অভিমানী_ভালোবাসা
পর্ব-০৯
লেখিকাঃ Hiya_Chowdhury
এটা কি করে সম্ভব! যে মানুষটা রোদের এতো আপন জন এতো ভালো বন্ধু। আপন ভাইয়ের মতো। সে কিভাবে পারলো রোদ কে এভাবে ঠকাতে?
জুহি আর কিছুই ভাবতে পারছে না। মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। জুহি তার ফোনে ওদের সব কথা রেকর্ড করে নেয়। আর কয়েক টা ফটো ও তুলে নেয়। তারপর তাড়াতাড়ি করে জুহি রেস্টুরেন্টে থেকে বেরিয়ে বাসায় চলে আসে। বাসায় ঢুকতেই কাব্য আর জুহি দুইজনেই ধাক্কা খায়।
-ওপপপস সরি ভাবী! আমি আসলে খেয়াল করিনি।
-ইট’স ওকে।
-আচ্ছা ভাবী তুমি কোথাও গিয়েছিলে নাকি?
-হ্যাঁ আসলে একটি কাজ ছিলো তো তাই….
-ওও আচ্ছা….
-বাই দ্যা ওয়ে তুমি কোথায় যাচ্ছ?
-কোথাও না। জাস্ট এমনি একটু হাটাহাটি করতে যাচ্ছি।
-ওহ…
তারপর জুহি ভেতরে চলে যায়। আর কাব্য বাহিরে চলে যায়। জুহি রুমে গিয়ে জামা চেঞ্জ করে বেলকনিতে দাঁড়াতেই দেখে শুভ্র ফোনে কথা বলে হেসে হেসে বাসায় ঢুকছে। বেশ খুশিতেই আছে মনে হচ্ছে।
অন্যদিকে জিসানের পিএ সাদ জিসানের কথা মতো ঐ মেয়েটার খবর জানাতে জিসানের কাছে আসে।
-কি হলো সাদ কোনো ডিটেইল জানতে পারলে?
-জ্বী স্যার।
-হ্যাঁ তো বলো কে কে সেই মেয়েটি? কি তার পরিচয়? থাকে কোথায়?
-স্যার মেয়েটি মিস্টার রোদ চৌধুরীর স্ত্রী মিসেস জুহি চৌধুরী!
-হোয়াট……….!
জুহি আর কিছু না ভেবে নিচে চলে যায়। আর কিচেনে রোদের আম্মু আর চাচি কে সাহায্য করে। জুহির মাথায় এখন একটাই চিন্তা রোদ কে কি সব টা বলে দেওয়া উচিত হবে?
আর যদি রোদ সব টা জেনে যায়। নিশ্চিত গন্ডগোল হবেই। পরে সেই লোকটা সতর্ক হয়ে যাবে আর গোপনে ক্ষতি করবে। জুহি বুঝতেই পারছে না আসলে সে এখন ঠিক কি করবে?
রোদ যদি সবটা জেনে ও যায় তার রিয়েকশন কেমন হবে? ওদের খেয়ে ওদের পড়ে আবার ওদের ঐ ক্ষতি করার চিন্তা! ছিহ কেমন মন মানসিকতা ওর। মনুষ্যত্ব হীন পশুর মতো!
জুহি এই ভাবনায় ডুবে যাওয়ার ফলে খেয়াল ই নেই যে ওকে কেউ ডাকছে।
-জুহি… জুহি.. এই জুহি…(সামান্য ধাক্কা দিয়ে)
-হ্যাঁ হ্যাঁ মামনি বলো…
-কি এতো ভাবছিস বল তো।
-না মানে কিছু না।
-এখানে কি তোর থাকতে অসুবিধা হচ্ছে?
-না মামনি সেরকম কিছু না।
-তাহলে কি হয়েছে বল আমাকে!
-কিছু হয় নি তো।
-বলতে চাস না যখন তখন আর জোড় করবো না।
-সত্যি বলছি মামনি। কিছুই হয় নি। জাস্ট এমনি…
-হয়েছে আর বলতে হবে না। রান্না কমপ্লিট। এখন তুই ফ্রেশ হয়ে নে।
-আচ্ছা মামনি।
জুহি ওর রুমে যাওয়ার সময় দেখে শুভ্র এখনো হেসে হেসে ফোনে কারো সাথে কথা বলছে। জুহি শুভ্রর কাছে আসে। শুভ্র জুহি কে দেখে ফোন কেটে দেয়।
-কার ফোন ছিলো ঐ টা?
-ওওই… মানে আমার ক্লাইন্টের…
-ওহ তা শুভ্র ভাইয়া তোমাকে আজকাল একটু বেশি ই খুশি খুশি দেখাচ্ছে কারণ কি বলোতো।
-না কই তেমন কিছু না তো।
-তাহলে কেমন কিছু?
-জুহি তুমি এভাবে কেন কথা বলছো? মনে হচ্ছে কোনো বিষয় নিয়ে আমাকে সন্দেহ করছো? হুম কি ব্যাপার?
-আরে ধুর তোমাকে কি নিয়ে সন্দেহ করবো। আমি তো জাস্ট এমনি ভাবলাম প্রেমে টেমে পড়লে নাকি আবার।
-কি যে বলো না হাহাহা…
-পড়লে ও পড়তে পারো বলা যায় না। আচ্ছা শোনো আমার কাজ আছে গেলাম।
জুহি নিজের রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নেয়। ফ্রেশ হয়ে আয়নার সামনে দাঁড়াতেই রোদের ফোন….
-কি ব্যাপার সাহেব এখন হঠাৎ ফোন।
-তোমার কথা মনে পড়লে তো তাই ফোন দিলাম।
-মন খারাপ?
-না…
-না না বলে হ্যাঁ বলেন। আমি ভালো বুঝেছি আপনি এখনো মন খারাপ করে আছেন… দেখুন যেটা হয়ে গেছে সেটা নিয়ে আর মন খারাপ করে কি হবে? প্লিজ মন খারাপ করে থাকবেন না।
-আরে না। সেসব কথা বাদ দাও লাঞ্চ করছো কিনা বলো?
-না এখনো করি নি আপনি করেছেন?
-হুম। ওকে এবার যাও তাড়াতাড়ি লাঞ্চ করে নাও। অনেক দেরি হয়ে যাচ্ছে।
-আপনি মন খারাপ করে থাকলে আমি খাবো কি করে।
-ওহহো দেখো আমি মন খারাপ করে নেই। এই দেখো হাসছি এবার হ্যাপি? সো এখন যাও আমি রাখলাম বায়!
-আর…আরে… যা বাবা কেটেই দিলো। এই সবের জন্য দায়ী ও। মানুষ রূপের পশু টার জন্য এসব হয়েছে। (মনে মনে)
জুহি খেতে বসেছে ঠিক। কিন্তুু ঠিকমতো খেতেই পারছে না। মাথায় নানা রকম চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে। রোদের আম্মু খেয়াল করেন জুহি খাচ্ছে কম ভাবছে বেশি।
-কি হলো জুহি? খাচ্ছিস না কেন? কি এতো ভাবিস?
-না মামনি ওওই মানে কিছু না। এই তো খাচ্ছি….
-এটা কে খাওয়া বলে?
-আসলে…
-হয়েছে আর বলতে হবে না। এবার চুপচাপ খেয়ে নাও সবাই।
-হুম…
অতঃপর সবাই লাঞ্চ শেষ করে যে যার রুমে চলে যায়। সন্ধ্যায় রোদ বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে নেয়। জুহি হাতে গরম গরম দুই কাপ কফি নিয়ে রুমে আসে। রুমের কোথাও রোদ কে দেখতে না পেয়ে বেলকনিতে যায়। জুহি দেখে রোদ বেলকনিতে মন খারাপ করে বসে আছে। জুহির ও মন টা খারাপ হয়ে যায়।
জুহি বেলকনির ছোট্ট টেবিল টায় কফি টা রাখে। তারপর নিজে ও রোদের পাশে বসে।
-আপনি এখনো মন খারাপ করে আছে?
-নাহ…
-আমি অন্ধ নই বুঝলেন। আমি দেখতেছি আপনি মন মরা হয়ে বসে আছেন আর বলছেন মন খারাপ না। (জুহি প্রায় কান্না করে দিবে এমন। প্রিয়জনের মন খারাপ দেখলে নিজে ভালো থাকবে কিভাবে)
-জুহি আগে কখনো আমাদের বিজনেস এ এমন হয় নি। কিন্তুু কাল হঠাৎ কি করে…এসব.. মানে আমি না মানতেই পারছি না….
রোদ ও কান্না করে দেবে এরকম অবস্থা। জুহি তো ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না করা শুরু করে দিয়েছে প্রায়। রোদ আকস্মিক কান্ডে থ। মন খারাপ ওর আর কান্না করছে জুহি!
রোদ জুহি কে জড়িয়ে ধরে। জুহির মাথায় হাত বুলিয়ে শান্তনা দেওয়ার চেষ্টা করে।
-আরে পাগলী এই দেখো কান্না করা শুরু করে দিয়েছে।
-আপনি মন খারাপ করে থাকবেন! এটা আমার ভালো লাগে না। কষ্ট লাগে আমার….!
রোদ বুঝতে পারে ওর কষ্টে জুঝির ও কষ্ট হচ্ছে। এভাবে মন খারাপ করে থাকলে মেয়েটা আরো বেশি কষ্ট পাবে রোদ জুহির চোখের পানি মুছে দেয়।
-এই দেখো এখন আমি একদম মন খারাপ করে থাকবপ না। ৩ সত্যি। এখন রুমি ও কান্না বন্ধ করো! একটু হাসো তো।
-না…
-হাসো বলছি!
-না…
-ওকে যাও ঠিক আছে আমি ও মন খারাপ করে থাকবো।
-উহু…
জুহি মুচকি হাসে। রোদ কে ছেড়ে দিয়ে নিজের জন্য এক কাপ কফি নেয় আর বাকি এক কাপ রোদের দিকে এগিয়ে দেয়।
রোদ কফি তে এক চুমুক দেয়। জুহি ও তার কফিতে এক চুমুক দেয়।
-এই রাখো রাখো।
-কি?
-তোমার কফি টা আমাকে দাও।
-কেন আপনার টা ভালো হয় নি?
-হুম হয়েছে। কিন্তুু আমি তোমার টা খাবো আর তুমি আমার টা।
-কিহ!
-কি না জ্বী….
রোদ জুহির থেকে ওর কফি টা নিয়ে নিজের টা জুহির হাতে ধরিয়ে দেয়। জুহি রোদের কান্ড বুঝতে পেরে লজ্জা পেয়ে যায়। আর রোদ ট্যাড়ি স্মাইল দেয়।
রাতে সবাই ডিনার করে যে যার রুমে চলে আসে। রোদ লক্ষ্য করে জুহি কিছু একটা ভাবছে।
-কি?
-কি মানে?
-কি ভাবছো সেটা জিঙ্গেস করছি!
-কই কিছু ভাবছি না তো।
-হুম সেটা দেখলেই বুঝা যায়!
-আচ্ছা আপনাকে একটা কথা বলি?
-হুম বলো!
-আচ্ছা সাপোস আপনার খুব কাছের কেউ যদি আপনার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে আপনি জানতে পারেন তাহলে কি করবেন?
-মানে? কি বললে?
-ধুর কিছু না। আমি ঘুমালাম খুব ঘুম পাচ্ছে।
-অর্ধেক কথা বলা আমার মোটেও পছন্দ নয়। কি বলতে চেয়েছিলেন সোজাসুজি বলো।
-কিছু না তো। আচ্ছা সকালে বলবো। এখন আমার কওো ঘুম আসছে । গুড নাইট….
জুহি রোদ কে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়ে। আর রোদ ভাবছে হঠা জুহি তাকে এমন কথা কেন বললো? কি হতে পারে এই কথার মানে?
রোদ ভাবলো সকালে জুহি কে জিঙ্গেস করবে আসলে সে কি বলতে চেয়েছিলো। তারপর রোদ ও ঘুমিয়ে পড়ে।
পরেরদিন সকালে………..
রোদ নাস্তা সেরে উপরে নিজের রুমে যায় রেডি হওয়ার জন্য। অন্যদিকে জুহি নিচে কাজ করছে।
রোদ ওর রুমের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় রিমি কে দেখতে পায়।
-রিমি শোন…
-হ্যাঁ ভাই কিছু বলবি?
-তুই কি নিচে যাচ্ছিস?
-হুম।
-জুহি কে আসতে বলিস তো! কাজ আছে।
-আচ্ছা ঠিক আছে।
রিমি নিচে গিয়ে দেখে জুহি কিচেনে।
-ভাবী…
-হ্যাঁ রিমি বলো।
-তোমার ভাই উপরে যেতে বলেছে। কি জেনো কাজ আছে।
-ওহ আচ্ছা ঠিক আছে আমি যাচ্ছি।
জুহি তাড়াহুড়ো করে রুমে যায়। আর রোদ কে বলে!
-আপনি আমাকে ডেকেছেন?
-হ্যাঁ।
-কেন কি হলো আপনার?
-এটা কি জুহি?
রোদ জুহি কে রেকর্ড টা চালিয়ে দিয়ে জিঙ্গেস করে এটা কি? জুহি অবাক হয়ে যায়। এটা রোদ পেলো কিভাবে? জুহি খুব ভয় পেয়ে যায়। জুহি দেখতে পায় রোদ খুব রেগে গেছে…………….!
চলবে—