অব্যক্ত প্রেমাসুখ❤️‍🔥 #আদ্রিতা নিশি ২২.

0
113

#অব্যক্ত প্রেমাসুখ❤️‍🔥
#আদ্রিতা নিশি
২২.

[কপি করা নিষিদ্ধ ❌]

মীরাতের মন আজ বিষণ্নতার গভীর সমুদ্রে ডুবে আছে। সকাল থেকে চারপাশে নিস্তব্ধতা বিরাজ করছে। সুরমা বেগম আর তওহীদ সাহেব নীরবে নিজেদের মধ্যে ডুবে আছেন, একটিও কথা বলেননি কারও সঙ্গে। আহিয়াদও নিরুদ্দেশ—সকাল থেকে তার কোনো খোঁজ নেই। শুনেছে, সে নাকি নিজের ঘর ছেড়ে কোথাও বেড়িয়েছে।মীরাত সকালের নাস্তা পর্যন্ত করেছে ফাবিহার রুমে। ইচ্ছে করেই সবার সামনে যাওয়া এড়িয়ে যাচ্ছে।

মীরাত বিছানায় বসে একাগ্র দৃষ্টিতে ফোনের দিকে তাকিয়ে আছে। তার মন নানা দুশ্চিন্তায় ভারাক্রান্ত। মায়ের সঙ্গে কথা বলার প্রবল ইচ্ছে হচ্ছে, কিন্তু সে জানে, কথা বললেই তার মা বুঝে ফেলবেন তার মনের অবস্থা। এমন হাজারো ভাবনায় বিভোর হয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে সে। কেন এত জটিলতায় সবসময় তাকে জড়াতে হয়, এই প্রশ্নে তার ভেতর তীব্র হতাশা জাগে।

হঠাৎ তার মনে পড়ে, আজ রাতে তো পার্টি আছে। সকালেই ডেকোরেশনের লোক আসার কথা ছিল, কিন্তু এখনো কেউ আসেনি। বাইরে কোনো আয়োজনের শব্দও শোনা যাচ্ছে না। চারপাশটা আরও বেশি নীরব হয়ে আছে।

সবাই এমন চুপচাপ কেন? কোথায় কিছু একটা ঘটছে—এই অনুভূতি মীরাতকে নাড়া দেয়। কিন্তু আসল কারণটা সে কিছুতেই বুঝে উঠতে পারে না। নিস্তব্ধতার এই ভার চারপাশে অদৃশ্য অস্বস্তি তৈরি করছে। মনে হচ্ছে, সামনে কোনো ঝড় অপেক্ষা করছে, যা তার জীবনকে আরও ওলট-পালট করে তুলতে পারে।

“ কি এত ভাবছো?”

ফাবিহার কন্ঠস্বর কর্ণকুহরে প্রবেশ করতেই মীরাতের ভাবনার সুতো ছিড়ে। সে ফাবিহার দিকে তাকিয়ে বলল;
“তেমন কিছু না। এতক্ষণ কোথায় ছিলে?”

ফাবিহা এসে মীরাতের পাশে বসে। মুখ গোমড়া করে বলে ;
“ডাইনিং রুমে ছিলাম। আজ পার্টি হবে না। বাবা মা সবাইকে নিষেধ করে দিয়েছে।”

মীরাতের কথাটা শুনে খারাপ লাগলেও ছোট্ট করে প্রতিত্তোর করল;
“ওহহ।”

“জেনি আপু আর তার পরিবার এসেছে। বাবা মা কথা বলছে তাদের সাথে। ”

ফাবিহার ঝিমিয়ে যাওয়া কন্ঠে জেনির আসার কথা শুনে চমকে গেলো মীরাত। সে তড়িঘড়ি করে প্রশ্ন করল;
“উনারা কেন এসেছেন?”

“হয়ত ভাই আর জেনি আপুর বিয়ের কথা বলতে। কারণ নানাজানের বাড়ি থেকে ঘুরে আসার পর বিয়ের ডেট ফিক্সড করার কথা ছিল। ”

মীরাত থমকায়। সে থম মে’রে ফাবিহার দিকে তাকিয়ে থাকে। এসব কি শুনছে সে। যদি তার আরও আহিয়াদের বিয়ে গোপন করে তখন কি হবে?

“ ফাবিহা মীরাতকে নিয়ে ডাইনিং রুমে এসো।”

বাহির হতে সুরমা বেগমের হাঁক শুনে ফাবিহা দ্রুততার সহিত উত্তর দিল;
“আসছি মা।”

“আমি যাব না ফাবিহা। তুমি যাও। ”

“উহু আমার সাথে চলো। আজ একটা হেস্তনেস্ত করেই ছাড়ব। এসব বিয়ে লুকানো খেলা আর ভালো লাগছে না আমার। ”

ফাবিহা কথাটা বলে মীরাতের হাত টেনে নিয়ে রুমের বাহিরে চলে গেল। মীরাত ও আর বাঁধা দিল না।

★★

ডাইনিং রুমে ভারী নীরবতা সবার শ্বাস আটকে দিচ্ছিল। সুরমা বেগম ও তওহীদ সাহেব চিন্তিত ভঙ্গিতে বসে ছিলেন, তাদের মুখে একরাশ অস্বস্তি। অপর পাশে সোফায় বসে ছিলেন জেনি ও তার বাবা-মা। জেনি নির্বাকভাবে কাঁদছে, তার অশ্রু যেন না থামার প্রতিশ্রুতি নিয়ে গড়িয়ে পড়ছে আর তার বাবা-মা মাথা নিচু করে বসে আছেন।তারা কিছু বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছেন।

এমন সময় ফাবিহা মীরাতকে সঙ্গে নিয়ে ডাইনিং রুমে প্রবেশ করে। মীরাতের চোখে ভয় আর অস্বস্তি স্পষ্ট। সে ফাবিহার হাত শক্ত করে ধরে পাশে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে।

জেনির চোখ তখনই মীরাতের দিকে পড়ে। তার মন মুহূর্তে জ্বলে ওঠে ক্ষোভে। বারবার মনে হতে থাকে, এই মীরাতই তার জীবনের সমস্ত স্বপ্ন ছিনিয়ে নিয়েছে। আহিয়াদ তাকে ফেলে এই গ্রামের মেয়েকে বিয়ে করেছে—এই ভাবনা তার রক্ত টগবগ করে ফুঁসিয়ে তোলে।

জেনি হঠাৎ দাঁড়িয়ে যায়। তার চোখে তীব্র ক্রোধ, পায়ের ধপাধপ শব্দে রুমের নীরবতা আরও ভারী হয়ে ওঠে। মীরাতের সামনে এসে দাঁড়িয়ে জেনি তার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকায়। কিছু বলার আগেই সজোরে একটি চড় বসিয়ে দেয় মীরাতের গালে।

ডাইনিং রুমের সবাই হতচকিত হয়ে যায়। এমন হঠাৎ ঘটে যাওয়া দৃশ্যের জন্য কেউই প্রস্তুত ছিল না। সকলে দ্রুত উঠে দাঁড়ায়।পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছে। জেনির মা দৌড়ে এসে মেয়েকে ধরে ফেলে। তার হাত ধরে টেনে এনে সোফায় বসিয়ে দেয়, জেনি তখনও তীব্র ক্রোধে কাঁপছে।

মীরাত এক হাত দিয়ে গালে হাত রেখে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে, চোখ থেকে তার অশ্রু ঝরছে।

জেনি উদভ্রান্তের মত চিৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে বলতে লাগল;
“ ওই মেয়ে আমার থেকে আহিয়াদকে ছিনিয়ে নিয়েছে। ওর জন্য আমি আমার ভালোবাসার মানুষকে হারিয়েছি। একটা মেয়ে হয়ে কীভাবে পারল আমার ভালোবাসার মানুষকে ছিনিয়ে নিতে?আমি কি করে ভালো থাকব।আমার ভালো থাকার কারণটা আমার আর থাকল না। ”

ক্যাথরিন মেয়ের কান্নাকাটি দেখে নিজেও কেঁদে ফেললেন। তিনি মেয়েকে শান্ত করতে বললেন;
“ জেনিফার কান্নাকাটি করো না। একটু শান্ত হও তারপর সব ঠিক করার চেষ্টা করবো। ”

“মম কিছু ঠিক হবে না। আহিয়াদ ওই গ্রামের মেয়েকে বিয়ে করেছে। আমি যে দুই বছর ধরে ভালোবাসলাম তার মূল্য আমি খুব ভালোভাবেই পেলাম। আহিয়াদ তো জানত আমি তাকে কতোটা ভালোবাসি, তাকে ছাড়া বাঁচবো না। কিন্তু সে আমার পরোয়া না করেই আরেকজনকে বিয়ে করল। আমি জানতাম আহিয়াদ আমায় ভালোবাসে না। সে শুধু আমায় ফ্রেন্ড ভেবেছে। আমায় কেন ভালোবাসলো না মম? ”

“চুপ করো। একটু শান্ত হও সোনা। ”

জেনি তার মাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে যাচ্ছে। জেনির বাবা জেনির মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। সুরমা বেগম আর তওহীদ সাহেব চুপচাপ বসে আছেন। এখন কি বলবেন বুঝতে পারছেন না। তারা জেনির বাবা মাকে আহিয়াদের বিয়ের বিষয়ে জানিয়ে দিয়েছে। তাদের কথোপকথনে কথা কাটাকাটি হয়েছে। দুই পক্ষ ভীষণ রাগারাগি করেছেন। কিন্তু আপাতত চুপচাপ আছেন। মীরাত মলিন মুখে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে।

ফাবিহা ফ্রিজ থেকে আইসকিউব নিয়ে এসে মীরাতের গালে আলতো করে ছুঁইয়ে দিতে লাগলো। মীরাত ব্যথায় চোখ মুখ খিঁচে নিলো। ফাবিহা জেনির দিকে কটমট করে তাকিয়ে বলল;
“ এইভাবে কেউ থাপ্পড় মারে? ভাই ছিল না দেখে বেঁচে গেলে। যদি থাকতো তাহলে এখানে বসে কান্না করারও সময় পেতে না। ”

জেনির কান্না বন্ধ হয়ে গেল।সে গরম চোখে তাকালো। ক্রোধ মিশ্রিত কন্ঠে বলল;
“ যা করেছি ঠিক করেছি। মন চাইছে থার্ড ক্লাস মেয়েটাকে আরও কয়েকটা থাপ্পড় মেরে এই বাড়ি থেকে বের করে দেই। আমার জায়গায় উড়ে এসে জুড়ে বসেছে। আমি আমার জায়গা কখনও ছাড়ব না। ”

“ভুল বললে জেনি আপু। তোমার জায়গা এই বাড়িতে ছিল তবে এখন আর নেই। তোমার কথার ভাঁজে মনে হচ্ছে মীরাত ভাবির সতীন হতে চাইছ।”

“একদম চুপ করো ফাবিহা। আমাকে ঠকানোর জন্য তোমার পুরো পরিবারকে জেলে পাঠাতে পারি। বাবা পুলিশকে কল করো আমি এসবের শেষ দেখে ছাড়বো।”

জেনি গমগমে কন্ঠে বলে উঠল। জালাল সাহেব গম্ভীর কণ্ঠে মেয়েকে বললেন;
“ জেনি ভুল আমাদেরও হয়েছে। তোমার জেদের কারণে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলাম। আরেকটা ভুল ও হয়েছে আমাদের পাস্ট সম্পর্কে অবগত করা উচিত ছিল আহিয়াদের পরিবারকে। আহিয়াদের মতামত জানাও উচিত ছিল। যা হয়ে গেছে এখন আমাদের আর কিছু করার নেই। চলো। ”

জেনি অবাক হয়ে বলল;
“তুমি এসব বলছো?অবাক হয়ে যাচ্ছি। ”

“তোমার জন্য আরেকটা মেয়ের সংসার নষ্ট হোক আমি চাই না। তোমার মম ও চায় না এমনটা হোক। চলো বাসায় ফিরে যাই। এখানে আর সিনক্রিয়েট করে লাভ নেই।”

আহিয়াদ দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করেই জেনিসহ তার পরিবারকে উপস্থিত দেখে ভ্রু কুঁচকে গেল। সে শার্টের হাতা গুটাতে গুটাতে পা বাড়িয়ে এগিয়ে আসলো। গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠল;
“ আপনারা এখানে কি করছেন?”

তওহীদ সাহেব আহিয়াদের দিকে তাকালেন।গমগমে কন্ঠে বললেন;
“জেনির বাবা মাকে আমরা ডেকেছিলাম। যা বলার বলে দিয়েছি। তোমার আর জেনির বিয়ে হবে না। ”

“বুঝলাম।”

আহিয়াদ কথাটি বলে নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে নিজের রুমের দিকে পা বাড়ায়। তার আচরণে উদাসীনতা স্পষ্ট।

জেনি আহিয়াদের এই খাপছাড়া আর নির্লিপ্ত মনোভাব দেখে ভেতরে ভেতরে তেতে ওঠে। তার ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যায়। সোফা থেকে উঠে সে সরাসরি আহিয়াদের পথ আটকে দাঁড়ায়।

আহিয়াদ তার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ভ্রুযুগল কুঁচকে ঠান্ডা গলায় জিজ্ঞেস করে,
“আমার পথ কেন আটকালে?”

জেনি তিরিক্ষি মেজাজে বলল;
“আমার জবাব চাই আহিয়াদ।”

আহিয়াদ বুকে হাত গুজে দাঁড়িয়ে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি ফেলে তাকালো। বলল;
“কীসের জবাব?”

“আমায় কেনো ঠকালে আহিদ?”

“তোমায় আমি আগেই সাবধান করেছিলাম।”

“আমি তোমায় ভালোবাসি। ”

“আমি তোমায় ভালোবাসি না।”

জেনির চোখের অশ্রু গড়িয়ে পরছে গাল বেয়ে। সে দু’হাতে অশ্রু মুছে মলিন মুখে বলল;
“তোমার ভালোবাসতে হবে না। তুমি শুধু ওই থার্ড ক্লাস মেয়েকে ডিভোর্স দাও।তারপর আমায় বিয়ে করো।”

মীরাত অনুভূতিশূন্য হয়ে গেছে। নিষ্পলক চোখে চেয়ে আছে আহিয়াদ আর জেনির দিকে। তার ভেতরে নিস্তরঙ্গ শূন্যতা। আজ ভাগ্যের প্রতি একধরনের করুণা জন্মেছে তার মনে।

প্রথম ভালোবাসার মানুষ তাকে ঠকিয়ে দিয়ে চলে গিয়েছে বহু আগে। অথচ সেই শূন্যতার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার পর, ভাগ্য আজ তাকে আবার এক অদ্ভুত মোড়ে এনে দাঁড় করিয়েছে। যেন জীবন আবারও নতুন কোনো খেলার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

তবে আজ মীরাতের মনে জেনির জন্য অসীম দুঃখ জমেছে। তার চোখের সামনে জেনি সেই মানুষটার জন্য লড়াই করছে, যাকে ভালোবেসে নিজের সব কিছু বিলিয়ে দিতে চেয়েছিল। অথচ সেই ভালোবাসা তার জন্য কোনোদিনই ছিল না।

মীরাতের মনে হয়, মেয়েদের ভাগ্য সত্যিই অদ্ভুত। তাদের হৃদয় দিয়ে ভালোবাসতে হয়, কিন্তু সেই ভালোবাসা ভাগ্যের হাতে বারবার পরীক্ষিত হয়। আজ মীরাত নিজেকে কিংবা জেনিকে কোনো সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা খুঁজে পায় না।

তওহীদ সাহেব বিস্মিত হয়ে বললেন;
“এসব তুমি কি বলছো জেনি? এটা কখনও সম্ভব নয়। ”

আহিয়াদ হাত উঁচিয়ে তওহীদ সাহেবকে থামিয়ে দিয়ে বলল;
“ বাবা আমি বিষয়টা দেখছি। ”

জেনি করুণ স্বরে বলল;
“আহিদ তুমি আমায় না বলে বিয়ে করেছো সমস্যা নেই।আমি তোমায় মাফ করে দিয়েছি। সময় আছে এখনও ওই মেয়েকে ডিভোর্স দিয়ে দাও। ডিভোর্সের পর আমি ওর সব দায়িত্ব নেবো আমি তোমায় প্রমিজ করলাম। ”

ফাবিহা রেগেমেগে তাকিয়ে আছে জেনির দিকে মন চাইছে চুলের মুঠি টেনে ধরতে। বিয়ে কি কোনো ছেলে খেলা যে বললেই বিয়ে ভেঙে দিতে হবে। মন চাইছে তার কয়েকটি থাপ্পড় মা’রতে। আহিয়াদ জানে জেনি তাকে ভালোবাসে। কিন্তু সে তো ভালোবাসে না। আহিয়াদ স্বাভাবিক ভাবে বলল;
“তুমি যা চাইছো তা কখনও সম্ভব নয়। ”

“কেনো সম্ভব নয়? বিয়ে তো গোপনে করেছো বাহিরের কেউ জানে না এই বিষয়ে। ডিভোর্স দিলেও কেউ জানতে পারবে না।আর আমি তো বলেছি মীরাতের সব দায়িত্ব নিব।”

“আমি মীরাতকে বিয়ে করেছি। বিয়ে কোনো মজার জিনিস নয় যে যখন চাইবো তখন ডিভোর্স দিব আবার আরেকজনকে বিয়ে করব।”

জেনি উত্তেজিত হয়ে আহিয়াদের কলার দুহাতে চেপে ধরলো। চিৎকার করে বলল;
“ তুমি মীরাতকে ডিভোর্স দিবে আজকের মধ্যে। নাহলে আমি পুলিশ কেস করব নয়ত সুই সাইড করব। ”

আহিয়াদ জেনির দিকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে ওষ্ঠ বাঁকিয়ে হেসে বলল;
“আমি মীরাতকে ডিভোর্স দেবো না। তোমার যা ইচ্ছে তাই করো আই ডোন্ট কেয়ার। ”

জেনির হঠাৎ কি হলো সে নিজেও জানে না। কিছুটা শান্ত হলো। অজানা আতংক তাকে ঘিরে ধরল। কম্পনরত কন্ঠে প্রশ্ন করল;
“তুমি মীরাতকে ভালোবাসো আহিয়াদ?”

আহিয়াদের ওষ্ঠ কোণে হাসি দেখা গেল। ওষ্ঠ কোণে হাসি বজায় রেখে উত্তর দিল ;
“যদি বলি ভালোবাসি।”

জেনি ধীরে ধীরে আহিয়াদের শার্টের কলার থেকে হাত সরিয়ে নিল। তার চোখে একরাশ ক্লান্তি আর পরাজয়ের ছায়া।সে একবার মীরাতের দিকে তাকায়, তারপর আবার আহিয়াদের দিকে। নিজের অবস্থার কথা ভেবে তার ঠোঁটের কোণে তিক্ত হাসি ফুটে ওঠে।

যাকে সে এত ভালোবেসেছে, তার মন কখনোই তার দিকে ছিল না—এই সত্যটা আজ আরও গভীরভাবে তাকে আঘাত করে। আহিয়াদ, যে তার জীবনের প্রথম এবং একমাত্র ভালোবাসা, কখনোই তার ছিল না। সে তো বরাবরই অন্য কারো।

জেনি উপলব্ধি করে, নিজের সমস্ত আবেগ, স্বপ্ন, আর বোধ হারিয়ে এতদিন ধরে আহিয়াদকে নিজের করার যে মরিয়া চেষ্টা চালিয়েছে, তা নিছকই নিরর্থক ছিল। ভাগ্যের পরিহাসে, সে আহিয়াদের জীবনে কেবল একজন তৃতীয় ব্যক্তি।

আজকের এই শেষ চেষ্টাটুকুও বিফল হয়েছে। আজ, চিরতরে, সে বুঝতে পারে যে তার ভালোবাসার মানুষটি আর কখনোই তার হবে না। সেই স্বপ্নভঙ্গের বেদনা তার হৃদয় ভেঙে চুরমার করে দিচ্ছে।

জেনি কিছুটা পিছিয়ে গেল। ভারাক্রান্ত মনে এলোমেলো ভঙ্গিতে বিরবির করে বলল;
“আমি বোধহয় তোমার ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য নই আহিদ। আমি দুই বছর ধরে তোমায় ভালোবাসি অথচ তুমি জানতেই পারো নি। আমায় কেনো ভালোবাসলে না? আমার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে আহিদ। তুমি কি আমার কষ্ট দেখতে পাচ্ছো না? তোমায় হয়তো এই জনমে পাওয়া হলো না আমার। ভালো থেকো তুমি আর মীরাত। ”

আহিয়াদ জেনির কথাগুলো শুনেছে। তবুও সে প্রতিক্রিয়াহীন।তার কিছু করার নেই। ভাগ্য যে অন্য কোনো ভবিষ্যত লিখে রেখেছিল।

জেনি মীরাতের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। মীরাত ভয়ার্ত ভঙ্গিতে জেনির দিকে তাকায়।জেনি তা খেয়াল করল। সে মলিন হেসে বলল;
“আমার আহিদকে ভালো রেখো মীরাত। আমায় কথা দাও কখনো আহিদকে কষ্ট দিবে না। আরেকটা কথা শোনো যদি পারো ওর মন থেকে জেনি নামটা মুছে দিও। আমি চাই না আহিদ আমায় ফ্রেন্ড হিসেবে মনে রাখুক। তার যেনো কখনো মনে না পড়ে জেনিফার নামে কেউ একজন ছিল তার জীবনে। ”

জেনি একটু থামে। সে তার হাত বাড়িয়ে দেয় মীরাতের দিকে। মীরাত অবাক হয়ে তাকায় জেনির দিকে। জেনি বলল;
“ আমার হাতে হাত রেখে প্রমিজ করো আহিদকে কখনও কষ্ট দিবে না। ”

মীরাতের ভীষণ কষ্ট হচ্ছে জেনির জন্য। সে তো জানে ভালোবাসার মানুষকে না পাওয়ার কষ্ট।সব অপমান ভুলে ইতস্ততভাবে জেনির হাতে হাত রেখে বলল;
“ প্রমিজ করলাম কখনও উনাকে কষ্ট দিব না।”

জেনি হাসে। সে মীরাতের হাত ছাড়িয়ে নিজের বাবা মায়ের কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলে ;
“সরি গাইস। আমি হয়তো বাজে ব্যবহার করেছি সকলের সাথে। কী আর করব। এতো বড় ধাক্কা সহ্য করতে পারিনি। জানিনা কখনও সহ্য করে উঠতে পারব কি না। আজ থেকে আপনাদের জীবনে জেনির চ্যাপ্টার ক্লোজড। সকলে ভালো থাকবেন। বাই। বাবা মম চলো।

জেনি আর একবারও পেছনে তাকানোর ইচ্ছা করে না। তার বাবা-মা তাকে সঙ্গে নিয়ে দ্রুততার সঙ্গে সেখান থেকে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য উদ্যত হয়। তবুও, জেনি অজানা টানে পা টেনে নিতে থাকে। কিছুক্ষণ পর, হঠাৎ করেই পেছনে ফিরে তাকায়।

তার চোখে পড়ে, চারপাশের মানুষজন তাদের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। কিন্তু সেই দৃষ্টিগুলোকে উপেক্ষা করে তার দৃষ্টি গিয়ে স্থির হয় আহিয়াদের উপর। আহিয়াদ তখনও নির্বিকার চেহারায় তার দিকে তাকিয়ে রয়েছে। জেনি ভেজা চোখে অমলিন হাসি ছুড়ে দেয় আহিয়াদের উদ্দেশ্যে। সেই হাসি কষ্টের, বেদনার আর ভেতর হতে অন্তর্গত হাহাকারের প্রকাশ। হৃদয়ের গভীর থেকে উঠে আসা আর্তনাদ—কাউকে চিরকাল নিজের করে না পাওয়ার যন্ত্রণা।

❝তারপর সময় আর নিয়তি হঠাৎ বদলে গেলো — আমার আর রইলো না কেউ ❞
— আদ্রিতা নিশি

জেনি আর দাঁড়ায় না। দু’কদম এগোতেই তার মাথা ভারী হয়ে আসে। চোখের সামনে অন্ধকার নেমে আসে। শরীরের ভারসাম্য ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়ে সে হঠাৎ মেঝেতে লুটিয়ে পড়ে। চারপাশে মুহূর্তে নিস্তব্ধতা নেমে আসে তখনই।

[আজকের পর্ব কেমন হয়েছে সকলে জানাবেন। জেনির জন্য আমার খারাপ লাগছে। কিন্তু কিছু করার নেই।]

চলবে…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here