#অব্যক্ত প্রেমাসুখ
#আদ্রিতা নিশি
।৬।
[কপি করা নিষিদ্ধ ]
কেউ কি জানে এ অবশ চোখে
কতকাল আর ঘুম হয় না,
কেউ কি জানে এ নিরবতা
বহুদিন আর আলো দেখে না
কেউ কি জানে এ শহর জুড়ে,
কত কান্না করে আজো হাহাকার
কেউ কি জানে এ রাতের আঁধারে,
মিশে আছে এ যন্ত্রণার পাহাড়
কতশত স্বপ্নের ভিড়ে,
তোমার পথের মাঝে দাড়িয়ে
আছে আমার এই সত্তা,
আজোও প্রার্থনায় শুধু তোমায় চাওয়া
শুধু দিয়ে গেলে আমায় যন্ত্রণা
সব হারিয়ে এই নিঃস্ব সকাল
কালো মেঘে আজোও ঢেকে পুরো আকাশ
সব হারিয়ে এই ক্লান্ত শরীর
খোঁজে না তো আর তোমায়……..
বৃষ্টিস্নাত রাত। ধরনীতে ঝিরিঝিরি বৃষ্টির শব্দ ভেসে আসছে। মৃদু বাতাস বইছে চারিদিকে। বৃষ্টি ঝড়ো হাওয়া কমে এসেছে অনেকটাই। বজ্রের শব্দ ও তেমন শোনা যাচ্ছে না। ধরনী তা ভয়াবহ রুপ থেকে শান্ত হয়ে এসেছে। নিকষ কালো অন্ধকারাচ্ছন্ন রুম। মৃদু টেবিল ল্যাম্পের আলোয় আবছা দৃশ্যমান বিছানার চারিপাশ। আহিয়াদ বিছানায় হেলান দিয়ে বসে আছে।তার দুহাতের মধ্যখানে স্থান পেয়েছে প্রিয় গিটারটি। একহাতে ধরে আরেক হাতের আঙুলের ছোঁয়ায় মনোমুগ্ধকর গিটারের ধ্বনি থেমে থেমে বেজে উঠছে। একই সাথে আহিয়াদ চোখ বন্ধ করে তাল মিলিয়ে গান গাইছে। মনকে শান্ত করার জন্য গান ছাড়া আর কোনো কিছু মাথায় আসে নি তার।
– আহিদ! ওপেন দ্যা ডোর। আমার কথা শুনতে পাচ্ছো?
দরজার বাহিরে জেনির কন্ঠস্বর শোনা যাচ্ছে। বেশ কয়েকবার ইতোমধ্যে ডেকেছে, একটু পর পর দরজায় নক করছে। আহিয়াদের কর্ণকুহরে জেনির কন্ঠস্বর পৌছেছে বেশ কয়েকবার। আহিয়াদের মুহুর্তেই গান থেমে গেলো। জেনির হঠাৎ আগমনে বিরক্তিতে কপাল কুঁচকে গেলো তার। অনেকটাই ক্ষুব্ধ হলো সে। চোয়াল শক্ত হয়ে এলো আহিয়াদের। হাতে থাকা গিটারটি বিছানার ওপর রেখে টি শার্ট টেনে দরজার দিকে এগিয়ে গেলো সে। লাইট অন করে দরজা খুলে দিলো। সামনে জেনিকে দেখে বিরক্তির মাত্রা বাড়লো তার। জেনি আহিয়াদকে দরজা খুলতে দেখে মনে মনে খুশি হলো। মুখ জুড়ে খুশির রেখা ফুটে উঠেছে। চোখের সামনে লম্বাটে, সুদর্শন, গম্ভীর মানুষটিকে দেখে বেসামাল হয়ে উঠলো তার মন। নিজেকে দ্রুত সামলে নিলো। সে তো ভেবেছিলো দরজা হয়তো খুলবে না।
আহিয়াদ সরু দৃষ্টিতে জেনিকে অবলোকন করে গম্ভীর কণ্ঠে শুধালো – এতো রাতে এখানে কেনো এসেছো তুমি?
জেনির মুখ শুকিয়ে এলো।সে বুঝতে পারলো এতো রাতে হয়তো আহিয়াদ তাকে দেখে একদম খুশি হয়নি। সে শুকনো মুখে বললো – আসলে আমার ঘুম আসছিলো না।
আহিয়াদ ভ্রু কুঁচকে বললো– তো এখানে কেনো এসেছো? আমার জানা মতে তো আমি ঘুমের ঔষধ সাপ্লাই দেই না যে সেটা নিতে আসবে?
জেনি কিছুটা অস্বস্তিতে পরে গেলো। সে আমতা আমতা করে বললো– তখন তোমায় কল করেছিলাম আমার কল রিসিভ করোনি।ভেবেছিলাম হয়তো তুমি ঘুমিয়ে পরেছিলে। কিন্তু তোমার গান শুনে চলে আসলাম। আমার ঘুম আসছিলো না ভাবলাম তোমার রুমে বসে গান শোনা যায়।
আহিয়াদ গম্ভীর কণ্ঠে বললো – তোমার রুমে বসে শুনতে পারতে। এখানে আসার দরকার ছিলোনা অযথা এসে আমায় ডিস্টার্ব করলে তুমি।
জেনির ফুরফুরে মেজাজ বিগড়ে গেলো তখনি। ভালোলাগা নিমেষেই মন থেকে বিদায় নিয়েছে। তিরিক্ষি মেজাজে সে বলে উঠলো – তুমি আমায় অপমান করছো আহিদ।
আহিয়াদ ভ্রুক্ষেপহীনভাবে বললো– অপমান কোথায় করলাম? আমি তো নরমালি কথাটা বলেছি। তুমি না বুঝে গায়ে লাগাচ্ছো।
– বুঝলাম। তুমি আমায় ইগনোর করছো আমি ভালোভাবেই বুঝতে পারছি। এমনটা কেনো করছো বলো?
– তোমায় আমি পাত্তা দিলাম কবে বলো তো? উমম আমার তো মনে পরছে না। পাত্তা দিলে তো ইগনোর করার কথা আসতো তাই না?
জেনির মুখ অপমানে থমথমে হয়ে গেলো। ক্রোধ মিশ্রিত চোখে তাকিয়ে আছে আহিয়াদের দিকে।মনে মনে অনেক ক্ষিপ্ত হয়েছে সে।
– তুমি বোধ হয় ভুলে যাচ্ছো আমাদের সম্পর্কটা কি?
আহিয়াদ তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলো।সম্পর্কের কথাটা শুনে তার কাছে হাস্যকর মনে হয়েছে। যে মেয়ে নিজে সম্পর্কের মূল্য দিতে জানেনা সে আবার সম্পর্কের কথা মনে করাচ্ছে। জেনি আহিয়াদের হাসি দেখে অবাক হলো।সে ভেবে পেলোনা হাসার মতো কি বলেছে সে।
– সম্পর্ক? ইউ মিন রিলেশন? এম আই রাইট?
– ইয়েস।আমাদের রিলেশনের কথা ভুলে যাচ্ছো তুমি। আগে তো আমায় ইগনোর করতে না তবে এখন কেনো করো?
– তোমার নিশ্চয়ই মনে আছে আগে আমাদের সম্পর্ক ফ্রেণ্ডের মতো ছিলো। তবে যেদিন থেকে তোমার আর তোমার ফ্যামিলির উদ্দেশ্যর কথা জেনেছি সেদিন থেকে আমি তোমায় ফ্রেন্ড ও ভাবিনা আর ভবিষ্যতে কিছু ভাবার প্রশ্নও আসে না। গট ইট!
আহিয়াদ শেষের কথাটা কাঠিন্যতার সাথে বলে উঠলো। জেনি চমকে গেলো। সে চোখ বড় বড় করে তাকালো সামনে দন্ডায়মান মানুষটির দিকে। আহিয়াদ আবারও তার সাথে রুড বিহেভ করছে। তার মানতে ক ষ্ট হচ্ছে।চোখ জ্ব লছে তার ।
– আহিদ তুমি কিন্তু ভুলে যাচ্ছো সকলের মতেই আমাদের বিয়ে…
জেনি থেমে গেলো। আহিয়াদের দিকে গুরু গম্ভীর মুখ পাণে একপলক তাকিয়ে সে আবারো বললো – তখন তো সকলের সামনে কিছু বলোনি। ভুলে যেও না আমি তোমার কি হই।
– শাট আপ জেনি। আবারও সেই সো কল্ড বিয়ের কাহিনী শুরু করোনা। আমার কিন্তু এক মিনিটও লাগবে না এই সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসতে। তুমি হয়তো ভুলে যাচ্ছো আমার জন্যই তুমি আজ আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছো। ইচ্ছে করলে এখনই তোমায় রাস্তায় ছুঁড়ে ফেলে দিতে পারি।
– ওই মীরাতের জন্য আমায় ছুঁড়ে ফেলে দিতে চাইছো?
আহিয়াদ অবাক হলো না জেনির কথায়। সে শান্ত দৃষ্টিতে তাকালো শুধু। সে তো জেনির থেকে ভালো কিছু আশা করে না। যার মন মানসিকতা নিচু তার মুখে এমন যুক্তিহীন কথা মানায়। জেনির এমন অযৌক্তিক কথা তার কাছে অপরিচিত নয়। প্রায় সময়ই আহিয়াদকে এসব টলারেট করতে হয়।
আহিয়াদ দাঁতে দাঁত চেপে তর্জনী আঙুল উঁচিয়ে বলে উঠলো – তুমি কিন্তু বেশী কথা বলছো।আর মীরাতকে কেনো আমাদের মাঝে টানছো? তুমি হয়তো ভুলে যাচ্ছো কোথায় কি বলতে হয়।
জেনি রুদ্ধ কন্ঠে বললো– ভুলে গেছো তাই না? ওই মেয়ের জন্য আমায় অপমান করেছো। আজ সন্ধ্যায় তাকে কোলে নিয়ে এই বাড়িতে ঢুকেছো।আমি কিন্তু কিছু ভুলিনি। সবকিছুর হিসাব আমার কাছে রয়েছে। আমার প্রাপ্য তুমি ওই মিডল ক্লাস মেয়েকে দিয়েছো। এটার হিসাবও আমার কাছে আছে।
আহিয়াদ বাঁকা হেসে বলে উঠলো – তোমার প্রাপ্য? ইন্টারেস্টিং লাগলো কথাটা শুনে। একটা প্রশ্নের উত্তর দাও শুধু। আমার ওপর তোমার কি অধিকার আছে।?
জেনি তেজি গলায় বললো – তুমি আমার বুঝেছো? তোমার ওপর শুধু আমার অধিকার।
আহিয়াদ চোখ ঘুরিয়ে আশেপাশে দেখে নিলো। কাঠিন্যতা এটে বললো– রাত হয়েছে ঘুমিয়ে পরো। এখানে দাঁড়িয়ে সিনক্রিয়েট করো না। আর যত দ্রুত পারো নিজের লাগেজ গুছিয়ে নিও। আগামীকাল আমরা ঢাকায় ফিরছি।
– আমি আরও কয়েকদিন থাকতে চাই। নানাজান কে আমাদের সম্পর্কের কথা অবগত করতে চাই। সে তো আমার আর তোমার বিষয়ে আসল কথাটা জানে না। আমি চাই নানাজান সহ সকলে জানুক।
– এ্যাজ ইউর উইশ। আমার কিছু যায় আসে না এতে। যা ইচ্ছে করো। আই ডোন্ট কেয়ার। গুড নাইট।
আহিয়াদ কথাটা সম্পূর্ণ করেই ধম করে দরজা আঁটকে দিলো। জেনি ছিটকে দু কদম পিছিয়ে গেলো।সে বদ্ধ দরজার দিকে একপলক তাকিয়ে রা গে গজগজ করতে করতে রুমে যেতে লাগলো।
★★
রাত পেরিয়ে সকাল হয়েছে। ঘড়িতে দশটা বেজে পনেরো মিনিট। বাড়ির সকলে খাওয়া দাওয়া শেষ করে যে যার মতো কাজে ব্যস্ত হয়ে পরেছে। আহিয়াদ আর নিহাল আসাদ সাহেবকে বাস স্টেন্ডে পৌঁছে দিতে গিয়েছে। আসাদ সাহেব চাকরী সূত্রে ঢাকায় ২৪ বছর ধরে বসবাস করেন। সেখানে স্ত্রী আর এক সন্তান নিয়ে বাসায় থাকেন। চারদিনের ছুটিতে বাড়ির সকলের সাথে দেখা করতে এসেছিলেন।
মীরাত আর আরিশা খাবার খেয়ে ডাইনিং রুমে বসে আছে। দুজনই নিশ্চুপ হয়ে আছে। কারো মুখে কথা নেই তেমন। আরিশা উসখুস করছে কথা বলার জন্য কিন্তু কিভাবে কি কথা বলবে বুঝে উঠতে পারছে না।সে বুঝতে পারছে মীরাতের মন খারাপ। আফিয়া বেগম মীরাতকে বাড়িতে নিয়ে যেতে এসেছিলেন। মুন্সি সাহেব যেতে দেয়নি। তিনি বলেছেন এখন থেকে মীরাত চেয়ারম্যান বাড়িতেই থাকবে। আফিয়া বেগমও আর জোর করেনি। তিনি বুঝেছে এখানে থাকলে মীরা সাবধানে থাকবে।
আহিয়াদ আর নিহাল মাত্রই বাড়িতে আসলো। দুজনের অবস্থা বেহাল। ঘেমে নেয়ে একাকার অবস্থা। বাহিরে প্রচন্ড গরম।আজকের দিনটা বেশ রৌদ্রজ্জ্বল আর উত্তপ্ত। বাহিরে গাছের পাতা স্থির হয়ে আছে। বাতাস না হওয়ায় আরও গরম বেশী লাগছে। আহিয়াদ আর নিহাল সোফায় এসে বসলো। ক্লান্তিতে গা এলিয়ে দিলো সোফায়।
নিহাল আরিশাকে উদ্দেশ্য করে বললো – আরিশা আমাদের দুজনের জন্য ঠান্ডা পানি নিয়ে আয়।
আরিশা নিহালের কন্ঠস্বর শুনে পাশের সোফায় তাকালো। সে দুজনকে খেয়াল করেনি এতোক্ষণ ।
আরিশা উঠে দাঁড়িয়ে যেতে যেতে বললো – আনছি।
নিহাল মীরাতকে বললো – এখন কেমন আছো? শরীর সুস্থ লাগছে?
নিহালের কন্ঠস্বর শুনে মীরাত ওষ্ঠ প্রসারিত করে বলে – আলহামদুলিল্লাহ সুস্থ আছি।
– টেনশন করো না অতীতে ঘটে যাওয়া ঘটনা নিয়ে।
– ঠিক আছে ভাইয়া।
আহিয়াদ ফোনে কিছু একটা দেখতে ব্যস্ত। নিহাল আর মীরাতের কথায় তার মনোযোগ নেই। মীরাতের আহিয়াদের দিকে দৃষ্টি পরলো। সে খেয়াল করলো মানবটি আজ অধিক গম্ভীর। গত কয়েকদিনের থেকে অনেকটা অন্যরকম লাগছে। তবে কি কিছু হয়েছে? মীরাত সিঁড়ির কাছে জেনিকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলো। দেখতে সুন্দর হলেও ভ্রু প্লাগ করা,চুলের কালার ঘোড়ার লেজের মতো, কৃত্রিম সাজসজ্জায় নিজেকে সাজিয়ে রাখে। দেখলে অহংকারী ও মনে হচ্ছে। এমন ভাবে তাকিয়ে আছে যেনো তাকে গিলে খাবে। মীরাত দ্রুত চোখ সরিয়ে নিলো।আরিশা নিহাল আর আহিয়াদকে ঠান্ডা পানি খাইয়ে জগ রান্নাঘরে রেখে আসলো। নিহাল আর ডাইনিং রুমে বসলো না। সে উঠে ফ্রেশ হওয়ার জন্য রুমের দিকে যেতেই জেনিকে দেখতে পেলো। সে দিকে পাত্তা না দিয়ে সিঁড়ি বেয়ে ওপর তালায় উঠে গেলো।
আরিশা মীরাতের পাশে এসে বসলো। সে আহিয়াদকে আগ্রহী কন্ঠে বলে জিজ্ঞেস করলো – ভাইয়া তুমি কি আজই চলে যাবে?
আহিয়াদ ফোনে টাইপিং থামিয়ে সামনে তাকিয়ে উত্তর দিলো – আজ সন্ধ্যায় রওনা দেবো।
আরিশা মন খারাপ করে বললো– আর কয়েকটা দিন থেকে যাও প্লিজ।
আহিয়াদ শান্ত কন্ঠে বললো– উহু পসিবল নয়। দ্রুত ফিরতে হবে।
– ফাবিহাকে নিয়ে আসলে কতো মজা হতো কিন্তু তুমি নিয়ে আসো নি। বেচারী আমায় কল করে তোমার নামে অভিযোগ জানায়।
– পরের বার নিয়ে আসবো। ফাবিহা আসে নি তো কি হয়েছে জেনি তো ছিলো মজা করার জন্য।
– জেনি আপু সহজে কারো সাথে মিশতে পারে না। ফান ও বুঝে না। দেখা গেলো মজা করলাম আর সে রে গে বো’ম হয়ে গেলো।
– বুঝলাম।
জেনি আর এক মুহুর্ত সেখানে দাঁড়ালো না। এসব দেখে তার সহ্য হচ্ছে না। কেনো যে এই গ্রামে আহিয়াদের পিছু পিছু আসলো ভাবতে ভাবতে দ্রুত পায়ে নিজের নির্ধারিত রুমে চলে গেলো।
মীরাত জেনির চলে যাওয়াটা দেখলো শুধু। হয়তো রা’গ করে চলে গেছে। ভাবতে দীর্ঘ শ্বাস নিলো সে। গত কয়েকদিনেও জেনির পরিচয়টা তার কাছে ক্লিয়ার নয়। তবে আহিয়াদ যে তার মায়ের বান্ধবীর ছেলে সে সম্পর্কে অবগত করেছে আরিশা। টুকটাক কিছু কথা তার জানা।
আরিশার ফোন বেজে উঠতেই সে কল রিসিভ করে কিছুটা দূরে কথা বলতে গেলো। আহিয়াদ ফোনে মনোযোগ দিলো।
– ধন্যবাদ আপনাকে।
আহিয়াদের কর্ণকুহরে মীরাতের মেয়েলী কন্ঠস্বর প্রবেশ করলো। সে ফোন স্ক্রিন থেকে চোখ সরিয়ে মীরাতের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো।
আহিয়াদ কপাল কুঁচকে বললো – ধন্যবাদ? হঠাৎ এটার কারণ কি?
মীরাত ইতস্ততার সহিত বললে উঠলো– মহিলাগুলোকে পুলিশে দেওয়ার জন্য।
আহিয়াদ কপাল টানটান করে গম্ভীর কণ্ঠে বললো – আমার জায়গায় গ্রামের অন্য কেউ থাকলে এমনটায় করতো।
মীরাত মলিন হেসে বললো – আপনি হয়তো গ্রামে নতুন। শহরের মানুষ তাই মহিলাগুলোর বিরুদ্ধে গিয়ে এতো বড় পদক্ষেপ নিয়েছেন। অন্য কেউ হলে কখনো ওই মহিলাগুলোকে পুলিশে দিতো না। এর আগেও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটিয়েছে বেশ কয়েকবার তবুও কেউ কিছু বলেনি।সকলেই ছিলো নিশ্চুপ।
আহিয়াদ মীরাতের মলিন মুখশ্রীতে তাকালো। বুঝলো মীরাত এখনো স্বাভাবিক হতে পারেনি। ভেতরে ভেতরে ভ’য়ে আছে।
আহিয়াদ প্রতিত্তোরে বললো – মহিলাগুলো শাস্তি পাবে এটা জেনে রেখো। আর নিজেকে এমন ভাবে তৈরী করো কেউ যেনো আঘা ত করতে না পারে। সাহসী হও, প্রতিবাদী হও,নিজেকে নতুন ভাবে গড়ো।
মীরাত আহিয়াদের কথায় অভিভূত হলো। সে এটা ভেবে অবাক হয়ে যায় একজন অচেনা মানুষ হয়েও চেনা মানুষের ন্যায় উপদেশ দেয়। কথাগুলো মন ছুঁয়ে যাওয়া মতো। মীরাতের মনে হলো আহিয়াদ একজন পারফেক্ট মানুষ। জেনি মেয়েটার কপাল ভালো যে এমন একজন মানুষ পেয়েছে।
আহিয়াদ সোফা থেকে উঠে দাঁড়ালো। জামা কাপড় গোছগাছ করা লাগবে। যেহেতু আজই ঢাকায় যাওয়ার প্ল্যান সেহেতু আর আর দেরী করে লাভ নেই। আহিয়াদ রুমের দিকে যেতে লাগলো এমন সময় মীরাত পেছন থেকে ডেকে উঠলো।
– আপনি কি সত্যি আজ ঢাকায় চলে যাবেন?
আহিয়াদ পিছু ফিরে সরাসরি তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে মীরাতের দিকে তাকায়। মীরাত কৌতূহলী হয়ে আহিয়াদের দিকে তাকিয়ে আছে। দুজনের চোখাচোখি হতেই মীরাত কৌতুহলী দৃষ্টিদ্বয় ফিরিয়ে অন্যদিকে তাকায়।
আহিয়াদ মীরাতের নিজ থেকে কথা বলাতে অবাক হতে গিয়েও হয়নি। কারণ সে বুঝতে পেরেছে হয়তো মীরাত নিজেকে স্বাভাবিক দেখাতে চাইছে। জঘন্য অতীত থেকে বেরিয়ে আসার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। আস্তে ধীরে হলেও স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসুক মীরাত সে এটাই চায়।
আহিয়াদ স্বাভাবিক ভাবভঙ্গি বজায় রেখে শান্ত কন্ঠে উত্তর দিলো – আজ সন্ধ্যা সাতটার পর রওনা দিবো।
আহিয়াদ আর কিছু বলে কথা বাড়ালো না। সে রুমের উদ্দেশ্যে পা বাড়ালো।মীরাত মলিন দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল সেই দিকে।
[ আজকের পর্ব কেমন হয়েছে সকলে জানাবেন। পরবর্তী পর্বে টুইস্ট আনার চেষ্টা করবো।]
চলবে…..