অব্যক্ত ভালোবাসার গল্প writer : Lovely khanom part : 48

2
6159

অব্যক্ত ভালোবাসার গল্প
writer : Lovely khanom
part : 48

তোমাকে আমি ঘৃর্ণা করি মিহাদ,,,
ঘৃর্ণা করি,,,
মিহাদকে কিছু বলেত না দিয়েই দৌড়ে ওর বাসা থেকে বেরিয়ে গেলাম,,,,
খুব কষ্ট হচ্ছে আমার,,,
চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়ছে,,,
চোখের পানি মুছতে মুছতে রাস্তা দিয়ে দৌড়াচ্ছি,,,,,
হঠাৎ কারো গাড়ির সামনে পড়লাম,,,
তবে গাড়ি ঠিক সময়ে ব্রেক করাতে বেচে গেছি একটুর জন্যে,,,,
নয়তো সোজা গাড়ির নিচে গিয়ে পড়তাম,,,,,,,
.
চোখের পানি মুছে সামনে তাকাতেই দেখি গাড়িটা সাইফের,,,,
ও আমাকে এভাবে দেখবে হয়তো ভাবতে পারেনি,,,,
জলদি করে গাড়ি থেকে নেমে আমার কাছে এসে বললো,,,
সানিয়া কি হয়েছে তোমার???
আর তুমি এখানে কেনো???
.
আমি কাদতে কাদতে সাইফের বুকে আচড়ে পড়ি,,,,
সাইফও আমাকে আকড়ে ধরলো,,,
সানিয়া তুমি কাদছো কেনো???
কি হয়েছে বলো??
.
আমি কেদেই যাচ্ছি,,,
সাইফ আমার চোখ মুছে দিয়ে বললো,,
এই পাগলী কাদছো কেনো,,,
মানুষে দেখলে আমাকে পেটাবে তো,,
বলবে বউকে মেরেছে,,,
সানিয়া কি হলো বলো,,,,
.
আমি সাইফের বুক থেকে মাথা উঠিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করে বললাম,,,
কিছু হয়নি,,,
আম্মুর কথা খুব মনে পড়ছিলো,,,
.
সাইফ মুচকি হেসে,,,
ওহহ তাই নাকি,,,
তাই বলে এভাবে কাদতে হয়,,,
পাগলী একটা,,, গাড়িতে বসো,,,,
.
আমি গাড়িতে বসলে সাইফ সোজা আমাদের বাসায় নিয়ে আসে আমাকে,,,,
আমি অবাক হয়ে হা করে সাইফের দিকে তাকিয়ে থাকি,,,,
.
সাইফ মুচকি হেসেঁ,,,,
ভ্রু নাচিয়ে কি কেমন লাগলো ধামাকা,,,,
নামো এবার,,,,
সাইফ গাড়ীর ডোর খুলে দিলো কিন্তু আমি সাইফের দিকে তাকিয়ে আছি,,,,
.
সাইফ :::::::: ওহ হ্যালো ম্যাডাম,,,,
গাড়িতেই বসে থাকবেন নাকি নামবেন,,,,,,,
.
সাইফের কথাই আমার ঘোর কাটলো,,,,,
আব্বু আম্মু আমাদের হঠাৎ করে দেখে খুব অবাক হলেন,,,,,
তবে বেশ খুশিও হলেন কারণ মেয়ে জামাই সহ এসেছে,,,,
আম্মু তাড়াহুড়ো করছেন ফ্রিজ থেকে এটা ওটা বের করছেন মেয়ের জামাইকে খাওয়াবে বলে,,,,
.
আম্মু আমাকে ইশারায় কিচেনে যেতে বললে আমি গেলাম,,,
আম্মু আমাকে একা পেয়ে এক গাধা বকে দিলো,,,
বললো জামাই আসবে আগে বলবি না,,,
খবর দিতে হবে তো,,,
কত রান্না বান্নার ব্যাপার,,,
এতো রান্না কিভাবে করি আমি,,,,
.
সাইফ আমার আব্বু আম্মুকে কত সম্মান দিয়ে কথা বলছে,,,
আব্বুও হেসে হেসে কথা বলছে,,,
আব্বু আম্মুর চেহেরায় খুশির ঝলকানি,,,
আম্মু রান্না বান্না করছে আর আমি টেবিলে সব সাজিয়ে দিচ্ছি সাইফ কিচেনে এসে আম্মুকে হেল্প করছে,,,
শশা কেটে দিচ্ছে,,,গাজর কাটছে,, আর আম্মু ওকে বারবার এসব করতে নিষেধ করছে,,,,
কিন্তু কে শোনে কার কথা,,,
তারপর সাইফ এসে আমার সাথে টেবিল সাজানো শুরু করলো,,,
আম্মু হাসছে সাইফের কান্ড দেখে,,,
কি সুন্দর ভাবে মানিয়ে নিলো সাইফ আমার ফ্যামিলিকে,,,
এটা যেনো তার নিজেরই ফ্যামিলি,,,,,
.
রাতের খাওয়া শেষ করেই বাসায় চলে এলাম,,,,
মধ্য রাতে আমি প্রচন্ড শীতে কাপঁছিলাম,,,,,,
সাইফ ঘুম থেকে জেগে আমার কপালে হাত দিয়ে দেখে অনেক জ্বর,,,,
জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে,,,
সাইফ আমার মাথায় পানি ঢেলে দিলো,,
জরপট্টি দিয়ে দিলো,,,
তারপর স্যুপ রান্না কর এনে নিজের হাতে জোর করে খাইয়ে দিলো,,,,
মেডিসিনও খাইয়ে দিলো,,,
তারপর ব্লানকেট গায়ের উপর মেলে দিয়ে আমার কপালে ম্যাসাজ করে আমায় ঘুম পাড়িয়ে দিলো,,,
.
জ্বরটা দুদিন ছিলো,,,
আর সাইফ এই দুদিন অফিসে না গিয়ে সবসময় আসার সেবা করেছে,,,
আমার যত্ন নিয়েছে,,,,
আমি শুধু ভাবছি এমন একটা ভালো মনের মানুষকে আমি কিভাবে এতবড় কষ্টটা দিবো,,,,
.
মিহাদ যে ফোন দিয়ে কান্নাকাটি করে সরি বললো,,,
অনেক বার ক্ষমা চাইলো,,,
মিট করতে বললে আমি রাজি হয়না,,,
আমাকে দেখতে আসতে চাইলেও আমি নিষেধ করি,,,,,
এদিকে সাইফের প্রতি খুব বেশি উইক হয়ে পড়ি আমি,,,,
কেটে গেলো চার পাঁচটা দিন,,,,
জেসিয়া আপি মামুন জিজু আমাদের দেখতে আসলেন,,,,
অনেক বেশি ভালোবাসেন তারা আমায়,,,,,,,
ফুফা ফুফি ও আমায় নিজের মেয়ের মতো আদর যত্ন করেন,,,,
পরিশেষে জানতে পারি সাব্বির লুৎফাকে প্রপোজ করে,,,
তারা একে অপরকে বিয়েও করবে,,,,,,
কয়েকটা রাত আমার ঘুম হয়না,,,,
ঘুমুতে পারিনা আমি,,,
একটা অদ্ভুত স্বপ্ন দেখে আমার গভীর ঘুমটা ভেঙ্গে যায়।
.
স্বপ্নটা হলো এমন আমি ট্রেন ধরতে যাই আর ট্রেনটা ছুটে যাচ্ছে কিন্তু আমি ধরতে পারছি না,,,,,
মনে হয় খুব ইমপরটেন্ট একটা জিনিস আমি হারিয়ে ফেলছি,,,,,
ঠিক সেদিন থেকেই স্বপ্নটা দেখছিলাম
যেদিন থেকে মিহাদ বলেছিলো ১৫ তারিখ আমাকে নিয়ে মিহাদ পালিয়ে যাবে,,,
মিহাদের নানু বাড়ি কুমিল্লায়,,,
মিহাদ আগে গিয়ে সব ঠিকটাক করবে আর পরে সাইফ আমাকে দিয়ে আসবে,,,
.
সাইফও কোনো কিছু বললো না শুধু এটাই বললো,,
সানিয়া তুমি সুখে থাকলেই হলো,,
সেটা আমার সাথে হোক বা মিহাদের সাথে হোক,,,
তুমি সুখে থাকবে এটা হচ্ছে বড় কথা,,,
সাইফের সেই কথাটা মনে পড়ে গেলো,,,
যেদিন মিহাদ আমাকে তার বাসায় পার্টি হবে বলে মিথ্যে বলেছিলো আমাকে,,,
আমি সাইফ থেকে অনুমতি নিলে তখন সাইফ বললো,,,
.
সানিয়া বর্তমানে তুমি আমার স্ত্রী,,,,
তোমার ভালো মন্দ দেখার দায়িত্ব আমাকে দিয়েছেন তোমার আব্বু আম্মু,,,
সো আমি চাইনা তোমার কোনো ক্ষতি হোক,,,,,
তাই মিহাদের সাথে মিট করতে তোমায় একা যেতে দিতে পারিনা,,,
এমনকি বাইরে কোথাও একা যেতে দিবোনা,,,,,
.
জেসিয়া আপি মামুন জিজু,,, ফুফা ফুফি সবাই নিচে বসে হাসাহাসি করছে,,,,
কত মজা করছে,,,
আর আমি ব্যাগ গুছিয়ে নিচ্ছি,,,,
.
সাইফ সেই শাড়িটাও দিলো,,,,
কোন শাড়িটা,,,,
যেদিন শপিংয়ে গিয়েছিলাম মিহাদ সহ,,,
যেই শাড়িটা আমার ভিষণ পছন্দ হয়েছিলো কিন্তু মিহাদ পছন্দ করেনি সেই শাড়িটাই সাইফ লুকিয়ে কিনেছিলো,,,
.
তারপর বাসায় আসলে আমি দেখে ফেলি,,,
জিঙ্গেস করি এটা কার জন্যে???
সাইফ উত্তর দিলো একজন স্পেশাল মানুষের জন্যে যাকে সাইফ নিজের চাইতেও বেশি ভালোবাসে,,,,
.
আমি ভেতরে ভেতরে জ্বলে পুড়ে আবারো জিঙ্গেস করলাম,,,,
কে সে???
.
ভেবেছিলাম হয়তো আমার কথা বলবে কিন্তু না সাইফ অন্য দিকে মুখ করে বললো দেখতে চাও তাকে???
.
আমার হাঁসি মাখা মুখটা মুহূূতেই মলিন হয়ে গেলো,,,
তারপরও জোর পূর্বক হাঁসি ফুটিয়ে বললাম হা দেখতে চাই,,,,
.
তারপর সাইফ বললো সে খুব স্পেশাল সো তাকে দেখতে হলে তার মতোই সেজে যেতে হবে,,,
কাল তুমি শাড়িটা পড়ে রেডি থাকিও আমি নিয়ে যাবো তোমায় তার সাথে মিট করাতে,,,,,
.
সেই রাতে আমার অনেক কষ্ট লেগেছিলো,,,,
কেনো জানিনা চোখের কোণ বেয়ে দু ফোটা পানি গড়িয়ে পড়েছিলো,,,
সাইফও অন্য কাউকে ভালোবাসে,,,,
জানিনা কেনো বুকে ভীষণ ব্যাথা করছিলো,,,,,,
.
পরদিন আমি শাড়িটা পড়ে খুব সুন্দর করে সেজে রেডি হয়ে থাকি,,,,
কিন্তু মনটা খুব খারাপ,,,,
সুন্দর করে সেজেছি সেই মেয়েটার থেকে যেনো আমায় বেশি সুন্দর দেখায়,,,,,,
.
সাইফ এসে আমাকে পিক করলো,,,
কোনো একটা জায়গায় নিয়ে গেলো যেখানে কেউ নেই,,,,
গাড়ি থামলো,,,
আমাকে দরজা খুলে দিলো,,,,
আমি নামলাম,,,,
পায়ের নিচে ঘাস,,,,
একটা মাঠের মতো জায়গা,,,,
ফুল দিয়ে চারোদিকে সাজানো,,,,
নিচে ঘাসের উপরও ফুল দিয়ে রাস্তা বানানো হয়েছে,,,,,
আমি সাইফকে জিঙ্গেস করলাম কোথায় আপনার সেই স্পেশাল মানুষটা???
.
সাইফ মুচকি হেসেঁ আমাকে হাত দিয়ে ইশারা করে দেখিয়ে দিলো ফুলের রাস্তাটা দিয়ে সামনে এগুতে,,,
আমি একটু একটু করে সামনে এগিয়ে যাচ্ছি,,,,,
সাইফও সাথে সাথে যাচ্ছে,,,,
.
কিছুটা এসেই আমি থেমে গেলাম,,,,
কারণ সামনে বড় একটা দরজার মতো কি যেনো আর তার উপর কালো অনেক বড় একটা কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে,,,,
.
আমি সাইফের দিকে তাকিয়ে বললাম কোথায় সে???
সাইফ ধীরে ধীরে কাপড় দিয়ে ঢাকা বিশাল দরজাটার পাশে গিয়ে বললো,,,
এটা হচ্ছে আমার জিবনের সবচেয়ে বড় স্পেশাল মানুষ,,,,,
যার হাটার প্রতিটা শব্দে আমার হার্টবিট থমকে যায়,,,,,
যার চোখে চোখ রাখলে আমার ভেতরে তোলপাড় শুরু হয়ে যায়,,,,
ডুব দিতে ইচ্ছে করে সেই চোখের নদীতে,,,,,
যার গোলাপের পাপড়ির মতো ঠোটঁ জোড়া দেখে উষ্ণ ছোয়া দিতে মনচায়,,,,,,,,,
যার চুলের মিষ্টি ঘ্রাণে আমি মাতাল হয়ে যায়,,,,,
আমি আজ দেখাতে চাই তোমাকে সানিয়া আমার সেই স্পেশাল মন হরণ কারিণীকে,,,,,
যাকে আমি আমার মনের রাজ্যের রানি বানিয়ে রেখেছি,,,,
সাইফ আমার দিকে তাকিয়ে কথা গুলো বলতে বলতে হঠাৎ দরজা থেকে কাপড়টা সরিয়ে দিলো,,,,
.
আর আমি সামনে তাকিয়ে অবাকের চরম পর্যায়ে পৌছে গেছি,,,,,
যেটাকে আমি এতক্ষণ দরজা ভাবছিলাম সেটা কিন্তু দরজা না,,,,
অনেক বড় একটা মিরর,,,,,
.
আমাকে পুরো দেখা যাচ্ছে,,,,,
আমি নিজেকে আয়নায় দেখে চরম অবাক হলাম,,,,,
আর উপর থেকে ফুল ঝুড়ি আমাকে ভাসিয়ে দিচ্ছে,,,,
গোলাপের পাপড়ি আমার মাথায়,,, মুখে সারা গায়ে পড়ছে,,,,
আমি সাইফের দিকে তাকালে সাইফ অট্ট হাঁসি দিয়ে আয়নায় আমার প্রতিচ্ছবিকে স্পর্শ করে বলে এই যে আমার সেই স্পেশাল ভালোবাসার মানুষটা,,,,
দেখলে তো তোমার চাইতে কতো সুন্দর,,,,
ওর চুল,,,চোখ,, ঠোটঁ সব আমাকে মাতাল করে দেয়,,,,
ওকে দেখলেই আমার হার্টবিট থমকে যায়,,,,,
আমি অবাক তো হলাম সাথে এক রাশ লজ্জা নিয়ে অন্য দিকে ফিরে গেলাম,,,,
তার মানে সাইফ আমাকে ভালোবাসে,,,,,
আমার যে কি খুশি লাগছিলো ভাষায় প্রকাশ করার মতো না,,,,
.
কিন্তু একটু পরেই সেই খুশিটা উদাও হয়ে গেলো,,,
সাইফ মুখে এক রাশ মলিনতা নিয়ে বললো,,,,
কিন্তু সে অন্যকাউকে ভালোবাসে,,,
সে আমার জন্যে না,,,
সে শুধুই মিহাদের,,,,
.
ভাবনায় ছেদ পড়লো সাইফের চুটকিতে,,,,,,
সানিয়া কি হলো,,,
লেইট হয়ে যাবে তো,,,,
তোমাকে নামিয়ে দিয়েই আমি আবার ব্যাক করবো,,,,
.
সাইফ আমার চোখে চোখ মিলাচ্ছে না,,,,
নিচের দিকে তাকিয়েই কথা গুলো বললো,,,,,
তারপর নিচে জেসিয়া আপু,,,মামুন জিজু,,, ফুফা ফুফিকে সালাম করে বাসা থেকে বের হলাম,,,,
ওরা সবাই জানে আমি বাবার বাসায় যাচ্ছি কদিনের জন্যে,,,,
তাই ওরা আমাকে হাঁসি মুখেই বিদায় দিলো,,,,,
তবে জেসিয়া আপি আমাকে ঝাপটে জড়িয়ে ধরলো,,,,,
সানিয়া তোমায় খুব বেশি মিস করবো,,,
খুব তারাতারি চলে আসবা কিন্তু বেশিদিন থাকবা না,,,,
কানে ফিসফিসিয়ে বললো,,,
আমার যে গুলুমুলু একটা ছোট্ট সাইফ চাই বলেই আপি মুখ চেপে হাসছে,,,,
.
আমি বড় একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে বললাম হুম আপু,,,,
তারপর গাড়ি করে ট্রেন স্টেশনে চলে এলাম,,,,
দুজন বসলাম তবে সাইফ একটু সরে বসলো,,,
আমি সাইফের সাথে লেগে বসলাম,,,
.
এই যে শুনছেন,,,,
সাইফ,,,
সাইফ ::::: হুম বলো,,,
আমি :::::: ঐ যে বাদাম ওয়ালা আসছে আমি বাদাম খাবো,,,
আর পানিও খাবো,,,
.
সাইফ : টাকা যে ভাংতি নেই একটু পরে কিনে দিই,,,
.
আমি ::::::: না না হবে না আমি এখনি খাবো,,,
বলছি বাদাম খাবো,,,পানি খাবো,,,
সাইফ আমার দিকে এক পলক তাকালো,,,,,
তারপর
ট্রেন থেকে নেমে বাদাম আর পানির বোতল নিয়ে এলো,,,,
বাদাম আমার হাতে দিয়ে বোতলের ছিপি খুলে আমার হাতে দিলো,,,,
ট্রেন ছাড়ছে,,,
ওয়াও ধীরে ধীরে চলার সময় খুব সুন্দর দেখায় আশে পাশের দৃশ্যগুলা,,,,
আমি পানি খেতেই আমার গায়ে পড়লো,,,,,,
সাইফ নিজের পকেট থেকে রুমাল বের করে আমাকে দিলো,,,
.
তারপর বাদাম নিয়ে খোসা ছাড়িয়ে আমার হাতে দিচ্ছে,,,,
আমি বাদাম মুখে দিচ্ছি আর এক দৃষ্টিতে সাইফকে দেখছি,,,,
সাইফ আমার দিকে তাকালেই আমি চোখ নামিয়ে ফেলি,,,,
.
কখন যে ঘুমিয়ে পড়ি বলতেও পারিনা,,,
ট্রেনের বিকট শব্দে ঘুম ভেঙ্গে যায়,,,
চোখ খুলে দেখি ট্রেন থেমে গেছে,,,,
মাথাটা তুলে আমি হাই তুলতে তুলতে পাশে তাকিয়ে চোখ বড় বড় করে ফেলি,,,,,,,
আমি এতোক্ষণ আমার কাধের উপর ঘুমিয়েছি,,,,
.
সাইফ শুধু চুপ করে মাথাটা নাড়িয়ে সম্মতি জানায়,,,,
ওর মুখে বিষন্নতার চাপ,,,,
আমি জানি ওর খুব কষ্ট হচ্ছে,,,,
বুকটা ফেটে যাচ্ছে কিন্তু কিছুই বলতে পারছে না,,,,
.
আমি :::::: মনে মনে বলছি,,,সাইফ কিছু বলেন,,,
প্লিজ সাইফ কিছু একটাতো বলেন,,,
হা সাইফ বললো,,,
সানিয়া আমরা এসে গেছি,,,,
আর মিনিট খানেকের মধ্যেই মিহাদও এসে পড়বে,,,,
.
আমি উদাস ভাবে সাইফের দিকে তাকিয়ে,,,,
হুম,,,
সাইফ আর আমি ট্রেন থেকে নামলাম,,,,,,,,,
আমি :::::: সাইফ আপনাকে খুব মিস করবো,,,
আপনিকি আমায় একটুও মিস করবেন না????
.
সাইফ একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে,,,,
কি মনে হয় তোমার???
.
আমি :::::: জানিনা,,,
করলে করতেও পারেন আবার নাও করতে পারেন,,,
কারণ আমি যে আপনাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি,,,,
তার জন্যে মিস না ঘৃর্ণা করাটাই আমার প্রাপ্য,,,,,
.
সাইফ ::::::: ছি সানিয়া এভাবে বলেনা,,
আমি সবসময় চাই তুমি সুখে থাকো,,,
ভালো থাকো,,,
শুভ কামনা তোমার জন্যে,,,
কিন্তু একটা কথা মনে রেখো,,,
সাইফের দরজা তোমার জন্যে সবসময় খোলা থাকবে,,,,
.
আমি :::::: সাইফ আর কিছু বলবেন না???
.
সাইফ :::::: হুম বলবো তো,,,
ঐ যে মিহাদ এসে গেছে,,,,
সাইফ আবারো নিজেই হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললো,,,
মিহাদ সানিয়াকে দেখে রেখো,,,
কখনো কষ্ট দিওনা,,,
তোমার জন্যই তো ও আজ সবাইকে ছেড়ে এসেছে,,,,
কখনো ওকে আলাদা করে দিওনা,,,স
সব সময় সুখী রাখার চেষ্টা করবে,,,
.
কিন্তু মিহাদ হাত মিলালো না,,,,
আর খুব ইগো নিয়ে পাল্টা জবাব দিলো,,,,,,
সাইফ তোমাকে এসব বলতে হবেনা,,,
আমি জানি কি করলে কি হবে বা কোনটা করলে ভালো হবে,,,
এসব সম্পর্কে অন্তত তোমার কাছ থেকে জ্ঞান নিতে হবেনা আমার আশা করি,,,,,
.
সাইফ আমার হাতটা নিয়ে মিহাদের হাতে তুলে দিয়ে বললো,,,
আমার আমানত তোমার হাতে তুলে দিলাম,,,,
কষ্টের ছিটেফোটাও যেনো আচ কাটতে না পারে সানিয়াকে,,,,
.
তারপর সাইফ আমার দিকে ছলছল চোখে তাকিয়ে,,,,
ভালো থেকো সানিয়া,,,
অনেক বেশি ভালো থেকো,,,,
সাইফ ট্রেনের দিকে চলে যেতে লাগলো,,,,,,
এখনি যে ট্রেন ছেড়ে দিবে,,,,
আর সেই ট্রেনে করেই সাইফ ফিরে যাবে তার বাসায়,,,,,,
.
সাইফ ট্রেনে উঠে গেছে,,,, দরজার মুখে দাড়িয়ে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে,,,,,,,
সাইফের চোখ থেকে যে পানি পড়ছে আমি স্পষ্ট তা দেখছি,,,
এদিকে মিহাদ,,,,
হুহ যত্তসব ঢং,,,,
চলো সানিয়া,,,
ডিভোর্স লেটারটা কিন্তু খুব তারাতারি পাঠিয়ে দিবো,,,
তারপর আমরা বিয়ে করে নিবো,,,
তারপর কি হবে জানোতো,,,,
.
আমার যেনো খুব কষ্ট হচ্ছে,,,
মনে হচ্ছে কলিজাটা কেউ ছিড়ে নিয়ে যাচ্ছে,,,
আমার জিবনের সবচেয়ে বড় একটা অধ্যায় ছুটে যাচ্ছে,,,
ট্রেন ধীরে ধীরে চলতে শুরু করলো,,,,
.
আমার এমন কেনো মনে হচ্ছে,,,
আহহহ বুকের ভিতরটা ফেটে যাচ্ছে,,,তীব্র যন্ত্রনা অনুভব করছি,,,,
মনে হচ্ছে বুকটা ফেটে যাবে এখনি,,,,
নয়তো নিঃশ্বাসটা বন্ধ হয়ে যাবে,,,,
.
আমি ::::::: সরি মিহাদ আমাকে যেতে হবে,,,,
মিহাদ চোখ বড় বড় করে যেতে হবে মানে???
আমি :::::: আমাকে সাইফের কাছে যেতে হবে,,,
আমি সাইফকে ভালোবাসি,,,
ছাড়ো আমায়,,,
.
মিহাদ চোখ লাল লাল করে আমার হাত জোরে চেপে ধরে,,,
বললেই হলো নাকি,,,
চলো আমার সাথে,,,
আমি মিহাদকে ধাক্কা দিয়ে দৌড়ে যেতে লাগলাম,,,
এখনো ট্রেন ধীরেই যাচ্ছে,,,
তবে আমার থেকে স্পিড,,,,
সাইফ চোখ মুছে এদিকে তাকাতেই চোখ ছানাবড়া করে হা করে তাকিয়ে আছে,,,,,,,,
কি হচ্ছে ও বুঝতে পারছেনা,,,
আমি হাত এগিয়ে দিয়ে চিৎকার করে বললাম সাইফ আমাকে ধরেন,,,,
সাইফফফফফ,,,,
.
এবার ট্রেন একটু স্পিড বাড়ালো,,,
সাইফ হাত ধরেন আমার,,,
মনে মনে বলছি হেই আল্লাহ আমাকে আমার গন্তব্যে পৌছে দাও,,,
আমার সাইফকে আমার কাছে এনে দাও,,,,,,
সাইফ হাত বাড়িয়ে দিলে আমি আরো জোরে দৌড় দিলাম,,,,
আর ট্রেন তার আপন গতিতে ছুটে চললো,,,,
তবে তার আগেই সাইফ আমার হাত ধরে এক টানে উঠিয়ে নিলো,,,
আমি সাইফের বুকের উপর পড়ে হাপাতে থাকি,,,,
.
অদূরে মিহাদকে দেখা যাচ্ছে পাশে আমার ব্যাগটাও,,,,
আর সাইফের দেওয়া অনেকগুলা ক্যাশ টাকা মিহাদের হাতে,,,,,
আমাদের নতুন জিবন শুরু করার জন্যে সাইফ দিয়েছে মিহাদকে,,,,
.
সাইফ ::::::: সানিয়া তুমি চলে এলে যে???
কি হলো হঠাৎ??
.
আমি নাক ফুলিয়ে রেগে সাইফের বুকে হাতে কিল ঘুসি আর বসিয়ে দিই,,,
সাইফ :::::: কি হলো সানিয়া,,, আহহ ব্যাথা লাগছে তো,,,
মিহাদকে ফেলে চলে এলে কেন????
.
এবার আরো বেশি রাগ উঠে গেলো আমার,,,,
সাইফের গালে চড় বসিয়ে দিলাম,,,
সাইফ গালে হাত দিয়ে হা করে আমার দিকে তাকিয়ে থাকলো,,,
অসভ্য,,,,, বদ,,,শয়তান,,,গাধা,,, হাদারাম একটা,,,
কেমন নির্বোধ মানুষ আপনি,,, নিজের বউকে অন্যের হাতে তুলে দিলেন,,,
লজ্জা করেনা আপনার,,,
ছি সাইফ ছি,,,
.
সাইফ হকচকিয়ে,,,,
কিন্তু তুমি যে মিহাদের সাথে যেতে চাইলে,,,,
.
আমি সাইফের কলার চেপে ওরে নিজের কাছে টেনে এনে,,,
যেতে চাইবো বলে কি আমায় যেতে দিবেন,,,,
ধরে রাখতে পারেননি,,,
দরকার হলে বেধে রাখতেন,,,
কেন যেতে দিলেন,,,
.
সাইফ মুচকি হেসেঁ,,,,,
ভালোবাসি তাই,,,
.
আমি :::::: আরো কয়েকটা মাইর দিয়ে,,,,
তাইতো ফিরে এসেছি,,,
আর কখনো যাবোনা,,,
ভুল হয়ে গেছে,,,
বুঝতে পারিনি,,,
ক্ষমা করে দেন প্লিজ,,,,
.
সাইফ ::::::: এসব কি বলছো পাগলীটা,,,,,,
আমিইতো সরি বলবো,,,
এই যে কান ধরলাম,,,
সরি,,,
.
আমি সাইফের হাত সরিয়ে দিয়ে ওকে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে,,,,,
অনেক অনেক বেশি ভালোবেসে ফেলেছি,,,,
.
সাইফ ::::::: আমাকে নিজের সাথে চেপে ধরে,,,,
হুম আমিও প্রচন্ড রকমের ভালোবাসি,,,,,,,
তারপর সাইফ আমার কানে কানে ফিসফিসিয়ে বললো,,, তাহলে এবার জেসিয়া আপি আর মামুন জিজুর আবদারটা পূরণ করতে পারবো কি বলো সানি,,,,
.
আমি লজ্জায় সাইফের বুকে মুখ লুকিয়ে বললাম জানিনা,,,
যাহহহহ,,,,
অবশেষে পূর্ণতা পেলো সাইফ সানিয়ার অব্যক্ত ভালোবাসার গল্প।

@@@$$$সমাপ্ত$$$@@@

2 COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here