অব্যক্ত প্রেমাসুখ❤️‍🔥 #আদ্রিতা নিশি ।৫।

0
138

#অব্যক্ত প্রেমাসুখ❤️‍🔥
#আদ্রিতা নিশি
।৫।

[কপি করা নিষিদ্ধ ]

রাত এগারোটা বাজে। বাহিরে প্রচুর বৃষ্টিপাত হচ্ছে। কিছুকক্ষণ পর পর ভয়ংক র ভাবে বজ্র গর্জে উঠছে। দমকা হাওয়া বইছে চারিপাশে। বাতাসের শো শো ধ্বনি প্রতিধ্বনিত হচ্ছে প্রকৃতি জুড়ে। শীতল হাওয়ায় শীতের আভাস পাওয়া যাচ্ছে।আরিশা ব্যস্ত ভঙ্গিতে নিজের রুমের জানালা আঁটকে পর্দা টেনে দিলো। নাহলে বাহিরের বৃষ্টির পানি রুমে ঢুকে পরবে। এতে রুম জুড়ে বৃষ্টির পানি মাখামাখি হয়ে যাবে।

আরিশার রুমে ঘুমিয়ে আছে মীরাত। গলার নিচ অব্দি কম্বল টেনে দেওয়া। কি নিশ্চিতে ঘুমুচ্ছে। আরিশা ধীর পায়ে এগিয়ে এসে নিঃশব্দে বিছানার একপাশে বসে পরলো। দৃষ্টি তার মীরাতের মুখশ্রীতে। মলিন,শুকনো মুখ, চোখের নিচে না ঘুমানোর স্মৃতি স্বরূপ ডার্ক সার্কেল স্থান পেয়েছে। গাল আর কপাল জুড়ে আঁচড়ে দাগ। অনেক জায়গায় র ক্ত জমাট বেঁধে আছে। কি বিভৎ স লাগছে দেখতে।

আরিশার বক্ষ কেঁপে উঠলো তবে তার মনে জমে থাকা ক্রোধ অশিক্ষিত মহিলাগুলোর ওপর। একটা মেয়েকে কেউ এই অমানবিক নি’ষ্ঠুরভাবে নির্যা তন করে?। যেকোনো মানুষ দেখে বলবে নিশ্চয়ই মীরাতের সাথে মহিলাগুলোর পুরনো কোনো আক্রোশ ছিলো তাই এতোটা জঘ ন্য কান্ড ঘটিয়েছে। আরিশার চোখ পরলো মীরাতের গলদেশে। কালসিটে পরে আছে সেখানটায়। সরু চোখে পর্যবেক্ষণ করলো সে। মনে হচ্ছে কেউ সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগ করে গলা চেপে ধরে ছিলো। ওই মহিলাগুলো এমনটা করেনি তো? ভাবতেই আরিশার মেজাজ বিগড়ে গেলো।

দরজা ধাক্কানোর আওয়াজে আরিশার ধ্যান ভঙ্গ হলো। সে বিছানা থেকে উঠে দ্রুত দরজা খুলে দিতেই আহিয়াদের সম্মুখীন হলো সে।

আরিশা স্বাভাবিক ভাবে শুধালো – এতো রাতে এখানে? ভাইয়া কিছু বলবে?

আহিয়াদ নড়ে চড়ে দাঁড়ালো। তার অশান্ত হৃদয়। মুখে ফুটে উঠেছে দুশ্চিন্তার রেখা। সে কিছুটা মৌন থেকে বললো– মীরাতের কি অবস্থা? ঘুম থেকে উঠেছে?

আরিশা মাথা দু পাশে নাড়িয়ে উত্তর দিলো– সেন্স ফেরার কিছুক্ষণ পর ঘুমিয়ে গেছে। এখনো ঘুমিয়েই আছে।

আহিয়াদের কপাল কুঁচকে গেলো। কপালের রগগুলো স্পষ্ট দৃশ্যমান।সে ভাবভঙ্গি বজায় রেখে বললো – ওহহ আচ্ছা। হয়তো ইনজেকশনের কারণে ঘুমাচ্ছে। শোন খেয়াল রাখিস। আর কোনো অসুবিধা হলে বড়দের কাউকে ডাক দিস।

আরিশা মাথা দুলিয়ে সায় দিয়ে বললো – ঠিক আছে ভাইয়া।

আহিয়াদ টাউজারের পকেটে হাত পুরে নিজের নির্ধারিত রুমে যাবে এমন সময় ডেকে উঠলো আরিশা।

– ভাইয়া একটা কথা বলার ছিলো।

আহিয়াদ সহসা থেমে গেলো। পিছু ফিরে ভ্রুযুগল কুঁচকে গম্ভীর কণ্ঠে শুধালো – কি কথা?

আরিশা বলবে কি বলবে না ভাবতে লাগলো? বলায় যায়। অন্তত ক্লিয়ার তো হবে বিষয়টা। না হলে রাতে তার ঘুম হবে না। মীরাতের থেকেও তো এখন সে কিছু জানতে পারবে না।

– ভাইয়া মহিলাগুলোর কি খবর? ওরা কি কিছু স্বীকারোক্তি দিয়েছে?

– হুমম দিয়েছে। পুলিশকে বলেছে তাদের ইনটেনশন ছিলো শুধু মুখে চুনকালি দেওয়া। এটা শুনেই স্পিসলেস হয়ে গেছি। মহিলাগুলোর চিন্তাধারা খুবই নিম্ন।

– তাহলে মীরাতের গলায় কিসের দাগ?! মনে হচ্ছে কেউ চেপে ধরে ছিলো। ওই মহিলাগুলো মিথ্যে বলছে ভাইয়া। হয়তো ওদের মাঝে কেউ এই জঘ ন্য কাজটা করেছে অথচ স্বীকার করছেনা।

আহিয়াদ সোজা হয়ে দাঁড়ালো। আরিশার কথা শুনে চিন্তার ভাজ পরলো কপাল জুড়ে। গাম্ভীর্য ভাব ভেঙ্গে উচ্চস্বরে বললো– হোয়াট? গলায় কালসিটে?

আরিশা তড়িঘড়ি করে বললো– হুম। আমি সত্যি বলছি। তুমি দেখতে পারো।

আহিয়াদ গম্ভীর মুখে আরিশার রুমে প্রবেশ করলো তখনি। সে চঞ্চল পায়ে এগিয়ে গেলো বিছানার দিকে। আরিশা ও পিছু পিছু ছুটলো। আহিয়াদ তন্দ্রাচ্ছন্ন মীরাতের মুখপানে দৃষ্টি ফেললো। আঁচড়ের দাগগুলি দেখে সে দীর্ঘ শ্বাস ফেললো। দৃষ্টি সরিয়ে একবার গলদেশে দেখলো। গলায় কালসিটে পরে আছে। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে স্থানটি দেখলো। দেখেই বোঝা যাচ্ছে কেউ সজোরে মীরাতের গলা চেপে ধরে ছিলো।সে দৃষ্টি সরিয়ে নিলো। এতোটা নির্দয়ভাবে কেউ গলা চেপে ধরে? উফ আর ভাবতে পারছেনা।

আহিয়াদ কখনো কাউকে নিয়ে এতোটা সিরিয়াস হয়নি। কারো জন্য কখনো এতোটা বিচলিত হয়নি। তবে আজ সে অধিক বিচলিত। মাথায় কয়েকদিন ধরেই মীরাতের ভাবনা ঘুরছে। প্রথম দেখা হওয়া থেকে শুরু করে আজ অব্দি যত ঘটনা ঘটেছে সবগুলো মস্তিষ্কে ঘুরপাক খাচ্ছে একের পর এক। আহিয়াদ নিজের আচরণে অতিশয় বিস্মিত। একটা মেয়ের জন্য আজ সে দুশ্চিন্তা করছে আবার মনটাও অশান্ত। অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে তার। এই অনুভূতি তার কাছে অজানা। ছাব্বিশ বছরের জীবনে কখনো সে এই নাম না জানা অনুভূতির সম্মুখীন হয়নি। তবে হঠাৎ এই অনুভূতির আবির্ভাব কিভাবে ঘটলো?

আরিশা আহিয়াদকে গভীর চিন্তায় মগ্ন দেখে ডেকে বললো– ভাইয়া!!

আহিয়াদের গভীর ভাবনার ইতি ঘটলো।সে নড়ে চড়ে আরিশার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো – হুম বল।

আরিশা শক্ত কন্ঠে বললো– তুমি এক্ষুনি পুলিশকে কল করে বলবে মহিলাগুলো মীরাত কে মা র্ডার করতে চেয়েছিলো।

আহিয়াদ কপালে আঙুল ঘষে সন্দিহান কন্ঠে বললো– আমার মনে হচ্ছে এটা কয়েকদিন আগের আঘা ত।আই মিন টু সে তিন-চারদিন আগের হয়তো।

আরিশা চিন্তিত হলো। সে চিন্তিত মুখে বললো – তাহলে কে এই কাজ করেছে? চাচী? উহু। মীরাতের জল্লা’দ চাচা চাচী? নাহ তাদের এতো সাহস নেই। অত্যা’চার করলেও দাদাজানের ভয়ে গায়ে হাত দেয় না।তবে কে হতে পারে?

আহিয়াদ কনফিডেন্টের সাথে গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠলো – ইফতি।

আরিশা আশ্চর্যিত হয়ে তাকালো আহিয়াদের দিকে। দৃষ্টি সন্দিহান। ইফতির নাম কীভাবে জানলো?তার মনে পরে একদিন আগের কথা। মুন্সী সাহেব মীরাতের বাড়িতে গিয়েছিলেন। সেদিন মীরাত নিজ মুখে বিয়ের আসরে না আসার কারণ বলেছিলো। মুন্সী সাহেব সেদিন থেকেই আপসেট হয়ে থাকেন।মীরাত তাকে কি বলেছে তাদের বাড়ির সকলের অজানা। শুধু সে, মুন্সী সাহেব আর মীরাতের মা জানে।

আরিশা জিজ্ঞেস করলো – তুমি ইফতির নাম কীভাবে জানো?

আহিয়াদ কপাল কুঁচকে বললো– সরকারী চাকুরীজীবি যে কান্ড ঘটিয়েছে পুরো কাহিনী আমার জানা। তাহলে নাম কেনো অজানা থাকবে?

আরিশা সন্তুষ্টজনক উত্তর না পেয়ে আমতা আমতা করে বললো–ওহহ।

আহিয়াদ হঠাৎই প্রশ্ন করে বসলো– ইফতির নামে কেস করা হয়েছে?

আরিশা মুখ গোমড়া করে বললো– নাহ।

আহিয়াদের চোয়াল শক্ত হলো। বিরক্ত হলো মীরাতের ওপর। দেশে কি আইন কানুন সব হাওয়া হয়ে গেছে? আবেগের বশে একজনের ভালোবাসায় অন্ধ হয়ে সুই সাইড করতে গিয়েছিলো। চোখের সামনে নিজের সাথে অন্যায় হতে দেখেও আইনের সাহায্য নিলো না? বোকা মেয়ে।

আহিয়াদ বিরবির করে বললো– ষ্টুপিড গার্ল।

মীরাতের ঘুম ভেঙ্গেছে কথোপকথনের আওয়াজে
। অনেকক্ষণ ধরেই শুনছে সে। ঘুমের ঘোরে আরিশার কন্ঠস্বর অনুধাবন করতে পারলেও পুরুষালী গুরু গম্ভীর কন্ঠস্বরের মালিককে চিনতে পারলো না। পিটপিটিয়ে চাইলো সে। আশেপাশে তাকিয়ে বুঝতে পারলো সে তার রুমে নেই।রুমটা আরিশার। দুর্বলচিত্তে শোয়া থেকে উঠে বসলো মীরাত। দুহাতে ভর করে হেলান দিয়ে বসলো সে। মুখে বিভিন্ন স্থানে জ্ব লুনি অনুভব হওয়ায় হাত দ্বারা স্পর্শ করলো সেথায়। ব্য থায় চোখ মুখ সংকুচিত করে মৃদু আর্ত’নাদ করে উঠলো। আহিয়াদ আর আরিশা তখুনি মীরাতের দিকে তাকালো। দেখলো মীরাত চোখ মুখ খিঁচে বসে আছে।

আরিশা গিয়ে মীরাতের পাশে বসে ভয়া’র্ত ভঙ্গিতে বললো– কি হয়েছে?

মীরাত ব্যথা’তুর কন্ঠে বলে উঠলো – ব্য থা লেগেছে।

– ওই শাঁক’চুন্নি মহিলাগুলো নখ মনে হয় কোনোদিন কাটেনা। একদম পাগল বিল্লির মতো আঁচড়ে দিয়েছে। মুখে হাত দিস না আমি মলম লাগিয়ে দিয়েছি। ব্য থা রাতের মধ্যেই কমে যাবে।

মীরাত মুখ থেকে হাত নামিয়ে কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে বললো – হুমম। কিন্তু আমি এই বাড়িতে কেনো?

আরিশা কিছু বলবে তার আগে আহিয়াদ গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠলো – আমি নিয়ে এসেছি।

মীরাত কন্ঠস্বর অনুসরণ করে সামনে দন্ডায়মান গুরু গম্ভীর মানবটিকে দেখলো।তার দিকে শান্ত ফেলে তাকিয়ে আছে। মীরাত আহিয়াদকে সামনে দেখে চমকে কম্বল জড়িয়ে নিলো শরীরে।

– আপনি কীভাবে নিয়ে এসেছেন?

মীরাতের কন্ঠে দ্বিধাদ্বন্দ্বের আভাস পেলো সে। হয়তো সংকোচবোধ করছে। তবুও সত্যটাই বলবে সে।

আহিয়াদ স্বাভাবিক ভাবে বললো– কোলে তুলে নিয়ে এসেছি।

মীরাত চোখ বড় বড় করে আহিয়াদের দিকে তাকালো। স্তম্ভিত হয়ে গেছে সে। অস্বস্তি হচ্ছে তার। লজ্জাও লাগছে বটে। অচেনা একটা ছেলে কিনা তাকে কোলে তুলে নিয়ে এসেছে ভাবতেই গাল গরম হয়ে এলো। অস্বস্তিতে হাসফাস করতে লাগলো সে।মীরাত সন্তর্পণে চোখ নামিয়ে নিলো লজ্জায়। অথচ আহিয়াদ শান্ত আর স্বাভাবিক। এমন ভাব করে দাঁড়িয়ে আছে যেনো কিছুই হয়নি।

আহিয়াদ মীরাতকে অস্বস্তিতে ফেলতে চাইলো না আর। সে আরিশাকে উদ্দেশ্য করে বললো – তোর ফ্রেন্ডকে খাবার খাইয়ে ঔষধটা খেতে বলিস। ব্য থা কমে যাবে।

– ঠিক আছে।

আহিয়াদ আর এক মুহুর্ত দেরি করলো না সেখানে দ্রুত পায়ে আরিশার রুম থেকে প্রস্থান করলো। মীরাত চোখ উঁচিয়ে একপলক আহিয়াদের দিকে তাকালো।

★★

আহিয়াদ নিজ রুমে প্রবেশ করে দরজা আঁটকে দিলো। রুমের লাইট অন করে টাউজারের পকেট হতে ফোনটা ছুড়ে ফেললো বিছানায়। সে এগিয়ে বিছানার বাম পাশে বসলো মাথা নিচু করে। মন মেজাজ কোনোটাই ভালো নেই। বিরক্ত, দুশ্চিন্তা মিলিয়ে মাথা হ্যাং হয়ে যাচ্ছে। বক্ষ মাঝে অশান্ত হাওয়া বইছে। বারবার আজকের সন্ধ্যার ঘটনা মনে পরছে। মনে পরতেই মহিলাগুলোর ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে যাচ্ছে সে। কল বেজে চলেছে তার। আহিয়াদ বিরক্তির সহিত ফোন স্কিনে তাকালো। জেনির নাম দেখে বিরক্তির মাত্রা বাড়লো। সে কল রিসিভ করলো না। বেশ কয়েকবার কল আসায় ফোন সাইলেন্ট করলো সে।

আহিয়াদ উঠে দাঁড়ালো। ডিভানের পাশে থাকা গিটারটা হাতে তুলে নিলো সে। বৃষ্টিস্নাত রাতে মন ভালো করার জন্য গিটার আর গান একদম পারফেক্ট। তখনই চোখ পরলো ডিভানের ওপর অযত্নে পরে থাকা সাদা শার্টের দিকে। শুধু সাদা শার্ট নয় কারো মুখের কলঙ্কের দাগ লেপ্টে আছে তার শার্টে জুড়ে। কাউকে ভালোবেসে ঠকলে বুঝি একটা মেয়েকে এই ভাবেই চরম অপমানিত হতে হয়? ভাবতেই তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলো আহিয়াদ। সে গিটার রেখে শার্টটা হাতে নিয়ে দুহাতে মেলে সামনে ধরলো। কালো রঙে চোখ বুলিয়ে নিলো একবার। চক্ষু পটে ভেসে উঠলো মীরাতের কাতর কন্ঠে বলা কথাগুলো। মেয়েটা কথা সম্পূর্ণ করার আগেই লুটিয়ে পরেছিলো তার বক্ষে। একটা আফসোস তার রয়েই যাবে আরেকটু আগে কেনো তারা পৌঁছালো না মীরাতের বাড়িতে?তাহলে তো এতো কিছু হতো না। কিছুটা সময় পর শার্টটা গুছিয়ে কাবার্ডের এককোনায় রেখে দিলো আহিয়াদ। লম্বা শ্বাস টেনে গিটার হাতে বিছানায় বসে পরলো।

[আজকের পর্ব কেমন হয়েছে সকলে জানাবেন। ]

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here