অভিমানী_ঝরা_পাতা,part_2

0
570

#অভিমানী_ঝরা_পাতা,part_2
#ফাতেমা_তুজ

গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ঝরা। কয়েক সেকেন্ড পূর্বে মরিয়ম বেশ মারধর করলেন মেয়ে টি কে।ঝরার চোখ থেকে পানি ঝরছে তো ঝরছেই। ঝাড়ু নিয়ে আসলেন মরিয়ম। বললেন
_আবার ঐ লাফাঙ্গার পোলার সাথে কথা বলছিস?

_লাফাঙ্গার নয় ওহ।

_মুখে মুখে তর্ক করা বন্ধ হবে না তোর। আজ তোরে দেখামু লাফাঙ্গার কারে বলে।

ঝাড়ু দিয়ে আঘাত করতে আসলেই পথিমধ্যে বাঁধা হয় ঝুম। মরিয়ম কে কোনো মতে সামলে নিয়ে বলল
_থাক না আম্মু। আমি বোঝাচ্ছি ওকে। তুমি যাও এখন।

_বোঝা, সময় আছে এখনো।

ঝাড়ু ফেলে গট গট পায়ে চলে গেলেন মরিয়ম।ঝরা চোখের পানি মুছে দাঁড়িয়ে রইলো। ঝুম কাছে এসে শ্বাস টেনে বলল
_শুধরে যাস ঝরা। আম্মু ঠিক ই বলেছে এখনো সময় আছে।

_আমি ওকে ভালোবাসি আপু।

_এগুলো ভালোবাসা নয় আবেগ। দুদিন বাদেই মোহ কেঁটে যাবে।আর ফোন টা নিয়ে গেলাম আমি।

_আপু।

_দেওয়া যাবে না আর।

ঝুম চলে গেল। ঝরা মেঝে তে বসে কাঁদতে লাগলো। কাল রাত থেকে অসহ্য লাগছিলো সব।তাই তো লুকিয়ে ফোন টা বের করে রনি কে কল করেছিলো। ছেলেটার খোঁজ নিয়ে পেছন ঘোরা মাত্র থাপ্পড় বসিয়ে দেন মরিয়ম।আর তাঁর ই পাশে ছিলো ঝুম। মূলত ঝুম ই মরিয়মের কাছে খবর দিয়েছে।

রাঙা হাত টা বুকে চেপে রাখলো ঝরা।মেহেদী খুব পছন্দ রনির।তাই তো নিয়ম করে হাতে মেহেদী পরে। আজ আবারো দিবে মেহেদী। চোখ বন্ধ করতেই প্রথম দিন টা ভেসে এলো।

প্রায় তিন মাস হলো রিলেশনের বয়স। রনি দেখা করতে চাইলে ও ঝরা তখন ঠিক সাহস পাচ্ছিলো না।তবে এভাবে ফোনে কথা বলে প্রিয়তমার দেখা না পেলে মনে শান্তি অনুভব হয় কি? রনির জোড়া জোড়ি তে ঝরা সিদ্ধান্ত নেয় দেখা করবে। হাজার খানেক আশংঙ্কা আর এক সাগর ভয় নিয়ে দেখা করে দুজনেই। আরশি তে নিজেকে বার বার খুঁটিয়ে দেখে নেয় ওহ। নার্ভাস ফিল হয় প্রচুর।তবে মন কে স্থির করে বেরিয়ে পরে।

একটা পার্কে বসেছিলো রনি। গ্রামের পরিবেশের সাথে মিলিয়ে করা পার্ক টা ভীষন সুন্দর। পারফেক্ট প্রেমিক প্রেমিকা যুগলের জন্য।

উল্টো হয়ে বসে ছিলো রনি।ধীর পায়ে এগিয়ে যায় ঝরা। বুক টা কেমন করছে। মনে হচ্ছে এই বুঝি প্রান পাখি বেড়িয়ে যাবে।হালকা স্বরে মেয়েটি বলল
_রনি।

একটি মারাত্মক কন্ঠস্বর কর্নপাত হতেই বিচলিত হয় রনির মন। পেছন ঘুরে তাকাতেই লক্ষ্য হয় নার্ভাস হয়ে যাওয়া প্রিয়তমা কে। চোখের চশমা টা কিছু টা হেলে নাকের কাছে এসে পরেছে। কপালে এক গাছি চুল বেরিয়ে আছে কেমন। প্রচন্ড হাসি পায় ওর। ফিক করে হেসে দেয় রনি। ঝরার নাকের পাটা লাল হয়ে ফুলে যায়।রাগে দুঃখে ধাক্কা মেরে দেয় রনি কে। বেঞ্চে পরে যায় রনি তবু ও হাসি বন্ধ হয় না। ঝরার অভিমান হয়। তবে কি রনি ওকে বিদ্রুপ করছে?

রনি কে ফেলে যখন দিগন্ত ছাড়িয়ে হাঁটা লাগায় ঝরা।তখনি ছুটে আসে রনি। ঝরা মুখ ফিরিয়ে নেয়।রনি কানে হাত দিয়ে বলে
_স্যরি ঝরা পাতা।

_সরে যাও বলছি।

_কি মেয়ে রে বাবা।এতো অভিমান করে কেউ?

_অসহ্যকর। বললাম তো সরো সামনে থেকে।

রনি বুঝতে পারো ঝরা পাতার অভিমান আকাশ চুম্বী।দুষ্টু বুদ্ধি জাগে ওর মনে।ঝরা কয়েক পা এগিয়েছে মাত্র ঠিক তখনি আহ বলে আর্তনাদ করে উঠে রনি।পেছন ফিরে ছুটে আসে ঝরা।রনির হাত ধরে বিচলিত কন্ঠে বলল
_কি হয়েছে। কোথায় ব্যথা পেলে?

_মনে।

_কি করো না যে তুমি।

কথা টা শেষ করেই থমকে যায় ঝরা।একটু আগে কি বললো রনি।মনে আঘাত লেগেছে। তাঁর মানে ছেলেটা ওকে বোকা বানালো। কয়েক টা থাপ্পড় বসিয়ে দেয় রনির গাঁয়ে। হো হো করে হাসতে থাকে দুজনেই। রনি লক্ষ্য করলো ঝরার হাত টা কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। পকেটে এক মুঠো চুরি এনেছিলো।সেই চুরি গুলোই পরিয়ে দেয় ছেলেটা। ঝরার ইচ্ছে হচ্ছিলো এই পৃথিবীর বুকে মিশে যেতে। রনি পর পর চুমু খায় হাতে। কেঁপে উঠে ঝরা।রনি মৃদু হেসে তখন বলেছিলো
_হাতে মেহেদী লাগাবা। অনেক সুন্দর লাগবে তাহলে।

ভাবনার মাঝে মেহেদী লেপ্টে যায় হাতে।ভ্রু টা কুঁচকে যায় ওর। বিরক্তি নিয়ে উঠে যায়। হাত ধোঁয়ার সময় লক্ষ্য হয় রনির নাম টা ঘেঁটে গেছে। বুক টা ছিঁড়ে যাচ্ছে ওর।তখনি ওয়াসরুমের দরজায় ঠক ঠক আওয়াজ হয়। ঝরা বলল
_ আসছি।

রাতের খাবার খাচ্ছিলো ঝরা। গলা দিয়ে ভাত নামছে না যেন।সারাক্ষন রনির চিন্তা আসে মাথায়। ঝুম এক লোকমা ভাত মুখে দিয়ে বলল
_আম্মু, আব্বু তাহলে ঐ সিদ্ধান্ত ই থাক।ওর জন্য ছেলে দেখো। আমার কথা ভাবতে হবে না।

_আচ্ছা।

ভ্রু বাঁকিয়ে প্রশ্ন করলো ঝরা।
_কার জন্য ছেলে দেখবে?

_তোর জন্য।

_কিই!

_হ্যাঁ। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি তোকে বিয়ে দিবো।

_আব্বু তোমরা কেন বুঝতে চাইছো না?

_এখানে বোঝা বুঝির কি আছে?সহজ কথা। তাছাড়া ঐ ছেলের কাছে কি দেখে তুলে দিবো তোকে?

মকবুল এর কটাক্ষ ভাষা শুনে সব ভাঙচুর করতে ইচ্ছে করছে ঝরার। কি পেয়েছি কি এরা? টাকার সাথে বিয়ে দিবে বুঝি!
.

একটি গিটার নিয়ে টুং টাং শব্দ করছে রনি। গিটারে সুর তুলতে পারে ভালোই।তবে আজ গিটারে সুর হচ্ছে না। শুধু কেমন শব্দ বের হচ্ছে। হাসি মুখ টা মলিন হয়ে গেল মুহূর্তেই। শুনেছিলো কষ্টের রাত্রী দীর্ঘ হয়। তবে ওর দিন রাত্রি সব ই দীর্ঘ হয়ে গেছে। পড়ন্ত বিকেল টা দেখে চলেছে কতো সময় জুড়ে।তবে এর কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না।আশ্চর্য! প্রকৃতি বুঝি থমকে গেলো?
_রনি, এই রনি।

হামিনার ডাকে গিটার রেখে উঠে দাঁড়ালো রনি। বারান্দা থেকে প্রকৃতি টা বেশ সুন্দর দেখায়। একটু স্বস্তির জন্য ই এখানে এসেছিলো। খাবার রেখে এগিয়ে এলেন হামিনা। ছেলেটার বিতৃষ্ণা মিশ্রিত মুখ টা দেখে হামিনার মাতৃ মন কেঁদে উঠলো। গরমে ঘেমে একাকার ছেলেটা। আঁচলে মুছে দিলেন জল। রনি শুধুই অধর টা একটু প্রসারিত করলো। হামিনা শুধালেন
_ঝরার সাথে দেখা করতে গিয়েছিলি দুদিন আগে?

_হুম। কয়েক মিনিটের দেখা হয়েছে।

রনির স্পষ্ট স্বীকারোক্তি শুনে হামিনার ভেতর টা মুচরে এলো।ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন
_এভাবে মন মড়া করে থাকতে নেই বাবা।আর রাতে যাওয়া ঠিক হয় নি।

_জানি।তবে দিনের বেলায় সুযোগ ছিলো না।

_তবু ও আর যাস নে বাবা।

_আচ্ছা।

খাবার টা হাতে তুলে দিলেন হামিনা।রনি মাথা ঝাঁকিয়ে বলল
_খেয়ে নিবো।

হামিনার কাছে স্বীকার করলে ও ভাতের দিকে চেয়ে গলা টা শুকিয়ে গেল। এতো শক্ত দানা গলা দিয়ে নামবে তো?

**
একদিন ঝরার কি হলো কে জানে।প্রচন্ড রাগ নিয়ে কথা বলছিলো রনির সাথে।প্রতি টা কথায় কথায় রাগ।তো রনি ঠান্ডা কন্ঠেই বলল
_কিছু হয়েছে তোমার?

_না।

_ সত্যিই?

_হ্যাঁ।

_কন্ঠ এমন লাগছে কেন?

_আজব! কন্ঠ কেমন লাগছে হু? বললাম তো সব ঠিক ঠাক। কতো বার বলা লাগবে আর?

তেজে কল টা কেঁটে দিলো ঝরা।আহাম্মক বনে গেল রনি। সাধারন কথায় এতো রাগ? কে যেন বলেছিলো মেয়ে মানুষের মন বোঝা বড় কঠিন। আসলেই সত্য বিষয় টা।

**

চিঠি গুলো পড়তে লাগলো রনি। সোশ্যাল মিডিয়ার প্রেম হলে ও দুজনের মাঝে বেশ অনেক গুলো চিঠি আদান প্রদান হয়েছে। কি সুন্দর লেখা মেয়েটার। যখন মনে হয় ঝরা ওর থেকে দূরে চলে যাচ্ছে ঠিক তখনি চিঠি গুলো পড়ে ওহ।
এতো ভালোবাসা থাকার পর ও বুঝি একটি স্বার্থকতা মিলবে না?

কান গরম হয়ে গেছে রনির।কান্না পেলে এমন টা হয়। ছেলেটা যথেষ্ট চেষ্টা করে ও কান্না থামাতে পারলো না। পরিশেষে ওয়াসরুমে গিয়ে কলের ট্যাপ ছেড়ে কাঁদতে লাগলো। ছেলে মানুষদের নাকি কাঁদতে নেই। তাই বলে আবেগ লুকিয়ে রাখবে কতোক্ষন?

বি : দ্র : ভুল ত্রুটি মাফ করবেন।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here