অভিমানী ভালোবাসা পর্ব_০১

0
6165

অভিমানী ভালোবাসা
পর্ব_০১
লেখিকাঃ Hiya_Chowdhury

“ঠোঁটে চুমু খেলে কি বেবি হয় রোদ ভাইয়া?”

জুহির কথায় রিতিমত বিস্মিত হয়ে যায় রোদ। রোদ পড়ে দশম শ্রেণীতে। আর জুহি পিচ্চি মেয়ে মাএ ক্লাস ফাইভে পড়ে সে কি বললো এটা। চুমু খেলে নাকি বেবি হয়! রোদ হাসবে না কাঁদবে বুঝতে পারছে না। রোদের হুশ ফিরে জুহির কথায়,

-কি হলো কথা বলছো না কেন? (জুহি)

-কিসব বলছিস তুই? ঠোঁটে চুমু খেলে বেবি হবে কেন? (রোদ)

-তাহলে তুমি আমার ঠোঁটে চুমু খেলে কেন? এ্যাঁ এ্যাঁ তুমি আমার ঠোঁটে চুমু খেয়েছো কিন্তুু এখন বলছো বেবি হবে না এ্যাঁ এ্যাঁ। আমার বেবি চাই। (জুহি)

এক প্রকার ফুঁপিয়ে কান্না করতে লাগলো জুহি। আস্তে আস্তে জুহির কান্নার শব্দ বেড়েই চলছে। কেই শুনে ফেললে কি যে হবে কে জানে। পরিস্থিতি সামলাতে রোদ জুহি কে বললো।

-আরে কান্না করিস না। হ্যাঁ ঠোঁটে চুমু খেলে বেবি হয়। তোর ও বেবি হবে। (রোদ)

-ইয়াহু আমি এক্ষুনি মামনি আম্মু আব্বু সবাইকে বলবো আমার বেবি হবে। হিহিহি কি মজা কি মজা।
(জুহি)
রোদের মাথায় হাত। মেয়ে বলে কি সবাইকে বলে দেবে রোদ ওর ঠোঁটে চুমু খেয়েছে। ছিঃ ছিঃ কেলেংকারি হয়ে যাবে। রোদ খুব রেগে যায়।

-তুই কাউকে এই কথা বলবি না জুহি। (রোদ)

-বলবো আমি কি মজা আমার বেবি হবে। সবাইকে বলবো। (জুহি)

-বলবি না বলছি। (রোদ)

-না বলবো। (জুহি)

রোদ রেগে গিয়ে জুহি কে ইচ্ছে মতো মারে আর ভয় দেখায় সে যদি এই কথা কাউকে বলে তাহলে জুহি কে একদম মেরে ফেলবে। জুহি খুব ভয় পেয়ে যায়।

-তুমি খুব পচাঁ আমাকে মারো। আমাকে প্রতিদিন বকো আমাকে ভয় দেখাও। আর থাকবো না তোমার কাছে। খুব দূরে চলে যাবো তোমার থেকে। তুমি খুব খারাপ। (জুহি)

কান্না করতে করতে রোদ কে এই কথা গুলো বলেছিলো জুহি। সেদিন হয়তো ওর কষ্ট টা বেশি ই ছিলো।

-হ্যাঁ রে জুহি তুই ঠিকি বলেছিস আমি খুব খারাপ। তোকে অনেক মারতাম বকতাম। কখনো তোর মূল্য টা বুঝতে পারি নি। কিন্তুু যেদিন তুই তোর বলা কথাটা সত্যি করে না বলে সত্যি সত্যি আমাকে ছেড়ে অনেক দূরে চলে গেলি। তারপর থেকে হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছিলাম আসলে তুই আমার জীবনে কি ছিলি। (রোদ)

জুহির ছোট বেলার ফ্রেমে বাঁধানো ছবি টার দিকে তাকিয়ে রোদ হারিয়ে গিয়েছিলো তার অতীতে। একদৃষ্টিতে ছবি টার দিকে তাকিয়ে এই কথা গুলো ভাবছিলো রোদ। অতীতে ডুব দেওয়ার কারণে রোদের বর্তমানের কোনো খেয়াল ই নেই।

-স্যার……..(ম্যানেজার)

-জ্বী ক ক কে! (রোদ)

-স্যার আমি আপনার ম্যানেজার। (ম্যানেজার)

-ও আ’ম সরি। আসলে…… (রোদ)

-কি দেখছিলেন স্যার ছবিটার দিকে এমন করে। (ম্যানেজার)

-না কিছু না। আপনি কখন আসলেন ম্যানেজার সাহেব। (রোদ)

-যখন আপনি ছবিটার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলেন তখন এসেছিলাম। অনেক বার আপনাকে ডাকলাম ও কিন্তুু আপনার কোনো রেসপন্স নেই….(ম্যানেজার)

-আ’ম সরি। তা কি জন্য এসেছেন ম্যানেজার সাহেব? (রোদ)

-স্যার এই ফাইল গুলো তে আপনার সিগনেচার দরকার ছিলো। (ম্যানেজার)

-ওহ আচ্ছা দিন আমি সিগনেচার করে দিচ্ছি। (রোদ)

-জ্বী। (ম্যানেজার)

অতঃপর রোদের সিগনেচার নিয়ে ম্যানেজার সাহেব রোদের কেবিন ত্যাগ করে। রোদ জুহির ছবি টা একপাশে সযত্নে রেগে দেয়। আজ কোনো এক অজানা কারণেই জুহির কথা খুব মনে পড়ছে রোদের। বড্ড মিস করছে সে জুহি কে।

আজ রোদ অনেক বড় বিজনেসম্যান হয়ে গেছে। জুহি ও আর ছোট নাই। আজকে তার ১৮ তম জন্ম দিন। জুহির চলে যাওয়ার পর রোদের কাছে জুহির ছবি টাই ছিলো ওর শেষ স্মৃতি। ছবিটির ছোট্ট জুহি কে রোদ নিজের মতো কল্পনা করে নিয়েছে। রোদ জুহি কে নিজের মতো করে সাজিয়ে হৃদয়ের মাঝে খুব যত্নে রেখে দিয়েছে।

কখনো আর জুহির দেখা পাবে কি না সেটা রোদ জানেনা। কিন্তুু তার যে জুহি কে খুঁজে পেতেই হবে।

এসব ভাবতে ভাবতে হঠাৎ রোদের ফোন টা বেজে উঠে। ফোন রিসিভ করে ওপাশ থেকে কানে ভেসে আসা। কথাগুলো শুনে রোদ খুশিতে আত্মহারা.

-রিমি তুই ঠিক বলছিস তো যে আগামীকাল জুহি আসবে? (রোদ)

-হ্যাঁ রে ভাই একদম পাক্কা। (রিমি)

-ইশ আমার যে কি খুশি লাগছে। কত্তো দিন পর আমার জুহি কে দেখবো। (রোদ)

-তোর জুহি মানে? (রিমি)

-ককই কিছু না তো। (রোদ)

-তোর কথা শুনে মনে হচ্ছে তুই খুশি হয়েছিস জুহি আপি আসবে জেনে? (রিমি)

-হুম খুশি না হওয়ায় কি আছে। কতো বছর পর জুহি কে দেখবো। (রোদ)

-সরি ভাই তোর এতো খুশি হয়ে কাজ নাই। (রিমি)

-মানে? (রোদ)

-জুহি আপি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন তুই বাসায় থাকলে সে আসবে না। (রিমি)

-হোয়াট…! (রোদ)

-হুম ভাই আম্মু বলেছে তুই বাসায় থাকবি না আগামীকাল। তুই আমাদের বাংলো বাড়ি টা তে চলে যাবি। (রিমি)

-ওহ আচ্ছা রাখি। (রোদ)

এটা বলেই রোদ ফোন টা কেটে দেয়। রোদ জানে জুহি কেন বলেছে সে বাসায় থাকলে জুহি আসবে না। জুহি ছোট থেকেই বড্ড অভিমানী আর জেদি ছিলো। রোদের উপর থেকে এখনো রাগ যায় নি তাই সে এমন টা বলেছে।

জুহি আসবে শুনে যতটা না খুশি হয়েছিলো রোদ। জুহির বলা কথাটি শুনে মুহুর্তের মধ্যেই বিলিন হয়ে গেছে রোদের সেই খুশি। বুকের বাম পাশ টায় চিনচিন ব্যাথা অনুভব করলো রোদ। জুহি কে একটা বার দেখার জন্য নিজের মধ্যে যে হাহাকার শুরু হয়ে গেছে রোদের।

রোদ ডিসিশন নেয় সে তার মায়ের বলা কথা অনুযায়ী সে সত্যি ই চলে যাবে তাদের বাংলো বাড়িতে। তাও অন্তত জুহি পা রাখুক তাদের বাসায়। কারণ সে একদিন বাসায় না থাকলে কিছুই হবে না কিন্তুু তার জন্য যদি জুহি ওদের বাসায় না আসতে পারে তবে এর চেয়ে খারাপ কিছু আর কি হতে পারে। রোদ এমনি তেই জুহির সাথে করা অন্যায়ের জন্য ক্ষমা পায় নি সেখানে আবার নতুন করে কোনো ভুল/অন্যায় করতে চায় না সে।

রাতে………..

রোদের পরিবারের সবাই ডিনার করতে বসেছে। প্রায় অর্ধেক খাওয়া শেষ এমন সময় রোদের আম্মু বলে উঠে।

-রোদ তোকে তো একটা কথা বলাই হয় নি… (রোদ ওর আম্মু কে আটকিয়ে)

-আমি জানি আম্মু। আর আমি কাল আমাদের বাংলো বাড়িতে চলে যাবো। তুমি টেনশন নিও না। (রোদ)

জুহির কথা মনে পড়তেই রোদের গলা দিয়ে আর খাবার নামছে না। সে খাবার ছেড়ে উঠে চলে যেতে নেয়………

-কিরে রোদ খাবার ছেড়ে উঠে গেলি কেন? (আম্মু)

-আম্মু আমার খাওয়া শেষ। (এটা বলে রোদ উপরে চলে যায়।)

-কি জানি বাবা ওর মাথায় কখন কি ভুত চাপে। তুমি এই অল্প বয়সে আমার ছেলে টার উপর বিজনেস এর সব দায়িত্ব তুলে দেওয়ার জন্যই এমন হয়েছে। (আম্মু)

-আহা রোদের মা কি সব বলছো। রোদ নিজেই এই দায়িত্ব নিয়েছে। (আব্বু)

-হয়েছে ভাইয়া ভাবী তোমরা আর ঝগড়া করো না। ডিনার শেষ করো সবাই। (চাচ্চু)

-হুম।

পাশ থেকে এসব চুপটি মেরে বসে শুনছে রিমি আর রোদের চাচাতো ভাই বোনেরা। এবার রোদের বায়োডাটা বলি।

রোদেরা জয়েন্ট ফ্যামিলি। রোদের ছোট দুই ভাই বোন আছে, কাব্য রিমি। রোদের আব্বু আম্মু রোদের কাকা কাকিমনি, এবং রোদের চাচাতো ভাই বোন ঝিমি শুভ্র ও শান্ত।ও রোদের দাদুমনি এদের নিয়ে রোদের পরিবার। শুভ্র আর রোদ সেইম এইজের। দুজনেই বিজনেসম্যান। শুভ্র আর রোদ একি সাথে তাদের কোম্পানি সামলিয়ে আসছে। অফিসের একটা খুব গুরুত্বপূর্ণ ডিল ফাইনাল করতে শুভ্র দেশের বাইরে গেছে। যায় হোক সব মিলিয়ে খুব সুখি একটি পরিবার রোদের। সবাই খুব মিলেমিশেই থাকে।

রোদ উপরে নিজের রুমে গিয়ে সোজা দরজা বন্ধ করে দেয়। জুহির কথা মনে পড়ছে ভীষণ। কোনো কিছুই আর ভালো লাগছে না তার। ইচ্ছে করছে ছুটে জুহির কাছে চলে যেতে।

সেই উপায় টাও যে নেই। নিজের করা অন্যায়ের জন্য জুহির একটা পিক ফোন নাম্বার কিছুই পায় নি রোদ। বারবার ওর আম্মুর কাছে জানতে চেয়েছে জুহির ফোন নাম্বার/অন্য যেকোনো ভাবেই রোদ জুহির সাথে যোগাযোগ করতে চেয়েছে। কিন্তুু রোদ কোনো ভাবেই জুহির সাথে যোগাযোগ করতে পারেনি।

বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়ায় রোদ। আকাশের হাজার হাজার তারার মাঝে চাাঁদ টাকে অসম্ভব সুন্দর দেখাচ্ছে।চাঁদের স্নিগ্ধ আলোয় ছড়িয়ে পড়ছে চারপাশে। কোনো এক রাতে জুহি কে সাথে নিয়ে এমন সুন্দর পরিবেশ ভ্রমণ করতে চায় রোদ। কিন্তুু তা কি আদৌ সম্ভব….?

পরের দিন সকালে অফিসে পৌছে রোদ নিজের মাঝে নিজে স্থির থাকতে পারছে না। কেমন যেনো অদ্ভুত অনুভূতি কাজ করছে তার। কখন জুহি ওদের বাসায় এসে পৌছাবে এটা জানার জন্য মন টা ব্যাকুল হয়ে আছে।

রোদ সকালে অফিসে আসার আগে রিমি কে বলে দিয়েছে। জুহি যখন ই ওদের বাসায় এসে পৌঁছাবে তখনি যেনো খবর টা রিমি রোদ কে দেয়। প্রায় ১১ বাজতে চললো রোদ এখনো রিমির ফোন পাচ্ছে না।

আসার তো কথা সকালেই তাহলে এখনো কেন আসছে না? কোনো বিপদ হলো নাতো জুহির? এখন কেমন জেনো নার্ভাস ফিল করছে রোদ।

তখনি ম্যানেজার সাহেবের আগমন……

-স্যার আপনি কি কোনো বিষয় নিয়ে চিন্তিত? (ম্যানেজার)

-ককই না তো। (রোদ)

-তবুও স্যার আপনাকে কেমন যেনো নার্ভাস দেখাচ্ছে। যদি স্যার আপনি কিছু মনে না করেন তাহলে আমাকে বলতে পারেন আপনার সমস্যার কথা! যদি আমি স্লভ করতে পারি?(ম্যানেজার)

রোদ মুচকি হাসে ম্যানেজার সাহেবের কথায়। সে নিজেই কিছু করতে পারছে না আর সেখানে নাকি ম্যানেজার সাহেব পারবে।…!

-আরে না ম্যানাজার সাহেব। আপনি যেমন টা ভাবছেন তেমন কিছুই না। এমনি আজকে আমার মন টা ভালো নেই। (রোদ)

-ওহ আচ্ছা মন খারাপ হলে স্যার গান শুনেন মুড অন হতে যাবে। (ম্যানেজার)

-(তাও রোদ মুচকি হাসে)

কিছু সময় পর ম্যানেজার সাহেব চলে যায়। রোদ জুহির কথা ভাবতে ভাবতে মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিচ্ছে। মেয়ে টা এখনো কেন আসলো না? নাকি রিমি ওকে জানাতে ভুলে গেছে? না অন্য কিছু। আর কিছুই ভাবতে পারছে না রোদ। মোটামুটি সে ঘামতে শুরু করে দিয়েছে। অতিরিক্ত টেনশনের ফলে যা হয় আর কি।

আকাশ পাতাল ভাবতে ভাবতে রোদের ফোন বেজে উঠল। রোদ দেখে রিমি ফোন দিয়েছে। রোদের মুখে হাসির ঝলক ফুটে উঠে। তবে এই হাসি বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না। রিমির কথা শুনে মুহুর্তের মাঝে রোদের হাসি উধাও হয়ে গেলো………..

চলবে—-

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here