অব্যক্ত প্রেমাসুখ❤️‍🔥 #আদ্রিতা নিশি ২৯.

0
123

#অব্যক্ত প্রেমাসুখ❤️‍🔥
#আদ্রিতা নিশি
২৯.

[কপি করা নিষিদ্ধ ]

ডিসেম্বরের মধ্যভাগ। এর মাঝেই শীতের বেশ উপদ্রব দেখা দিয়েছে শহর জুড়ে।কুয়াশা যেন শহরের উপর তার শুভ্র চাদর মেলে ধরেছে। কুয়াশার আঁচলে ঢাকা প্রভাত সূর্যের আলোকে যেন অনুজ্জ্বল করে তুলেছে, তবুও সে আলোয় আছে স্নিগ্ধতা। শহরের ব্যস্ততা হঠাৎ থমকে গেছে এই শীতল হাওয়ার মৃদু স্পর্শে। গাছে জমে থাকা শিশিরবিন্দু সূর্যের প্রথম কিরণে মুক্তার মতো ঝলমল করে ওঠে। রাস্তাঘাটে শীতার্ত মানুষের শরীরজুড়ে উষ্ণতার খোঁজে মোটা কাপড়ের আস্তরণ। শহুরে চায়ের স্টলগুলোর ধোঁয়ার সাথে মিশে আছে শীতের সকালের গন্ধ।এই শীতের সকাল—নীরব, স্নিগ্ধ, আর গভীর।আহিয়াদের রুমে জানালার পর্দাগুলো শীতল বাতাসের স্পর্শে ধীরে ধীরে দুলছে। জানালার ফাঁক দিয়ে আসা মৃদু হাওয়া রুমের স্থিরতা ভেঙে নীরব কোলাহলের সঞ্চার তৈরি করেছে। ক্ষীণ সূর্যের আলো পর্দা ভেদ করে ঢুকছে।পর্দার দোলায় বাতাসের গতি বোঝা যাচ্ছে—না খুব জোরে, না খুব ধীরে। কখনো হালকা ঝাপটা দিয়ে থেমে যাচ্ছে, আবার একটু পর আবার নড়ছে। রুমের ভেতরে শীতের মৃদু হিমস্পর্শ সহজেই অনুভব করা যায়। চারদিকে নীরবতা, শুধু হালকা বাতাসের শব্দ আর জানালার পর্দার সাড়া।

আহিয়াদ উপুর হয়ে বিছানায় গভীর ঘুমে মগ্ন। তার এলোমেলো চুলগুলো কপালের উপর আলগোছে নেমে এসেছে। গভীর ঘুম মুখের প্রশান্তি আরও স্পষ্ট করে তুলছে। তার গায়ের উপর ঢিলে জড়ানো কম্ফর্টার তাকে শীতের মৃদু হিম থেকে আড়াল করে রেখেছে। কম্ফর্টারের একপাশ কিছুটা সরে গেছে আর তার ভেতরে আহিয়াদের গাঢ় নিঃশ্বাসের ছন্দ বোঝা যাচ্ছে।মীরাত শাওয়ার সেরে সবে রুমে প্রবেশ করেছে। ভেজা চুলে তোয়ালে জোড়ানো তার।পরনে মিষ্টি রঙের শাড়ি তার সৌন্দর্যকে আরও পরিপূর্ণ করে তুলেছে। তার মুখে প্রশান্ত ভরা মৃদু হাসি।সেই হাসিতে লজ্জার আভাও বিদ্যমান। যা স্নিগ্ধতার অদৃশ্য আভা ছড়াচ্ছে। মীরাত ধীর পায়ে হেটে এসে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়াল।শান্ত চাহনিতে আয়নার দিকে তাকালো। আয়নায় নিজের প্রতিবিম্বের বদলে তার দৃষ্টি আটকে গেল আহিয়াদের ঘুমন্ত চেহারায়। আয়নার ভেতর দেখা সেই মুখ—নির্ভার, গভীর ঘুমে ডুবে থাকা। কী অনাবিল নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে মানুষটা!হঠাৎই মীরাতের মনে পড়ে গেল গত রাতের কিছু মুহূর্ত।মনে পড়তেই লজ্জায় তার গাল লাল হয়ে উঠল, বুকের ভেতর অদ্ভুত শিহরণ খেলে গেল। আয়নার দৃষ্টি দ্রুত সরিয়ে নিয়ে সে নিজের ভেজা চুল থেকে তোয়ালেটা খুলল। তারপর এক গাঢ় নিঃশ্বাস ফেলে চিরুনী হাতে চুল আঁচড়াতে শুরু করল। প্রতিটি সুন্দর মুহুর্তে লুকিয়ে আছে দুজনের মনের আবেগের সূক্ষ্ম স্পন্দন। তার নীরবতা, লজ্জা, আর হালকা কুণ্ঠায় ঘরটাও আরও বেশি নীরব হয়ে উঠল।

মীরাত পরিপাটি হয়ে ঘড়ির দিকে তাকায়। সাতটা বেজে বিশ মিনিট। আজ অনেকটাই দেরি হয়ে গেছে উঠতে। গতকাল অনেক রাতে ঘুমানোর কারণে কখন সকাল হয়েছে বুঝতেই পারেনি। সে দ্রুত পা বাড়িয়ে বিছানার কাছে এগিয়ে যায়। আহিয়াদকে ডাকা প্রয়োজন। এক্ষুনি হয়ত কেউ ব্রেকফাস্টের জন্য ডাকতে আসবে।

মীরাত বিছানার একপাশে বসল। মৃদু স্বরে ডাকতে লাগল ;
“ আহিয়াদ উঠুন দ্রুত। আটটা বেজে গেছে। ”

মীরাত বেশ কয়েকবার ডাকল। তবুও আহিয়াদের মাঝে কোনো হেলদোল দেখা গেল না। সে তো শান্তিতে ঘুমাতে ব্যস্ত। মীরাত আহিয়াদকে হালকা ধাক্কা দিয়ে পুনরায় ডাকল ;
“ এই যে মশাই দ্রুত উঠুন। ”

আহিয়াদের ঘুম ভেঙে যায়।একটু নড়ে চড়ে উঠে। কপাল কুঁচকে যায় কিছুটা। চোখ বন্ধ করেই ঘুম জড়ানো কন্ঠে বলে উঠে;
“ প্লিজ মীরাত ঘুমাতে দাও। এমনিও রাতে ঘুম হয়নি আমার। ”

মীরাত বিরবির করে বলল;
“ এমন ভাবে বলছে যেন আমি রাতে ঘুমিয়েছি।

আহিয়াদ আবারও ঘুমিয়ে পড়েছে। মীরাত বেজায় বিরক্ত হলো। সে ভাবতে লাগল কীভাবে আহিয়াদকে জাগানো যায়। ভাবতে ভাবতে হঠাৎই তার মাথায় শয়তানী বুদ্ধির আগমন ঘটল। যেই ভাবা সেই কাজ। মীরাত মিটমিটিয়ে হেসে উচ্চস্বরে বলে উঠল ;
“ আহিয়াদ দ্রুত উঠুন। নাহলে আমার হাতে থাকা এক বালতি পানি আপনার গায়ে ঢেলে দিব। এক, দুই, তিন… ঢেলে দিলাম পানি।”

মীরাতের উচ্চকন্ঠে বলা কথাগুলো শুনেই আহিয়াদ ঘুম ঘুম চোখে হুড়মুড়িয়ে উঠে বসল বিছানায়। চোখ বড় বড় করে মীরাতের দিকে তাকাল। দেখল মীরাত হাসছে, হাত শূন্য। তারমানে তাকে দ্রুত ঘুম থেকে জাগানোর জন্য এই পন্থা অবলম্বন করেছে। ভাবতেই বাঁকা হাসল। মীরাত এই হাসি দেখে ঢোক গিললো। নিশ্চিত মানুষটার মাথায় কোনো শয়তানী বুদ্ধি ঘোরাঘুরি করছে। সে দ্রুত সেখান থেকে উঠে পালাতে যাবে ওমনি আহিয়াদ খপ করে হাত ধরে ফেলল। হেঁচকা টান দিয়ে দুহাতে আবদ্ধ করে নিল মীরাতকে। মীরাত চমকে গেল একদম। হার্ট দ্রুত বিট করা শুরু করে দিয়েছে। আহিয়াদ মুখ গুঁজে দেয় মীরাতের চুলে। চুলের ঘ্রাণ নিতে ব্যস্ত হয়ে পরে।

“তোমার চুলের মন মাতানো সুগন্ধে আমি নিজেকে হারিয়ে ফেলছি। এই মুহুর্তে নিজেকে আবারও হারিয়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে তোমার মাঝে। ”

মীরাতের কানে ভেসে এলো আবেশিত পুরুষালী কন্ঠস্বর। সেই কন্ঠে লুকিয়ে আছে ভালোবাসা, মুগ্ধতা। মীরাত কেঁপে ওঠে। কম্পনরত কন্ঠে বলে ;
“আহিয়াদ দ্রুত ফ্রেশ হয়ে নিন। ”

আহিয়াদ মীরাতকে ছেড়ে দেয়। সে বুঝতে পেরেছে মীরাত ভীষণ লজ্জা পাচ্ছে। এই কারণে তাকে বুঝতে না দিয়ে উক্ত কথা বলে স্বাভাবিক রাখতে চাইছে নিজেকে। মীরাত ছাড়া পেয়ে বিছানা ছেড়ে দাঁড়িয়ে যায়। মনে হচ্ছে হাপ ছেড়ে বাচঁলো।দীর্ঘ শ্বাস টেনে তাকায় আহিয়াদের দিকে। আহিয়াদ নিজেও বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ায়। সম্মোহনী দৃষ্টিতে অবলোকন করে বাঁকা হেসে বলে ;
“ এতো পালাই পালাই করছো কেনো বউ? ”

মীরাত লজ্জা পেয়ে যায়। এলোমেলো দৃষ্টি ফেলে তাকায় আশেপাশে। দুকদম পিছিয়ে লজ্জা আড়াল করে মুখ বেঁকিয়ে বলে;
“ কারণ আপনি একটা অসভ্য পুরুষ। ”

কথা শেষ করেই মীরাত ছুটে গেল দরজার দিকে। দরজা খুলে তড়িঘড়ি করে ছুটলো ফাবিহার রুমের দিকে। আহিয়াদ হতভম্ব হয়ে যায় মীরাতের কান্ডে।সে বুঝতে পারেনি মীরাত এই ভাবে পালাবে। সে বেশ কিছুক্ষণ দরজার দিকে তাকিয়ে থাকে। তারপর হঠাৎ ওষ্ঠ প্রসারিত করে হেসে ওঠে। সে দু হাতে এলোমেলো চুলগুলো ঠেলে ফুরফুরে মেজাজে ফ্রেশ হতে যায়।

★★

আহিয়াদের বন্ধুমহলকে গতকাল তাদের সাথে আসতে বলেছিল। আরও দুই, একদিন এসে থাকতে বলেছিল। কিন্তু পড়াশোনা শেষ করে যে যার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। ছুটিও তেমন পায়নি তাই নিজেদের কর্মস্থলে ফিরে গেছে। তাদের বন্ধুমহলের মধ্যে আহিয়াদ একটু ফ্রি। পড়াশোনা শেষ করে বাবার বিজনেসে কিছুটা মনোযোগী হয়েছে। তবে সে বহির্বিশ্বের ফ্রিল্যান্সিং প্লার্টফর্মের সাথে যুক্ত আপাতত। বেশ কিছু জায়গায় সিভি জমা দেওয়া হয়েছে। আহিয়াদ জানে এর মধ্যে কোনো এক জায়গায় নিশ্চিত জব হয়ে যাবে।

আহিয়াদ সকলের সাথে ব্রেকফাস্ট শেষ করেছে।
সে এখন জেহফিল আর নিহালের সাথে বসে আড্ডা দিচ্ছে। তওহীদ সাহেব অফিসে রওনা দিয়েছেন একটু আগেই। আরিশা আর ফাবিহা সুরমা বেগমের রুম থেকে এসে সোফায় বসল। তারা মীরাতের সাথে গিয়েছিল।মূলত সুরমা বেগম মীরাতকে ডেকেছে কিছু কথা বলার জন্য।এর মাঝেই আগমন ঘটল মীরাতের। হাতে দৃশ্যমান পুরনো ডিজাইনের এক জোড়া বালা। এই বালা ছিল আহিয়াদের দাদীর। বংশ পরম্পরায় রক্ষিত বালা শাশুড়ী তার ছেলের বউকে দিয়ে থাকে। আহিয়াদের দাদী সুরমা বেগমকে দিয়েছিল। সুরমা বেগম বালা জোড়া মীরাতকে দিয়েছে। আহিয়াদ মীরাতকে বলেছে কিছুক্ষণ পড়েই তারা ঘুরতে যাবে। কোথায় যাবে তা সম্পর্কে সে অবগত নয়। মীরাত আজ গোলাপি শাড়ি পড়েছে। সোনালি রঙের হিজাব দিয়ে মাথা আবৃত করা। সোনালি কারুকাজ করা পুরো শাড়ি জুড়ে। মীরাতের মনে পড়ে আহিয়াদ তাকে শপিংমল থেকে কিনে দিয়েছিল।

আহিয়াদ সামনে তাকাতেই দেখতে পায় মীরাতকে। ভালোভাবে খেয়াল করতেই মনে পড়ে তার এটা সে শপিংমল থেকে কিনে দিয়েছিল।সে উঠে দাঁড়ায়। সকলকে উদ্দেশ্য করে বলে ;
“পরে এসে আড্ডা দেব। আপাতত বউকে নিয়ে ঘুরে আসি। ”

জেহফিল আর নিহাল মজার ছলে একসাথে বলে উঠল ;
“ ওওওও বউ! ”

মীরাত লজ্জা পায়। আরিশা আর ফাবিহা হেসে উঠে। আহিয়াদ তাদের পাত্তা না দিয়ে ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে মীরাতের হাত ধরে মেইন দরজা খুলে বাহিরে চলে গেল। গন্তব্য তাদের অজানা। নিহাল ও তাদের পিছু পিছু গেল। তারও কাজ আছে। আরিশার কল এসেছে। দেখল তার মা কল করছে। সে কল রিসিভ করে সেখান থেকে কথা বলার জন্য রুমে চলে গেল। ফাবিহা ও গেল তার রুমে।

জেহফিল ডাইনিং রুমে একা একা বসে রইল। সময় কাটানোর জন্য পকেট থেকে ফোন বের করে স্ক্রোল করতে লাগল। বেশ মনোযোগ দিয়ে কিছু একটা দেখতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। ফাবিহা নিজের রুম থেকে একটু পরেই ছুটে আসল। ধপ করে বসে পড়ল জেহফিলের অপর পাশের সোফায়। মুঠোবন্দি হাত জেহফিলের দিকে হাত বাড়িয়ে চঞ্চল কন্ঠে বলে উঠল;
“এই নিন আপনার ভাগ।”

মেয়েলী পরিচিত কন্ঠস্বর শুনে জেহফিল ফোন স্ক্রোল করা বন্ধ করে দেয়। সরু চোখে তাকায় ফাবিহার উচ্ছ্বাস ভরা মুখের দিকে। গম্ভীর কণ্ঠে বলল;
“ কিসের ভাগ?”

ফাবিহা যেন আগ্রহ পেল। বেশ ভাব নিয়ে বলল;
“ গতকাল ভাইয়া টাকা দিয়েছিল সেই ভাগ।”

জেহফিল ভ্রূযূগল কুঁচকায়। আবারও ফোন স্ক্রোল করায় মনোযোগী হয়ে গমগমে কন্ঠে বলল;
“ এসবের কোনো প্রয়োজন নেই। তোমার কাছে রেখে দাও। আর প্লিজ আমায় ডিস্টার্ব করো না।”

ফাবিহা মুখ বাঁকায়। সে উঠে গিয়ে জেহফিলের একহাতে টাকা গুঁজে দেয়। এমন একটা দুঃসাহসিক কাজ করে বিশ্বজয়ের হাসি হাসে। সে সরে আসবে এমন সময় জেহফিল ফাবিহার হাত খপ করে ধরে ফেলে। ফাবিহা হচকচিয়ে উঠে। ভয়ার্ত ভঙ্গিতে তাকায় জেহফিলের দিকে। গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে আসছে। জেহফিল রক্তচক্ষু চাহনিতে তাকিয়ে কিড়মিড় করে বলল;
“আমাকে বারবার বিরক্ত করছো কেন?”

ফাবিহা ভয়ার্ত কন্ঠে বলল;
“আমি কোথায় আপনাকে বিরক্ত করছি।”

“আমার থেকে দূরে থাকবে একদম। আমার আশেপাশে যেন এরপর থেকে আর না দেখি। ”

জেহফিলের রাশভারি ধমকে ফাবিহা চুপসে যায়। কাঁদো কাঁদো মুখে মাথা নিচু করে তাকিয়ে থাকে মেঝেতে। টপটপ করে চোখের অশ্রু গড়িয়ে পড়তে থাকে জেহফিলের পুরুষালী হাতের উপরিভাগে। অনুভব করে শীতল অশ্রুর কণা। জেহফিল এহেন হতভম্ব হয়ে যায়। এইটুকু ধমকে মেয়েটা কেঁদে দেবে ভাবতে পারেনি। সে ততক্ষনাৎ ফাবিহার হাত ছেড়ে দেয়। ফাবিহা ধপ করে জেহফিলের পাশে বসে নিরবে অশ্রু বিসর্জন দিতে থাকে। নিরব থাকলেও একটু পর পর ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠছে বারবার। জেহফিলের মোটেও ভালো লাগলো না এই বিষয়টা। সে ভীষণ চিন্তিত হয়ে পড়ে।

জেহফিল ফোন পকেটে পুড়ে উঠে দাঁড়ায়। দীর্ঘ শ্বাস টেনে নেয়। নিজেকে স্বাভাবিক করে শান্ত কন্ঠে বলে;
“আ’ম সরি ফাবিহা। প্লিজ কেঁদো না। বেশ কয়েকদিন থেকে আমি টেনশনে আছি। মন মেজাজ কোনোটাই ভালো নেই। তার মধ্যে তুমি এমন বাচ্চামো করছো। তুমি কেনো বুঝতে পারছো না তোমাদের ফ্যামিলির কেউ যদি আমাদের দুজনকে একসাথে দেখে তখন কি ভাববে।নিশ্চয়ই ভালো কিছু ভাববে না। তোমার বোঝার যথেষ্ট বয়স হয়েছে। প্লিজ আমার থেকে দূরে থাকো।”

ফাবিহা অশ্রুসিক্ত নয়নে জেহফিলের দিকে তাকায়। তার চোখে সহস্র প্রশ্ন। এই মানুষটাকে রাগী আর কাঠখোট্টা মনে হয়। কখনো ভালো আবার কখনো খারাপ মনে হয়। তবে জেহফিল যা বোঝাতে চেয়েছে সে ভালোভাবেই বুঝেছে। সে তো ভালোভাবে টাকাটা দিতে এসেছিল। এতোকিছু তো আর ভাবেনি। এক মুহুর্তের জন্য অভিমান তাকে জেঁকে ধরে। জেহফিল তার হাতের টাকা সোফার ওপর রেখে দিল। কিছু একটা মনে করে আবার ফাবিহার দিকে তাকালো। ফাবিহার অশ্রুসিক্ত চাহনিতে নরম হয়ে গেল তার মন।সে কিছুটা উদগ্রীব হয়ে উঠল। তবে নিজেকে দমিয়ে রাখল।

“কিছু বলবে?”

জেহফিলের শান্ত কন্ঠস্বর। ফাবিহা নড়ে ওঠে। তার বক্ষ অজানা আতংককে কেপে ওঠে। অশান্ত মনে নিরব ঝড়ের আভাস পেল। সে কি সত্যি কিছু বলতে চায়? নাকি কথা বলা উচিত হবে না তার। বুঝে উঠতে পারেনা। নিরব বসে থাকে। বেশকিছুক্ষণ পর দুহাতে চোখের অশ্রু মুছে নেয়। মুখ বেজার করে নিভু নিভু কন্ঠে বলে ;
“ এতোকিছু ভাবিনি আমি। আপনি আমার কাছে একজন অপরিচিত মানুষ। আমার উচিত ছিল আপনার সাথে কথা না বলা, ডিস্টার্ব না করা ,দুরত্ব বজায় রাখা। কিন্তু কেন জানি না এক মুহুর্তের জন্য ফ্রি মাইন্ডের হয়ে গিয়েছিলাম। সেটাই ভুল হয়ে গেছে। আমাকে ক্ষমা করবেন। ”

ফাবিহার অভিমানমিশ্রিত কথা যে কারো বোঝার ক্ষমতা আছে।জেহফিল কিছুটা হলেও আন্দাজ করে। মৃদু হেসে বলল ;
“ তোমার মতো মেয়ে আমি খুব কম দেখেছি। কান্না করার কিছুক্ষণ পরেই আবার সব ভুলে কথা বলো। তুমি একদম সোফ্ট হার্টেড পারসন। এই যে রুড বিহেভ করেছি তবুও কথা বলছো। অন্যকেউ হলে তা করতো না।দুইদিন রুড বিহেভ করেছি আর করবো না। কারণ দুইদিন পর আমি সিঙ্গাপুর ব্যাক করছি।”

ফাবিহা বিস্মিত হয়। উৎকন্ঠা চেপে ধরল তাকে। তা গোপন করে শুধালো;
“ আবার কবে আসবেন? ”

জেহফিল অতি স্বাভাবিক ভাবে উত্তর দেয়;
“ হয়ত আর কখনো আসব না। হঠাৎ জিজ্ঞেস করছো কেন?”

ফাবিহার কন্ঠনালী অসম্ভব কাঁপছে। উদভ্রান্তের মতো লাগছে। নিজেকে দমিয়ে ধীর কন্ঠে বলল;
“ হঠাৎ জানতে ইচ্ছে করল। ”

[আজকের পর্ব কেমন হয়েছে সকলে জানাবেন। ]

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here