অব্যক্ত প্রেমাসুখ❤️‍🔥 #আদ্রিতা নিশি ।১১।

0
132

#অব্যক্ত প্রেমাসুখ❤️‍🔥
#আদ্রিতা নিশি
।১১।

[কপি করা নিষিদ্ধ ❌]

ফাবিহা চক্ষুযূগল ছোট ছোট করে তার পাশে বসে থাকা সাদা নীল সংমিশ্রণে থ্রি পিস পরিহিত মীরাতের দিকে তাকিয়ে আছে অনেকক্ষণ ধরে। মীরাত ফাবিহার এমন চাহনিতে অস্বস্তি বোধ করছে। নিজেকে কেমন অপরাধী মনে হচ্ছে। সুরমা বেগম টেবিলে খাবার এনে রাখছেন। তাকে সাহায্য করছে রহিমা নামের চব্বিশ পঁচিশ বছরের এক রমনী। রহিমা সব খাবার ডাইনিং টেবিলে সাজিয়ে রাখলো। সে প্লেটে খাবার পরিবেশন করতে ব্যস্ত হয়ে উঠলো।

আহিয়াদ সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে আসলো। সামনে তাকাতেই ডাইনিং টেবিলে সবাইকে বসে থাকতে দেখতে পেলো। আহিয়াদ এদিক ওদিক না তাকিয়ে সরাসরি এসে সুরমা বেগমের পাশের চেয়ারটায় বসে পরলো। ফাবিহাকে মীরাতের দিকে অদ্ভুত চোখে তাকাতে দেখে ভ্রুযূগল কুঁচকে গেলো তার। মীরাত অস্বস্তি নিয়ে আহিয়াদের পাণে তাকায়। দু’চোখে বিরাজ করছে অস্বস্তিভাব। তা বুঝতে সময় নিলো না মানবটি।

আহিয়াদ ফাবিহাকে উদ্দেশ্য করে ভ্রু যূগল কুঁচকে শুধালো – ফাবিহা এমন করে মীরাতের দিকে তাকিয়ে কী দেখছিস?

ফাবিহা সন্দিহান দৃষ্টিতে আহিয়াদের দিকে তাকায়। মুখ গম্ভীর করে সে বলে উঠে – ভাইয়া এতো সুন্দর মেয়েটাকে কোথায় পেলে বলো তো?

আহিয়াদ না বুঝে বললো – মানে?

ফাবিহা বিদ্রুপের স্বরে বললো – আসলে ওই যে ঘোড়ার মতো চুলওয়ালী জেনি না ফেনী তাকে তো বেশ কয়েকবার আমাদের বাড়িতে নিয়ে এসেছো। তখন ওই ঘোড়ার চুলওয়ালীকে দেখে মোটেও পছন্দ হতো না৷ ভাবতাম আমার হ্যান্ডসাম ভাইয়ের কপালে না ওই জেনি না ঝুলে বসে। আজ এতো সুন্দর একটা মেয়েকে বাড়ি নিয়ে আসলে তাই আরকি অবাক হয়েছি।

আহিয়াদ সরু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো – জেনির সাথে তালহা ও যে আসতো সেটা তোর চোখে পরেনি? আমার ফ্রেন্ড হিসেবে এসেছে তারা।এতে জেনিকে এতো সিরিয়াসলি নেওয়ার কি আছে?

– কাম অন ভাইয়া। তুমি জানো আমি কেনো এসব বলছি। আচ্ছা বাদ দাও এবার বলো এই বিউটিফুল আপুটাকে তুমি কোথায় পেলে? মাকে জিজ্ঞেস করলাম কিন্তু বললো না। বলেছে তোমার থেকে জেনে নিতে।

রহিমা সকলের প্লেটে খাবার পরিবেশন করে চারজনকে দিয়ে দিলো। সুরমা বেগম রহিমাকে ইশারা করলেন তাদের সাথে খেতে বসতে। রহিমা মালকিনের কথা মেনে প্লেটে খাবার নিয়ে বসলো একটা চেয়ারে।

আহিয়াদ ভাতের প্লেটে খাবার নাড়তে নাড়তে বলে উঠলো – মায়ের ফ্রেণ্ডের মেয়ে। নানাজানের বাড়ির পাশেই মীরাতের বাড়ি।

ফাবিহা উচ্চস্বরে উৎকন্ঠিত কন্ঠে বলে উঠলো – ওই যে আফিয়া আন্টির মেয়ে। যার কথা মা আমাদের গল্প করেছিলো?

আহিয়াদ খেতে খেতে গম্ভীর কণ্ঠে বললো – হুমম।

ফাবিহা ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে ভাবুকস্বরে বলে উঠলো – কিন্তু আফিয়া আন্টির মেয়ের নাম তো আযহা শুনেছিলাম।

আহিয়াদ পানি খেয়ে গ্লাসটা টেবিলে রেখে বললো – মীরাতুল আযহা পুরো নাম।

ফাবিহা এক গাল হেসে মীরাতকে বললো – তুমি দেখতেও জোস, তোমার নামটা জোস তো। আই লাইক ইট।

মীরাত প্রতিত্তোরে হাসলো শুধু। সে বুঝলো ফাবিহা চঞ্চল ধাঁচের। সহজে মানুষকে আপন করে নিতে জানে। মেয়েটার মন যে স্বচ্ছ তা বুঝতে বাকি নেই মীরাতের। কতো সুন্দর অচেনা একটা মেয়ের সাথে নির্দ্বিধায় কথা বলে চলেছে।

সুরমা বেগম মেয়ের প্রতি বিরক্তি প্রকাশ করে বললেন – আহ! ফাবিহা। খাওয়ার সময় কথা বলা ব্যাড ম্যানার্স।দ্রুত খাওয়া কমপ্লিট করো।

ফাবিহা মায়ের দিকে তাকিয়ে মুখ ভার করে বললো – ঠিক আছে।

সুরমা বেগম এতোক্ষণে খেয়াল করলেন মীরাত অন্যমনষ্ক হয়ে ভাত নেড়ে চলেছে। খাবার কোনো ইচ্ছে নেই। তিনি বললেন – মীরাত খাচ্ছো না কেনো?

মীরাত চমকে যায়। সে নিজেকে ধাতস্থ করে বলে – এই তো খাচ্ছি।

মীরাত কোনো মতো ভাত মাখিয়ে এক লোকমা ভাত মুখে দিলো। সুরমা বেগম বললেন – নিজের বাড়ি মনে করো এটা। এতো লজ্জা পেতে হবে না।

মীরাত ভাত চিবুতে চিবুতে মিনমিনে কন্ঠে উত্তর দিলো – ঠিক আছে।

আহিয়াদ বাঁকা চোখে মীরাতের দিকে তাকালো একবার। মায়ের কথা শুনে মনে মনে বললো“ নিজের বাড়ি মনে করবে কেনো নিজের বাড়িতেই তো আছে।এখন শুধু সকলকে বিয়ের কথা জানানো বাকি। ”

★★

– আরে মীরাত আপু তুমি এতো চুপচাপ আছে কেনো বলো তো। দেখে মনে হচ্ছে কারো বিরহে নিরব হয়ে গেছো। আমি কখন থেকে কথা বলে যাচ্ছি একা একা।

সুরমা বেগম ফাবিহার সাথে মীরাতের থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। মীরাত আর ফাবিহা বেশ খানিকটা সময় ধরে ফাবিহার রুমের বেলকনিতে বসে আছে। ফাবিহা এটা ওটা বললেও মীরা নিশ্চুপ, মনম’রা হয়ে বাহিরের নীল আকাশে অপলক চেয়ে আছে। দেখে মনে হচ্ছে আকাশের কোনো গোপন রহস্য উদ্ঘাটন করতে মগ্ন।

মীরাত ফাবিহার বিষন্ন স্বর শুনে ফাবিহার দিকে তাকায়। ফাবিহা গোমড়া মুখ করে তার দিকেই তাকিয়ে আছে। চোখ মুখে উৎকন্ঠার তীব্র ছাপ স্পষ্ট।

মীরাত আমতা আমতা করে বললো– আসলে নতুন জায়গায় এসেছি তাই একটু চুপচাপ আছি।

ফাবিহা ওষ্ঠ এলিয়ে হেসে বললো – তুমি তো দেখছি আমার মতোই। আমিও অপরিচিত কোথাও গেলে চুপচাপ থাকি। তুমি কোন ক্লাসে পড়ো আপু?

মীরাত স্বাভাবিক ভাবে উত্তর দেয় – অনার্স সেকেন্ড ইয়ার।

ফাবিহা উজ্জ্বল কন্ঠে বলে উঠলো– তুমি আমার একবছরের বড়। যাই হোক তোমাকে আমার ভীষণ পছন্দ হয়েছে। এখন ভাবছি আগে কেনো তোমার সাথে পরিচয় হলো না।

মীরাত সুমিষ্ট স্বরে বললো– তোমার নানাজানের বাসায় গেলেই আমার সাথে পরিচয় হয়ে যেতো আগেই।

ফাবিহা মুখ গোমড়া করে বললো – অনেক বছর আগে গিয়েছিলাম। তারপর আর যাওয়া হয়নি। নানাজান সহ সকলে ভীষণ মিস করি। ঈদে ছুটি পেলে সকলে আমাদের সাথে দেখা করতে আসে। জানো মিষ্টি আপুকে ভীষণ মিস করি।

– মিষ্টি আপু কে? আরু?

– হুমম। তাকে কেনো নিয়ে এলেনা বলো তো।

মীরাতের মন বিষণ্নতায় নিমজ্জিত হয়ে গেলো। মায়ের কথা তার মনে পাথরের মতো ভারি হয়ে উঠেছে। আজ থেকে মায়ের কাছে থাকার সুযোগ নেই এবং পুনরায় কখন দেখা হবে তাও অনিশ্চিত। দাদাজান, চাচা, চাচি এবং আরুকেও গভীরভাবে মিস করছে। এসব চিন্তায় তার নিঃশ্বাস ভারী হয়ে ওঠে, চোখের কোণে অশ্রু জমে ওঠে। সেই অশ্রু লুকানোর চেষ্টা করতে গিয়ে ফাবিহার অগোচরে নিঃশব্দে তা মুছে ফেললো।

ফাবিহা মীরাতের কানের কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বললো – জেনি আপুকে চেনো?

মীরাত অশ্রু নরম হাতের উল্টো পিঠে মুছে স্বাভাবিক ভাবে বললো – হ্যা চিনি উনাকে।

ফাবিহা সাবধান করে বললো– শোনো। ওই জেনি পেতনির থেকে দূরে দূরে থাকবে।

মীরাত কৌতুহলবশত বললো – কেনো?

ফাবিহা একটু বিরক্তির সহিত বললো– কয়েকদিন থাকো বুঝতে পারবে।

– এখনই বলে ফেলো।

– রাতে বলবো। চলো ছাদে যাই।

– ঠিক আছে চলো।

★★
গোধূলি বিকেল হলো দিনের সেই বিশেষ সময়, যখন সূর্যরশ্মি ম্রিয়মাণ হতে শুরু করে, আকাশে নরম সোনালী আভা ছড়িয়ে পড়ে। এই সময়টাতে আকাশের রঙ বদলে যেতে থাকে – একদিকে সূর্য অস্তমিত হওয়ার আগে আকাশ হয়ে ওঠে লাল, গোলাপি ও কমলা রঙের। প্রকৃতির এই স্নিগ্ধ পরিবর্তনের মধ্যে এক ধরনের নিরবতা বিরাজ করে। পাখিরা ফিরতে শুরু করে তাদের বাসায়, বাতাসে থাকে স্নিগ্ধতার পরশ।
গোধূলির সময় মাটির উপর ছড়িয়ে থাকা সূর্যের কিরণগুলো সবকিছুকে একদম নতুনভাবে উজ্জ্বল করে তুলেছে। প্রকৃতি মনে হচ্ছে তার সৌন্দর্য নতুন করে উদযাপন করছে। এই সময়টিতে প্রকৃতির এই রোমাঞ্চকর পরিবর্তন মানুষের মনের গভীরে অদ্ভুত প্রশান্তি ও সুখের অনুভূতি এনে দেয়।

মীরাত আর ফাবিহা খোলা আকাশের নিচে রেলিং ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে। দুজনে নিশ্চুপ হয়ে বিকেল বিলাস করতে ব্যস্ত। মীরাতের দৃষ্টি দূরের উঁচু উঁচু অট্টালিকার দিকে। শহরের ব্যস্ত জীবন দালান কোঠা, আধুনিক জীবনব্যবস্থা সবকিছুই গ্রামীন জীবন থেকে সম্পূর্ণ আলাদা।মীরাত দৃষ্টি ফিরিয়ে ছাদ দেখতে থাকে। ছাদের এক কোণায় বেশ কয়েকরকমের ফুলের গাছের সমাহার। এখনো ফুল ফোটেনি সেখানে। ছাদের একপাশে একটা রুম।অবস্থানরত রুমটি বদ্ধ পরিবেশের মধ্যে অবস্থিত। যা গোপনীয়তা নিঃসঙ্গতার অনুভূতি তৈরি করেছে বলে মনে হলো মীরাতের কাছে। ঘরটির চারপাশে রয়েছে গাছের সমারহ।

ফাবিহা হঠাৎই বলে উঠলো – মীরাত আপু সন্ধ্যা হয়ে গেছে। চলো নিচে যাই।

মীরাত চমকে যায়। দৃষ্টি ফিরিয়ে খেয়াল করে অন্ধকার হয়ে এসেছে। চারিদিকে আবছা আবছা লাগছে। সামনে দাঁড়ানো ফাবিহাকে সে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে না। সে বলে – ঠিক আছে চলো।

ফাবিহা হাটতে থাকে নিচে যাওয়ার জন্য।মীরাত তার সাথে যেতে থাকে।

মীরাত কৌতুহলবশত জিজ্ঞেস করলো – ফাবিহা ছাদের কোণায় রুমটা কার?

ফাবিহা রহস্যময়ী হাসি হেসে বলে উঠলো – ওটা সিক্রেট। আস্তে ধীরে জানতে পারবে।

মীরাতের মুখ ভার হয়ে যায়। সে আর না এগিয়ে সেখানেই দাঁড়িয়ে পরলো। ফাবিহা ইতোমধ্যে রওনা দিয়ে দিয়েছে রুমের দিকে।

মীরাত আশপাশের নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করলো। কিন্তু সেখানে কোনো প্রাণী বা মানুষের অস্তিত্ব খুঁজে পেলো না। নিশ্চিত হয়ে সাহস সঞ্চার করে সে রুমটির দিকে এগিয়ে গেলো। দরজার ঠিক সামনের স্থানে দাঁড়িয়ে সে চোখ মেলে দেখলো দরজার পাশের দেয়ালে। সেখানে একটি নেম প্লেটে অদ্ভুত ভাষায় (jibun no heya) লেখা । লেখা দেখে মীরাতের কপালে কুঁচকানো দাগ পড়লো। তার কৌতূহল তীব্র হয়ে উঠলো। মনে হলো, হয়তো বছর খানেক আগে কেউ এই রুমটির পরিকল্পনা করে গড়ে তুলেছে, আর সে সেই সৃষ্টির অমীমাংসিত রহস্যের সামনে দাঁড়িয়ে আছে।

মীরাত তার হাত দিয়ে দেওয়ালের নেম প্লেটটি ছুঁয়ে দিলো। হঠাৎই অজানস শক্তি তার হাতটি চেপে ধরলো। মীরাত তৎক্ষণাৎ ঘাবড়ে গেলো, তার শরীরের ভেতরে অজানা আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লো। ভয়ে তার চোখ বড় হয়ে উঠলো। সে দ্রুত পেছনের দিকে তাকালো আতঙ্কিত দৃষ্টিতে।সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের মুখভরা ছায়ায় অন্ধকার, কোনো সুস্পষ্ট পরিচয় পাওয়া যাচ্ছিলো না। মীরাতের হৃদপিণ্ড দ্রুত বীট করতে লাগলো।

মীরাত ভয়া’র্ত গলায় বলে উঠলো – কে আপনি?

তার গলা যেন শুকিয়ে গেছে, কণ্ঠস্বর ভীতিভরে কেঁপে উঠছে।ব্যক্তিটি ধীরে ধীরে সামনে এসে দাঁড়ালো। তার মুখের অঙ্গভঙ্গি, চেহারা পুরোপুরি অন্ধকারে ঢাকা থাকায় মীরাত কোনো মুখাবয়ব দেখতে পাচ্ছে না। কিছুক্ষণ নিরবতা বিরাজ করলো।ধীরে ধীরে পরিচিত কণ্ঠ শোনা গেলো

– মীরাত?

[আজকের পর্বটি কেমন হয়েছে সকলে জানাবেন। ]

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here