#অব্যক্ত প্রেমাসুখ❤️🔥
#আদ্রিতা নিশি
২৭.
[কপি করা নিষিদ্ধ ❌]
শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে রুম জুড়ে। তওহীদ সাহেব রেগেমেগে অস্থির। নিহাল তওহীদ সাহেবকে শান্ত করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। মিনহাজ সাহেব মাথা নিচু করে বসে আছেন একটা চেয়ারে। লজ্জাজনক পরিস্থিতিতে পড়েছেন তিনি। তিনি ভেবে পাচ্ছেন না ভিডিওটা কীভাবে আহিয়াদের হাতে পৌঁছাল। কে এই ভিডিও দিল। আহিয়াদ রুমের দরজা খুলে প্রবেশ করল তখনি। তার সাথে জেহফিল আর জেনি ও প্রবেশ করেছে। জেনি রুমে প্রবেশ করতেই মিনহাজ সাহেবকে দেখে চমকে গেল। পা বাড়িয়ে সে বাবার কাছে গেল।
মিনহাজ সাহেব কারও উপস্থিতি বুঝতে পেরে চোখ উঁচিয়ে সামনে তাকায়। জেনিকে কাচুমাচু ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে চোয়াল শক্ত হয়ে যায়। কাঠিন্য স্বরে বলে উঠেন;
“ তুমি এখানে কি করছো?”
জেনি কঠিন কন্ঠ শুনে ভয় পেয়ে যায়। আমতা আমতা করে বলে;
“ আহিয়াদ আমায় ইনভাইট করেছিল। ”
“লজ্জা করছে না তোমার? ইনভাইট করেছে তাই আমাদের না জানিয়ে চলে আসবে?”
“ আ’ম সরি। ”
মিনহাজ সাহেব আর কিছু বললেন না। চুপচাপ বসে রইলেন। আহিয়াদ তার বাবার কাছে যায়। নিচু স্বরে কিছু একটা বলতেই তওহীদ সাহেব পাঞ্জাবির পকেট হতে কল করল কাউকে। প্রায় দু’মিনিট কথা বলে যথাস্থানে ফোন রেখে মিনহাজ সাহেবের সামনে এসে দাঁড়ায়। গমগমে কন্ঠে প্রশ্ন করে;
“মিস্টার মিনহাজ আজ থেকে বিজনেসে আপনার সাথে আমার পার্টনারশিপ চুক্তি ক্যান্সেল করলাম। আপনি যে এই পার্টনারশিপের পেছনে আমার তিলে তিলে গড়ে তোলা ব্যবসার সাম্রাজ্য দখল করার মতলব করেছিলেন এটা জানার পর থেকে স্পিসলেস হয়ে যাচ্ছি। এই কাজটা যেন সহজ হয় তাই আহিয়াদের সাথে জেনির বিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। এতো বড় গেম খেললেন অথচ আমি বুঝতে পারলাম না।কেনো এমনটা করলেন? ”
মিনহাজ সাহেব অনুতপ্ত হয়ে বললেন ;
“ আই অ্যাম সরি মিস্টার তওহীদ। আমি এমনটা করতে চাইনি তবুও করে ফেলেছি। এখন নিজের কাজে নিজে লজ্জিত বোধ করছি। আপনার কোম্পানি বেশ কয়েক বছর ধরে বড় বড় কোম্পানির থেকে অর্ডার পাচ্ছিল। এই কারণে আমার কোম্পানীর বড় লস হয়। কেউ আমার কোম্পানির সাথে ডিল করতে চাইছিল না।এতে কর্মচারীদের বেতন দিতে পারছিলাম না। এমন ভাবে বেশ কয়েক মাস চলতে থাকে।তবে আমি এসব মেনে নিতে পারছিলাম না। এরপর একদিন আহিয়াদকে আমাদের বাড়িতে দেখি। যেহেতু আপনি বড় বিজনেসম্যান তাই আপনার পরিবারের সকলকে চিনতাম। আহিয়াদকে সেদিন চিনতে পেরেছিলাম।তারপর প্ল্যান করতে থাকি। জেনিকে এই প্ল্যানে সামিল করি। সেও আমার কথা রাখতে রাজি হয়ে যায়। তারপর বিয়ের কথা আপনাকে জানালাম। সকলে রাজি হয়ে গেলেন। কিন্তু হঠাৎ জেনি এসে বলে সে সত্যি আহিয়াদকে ভালোবেসে ফেলেছে। সে চায় না আপনার কোম্পানিকে ডাউন করতে। আমি তবুও ব্ল্যাকমেইল করে অভিনয় চালিয়ে যেতে বলি। জেনিকে বলেছিলাম যদি আমার কথামতো কাজ না করে তাহলে বিয়ে ক্যান্সেল করে দিব। সেই ভয়ে এতোদিন চুপচাপ থেকেছে। আমার মেয়ের কোনো দোষ নেই। ”
জেনি আতংকিত হয়ে গেল। সে ভয়ার্ত দৃষ্টি ফেলল আহিয়াদের দিকে। আহিয়াদ মুষ্টি বদ্ধ করে রক্তচক্ষু চাহনিতে তাকিয়ে আছে মিনহাজ সাহেবের দিকে। এই চাহনি যেন হিংস্রতার প্রকাশ। বাঘের মতো যে কোনো সময় হামলে পড়বে শিকারের দিকে। জেনি ঢোক গিলে। তওহীদ সাহেবের সামনে নতজানু হয়ে দাঁড়ায়। ভয়ার্ত ভঙ্গিতে বলে উঠল ;
“ আংকেল আমাদের ক্ষমা করে দিন। আমি জানি ভুল করেছি,মিথ্যা বলেছি, আপনাদের ঠকিয়েছি। তবে এতো মিথ্যার মাঝেও একটা সত্যি আছে আমি আহিয়াদকে ভালোবাসি। আপনি এটা বিশ্বাস করবেন কিনা জানি না, যদি আহিয়াদের সাথে আমার বিয়েটা হতো তাহলে কখনো আমি আপনাদের কোম্পানির ক্ষতি হতে দিতাম না। বাবার কথা মানতাম না। ”
তওহীদ সাহেব গম্ভীর মুখে শুনল। তবে প্রতিত্তোর করল না। জেনি একটু থেমে আবারও বলে ;
“ সব সত্যি আপনার সামনে। এখন আপনি আমাদের পুলিশে দিতে চাইলে দিতে পারেন। ”
আহিয়াদ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠল ;
“একজন ঠকবাজের মুখে ভালোবাসার কথা মানায় না। তোমায় ফ্রেন্ড ভাবতেও আমার ঘৃণা হচ্ছে। আমি আগেই বুঝতে পেরেছিলাম এমন কিছু চলছে তোমাদের মাথায়। আজ তা প্রমাণ ও করে দিলাম। থ্যাংকস টু জেহফিল। ওর জন্য এই ভিডিওটা আমার হাতে। ”
জেনি অবিশ্বাস্য চাহনিতে জেহফিলের দিকে তাকায়। সে অবাক হয়েছে জেহফিল ও আহিয়াদের সাথে আছে। তবে কীসের ভিডিও এটা?সে কৌতূহল মেটাতে জিজ্ঞেস করে;
“ কিসের ভিডিও? ”
জেহফিল তাচ্ছিল্যের হাসি হাসে। হাসি বজায় রেখে ত্যাছড়া ভঙ্গিতে বলল ;
“ মিস্টার ইশরাক হোসেন আর তোমার বাবা আহিয়াদের কোম্পানি হাতিয়ে নেওয়ার জন্য যে গোপন ডিল করেছিল সেই ভিডিও। ”
জেনি আতংকগ্রস্থ হয়ে বলল;
“ তুমি কিভাবে জানলে। ”
“কারণ ভিডিওটা আমি করেছিলাম। মনে পড়ে তোমার বাড়িতে একদিন বিকেলে এসেছিলাম। সেদিন ফোনে কথা বলার জন্য বিকেলে ছাঁদে যাই। গিয়ে দেখি কোম্পানি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। আমি নিচে আসবো এমন সময় তওহীদ আংকেলের কোম্পানির নাম শুনে থেকে যাই। ভালোভাবে কথাগুলো শুনে বুঝতে পারি “ এটিএফ গ্রুপ অফ কোম্পানি ” হাতিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা চলছে। আমি ভিডিও করি। তারপর কাজের বাহানা দিয়ে হোটেলে গিয়ে ভিডিও পেনড্রাইভে সংরক্ষণ করি। ফোন থেকে ডিলিট করি এরপর। এটাই ভুল হয়েছিল। সেদিন রাতে খবর আসে আমার মম খুব অসুস্থ। দ্রুত ফিরতে হবে।আমার কাছে তোমার ল্যাপটপ ছিল। সেটা তোমায় রাতে ফেরত দিয়ে ভোরের ফ্লাইটে চলে যাই। সেই ল্যাপটপের সাথে পেনড্রাইভটা ছিল। মমের অসুস্থতার জন্য তা ভুলে গিয়েছিলাম। তারপর একদিন আহিয়াদ কল করে তোমার বিষয়ে অনেককিছু জিজ্ঞেস করল। সেদিন বলে দিয়েছিলাম সেই ঘটনা। তারপর আবারও আসলাম সেই পেনড্রাইভ তোমার থেকে নিয়ে আহিয়াদকে দিলাম। একটা কথা কি জানো, এখন প্রমাণ ছাড়া কেউ কোনো কথা বিশ্বাস করে না। ”
“তারমানে এসবে তুমি ইনভলভ ছিলে?”
“ হুমম”।
জেনি ধপ করে বসে পড়ল মেঝেতে। তার মস্তিষ্কশূণ্য। আহিয়াদের ফ্যামিলিকে ধোকা দেওয়া উচিত হয়নি। সে তো বাবার কথায় কাজটা করেছে। ভালোবাসার মানুষটিকে পাওয়ার জন্য কাজটা করেছে। কিন্তু এতোকিছু করেও কোনো লাভ হয়নি। অবশেষে সবাই সবটা জেনে গেল। তার সত্য ভালোবাসাও সকলের চোখে ছলনায় পরিচয় পেলো। কারো ক্ষতি চাইলে নিজের ক্ষতি হয় এটা সত্যি। আজ জলজ্যান্ত প্রমাণ পেলো সে। হু হু করে কেঁদে উঠল জেনি। অনুশোচনায় দগ্ধ হয়েছে সে। সে ভুল, তার ভালোবাসা পাওয়ার পন্থা ভুল, বাবার কথায় সায় দিয়ে তার ভুলে হয়েছে।
তওহীদ সাহেব ইশরাক হোসেনের কথা শুনে আশ্চর্য হয়েছেন।ইশরাক হোসেন তার বিশ্বস্ত একজন কর্মচারী। তিনি কোম্পানীর অধিকাংশ খবরাখবর জানেন। তারমানে এতোদিন কোম্পানির সকল তথ্য মিনহাজ সাহেবকে দিচ্ছিলেন। ভাবতেই রাগে গমগম করতে লাগল।
আহিয়াদ তওহীদ সাহেবকে উদ্দেশ্য করে বললেন;
“ ইশরাক হোসেন তোমার পার্সোনাল এসিস্ট্যান্ট তাই না?”
তওহীদ সাহেব গম্ভীর কণ্ঠে বললেন ;
“হুমম।”
আহিয়াদ চোয়াল শক্ত করে কাঠিন্যতা নিয়ে বলল;
“ইফতির বাবা ইশরাক হোসেন। আবারও ইফতির সাথে সম্মুখীন হওয়ার সময় এসে গেছে। এইবার বুঝলাম ইফতি কার স্বভাব পেয়েছে। ছেলে একটা ক্যারেক্টারলেস আর বাবা একটা ফ্রড। একদম পারফেক্ট ফ্যামিলি ক্যারেক্টার কম্বিনেশন। শ্লা কু..র জাত। ”
নিহালের ফোনে কল আসলো এর মাঝেই। সে তাড়াহুড়ো করে কথা শেষ করল। কয়েক পা এগিয়ে এসে আহিয়াদের কাঁধে হাত রেখে শান্ত কন্ঠে বলে ;
“বাহিরে পুলিশ এসেছে। ইশরাক হোসেনকে গ্রে’ফতার করছে। মিনহাজ সাহেবকে গ্রে’ফতার করবেন। উনাকে নিয়ে যেতে বললেন। ”
উক্ত কথাটি শোনা মাত্রই মিনহাজ সাহেব দ্রুত দরজা খুলে বাহিরে চলে গেলেন। সবাই হতবাক হয়ে গেল। আহিয়াদ, তওহীদ সাহেব আর নিহাল পিছুপিছু ছুটলো।
জেনি পুলিশ আসার কথা শুনে আরও জোরে জোরে কাঁদতে লাগল। আজ তাদের ভুলের জন্য সবকিছু শেষ হয়ে গেছে। আজ যদি তারা প্রতারণার রাস্তায় না থাকতো তাহলে সবকিছু অন্যরকম হতো। জেহফিলের হঠাৎ খারাপ লাগছে জেনির কান্না দেখে। সে দুকদম এগিয়ে হাঁটু গেড়ে বসল জেনির পাশে। দৃঢ় দৃষ্টিতে তাকাল কন্দনরত রমণীর মুখপানে।শান্ত কন্ঠে বলল;
“আজ আবারও কাঁদছো। কিন্তু আমার সাধ্য নেই তোমার চোখের পানি মুছিয়ে দেওয়ার। ”
জেহফিলের শীতল কন্ঠস্বর কর্ণকুহরে প্রবেশ করতেই জেনি চমকে তাকায়। কান্না বন্ধ হয়ে যায় তার। কৌতুহলী চোখ জেহফিলের দিকে নিবদ্ধ। কম্পনরত কন্ঠে বলে ;
“এসব কি বলছো জেহফিল?”
জেহফিল কন্দনরত মুখশ্রীতে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে বলল;
“আহিয়াদকে পাওয়ার আনন্দে কেঁদেছিলে। আজ সবকিছু হারিয়ে কাঁদছো। অথচ আমি গত দুবছর থেকে কাঁদছি। সেই কান্না কেউ দেখেনি,সেই আহাজারি কেউ শোনেনি। শুধু আমি গুমরে গুমরে ম’রছিলাম। তুমি বলেছিলে আহিয়াদকে তুমি ভালোবাসো। সেদিন আমি থমকে গিয়েছিলাম। আমার সমস্ত জগত থমকে গিয়েছিলো। জানো যেদিন তুমি সেই কথা বলেছিলে আমায়, সেদিন আমি তোমায় বিয়ের প্রপোজাল দিতে এসেছিলাম। অথচ তুমি আমায় তার আগেই সারপ্রাইজ দিয়ে দিয়েছিলে। আমি কিছু বলিনি, বুঝতেও দেইনি আমি তোমায় ভালোবাসি। সেই ভগ্ন হৃদয় নিয়ে এতোটা দিন নিজেকে স্বাভাবিক রেখেছি।চুপচাপ সরে গেছি তোমায় আমার অনুভূতি বুঝতে দেইনি।”
“আমায় ভালোবাসো?এটা কীভাবে সম্ভব!তুমি তো আমার ফ্রেন্ড। ”
“চার বছর আগে থেকে তোমায় ভালোবাসতাম। তবে এখন হয়তো আর বাসি না। চেয়েছিলাম তুমি তোমার ভালোবাসার মানুষকে নিয়ে সুখে থাকো। কিন্তু তোমার প্রতারণার জন্য তাকে হারিয়ে ফেললে। ভালোবাসার মানুষকে কখনও পণ্যের সাথে তুলনা করো না। ভালো থেকো। ”
জেহফিল উঠে দাঁড়ায়। দ্রুততার সহিত সে রুম থেকে বেড়িয়ে যায়। জেনির চোখ টলমল করছে। কন্দনরত কাতর কন্ঠে বলল;
“যে আমায় চেয়েছে আমি তার হইনি। আর আমি যাকে চেয়েছি তাকে আমি পাইনি। ”
★★
“আপনার চোখ লাল কেনো? আপনি কি কাঁদছেন? ”
সুমধুর কন্ঠস্বর শুনে জেহফিল সরু চোখে সামনে তাকায়। ফাবিহাকে দেখতে পায় সে। তবুও প্রতিক্রিয়াহীন চুপচাপ দ্বিতীয়তলার করিডোরে দাঁড়িয়ে থাকে। ফাবিহা বেশ অবাক হয় এমন আচরণে। কিছুক্ষণ আগেও যে মানুষটি তার সাথে একরকম ঝগড়া করছিল এখন সে একদম নিশ্চুপ। ফাবিহা দুহাতে লেহেঙ্গা ধরে এগিয়ে আসল জেহফিলের দিকে। সামনাসামনি দাঁড়িয়ে ভ্রু বাঁকিয়ে জিজ্ঞেস করল;
“ এতো চুপচাপ কেনো? গার্লফ্রেন্ডকে মিস করছেন? ”
জেহফিল সামনের দিকে তাকিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বলল;
“আমাকে ডিস্টার্ব করো না। তুমি চলে যাও। ”
ফাবিহা অবাক হয়ে বলল;
“ আমি আপনাকে কখন ডিস্টার্ব করলাম। আপনার কি হয়েছে জিজ্ঞেস করেছি শুধু।”
“একা থাকতে দাও প্লিজ। ”
“একাই তো আছেন। এবার বলুন আপনার চোখ লাল কেনো লাল পানি খেয়েছেন নাকি। ”
“ একদম চুপ করো বেয়াদব মেয়ে। আমি ওসব ছুঁয়েও দেখি না। তোমায় বলছি আমায় একা থাকতে দিতে অথচ তুমি বাচালের মতো কথা বলেই চলেছো।”
জেহফিলের রাশভারি গলার ধমকে ফাবিহা ভয় পেয়ে যায়। ভয়ে কান্না করে দেয় তখনই। জেহফিলের মেজাজ বিগড়ে যায়। দাঁতে দাঁত চেপে নিজেকে শান্ত করে বলে ;
“ আমার সামনে নাক টেনে টেনে কাঁদবে না। কান্না থামাও। ”
ফাবিহার রাগ হয়।কিন্তু প্রকাশ করে না। কন্দনরত কন্ঠে বলল;
“ আপনি একটা বদ লোক। ”
“ আই নো। এবার চুপ করো আর নিচে যাও। ”
“ অভদ্র লোক আপনি। আমি এখানেই থাকব। আপনি এখানে না থাকতে চাইলে চলে যান। ”
“ এতো জেদ। ”
“ হ্যা। আমার অনেক জেদ। ”
জেহফিল দীর্ঘ শ্বাস টানে। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকায় ফাবিহার দিকে। কাঁদতে কাঁদতে চোখ লাল করে ফেলেছে। চোখের কাজল চোখের পানিতে ধুয়ে গাল বেয়ে পড়ছে। কিছুটা খারাপ লাগল জেহফিলের। শান্ত কন্ঠে বলে ;
“ আমার চোখ লাল হওয়ার কারণ ভালোবাসা আর ঘৃণার প্রতিফলন। যাকে ভালোবাসতাম তাকে কি সহজে ঘৃণা করা যায়?”
ফাবিহা এহেন কথা শুনে কান্না বন্ধ করে দেয়। অশ্রু ভেজা চোখে অবিশ্বাস্য ভঙ্গিতে জেহফিলের দিকে তাকায়। বিস্মিত কন্ঠে বলে;
“ আপনার মতো কাঠখোট্টা মানুষেরও গার্লফ্রেন্ড আছে?”
জেহফিল অদ্ভুত হেসে বলল ;
“একতরফা ভালোবাসা বোঝো? সেই একতরফা ভালোবাসার দহনের পুড়েছি। ”
“তাহলে তাকে বলছেন না কেনো?”
“কারণ এখন তাকে ভালোবাসি না।”
“আপনার কথা বুঝতে পারছি না।কি বলতে চাইছেন?”
“সে অন্য কাউকে ভালোবাসে। ”
“ এই কারণে তাকে ঘৃণা করেন? ”
“ নাহ। সে প্রতারণা করেছে। ”
ফাবিহার কিছু মাথায় ঢুকছে না। কে প্রতারণা করেছে। বেশ কিছুক্ষণ ভেবেও বুঝতে পারল না। আমতা আমতা করে বলল ;
“আসলে বুঝতে পারছি না আপনি কি বলছেন। ”
জেহফিল গম্ভীর কণ্ঠে বলল;
“ বুঝতে হবে না। ”
ফাবিহা বিরবির করে বলল ;
“আমার কপালে যেন একতরফা ভালোবাসার কাহিনী না ঘটে। ”
জেহফিল শুনল। প্রতিত্তোর করল;
“ এরেন্জ ম্যারেজ করে নিও তাহলে এসবের চক্করে পরবে না।”
ফাবিহা চমকে উঠে। নিজেকে স্বাভাবিক করে বলে;
“ এটাই ভালো আইডিয়া। আপনিও আর ওই একতরফা ভালোবাসার চক্করে পরবেন না। মায়ের পছন্দ মতো সুন্দরী মেয়ে দেখে বিয়ে করে ফেলুন। আর শুনুন এমন মনমরা, লাল চোখ দেবদাসকে মানায় কিন্তু আপনাকে মানায় না। আপনাকে ঝগড়ুটে, কাঠখোট্টা, গম্ভীর রুপে ভালো লাগে। সেই রুপে ফিরে আসুন দ্রুত। ”
ফাবিহা কথাটা বলেই তড়িঘড়ি করে সেখান থেকে চলে গেল। জেহফিল বিস্মিত হয়ে ঠায় হয়ে সেখানেই দাঁড়িয়ে রইল। এই মেয়ে একটু আগেই কাঁদছিল অথচ এখন এডভাইস দিয়ে চলে গেল। অদ্ভুত মেয়ে।
[আজকের পর্ব কেমন হয়েছে সকলে জানাবেন। ]
চলবে….