অব্যক্ত প্রেমাসুখ❤️‍🔥 #আদ্রিতা নিশি ।১২।

0
134

#অব্যক্ত প্রেমাসুখ❤️‍🔥
#আদ্রিতা নিশি
।১২।

[কপি করা নিষিদ্ধ ❌]

মীরাত সামনে আহিয়াদকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে হাঁপ ছেড়ে বাচলো। ভ’য় অনেকটা কমে এসেছে। সে নিজেকে শান্ত করে নিলো। আহিয়াদ ইতোমধ্যে ছাদের লাইট জ্বালিয়ে দিয়েছে। মীরাতের মুখশ্রী দেখে বুঝতে পেরেছো। তার হঠাৎ আগমনে হয়তো ভয় পেয়ে গেছে।

আহিয়াদ মীরাতকে উদ্দেশ্য করে বললো – ভয় পেয়েছো?

মীরাত ভয়া’র্ত ভাব কাটিয়ে নিজেকে সামলে বললো – ভ’য় পেয়েছিলাম। এখন ঠিক আছি।

আহিয়াদ সন্দিহান কন্ঠে বললো – এখানে কি করছো একা একা?

মীরাত সরল কন্ঠে উত্তর দিলো – ফাবিহার সাথে এসেছিলাম।

– সন্ধ্যা হয়ে গেছে নিচে যাও।

মীরাত আহিয়াদের কথা মান্য করে নিচে যেতে গিয়েও থেমে গেলো। সে পিছু ফিরে আহিয়াদের দিকে তাকালো। আহিয়াদ তখনও মীরাতের দিকে তাকিয়ে ছিলো। দুজনের চোখাচোখি হয়ে যায়। মীরাত আজ দৃষ্টি সরালো না। সে ওইভাবেই বললো – “আপনি নিচে যাবেন না? দুজনে এক সাথে যাই। ”

আহিয়াদের দৃষ্টি শান্ত হয়ে এলো। মীরাতের কন্ঠ হতে নির্গত কথায় অধিকারের আভাস পেলো বোধ হয়। সে বললো – এখনই যেতে হবে?

মীরাত নির্বাক ও স্তম্ভিত হয়ে দাঁড়িয়ে রইল কোনো নির্বোধের মতো। আহিয়াদের কথার তাৎপর্য তার মস্তিষ্কে স্পষ্ট হতে পারেনি। সে ভাবনার মধ্যে ডুবে ছিলো যে, হঠাৎ করে আহিয়াদের বলা কথা সে বুঝতে পারলো না।

আহিয়াদ আবারও বলে উঠলো – বউ যখন চাইছে তাহলে একসাথেই যাওয়া যায়।

মীরাত “বউ” শব্দটি কানে আসতেই অদ্ভুত অনুভূতি তাকে গ্রাস করে ফেললো। তার শিরা-উপশিরায় অজানা শিহরণ ধেয়ে আসছে। সে অবিশ্বাসের চোখে আহিয়াদের দিকে তাকালো।মনে হচ্ছে তার কান ভুল কিছু শুনেছে। ঘটনাটি তার জন্য সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত ছিলো।

–“আপনি আমাকে বউ বলে ডাকলেন?”

মীরাতের কণ্ঠস্বরে বিস্ময়ের গভীর রেখা বিরাজ করছে। তার মুখাবয়বে অবিশ্বাস ফুটে উঠেছে। এই অপ্রত্যাশিত শব্দটি তার ধারণার বাইরে ছিল। “বউ” শব্দটি শুনে তার চেতনায় অব্যক্ত বিস্ময়ের ঢেউ উঠলো।

আহিয়াদ দৃঢ় আর শান্ত কন্ঠে বললো–“তাহলে আমি কী ডাকবো?“আমরা তো প্রেমিক প্রেমিকা নই, যে আদরের নামে নিকনেমে একে অপরকে ডাকবো। তুমি আমার স্ত্রী, আমার ওয়াইফ। তাই ‘বউ’ বলে তোমাকে সম্বোধন করাটাই স্বাভাবিক।”

মীরাতের কণ্ঠে সুকৌশলে চাপা অভিমান ও বিষাদের কন্ঠে বলে উঠল– আপনি তো আমায় আপনার মায়ের সামনে আপনার ওয়াইফ হিসেবে পরিচয়,করিয়ে দেননি।

আহিয়াদ চপল মেজাজে বাঁকা হেসে বললো – এতো দ্রুত বলে কী হবে? আর কিছুদিন যাক তারপর বলবো।

মীরাত ক্ষুদ্ধ ও হতাশায় জর্জরিত হয়ে তীব্র স্বরে বললো – তাহলে আমায় এই বাড়িতে কেনো এনেছেন? ওহহ বুঝেছি শুধু দায়িত্ব পালন করার জন্য? আমি আপনার করুণার পাত্রী হয়ে থাকতে চাই না।

আহিয়াদ পরমুহূর্তে হাসি বজায় রেখে বললো – আমার অর্ধাঙ্গিনী হয়ে থাকো।

মীরাত কথার মর্ম না বুঝে তিরিক্ষি মেজাজে বললো – আপনি কি চাইছেন বলুন তো? গোপনে সম্পর্ক কন্টিনিউ করবেন। সরি বাট নট সরি মিঃ আহিয়াদ সীমান্ত আমি এমন লুকোচুরি সম্পর্ক কন্টিনিউ করতে চাই না। দরকার পরলে আপনার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে দিবো।

আহিয়াদের চোয়াল শক্ত হয়ে এলো। সে রুঢ় গলায় বললো – বিয়েটা কোনো পুতুল খেলা নয়। তুমি বোধ হয় ভুলে যাচ্ছো দুজনের সম্মতিতে বিয়ে হয়েছে। আর এখন এমন উল্টোপাল্টা বকছো?

মীরাত নিজেকে স্বাভাবিক করার প্রয়াস চালালো। সে গমগমে কন্ঠে বললো – বিয়ের সেই রাতে বলা দায়িত্ব শব্দটা আমার বক্ষে বিঁধে আছে আহিয়াদ।আপনি বলেছিলেন আমায় বিয়ে করেছেন শুধু দায়িত্ব পালনের জন্য। আপনি যদি চান বিয়েটা গোপন রাখতে তাহলে তাই করুন। সময় মতো না হয় আমায় মুক্তি দিয়ে দিলেন।

আহিয়াদের দৃষ্টি মীরাতের দিকে স্থির হয়ে রইল অনমনীয় অগ্নিমূর্তির মতো। মীরাতের চোখের তীক্ষ্ণতা ও কঠোরতা স্পষ্টভাবে প্রকাশ করছে। মেয়েটি ‘দায়িত্ব’ শব্দের দ্বারা কতটা কষ্ট পেয়েছে তা আহিয়াদ বুঝলো।

আহিয়াদ শান্ত কন্ঠে শুধালো– তুমি কি আমায় অর্ধাঙ্গ রুপে মন থেকে মেনে নিতে পেরেছো?

আহিয়াদের শান্ত স্বর মীরাতের কর্ণে অদৃশ্য ধাক্কা পৌঁছে দিলো। তার বুকের ভেতর হিমশীতল অনুভূতি ছড়িয়ে পড়লো। সে আহিয়াদের তীক্ষ্ণ চক্ষুযূগলে তাকালো, যেখানে গভীর চাহনির মাধ্যমে অব্যক্ত কথার বহর প্রকাশ পাচ্ছে। মীরাত ওই চোখের ভাষা ধরতে পারল না। তার চোখের সামনে ধাঁধার মতো উন্মোচিত হয়ে গেলো। সে কি সত্যিই আহিয়াদকে মন থেকে স্বামী হিসেবে মেনে নিতে পেরেছে? মনে হচ্ছিলো, কোনো জটিল ধাঁধার উত্তর খুঁজতে গিয়ে সে দিশাহীন হয়ে পড়ছে। কেনো এই প্রশ্ন এত কঠিন হয়ে উঠছে, তা তার মনে অন্ধকার দৃষ্টান্তের মতো গেঁথে গেছে।

আহিয়াদ সুনিশ্চিত হয়ে গভীর ধৈর্য নিয়ে বললো– জানি এই উত্তর তোমার কাছে নেই। মন দিয়ে খুঁজো প্রশ্নের উত্তর। যেদিন উত্তর খুঁজে পাবে সেদিন আমায় বলো।

মীরাত এখন অনুভব করলো যে, সে আহিয়াদকে হয়তো প্রয়োজনের চেয়ে বেশি বলেছে। তার মনে যখন আহিয়াদ সম্পর্কে সংশয় বিদ্যমান, এই দোটানায় সে কীভাবে এই সংসারে নিজেকে জড়িয়ে ফেলবে? মনের গহীনে অনুতাপ কুড়ে কুড়ে চলছিলো। সে উপলব্ধি করলো, তার ব্যবহৃত ভাষা এবং আচরণ যথাযথ ছিল না; বাজে ব্যবহার করা উচিত হয়নি। এই অনুশোচনায় ভেতর ভেতর পুড়তে লাগল সে।

মীরাত অনুতপ্তের স্বরে বলে উঠলো – আমি দুঃখিত। আপনাকে এতোগুলো কথা ঠিক হয়নি।

আহিয়াদ মীরাতের কথার পরিপ্রেক্ষিতে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখালো না। সে বললো – নিচে চলো।

মীরাত আহ’ত চোখে আহিয়াদের দিকে তাকালো। আহিয়াদ আর দাঁড়িয়ে রইল না। সে নিচে যাওয়ার জন্য রওনা দিলো। মীরাত ও মন খা,রাপ করে আহিয়াদের পিছু নিলো।

★★

গভীর রাতের নিস্তব্ধতা মীরাতের মনকে অবসন্ন করে রেখেছে। ফাবিহা তার পাশের বিছানায় গভীর ঘুমে লিপ্ত হলেও, মীরাতের চোখে ঘুম নেই। সন্ধ্যার আহিয়াদের সাথে ঘটে যাওয়া কলহের চিন্তা তার মনের উপর অন্ধকার চেপে ধরেছে। আহিয়াদ যে আসলে খারাপ নয়, তবুও কেন এমন আচরণ করল সে
মীরাতের মনে ঘুরপাক খাচ্ছে, আহিয়াদের প্রকাশিত রা’গের পেছনে কি কোনো গভীর কারণ লুকিয়ে আছে? সকলের সামনে তাকে বউ হিসেবে পরিচয় না দেয়ার কারণে কি আহিয়াদ প্রতি সে মনে মনে ক্ষুব্ধ?

মীরাতের চিন্তায় তীব্র য’ন্ত্রণা হচ্ছে মাথায়। গলা শুকিয়ে আসছে। বালিশের পাশে রাখা ফোনটি হাতে নিয়ে সে দেখে নিলো।তিনটা বেজে দশ মিনিট। ফোনের ফ্লাশ জ্বালিয়ে দুর্বোধ্য মনোভাব নিয়ে বিছানা থেকে উঠে পড়লো। ছোট টেবিলের উপর পানির বোতল নেই। অন্ধকার পরিবেশে, ধীর পায়ে রুমের দরজা খুলে রান্নাঘরের দিকে রওনা হলো। পুরো ফ্ল্যাটজুড়ে গাঢ় নীরবতা বিরাজ করছে,কেমন গা ছমছমে পরিবেশ
। ফোনের দুর্বল আলোতেই ভ’য় অনুভব করছে সে।

ডাইনিং প্লেসে পৌঁছে ফ্রিজ খুলে পানির বোতল বের করলো। পানি খেয়ে তৃষ্ণা মেটালো। বোতলটি আবার ঠিকভাবে ফ্রিজে রেখে দিলো। তারপর ফাবিহার রুমের দিকে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হলো। ফাবিহার রুমে পৌঁছানোর আগে তাকে দুটি রুম পার করতে হয়। প্রথম রুমটি আধখোলা।সেটা কার রুম জানা নেই, দ্বিতীয়টি তালাবদ্ধ, আর তৃতীয়টি ফাবিহার রুম। অপর দিকে আরো দুটি রুম রয়েছে। একটি সুরমা বেগমের আর অন্যটি সম্ভবত আহিয়াদের।

প্রথম রুমের পাশে পৌঁছানোর সাথে সাথে, হঠাৎ করে দরজা খুলে কেউ একজন বের হয়ে এলো। মীরাত ভ,য়ে দুই পা পিছিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতে গিয়ে দেয়ালে মাথা বারি খেলো । ব্য’থা’য় কুঁকড়ে ওঠা মীরাত মৃদু চিৎকার করে উঠলো।

–“মীরাত, তুমি ঠিক আছো?”

আহিয়াদের কণ্ঠে উদ্বেগের স্বর স্পষ্ট হয়ে উঠলো।
মীরাত ফোনের আলো দিয়ে সামনে তাকিয়ে আহিয়াদকে দেখে কিছুটা স্বস্তি অনুভব করলো। ব্যথার জায়গা হাত দিয়ে মেলাতে শুরু করলো।

–“বেশী ব্যথা পেয়েছো?”

–“বেশী ব্যথা পাইনি। তবে একটু ফুলে গিয়েছে বোধ হয়।”

–“এতো রাতে লাইট না দিয়ে ঘুরছো কেন? দেয়ালে না লেগে মেঝেতে পড়ে গেলে তাহলে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হতো।”

–“লাইট দিলে সবাই জেগে যাবে, তাই আমি দেয়নি।”

–“এখানে দাঁড়াও। আমি আইস কিউব নিয়ে আসছি।”

–“লাগবে না। এমনি ঠিক হয়ে যাবে।”

–“চুপ থাকো। বেশী কথা বলবে না।”

আহিয়াদের চাপা কন্ঠের ধমকে মীরাত চুপ হয়ে গেলো। সে চুপচাপ ঠাই হয়ে দাঁড়িয়ে রইল সেখানেই। আহিয়াদ লাইট অন করতে যাবে এমন সময়, ফ্ল্যাটের মেইন দরজা খুলে একজন প্রবেশ করলো। আহিয়াদ ও মীরাত চমকে তাকালো সেদিকে।

আহিয়াদ দ্রুত বুঝতে পারল ব্যক্তিটি তার বাবা। আহিয়াদ চিন্তিত কণ্ঠে বললো,– “ওহ শীট বাবা এসেছে। এখন যদি লাইট অন করি, তাহলে মীরাত ও আমাকে একসাথে দেখে নেবে, যা বড় হাঙ্গামার কারণ হতে পারে। এখন কী করা যায়?”

মীরাত ভ’য় ও অস্বস্তির কারণে ফোনের ফ্ল্যাশ বন্ধ করে দিলো। তার আর কোনো উপায় ছিল না। আহিয়াদ দ্রুত মীরাতের হাত ধরে নিজের রুমে নিয়ে দরজা আঁটকে দিলো। কয়েক সেকেন্ড পর, ডাইনিং এর লাইট জ্বলে উঠলো।

মীরাত ধীরে ধীরে চোখ খুললো। সে নিজেকে অচেনা একটি রুমে আবিষ্কার করলো। ঘরটি সুসজ্জিত, পরিচ্ছন্ন এবং সুশৃঙ্খ, অবিশ্বাস্যভাবে গোছালো। দেয়ালের উপর কয়েকটি ছবি দেখে সে বুঝতে পারলো এটি আহিয়াদের রুম।ছেলেদের রুম সাধারণত এতোটা সাজানো থাকে, তা সে না দেখলে জানতেই পারতো না।রুমটির সজ্জার মধ্যে মীরাতের মনোযোগ আকর্ষণ করলো। হাতের তাপ অনুভব করে সে তার হাতের দিকে তাকালো। নিজস্ব অস্বস্তির কারণে, মীরাত লজ্জায় একটু হাসফাস করতে লাগলো। তার মুখে রক্তিম আভা ছড়িয়ে পড়লো, আর চোখ দুটো অস্বস্তিতে কুঁচকে উঠলো। আহিয়াদ মীরাতের অবস্থার দিকে দ্রুত নজরে আসলো সে তার হাত তৎক্ষণাৎ ছেড়ে দিলো। হাতের স্পর্শ কেটে যাওয়ার সাথে সাথে মীরাত কিছুটা শান্তি অনুভব করলো। মীরাতের লজ্জার অনুভূতি কিছুটা কমলো।

[আজকের পর্ব কেমন হয়েছে সকলে জানাবেন। ]

চলবে……..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here