অভিমানী_ভালোবাসা
পর্বঃ ১০ & অন্তিম_পর্ব
লেখিকাঃ Hiya_Chowdhury
-কি হলো কথা বলছো না কেন জুহি? আমি তোমাকে কিছু জিঙ্গেস করছি? কি এটা?
-আ… আসলে….
-তোতলাচ্ছো কেন? যা বলার সোজাসুজি ভাবে বলো।
-আসলে…..
-জুহি আসলে আসলে না করে সোজা ভাবে বলো কে এরা? তোমার কথায় এরা আমাদের কোম্পানির লস করে যাচ্ছে?
-নাআআআ কি বলছেন আপনি!
-তাহলে কার কথায় করছে? আর জুহি তুমি সব টা জেনে ও আমাকে জানালে না যে আমাদের কোম্পানিতে এতো বড় বিপদ আসছে? কেন জুহি কেন?
-বলছি আমি সব টাই বলছি। কিন্তুু আমি যা বলবো আপনি বিশ্বাস করবেন কিনা সেই জন্যই আমি বলি নি আগে! আর তখন আমার ও জানা ছিলো না যে এসবের পিছনে আসল মানুষটি কে!
-বিশ্বাস অবিশ্বাসের প্রশ্ন কেন তুলছো জুহি? তুমি যা জানো সব টা বলো। না হয় পরে আমাদের কোম্পানির আরো ক্ষতি হতে পারে!
-আসলে এসবের পিছনে শুভ্র ভাইয়া রয়েছেন!
-হোয়াট! আর ইউ ম্যাড জুহি? তুমি জানো তুমি কি বলছো?
-হ্যাঁ জানি! আর আমি এই জন্যই বলছিলাম আপনি বিশ্বাস করবেন কিনা!
-শুভ্র এসব! শুভ্র এসব কেন করতে যাবে? জুহি তুমি ঠিক করে বলো!
-আমি ঠিক করেই বলছি!
তারপর জুহি রোদ কে গতকালের সেই রেকর্ড আর ফটো গুলো ও দেখায়। যেখানে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে এটা শুভ্র ই। রোদ ধপাস করে বেডে বসে পড়ে। তার জেনো বিশ্বাস ই হচ্ছে না। শুভ্র এসব করছে…!
যাকে নিজের আপন ভাই ভেবে আসছে সে কিভাবে পারলো এতো বড় শত্রুতা করতে! তাদের কোম্পানি তো শুভ্রদের ও! সবার সামনে এতো ভালো হয়ে শুভ্র এটা কিভাবে করতে পারলো! রোদের চোখ লাল হয়ে আছে রাগে!
রোদের রুমের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় ওদের সব কথা রিমি ও শুনে নেয়। রোদ রেগে নিচে চলে যায়।
-ছিঃ ভাবী শুভ্র ভাইয়া কিনা শেষে এটা করলো! ভাবতেই ঘৃণা হচ্ছে!
জুহি কিছু বললো না। রোদের পিছন পিছন নিচে গেলো। রোদ জোড়ে জোড়ে শুভ্র কে ডাকার ফলে কি হয়েছে দেখার জন্য সবাই ড্রয়িংরুমে চলে আসে। সবার বুঝতে বাকি রইল না রোদ কোনো কারণে খুব রেগে আছে!
-কি হয়েছে রোদ তোর?
-নো রেসপন্স
-কিরে রোদ বলবি তো কি হয়েছে তোর?
রোদ কে সবাই জিঙ্গেস করছে কি হয়েছে! কিন্তুু রোদ কারো কথায় উওর দিচ্ছে না। জুহি আর রিমি নিচে আসে।
-ভাইয়ের কি হয়েছে জানতে চাইছো না তবে শোনো…..
অতঃপর রিমি সবাইকে বলে কি হয়েছে। শুভ্রর বাবা খুব রেগে গেছে। ছেলের এসব বাজে কাজের কথা জানতে পেরে। উনি ততক্ষনাৎ শুভ্র ফোন দিয়ে বলেন তাড়াতাড়ি বাসায় আসতে। শুভ্র কে কিছু বলতে না দিয়েই ফোন কেটে দেন।
সবাই ভাবতেই পারে নি শুভ্র এমন কিছু করবে! শুভ্রর আম্মু ছেলের কু-কর্মের কথা শুনে লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলেছেন।
শুভ্র বাসায় এসে দেখে সবাই ড্রয়িংরুমে বসা….
-কি ব্যাপার তোমরা সবাই এখানে? কিছু কি হয়েছে?
শুভ্রর আব্বু এসে সোজা থাপ্পড় বসিয়ে দেয় শুভ্রর গাকে। শুভ্র হয়তো এটা আশা করে নি। গালে হাত দিয়ে ওর আব্বুর দিকে প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে,,,,
-এখন বলছিস কি হয়েছে ছিহ…. তুই কিনা শেষে এতো নিচে নেমে গেলি!
-মমমমানে কককি কি বলছো আব্বু তুমি?
-তুই আমাকে আব্বু ডাকবি না। তোর মতো ছেলের আমার দরকার নাই।
শুভ্রর সামনে সবকিছু বলে ঝিমি।
-ছিহ ভাইয়া তুই এটা করতে পারলি!
শুভ্র মাথা নিচু করে আছে। শুভ্রর বাবা বলে উঠেন!
-আমি জানতাম তোর লক্ষ্য খারাপ। এই জন্যই বলিনি এই চৌধুরী কোম্পানি আমার নামে ও আছে। ভাইয়া আর আমি দুইজনের ই সমান ভাগ এই কোম্পানির। আমি জানতাম তোর খারাপ উদ্দেশ্য আছেই। সন্দেহ ছিলো আমার কিন্তুু সেটা যে সত্যি হয়ে যাবে আমি ভাবি নি। শুভ্রর আম্মু চলো এই কুলাঙ্গার ছেলের দরকার নেই আমাদের।
শুভ্র মাথা নিচু করেই দাঁড়িয়ে আছে। রোদ একবার শুভ্রর মুখের দিকে চাওয়ার ও প্রয়োজন বোধ করলো না। অফিস থেকে জরুরি ফোন আসায়। রোদ সোজা অফিসে চলে যায়।
একে একে সবাই চলে যায়। বাকি আছে শান্ত। শুভ্রর পাশে শান্ত এসে দাঁড়ায়।
-ভাইয়া তুমি এটা না করলে ও পারতে। বড় আম্মু রা আমাদের পর ভাবেন না। রে। রোদ ভাইয়া তো তোমাকে নিজের ভাই মনে করতো। সেই উনার সাথেই বিশ্বাসঘাতকতা করলে। কিছু বলার নাই তোমাকে ভাইয়া….
শান্ত ও চলে যায়। শুভ্র কি করবে ভেবে পাচ্ছে না। নিজের করা কু কাজের জন্য লজ্জায় পড়ে গেছে। বড্ড অনুতপ্ত বোধ করছে শুভ্র। রোদের বিশ্বাস নষ্ট করা তার উচিৎ হয় নি। বুঝতে পারলো সে।
রোদ তাড়াতাড়ি অফিসে চলে যায়। ম্যানেজার সাহেব বললো কেউ তার জন্য অপেক্ষা করছে কিন্তুু কে সেটা তো বললো না। রোদ অফিসে ঢুকে অবাক।
-আরে জিসান তুই! (অবাক হয়ে)
-তুইইই ই রোদ চৌধুরী! ও মাই গড।
রোদ আর জিসান ছোট বেলার বন্ধু। কোনো এক কারণে জিসান দেশের বাইরে চলে গিয়েছিল। আর আজকে অনেক দিন পর দেখা। জিসান এটা ভাবতেই পারে নি যে রোদ ই তার ছোট বেলার বন্ধু। ভেবেছিলো হয়তো অন্য কেউ। মুহুর্তের মধ্যে জুহি কে নিয়ে সব অনুভূতি কবর দিয়ে দেয় জিসান। সামান্য ভালোবাসার থেকে বন্ধুত্ব অনেক বেশি।
রোদ আর জিসান দুইজন দুইজন কে জড়িয়ে ধরে। আজকে প্রায় অনেক বছর পর দেখা। খুব খুশি দুইজনে।
-আমি তো ভেবেছিলাম জিসান তুই আর কখনো ফিরে আসবি না! আর কখনো তোর দেখা পাবো না।
-আমি ও কি ভেবেছিলাম যে তুই রোদ চৌধুরী! কি ভাগ্য দেখ দুইজনের ই দেখা হয়ে গেলো।
-আচ্ছা কি খাবি বল। চা না কফি!
-আরে রাখ তোর খাওয়া। চা কফির থেকে তোর সাথে কথা বলা টা আগে।
-চুপ হারামি। কতো বছর পর দেখা তাও আবার কিছু না খেয়ে চলে যাবি? তা কি করে হয়।
রোদ ২ কাপ কফি নিয়ে আসতে বলে।
-তো জিসান তুই হঠাৎ এখানে কি মনে করে?
-দেশের টপ বিজনেস ম্যান কে দেখার শখ কার না থাকে বল?(মিথ্যা বললো)
-হাহাহা। চাপা কম মারিস। বিয়ে টিয়ে করেছিস তো নাকি? তোর বাচ্চা রা কেমন আছে?
জিসান রোদের কথা শুনে বড় বড় চোখ করে ওর দিকে তাকায়!
-কিরে ভাই এখানে কেন তাকিয়ে আছিস?
-এখনো বিয়েই করলাম না আর তুই জিঙ্গেস করছিস বাচ্চার খবর! তুই বিয়ে করে নিয়েছিস বাচ্চা ও আছে তাই আমাকে ও বললি! তাই না?
-আরে না। মাএ তো বিয়ে করলাম!
-সে কি রে হারামী তুই আমায় ইনভাইট ও করলি না!
-আমি কি জানতাম যে তুই এই দেশে আছিস!
-হাহাহা সেটাও ঠিক!
প্রায় অনেকক্ষণ দুই বন্ধু আড্ডা দেয়। কিছু মুহুর্ত আনন্দে কেটে যায়।তারপর জিসান চলে যায়। সব কিছুর ভিড়ে রোদ ভুলেনি শুভ্রর বিষয় টা। এখনো রেগে আছে রোদ।
বাসায় যেতে ও তার ইচ্ছা করছে না। কারণ শুভ্রর মুখ ও দেখার ইচ্ছা নাই। অফিসেই পুরো দিন কেটে যায়। রোদ সন্ধ্যায় বাসায় ফিরে। ফ্রেশ হয়ে বেলকনিতে বসে আছে রোদ।
-এতো ফোন দিলাম তুললেন না কেন?
-খেয়াল করিনি।
-রেগে আছেন?
-নাহ।
-রেগে আর কি হবে। যা হয়ে গেছে তা নিয়ে আর রেগে থাকলে কি হবে?
-ও কিভাবে পারলো জুঝি এটা করতে। কতো বিশ্বাস করতাম ওকে। কিন্তুু সেই শুভ্র।
-প্লিজ মন খারাপ করে থাকবেন না।
রোদ কিছু না বলে নিজের রুম থেকে ছাঁদে চলে যায়। একদমি ভালো লাগছে না তার। শুভ্র ও রোদের পিছন পিছন ছাঁদে আসে।কারো হাটার শব্দ পেয়ে পিছনে তাকিয়ে রোদ দেখতে পায় শুভ্র এসেছে।
-তুই এখানে কেন এসেছিস।
শুভ্র কিছু না বলে রোদের পা ধরে ক্ষমা চাইতে যাবে রোদ দূরে সরে যায়।
-সরি রে রোদ। আমার ভুল হয়ে গেছে। আমি অন্যায় করে ফেলেছি প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দে। প্লিজ। মাফ করে দেন আমাকে।
শুভ্র মাথা নত করে রোদের কাছে ক্ষমা চায়। শুভ্র এতো অসহায় ভাবে ক্ষমা চাইছে দেখে রোদ নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারলো না। শুভ্র কে জড়িয়ে ধরে। শুভ্র ও রোদ কে।
সব রাগ জেনো পানিতে পরিনত হতে গেছে।শুভ্র তার কাজের জন্য অনুতপ বোধ করছে দেখে রোদ ক্ষমা করে দেয় শুভ্র কে।
-আমি নিজের ভুল বুঝতে পেরেছি রে রোদ। আমি আসলেই খুব বাজে কাজ করছিলাম। লোভ জন্ম নিয়েছিলো আমার মধ্যে তাই লোভের বসে আমি ভুল করে ফেলেছি প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দে।
শুভ্র আর রোদ নিচে যায়। শুভ্র সবার থেকে ক্ষমা চেয়ে নেয়। রোদ আর শুভ্র দুইজনেই মিলে গেছে সেই আগের মতো এটা দেখে জুহি ও খুশি হয়। তার চেয়ে বেশি খুশি হয় এইজন্যই যে শুভ্র নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে।
ডিনার শেষে রোদ রুমে এসে জুহির জন্য অপেক্ষা করছে। কিন্তুু জুহি তো আসছেই না। প্রায় অনেকক্ষণ অপেক্ষা করার পর জুহি আসে।
-ম্যাম আপনি আসছে তাহলে। আপনার কি খেয়াল নেই যে কেউ আপনার জন্য ওয়েট করছে?
-সরি স্যার। আসলে একটু কাজ ছিলো তো।
-হুম হয়েছে। চলো।
-কোথায়?
রোদ জুহির চোখে হাত দিয়ে ধরে ওকে বেলকনিতে নিয়ে যায়। বেলকনিটা রোদ আগেই সাজিয়ে রেখেছে। খুব সুন্দর করে সাজিয়েছে সে। রোদ জুহি কে বেলকনিতে নিয়ে এসে জুহির চোখ ছেড়ে দেয়।
জুহি তো তার সামনে এসব দেখে চোখ ছানাবড়া। অবাক হয়ে সে রোদের দিকে তাকিয়ে আছে।
-কখন করলেন এসব?
-তুমি যখন নিচে ছিলে তখন। হুশ এখন কোনো কথা না। এখন আমরা দুইজন জোৎস্না বিলাস করবো।
রোদ জুহি কে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে জুহির ঘাড়ে একটা ছোট করে কিস করে। জুহি কেঁপে উঠে। চোখ বন্ধ করে আছে।
-জুহি তুমি জানো আমার না খুব শখ ছিলো কোনো এক রাতে তুমি আর আমি জোৎস্না বিলাস করবো। আর আজকে সেই শখ টা পূরন হতে চলছে। আই লাভ ইউ জুহি। আই লাভ ইউ সো মাচ্
-আই লাভ ইউ টু….
-সারাজীবন আমার কাছে-পাশে থাকবে তো?
-হুম…
রোদ কথা গুলো চুপিচুপি জুহির কানে কানে বললো। জুহির অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে। রোদের প্রত্যেক টা কথায় তার হৃদয় স্পর্শ করছে। স্পন্দন বেড়ে যাচ্ছে ক্রমশ। রোদের ও সেইম অবস্থা।
আজ তারা দুজনই দুইজনের কাছে পাশে আছে। আর সারাজীবন একসাথে একে অপরের সঙ্গী হয়ে কাছে পাশে থাকবে ও।
তাদের দুটি মন তো এক হয়েছিলো অনেক আগে। আজ দুটি আত্মা মিশে একাকার হয়ে যাবে। আজ আবার নতুন করে পূর্ণতা পাবে তাদের ভালোবাসা। তারা ডুব দিবে ভালোবাসার গহীন অরণ্যে। এভাবেই বেঁচে থাকুক ভালোবাসা গুলো।
(ওরা ওদের কাজ করুক। এবার আপনারা বিদায় হোন। ওদের মাঝখানে কাবাবে হাড্ডি হওয়ার দরকার কি বলুন!)
——-The End——