#অব্যক্ত প্রেমাসুখ
#আদ্রিতা নিশি
।৩।
[কপি করা নিষিদ্ধ ]
–❝ইফতি আমায় ঠকিয়েছে আরিশা। সে কীভাবে পারলো আমার সাথে বিয়ে ঠিক হওয়ার পরও অন্য কাউকে ভালোবাসতে? সে তো জানতো আমি তাকে ভালোবাসতে শুরু করেছি।আমার ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ অনেকবার ঘটেছে। তবে কেনো এমনটা করলো? বল না?❞
মীরাত আর আরিশা চেয়ারম্যান বাড়ি সংলগ্ন পুকুরপাড়ে সিঁড়ির ওপর বসে আছে। পুকুরটিতে কিনারায় কিনারায় পানি পরিপূর্ণ। চারিপাশে আম বাগানের আচ্ছাদন। স্বচ্ছ পানির মাঝে ফুটে উঠেছে সাদা শাপলা। মনোমুগ্ধকর দৃশ্য যে কারো মন ভালো করতে সক্ষম। মীরাতের জায়গাটা ভীষণ প্রিয়। জায়গাটা তার মন খারা পের সঙ্গী। সকালের ব্রেকফাস্ট করে মীরাত তার নিজের বাড়ি যায়নি। মন খারাপ ছিলো। তাই একাকি সময় কাটানোর জন্য এসে বসেছিলো এখানে। আরিশাও মীরাতের পিছু পিছু চলে এসেছে।
আরিশা মীরাতের কাতর কন্ঠে নিঃসৃত বাক্য শুনলো। সে আঁতকে উচ্চস্বরে বললো–“ এসব তুই কি বলছিস?”
মীরাতের দৃষ্টি অদূরে সবুজ গাছপালার দিকে। তার ওষ্ঠ জুড়ে বিরাজ করছে মলিন হাসি। কেমন উদাসীন ভাব। আরিশা হতবাক হয়ে তাকিয়ে আছে মীরাতের দিকে। এসব কি শুনলো সে? ইফতি তার বান্ধবীকে ঠকিয়েছে? মানতে ক ষ্ট হচ্ছে তার।
মীরাত দৃষ্টি ঘুরিয়ে তাকায় আরিশার দিকে। বিস্মিত নয়নে তাকিয়ে আছে তার দিকে। মেয়েটার মুখে স্পষ্ট অবিশ্বাসের প্রতিচ্ছবি। হয়তো ইফতির কথাটা বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়নি। সে ওষ্ঠকোণে মলিন হাসি বজায় রেখে বললো–“ আমার প্রথম ভালোবাসার মানুষটি আমায় ঠকিয়ে দিলো।সে নিজ মুখে বলেছিলো আমার মতো মেয়ে তার পার্সোনালিটির সাথে যায় না। তার সরকারী চাকরী দেখে আমাদের পরিবারের সকলে নাকি আমাকে তার গলায় ঝুলিয়ে দিয়েছে। আমার মতো বাবা হারা মেয়ে সে বিয়ে করতে চায়নি। তার যে অন্য কাউকে পছন্দ আছে সেটা বলতেও ভুললো না। প্রেমিকযুগলের ছবি প্রমাণস্বরূপ পাঠিয়েছিলো আমার ফোনে। আমি তখন বউ সেজে তার অপেক্ষা করেছিলাম। প্রতার ণা করে আমার অপেক্ষার প্রহরের সমাপ্তি ঘটালো সে। ”
আরিশা বাকরুদ্ধ। তার নিজেকে উদভ্রান্তের ন্যায় মনে হচ্ছে। এসব সে কি শুনছে?সে তো ভেবেছিলো বিয়ে করবেনা তাই মীরাত পালিয়েছিলো।এতে সে রে গে ও ছিলো। কিন্তু এগুলো যা শুনছে তা তার কল্পনার বাহিরে।
মীরাতের উদাসীন ভঙ্গিতে ভাবতে লাগলো বিগত কিছু মাসের কথা। ইফতি পড়াশোনা কমপ্লিট করে সরকারী চাকরী করছে। উচ্চবিত্ত পরিবারের ছেলে। ব্যাকগ্রাউন্ড ও ভালো। দুই পরিবারের সম্মতিতেই ইফতি আর মীরাতের বিয়ে ঠিক হয়েছিলো প্রায় ছয়মাস আগে। ইফতির পরিবার জানিয়েছিলো ইফতির সরকারী প্রজেক্ট শেষ হতে প্রায় পাঁচ মাস লাগবে। সেটা শেষ করে দীর্ঘ ছুটি নিয়ে বাড়িতে আসবে। তারপর ইফতি আর মীরাতের বিয়ে হবে। সেই কথার ভিত্তিতেই দিন কে টে যাচ্ছিলো। এরমাঝে ইফতি নিজ থেকে কল দিয়ে মীরাতের খোঁজ খবর নিয়েছে। মীরাতের পরিবারের সকলের সাথে যোগাযোগ করতো প্রতিদিন। অমায়িক ব্যবহারে ইফতি সকলের চোখের মণি ছিলো। মীরাতের মনেও ইফতির জন্য ভালোলাগা সৃষ্টি হয়।ভালোলাগা থেকে ভালোবাসায় পরিণত হয়। অল্প কথা হলেও ইফতির জন্য টান তৈরী হতে থাকে। দেড় মাস আগে থেকে মীরাতের সাথে যোগাযোগ কমিয়ে দেয় ইফতি। কল করলে কাজের বাহানা দেখাতো। অনেক সময় বাজে ব্যবহারও করতো। মীরাত রাতে অঝোরে কাঁদতো। তার অনেক ক ষ্ট হতো। তবুও কাউকে বলতো না।এভাবেই বিয়ের দিন ঠিক হলো। ইফতির কথায় বিয়ে রাতে পরানোর সিদ্ধান্ত হয়। বরপক্ষ আসে রাত সাড়ে দশটায়। পনেরো বিশ জন বর যাত্রী ছিলো সাথে। ছোট পরিসরে বিয়ের আয়োজন করে মীরাতের চাচা। খাওয়া দাওয়ার কার্যক্রম শেষ করে ইফতি একান্তে মীরাতের সাথে কথা বলতে চায়। তারা বেগম মীরাতের ঘর দেখিয়ে দেয়। মীরাত তখন লাল শাড়ি পরে বধূ বেশে বিছানায় বসে আছে। চিন্তিত সে। তখনি ইফতির আগমন।
–“বাহ বিয়ের জন্য সেজেগুজে তৈরী দেখছি।”
ইফতির গলার আওয়াজে মীরাত চোখ তুলে সামনে তাকায়। ইফতি দাড়িয়ে আছে শেরওয়ানি পরে। মীরাতের ঘরে আরিশাসহ কয়েকজন দুজনের কথা বলার স্পেস তৈরী করার জন্য দরজা আঁটকে বাহিরে চলে যায় তখনই।
–“ আপনি এখানে?”
ইফতি এগিয়ে আসে রহস্যময় হাসি ওষ্ঠে ঝুলিয়ে। এসে বিছানার এক পাশে বসে। মীরাতের মুখ থমথমে। ইফতির হাসি তার সহ্য হচ্ছে না। ভাবতেই ক ষ্ট লাগছে যে মানুষটি তার নির্ঘুম রাত,অজস্র কান্নার কারণ। দিনের পর দিন মানসিক ট র্চার করেছে আজ তার সাথেই বিয়ে। তবুও মনের কোণে একটু হলেও ভালোবাসা রয়েছে ইফতির প্রতি । সেই কারণে এতো কিছু সহ্য করার পরেও বিয়ের আসরে বসেছে সে।
ইফতি বিদ’ঘুটে হাসি হেসে বলে উঠলো –“ এতো অবহেলা করার পরেও বিয়ে করতে চাইছো আমায়?এতোটা বোকা কেনো তুমি?”
মীরাত কাঠিন্য চোখে তাকায় ইফতির দিকে।ইফতি তা পরোয়া করে না।বাঁকা হেসে বলে–“ তুমি এটা নিশ্চয়ই জানো আমি তোমায় ভালোবাসি না।আমাদের বিয়েটা পারিবারিক ভাবে ঠিক হয়েছে। এই বিয়েতে আমি বাবা-মায়ের কথায় রাজি হয়েছি। আরেকটা কারণও ছিলো দেখতে সুন্দরী তার আরকি লো’ভ সামলাতে পারিনি। ”
মীরাতের গা গুলিয়ে আসছে ইফতির কথায়।নম্র,ভদ্র মানুষটির ঘৃ ণ্য রুপ দেখে বাকরূদ্ধ সে। মন চাচ্ছে ঠাটিয়ে চড় মা রতে।
–“ এই কয়েকমাসে তোমার ওপর থেকে ইন্টারেস্ট চলে গেছে। ইনিবিনিয়ে কতোবার তোমায় দেখতে চেয়েছি। কিন্তু তুমি বলেছো এখন না বিয়ের পরে।আমি একটু এডাল্ট কথা বলতে চাইলে সবসময় এড়িয়ে গিয়েছো। এসবে এক প্রকার বিরক্ত হয়ে গিয়েছিলাম। অন্য কোনো মেয়ে হলে যা বলতাম তাই করতো। কিন্তু তুমি সাধাসিধে লজ্জাবতী। তার ওপর ফ্যামিলির ব্যাকগ্রাউন্ড খারাপ। তাও তোমার পরিবার আমার মতো চাকুরীজীবি ছেলের গলায় তোমায় ঝুলিয়ে দিয়েছে।এসবে অসহ্য হয়ে গেছি আমি।তোমার সাথে আমার যায় না তবুও বাবা মায়ের কারণে বিয়ে করতে এসেছি।বোঝোই তো নিজের সম্মান বাচাতে হবে আগে।”
মীরাতের বক্ষে কাঁপন উঠেছে।নিরব ঝড়ে যেনো সবকিছু তছনছ হয়ে যাচ্ছে। গলা কাঁপছে তার। মস্তিষ্কশূন্য হয়ে গেছে।সে কম্পনরত কন্ঠে বলে উঠলো–“এসব কথা আজ কেনো বলছেন।আপনি আমায় অপছন্দ করেন আগে বলতে পারতেন।আজ আমাদের বিয়ে।আপনি কি ভুলে গেছেন?”
ইফতি কাঠিন্যস্বরে বললো–“ বিয়ে মাই ফুট।শোন তোর মতো মেয়ে আমার পার্সোনালিটির সাথে যায় না। তার থেকেও বড় কথা আমার গার্লফ্রেন্ড আছে। আই লাভ হার সো মাচ।সে আমার সব।দেখতেও যেমন আগুন সুন্দরী। তেমন মর্ডান।আমার আর তোর প্রতি ইন্টারেস্ট নেই বুঝলি। এবার বল সত্য জানার পরেও আমায় বিয়ে করবি?”
মীরাত রাগা ন্বিত হয়ে চেঁচিয়ে বলে উঠলো –“আপনি আমায় ঠকিয়েছেন ইফতি। আমার ভালোবাসার সুযোগ নিয়েছেন। কি করে আমায় ঠকাতে পারলেন আপনি? আপনি আমার জীবনে প্রথম পুরুষ। আমার প্রথম প্রণয় পুরুষ আপনি। আমার অনুভূতির কথা জেনেও আমার ইমোশন নিয়ে খেললেন?
ইফতি তার শক্ত পোক্ত পুরুষালী হাত দ্বারা মীরাতের গলা চেপে ধরলো।হিসহিসিয়ে বললো–“ একদম গলাবাজি করবি না। তোদের মতো মিডিলক্লাসদের আবার ইমোশন! তুই যদি সত্যি জানার পরেও যদি বিয়ে করতে চাস তাহলে বিয়ে হবে। ঘরে একজন আর বাহিরে আরেকজন থাকলে আমার সমস্যা নেই।আর যদি বিয়ে ভাঙতে চাস তাহলে তাই কর। একটা কথা শোন আমায় নামে অভিযোগ করলে কেউ তোকে বিশ্বাস করবে না। কারণ সবাই আমায় বিশ্বাস করে।”
ইফতি মীরাতের গলা ছেড়ে দেয়।মীরাত কাশতে লাগলো। দম আঁটকে আসছে। হাসফাস করছে সে। জোরে জোরে শ্বাস নিতে লাগলো। গাল বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পরছে। ইফতি উঠে দাঁড়িয়ে বিদ্রুপ করে বললো–“ আমার গার্লফ্রেন্ডের পিক পাঠিয়ে দিচ্ছি তোর ফোনে। দেখে নিস। ”
ইফতির আর একমুহূর্ত দাঁড়ায় না। শেরওয়ানির পকেট হতে ফোন বের করে কয়েকটা কাপল পিক মীরাতের ফোনে পাঠিয়ে দিয়ে বাহিরে চলে যায়।
মীরাতের ফোনে নোটিফিকেশন এসেছে।পাশেই ফোন। সে কম্পনরত হাতে সাহস করে ফোন হাতে নিলো।কাপা কাপা হাতে লক খুলে হোয়াটসঅ্যাপে ঢুকে ইফতির পিকগুলো দেখলো। সাথে সাথে হাত থেকে ফোন বিছানার ওপর পরে গেলো।তার সমস্ত পৃথিবী যেনো থমকে গেছে। টপটপ করে ফোন স্কিনে অশ্রু পরতে পরছে।সহ্য করতে না পেরে ডুকরে কেঁদে উঠলো সে। কেউ দেখলো না কেউ শুনলো না মীরাতের ভঙ্গুর মনের আহাজারি। চার দেওয়ালেই বদ্ধ রইল। তখন মীরাতের একটা কথায় মনে হচ্ছিলো। এই নশ্বর পৃথিবী তার জন্য নয়। পারিবারিক অশান্তি, ভালোবাসার মানুষটির প্রতা রণায় সে মত্ত উন্মাদ হয়েছিলো। তার মনে হয়েছিলো সুই সাইড করলেই হয়তো সবকিছু থেকে মুক্তি মিলবে।
–“ আহিদ তুমি এখানে কি করছো? তুমি জানো কতোকক্ষণ ধরে খুঁজছি তোমায়।”
জেনির কন্ঠস্বর শুনতেই মীরাতের ভাবনার সুঁতো ছিড়লো।সে নিজেকে সামলে নিলো। মাথায় ওড়না টেনে উঠে দাঁড়ালো সে।মেয়েলী স্বরের উৎস খুজতে পেছনের দিকে তাকাতেই আহিয়াদ আর জেনিকে দেখতে পেলো।আরিশাও উঠে পেছনের দিকে তাকালো।
আহিয়াদ আরিশাদের থেকে কিছুটা দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলছে। কথা বলা শেষ করে ফোন পকেটে রাখলো। সামনের দিকে তাকিয়ে দেখলো জেনি তার দিকেই এগিয়ে আসছে।
আহিয়াদ ভ্রু যুগল কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো –“আমায় খুঁজছো কেনো?
জেনি আহিয়াদের সামনে দাঁড়িয়ে বললো–“ নানাজান এসেছেন। তোমার সাথে কথা বলতে চায়।”
–“তুমি যাও আমি আসছি।”
–“ওকে।”
মীরাত আর আরিশা আহিয়াদের আগমন বুঝতে পারেনি।তারা এতোটাই চিন্তিত যে আশেপাশের কোনো কিছুতেই খেয়াল ছিলো না। আরিশা এগিয়ে যায় আহিয়াদের সামনে।সে বললো–“ তুমি যে এদিকটায় এসেছো খেয়ালই করিনি। আসলে দুজন কথা বলছিলাম তো।”
আহিয়াদ গম্ভীরস্বরে আস্বস্ত করে বললো–“ আরে এতো অস্বস্তিতে পরতে হবে না। আমি একটা জরুরী কল করার জন্য নেটওয়ার্কের জন্য এদিকটায় এসে পরেছিলাম। দেখলাম দুজন বসে গল্প করছিস।তাই ডিস্টার্ব করি নি।”
–“ তুমি কিছু শুনো নি তো ভাইয়া?”
আরিশার কন্ঠে স্পষ্ট অস্বস্তিভাব। আহিয়াদ কি মনে করে মীরাতের দিকে তাকালো।মীরাতও আহিয়াদের উত্তরের আশায় তাকিয়ে আছে। দুজনের হঠাৎ দৃষ্টি মিলিত হওয়া মীরাত দ্রুত মাথা নুইয়ে ফেললো । আহিয়াদ চোখ ফিরিয়ে আরিশাকে স্বাভাবিক ভাবে বললো–“ নাহ শুনিনি। ”
–“তাহলে ঠিক আছে।”
আরিশা দম ছেড়ে বললো।সে চায় না মীরাত আহিয়াদের সামনে অস্বস্তিতে পরে যাক। এমনিও মীরাতের মনের অবস্থা শোচনীয়। জেনি কিছু কদম সামনে গিয়ে আবার ফিরে আসলো।মূলত আরিশার কথা শুনে। সে প্রথমে খেয়াল করেনি আরো দুজনও এখানে উপস্থিত আছে।সে মীরাতের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে পা থেকে মাথা অব্দি দেখে নিলো।মেয়েটা দেখতে সুন্দরী তবে সাদামাটা সাজসজ্জা। মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে দেখেই বোঝা যাচ্ছে। কিন্তু কিছু একটা ভেবে নাক মুখ কুঁচকে গেলো তার।
জেনি আরিশার উদ্দেশ্যে ত্যাড়াস্বরে বললো–“ আরিশা এটাই তো সেই মেয়ে যে বিয়ের আসর থেকে পালিয়েছিলো। তুমি এর সাথে বেশী ঘুরো না বুঝলে। দেখা যাবে ওর বাতাস তোমার লেগেছে।”
আরিশার মাথায় দপ করে আগু ন জ্বলে উঠলো যেনো।সে কটমট দৃষ্টিতে তাকিয়ে জেনিকে বললো–“ তুমি কারো সম্পর্কে সঠিক টা না জেনে কথা বলো না। আর আমার ফ্রেন্ডকে নিয়ে একদম কিছু বলবে না।”
জেনি মুখ বেকিয়ে বললো–“ সাবধান করলাম। যে মেয়ে বিয়ের আসর থেকে পালায় তার ক্যারেক্টার কেমন তা বুঝতে বাকী নেই আমার।”
মীরাত জেনির দিকে বিমর্ষ নয়নে তাকিয়ে আছে। প্রতিবাদ করতে পারছে না।প্রতিবাদী স্বর যেনো খুইয়েছে সে। পরিস্থিতি তাকে চুপ থাকতে শিখিয়ে দিয়েছে। একটা মেয়ের চরিত্রে দাগ লাগানোর জন্য আরেকটা মেয়েই যথেষ্ট। আজ একজন বলছে কাল আরেকজন বলবে মুখের ওপর তখন সে কি করবে।ক’জনের মুখ বন্ধ করবে?
আহিয়াদ জেনির এমন কথায় চোয়াল শক্ত হয়ে উঠলো। জেনির দিকে সে র ক্তচক্ষু চোখে তাকালো। বাজখাঁই কন্ঠে বলে উঠলো –“ কারো সম্পর্কে না জেনে তার চরিত্রের ওপর আঙুল তোলার মানে বোঝো? একটা মেয়ে হয়ে আরেকটা মেয়েকে হ্যারাসমেন্ট করছো লজ্জা করছে না? কারো চরিত্র সম্পর্কে মন্তব্য করার রাইট নেই তোমার।ফারদার এমন কিছু আমার চোখে পরলে ভালো হবে না কিন্তু।”
জেনি আহিয়াদের এমন রুপ দেখে পিলে চমকে গেলো। ভয়া র্ত দৃষ্টিতে মানবটির দিকে তাকালো। সে কন্দনরত কন্ঠে বললো –“ আমার সাথে তুমি রুড বিহেভ করলে আহিদ? তুমি জানো আমার বাবা মা আমার সাথে কখনো বাজে বিহেভ করেনি। কখনো বকে নি।”
–“শাসন করেনি তার জন্য তুমি আজ মানুষকে মানুষ মনে করো না। তুমি এখনি মীরাতের কাছে ক্ষমা চাইবে।”
–“ আমি ওই মিডল ক্লাস মেয়ের কাছে কখনোই ক্ষমা চাইবো না।”
জেনি কাঁদতে কাঁদতে দৌড়ে চলে গেলো সেখান থেকে। তার বিশ্বাস হচ্ছেনা আহিয়াদ তার সাথে ওই গাইয়া মেয়েটার জন্য রুড বিহেভ করেছে।
আহিয়াদের হাত রা গে মুষ্ঠিবদ্ধ হয়ে এলো। সে চোখ বন্ধ করে নিজের রা গ কন্ট্রোল করার চেষ্টা করতে লাগলো। ইচ্ছে করছিলো জেনিকে দুই চারটা থা প্পড় বসিয়ে দিতে।
আরিশা মীরাতের কাছে গিয়ে আদুরে কন্ঠে বললো–“ কিছু মনে করিস না বনু। জেনি আপুর তরফ থেকে আমি ক্ষমা চাইছি।”
–“ আজ তোর জেনি আপু বলেছে। কাল অন্য কেউ বলবে। কতো জনের জন্য আমার কাছ থেকে ক্ষমা চাইবি। আমার লাইফটা শেষ হয়ে গেছে। আমার এই পৃথিবী অসহ্য লাগছে। পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে চেয়েছিলাম কিন্তু কেউ একজন বাঁচিয়েছে আমায়। বেঁচে থেকেও ভেতরে ভেতরে ম রে গেছি আমি। ”
মীরাত মনের অব্যক্ত দহ’ন নিয়ে নিজের বাড়ির উদ্দেশ্যে যেতে লাগলো। আরিশা হতাশ হয়ে চেয়ে রইল সেই দিকে।
আহিয়াদ আরিশাকে গম্ভীর কণ্ঠে বললো–“ আরিশা তোর ফ্রেন্ডকে বলে দে লাইফ একটা ট্রাজেডি। যেখানে সুখ,দুঃখ,হাসি, কান্না মিলিয়েই জীবন। জীবন অনেক মূল্যবান। জীবনের কদর করা উচিত। নিজেকে পুনরায় গুছিয়ে নিয়ে লাইফটা নিজের মতো উপভোগ করা উচিত। পেছনে তাকালে কখনো সামনের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ উপভোগ করা সম্ভব নয়।”
মীরাতের পা থেমে গেলো। সে চমকিত নয়নে তাকালো মানবটির দিকে।
[একমাস পর লেখালিখি শুরু করছে আবার। গুছিয়ে লিখতে সময় লাগছে। আজকের পর্বে শব্দ সংখ্যা ১৮০০+। মীরাত আর আযহা একজনেরই নাম। গল্পের সুবিধার্থে মীরাত নাম সব জায়গায় লিখবো। অতীত অনেকটা ক্লিয়ার করে দিয়েছি। পর্বটা কেমন হয়েছে সকলে মতামত জানাবেন।রিয়েক্ট, কমেন্ট করে পাশে থাকবেন।]
চলবে……