অভিমানী_ভালোবাসা পর্ব-০৮

0
2246

অভিমানী_ভালোবাসা
পর্ব-০৮
লেখিকাঃ Hiya_Chowdhury

সকাল টা শুভ্র কে দিয়েই হাসি তামাশায় শুরু করা হয়। কাব্য আর রিমি শুভ্র রোদের কথার সাথে তাল মিলিয়ে শুভ্র কে আরো উষ্কে দিচ্ছে। সবাই হাসতে হাসতে শেষ।

সকাল ১১ টার দিকে রোদের ফ্রেন্ডরা আসে। সবাই মিলে আড্ডায় মেতে উঠেছে। কলেজ লাইফের ফ্রেন্ড ওরা। সবার সাথে আড্ডা দিতে দিতে পুরো দিন কেটে রাত হয়ে যায়।

সবাই মিলে ডিনার শেষ করে নেয়। অতঃপর তাদের যাওয়ার সময় হয়ে এসেছে।

-চলি রে দোস্ত। ভাবী আমাদের ফ্রেন্ড টা কে ভালো মতো টাইট দিয়ে দিবেন।

সবাই খিলখিল করে হেসে উঠে। জুহি ও হাসছে!

-সালা হারামীর দল তোরা আমার বন্ধু হয়ে শত্রুর মতো কথা বলছিস।

-এখন আর আমরা তোর দলে নাই। এখন আমরা সবাই ভাবীর দলে কি বলিস তোরা?

-হ্যাঁ ঠিক বলেছিস।

-দেখিস তোদের একটার ও বিয়ে হবে না।

-বিয়ে না হলে জুহি ভাবী কেই তুলে নিয়ে যাবো।(চোখ টিপ মেরে)

-এই তোরা আমার বউয়ের দিকে একদম চোখ দিবি না বলে দিচ্ছি হু।

-বউ পাগলা।

-বিয়ে হলে তারপর আমার দুঃখ বুঝবি এর আগে না।

-এই রে হারামী তুই ই তো অভিশাপ দিলি বিয়ে হবে না। তাহলে আর তোর দুঃখ আর বুঝা হলো না। হাহাহা…..

-হাহা…..

সবাই কথা বলে বিদায় নিয়ে চলে যায়। ভালোই কেটেছে পুরো টা দিন। সবাই মিলে আড্ডা দেওয়ার ফলে।

জুহির ওর আব্বু আম্মুর সাথে কথা বলতে চলে গেছে। প্রায় অনেকক্ষণ হলো এখনো জুহি আসছে না। রোদ অপেক্ষা করছে জুহির জন্য। কিন্তুু জুহির তো কোনো পাওা ই নেই। রোদ রুম থেকে বেরিয়ে জুহির কাছে যায়।

রোদ দেখতে পায় জুহি কান্না করছে। কারণ সকালে ওর আব্বু আম্মু চলে যাবে। জুহির কান্না দেখে চিনচিন ব্যাথা অনুভব করলো রোদ।রোদ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়লো।

-কি হয়েছে জুহি কান্না করছো কেন?

জুহি কোনো রেসপন্স করছে না। সে কান্না করেই যাচ্ছে। তাই জুহির আব্বু বলে উঠলো।

-আমরা কাল চলে যাবো সেই জন্য জুহি কান্না করছে। দেখো না রোদ আমরা তো আবার আসবো নাকি!

-আরে জুহি এই জন্য কান্না করা লাগে। আব্বু আম্মু তো আবার আসবে এই দেখো একদম কান্না করবে না।

রোদ জুহি কে শান্তনা দিচ্ছে দেখে জুহির আব্বু আম্মু খুব খুশি হয়। কারণ ওরা দুইজন দুইজনের কে ভালোবেসে সুখি হতে পারবে। ভালোবাসলেই তো সুখ আসে। আর দুইজন দুইজনের সুখে দুঃখে পাশে থাকবে এটাই তো ভালোবাসা।

রোদ জুহি কে কোনো ভাবে শান্তনা দিয়ে তার আব্বু আম্মুর রুম থেকে নিজের রুমে নিয়ে চলে আসে। জুহি রোদ কে জড়িয়ে ধরে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না করা শুরু কে।

-এই পাগলী কেউ এভাবে কান্না করে?

– (নো রেসপন্স)

-দেখো জুহি তুমি যদি এভাবে কান্না করতেই থাকো তবে আমি ই চলে যাবো এখান থেকে।

জুহি তবুও কান্না করেই চলছে রোদ চলে যেতে নেয় জুহি রোদের হাত ধরে ফেলে।

-কি হলো?

-যাবেন না!

-কেন তুমি তো কান্না করছো! করো কান্নাই করো আমি চলে গেলে কার কি?(অভিমানী সুরে)

-আর কান্না করবো না।

-তাহলে হাসো। স্মাইল প্লিজ….

জুহি কিছু বললো না। মুখ ফুলিয়ে আছে।

-তুমি যখন আমার কথা শুনবে না হাসবে না! তাহলে আমি চললাম।

-উহু….

জুহি মুচকি হাসে।

-এই তো লক্ষী বউ। একদম কান্না করবা না। বলে দিলাম।

-হু….

রোদ জুহি কে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে আছে। আর জুহি ও রোদের বুকের সাথে লেপ্টে আছে। জুহি আর রোদ দুইজনে অনেক কিছু ভেবে একটা সময় দুইজনেই ঘুমিয়ে পড়ে।

পরের দিন……….

আজ জুহির আগে রোদের ঘুম ভেঙ্গে গেছে। রোদ আলতো করে জুহির কপালে নিজের ঠোঁট ছুঁয়ে দিয়ে। জুহি কে বালিশে শুইয়ে দেয়। তারপর সে ফ্রেশ হতে চলে যায়।

ফ্রেশ হয়ে অফিসের জন্য তৈরি হয়ে নেয় রোদ। তারপর এক কাপ ধোঁয়া ওঠা কফি নিয়ে বেডের পাশে টেবিলে রাখেন রোদ। নিজে ও এক কাপ নিয়েছে নিজের জন্য। জুহির ঘুম ভেঙ্গে যায়।

-গুড মর্নিং মিসেস চৌধুরী।

-গুড….

-গুড কি?

-মর্নিং….

-হুম অনেক ঘুমানো হয়েছে এবার ফ্রেশ হয়ে আসো। এই দেখো তোমার জন্য নিজের হাতে কফি বানিয়ে নিয়ে এসেছি।

-কিহ আপনি?

-এমন রিয়েকশন করছো জেনো আমি কফি বানাতেই পারি না!

-না তা না।

-হুম বুঝেছি এখন ফ্রেশ হয়ে আসেন আপনি ম্যাম।

রোদ জুহি কে ঢেলে ওয়াশরুমে ঢুকিয়ে দেয়। জুহি হাসলো। ফ্রেশ হয়ে বের হয় জুহি। রোদ ওর হাতে কফি ধরিয়ে দেয়। জুহি ভালো ভাবে রোদের দিকে তাকিয়ে খেয়াল করলো রোদ রেডি হয়ে আছে।

-আপনি কি কোথাও যাচ্ছেন?

-কোথাও না অফিসে। অনেক কাজ জমা হয়ে আছে তো নাকি! আজ তো যেতেই হবে।

-ও আচ্ছা।

-হুম এবার তাড়াতাড়ি চলো আব্বু আম্মুর সাথে ও কথা বলে নেবে। উনাদের কে বিমান বন্দরে নামিয়ে দিয়ে আমি অফিসে যাবো। আর একটা কথা একদম কান্না করবে না বলে দিলাম। মনে থাকে জেনো।

-হু…..

তারপর জুহি ওর আব্বু আম্মুর সাথে কথা বলে নেয়। সবাই নাস্তা শেষ করে জুহির আব্বু আম্মু কে বিদায় দেয়। জুহি কে রোদ একদম কান্না করতে নিষেধ করায় জুহি কান্না করে নি ঠিক কিন্তুু মন টা খারাপ হয়ে আছে।

রোদ চলে যায়। জুহির আব্বু আম্মু জুহি কে শান্তনা দেয় আর সাবধানে ভালো ভাবে থাকতে বলেন। আর বলেন উনারা কয়েক মাস পর আবার আসবেন।

রোদ জুহির আব্বু আম্মু কে বিমান বন্দরে নামিয়ে দিয়ে সে তার অফিসে চলে যায়। রোদের কেবিনে ম্যানেজার সাহেব আসে।

-স্যার আপনাকে এতো বার ফোন দিলাম আপনি তো ফোন তুললেন ই না।

-ও সিট। আমি তো ফোন টাই নিয়ে আসি নি। তা কেন?

-স্যার আজকে একটা মিটিংয়ের ব্যাপারে। ডিল টা ফাইনাল করতে স্যার মিটিং টা খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিলো। আজকে ডিল টা ফাইনাল না হলে অনেক লস হয়ে যাবে। আর এখন তো সময় ও নেই।

-কিহ…!

অনেক চেষ্টা করেও আর ডিল টা ফাইনাল করা যায় নি। ফলে অনেক লস হয়ে যায়। জুহির ঐ দিনের লোক গুলোর ফোন আায়। আর জানতে পারে তাদের প্রথম প্ল্যান সাকসেসফুল। সেটা কি জুহি পুরো টা জানে না। শুধু তাদের সাথে একমত হয়ে জুহি ফোন রেখে দেয়।

জুহি জাস্ট অভিনয় করে চলেছে। শুধু এটা জানার জন্য যে রোদের শত্রু টা আসলে কে! মূলত জুহিদের কোনো সম্পর্ক ই নেই রোদ দের বিজনেস এর সাথে। সব টাই ফেইক‌ ছিলো।

রোদ বাসায় চলে আসে। রোদের পাশে রোদের আব্বু আর ওর চাচ্চু বসে আছে। রোদ প্রচন্ড রেগে পছে। এতো বছরে ও বিজনেস এ কোনো লস হয় নি আর আজকে হুট করে এতো বড় ক্ষতি…? রোদ জেনো মানতেই পারছে না।

রোদের আব্বু আর চাচ্চু ওকে শান্তনা দিচ্ছে। জুহি উপরে রুম থেকে নিচে আসে। আর সব টা না জানার ভান করে।

-কি হয়েছে আপনার? আপনাকে এমন দেখাচ্ছে কেন? আব্বু কি হয়েছে উনার? কথা বলছেন না কেন?

-জুহি মামনি আমাদের কোম্পানি তে লস হয়ে গেছে। সেইজন্য রোদ……

সব টা বুঝে এসেছে জুহির। জুহি কোনো ভাবে রোদ কে শান্তনা দিচ্ছে।আর রোদ কে বুঝায় যে বিজনেস এ এমন হয় ই। রোদ আর কিছু বললো না। তবুও মনে তো থেকেই যায় ক্ষোভ টা।

অন্য দিকে লোক গুলোর জুহির কথাই জানায় নি তাদের স্যার কে। কারণ তারা মনে করেছে জানিয়ে আর লাভ কি! এমনি তেই দুইজনের ই লক্ষ্য চৌধুরী কোম্পানি কে শেষ করা নিয়ে! তাই ভাবলো জানিয়ে অযথা কাজ নেই।

এভাবে ২ দিন কেটে গেছে। এখন রোদ খুব ভালো ভাবে মন দিয়ে নিজের বিজনেস টা কে দেখছে। কারণ তার একটু গা ফেলানির কারণে লস হয়ে গিয়েছিলো। আর কোনো ক্ষতি হোক বিজনেস সেটা চায় না রোদ। রোদ সকালে নাস্তা সেরে অফিসে চলে গেছে।

সকাল ১০:৩০ এর দিকে জুহি আবার সেই লোক গুলোর ফোন পায়। তাদের প্রথম কাজ সাকসেসফুল হওয়ার ফলে তাদের বস তাদের সাথে দেখা করতে চাচ্ছেন।

লোকগুলো জুহি কে ও আসতে বলে দেখা করার জন্য। লোকগুলো ভাবে আজই তাদের বস কে জুহির কথা জানাবে। কিন্তু জুহি ওদের জানিয়ে দেয় যে সে আসতে পারবে না। গুরুতর ভাবে অসুস্থ সে।

লোকগুলো আর জোড় করে নি। জুহির কথা টাই মেনে নিয়েছিলো তারা। সাড়ে ১১ টার সময়ে লোকগুলোর বসের সাথে দেখা করার কথা।

সেই অনুযায়ী জুহি ও রেস্টুরেন্টের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ে। জাস্ট লোকগুলো কে বুঝানোর জন্য মিথ্যা বলেছিলো যে জুহি আসবে না সে অসুস্থ।

জুহি রেস্টুরেন্টে পৌঁছে যায়। লোকগুলোর ঠিক পিছনের দিকে বসে জুহি। যাতে তারা জুঝি কে না দেখতে পায়। একটা পেপার দিয়ে জুহি তার মুখ ঢেকে রেখেছে।

ঠিক সাড়ে ১১ টার সময় একটা লোক আসে। কোট আর ব্লেজার পড়া। লম্বা দেখতে। জুহি পেপার টা হালকা সরিয়ে দেখার চেষ্টা করছে আসলে তিনি কে? চৌধুরী পরিবারের কোন সদস্য তিনি?

মুখ টা ভালোভাবে দেখা যাচ্ছে না। তাই উঠে দাঁড়ায় জুহি। এখন ভালোভাবে দেখতে পাবে সে। তারপর জুহি লোকটিকে দেখে নিজের চোখ কেই বিশ্বাস করতে পারছে না।

জুহি ভাবছে এটা কি করে সম্ভব……?…….

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here