#অভিমানী_ঝরা_পাতা,part_4
#ফাতেমা_তুজ
মানুষ কি করে এতো অভিমান করতে পারে তা জানা নেই রনির। ভারসিটির কাছে গিয়ে প্রায় ঘন্টা খানেক অপেক্ষা করে ছিলো। যখন ঝরা এলো তখন বুক টায় এক রাশ সমীরন এসে ধরা দিলো।তবে এর স্থায়িত্ব কাল ছিলো খুব ই স্বল্প। ছেলে টা কে উপেক্ষা করে চলে যায় ঝরা। ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে রনি। ঘন্টা দুয়েক অপেক্ষার পর যখন বের হলো তখন মেয়েটার সাথে কথা বলতে যেতেই তাচ্ছিল্য করে বলল ” কথা দিয়ে কথা রাখার ক্ষমতা নেই যার তাঁর সাথে আর যাই হোক ভালোবাসা হয় না। ”
কিছু টা কষ্ট পেলে ও এক্সপ্লেইন করার সুযোগ হয় নি ওর। লম্বা লম্বা কদম ফেলে চলে যায় ঝরা। পরিবেশ টা ভারী হয়ে গেছে কেমন। অগোছালো পায়ে হাঁটতে লাগলো রনি। অর্নাস তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ওহ। পড়াশোনায় মোটামুটি ভালোই। তবে চাকরির বাজারে টিকে থাকা বড্ড কষ্টকর। এই অলি তে গলি তে ঘুরে ও চাকরির সন্ধান মিলে নি। এক রাশ হতাশা নিয়ে নদীর পাড়ে এসে পা ডুবিয়ে দিলো।পাশ থেকে কচুরি পানা ভেসে যাচ্ছে। কি সুন্দর মন কাড়া রঙ। ভেতর টা ভালো লাগায় ছেয়ে গেল।ঠোঁটের কোন টা সামান্য প্রসারিত করে বলল
” সব সুন্দরের মাঝে ও আমি এক অসহ্যকর প্রানী। যাঁর ক্ষমতা নেই প্রেমিকার হাত ধরার। চাকরি হবে একদিন। আমি ও হয়তো অনেক টাকা উপার্জন করবো। কিন্তু তখন আমি আমার অভিমানী ঝরা পাতা কে হারিয়ে ফেলবো।কি মর্মান্তিক অনুভূতি! ”
হাজার খানেক অভিমানের মাঝে ও অন্তরে থাকা অনুভূতি গুলো স্বচ্ছ আর তড়তাজা। চোখ বন্ধ করলেই একে অপরের মুখ খানি দেখতে পায়। এত জীবন্ত সে দৃশ্য মনে হয় একটু ছুঁইয়ে দিতে। কিন্তু দূরত্বে থাকা সম্পর্ক গুলো অপেক্ষায় বৃদ্ধ হয়। পূর্ণতা মিলার সম্ভাবনা খুব ই কম। বহু দিন পর পুরনো রেডিও টা অন করলো ঝরা। কিছু টা সমস্যা হচ্ছে যাঁর দরুন গ্যার গ্যার শব্দ হচ্ছে। তবু ও সেটা চালিয়ে চোখ দুটো বন্ধ করলো। গানের সুর টা কেমন আত্মা কাঁপানোর মতোই। তবে জীবন্ত এক গান।
” চাকরিটা আমি পেয়ে গেছি বেলা শুনছো ”
” এখন আর কেউ আটকাতে পারবে না।”
” সমন্ধ টা এই বার তুমি ভেস্তে দিতে পারো ”
” মা কে বলে দাও বিয়ে তুমি করছো না। ”
” চাকরিটা আমি পেয়ে গেছি বেলা শুনছো ”
” এখন আর কেউ আটকাতে পারবে না। ”
” সমন্ধ টা এই বার তুমি ভেস্তে দিতে পারো ”
” মা কে বলে দাও বিয়ে তুমি করছো না। ”
” চাকরিটা আমি পেয়ে গেছি বেলা সত্যি ”
” আর মাত্র কয়েক টা মাস ব্যাস।”
” স্টার্টিংয়েই ওরা এগারো শো দিবে, তিন মাস পরে কনফার্ম। ”
” চুপ করে কেন বেলা শুনছো না ”
” এটা কি 2441139 ”
” বেলা বোস তুমি পারছো কি শুনতে? ”
” দশ বারো টা রং নাম্বার পেরিয়ে তোমাকে পেয়েছি ”
” দেবো না আর কিছু তেই হারাতে। ”
রেডিও বন্ধ করে দিলো ঝরা। চোখ থেকে টপ টপ করে পানি ঝরছে। বিছানায় গিয়ে ধপ করে শুয়ে পরলো। এপাশ ওপাশ করছে বার বার। এতো কষ্ট হচ্ছে কেন ওর? নিজেকে কেন বেলা বোস মনে হচ্ছে। অন্তকর্নে কেন জ্বালা অনুভব হচ্ছে। রনির সাথে কি বিচ্ছেদ ঘটে যাবে ওর। কি করে থাকবে ওহ। মরে যাবে! একদম ই মরে যাবে।
.
বহু দিন পর ঝরা কে অনলাইন দেখে আঁতকে উঠলো রনি। চোখ দুটো কেমন ঝলঝল করছে। ডান হাতের তর্জনীতে চোখ মুছে সোজা ম্যাসেজ পাঠালো। কয়েক সেকেন্ড পর ঝরার উত্তর এলো।
” কেমন আছো? ”
” ভালো তুমি? ”
” হুম ভালো। ”
” ফোন কোথায় পেলে? ”
” ফোন দিয়ে দিছে। ”
” ওহ ”
কয়েক মুহূর্ত নীরবতা চললো। তারপর ঝরার ম্যাসেজ এলো
” রনি এখন থেকে আমরা কথা বলবো না আর। ”
” মানে? ”
” দেখো আমাদের সম্পর্ক টা কেউ মেনে নিবে না। তাই সরে আসাই ভালো। শেষে আমাদের ভালোবাসা পরাস্ত হবেই। তাঁর থেকে ভালো আগে থেকেই সরে আসা। ”
” আমার সাথে মজা করছো তুমি? ”
” মজা নয় সত্যি। যখন খুব বেশি কষ্ট হবে। থাকতে পারবো না একদম ই ঠিক তখনি ম্যাসেজ দিবো। এভাবেই একদিন কষ্ট কমে যাবে। ”
ঝরা অফলাইন। রনির দু চোখে হতাশা এসে ভর করেছে। শুকনো দুটো ঢোক গিলে জানালা দিয়ে দৃষ্টি নামিয়ে দিলো। কিছু তেই চোখ দুটো থামছে না। এতো আবেগ কেন ওর মাঝে? সিনেমার মতো পাগল প্রেমিক কেন হতে হবে ওকে! কেন পারছে না প্রেম ভালোবাসা সাইটে ফেলে এগিয়ে যেতে।
মেঘলা আকাশ। তাঁর মাঝেই উঁকি ঝুঁকি দিয়ে কোনো মতে টিকে আছে চাঁদ। এক ফালি দীপ্তি এসে চাঁদ টা কে রাঙিয়ে গেছে কেমন। সেই আলো তেই পৃথিবীর ঘন কালো আঁধার কিছু টা ম্লান হয়েছে বটে। তবে চাঁদের কোনো নিজস্ব আলো নেই। অন্য কিছুর উপর ভর করে আছে। তবু ও সকলে কতো ভালোবাসে চাঁদ কে। আর ঝরা, ঝরা তো অবহেলায় অনাদরে পরে থাকা ঝরা পাতার মতোই। কেউ ভালোবাসে না ওকে। কেউ না! চাঁদ কে দেখে প্রচন্ড হিংসে হচ্ছে ওর। চাঁদের কলঙ্ক থাকা সত্যে ও চাঁদ স্নিগ্ধ। তাহলে ওহ কেন অসহায়?
সিয়াম কল করেছে। ফোন টা ভেঙে ফেলতে ইচ্ছে হলে ও উপায় নেই। কানে গুঁজে দিয়ে বলল
_হ্যালো।
_কিছু টা সময় হবে ঝরা?
_বলুন।
_কি করছো?
_কিছু ই না।
_খেয়েছো?
_হুম।
_ভারসিটি গিয়েছিলে আজ?
_না।
_ ভারসিটি কবে?
_জানি না।
নিরুত্তর সিয়াম। কোনো যন্ত্র মানবীর সাথে কথা বলে মন বুঝি তৃপ্ত হয়। দুটো দীর্ঘশ্বাস ফেলে কল কেঁটে দিলো। ঝরা বিছানায় ফেলে দিলো যন্ত্রটি। কেউ কল করে মরে গেলে ও আর কল রিসিভ করবে না ওহ।
নির্ঘুম রাত্রী যাপনে অভ্যস্ত ঝরা। সকাল সকাল দরজার ঠক ঠক আওয়াজে মুখ টা বাঁকিয়ে নিলো মেয়েটি। স্থির কন্ঠে ওপাশ থেকে ঝুম বলল
_দরজা খোল ঝরা।
_একটু পরে।
_কেন?
_এমনি।
_এখনি খোল বোন।
কথা বলতে ইচ্ছে করছে না ওর। তাই স্থির পায়ে দরজা খুলে দিলো। ঝুম বলল
_এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন?
_তো, কেমন করে তাকাতে বলছিস আমায়?
_শোন একটু পর সিয়াম আসবে। ওর সাথে গিয়ে শপিং কমপ্লিট করে আসবি।
_এমন টা কেন করলে আপু?
_কেমন করলাম আবার?
_দুটো ভালোবাসা কে আলাদা করে কি লাভ তোমার।
_দেখ ঝরা আমি তোর বড় বোন। নিশ্চয়ই তোর কোনো ক্ষতি চাই না?
তাচ্ছিল্য হাসলো ঝরা। চোখের নিচে পানি শুকিয়ে আছে। টেবিল থেকে চিরুনি নিয়ে চুল বাঁধতে লাগলো। হাত খোঁপা করে এসে বলল
_তুমি ভুল মানুষ কে ভালোবেসে ছিলে আপু। সে তোমাকে ধোঁকা দিয়েছে। সেই কারনে আমাদের আলাদা করে দিচ্ছো?
_ঝরা!
প্রচন্ড জোড়ে কথা টা বললো ঝুম। চোখ দুটো লাল হয়ে আছে। সে দিকে তোয়াক্কা না করে এগিয়ে গেল মেয়েটি। প্রতারণা হয়ে খাঁটি ভালোবাসা কে আলাদা করার জন্য উঠে পরে লাগে যে তাঁর মুখ দর্শন করার ইচ্ছে নেই ওর। এই দুনিয়ার কিছু স্বস্তার প্রেমিক প্রেমিকার জন্য খাঁটি ভালোবাসা গুলো বিষিয়ে যাচ্ছে। অদ্ভুত নিয়ম তাই না?
সিয়ামের সাথে শপিং এ এসেছে ঝরা। তবে ভেতর থেকে কোনো আনন্দ উল্লাস নেই। থাকবে বা কি করে? পাশে যে প্রিয় মানুষ টি নেই।
ঝরা কে হাসানোর চেষ্টায় মেতে আছে সিয়াম। তবে কোনো ভাবেই কোনো ফল পাচ্ছে না। হালকা কিছু শপিং করে সিয়াম বলল
_ফুড কার্ড এ যাবা নাকি আইসক্রিম পার্লার?
_আইসক্রিম পার্লার।
_আচ্ছা আসো।
সিয়ামের পিছু পিছু হাঁটতে লাগলো ঝরা। কোনো কিছুই ভালো লাগছে না। তবে নিরুপায় ওহ। এক পা দু পা করে এগিয়ে গেল মেয়েটি। বার বার চশমা টা নিচে নেমে আসছে। যার ফলে বিরক্ত ওহ। সেটা লক্ষ্য হতেই সিয়াম চশমা টা ঠিক করে দিলো। প্রচন্ড বাজে অনুভূতি এসে ধরা দিলো ওকে। তবু ও ভদ্রতার খাতিরে মলিন হাসলো মেয়েটি। তবে সব থেকে খারাপ লাগলো তখন যখন সিয়াম ওর হাত ধরে নিয়ে যেতে লাগলো। ইচ্ছে করছিলো সিয়ামের হাত টা ভেঙে দিতে। তবে সে সাহস বা পরিস্থিতি কোনো টাই নেই ওর।
আইসক্রিম পার্লারে এসে আইসক্রিম অর্ডার করলো সিয়াম। ওয়েটার আইসক্রিম দিয়ে যাওয়ার পর ও আইসক্রিমের দিকে তাকালো না ঝরা। ওর মন জ্ঞান সব অন্য কোথাও। চোখের সামনে হাত দিয়ে তুরি বাজিয়ে সিয়াম বলল
_এই যে কানি খাচ্ছো না কেন?
কানি কথা টা শোনা মাত্র অন্তকর্নে ঝটকা লাগলো। না চাইতে ও ঠোঁট দুটো প্রসারিত হয়ে গেল। কিছু স্মৃতি মনে পরে যাওয়াতে খিল খিল করে হাসতে লাগলো ঝরা। সাথে যোগ হলো সিয়াম ও। কাঁচের দেয়ালের বাইরে থেকে সেটা এক দৃষ্টি তে তাকিয়ে দেখলো রনি। হঠাৎ ঝরার সাথে চোখাচোখি হতেই কর্পূর এর ন্যায় হাসি টা মিলিয়ে গেল। চোখ থেকে এক ফোঁটা পানিয়ে পরে গেল মেয়েটির। তবে সেটা দেখতে পেল না রনি। কারন তাঁর পূর্বেই হাঁটা লাগিয়েছে ওহ। ভালোবাসা গুলো এমন হয় কেন? ভালোবাসার আরেক নাম বুঝি যন্ত্রনা!
চলবে