অব্যক্ত_প্রিয়তমা,part_27 সমাপ্তি পার্ট
ফাতেমা_তুজ
” আরে দোস্ত আমার বিয়ে আর তোরা আসবি না। প্লিজ ইয়ার। আরে তোরা না আসলে কিছুই হবে না। একা হাতে কি করে সামলাবো আমি ? প্লিজ। ”
বাড়ির মেইন গেটে এসে থমকে যায় নির্ভীক। অনিন্দিতার হাত টা কখন ছেড়ে দেয় খেয়াল ই নেই। চোখে ভাসে নিহালের হাস্য উজ্জল মুখ। এই মুখে বিতৃষ্ণা কি করে দিবে ওহ ? কল টা কেঁটে পেছন ফিরে তাকায় নিহাল। কিছু দূরে দাঁড়িয়ে আছে অনিন্দিতা। আর একদম কাছে দাঁড়িয়ে নির্ভীক। কিছু টা ভয় পেয়ে যায় নিহাল। তুতলে বলে
” আরে তোরা , এই সকাল সকাল এখানে। ”
” বাসার সাজ গোঁজ দেখছিলাম। তোর বন্ধুরা কাল ও তো আসে নি। আজ ও আসবে না ? ”
” আরে বলিস না। হুট করেই বিয়ের কারনে ট্রিট দেই নি তাই রাগ করেছে সবাই। আসবে , আসবে না কেন। ”
” ওহহ। ”
” অনিন্দিতার সাথে কথা বল আমি আসছি। ”
” শোন না নির্ভীক । আম্মু বলছিলো যে অনির জন্য যে রিং টা এনেছে সেটা লাগছে না। ওকে নিয়ে সঠিক মাপের রিং নিয়ে আয় না ভাই। ”
” আমি ! আরে তুই যাহ না। ”
” প্লিজ ভাই একটু দেখ। আমার কতো কাজ রয়েছে। তুই তো এইসব সাজ গোঁজ থেকে অব্যাহতি নিয়েছিস। ”
” আচ্ছা যাহহ ”
নিহাল চলে যায়। কাছে আসে অনিন্দিতা। নির্ভীকের হাত ধরে বলে
” চলুন যাওয়া যাক। ”
” আমরা কোথাও যাচ্ছি না অনিন্দিতা। ”
” নির্ভীক ভাই ”
” আমাকে ক্ষমা করবেন অনিন্দিতা। শোকে পাগল হয়ে গিয়েছিলাম। ভাইয়ার মুখ থেকে হাসি টা কেড়ে নিতে পারবো না আমি। পালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। ”
বাসা থেকে বেরিয়ে যায় নির্ভীক। গেট ধরে বসে পরে অনিন্দিতা। আবারো সব আশা শেষ হয়ে গেল। ভেঙে গেল ছোট্ট স্বপ্ন টা।
” উঠো অনি। ”
” নির্ভীক ভাই আবারো ফাঁকি দিয়ে চলে গেল আসিম। আবারো চলে গেল। ”
আসিমের চোখে মুখে কোনো রকম উৎকন্ঠা নেই। সন্তর্পণে অনিন্দিতার বাহু ধরে ঘরে নিয়ে যায় সে। কিছু বলার মতো খুঁজে পায় না কেউ ই। বার বার পেছন ফিরে তাকায় অনিন্দিতা। নির্ভীক নেই , আসে না ছেলেটা।
লাল টুকটুকে বেনারসি শাড়ি তে অনিন্দিতা কে বেশ মিষ্টি দেখাচ্ছে। লাল রঙ হলো ভালোবাসার প্রতীক। আর বিয়ে হলো বন্ধন। ভালোবাসার বন্ধন তৈরি করতেই প্রতিটা মেয়ে নিজে কে লাল রঙে সজ্জিত করে। সমস্ত ভালোবাসা উজাড় করে দেয় প্রিয়তম কে। অনিন্দিতা ও তেমনি সেজেছে। প্রিয় মানুষের জন্য নিজেকে সাজাবে এমনি ভাবনা ছিলো ওর। তবে সব কিছু পূর্ন হয় না। অনিন্দিতার ও হয় নি। লাল বেনরসি , হাতে মেহেদী, পরিপূর্ন সাজে সজ্জিত হলে ও অনুভূতি নেই। আর না আছে প্রিয়তমর জন্য অপেক্ষা। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত একটাই চাওয়া হবে সেটা হলো মৃত্যু। ভালোবাসার শাস্তি স্বরূপ মৃত্যু কেই ডাকবে মেয়েটা। কষ্টে হৃদপিন্ড যেন বুক চিরে বেরিয়ে আসে। চিৎকার করে বলতে চায় আমাকে মৃত্যু দাও। আর নির্বিকার হয়ে তাকিয়ে থাকে অনিন্দিতা। দু চোখের পাতা তে হালকা পানির আভাস। ব্যাথা কে কমানোর কোনো ঔষধ নেই। যা আছে তা তিক্ততা। এই তিক্ততা কেই সঙ্গী করে বেঁচে আছে মেয়েটা। যদি আত্মহত্যা মহাপাপ না হতো তাহলে খুব যত্নে আত্মহত্যা কে বেছে নিতো ।
নীল পাঞ্জাবি পরেছে আসিম। সুদর্শন পুরুষের রূপ কখনোই লাঘব হয় না। আসিমের ও হয় নি। হাজারো ব্যথা তে ও ছেলেটা অপরূপ। কি যত্নেই না বানিয়েছেন সৃষ্টিকর্তা। অথচ দলিল করে দিয়েছেন বেদনা।
পাঞ্জাবির হাতা গুটাতে গুটাতে উপরে আসে আসিম। ছাঁদের এক কোনে আড্ডায় ব্যস্ত নিহাল ও তাঁর বন্ধুরা। দীর্ঘশ্বাসে ছেয়ে যায় আসিমের বুক। চাঁপা কষ্টের হেতু খুঁজে পায় না। নিজের জন্য নাকি অনিন্দিতার জন্য কষ্ট হচ্ছে ?
আসিম কে দেখে হাসে নিহাল। হাত উঁচিয়ে কাছে ডাকে। নিহাল বলে
” তোমাকে দেখতে রাজপুত্রের মতো লাগছে। মনে হচ্ছে তোমার ই বিয়ে। ”
” কি যে বলেন নিহাল ভাই। বিয়ের বরের থেকে অন্য কোনো পুরুষ কখনোই সুন্দর হয় না। ”
” এটা তো কথার কথা। ”
” কিছু হলে ও সত্য। অন্য কাউ কে যতোই সুন্দর লাগুক না কেন প্রতি টা মানুষ ই বর কে দেখে। তাহলে মোরাল অফ দ্যা স্টোরি হলো বিয়ের বর সব থেকে সুন্দর। ”
আসিমের যুক্তি তে সকলে হার মেনে নিলো। এক প্রকার প্রশংসায় পঞ্চমুখ সকলে। নিহালের দিকে তাকিয়ে থাকে আসিম। ছেলেটার হাসি সুন্দর। তবে এই হাসি টা কিছু হৃদয়ের সারা জীবনের বেদনা।
.
বউ সাজে বসে আছে অনিন্দিতা। চোখ দুটো নিষ্প্রাণ হয়ে আছে। একটু আগে শুনতে পেয়েছে নির্ভীক চলে গেছে। প্রচন্ড রাগ হচ্ছে মেয়েটার। এমন তো কথা ছিলো না। কেন একা শাস্তি পাবে ওহ ?
একটা সুযোগের অপেক্ষা করছিলো অনিন্দিতা । ঘর ভর্তি মানুষ। সবাই একে একে চলে যেতেই অনিন্দিতার সুযোগ মিলে। ডোর অফ করে নির্ভীকের নাম্বারে কল করে। এক বার রিং হতেই ফোন টা রিসিভ হয়। দুজনের কেউ ই কথা বলে না। দু প্রান্ত থেকে আসে দীর্ঘশ্বাস। যেই দীর্ঘশ্বাসে ভারী হয় পরিবেশ। দুটো ছিন্ন ভিন্ন হওয়া হৃদয়ের আর্তনাদ যেন কেউ শুনে না। নিষ্প্রাণ দুজনেই। অনিন্দিতা বাধ্য হয় নিরবতা ভাঙতে। চেঁচিয়ে বলে
” আমি কেন একা শাস্তি পাবো ? আপনি কেন শাস্তি গ্রহন করবেন না। ফিরে আসুন। আপনার সামনে আমি কবুল বলে অন্য কাউ কে গ্রহন করবো। ”
” আমি পারবো না অনিন্দিতা। আপনাকে অন্যের হাতে তুলে দিলে ও স্বচক্ষে দেখার ক্ষমতা আমার নেই। ”
” কেন নেই। কেন থাকবে না। শুধু নিজের দিক টাই দেখলেন। একবার ও আমার দিক টা বুঝলেন না। আমার ভালোবাসা কে বিক্রি করে পরিবারের সুখ কিনে নিলেন। আরে এভাবে মানুষ বাঁচে? আমাকে মেরে ফেললেন আপনি। মেরে ফেললেন। ”
কথা বলতে বলতে মেঝে তে বসে পরে অনিন্দিতা। ওপাশ থেকে কোনো উত্তর আসে না। বুকের যন্ত্রণা বেড়ে আকাশচুম্বি। নির্ভীক অনুভব করে কল টা কাঁটা দরকার। টুট টুট শব্দ হয়ে কল কেঁটে যায়। চিৎকার করে উঠে অনিন্দিতা। জীবনের ডায়েরীর অর্ধেকটা ছিড়ে ফেলেছে সে। বাকি অর্ধেক টা ও মূল্যহীন। প্রয়োজন নেই এই ডায়েরীর পূর্নতা। ব্যলকনি দিয়ে ছুঁড়ে ফেলে দেয় ডায়েরী। চেঁচিয়ে বলে
” আই হেট ইউ নির্ভীক, আই হেট ইউ। ”
কান্নার শব্দের সাথে বাইরের মিউজিক এর শব্দ কিছু টা অদ্ভুত লাগে। হঠাৎ করেই মিউজিক অফ হয়ে যায়। অনিন্দিতা হুরমুরিয়ে উঠে। চোখ মুছে নেওয়ার সময় পায় না। তাঁর পূর্বেই বাসায় চেঁচামেচির শব্দ কানে আসে। কিছু টা বিব্রত হয় মেয়েটা। কোনো ভাবে ডায়েরী টা কারো কাছে পরে গেল না তো । অজানা ভয় ওকে জড়িয়ে ধরে। শাড়ির কুঁচি ধরে ছুটে আসে মেয়েটা। আসার পথে দু বার হোঁচট ও খায়। বাগানের কাছে এসে ডায়েরী টা দেখতে পায় না। বুকের ভেতর ধক করে উঠে। কেউ যেন কলিজা খুবলে নিয়েছে। কিছু টা ভয় নিয়েই স্ট্রেজের কাছে আসে। সেখানে শতেক মানুষের ভীর। সবাই কে ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করে অনিন্দিতা। কান্নার রোল পরে গেছে। সবার চোখে মুখে চিন্তার ছাপ। কানা কানি করছে কেউ কেউ। অনিন্দিতা যেন আকাশ থেকে পরে। কিছু কথা তাঁর মাথায় যায় না। অনিন্দিতার সাথে চোখাচোখি হয় চারুলতার। চোরের মতো গুটিয়ে যান তিনি। কাঁপা স্বরে অনিন্দিতা বলে
” কি হয়েছে ? ”
মেয়েটার কন্ঠ যেন সবাই কে থমকে দিতে বাধ্য হয়। কি জবাব দিবে ওকে ?
কেউ কোনো কথা বলে না। হীরের কাছে এসে দাঁড়ায় । ছলছল নয়নে অনিন্দিতার কাছে চিঠি টা বারিয়ে দেয় হীর। বলে
” নিহাল ভাই কে কোথাও খুঁজে না পেয়ে ওনার ঘরে গিয়েছিলাম। সেখানে না পেয়ে কল করি। নাম্বার নট রিচেবল বলে। এমন কি ওনার বন্ধু দের নাম্বার ও অফ। কিছুক্ষণ আগে একটা পার্সেল আসে। সেখানে একটা চিঠি আর সাথে একটা রেকর্ডার। ”
রেকর্ডার টা অন করে হীর। সেখানে স্পষ্ট ভাষায় নিহালের কন্ঠ
” প্রথমেই সকলের কাছে আমি ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। জানি সবার কাছে আমি চোখের বিষে পরিনত হবো। কিন্তু এটা ছাড়া আমার কোনো উপায় ছিলো না। এমন কি বাসা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় ও চিঠি লিখার সময় পাই নি। তাই পার্সেল করে দিলাম। হয়তো চিঠি টা মিথ্যে মনে হতে পারে। তাই এই রেকর্ডার পাঠালাম। আর কিছু বলতে পারছি না আমি। গলা ধরে আসছে। চিঠি তে বাকি টা লিখা আছে। ”
অনিন্দিতা এখনো বুঝতে পারে নি। চিঠি মেলে মেয়েটা। যেখানে স্পষ্ট ভাষায় লিখা কিছু লাইন।
প্রিয় অনিন্দিতা
ছোট থেকেই বোনের নজরে দেখেছি তোমায়। কখনো স্ত্রী হিসেবে কল্পনা করি নি। তুমি স্ত্রী হিসেবে নিশ্চয়ই সেরা। তবে আমি কাউ কে প্রতিশ্রুতি দিয়েছি। সেই প্রতিশ্রুতি ভাঙার সাধ্য আমার নেই। তাই হয়তো আমার বাবা মায়ের দেওয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে পারলাম না আমি। জানি এমন সময়ে চলে যাওয়া আমার অন্যায় হয়েছে। তবে আমি নিরুপায় ছিলাম। কেউ আমার পাশে ছিলো না। হঠাৎ করেই আমাদের বিয়ের কথা বলা হলো। আমি যেন আকাশ থেকে পরেছি তখন। পরিবারের কাছে খ্রিস্টান ও ডিভোর্সি মেয়ে কে বিয়ের কথা বলি কি করে ? আজ থেকে আট বছর আগে আমাদের বিয়ের কথা যখন ঠিক হয় তাঁর কিছু দিন পূর্বেই লিসার সাথে দেখা। কিশোরী তখন। বয়স কতো ষোলো সতেরো হবে। এই মেয়েটার সাথে ঘটে যাওয়া বিরুপ ঘটনা ওর প্রতি আমার আবেগ জমিয়ে দেয়। এটা ও সত্য আমি তখন খুব বেশি বড় নই। তবে ওকে ভালো রাখার মতো শক্তি আছে বলে মনে হয়েছিলো। পনেরো বছরেই লিসার বিয়ে হয়। বিয়ের তিন মাস যেতেই ওর প্রতি অত্যাচার শুরু হয়। ওর স্বামী ওকে বাজে কাজে ব্যবহারের চেষ্টা চালায়। তবে লিসা সে কাজে রাজি ছিলো না। পালিয়ে আসে অমানুষের থেকে।বাবা মায়ের কাছে ঠাই মিলে নি। পরে ওহ আসে একটা আশ্রমে। যেখানে ওর সাথে আমার প্রথম দেখা। ওর জীবনের কাহিনী আমাকে ব্যথিত করে। প্রথমে প্রেম জাগে নি। তবে অনুভব করেছিলাম কিছু টা। গত তিন বছর পূর্বে লিসার সাথে ডিভোর্স হয় ওর স্বামীর। এর জন্য ওর প্রাক্তন স্বামী কে মোটা অঙ্কের টাকা প্রদান করতে হয়েছে আমায়। যাঁর দরুন নিজের বিজনেস শুরু করেছিলাম। যাতে করে আব্বুর টাকা না নিতে হয়। অদ্ভুত তাই না?
কোনো বাবা মা এমন সম্পর্ক কে মেনে নিবে না। তবে ভালোবাসা বাঁচ বিচার করে হয় না। লিসা আমার প্রতি সদয়। জানি না কতোটা ভালোবাসে। তবে আমার জন্য নিজ ধর্ম ত্যাগ করেছে সে। আফসোস বন্ধুরা ও আমার পাশে ছিলো না। ওদের কথা গুলো ছিলো এমন আমি নিজের জীবন নষ্ট করে চলেছি। পরিশেষে অনেক বুঝিয়ে রাজি করালাম। আমাকে পালাতে সাহায্য করবে ওরা। আর তখন তোমার সাথে আমার বিয়ের শেষ কার্যক্রম চলছে। বিশ্বাস করো যদি লিসার সাথে আমি আগে প্রতিশ্রুতি দান না করতাম তা হলে কখনোই তোমার সম্মান হানী করতাম না। বহু কষ্টে পালিয়েছি। জানি না কতো টুকু সুখী হতে পারবো। তবে লিসা কে কষ্ট পেতে দিবো না। তোমার জন্য শুভেচ্ছা। আমার সাথে বিয়ে হলে কখনোই সুখী হতে না তুমি। বরং বেদনায় শেষ হতাম দুজনেই। সবাই কে কষ্ট দিলাম। কেউ হয়তো মাফ করবে না। সে যাই হোক , পুরো জীবন ঠকানোর থেকে না হয় ক্ষনিকের জন্য ঠকালাম। পারলে আমাদের জন্য দোয়া করো। মনে কষ্ট রেখো না। আবারো বলছি আমি সবার কাছে ক্ষমা পার্থী।
ইতি
নিহাল
কিছু ক্ষনের জন্য স্তব্ধ অনিন্দিতা। সকলেই কাঁদছে। কি হবে অনিন্দিতার ?
হঠাৎ কেউ একজন হাত ধরে টেনে নিয়ে যায়। তাকায় অনিন্দিতা । প্রচন্ড ব্যস্ত দেখাচ্ছে আসিম কে। কানে ফোন। উদ্বিগ্ন কন্ঠে আসিম বলে
” নির্ভীক স্যারের ফোন অফ অনি। সন্ধ্যা সাড়ে ছয় টায় ওনার ফ্লাইট। এখনো সময় আছে। ”
অনিন্দিতা কথা বলে না। আসিম গাড়ি ড্রাইভ করতে থাকে। সবাই অবাক , পিছু ডাকে তবে আসিম শুনে না। অনিন্দিতা কে নিয়ে চলে যায় এয়ারপোর্টে। মাথা নিচু করে বসে আছে নির্ভীক। কারো পায়ের শব্দ শুনে তাকায়। অনিন্দিতা কে দেখে যেন হতবুদ্ধি হারিয়ে ফেলে ছেলেটা। বলে
” অনিন্দিতা আপনি ! ”
” আমাদের ভালোবাসা হেরে যায় নি নির্ভীক। আমাদের ভালোবাসা হেরে যাই নি। ”
নির্ভীকের বুকে ঝাঁপিয়ে পরে অনিন্দিতা। আসিমের দিকে তাকায় নির্ভীক। চিঠি টা মেলে দেয় ছেলেটা। নিহালের ঘটনা পড়ে বাক শক্তি হারিয়ে ফেলে নির্ভীক। শক্ত করে জড়িয়ে ধরে অনিন্দিতা কে। চিৎকার করে বলে
” ভালোবাসি অনিন্দিতা। খুব ভালোবাসি, আপনার থেকে ও বেশি ভালোবাসি। ”
” তারপর তারপর কি হলো স্যার। ”
” তারপর আর কি গল্প শেষ। নির্ভীক আর অনিন্দিতার গল্প এখানেই সমাপ্ত। ”
” অনিন্দিতা আর নির্ভীকের ডায়েরী গুলোর ই বা কি হলো।”
মোটা ফ্রেমের চশমা দিয়ে চোখ মেলে তাকায় আসিম। নতজানু হয়ে বলে
” এখানেই গল্প শেষ। তাহলে বুঝলে তো মিতির ভালোবাসা সুন্দর। কাউ কে ভালোবাসলে এমন ভাবেই বাসতে হয়। আর কাউ কে ধোঁকা দিও না কেমন। ”
” ওকে স্যার। আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। আর গল্প টা অনেক সুন্দর। ”
মিতির চলে যায়। ঝাপসা চোখে চশমা খুলে ফেলে আসিম। গুনে গুনে পঁচাত্তর বছরে পা রাখলো ছেলেটা। ভাবতেই অবাক লাগে কতো গুলো বসন্ত পেরিয়ে গেছে। তেইশ বছরের যুবক ছেলেটা আজ পঁচাত্তর বছরের বৃদ্ধ। পুরনো আলমারি থেকে দুটো ডায়েরী বের করে আসিম। ডায়েরী দুটো খুলে নিয়ে নির্লিপ্ত তাকিয়ে থাকে। কি সুন্দর ভালোবাসা। লেখা গুলো এখনো কতো টা স্পষ্ট। অনিন্দিতার লেখার উপর হাত বুলায় আসিম। চোখ থেকে দু ফোঁটা অশ্রু কনা গড়িয়ে পরে। প্রিয়তমা কে ছেড়ে আজো ও বেঁচে আছে ওহ। এটা কোনো কাল্পনিক গল্প নয়। বরং আসিমের জীবনের গল্প। না পাওয়া ভালোবাসার গল্প। নিজের ভালোবাসা কে ছাঁপিয়ে দুটো ভালোবাসা কে মিলিয়ে দেওয়ার গল্প। দেখতে দেখতে এতো গুলো বছর পেরিয়ে গেছে। নির্ভীক আর অনিন্দিতার বিয়ে দিয়ে স্টকহোমে চলে আসে আসিম। বাগান থেকে অনিন্দিতার ডায়েরী টা আসিম ই নিয়েছিলো। পরে নির্ভীকের ডায়েরী টা ও সংগ্রহ করেছিলো। আর কখনো ফিরে যায় নি বিডি তে। এক প্রকার ইচ্ছাকৃত হারিয়ে গেছে সকলের থেকে। কেউ জানে না আসিমের খবর।
আজ থেকে বায়ান্ন বছর পূর্বে যে গল্প টি কে ছেড়ে এসেছিলো সেই গল্পের সমাপ্তি এখনো লিখা হয় নি। দুটো ডায়েরীর শেষ পাতা এখনো অব্যক্ত। নিজের ভালোবাসার শেষ সমাপ্তি লিখে আসিম। কাঁপা হাতে না বলা ভালোবাসার শেষ লাইন টুকু লিখে
” আমি সেদিন মিথ্যে বলেছিলাম তোমায়। তোমাকে কখনোই আমি বন্ধুর মতো ভালোবাসি নি। ভালোবেসে ছিলাম প্রিয়তমার মতো। কখনো বলা হয় নি , অনি আমি তোমাকে ভালোবাসি। আজ পঁচাত্তর তম বসন্তে পা দিয়ে কেন জানি সমাপ্তি লিখতে ইচ্ছে হলো। হয়তো ইচ্ছে টা আজো মূল্যহীন। ডায়েরীর ভাঁজে ভাঁজে না হয় পরে থাকুক আমার উনিশ বছরের যবুক হৃদয় কে কাঁপানো সেই অব্যক্ত প্রিয়তমা। ”
[ সমাপ্ত ]
[ গল্পের এক মাত্র প্রধান চরিত্র আসিম। বাকি সবাই প্রয়োজনীয় চরিত্র মাত্র। এ গল্পের নায়ক নায়িকা নেই। ]
গল্পের সমাপ্তি আপনাদের হাতে। যদি মনে হয় হ্যাপি এন্ডিং তবে হ্যাপি এন্ডিং আর যদি মনে হয় স্যাড এন্ডিং তবে স্যাড এন্ডিং ।
Omg…..marattok sundor akta golpo…lekhika r marattok lekhar dhoron….seriously… I am in shock….
Osomvob valo legeche story ta…ami vasay bujhate parbo na…..
Majh khan theke amr buk ta bhari hoye gece??
Oo my allah ???ki marattok level er golpo …..ami bole bojate parbo na …..
Lekhika apur chinta shokti ki jotil….thanks api ato darun akta golpo dear jonno????
Onek din por arokom marattok leveler golpo porlam???? chintay matha betha hoye giyechilo ki hobe tai vebe….valo thakuk asim er moto obekto preotomora☺????
Akhane asim prodhar coritro hole o tar joboner bornonai sob theke kom dewa hoiacche. Tobe nam koroner sarthokota bojai acche
Golpota sundor but …..asim j golpo ta kaw k bolche ai fill ta thik aseni kake bolche tar somporke kichu e bola hoi ni…..mane sob e thik acche but golpe mukkho choritro basi guruto pai seta asim paini .