#অব্যক্ত_প্রিয়তমা,25,26
#ফাতেমা_তুজ
#part_25
পাহাড়ে কিংবা বদ্ধ ঘরে কোনো কথা বললে যেমন বার বার কানে বেজে উঠে। ঠিক তেমনি ভাবে অনিন্দিতার কন্ঠস্বর বার বার বেজে উঠে। নির্ভীকের হৃদপিন্ডের প্রতি টা স্পন্দন যেন একটি শব্দেই থমকে আছে। রক্ত প্রবাহ বোধহয় নিজের কার্যক্রমের আওতায় নেই।ঘাড় ঘোরায় নির্ভীক। ঘোলা চোখে দাঁড়িয়ে থাকা স্নিগ্ধ প্রিয়তমা কে দেখে যেন বাক শক্তি হারিয়ে ফেলে। রুগ্ন শরীরে এগিয়ে আসে অনিন্দিতা। ইশরাক বুঝতে পারে এখানে থাকা অপ্রয়োজনীয় বটে। সন্তপর্নে সরে যায় ওহ। ভাঙা গলায় অনিন্দিতা বলে
” কেন সম্ভব নয় নির্ভীক ভাই ? ভালোবেসে ভালোবাসা কে কাছে পাওয়া কেন পাপ বলুন তো নির্ভীক ভাই। আমি কোন পাপের শাস্তি বহন করছি বলুন তো। আপনি কেন নিজেকে কষ্ট দিচ্ছেন। ”
স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা নির্ভীক যেন সাগরের অতলে হারিয়ে যায়। কিংবা আকাশের মাঝে মেঘের আড়াল হয়ে যায়। এই মুহুর্তে কি করা উচিত বুঝতে পারে না। এগিয়ে আসে অনিন্দিতা। ঘোলাটে চোখে নির্ভীকের কাছে এসে দাঁড়ায়। কাঁপা হাতে খুব সহজেই স্পর্শ করে নির্ভীক কে। প্রিয় মানুষের সংস্পর্শ দুজন কেই হীম শীতল করে দেয়। এই স্পর্শেই ডুবে যায় দুজনে। সিক্ত চোখে হাসি ফুটিয়ে অনিন্দিতা বলে
” একবার জড়িয়ে ধরবো আপনাকে ? কতো শত দিন দেখি না আপনাকে। কেন দূরে সরিয়ে রাখলেন আমায়। কেন বলুন তো। ”
” অনিন্দিতা আপনি এখানে ! ”
ছলছল নয়নে হাসে অনিন্দিতা। খুব যত্নে নির্ভীকের বুকে মাথা রাখে। প্রিয়তমার স্পর্শ পেয়ে শিউরে উঠে নির্ভীক। চোখ দিয়ে নোনা জল নেমে যায়। থমকে যায় ওর ছোট্ট পৃথিবী। অনিন্দিতা কে জড়িয়ে ধরে ওহ। আজ নিজেকে এলোমেলো মনে হয়। বলে
” অনিন্দিতা আমি আপনাকে ভালোবাসি। খুব ভালোবাসি, আমি আপনাকেই ভালোবাসি। শুধু মাত্র আপনাকে ভালোবাসি। ”
” কেন বললেন না আমায় ? কেন এতো দিন কষ্ট পেলেন। কেন ই বা এতো দিন কষ্ট দিলেন । ”
উত্তর করে না নির্ভীক। অনিন্দিতার মুখে হাত রাখে সে। সুপ্ত অনুভূতি কে আজ গুরুত্ব দিয়ে অনিন্দিতাকে আবারো কাছে টেনে নেয়। নিজের কাধে নির্ভীকের চোখের পানি অনুভব করে ওহ। ধক করে উঠে হৃদয়। থমকানো পৃথিবী তে যেন ঘূর্ণিঝড় বয়ে যায়। সাগরের উথাল করা টেউ যেন অনিন্দিতা কে আঁকড়ে নেয়। বিস্ময় নিয়ে বলে
” আপনি কাঁদছেন কেন ? ”
” জানি না। আমি জানি না কাঁদছি কেন। আমি আপনাকে কেন জড়িয়ে ধরলাম তা ও জানি না। ইচ্ছে করছে পৃথিবীর সমস্ত নিয়ম ভেঙে আমি আপনাকে ভালোবেসে যাই। ইচ্ছে হয় পৃথিবীর বুকে অব্যক্ত ভালোবাসার আগুন নিভিয়ে ব্যক্ত করে যাই ভালোবাসার ফোয়ারা। আমি আপনাকে ভালোবাসি অনিন্দিতা। ভালোবাসি অনিন্দিতা । ”
জীবনে সুখ বোধ হয় সমস্ত কষ্ট কে দূর করে দেয়। নিজের ভালোবাসার মানুষ টার বলা একটি কথা অনিন্দিতার রক্তে শীতলতা হয়ে যায়। অন্ধকার কে ছাপিয়ে নামিয়ে দেয় ভোর। জীবনের প্রতি টা মুহুর্ত কে রাঙিয়ে তুলে। নাক টেনে কাঁদে অনিন্দিতা। নির্ভীকের থেকে নিজেকে ছাড়ানোর ইচ্ছে হয় না বরং এভাবেই কাঁটিয়ে দেওয়ার ইচ্ছে জাগে কয়েক জনম। ভালোবেসে ভালোবাসা কে ভালোবেসে যাই নামের রোদ্দুর কাঁপানো বর্ষন নামাতেই প্রেমের উথাল পাথাল ঝড় বয়ে যায়। চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে হয় ” প্রেম সুন্দর , সত্যিই প্রেম সুন্দর। ”
নদীতে জোয়ার ভাটা নেমে যায়। নির্ভীকের বোধবুদ্ধি যেন হারিয়ে গেছে অনেক আগেই । কি করেছে কল্পনার অতীত। অনিন্দিতার শরীর থেকে আসা মাতাল করা ঘ্রান যেন ওকে আরো বেশি পাগল করে দেয়। নির্ভীক বলে
” প্রেমের পরিনতি কেমন হয় অনিন্দিতা। ”
” সুন্দর , খুব সুন্দর। ”
” সত্যিই সুন্দর হয় ? ”
” হ্যাঁ। ”
কথা বলে না সে। চোখে মুখে হাসি ফুটে উঠে। মৃদু স্বরে বলে
” এভাবেই থাকবেন ? ”
” হুমম। ”
” এখনো পাগলামি গেল না ? এতো দিন পর আমি ও পাগল হয়ে গেলাম। অন্যায় করে দিলাম। অদ্ভুত তাই না ? ”
” কোনো অন্যায় নয় নির্ভীক ভাই। কোনো অন্যায় নয়। ”
সহসা হাসে না নির্ভীক। ব্যাথাতুর হৃদয়ে পাথর চাঁপা দিয়ে অধর কোনে ছোট করে হাসে ছেলেটা। অদ্ভুত হলে ও সত্য অনিন্দিতা তাঁর নয়। জীবনের লড়াই অনিন্দিতা কে কেড়ে নিয়েছে। অনিন্দিতার মাথায় চুমু খায় নির্ভীক। বলে
” এই কলঙ্ক আমাদের। নিষ্কলঙ্ক দেহে কলঙ্ক নিয়ে নিলাম। ভালোবেসে দুজনেই পাপ করলাম। ”
” কি কথা বলছেন আপনি ? ”
” নিজেকে শান্ত করুন অনিন্দিতা। চরম সত্যের মুখোমুখি করতে হবে আপনায়। ”
” কিসের সত্যি কথা ? ”
” আজকে আপনাকে দেখতে আসবে তাই না ? ”
” সেসব বাদ দিন। আমি মানা করে দিবো।”
তাচ্ছিল্য হাসে নির্ভীক। অনিন্দিতার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে
” আপনি আমার ভাগ্য নন অনিন্দিতা। আপনি শুধুই আমার ভালোবাসা। সব ভালোবাসার পরিনতি শুভ হয় না। আমাদের ও হবে না। ”
” কেন হবে না ? ”
” আপনাকে রিং পরাতে আসবে আম্মু। ”
অবাক হয়ে অনিন্দিতা বলে
” বুঝি নি। ”
পকেট থেকে সিগারেট বের করে নির্ভীক। আগুন ধরিয়ে সিগারেটে টান দেয়। অনিন্দিতার মাথায় আসে না। ধোঁয়ার কারনে হালকা কাশে নির্ভীক । পেছন ফিরে বলে
” ভাইয়ার জন্য আপনাকে আংটি পরাতে আসবে। ”
” নির্ভীক ভাই কি সব বলছেন! ”
” সঠিক কথাই বলছি। ”
অনিন্দিতার পৃথিবী থমকে যায়। নির্ভীকের দিকে তাকিয়ে থাকে। চোখ দুটো ঘোলাটে। ছুটে আসে অনিন্দিতা। নির্ভীক কে জড়িয়ে ধরে বলে
” আমি আপনাকে ভালোবাসি নির্ভীক। আজকেই সব কিছু বলে দিবো আমি। আমাদের আলাদা করতে পারবে না কেউ। আমি সবাই কে বলবো। ”
” কি বোঝাবেন অনিন্দিতা? এটাই বোঝাবেন নির্ভীক তাঁর বড় ভাইয়ের জন্য ঠিক করা মেয়ে কে ভালোবাসে। এটাই বলবেন ভাইয়ের সুখ কেড়ে নিতে চায় নির্ভীক। বেইমান নির্ভীক মাহতাব ? ”
গগন কাঁপানো হাসি তে হাসে নির্ভীক। ভেজা পল্লবে তাকায় অনিন্দিতা । নির্ভীকের হাসি যেন পৃথিবীর সব থেকে কষ্টের প্রতীক। একি অবস্থা নির্ভীকের। অনিন্দিতার বাহু তে হাত রাখে ছেলেটা । সিক্ত নয়নে অনিন্দিতা কে দেখে। বলে
” আব্বুর সাথে আঙ্কেল এর সম্পর্ক বরাবর ই ভালো। তবে সম্পর্ক গাঢ় হয় আব্বুর এক্সিডেন এর সময়। আঙ্কেল কে সেদিন পাশে পেয়েছিলো আব্বু। হয়তো আঙ্কেল এর জন্য ই বেঁচে আছে । আল্লাহ সেদিন আঙ্কেল কে উছিলা করে পাঠান। আব্বুর অপারেশন সাকসেসফুল হওয়ার পর আঙ্কেলের হাত ধরে আপনাকে নিজের মেয়ে হিসেবে চায়। আমার চোখের সামনে আমার প্রিয়তমা কে আমার বড় ভাইয়ের জন্য চেয়ে নেয় আব্বু। আমি সেদিন নির্বিকার ছিলাম। ভাইয়ার চোখে মুখে কোনো রকম বিরক্তি ছিলো না। আমি খুব করে চেয়েছিলাম ভাইয়া বিয়ের কথা তে বারন করুক। কিন্তু ভাইয়া আপনাকে পেয়ে খুশি ছিলো। আমার জন্য ভাইয়া এই ছোট জীবনে অনেক কিছু করেছে। আমার এখনো মনে আছে ক্লাস ফাইফে আমার জন্য একটা ছেলে কে খুব মেরেছিলো। সেই জন্য ওকে ও রক্তাক্ত হতে হয়। হসপিটালে এডমিট থাকতে হয়। সেই নিঃস্বার্থ ভালোবাসার অপমান করতে পারি নি আমি। ভাইয়ার চোখের দিকে তাকিয়ে আপনার ভালোবাসা কে তুচ্ছ করেছিলাম। তবে কি জানেন সেই সময় টা আপনি নিজে ও আমাকে ভালোবাসতেন না। ভেবেছিলাম নিজেকে মানিয়ে নিবো। কিন্তু যখন দেখলাম আপনি নিজেই আমাকে চান তখন আমার পুরো পৃথিবী থমকে গিয়েছিলো। আপনার থেকে আলাদা হওয়ার বহু চেষ্টা করেছি। কিন্তু আপনার ভালোবাসা বার বার ব্যর্থ করেছে আমায়। আমি পারি নি আপনাকে না ভালোবেসে থাকতে। কি করবো আমি ? আপনার আর ভাইয়ার সম্পর্কে পারবো না বাঁধা হতে। চলে যান অনিন্দিতা। আপনি প্লিজ চলে যান। আমি পারবো না আপনাকে গ্রহন করতে। আমাদের ভালোবাসার পরিনতি কখনোই শুভ হবে না। ভেঙে যাবে অনেক গুলো সম্পর্ক। ”
” নির্ভীক ভাই। ”
” প্লিজ। ”
দু পা পিছিয়ে যায় অনিন্দিতা।নিজেকে শূন্য মনে হয় ওর। এতো যন্ত্রণা আগে কখনো হয় নি। প্রিয় মানুষ কে পেয়ে হারিয়ে ফেলার যন্ত্রনা বোধহয় কোনো কিছু তে নেই। পৃথিবী তে প্রিয় মানুষ কে না পাওয়ার ব্যাথা ত্রিভুবন কে কাঁপিয়ে দেওয়ার মতোই। পেছন ফিরে অনিন্দিতা। নির্ভীক তাকিয়ে আছে তাঁর দিকে। যে চোখে রয়েছে ভালোবাসা কে না পাওয়ার বেদনা। তীব্র ব্যাথায় পাগল হয়ে যাওয়ার ইচ্ছে। সব কিছু ধ্বংস করার চেষ্টা। কিন্তু অদৃশ্য শক্তির সাথে পেরে উঠে না। অনিন্দিতা আগায়। হঠাৎ করেই নির্ভীক বলে
” অনিন্দিতা। ”
ছুটে আসে নির্ভীক। অনিন্দিতা কে জড়িয়ে কেঁদে উঠে। অনিন্দিতার মাথায় চুমু খায়। যেন বদ্ধ পাগলে পরিনত হয়েছে সে। কোনো কিছুই ঠিক নেই ওর। অদূরে দাঁড়িয়ে থেকে সব টা দেখে রোজ আর ইশরাক। রোজ কাঁদছে , খুব কাঁদছে। এভাবে চোখের সামনে দুটি হৃদয় আলাদা হয়ে যাওয়া মেনে নিতে পারছে না।
ভালোবাসা , প্রেম , অব্যক্ত হয়ে থাকা টা বড় যন্ত্রণা। তদ্রূপ দুটি হৃদয় আলাদা হয়ে যাওয়া টা ও মৃত্যুসম। নির্ভীকের ভালোবাসা অব্যক্ত রইলো না আর । তবে পাওয়া হলো না প্রিয়তমা কে। ভালোবাসা কে ব্যক্ত করে ও না পাওয়ার বেদনা দুটি মন কে বিক্ষিপ্ত করে দিলো। আবছা হয়ে যাওয়া চোখে কেউ একজন অনুভব করে রক্তক্ষরণের ব্যাথা। অব্যক্ত প্রিয়তমার জন্য হৃদয়েল প্রতি টা কোনে ব্যাথা অনুভব হয়। ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ করতে পারে না সে। পাগলামি নেই তাঁর মাঝে। হয়তো আছে , তবে গুটিয়ে রাখে সেই ভালোবাসা। অথচ সে ও ভালোবাসে তাঁর প্রিয়তমা কে এক আকাশ সমান। কিন্তু তাঁর ভালোবাসা অব্যক্ততায় তিক্ত হয়ে রয়।
চলবে
#অব্যক্ত_প্রিয়তমা
#ফাতেমা_তুজ
#part_26
এক মুঠো বিকেল কে স্বাক্ষী রেখে আলাদা হয় দুটি হৃদয়। বড্ড আফসোস হচ্ছে। নিজের ভালোবাসা কে আগলে না রাখতে পারার যন্ত্রণা যেন আকাশচুম্বি বেদনা। একটি মাত্র ভাবনা ভাইয়ের মন কে কি করে ভেঙে দিবো ?
মানুষ অদ্ভুত প্রানী। সবাই স্বার্থপর। কেউ নিজের জন্য কেউ বা অন্যের জন্য। তবে স্বার্থের দেয়ালে পিঠ ঠেকে কিছু মানুষ মরন যন্ত্রনা অনুভব করে।সেই ইচ্ছাকৃত মরন যন্ত্রনার থেকে রেহাই পেলো না কঠিন মন ধারী নির্ভীক ওহ। সবাই অনেক বুঝিয়ে ও পারলো না পাথরের মনে ফুল ফোটাতে। দিগন্ত পথ মারিয়ে নির্ভীক আটকে আছে একটা প্রসঙ্গে। ‘ পারবো না আমি আমার ভাইয়ের হৃদয় কে বেদনা দিতে। ওর মনে বেদনা দিয়ে আমি সুখী হবো না। তাঁর থেকে ভালো দুটো বিক্ষিপ্ত হৃদয় আরো বিক্ষিপ্ত হোক। ভালোবাসার শাস্তি গ্রহন করে দুটো পরিবার কে খুশি করার চেষ্টায় বিলীন হোক। ‘
ক্লান্ত অনিন্দিতা। অক্ষম সে প্রিয়তম কে বোঝাতে। বরাবর ই বুকে পাথর চাঁপা ছেলে নির্ভীক। তাঁর মস্তিষ্ক পরিবার কে সুখের সায়রে ভাসাতে চায়। কিন্তু বুঝতে পারে না এভাবে সুখ নয় বরং হবে দুঃখ।নেত্র পল্লব মেলে দিয়ে ঘোলাটে মনি তে শেষ বারের মতো প্রিয়তম কে মুগ্ধ দৃষ্টি তে দেখে। বলে
” আপনার দেওয়া শাস্তি গ্রহন করে নিলাম। অভিনয়ের সাথেই পথ চলবো। কখনো বুঝতে দিবো না কাউ কে ভালোবেসে আমি ও মরেছি। যে মরন যন্ত্রনার স্বাক্ষী স্বয়ং প্রকৃতি। ”
” ভালো থাকুন অনিন্দিতা। পারলে ক্ষমা করে দিবেন। আপনার জীবন থেকে সুখ কেড়ে নিলাম আমি। ”
অস্পষ্ট ভাবে নির্ভীক কে দেখতে পায় মেয়েটা। উত্তর করার মতো শব্দ ডিকশনারি তে নেই। থাকবেই বা কি করে ?
মানুষ প্রেমের জন্য দুনিয়া ছাড়ে। এক সাথে থাকার প্রতিশ্রুতি গড়ে। আর ওদের প্রেম গড়েছে আলাদা হওয়ার প্রতিশ্রুতি। রঙিন জীবন কে কালো করার প্রতিশ্রুতি। যেখানে হাত বুলিয়ে শুধু কান্না করা যায়। পাওয়া যায় বেদনা। আবার সেই বেদনা কে সন্তর্পণে লুকিয়ে রাখতে হবে পুরো পৃথিবীর থেকে। প্রেম সুন্দর , সত্যি প্রেম সুন্দর। তিক্ততার মাঝে ও পূর্নতা দেয়। কিছু ব্যথার মাঝে ও সুখ দেয়। নিজেকে নয় বরং অন্য কে।
.
বিয়ের আয়োজন শুরু হয়ে গেছে। পুরো বাড়ি গমগম করছে। দুটো পরিবারের মাঝে কদাচিত পরিমান কোনো দুঃখ নেই। নিজের মন ভেঙে ও তৃপ্ত নির্ভীক। পরিবারের সুখ টুকু বিসর্জন দেয় নি সে। বরং প্রিয়তমা কে দিয়েছে শাস্তি গ্রহন করেছে বেদনা। তাঁতে ও যেন সুখ। উহহু ঠিক সুখ নয় বরং অভিনয়ের রূপ। যে রূপে গুটি গুটি আয়োজনে সাজে পুরো বাড়ি। বসন্ত পেরিয়ে আসে দীর্ঘশ্বাস আর গ্লানি। হলুদ শাড়ি তে কি সুন্দর লাগছে মেয়েটা কে। এতো সুখের মাঝে ও বুঝি দুঃখ এসে ভর করে ?
বুকে হাত গুঁজে নির্লিপ্ত তাকিয়ে থাকে প্রিয়তমার দিকে। দুটো দিন , বা কিছু ঘন্টা পর প্রিয়তমা কে প্রিয়তমা বলে ডাকা যাবে না। কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে সম্পর্ক বদলে হবে শক্ত পোক্ত দেয়াল। মনে মনে নিজেকে প্রস্তুত করে নির্ভীক। অতি দ্রুত চলে যাবে সে। দূরত্ব বজায় রেখে দুজনেই লড়াই করবে। কারো বিরুদ্ধে নয় , নিজের সাথে নিজের লড়াই। অভিনয়ের জগতে পা রাখার লড়াই।
” কি রে নির্ভীক। আজকে ও দাঁড়িয়ে থাকবি ? যা হলুদ লাগা অনি কে। ”
” না আব্বু আমার এসব ভালো লাগে না। ”
” সেকি কথা। ভাইয়ের বিয়ে তে ও ভালো লাগে না। এটা বললে তো চলবে না। যাহ হলুদ লাগাবি। আচ্ছা আয় সবার আগে হলুদ লাগিয়ে না হয় রেস্ট করবি। ”
” আব্বু আমি যাবো না। ”
নির্ভীকের কথায় পাত্তা দেন না আজমাল। এক প্রকার টেনে নিয়ে যান স্ট্রেজে। কোনো মতে হলুদ লাগিয়ে চলে আসে নির্ভীক। অনিন্দিতার কোনো অনুভূতি নেই। তবে সুখ একটাই বিচ্ছেদের হলুদ এর ছোঁয়া তো প্রিয়তমর থেকেই পেলো। জীবনে চরম সত্যের মুখোমুখি না হলেই হয়তো ভালো হতো। নির্ভীকের প্রেম ওকে একটু একটু করে পোরাচ্ছে। মানিয়ে নিয়েছিলো ওহ , তবে এই সত্য ওকে কয়েক গুন পিছিয়ে দিয়েছে। হৈ হুল্লরে মেতে উঠে সকলে। অনিন্দিতার হাত টা শক্ত করে জড়িয়ে আছে ইনতেহা। চোখ দুটো বার বার ভিজে যাচ্ছে। কাতর কন্ঠে বলে
” দোস্ত আমি সবাই কে বলে দেই। ওনারা নিশ্চয়ই সব মেনে নিবে। ”
” সেটা আমি ও জানি। আমি বললেই সবাই মেনে নিবে। কারো কোনো সমস্যা থাকবে না। তবে ভেতর থেকে সবাই কষ্ট পাবে। নির্ভীক ভাইয়ের সামনেই প্রতিশ্রুতি হয়েছিলো। সেদিন ওনি বারন করতে পারে নি। কেন পারে নি এই প্রশ্ন উঠবে। ভাইয়ের সাথে বিয়ে ঠিক হওয়ার পর ও কেন ভালোবাসা কে জীবন্ত করেছে সেই প্রশ্ন উঠবে। অপমান হবে আমাদের ভালোবাসার। কিছু মানুষ কলঙ্ক লাগাবে। নির্ভীক ভাই স্বচ্ছ, শুভ্র, তাঁর গাঁয়ে কলঙ্ক লাগলে আমি নিজেকে কি করে ক্ষমা করবো বলতে পারিস ? তাছাড়া ইতিহাসে বহু প্রেম আছে যেখানে প্রেমের পরিনতি নিষ্ঠুর হয়। আমাদের প্রেম টা ও না হয় নিষ্ঠুর হোক। ”
” অসহ্য , এমন প্রেম যেন কারো জীবনে না আসে। ”
” তোর হাসবেন্ড আসলো না ? ”
” এসে কি করবে ? শোক পালন করা বিয়ে দেখবে। ধ্যাত আমি ও আর আসবো না। ”
রেগে চলে যায় ইনতেহা। অনিন্দিতা হাসে, জীবন টাই হাস্যরসত্মাকে পরিনত হয়েছে।
মিনিট দশেক পর নিহাল কে টেনে নিয়ে আসে হীর। বেচারা নিহাল এর অবস্থা নাজেহাল। সে কিছু তেই হীর কে বোঝাতে পারলো না। রসিকতার স্বরে হীর বলে
” সেকি ভাইয়া এতো লজ্জা কিসের। ”
” আমার ফোন বাজছে হীর। ”
” উফফ রাখুন তো ফোন। সারা জীবন ফোনে মুখ গুঁজে রাখা যাবে। এই সময় টা কি আসবে আর ? ”
বিপাকে পরে নিহাল। অদ্ভুত হলে ও সত্যি নিহালের কোনো ফ্রেন্ড ই আসে নি। সেই নিয়ে কারো মাথা ব্যাথা নেই। অতো দিকে খেয়াল রাখার সময় কোথায়। বন্ধু মহলের সাথে আড্ডায় মজেছে নির্ভীক। আড়চোখে অনিন্দিতা কে দেখে যাচ্ছে। ভারী সুন্দর অভিনয় করে মেয়েটা। হাসি মুখে সবার সাথে প্রহর গুনে চলেছে। এমনকি নিহালের সঙ্গে এমন ভাবে কথা বলছে যেন এই বিয়ের জন্য বহু দিন ধরে অপেক্ষা করে ছিলো সে । নির্ভীকের সাথে চোখাচোখি হতেই হাসে অনিন্দিতা। ইশারায় বলে হাসি ফোঁটাতে। সন্তপর্নে হাসি ফোঁটায় নির্ভীক। অনিন্দিতা ও হাসে। ফটো সেশন শুরু হয় , একে একে সবাই ফটো তুলে। নির্ভীক কে পাশে বসিয়ে দেয় রোজ। নির্ভীক সামান্য বিব্রত হয়। অনিন্দিতা বলে
” পাঞ্জাবি তে সব সময় ই আপনাকে সুন্দর লাগে। আজ ও প্রেমে পরতে বাধ্য হলাম। ”
” কষ্ট বাড়াচ্ছেন অনিন্দিতা। নাকি বিদ্রুপ করছেন। ”
” সে সাধ্য কি আছে আমার ? শাস্তি দিয়েছেন মাথা পেতে গ্রহন ও করেছি। তারপর কষ্ট বিদ্রুপ সব বিলাসিতা। আমি কাঙালি ব্রাহ্মন। চাঁদ কে দেখার সৌভাগ্য মিলেছে যে এটাই বেশি। ”
চলে যেতে চায় নির্ভীক। সকলের আড়ালে নির্ভীকের হাত টেনে ধরে অনিন্দিতা। উপায় না পেয়ে আবারো পাশে বসে পরে নির্ভীক। ফিস ফিস করে বলে
” কি হচ্ছে কি অনিন্দিতা । ”
” আর কয়েক ঘন্টা পর এই হাত ধরতে পারবো আমি ? প্রেমের চোখে দেখতে পারবো আমি। এই সামান্য সময় টুকু আমি হারাতে চাই না। ”
” আপনাকে অনেক কষ্ট দিলাম আমি। প্রেমিক হিসেবে ব্যর্থ আমি। ”
” ভাই হিসেবে তো গর্বিত আপনি। এটাই অনেক কিছু। আমার প্রিয় মানুষ টার জন্য এই টুকু করতে পারবো না আমি ? ”
এক মুহুর্তের জন্য থমকে যায় নির্ভীক। ইচ্ছে হয় অনিন্দিতা কে জড়িয়ে নিতে। চিৎকার করে বলতে আপনাকে ছাড়বো না আমি। কিছুতেই ছাড়বো না। তবে পরিস্থিতি এতো টাই আবেগ প্রবন যে নির্ভীকের হাতে সে ক্ষমতা নেই। ভাই কে কষ্ট দিতে পারবে না ওহ। প্রচন্ড ভালোবাসে পরিবার কে। কখনো তাঁদের এতো টা আঘাত করতে চায় না যাঁর ফলে আফসোস করতে হয়। অবশ্য জীবনে আফসোস টা কখনোই যাবে না। প্রিয়তমা কে না পাওয়ার বেদনা কখনোই স্তব্ধ হবে না। বরং দুজনে এক সাথে থাকার যে ইচ্ছে টা তা কিছু মুহুর্তেই শেষ হয়ে যাবে।
সারা রাত ঘুম হয় নি নির্ভীকের। বুকের ভেতর বেদনা যেন ওকে পাগল করে দিয়েছে। সিগারেটের ধোঁয়া তে পুরো ঘর কেমন গুমোট হয়ে আছে। আকাশের চাঁদ টা ও মেঘের আড়ালে লুকিয়ে। প্রেম কে হারিয়ে কাঁদছে অনিন্দিতা। ব্যলকনি তে দাঁড়িয়ে অনিন্দিতার ডায়েরীর শেষ পাতা টা অপূর্ন হতেই দেখছে নির্ভীক। একটা একটা করে ছিঁড়ে ফেলছে অনিন্দিতা। খুব যত্নে লেখা প্রতি টা অক্ষর আজ অযত্নে থমকে গেছে। যত্নে লেখা অক্ষর গুলো যেন চিৎকার করে বলে
‘ আমাকে পর করে দিও না। আমি তোমাতে হারিয়ে গেছি। ‘
সমস্ত বেদনা কে তুচ্ছ করেই ডায়েরী টা ছিন্ন ভিন্ন করে দেয় অনিন্দিতা।
বিয়ের দিন সকালে নির্ভীকের অবস্থা বদ্ধ পাগলের মতোই। সে যেন নিজের মধ্য নেই। সবাই কে লুকিয়ে এলোমেলো পায়ে অনিন্দিতার ঘরে প্রবেশ করে। নির্ভীকের ছবি বুকে জড়িয়ে জানালায় মাথা এলিয়ে আছে মেয়েটা। হঠাৎ শব্দ হওয়া তে কিছু টা হতচকিয়ে যায় ।নির্ভীক কে দেখে অবাক হয়। কিছু টা ভেঙে পরে ডুকরে কেঁদে উঠে। তৎক্ষনাৎ কাছে এসে দাঁড়ায় নির্ভীক। এলোমেলো দৃষ্টি আর উৎখুস চুলে ও যেন অজস্র সৌন্দর্য বিদ্যমান। অন্তত অনিন্দিতার কাছে তো তেমনি লাগে। প্রিয়তমার চোখে বিষন্নতা ওকে উম্মাদ করে দেয়। হুট করেই জড়িয়ে ধরে অনিন্দিতা কে। শিউরে উঠে মেয়েটা। নির্ভীক বলে
” আমি আপনাকে ছাড়তে পারবো না অনিন্দিতা। আমি পারবো না আপানকে ছাড়তে। ”
অনিন্দিতা যেন আকাশ থেকে পরে। অবিশ্বাস্য স্বরে বলে
” আপনি ভেবে বলছেন নির্ভীক ভাই ? ”
” হ্যাঁ আমি ভেবেই বলছি। চলুন পালিয়ে যাই অনিন্দিতা। যেখানে কেউ নেই , আমি আর আপনি , শুধু আমি আর আপনি। ”
অনিন্দিতা কে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই অনিন্দিতার হাত ধরে টেনে নিয়ে যায় নির্ভীক। অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে অনিন্দিতা। নির্ভীকের চোখ দুটো ঘোলাটে। প্রিয়তমা কে নিয়ে ছুটতে থাকে সে। বহুদূর থেকে বহুদূর।
চলবে