গিয়ে ফাবিহার বিছানায় শুইয়ে দিলো। কম্বলটা গুছিয়ে মীরাতের গায়ে জড়িয়ে দিয়ে কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে রইল বিছানার একপাশে। তার মনের গভীরে কোনো ভাবনার ঢেউ আছড়ে পড়ছে। হঠাৎ সে মীরাতের হাত নিজের মুঠোয় ধরে রাখল। সেই স্পর্শের মধ্যে কোনো সান্ত্বনা খুঁজে পাচ্ছে সে। মীরাত তখনো গভীর ঘুমে ডুবে আছে, আর আহিয়াদ সেই মুহূর্তকে নিজের হৃদয়ে ধারণ করে রাখল।
আহিয়াদ আজ বড্ড এলোমেলো। অশান্ত ভঙ্গিতে বলল;
“আ’ম সরি মীরাত। আমি তোমার কষ্টগুলো নিবারণ করতে পারছিনা। তোমার চোখের অশ্রু বন্ধ করতে পারছিনা। একটু সময় দরকার। আমি সবকিছু ঠিক করে দিবো আই প্রমিজ। ”
আহিয়াদ একটু থামে। অশান্ত ভঙ্গিতে আবারও আওড়ায়;
“আমি চাই আমার পরিবারের সকলে খুশি থাকুক, ভালো থাকুক। তুমি আমার ওয়াইফ। তোমাকে ভালো রাখা আমার দায়িত্ব। মা,বাবা, বোন আর তোমায় নিয়ে নতুন করে সবকিছু শুরু করতে চাই। পরিবার না মানলেও তোমায় আমি ছাড়বো না। তুমিই আমার জীবনের প্রথম আর শেষ রমণী। তোমায় নিয়েই বাকীটা পথ চলতে চাই। নতুন সূচনার শুরুটা নিশ্চয়ই ভালো হবে। শুধু সময়ের অপেক্ষা মাত্র।”
“ভাই বাবা তোমায় ডাকছে।”
ফাবিহার কণ্ঠস্বর কর্ণকুহরে প্রবেশ করতেই আহিয়াদ সচকিত হয়ে উঠল। মীরাতের হাত আলগো করে ছেড়ে দিয়ে নিজেকে সংযত করল সে। এক নিঃশ্বাসে গভীর গাম্ভীর্যের মুখোশ পরে বিছানা থেকে ধীরগতিতে উঠে দাঁড়াল। চোখ তুলে ফাবিহার দিকে তাকিয়ে একদম সঙ্কোচহীন স্বরে বলল,
“আমায় কেন ডাকছে?”
ফাবিহা গভীর দৃষ্টিতে আহিয়াদের দিকে তাকিয়ে ঠান্ডা অথচ ভারী গলায় বলল,
“মা কান্নাকাটি করে বাবাকে সবটা বলে দিয়েছে। বাবা সম্ভবত বিয়ের বিষয়টা নিয়ে কথা বলতে চাইছে।”
আহিয়াদ এগিয়ে গেলো ফাবিহার দিকে। গম্ভীর কণ্ঠে বলল ;
“মীরাতের খেয়াল রাখিস। ”
ফাবিহা মাথা একটু ঝুঁকিয়ে ভদ্র মেয়ের মতো একচিলতে হাসি দিয়ে বলল,
“আমি থাকতে ভাবির কোনো সমস্যা হবে না। আমি সবকিছুর খেয়াল রাখব। এখন তুমি দ্রুত যাও। গিয়ে স্পষ্ট করে বলো, তুমি মীরাত ভাবিকে ভালোবাসো, আর মীরাত ভাবি এই বাড়িতেই থাকবে—আমাদের সাথে।”
আহিয়াদ রুম থেকে বেড়িয়ে যাওয়ার সময় প্রতিত্তোর করল;
“ বিয়ে যখন করেছি, মীরাতকে ভালো রাখার জন্য সব কিছু করতে প্রস্তুত আমি। ”
ফাবিহা মৃদু হেসে ফেলল। সত্যিই, তার ভাই দিনকে দিন বদলে যাচ্ছে। সে ছোটবেলা থেকেই শুনে এসেছে, ছেলেরা বিয়ে করলে নাকি বউপাগল হয়ে যায়। আর এখন দেখে মনে হচ্ছে, তার ভাই আহিয়াদও সেই পথেই হাঁটছে।
হালকা হাসির রেশ মুখে নিয়েই ফাবিহা ধীর পায়ে লাইট অফ করল। তারপর নিঃশব্দে মীরাতের পাশে এসে শুয়ে পড়ল। ঘরটা অন্ধকার হয়ে গেলেও তার মনের ভেতরে অজস্র প্রশ্ন ঘুরপাক খেতে থাকল। বাবা-মা এ ব্যাপারে কী সিদ্ধান্ত নেবেন, তা নিয়ে টেনশনের ছায়া তার মুখে স্পষ্ট। কিন্তু সেই চিন্তাগুলো সত্ত্বেও, মীরাতের শান্ত মুখের দিকে তাকিয়ে ফাবিহার মনে এক ধরনের আশার আলো জ্বলতে লাগল।
★★
“তোমার ছেলে বিয়ে করে বউ নিয়ে এসেছে এই বাড়িতে। অথচ একবারও আমাদের জানানোর প্রয়োজন মনে করলো না। আমরা কি এতটাই পর হয়ে গেলাম?”
“আমারও ভাবতে অবাক লাগছে! আমার ছেলে কিনা হঠাৎ বিয়ে করে আনল! ওহ মাই গড! যে ছেলে বিয়ের নাম শুনলেই দশ হাত দূরে থাকে, সে কিনা বিয়ে করে ফেলেছে! জেনির সাথে তো বিয়েটা প্রায় ঠিকঠাক হয়ে গিয়েছিল। জেনিকে বিয়ে করলে আমরা একটুও আপত্তি করতাম না। কিন্তু এইভাবে হঠাৎ করে অন্য একটা মেয়েকে নিয়ে আসল?
এখন জেনির বাবা-মা যদি বিষয়টা জানতে পারে, কী বলব আমরা? আর জেনি? আহিয়াদ বিয়ে করেছে, এই খবর শুনে মেয়েটা কীভাবে সহ্য করবে? এসব ভেবেই মাথা গরম হয়ে যাচ্ছে।”
তওহীদ সাহেব ঘরে বিছানার একপাশে বসে আছেন । তার মুখে চিন্তার গভীর ছাপ স্পষ্ট। আহিয়াদের আচরণ তাকে স্তব্ধ করে দিয়েছে। বুকের ভেতর জমে থাকা উদ্বেগ আর রাগ মিলেমিশে অদ্ভুত অস্থিরতা তৈরি করছে। তিনি থেমে থেমে দীর্ঘশ্বাস ফেলছেন।
বিছানায় বসে সুরমা বেগম কান্নায় ভেঙে পড়েছেন। চোখের পানি থামার নাম নেই। তার বুকের ভেতর জমে থাকা কষ্টের ভার আর সহ্য করতে পারছেন না। কাঁপা গলায় বললেন, “আমাদের এতটা অবহেলা করল আহিয়াদ? মা-বাবা কী একেবারেই গুরুত্বহীন হয়ে গেল তার কাছে?”
তওহীদ সাহেব সুরমার দিকে তাকিয়ে কিছুক্ষণ চুপ করে রইলেন। তার কষ্টটা আরও গভীর হয়ে উঠল স্ত্রীর এই প্রশ্নে। তিনি কিছু বলার চেষ্টা করলেন, কিন্তু নিজের ভেতরের অস্থিরতা ভাষায় প্রকাশ করতে পারলেন না। তাদের দুজনের মনে একই প্রশ্ন—এই সম্পর্ক তারা কীভাবে মেনে নেবেন?
দরজা নক করার শব্দ পেয়ে তওহীদ সাহেব গম্ভীর কণ্ঠে বললেন;
“ভেতরে এসো। ”
আহিয়াদ ধীর পায়ে দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করল। পা রাখতেই তার চোখ পড়ল মায়ের কষ্টে ভরা মুখ।সুরমা বেগমের কাঁদতে কাঁদতে শরীর কাঁপছে, আর তওহীদ সাহেবের মুখে গভীর চিন্তা, শত প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাচ্ছেন না। এই দৃশ্য দেখতে পেয়ে আহিয়াদের বুকের ভেতর ভারী কিছু জমে উঠল।
সে মুহূর্তের জন্য থেমে গেল, কিছু বলার আগে নিজের অনুভূতিগুলো সামলানোর চেষ্টা করল। তারপর, ধীরে ধীরে কিছুটা আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে তওহীদ সাহেবের সামনে এসে দাঁড়াল।
তওহীদ সাহেব গম্ভীর কণ্ঠে বললেন;
“ডিভানে বসো। তোমার সাথে জরুরী কথা আছে।”
আহিয়াদ এক পা এগিয়ে ডিভানে গিয়ে বসে পড়ল। কিছুটা ভারী মনে হলেও সে নিজেকে শান্ত রাখতে চেষ্টা করছে। ডিভানে বসে নিজের কাঁধ সোজা করে, ঠোঁট চেপে বাবার দিকে একপলক তাকাল। তওহীদ সাহেবের মুখশ্রী পুরোপুরি অস্বাভাবিক হয়ে উঠেছে—চোখে কোনো অনুভূতির ছাপ নেই, শুধু রয়েছে কঠিন নিরবতা। তার চোয়াল শক্ত হয়ে উঠেছে, আর গভীর দৃষ্টিতে আহিয়াদের দিকে তাকিয়ে আছে।
তওহীদ সাহেব কণ্ঠনালী থেকে বেরিয়ে আসা রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে তীব্র বিরক্তির সঙ্গে বললেন,
“তোমার বাবা-মা মরে গেছে নাকি, আহিয়াদ? নিজের মর্জি মতো যা খুশি, তাই করে বেড়াচ্ছো! অথচ আমাদের বলার প্রয়োজন মনে করছ না!”
তওহীদ সাহেবের কঠোর কন্ঠস্বরে আহিয়াদ কিছুটা চমকে ওঠে। সে নিজেকে শান্ত রেখে বলল;
“বাবা সবকিছু বলার মতো পরিস্থিতি ছিলো না।”
“ পরিস্থিতি কবে ঠিক হতো? এক,দুই নাকি তিন বছর পর।”
“ বাবা আমি যে অবস্থায় বিয়ে করেছি সে অবস্থায় অন্য কেউ থাকলেও এমন টায় করতো। ”
“ আগে থেকেই যদি তোমার মীরাতকে ভালো লাগতো তাহলে জেনির সাথে যখন তোমার বিয়ে নিয়ে কথা চলছিল তখন আমাদের নিষেধ করোনি কেনো?”
“আমি মীরাতকে পছন্দ করতাম না। আমাদের বিয়েটা পরিস্থিতির চাপে হয়েছে।”
সুরমা বেগমের কান্না বন্ধ হয়ে গিয়েছে আহিয়াদের কথা শুনে। তিনি ছেলের দিকে অদ্ভুত চোখে তাকিয়ে আছেন। তওহীদ সাহেব সন্দিহান কন্ঠে বললেন;
“ সবকিছু এখুনি আমাদের খুলে বলবে। আমি চাই না এটা নিয়ে আর কোনো বাজে সিন ক্রিয়েট হয়।”
আহিয়াদ এবার তার অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব আর আবেগের ভার মনের মধ্যে ধারণ করতে না পেরে সব কিছু খুলে বলল। প্রথম মীরাতের সাথে দেখা হওয়া থেকে শুরু করে, ইফতির সাথে শপিংমলে আকস্মিক দেখা হওয়া—সবই একে একে সুরমা বেগম আর তওহীদ সাহেবকে জানাল।
সুরমা বেগম আর তওহীদ সাহেব একে একে সব শুনে বিস্মিত হয়ে গেলেন। তাদের জন্য এটা বিশাল চমক। এতকিছু ঘটে গেছে, অথচ তারা কিছুই জানতেন না। তাদের মনের মধ্যে কোথাও শূন্যতা ভর করল। অবিশ্বাস ও আশ্চর্যের মিশ্রণ তাদের চোখে। তাদের কল্পনাতেও ছিল না যে তাদের ছেলে এত কিছু করে ফেলেছে, আর তারা কিছুই জানেনি।
তওহীদ সাহেব অবাকতার রেষ নিয়ে বললেন;
“এতোকিছু ঘটে গেলো আমাদের বলার প্রয়োজন মনে করোনি। আর তোমার নানাজান নিজে আকদে সামিল ছিলেন তবুও আমাদের বললেন না। এসব ভেবেই অবাক হচ্ছি। ”
আহিয়াদ দীর্ঘ শ্বাস টেনে বলল;
“এখন তো সব জানতে পেরেছো। এখন তোমাদের মতামত কি?”
“আমাদের মতামতের কথা বাদ দিয়ে জেনিকে কি বলবে সেটা নিয়ে ভাবো। মেয়েটাকে তুমি ঠকিয়েছো আহিয়াদ।”
“বাবা আমি কাউকে ঠকাইনি। আমি জেনিকে পছন্দ করতাম না এখনও করি না। আমি জেনিকে এটা আগেই জানিয়ে দিয়েছিলাম। অথচ সে একরকম জেদ করেই তার বাবা মাকে দিয়ে বিয়ের প্রস্তাব দেওয়ায়। তারপর দেখলাম তোমরাও রাজি হয়ে গেলে তাই আর কিছু বলিনি। কিন্তু আমাদের মাঝে দুরত্ব ছিল আর এখনও আছে। আমি জেনিকে জাস্ট ফ্রেন্ড হিসেবে দেখেছি। নানাজানের বাড়িতে জেনিকে নিয়ে গিয়েছিলাম একমাত্র মায়ের কথায়। নাহলে ওকে নিয়ে যাওয়ার কোনো ইচ্ছা ছিল না। এতো বদমেজাজি আর ইগোস্টিক মেয়েকে আমার লাইফ পার্টনার হিসেবে একদম পছন্দ ছিল না। বিয়ের কথা ফাইনাল হওয়ার পর এতো বেশী বাড়াবাড়ি শুরু করেছিল কি আর বলবো। শুধুমাত্র তোমাদের কথা চিন্তা করে চুপচাপ ছিলাম। তোমরা নিশ্চয়ই জানো জেনির মম মানে আন্টি খ্রিষ্টান ছিলেন। এইতো বাংলাদেশে আসার কিছু বছর আগে মুসলিম হন। কারণটা ছিল আংকেলের পরিবার আন্টিকে মানতে পারছিলেন না তাই।জেনিও ছোট বেলায় আন্টির কালচার মেনে চলেছে। তারপর আংকেল নিজের কালচারে শিক্ষিত করেন। জেনিফার অনেকটা বিদেশী কালচারে চলত। ”
“হোয়াট আহিয়াদ এসব কি বলছো? ”
আহিয়াদ ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে ;
“কী হলো বাবা? এমন রিয়েক্ট করছো কেনো?”
তওহীদ সাহেব বিস্মিত হয়ে বললেন;
“ জেনির মা যে খ্রিস্টান ছিল এসব তো আমরা জানতাম না। ”
আহিয়াদ কপাল কুঁচকে বলল;
“আমি তো জানতাম তোমরা জানো। জেনি আমায় বলেছিল তোমাদের নাকি সবটা বলেছে। তারপর নাকি বিয়ের প্রস্তাব রেখেছে। দ্যান তোমরা রাজি হয়েছো।আমিও আর এই বিষয়ে কথা বাড়াইনি। কারণ এটা নিয়ে তদন্ত করার কিছু ছিল না। মানুষের অতীত থাকতেই পারে তাই এসব নিয়ে ভাবিনি।”
“আমরা এসব বিষয়ে কিছুই জানিনা। আমাদের বললে তো আমরা সিনক্রিয়েট করতাম না। অতীতে কে কেমন ছিল তা আমাদের কাছে ম্যাটার করে না। বর্তমান আমাদের কাছে ম্যাটার করে।”
“ জেনির বাবা বিদেশে পড়াশোনা করা কালীন জেনির মায়ের সাথে রিলেশন করে পরে বিয়ে করে। জেনির যখন পনেরো বছর তখন জেনির না শশুর বাড়ির চাপে ধর্ম চেঞ্জ করেন। পরে বাংলাদেশে আসে আর এখানে থাকতে শুরু করেন। ”
সুরমা বেগম বাকরূদ্ধ হয়ে গেছেন। এসব কি শুনেছেন তিনি। জেনির বাবা মা তাদের এতো বড় কাহিনী বলেনি। সুরমা বেগম থমথমে গলায় বললেন;
“ চারিদিকে এতো গোপনীয়তা। জেনির বাবা মা এটা ঠিক করেননি। আমরা তো এসব জানলে অমত করতাম না। তাহলে কেনো লুকালো? আসলে উনারা হয়তো আমাদের বিশ্বাস করেননি তাই লুকিয়েছে। নিজের ছেলেই বিয়ের কথা লুকায় সেখানে অন্যরা কথা লুকাবেন সেটাই তো স্বাভাবিক। ”
আহিয়াদ অনুতপ্ততা নিয়ে বলে;
“ তোমাদের কাছে ক্ষমা চাইছি। প্লিজ মাফ করে দাও।”
তওহীদ সাহেব কাঠিন্যতা নিয়ে বললেন;
“মীরাত এখানে কি পরিচয়ে থাকবে? কেউ তো জানে না তুমি মেয়েটাকে বিয়ে করেছো? আমরাও যে তোমাদের বিয়েটা মন থেকে মেনে নিয়েছি তা তো নয়।”
আহিয়াদ গম্ভীর কণ্ঠে সরাসরি তাকিয়ে বলল;
“ বাবা তোমাদের মানা না মানায় আমার কিছু যায় আসে না। আমি মীরাতকে বিয়ে করেছি। মীরাতের সাথে সারাজীবন কাটাতে প্রস্তুত। এখন বাকীটা তোমাদের ওপরে। আমাদের এই এখানে রাখবে কি রাখবে না সকালের মধ্যে জানিয়ে দিও। ”
“এসব কি বলছো তুমি?”
“ সঠিক বলছি। একটা কথা শুনে রাখো তোমরা আমি মীরাতকে ছাড়তে পারবো না। এটাই আমার সিদ্ধান্ত। ”
আহিয়াদ কঠিনমুখে উঠে দাড়ায়। একপলক বাবা মায়ের দিকে তাকিয়ে রওনা দেয় নিজের রুমে। সুরমা বেগম উত্তেজিত হয়ে বলে উঠলেন;
“শুনেছো তোমার ছেলে কি বললো?এখনই ওই মেয়েকে নিয়ে আমাদের কথা শুনাচ্ছে। ”
তওহীদ সাহেব কিছুটা ভাবুক হয়ে বললেন;
“ এতো উত্তেজিত হয়ে লাভ নেই। এখন যা কিছু আমি করবো তা হবে আহিয়াদের অগোচরে। এতো সহজে বিষয়টা তো সমাধান হবে না। এই কাহিনীর শেষটা এখন আমার হাতে। শীঘ্রই দ্যা এন্ড হবে। ”
“কি করবে তুমি? ”
“জাস্ট ওয়েট এন্ড ওয়াচ। ”
[এখানে কোনো ধর্মকে ছোট করা হয়নি। গল্পের স্বার্থে লিখেছি। আর কোনো ধর্ম বিষয়ক কথা লেখা হবে না এই গল্পে। আজকের পর্ব কেমন হয়েছে সকলে জানাবেন।]
চলবে….