#অভিমানী_ঝরা_পাতা,part_3
#ফাতেমা_তুজ
মাঝ রাতে ফোন দিয়ে অবিরত ভাবে কেন কান্না করছে ঝরা তা বুঝতে পারছে না রনি। চোখে থাকা ক্লান্তি আর গভীর ঘুম টা কেঁটে গিয়ে চিন্তার রূপ ধারন করেছে বেশ কিছুক্ষণ। কপালে সরু দুটো ভাঁজ পরেছে ।কানে ফোন গুঁজে ভাবনায় তলিয়ে যাচ্ছে বারংবার। আবার কোন ঝড় এসে ঝরা পাতা কে নিয়ে যাবে ওর থেকে?
” এই ঝরা পাতা। কি হয়েছে তোমার? এতো রাতে ফোন কোথায় পেলে। কাঁদছো কেন তুমি? ”
ওপাশ থেকে শুধু কান্নার শব্দ শোনা যাচ্ছে। হিচকি তুলছে মেয়েটা। আলগোছে বুকে হাত বুলালো রনি।এতো টা অস্থির কেন মন?
” আমি মামা বাড়ি তে এসেছি। অর্থি আপুর ফোন থেকে কল করছি। ”
” আচ্ছা। তবে কাঁদছো কেন? ”
” আব্বু আমার বিয়ে ঠিক করে নিয়েছে। আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচবো না রনি। ”
” বিয়ে ঠিক করেছে মানে? আমি কিছু বুঝতে পারছি না। কি বলছো এসব। ”
” কাল রাতে আব্বু বলল আমাকে নিয়ে মামা বাড়ি যাবে।আমি স্বাভাবিক ভাবেই আসলাম।কিন্তু এখানে এসে দেখলাম ঘটা করে আয়োজন হচ্ছে।কেমন যেন লাগলো বিষয় টা।সন্ধ্যা তে পাত্র পক্ষ এসেছিলো ডেট ফাইনাল করতে। আমি বুঝতে পারছি না কি করবো। আমি মরে যাবো রনি। একদম ই মরে যাবো। ”
ছেলেটা কিছু বুঝতে পারছে না। মাথা টা কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগছে।তবে কি ঝরা পাতা ঝরে যাবে রনি নামক গাছ থেকে?
” ঝরা তাড়াতাড়ি কর। কেউ এসে পরলো কলহ রটে যাবে। ”
” আর একটু অর্থি আপু। ”
রনি কি বলবে ঠিক বুঝে উঠলো না। ঝরা দীর্ঘশ্বাস টেনে বলল
” আমাদের সমাপ্তি হতে চলেছে। ”
” ঝরা পাতা! ”
” ভাগ্য কে মেনে নিতেই হবে রনি। ”
কথা শেষ করেই কল কেঁটে দিলো ঝরা। দু চোখের কোন বেয়ে বিরতহীন সলিল নেমে যাচ্ছে। রুমে এসে মেয়ে টা কে জড়িয়ে ধরলো অর্থি। ঝরা এবার শব্দ করে কেঁদে উঠলো। অর্থি সান্ত্বনার কন্ঠে বলল
_কিছু হবে না। তুই ঐ ছেলের সাথে কথা বল। দেখবি সব ঠিক হয়ে যাবে।
.
নানান ছল ছাতুড়ি করে বের হলো ঝরা। উদ্দেশ্য ঐ ছেলের সাথে দেখা করা। রনি কে কল করে সব বুঝিয়ে দিয়েছে। কিছু ক্ষনের মাঝেই রনি এসে পরবে।তবে প্রচন্ড ভয় পাচ্ছে অর্থির। ভালোবাসা হারানোর যন্ত্রনা অনুভব করতে পারে মেয়েটা। তাই হয়তো ঝরা কে সঙ্গ দিচ্ছে। অদূরে নীল রঙের শার্ট পরিহিত একটি ছেলে কে দেখতে পেল অর্থি। ঝরার হাত টা খামচে ধরে বলল
_এসে গেছে।
_কিন্তু রনি তো এখনো আসে নি।
চিন্তাগ্রস্ত হয় ঝরা। রনির নাম্বারে কল করে তবে রনির খবর নেই। ফোন বেজে চলেছে তবে রিসিভ হচ্ছে না।প্রচন্ড টেনশনে মাথা গরম হয়ে যাচ্ছে ওর। সিয়াম এসে হাত বাড়িয়ে বলল
_হাই।
কোনো কথা বললো না ঝরা।অর্থি পরিস্থিতি সামলাতে দু একটা কথা বললো। ঝরা ফোন দিয়েই চলেছে। কিন্তু রনির কোনো নাম গন্ধ নেই। ঝরার অবস্থা দেখে সিয়ামের কেমন যেন সন্দেহ লাগছে। অর্থির দিকে তাকিয়ে বলল
_আপু ঝরার কোনো সমস্যা?
অর্থি কি বলবে বুঝে উঠলো না। চশমা ঠিক করে তাকালো ঝরা।প্রচন্ড রাগে ফট ফট করে বলল
_দেখুন আমি আপনাকে বিয়ে করতে পারবো না। আমি একজন কে ভালোবাসি। আপনি নিশ্চয়ই চাইবেন না বিয়ের পর আপনার স্ত্রী অন্য ছেলে কে ভালোবাসে যাক? তো প্লিজ এই বিয়ে টা ক্যানসেল করুন। আমি কৃতার্থ হবো।
সিয়াম ঠায় দাঁড়িয়ে। মেয়েটার খোলা চুল গুলো নড়ছে। অন্য দিক ফিরে আবারো কল করতে লাগলো ঝরা। অর্থি দীর্ঘশ্বাস ফেললো। বলল
_ভাইয়া আমি জানি না ওদের দুজনের ভবিষ্যত কি।তবে ভালোবাসার মানুষ দের আলাদা করে সংসার হয় না। সারা জীবন জ্বলতে হয়। আপনি ব্যাংক এর একজন বড় কর্মকর্তা। চতুর মানুষ ও বটে। আশা করি বুঝতে পারবেন।
ঝরা আর এক মুহূর্ত দাঁড়ালো না।রাগে ফোন টা চেপে রইলো। নিজের ফোন হলে নিশ্চয়ই এটা এতোক্ষনে রাস্তায় কয়েক টুকরো হয়ে পরে থাকতো অনাদরে।
অর্থি কিয়ৎ মুহূর্ত সিয়ামের সাথে কথা বলে হাঁটা লাগালো। কি নিষ্ঠুর এ পৃথিবী, নাকি নিষ্ঠুর এই দুনিয়ার মানুষ।
হাঁটু তে মুখ গুঁজে বসে ছিলো ঝরা। হন্তদন্ত হয়ে রুমে প্রবেশ করলো অর্থি। চটজলদি দরজা লক করে ফোন বাড়িয়ে বলল
_রনি কল করেছে।
এক পলক তাকালো ঝরা। নিরুত্তর বসে রইলো।অর্থি আবারো বলল
_কথা বল।
_কেন?
_আরে হেয়ালি করছিস কেন?
_এই তাঁর ভালোবাসা?
_বোন কথা টা শোন তারপর না হয় আলোচনা করিস কোন টা কতো টুকু।
তাচ্ছিল্য হাসলো ঝরা। নেহাত ই ছেলে টা কে ছাড়া নিশ্বাস ভারী হয়ে যায়। না হলে কখনোই ফোন টা নিতো না। ফোন টা কানে গুঁজে রইলো কয়েক মুহূর্ত। ওপাশ থেকে কয়েক ফালি দীর্ঘশ্বাস ফেলে রনি বলল
_স্যরি বউ। আসলে আমি
কথা শেষ করতে পারে নি রনি।তাঁর পূর্বেই দাঁত কিড়মিড় করে ঝরা বলল
_বউ! কে তোমার বউ? বিয়ে হয়েছে আমাদের। আর না হবে। একজন পাগলের মতো আর্তনাদ করবে আরেক জন কল ও রিসিভ করবে না। তা হলে সম্পর্ক টিকবে মনে হয় তোমার?
_ঝরা পাতা আমার কথা শোনো।
_কি বলবে তুমি? জানি না বিয়ে টা ভাঙবে কি না। তবে শুনে রাখো রনি তুমি যতো টা ভালোবাসা দেখাতে চাও তাঁর এক অংশ ও ভালোবাসা নেই তোমার মাঝে। ছিই
কল কেঁটে বিছানায় গাঁ এলিয়ে দিলো ঝরা। আরেক টা নির্ঘুম রাত্রী কাটাবে মেয়েটা। এতো বিতৃষ্ণা আর দহন কেন ভালোবাসায়! মানুষ কেন প্রেমে পরে। কেন ই বা মন কে আটকে রাখতে পারে না?
.
ছয় দিন পর বাসায় ফিরলো ঝরা। জানা নেই কি হয়েছে এই ছয় দিনে। বিয়ে টা হবে নাকি হবে না কিছুই জানে না। তবে ঝুমের স্থির নয়ন আর চোয়াল শক্ত হওয়া টা অনেক কিছুই বুঝিয়ে দিলো। তবু ও ঝরা কিছু বললো না। লাগেজ নিয়ে নিজের রুমে পদার্পণ হলো। ফ্রেস হয়ে আসতেই ঝুম বলল
_একটা সামান্য ছেলের জন্য সবাই কে অপমান করালি?
_কি বলছো বুঝলাম না।
_সিয়ামের সাথে দেখা করে কি বলেছিস তুই?
_যা বলার তাই বলেছি।
_পাগল হয়ে গেছিস তুই? এক টা লাফাঙ্গার ছেলের জন্য নিজের ব্রাইট ফিউচার কে তাচ্ছিল্য করছিস।
ঝুমের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে মোলায়েম ভাবে বেডে বসলো ঝরা। তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে বলল
_তোমাদের কাছে ব্রাইট ফিউচার মানে টাকা। আর টাকা দিয়ে জিনিস পত্র নয় বরং সুখ ও কিনে নেও। তবে আমি এমন টা নই।আর না এমন ধারণা আমার।
_বড্ড বেশি কথা বলছিস তাই না? প্রেমে অন্ধ হয়ে গেছিস। কি জানি কোন জাদু করেছে ঐ ছেলেটা।
_আপু এখন যাও আমি ঘুমাবো।
ঝরার শান্ত কন্ঠে যেন জ্বলন্ত আগুনের মতো জ্বলে উঠে ঝুম। তবে কোন ভাষা ব্যবহার করবে অনুভব হলো না। রাগে দুঃখে গজগজ করে বেরিয়ে যায়।
আকাশের পানে তাকিয়ে আছে রনি। বেডে পরে আছেন রব্বানির রুগ্ন দেহ। কিছু সময় অতিবাহিত হলেই খ্যাক খ্যাক করে কেশে উঠেন রব্বানি। রনি এগিয়ে এসে পানি দেয়।পিঠে হাত বুলিয়ে বলল
_ঠিক আছেন নানা?
_হ ভাই।
রব্বানি বেডে গাঁ এলিয়ে দেন। আজ সাত দিন ধরে হসপিটালে পরে আছেন তিনি।এই কয়েক দিনে এক মুহূর্তের জন্য চোখ বন্ধ করে নি রনি।হসপিটালে ঘুম হয় না ওর। তাছাড়া মুখে খাবার ও তুলতে পারে না।হতাশা এসে আঁকড়ে ধরে ওকে। শব্দ হীন পায়ে করিডোর দিয়ে এগিয়ে গেল ব্যলকনিতে।আকাশে চাঁদ নেই। মেঘের আস্তরনে লুকিয়ে আছে বোধহয়। অথবা অভিমান করে আছে। ঝরা পাতা না হয় ওর উপর অভিমান করেছে। তবে চাঁদ! চাঁদ কার উপর অভিমানে করেছে? চাঁদের ও বুঝি অভিমান করার মতো প্রিয় কেউ আছে!
বি : দ্র : ভুল ত্রুটি মাফ করবেন।
চলবে