#অব্যক্ত_প্রিয়তমা,15,16
#ফাতেমা_তুজ
#part_15
কেঁটে যায় কয়েক মাস। নির্ভীকের সাথে দেখা হয় না অনিন্দিতার। কারন নির্ভীক তৃতীয় বর্ষের ক বিভাগের কোনো ক্লাস নেয় নি। যথাসম্ভব দূরে দূরেই থাকে। তিক্ত অনিন্দিতা ও নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছে। ভালোবাসার লড়াই টা নিজের মাঝেই রেখেছে। প্রেমের অনুভূতি যখন একান্ত তখন কষ্ট গুলো ও একান্ত। এই কয়েক মাসে কয়েক টা ডায়েরী পূর্ন করেছে সে। যাঁর প্রতি টা অক্ষর নির্ভীকের নামে। প্রিয় মানুষ টির রক্তে লাল হওয়া ডায়েরী বুকে জড়িয়ে ঘুমের দেশে পাড়ি জমায়। যে মরন যন্ত্রনা ওকে কুঁড়ে কুঁড়ে খায় সেই মরন যন্ত্রণা কেই আঁকড়ে ধরেছে। রিতি মতো বুক ফাঁটা আর্তনাদ গুলোই হয়েছে আপন। সারাদিন নিজের ঘরেই বসে থাকে। কখনো বা হাসে কখনো বা কাঁদে। প্রেমে ব্যর্থ রাজকন্যার মতোই সকলের চোখে সুখী সে। সব সুখ তাঁর হাতের মুঠোয় । কিন্তু শুধু সে ই জানে ব্যর্থ জীবন কে রাঙানোর চেষ্টায় আছে। এক মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হয়েছে সে। আজ তিন দিন ধরে নির্ভীকের ছবি আঁকার চেষ্টা করছে কিন্তু কিছু তেই হয়ে উঠছে না। অনিন্দিতার রাগ উঠে। কাগজ গুলো কয়েক টুকরো করে জানালা দিয়ে ফেলে দিতে গেলেই চোখ পরে নির্ভীকের দিকে। আজ কয়েক মাস পর নির্ভীক কে দেখতে পেলো সে। অজান্তেই ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে। শাহানার ডাক পরতেই হতচকিয়ে উঠে অনিন্দিতা। গলা উঁচিয়ে বলে
” আসছি আম্মু । ”
শাহানা তত্ত্ব সাজাচ্ছেন। মেয়ের শশুর বাড়িতে যাবেন সকলে। কয়েক দিন পর ই হীরের ডেলিভারি । অনিন্দিতার দিকে করুন চোখে তাকায় শাহানা। মায়ের দৃষ্টি বুঝতে পারে অনিন্দিতা । হাসি মুখেই বলে
” আমি যাবো আম্মু ”
” সত্যি বলছিস অনি ? ”
” হ্যাঁ আম্মু ”
পর পর কয়েক বার মেয়ের মুখে চুমু খায় শাহানা। অনিন্দিতার অধর কোনে হাসি ফুটে। পরিবারের সুখেই না হয় নিজের দুঃখ বিসর্জন দিবে।
পাঞ্জাবির হাতা গুটাতে গুটাতে আসেন আরশাদ। অনিন্দিতা কে দেখে হাসেন। বলেন
” তাহলে আমার মেয়ের মাথায় সুবুদ্ধি হয়েছে ? ”
” আগে থেকেই ছিলো আব্বু ”
” আহা সেটা বলি নি মা। শুধু বললাম নিজেকে ঘর বন্দী রাখার চিন্তা টা বদলে নিয়েছিস। ”
অনিন্দিতা উত্তর করে না। কিচেন থেকে মিষ্টির হাঁড়ি নিয়ে আসে আসিম। প্রচন্ড অবাক হয়ে অনিন্দিতা বলে
” তুমি কখন এলে ? ”
” ভোর পাঁচ টায়। ”
” হোয়াট ”
” তুমি ইনভাইট নাই করতে পারো আন্টি আর আঙ্কেল আমার কথা ভুলে নি। এখন তো মনে হচ্ছে ওনারাই আমার বেস্ট ফ্রেন্ড। ”
অনিন্দিতা কিছু বলবে তাঁর আগেই ইনতেহার কন্ঠ আসে। শাড়ির প্যাকেট হাতে এসে বলে
” আমি ও কিন্তু আছি। তুই ভুলে গেলে ও আন্টি ভুলে নি। ”
ফ্যাল ফ্যাল করে তাকায় অনিন্দিতা। সবাই অট্টহাসি তে ফেঁটে পরে। নিজ রুমের দিকে এগিয়ে যায় অনিন্দিতা।ডোর লাগানোর আগে বলে
” সবাই চিটিং করেছো। ”
.
রেডি হয়ে বসে আছে অনিন্দিতা। মুখ গম্ভীর তাঁর। নির্ভীক বার বার যাবে না বলেছে। চারুলতা অবশ্য লেগে আছেন ছেলের পেছনে কেন যাবে না সে। নির্ভীকের একটাই উত্তর এতো মানুষজন ভালো লাগে না তাঁর। এই কথা শুনেই চারুলতা রেগে গিয়েছেন। নিহালের ওহ একি কথা। সাথে ব্যবসার কাজ ও নাকি রয়েছে। এখন যদি নির্ভীক ওহ একি কথা বলে তাহলে কি করে হয় ? চারুলতার রাগে দমে যায় নির্ভীক। মায়ের নাছোড়বান্দা দৃষ্টি থেকে রেহাই নেই।
প্রায় দুই বছর পর মামা বাড়িতে এসেছে অনিন্দিতা । হীরের বিয়ের মাস দুয়েক পর এসেছিলো আর আসা হয় নি। মামা , মামি আর ভাই বোন দের যত্নে একেবারে যা তা অবস্থা। তাই তো বলে মামার বাড়ি রসের হাঁড়ি। অনিন্দিতার প্লেটে খাবার দিতে দিতে উঁচু করে ফেলেছে। না পেরে অনিন্দিতা চিৎকার করে বলল
” আমি কি রাক্ষস নাকি ? ”
” সেকি কথা অনি। রাক্ষস হতে যাবি কেন? আরেকটু খাবার দিবো? ”
” মামুনি প্লিজ এবার তোমরা থামো এতো খাবার আমি সপ্তাহে ও খাই না। ”
আপেলে কাঁমড় বসিয়ে হীর বলে
” সমস্ত খাবার শশুর বাড়িতে গিয়েই খাবে। এটা অবশ্য ভালো। বাবার সম্পদ রক্ষা করে চলেছে। ”
” মার খাবি হীর। ”
ফিচেল হাসে হীর। অনিন্দিতা দম ফেলে খাবার খেতে বসে। এক মনে খাচ্ছে নির্ভীক। যেন কোনো যন্ত্র মানব। চোখের নিচে কালি জমেছে। শুকিয়ে গেছে অনেক টা। অনিন্দিতার বুক ধুক করে উঠলো। এ কি হাল হয়েছে ছেলেটার ?
অনিন্দিতার মনে প্রশ্ন জাগে। বিরক্ত করা ছেড়ে দিয়েছে সে তারপর ও এই অবস্থা কেন !গলা দিয়ে খাবার নামে না। একটু খেয়েই উঠে যায় অনিন্দিতা। বিকেলে সবাই বাগানে ঘুরতে যায়। অনিন্দিতা মাথা ব্যথার অজুহাতে যায় না। সে জানে নির্ভীক বের হবে না আজ। তাই ঘাপটি মেরে বসে থাকে। কিচেন থেকে দু কাপ কফি বানিয়ে গেস্ট রুমের দিকে রওনা হয়। গেস্ট রুমে নির্ভীক কে না পেয়ে ট্রেরেস এ চলে আসে। ট্রেরেস এ নির্ভীক কে সিগারেট খেতে দেখেই হৃদয়ে আঘাত লাগে। টেবিলে কফি রেখে ছুটে যায় নির্ভীকের কাছে। নির্ভীকের হাত থেকে ছো মেরে ফেলে দেয় সিগারেট। গর্তে ঢুকে যাওয়া চোখ দুটো মেলে তাকায় নির্ভীক। স্তব্ধ হয়ে যায় দুটি আত্মা। নির্ভীকের ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে আর অনিন্দিতার চোখে ভাসে অশ্রু। আবছা হাতে নির্ভীকের বুকে স্পর্শ করে সে। কোনো রকম প্রতিক্রিয়া করে না নির্ভীক। অনিন্দিতা তাঁর কাঁপা কন্ঠে বলে
” একি হাল হয়েছে আপনার ? আমি তো বিরক্ত করি না আপনাকে। তাহলে এমন কেন করছেন ! ”
” কেন বিরক্ত করেন না অনিন্দিতা? ”
” আপনিই তো বারন করেছেন। ”
” তাহলে এখন কেন এসেছেন ? ”
অনিন্দিতা উত্তর দেয় না। নির্ভীকের মেরুন ঠোঁটে কালচে দাগ পরেছে। যার অর্থ দীর্ঘদিন সিগারেট খেয়েছে। ছলছল নয়নে তাকায় অনিন্দিতা। নির্ভীকের ঠোঁটে স্মিত হাসি সে তাকিয়ে আছে সামনে থাকা নন্দিনীর ( মেয়ে ) দিকে। এই সেই নন্দিনী যে তাঁর জন্য দুনিয়া ছাড়তে রাজি। অথচ সে নির্বিকার পুরুষ মানুষ। মিনিট কয়েক এভাবেই চলে যায়। কপালে ভাঁজ সৃষ্টি হয় নির্ভীকের। হাতের আঙুলের সাহায্য অনিন্দিতার বেবি হেয়ার গুলো গুছিয়ে দেয়। এই স্পর্শে যেন মাদকতা আছে। অনিন্দিতার দম বন্ধ হওয়ার উপক্রম । কিছু টা দূরে সরে যায় নির্ভীক। অনিন্দিতা বলে
” আমাকে সত্যি ই ভালোবাসলেন না ? ”
” হ্যাঁ বাসলাম না। ”
” শুধু মাত্র আমার থেকে দূরে যাওয়ার জন্য রোজ আপুর সাথে বিয়ের নাটক ও করেছিলেন ! ”
” হ্যাঁ করেছিলাম। আপনাকে দূরে সরানোর কোনো পথ ছিলো না। যদি ও ব্যর্থ ছিলো সেই প্রচেষ্টা তবে আপনি ঠিক ই দূরে সরে গেছেন। ”
” তাহলে এই অবস্থা কেন আপনার? ”
” উত্তর দেওয়ার প্রয়োজন মনে করি না। ”
মুখে হাত চেপে কাঁদে অনিন্দিতা। সে কান্নার শব্দ শুনতে পারে না ছেলেটা। ধমকে উঠে সে। অনিন্দিতার বাহু চেপে বলে
” একদম কাঁদবেন না। এ চোখের পানি অনেক মূল্যবান। এই ব্যর্থ প্রেমের জন্য কেন অশ্রু ফেলেন ? আপনাকে দিয়ে এমন টা আশা করি না আমি। চলে যান অনিন্দিতা, বহু দূরে চলে যান। যেখানে নির্ভীকের কোনো অস্তিত্ব নেই। আপনার জীবন হবে সুখময়। ”
” তাহলে মৃত্যু দিন আমায়। যেখানে আপনি নেই সেখানে থাকতে চাই না আমি। যেখানে আপনি নেই সেই সুখ আমার জন্য বিলাসিতা মাত্র। আপনি শুধু আপনি নির্ভীক মাহতাব শুধুই আপনি। এই আপনি তেই আমি মরন দেখেছি। ”
অনিন্দিতার চিৎকার করা হা হা কার বেদনা নির্ভীকের টনক নাড়িয়ে দেয়। অনিন্দিতার দিকে এক হাত বাড়িয়ে আবার গুটিয়ে নেয়। দেয়ালে লাথি মেরে বলে
” পারছি না আমি। আপনাকে সঙ্গী করা সম্ভব নয়। চলে যান অনিন্দিতা চলে যান।”
কথা টা বলেই নিজের বুকে শুট করে নির্ভীক। গুলি লেগে খলবিলিয়ে রক্ত ঝরতে থাকে। লাল রক্তে রঙিন হয় মেঝে। অনিন্দিতার মুখ থেকে কথা বের হয় না। কেউ যেন মুখে তালা লাগিয়ে দিয়েছে। কয়েক দফা পিছিয়ে যায় নির্ভীক। হাতের বন্দুক টা ছিটকে পরে যায় অনেক দূরে। অশ্রু শিক্ত নয়নে ডুবে থাকা অনিন্দিতা দেখতে পায় মেঝে তে পরে যাচ্ছে তাঁর প্রান প্রিয় প্রিয়তম। এই বুঝি ভালোবাসার সমাপ্তি হলো ।
বি : দ্র : ভুল ত্রুটি মাফ করবেন ।
চলবে
#অব্যক্ত_প্রিয়তমা
#ফাতেমা_তুজ
#part_16
” নির্ভীক ”
বলে চিৎকার করে উঠে অনিন্দিতা। শরীর দিয়ে ঘাম ঝরছে। অগোছালো চুল গুলো কপালে লেপ্টে আছে। বুকে হাত দিয়ে হাঁফাতে থাকে সে। আশে পাশে চোখ বুলিয়ে নিজেকে রুমে আবিষ্কার করে। গাঁয়ে জড়িয়ে রাখা চাদর টা ছো মেরে ফেলে দেয়। পায়ে ঘরের স্লিপার না পরেই দৌড়ে আসে ডয়িং রুমে। পুরো ঘরে কাউকে দেখতে না পেয়ে পাগলের মতো ছুটতে থাকে। উম্মাদের মতো আচারনের নমুনা স্বরূপ ঘরের দরজা খুঁজে পায় না সে। মাথার নিউরন গুলো কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে । মাথায় একটাই কথা ঘুরছে নির্ভীক আর নির্ভীক। ডাইনিং এর গ্লাস গুলো ফেলে দেয় সে , চুল খামচে ধরে চিৎকার করে উঠে। পাগলের মতো আর্তনাদ আর গ্লাস ভাঙার আওয়াজে ছুটে আসেন শাহানা , চারুলতা সহ সকলে। নিজের চুল নিজেই ছিড়ছে অনিন্দিতা। সকলে অবাক চোখে তা দেখতে থাকে। এই অনিন্দিতা যেন সকলের অচেনা। শাহানার মাথা ঘুরে যায়। চারুলতা দু হাতে জড়িয়ে ধরেন। সকলের চেঁচামেচি শুনে ঘুরে তাকায় মেয়েটি। এক জোড়া নয়ন দেখেই শ্বাস বন্ধ হয়ে যায় তাঁর। নির্ভীকের শীতল দৃষ্টি যেন অনিন্দিতার আত্মা কাঁপিয়ে দেয়। সে পর পর পলক ফেলে। নির্ভীকের অবাক চাহনি তে ঘোর লাগা চোখে তাকায়। অধর কোনে হাসি ফুঁটিয়েই জ্ঞান হারায় সে।
নির্ভীকের ব্যাথাতুর দৃষ্টি কারো চোখে পরে না। আড়াল থেকে অনিন্দিতা কে দেখছে সে। শাহানা অতি যত্ন নিয়ে মেয়ে কে খাবার খাওয়াচ্ছেন। আজকে পৃথিবীর বাসা তে যাওয়া ক্যানসেল করে দিয়েছেন। অনিন্দিতার পাগলামি নিয়ে একটা ও প্রশ্ন তুলে নি কেউ। শাহানা ঘর থেকে বের হতেই নির্ভীক কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে, ডুকরে কেঁদে উঠেন তিনি। নির্ভীক বলে
” আমি দেখছি কি হয়েছে অনিন্দিতা। কথা বলছি আমি। শান্ত হোন আপনি। ”
” দেখো বাবা কিছু করতে পারো কি না। এ কেমন পাগলামি করছে মেয়েটা ? ”
” চিন্তা করবেন না। অনিন্দিতা ঠিক হয়ে যাবে। ”
শাহানা আরো কিছু কথা বলে চলে যান। পর পর শ্বাস ফেলে রুমে প্রবেশ করে নির্ভীক। বেডে মাথা এলিয়ে চোখ বন্ধ করে আছে অনিন্দিতা। সেই কষ্টের মুখ খানায় তাকিয়ে থাকতে পারে না নির্ভীক। চোখ ঘুরিয়ে নেয়। অনিন্দিতার পাশে বসে আদুরে কন্ঠে বলে
” সকালে এমন করছিলেন কেন ? ”
চোখ মেলে তাকায় অনিন্দিতা । নির্ভীক কে দেখে আধশোয়া হয়ে বসে। সিক্ত নয়নে পর পর পলক ফেলে বলে
” আমাকে আগের বিষয় নিয়ে কোনো প্রশ্ন করবেন না। কারন সেই উত্তর আমি বহু বার দিয়েছি।”
” আচ্ছা করবো না। এখন বলুন কেন এমন করছিলেন আপনি ? ”
” স্বপ্ন দেখেছি আমি , ভয়ঙ্কর স্বপ্ন। ”
” কেমন স্বপ্ন। কি এমন দেখেছেন আপনি। ”
অনিন্দিতা নির্ভীকের দৃষ্টি তে দৃষ্টি দেয়। ডুকরে কেঁদে উঠে মেয়েটা । নির্ভীক কে নিয়ে দেখা পুরো স্বপ্ন টাই বলে ফেলে। নির্ভীক কথা বলে না। তাঁর চোখে পানি চিক চিক করছে। ডোরের দিকে লক্ষ্য রেখে অনিন্দিতার হাত মুঠো বন্দী করে। হালকা হাতে হাত বুলিয়ে বলে
” আপনাকে বাঁচতে হবে অনিন্দিতা। এই যে নির্ভীকের উপর নির্ভরশীল হয়ে পরেছেন এতে আপনি মরে যাবেন। এ ভাবে দিন যাবে না। নিজের মাঝে ফিরে আসুন অনিন্দিতা। ”
নাক টেনে কান্না আটকায় অনিন্দিতা। নির্ভীকের হাতে মাথা রেখে বলে
” আমাকে কেন ভালোবাসেন না ? ”
” ভালোবাসার কোনো দিক নির্দেশনা কারন হয় না। কাছে পেলেই কি ভালোবাসা হয়ে গেল ? দূর থেকে ও ভালোবাসা যায়। ”
” সে ভালোবাসা দগ্ধ দেয় নির্ভীক ভাই। অতিরিক্ত কাছের মানুষ কে অন্য জনের সাথে দেখে সুখি হওয়া যায় না। সেটা হয় অভিনয়। ”
নির্ভীক কথা বলে না। ধীর হাতে অনিন্দিতার হাত ছাড়িয়ে নেয়। তারপর সে বলে
” আপনার উচিত এখানেই থেমে যাওয়া। আর দগ্ধ হবেন না। পড়াশোনায় মনোযোগী হোন। আপনার জন্য শুভকামনা। ”
” আপনি ছাড়া আমার জীবনের সব শুভ কামনা অশুভ হয়ে যাক। ”
অনিন্দিতা চিৎকার করে কথা টা বললে ও নির্ভীক থামে না। এক পলক ও তাকায় না সে। টাওজারের পকেটে হাত পুরে নিয়ে হাঁটা লাগায়।
‘ সব কেন এর উত্তর হয় না। আর না সব ভালোবাসার পূর্ন হয়। ‘
.
রুগ্ন দেহ নিয়ে উঠে দাঁড়ায় অনিন্দিতা। রাত প্রায় দুটোর কাছাকাছি। দু চোখের পাতাতে ঘুম নেই। মাথা টা ও কেমন করছে। মনে হচ্ছে মাথায় কেউ পেরেক লাগাচ্ছে। এতো টাই যন্ত্রণা হচ্ছে যে বিছানায় শুয়ে কাতরাতে লাগলো। বাঁচার জন্য যেমন হাহা কার করে ঠিক তেমনি আচারন করছে মেয়েটা। হঠাৎ করেই পেটে ব্যথা শুরু হয়। নির্ঘাত গ্যাসটিকের ব্যথা। ঠিক মতো না খাওয়ার কারনেই এই অবস্থা। পেটে হাত দিয়ে উঠে বসে। কোনো ভাবেই স্বস্তি মিলে না। হালকা আওয়াজ তুলে আর্তনাদ করে। চোখ ফেটে ধারা নেমে যায়। উপায় না পেয়ে হীরের ঘরে চলে আসে। পুরো ঘরে কাউকে না দেখতে পেয়ে ভ্রু কুঁচকে ফেলে। কয়েক সেকেন্ড পরে খেয়াল হয় হীর তো শশুর বাড়ি তে। অসহ্য ব্যথায় মাথার চুল ছিড়ে অনিন্দিতা। বাবা মায়ের রুমের দরজায় কয়েক বার খটখট আওয়াজ তুলে চাঁপা স্বরে ডাকে
” আম্মু , আব্বু , আমার কষ্ট হচ্ছে। ”
মাথায় প্রচন্ড আঘাত পাওয়ার মতো ব্যথা অনুভব হয়ে। চিৎকার করে উঠে অনিন্দিতা। আরশাদ দরজা খুলে অনিন্দিতা কে পরে থাকতে দেখে চিৎকার করে উঠেন। শাহানা তো কেঁদেই দেন। প্রচুর জোড়ে কান্না শুরু করেন। আশে পাশে মানুষ জড়ো হয়। চারুলতার চোখে মুখে বিস্ময়। দৌড়ে যান ঘরে। স্বামী আর বড় ছেলে বাসায় নেই। নির্ভীকের রুমে নক করেন তিনি। দরজা খুলতেই চাঁপা কান্না করে বলেন
” তাড়াতাড়ি আয় , অনিন্দিতা যেন কেমন করছে। ”
কয়েক সেকেন্ড চুপ করে থাকে। যখন বিষয় টা বুঝতে পারে তখন পা থমকে যায়। হাত কাঁপতে থাকে। শাহানা আবারো ডাকেন। নির্ভীক হন্তদন্ত হয়ে ছুটে যায়। আরশাদ একজন ডাক্তার হলে ও এই মুহুর্তে হতবুদ্ধি হারিয়ে ফেলেন। আপন মানুষের চিকিৎসা করার শক্তি পান না। কি থেকে কি করবেন বুঝে উঠেন না। এ দিকে এক হাতে মাথা আর অন্য হাতে পেট চেপে ধরে রেখেছে অনিন্দিতা। শাহানার বিলাপ বন্ধ হবার নয়। নির্ভীক ধীর হাতে অনিন্দিতার হাতে স্পর্শ করে। অনিন্দিতার হাত দিয়েই পেটে হালকা চাঁপ দেয়। আহ বলে জোড়ে আর্তনাদ করে উঠে অনিন্দিতা। চোখ মুখ শক্ত হয়ে গেছে। নির্ভীকের চোখে মুখে চিন্তার ছাপ। অনিন্দিতার মুখে হালকা হাতে স্পর্শ করে বলে
” অনিন্দিতা, কোথায় কষ্ট হচ্ছে ? মাথায় যন্ত্রনা হচ্ছে কি ? ”
” মাথা ফেটে যাচ্ছে নির্ভীক ভাই। মনে হচ্ছে মাথায় পেরেক লাগানো হচ্ছে। পেটে ও ব্যথা হচ্ছে। ”
নির্ভীক থম মেরে থাকে। অনিন্দিতার পরিস্থিতি খারাপ। আরশাদ পূর্ন জ্ঞানে নেই। নির্ভীক বুঝতে পারে অনিন্দিতা কে হসপিটালে এডমিট করাতে হবে। কোলে তুলে নেয় অনিন্দিতা কে। পিছে তাকিয়ে বলে
” আম্মু সবাই কে নিয়ে সিটি হসপিটালে আসো। কয়েক দিন আগে হেলথ চেকাপ করেছে না সেটার ফাইল ওহ নিয়ে আসো।”
চারুলতা মাথা ঝাঁকায়। অনিন্দিতা কে কোলে করে নেমে আসে নির্ভীক। গাড়ি তে বসিয়ে দিয়ে হাই স্পিডে গাড়ি ড্রাইভ করে। বার বার অনিন্দিতার দিকে তাকাচ্ছে সে। অনিন্দিতার চোখ যেন উল্টে যাচ্ছে। হঠাৎ করেই নির্ভীক কে জড়িয়ে ধরে অনিন্দিতা । চাঁপা আর্তনাদ আর কান্না জড়িত কন্ঠে বলে
” আপনাকে মুক্ত করে দিচ্ছি নির্ভীক ভাই। এই অনিন্দিতার পাগলামি সহ্য করতে হবে না আপনাকে। ভালোবেসে আক্ষেপ টা বোধহয় রয়েই গেল। ”
” কি সব বলছেন অনিন্দিতা । আপনার কিচ্ছু হবে না। আমি আপনার কিছু হতে দিবো না। ”
” যন্ত্রনা হচ্ছে নির্ভীক ভাই। ”
গাড়ি থামিয়ে দেয় নির্ভীক। অনিন্দিতার মাথা বুকে চেপে ধরে। চোখ দিয়ে অশ্রু গড়ায়। অনিন্দিতার শ্বাস ভারী হয়। নির্ভীকের টি শার্ট খামচে ধরে সে। নির্ভীক তাঁর ঠান্ডা হাতে অনিন্দিতার বাহু স্পর্শ করে। হালকা হাতে মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। অনিন্দিতার দম যেন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। মাথায় এতো টা ব্যথা হচ্ছে যে মাথা ফাটিয়ে দিতে ইচ্ছে হয়। অনিন্দিতার মাথায় চুম খায় নির্ভীক। বুকে জড়িয়েই বলে
” কিচ্ছু হবে না আপনার। ”
চলবে